শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৩০

0
4150

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৩০

🌼
পুরো এক সপ্তাহ পর আজ মুখোমুখি দাড়িয়ে রোশনি আর জয়।দু’জনের কারো মুখেই আজ কথা নেই।চোখ ভর্তি অভিমান নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে প্রিয়তমার মুখের দিকে।রোশনির চোখদুটো ছলছল করে উঠলো।চিরপরিচিত দুঃখরা তরতর করে বেড়ে উঠলো বুকের ভেতরটাই।চোখ ভেঙে কান্না এলো।কিছুক্ষন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে রোশনিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিরক্ষর চোখ বুলালো জয়।ঠোটে মৃদু হাসি ফোটানোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হতে হল তাকে।আজকাল তার আর হাসি পায় না।বুক ভেঙে কান্না পায়।কষ্টের ভারে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়।সামনে দাড়ানো মেয়েটাকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরার ইচ্ছেটাকে মনের গভিরে চাপা দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো সে।নিজের সুপ্ত অনুভূতিগুলোকে দমিয়ে রেখে গলার স্বরটা শান্ত করলো। বললো,

-কেমন আছো রোশনি?

জয়ের সোজা প্রশ্নের উত্তরটাও বেমালুম ভুলে গেল রোশনি।অবাক চোখে জয়ের মুখের দিকেই তাকিয়ে রইলো সে।জয়কে এখানে আশা করে নি সে।বিয়ের পর আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল একটা মুহূর্তের জন্যেও সে বাইরে বেরোতে পারে নি।জয়ের সাথে কোনো রকম যোগাযোগও করে উঠতে পারে নি সে।আজ হঠাৎ জয়কে এখানে দেখবে সেটা একেবারেই ভাবে নি। তবে পিয়ার থেকে শুনেছিল জয় নাকি সবটা জানার পরে ভিষন ভেঙে পড়েছিল।অনেকটা ঘরবন্ধি করে রেখেছিল নিজেকে।রোশনির সব শুনে ইচ্ছে করছিল এসব কিছু ছেড়ে ছুড়ে ছুটে চলে যেতে।কিন্তু রুম থেকে বেরোনোর পারমিশন থাকলেও বাড়ি থেকে বেরোনোর পার্মিশন তার নেই।অধির তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে।রোশনি এখনো অধিরের সেই কথা গুলো শুনতে পায়।যেদিন অধির বলেছিল,

-অধির চৌধুরির দুনিয়া কোনো খোলা আসমান নয় যে তুমি স্বাধীন ভাবে উড়ে বেড়াবে।আমার দুনিয়া একটা খাঁচার মত।আর তার দরজা ঠিক তখন খোলে যখন আমি ইশারা করি।চৌধুরি ম্যানশন আমার দুনিয়া।আমার পার্মিশন ছাড়া এখান থেকে একটা মানুষ তো কি তার নিশ্বাস পর্যন্ত বাইরে যেতে পারে না।এখানে আমার পার্মিশন ছাড়া কোনো কিছু সম্ভব নয়।রিমেমবার দ্যাট।

জয়ের কথায় হুশ এলো রোশনির।জয়ের দিকে অনুভূতি শূন্য চোখে তাকাতেই জয় আবারো প্রশ্ন করলো,

-কি ব্যাপার? কোথায় হারিয়ে গেছো?আমার প্রশ্নের উত্তর পায় নি এখনো।

রোশনি কিছু বলবে তার আগেই অধির এসে রোশনির পাশে দাড়ালো।পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে মাথাটা একটু হেলিয়ে মুচকি হাসলো। বললো,

-মিষ্টার জয়।সি ইজ টোটালি ফাইন।আর একটা কথা মনে হয় আপনি ভুলে যাচ্ছেন।সি ইজ মাই ওয়াইফ নাও।সো বি রেসপেক্টফুলি টক টু হার।এখন থেকে ওকে মিসেস চৌধুরি নয়তো ম্যাম বলে ডাকবেন।কারন এটা আপনার কাজের জায়গা।বন্ধুত্ব বাড়ির বাইরে দেখাবেন।আমি প্রফেশন আর পার্সোনাল দুটো এক করা পছন্দ করি না।আশা করি বুঝে গেছেন?

-ইয়া মিষ্টার চৌধুরি।মাই এপোলজি।এরপর থেকে মাথায় থাকবে।বাই দা ওয়ে আমার রুমটা দেখিয়ে দিলে ভালো হতো।

-ইয়া অফকোর্স। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।প্লিজ কাম।

অধির এবার রোশনির দিকে তাকালো।বললো,

-সুইটহার্ট এবার তুমি ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা রুমে চলে যাবে।ওকে?

রোশনি টালমাটাল পায়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।একটা বার পেছনে ফিরেও তাকালো না।রোশনি চলে যেতেই বাঁকা হাসলো অধির।জয়কে নিজের রুম দেখিয়ে চলে আসতে গিয়েও থেমে গেলো।জয়ের দিকে তাকিয়ে ঠোটে বাকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,

-আমি জানি তুমি এখানে কেন এসেছো।যে চিন্তা নিয়ে এখানে এসেছো সেটা কোনো ভাবেই পসিবল না।আমার থেকে রোশনিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তোমার নেই।তুমি এটা ভুলে যাচ্ছো এই গেইমের কোচ আমি।আমার মন এবং মষ্তিষ্ক দুটোই লোহার তৈরি।আমাকে হারানো তোমার পক্ষে সম্ভব নয়।তুফান আমি।আর তুফানকে রুখতে তোমায় পাহাড় হতে হবে।যেটা তুমি কোনোদিনই হতে পারবে না।এই গেইমে হারটা তোমারই হবে। নাউ আই উইল টেল ইউ হুয়াই ইউ লুজ।কারন তুমি মন দিয়ে ভাবো আর আমি মষ্তিষ্ক দিয়ে।মন ধোঁকা দিতে পারে কিন্তু মষ্তিষ্ক নয়।হেরে যাওয়ার অভ্যাস করে নাও জয়।কারন আমি জিতার অভ্যাস ছাড়ছি না।

অধির কথাগুলো বলে চলে আসার জন্যে পা বাড়াতেই জয়ের কথায় থেমে গেলো।জয়ের দিকে তাকাতেই জয় মুচকি হাসলো।

-ফেলিওর ইজ দা বেস্ট টিচার। কথাটা জানেন তো মিষ্টার চৌধুরি?বার বার জিততে থাকা মানুষের জিত নিয়ে হেডলাইন তৈরি হয়।।আর বারবার হেরে যাওয়া মানুষটা যখন জিতে যায় তখন ইতিহাস তৈরি হয়।প্লেন ইনভেনটর রাইট ব্রাদারস যদি তার অকৃতকার্যের ভয়ে থেমে যেত তাহলে আজ পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাওয়া মুশকিল হয়ে যেত।শুরুতে তারাও ফেইল হয়েছিল।

অধির হাসলো।পকেটে হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।বাম হাতে দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,

-ইন্টারেস্টিং। আই লাইক ইউর কন্ফিডেন্ট। ইউ ট্রাইয়েড হার্ড।আই এম ইমপ্রেসড ম্যান।

জয়ও হাসলো।বললো,

-অনেকদিন আগে পড়া একটা ছোট্ট গল্প মনে পড়ে গেলো।এটা অবশ্য গল্প নয়।ইটস ট্রু স্টোরি।আইনস্টাইনের যিনি ড্রাইভার ছিলেন,তিনি একবার আইনস্টাইনকে বললেন– “স্যার, আপনি প্রতিটি সভায় যে ভাষণ দেন সেগুলো শুনে শুনে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।” আইনস্টাইন তো অবাক!!! উনি বললেন– “বেশ, এর পরের মিটিংএ যেখানে যাবো তারা আমাকে চেনেন না, তুমি ওখানে আমার হয়ে ভাষণ দিয়ে দিও। আর আমি ড্রাইভার হয়ে বসে থাকব।”
যেমনি বলা তেমনি কাজ। পরের দিন সভায় তো ড্রাইভার উঠে গেলেন স্টেজে। হুবহু আইনস্টাইন এর ভাষণ গড় গড় করে বলে গেলেন। উপস্থিত বিদ্বজ্জনেরা তুমুল করতালি দিলেন। এরপর তারা ড্রাইভারকে আইনস্টাইন ভেবেই গাড়িতে পৌঁছে দিতে এলেন।

সেই সময়ে একজন অধ্যাপক ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলেন– “স্যার, ঐ আপেক্ষিক তত্ত্বের যে সংজ্ঞাটা বললেন, সেটা আরেকবার সংক্ষেপে বুঝিয়ে দেবেন?” আসল আইনস্টাইন দেখলেন এ তো মহাবিপদ! এবার ড্রাইভার ধরা পড়ে যাবে। কিন্তু তিনি ড্রাইভারের উত্তর শুনে তাজ্জব বনে গেলেন।

ড্রাইভার উত্তর দিলো– “এই সহজ জিনিসটা আপনার মাথায় ঢোকেনি? আমার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করুন, সে বুঝিয়ে দেবে।”

এর থেকে বোঝা যায় জ্ঞানী মানুষের সাথে চলাফেরা করলে নিজেও জ্ঞানী হওয়া সম্ভব।আমরা যার সাথে চলি আর যাকে ফলো করি একদিন তার মুখোমুখি দাড়ানোর ক্ষমতাও আমরা তৈরি করে নিই।আর শুরু থেকে আমি আপনাকেই ফলো করে এসেছি মিষ্টার চৌধুরি।আপনি কোনো এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন,,,” পাস্ট ইজ এক্সপেরিয়েন্স। প্রেজেন্ট ইজ এক্সপেরিমেন্ট।এন্ড ফিউচার ইজ এক্সপেক্টেশন। ইউজ ইউর এক্সপেরিয়েন্স ইন ইউর এক্সপেরিমেন্টস টু এচিভ ইউর এক্সপেক্টেশনস। “”ব্যস সেটাই ফলো করছি।

-আই একসেপ্ট ইওর চ্যালেঞ্জ। জিবনে যদি চ্যালেঞ্জেজই না থাকে তাহলে জিবনে মজা কোথায়।এবার মজা হবে।

ঘড়িতে তখন সাতটা বাজে।সন্ধ্যা নেমেছে মাত্র।অধির রুমে এসে দেখলো বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে রোশনি।বিছানায় লেপ্টে থাকা শরিরের মৃদু কম্পনেই বুঝতে পারলো রোশনি কাঁদছে।অধির কিছু না বলে রোশনিকে টেনে তুলে বসালো।রোশনির ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে ডান হাত তুলে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,

-তোমার পা থেকে মাথা অবধি পুরোটাই আমার প্রপার্টি। আর আমার সম্পত্তির ক্ষতি আমি মেনে নেবো না।চোখ থেকে এক ফোটা পানিও যেন আর না পড়ে।

রোশনি অধিরের থেকে দূরে সরে বসলো।অধির কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে পকেট থেকে একটা ব্লাক ডায়মন্ড রিং বের করলো।রোশনির মুখের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়ালো।রোশনি অধিরের বাড়িয়ে দেয়া হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরালো।রোশনিকে আগের মতোই বসে থাকতে দেখে রোশনির হাতটা নিজে থেকেই টেনে নিলো সে।বাম হাতের আঙুলে রিং পড়াতে পড়াতে বললো,

-জিবনে প্রথম বার এতো অধৈর্য হয়ে পড়েছি।তোমাকে নিজের করে পাবার জিদ তৈরি হয়েছে।তোমার পুরানো পরিচয় মিটিয়ে নতুন পরিচয় দেওয়ার ইচ্ছে জন্মেছে মনে।তোমাকে মিস রোশনি থেকে মিসেস রোশনি চৌধুরি করার অপেক্ষাটা আর সহ্য হচ্ছে না।এই রিং আমার জন্যে অনেক স্পেশাল।আর এই রিং যার হাতে থাকবে সেও আমার জন্যে অনেক স্পেশাল।আর তুমি সুইটহার্ট,,,,,!!! আমার জন্যে সব থেকে বেশি স্পেশাল।এই রিংটা যতোদিন তোমার হাতে থাকবে ততো দিন তুমি মিসেস রোশনি চৌধুরি।ভুল করেও এটা খোলার সাহস দেখাবে না।এটা খোলার সাহস দেখিয়ে প্লিজ আমার রাগ তুলবে না।

রোশনি ঝাড়া মেরে হাত সরিয়ে নিলো।তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,

-আপনি আমায় প্লিজ বলে রিকোয়েস্ট করছেন মিষ্টার চৌধুরি?

-প্রত্যেক প্লিজ এর মানে রিকোয়েস্ট হয় না সুইটহার্ট। এটা হাত থেকে খুলবে না।

রোশনি এবার উঠে দাড়ালো।দাতে দাত চেপে বললো,

-জোর জবরদস্তিতে জিদ পুরা হয় মিষ্টার চৌধুরি।ভালোবাসা নয়।

-এটাও সত্যি করে দেখাবো সুইটহার্ট। আমার ভালোবাসায় তুমিও উন্মাদ হবে।আমার জন্যে পাগল হবে তুমিও।অধির চৌধুরি এই নামটাকে অনেক ঘৃনা করো না তুমি?একদিন এই নামটাই তোমার একমাত্র পরিচয় হবে। এন্ড ইটস মাই চ্যালেঞ্জ।

রোশনি শব্দ করে হাসলো।বললো,

-চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড মিষ্টার চৌধুরি।জিবনে প্রথম বার হয়তো আপনি হারতে চলেছেন।ইটস ইমপসিবল।

-আমি ইমপসিবলকে ইমপসিবল নয় আই এম পসিবল দেখি সুইটহার্ট। (Impossible =I m possible)

অধির সামনে এগিয়ে যেতেই পিছিয়ে গেলো রোশনি।অধির হাসলো।ডান ভ্রু উঁচিয়ে বাকা হেসে বললো,

-রিলাক্স সুইটহার্ট। বিয়ের এক সপ্তাহতেও যখন তোমার সাথে কিছু করিনি এখনও কিছু করবো না।আমি তো ব্যস তোমার চুলগুলো সরাতে এগিয়ে ছিলাম।তুমি আমাকে অসভ্য বলো।কিন্তু তুমিই আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা চিন্তা করো।

রোশনি ভ্রু কুচকে তাকালো।কাটা চুলগুলো কানের পেছনে গুজে বললো,

-আমি মোটেও ওসব উল্টাপাল্টা চিন্তা করি নি।

-কোন সব চিন্তা সুইটহার্ট?

-ওই যে….

রোশনি তাকিয়ে দেখলো অধিরের ঠোটে দুষ্টু হাসি।রোশনি চোখ নামিয়ে নিলো।

-আপনি আসলেই একটা অসভ্য আর খারাপ মানুষ।

-আমি কি করলাম?তুমি নিজে থেকেই যদি আমার কথাকে ডাবল মিনিং ওয়ার্ড ধরে নাও এতে আমার কি করার আছে?

-আমি ডাবল মিনিং বানায় না।আপনার কথা গুলোই ডাবল মিনিং টাইপ।

অধির হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে কানে এলো রোশনির বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো।

-অসভ্য লোক একটা।সব সময় জ্বালাতে থাকবে।স্বপ্নে পর্যন্ত চলে আসছে খাটাসটা।উফফ আল্লাহ আজকে ভোরের স্বপ্নটা ছিঃ কি বাজে ছিলো।

কারো গরম নিশ্বাস কাধে পড়তেই চমকে উঠলো রোশনি।বাকা চোখে তাকাতেই দেখলো অধির দাড়িয়ে আছে।অধির মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে বললো,

-শুকরিয়া সুইটহার্ট। আমাকে তোমার স্বপ্নে জায়গা দেওয়ার জন্যে।তোমার স্বপ্নে তো জায়গা করে নিয়েছি এবার খুব তাড়াতাড়ি তোমার মনেও জায়গা করে নেবো ।কথায় আছে ভালবাসা খুব সুন্দর স্বপ্ন দিয়ে শুরু হয়।কোথাও তুমি আমায় ভালোবেসে ফেলছো না তো ঘরওয়ালি?

রোশনি পেছনে ফিরে তাকালো না।দূরেও সরে গেলো না।আগের মতোই দাড়িয়ে রইলো।অধির রোশনির ঘাড়ে ফুঁ দিয়ে বলে উঠলো,

-দাদি বলে ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।ব্যস শুধু স্বপ্নটাকে মনে রাখা প্রয়োজন।কিছু কাজ একা করা যায় না।সাথ দেওয়ার জন্যে কাউকে প্রয়োজন হয়।ঘরওয়ালি তুমি শুধু স্বপ্নটা মনে রাখো। সেটা পূরন করার দায়িত্ব আমি নিলাম।

ঘড়িতে তখন নয়টা বাজে।ডায়নিং টেবিলে জড়ো হয়েছে সবাই।জয়ও জয়েন করেছে।রোশনি মাথা নিচু করে কোনো রকমে খেয়ে চলেছে।না দেখেও সে বুঝতে পারছে দুজনের স্থীর দৃষ্টি তাকেই দেখে চলেছে।অস্বস্তি আর খারাপ লাগায় কান্নারা এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে বারবার।জয় খাবার খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে রোশনির দিকে তাকাচ্ছে।অধির একবার জয়ের দিকে তাকিয়ে নজর সরালো।নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা চালিয়ে খাবারে মনোযোগি হলো।খাবার খেতে খেতেই মিসেস আনোয়ারা চৌধুরি প্রশ্ন করলেন জয়কে,

-তোমাকে আগেও বোধ হয় কোথাও দেখেছি।ঠিক মনে করতে পারছি না।

-জ্বি দাদি।এখানে আমি মিষ্টার সাহিলের এংগেজমেন্ট পার্টিতে এসেছিলাম।হয়ত তখনই দেখেছেন।প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিলো অধির চৌধুরির সাথে কাজ করার।তাই বস যখন বললো তখন আর না করি নি।অধির চৌধুরির বাড়িতে থেকে তার সাথে কাজ করার সুযোগ তো বারবার আসবে না।তাই সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না।ব্যস ব্যাগ প্যাক করে চলে এলাম।

-কতো দিনে কমপ্লিট হবে প্রজেক্টটা?

সাহিলের কথায় মুচকি হেসে জবাব দিলো জয়,

-আই হোপ এক মাসের মধ্যেই কমপ্লিট হয়ে যাবে।চেষ্টা করবো যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কমপ্লিট করতে। বাকিটা আল্লাহর হাতে।

শেষের দুটো লাইন জয় রোশনির দিকে তাকিয়েই বললো।রোশনি চোখ তুলে জয়ের দিকে তাকাতেই চোখ ছলছল করে উঠলো।অধির চোয়াল শক্ত করে তাকালো জয়ের দিকে।বামহাতে রোশনির হাতটা চেপে ধরতেই চোখ নামিয়ে নিলো রোশনি।ভেতরেই দমিয়ে রাখলো কান্নার দলা গুলোকে।বুকের ভেতরেই দুমড়ে মুচড়ে ভেতরে ভেতরেই শেষ হয়ে গেলো নিরব কান্নারা।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here