#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৩২
🌼
আকাশে আজ চাঁদ নেই।নিকষ কালো অন্ধকারে মুড়ে আছে চারপাশ।কিছুক্ষন আগেও আকাশে দু চারটে তারার দেখা মিললেও এখন গোটা আকাশ কালো মেঘে ঢাকা।আজ কাল হুট হাট বৃষ্টি হচ্ছে।বর্ষা কাল চলছে বোধ হয়।আজ কাল এসবের হিসেব রাখা হয়ে ওঠে না রোশনির।যেখানে নিজের জিবনটাই বেহিসেবে চলছে সেখানে এসবের হিসেব রাখাটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।এই তো সময় চলে যাচ্ছে।দিন ফুরিয়ে রাত আসছে।রাত ফুরিয়ে দিন।চলছে তো সবকিছু।চারপাশে সবকিছুই নিজের মত চলছে।তাহলে এতো হিসেব নিকেসের কি প্রয়োজন।বেলকোনিতে দাড়িয়ে থাকা রোশনির হঠাৎই ভিষন কান্না পাচ্ছে।আজ কাল তার গুটহাট মন খারাপ হয়।সেই সাথে কান্না পায়।রোশনি মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে তাকাতেই বিদ্যুৎ চমকে গোটা আকাশ ক্ষনিকের জন্যে আলোকিত হলো।তারপর আবারো সব অন্ধকার।নিকষ কালো অন্ধকার।এই অন্ধকারেই তার ভিষন ভয়।রোশনি চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিলো।বাতাসে ফুলের গন্ধ ভেসে এসে নাকে লাগছে।রোশনি প্রান ভরে শ্বাস নিলো।ফুলের সবটুকু সুগন্ধকে নিজের ভেতরে শুষে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে লাগলো।দুদিকে হাত মেলে বাতাসে শরির ভাসাতে চাইলো।ব্যর্থ হয়ে চোখ বন্ধ করতেই আজকের ঘটা ঘটনাগুলো চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠলো।ভেসে উঠলো অধিরের কাট কাট বলিষ্ঠ চেহারা।।মিডিয়ার লোকজনের একের পর এক তপ্ত প্রশ্নে রোশনি যখন কাহিল হয়ে পড়েছিল তখন অধিরই ছুটে এসে তার বুকের মাঝে লুকিয়ে নিয়েছিল তাকে।সারা পৃথিবীকে জানিয়েছিল তাদের সম্পর্কের কথা।রোশনিও তখন নিজেকে আড়াল করেছিল অধিরের প্রশস্ত বুকের মাঝে।হঠাৎ করেই রোশনির মনে হলো সে বাতাসে ভাসছে।নাকে ফুলের গন্ধ বাদেও খুব পরিচিত একটা গন্ধ এসে লাগছে।বলিষ্ঠ দুটো হাত তার কোমর জড়িয়ে রেখেছে।রোশনি চোখ মেলে তাকায়।ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকাতেই অধিরের মুখটা স্পষ্ট হয়।রোশনি কথা বলে না।পলকহীন তাকিয়ে থাকে সেই সুপুরুষটার দিকে।নাকের একপাশের টকটকে কালো তিলটা বিদ্যুৎ চমকানির আলোই স্পষ্ট হতেই দৃষ্টি স্থির হলো তার।রোশনিকে এভাবে তাকাতে দেখে মুচকি হাসলো অধির। রোশনিকে শূন্য থেকে নামিয়ে হাতের বাধন শক্ত করে দাড়ালো।মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই বললো,
-এভাবে দেখো না তিলোককন্যা। ধ্বংস হয়ে যাবো।
রোশনি তবুও চোখের দৃষ্টি সরালো না।অধিরের দিকে সম্পূর্ন ঘুরে মুখোমুখি দাড়ালো।ডান হাত উঠিয়ে অধিরের গাল ভর্তি চাপ দাড়ি গুলোতে হাত রাখতেই চমকে তাকালো অধির।অধিরকে আরেক দফা চমকে দিয়ে দাড়িগুলোতে হাত বুলাতে লাগলো রোশনি।অধির আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।শরিরের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাপতে লাগলো।রোশনির তাকানো, ওর এভাবে ছোঁয়া সব কিছু আজ অন্য রকম মনে হচ্ছে।রোশনির দৃষ্টি অধিরের পুরো মুখে ঘুরতে লাগলো।এই সুন্দর সুপুরুষটা তার স্বামী। কথাটা ভাবতেই অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।রোশনি নিজেও জানে না সে কি করছে।আজ সব কিছু ভুলে শুধু এই মানুষটার মুখটাই দেখতে ইচ্ছে করছে। আঁলতো হাতে ছুয়ে দেওয়ার লোভ হচ্ছে।অধির চোখ খুলে তাকালো।রোশনির মুখের দিকে স্থীর চোখে তাকাতেই ঠোটের কাছে গিয়ে দৃষ্টি থামলো।হালকা মোটা ঠোট জোড়া ভিষন ভাবে টানছে তাকে।অধিরের হাতের বাধন শক্ত হল।রোশনির উরন্ত চুলগুলোকে কানের পেছনে গুজে দিয়ে বললো,
-আমি মারা যাবো তিলোককন্যা। তোমার এই দৃষ্টি সহ্য করার ক্ষমতা আমি পাচ্ছি না।
অধির রোশনিকে ঘুরিয়ে দাড় করাতেই রোশনির পিঠ গিয়ে ঠেকলো অধিরের প্রশস্ত বুকে।দুহাতে কোমর জড়িয়ে রোশনির খোলা চুলে মুখ ডুবালো ।রোশনি চোখ বুজলো।বললো,
-দিদামকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়াটা কি ঠিক হলো মিষ্টার চৌধুরি?
রোশনির চুলে মুখ ডুবিয়েই জবাব দিলো অধির,
-ও যেটা করেছে তাতে ওর এটাই প্রাপ্য রোশনি।ওকে সাবধান করেছিলাম তোমার পেছনে না লাগতে।কিন্তু শোনে নি।
-আমার জন্যে আপনার মার সাথেও খারাপ ব্যবহার করলেন আপনি।আমার খারাপ লেগেছে খুব।আমার জন্যে আপনাদের মা ছেলের সম্পর্কে ফাটল ধরুক এটা আমি মানতে পারবো না।
অধির রোশনির ঘাড়ে থুতনি রাখলো।ভিষন শান্ত গলায় বললো,
-মা ছেলের সম্পর্কে কখনো ফাটল ধরে না রোশনি।মম যেটা করেছে সেটা ভুল ছিলো।আমি শুধু তার ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছি।
-তবুও আমার খারাপ লেগেছে।দিদামকে উনি ভিষন পছন্দ করেন।দিদামের চলে যাওয়ায় উনি ভিষন কষ্ট পেয়েছেন।আমি চায়না আমার জন্যে কেউ কষ্ট পাক।আপনি কালই দিদামকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।
-এতো কিছুর পরেও এটা বলছো সুইটহার্ট? দিদাম তোমাকে সবার সামনে অপমান করতে চাইলো আর তুমি তাকেই ফিরিয়ে আনার কথা বলছো?মানুষের প্রতি মায়া দেখানো ভালো সুইটহার্ট ।কিন্তু সেই মানুষটাকে মায়া দেখিও না যে সব সময় তোমার ক্ষতি করার চেষ্টায় থাকে।একটা কথা সব সময় মনে রাখবে। মানুষকে অধিকার দেবে তো রামায়ন শুরু করে দেবে।আর অাঘাত করবে তো মহাভারত।সিদ্ধান্ত তোমার হাতে।রামায়ন নামি মহাভারত?
কিছুক্ষন নিরব থেকে আবারো প্রশ্ন করলো রোশনি,
-আপনি কিভাবে জানলেন এসব? আপনার তো রাতে ফেরার কথা ছিল।আর আপনি বিয়েটা গোপনই কেন রাখতে চেয়েছিলেন?
-বাপরে এতো প্রশ্ন একসাথে? এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর দিই বলো তো?
-আচ্ছা তাহলে একটা একটা করেই উত্তর দিন।
অধির হাসলো।রোশনির চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রান নিয়ে বললো,
-তোমায় সকালে কি বলেছিলাম মনে আছে সুইটহার্ট? তোমার উপর আমার নজর সব সময় থাকবে। আমি দূরে থাকলেও। তোমার কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না।তুমি কি করে ভাবলে আমি বেচে থাকতে তোমাকে সারা দুনিয়ার কাছে অপমানিত হতে দেবো? বউ তুমি আমার।আমার অক্সিজেন ।আমি থাকতে কোনো খারাপ কিছু তোমায় ছুঁতেও পারবে না।আমি কিভাবে বিষয়টা জানলাম সেটা না হয় না বলাই থাক।কিছু রহস্য থাকা ভালো ঘরওয়ালি। অবসরে নাহয় সেগুলো ভেবেই সময় কাটিও।আর বাকি রইলো আমি কেন বিয়েটা সবার থেকে গোপন রাখতে চেয়েছি?গোপন রাখতে চাইনি সুইটহার্ট। আমি তোমাকে সময় দিতে চেয়েছিলাম।আমি জানি তুমি বিয়েটা এখনো মেনে নিতে পারো নি।আর না আমাকে পেরেছো।না পারারই কথা।তাই আমার মনে হয়েছিল তোমায় কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। ভেবেছিলাম তোমার আমার সম্পর্কটা নরমাল হলে তারপরেই খবরটা পাবলিশ করবো।তাই বিয়ের বিষয়টা মিডিয়ার লোকজন থেকে লুকিয়ে গেছি। সময়কে কন্ট্রোল করতে শিখতে হয় সুইটহার্ট। যে সময়কে কন্ট্রোল করতে জানে তার জিবনে খারাপ সময় কখনো আসে না।তোমাকেও এটা শিখতে হবে।কঠিন পরিস্থির মুখোমুখি দাড়ানোর জন্য নিজেকে সর্বদা তৈরি রাখতে হবে।
সব শুনেও রোশনি কিছু বললো না।আগের মতোই দাড়িয়ে রইলো।অধির আবারো রোশনির চুলে মুখ ডুবালো।কিছুক্ষন চুলের মাতাল করা ঘ্রান নিয়ে কাঁধে ঠোট ছোঁয়ালো।সাথে সাথেই কেঁপে উঠলো সারা শরির।ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো শরির জুড়ে।লোপকূপ দাড়িয়ে গেলো লজ্জা আর অস্বস্তিতে।অধিরকে দূরে সরানোর শক্তিটুকুও হঠাৎ কোথাও হারিয়ে গেলো।কথা গুলো গলার কাছে দলা বেঁধে যাচ্ছে।চেষ্টা করেও একটা আওয়াজও বের হলো না। অধিরের ঠোঁটের ছোঁয়া আরো গভির হতেই লম্বা শ্বাস টেনে কোনো রকমে জড়িয়ে যাওয়া গলায় বললো,
-মিষ্টার চৌধুরি দূরে সরুন প্লিজ।
রোশনির কথায় হুশ এলো অধিরের।রোশনিকে ছেড়ে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাড়ালো।মাথা নিচু করে অপরাধীর মত বললো,
-সরি।
কিছুক্ষন পর অধির রোশনির দিকে তাকাতেই দেখলো রোশনি চোখ বুজে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।অধির দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্ধকার আকাশে মুখ উঁচিয়ে তাকালো।ততোক্ষণে ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।বাতাসের গতি বাড়তেই অধির রোশনির দিকে তাকিয়ে বললো,
-রুমে চলো সুইটহার্ট। বাতাসের গতি আর বৃষ্টি দু’টোই বাড়ছে।ভিজে যাবে।
রোশনি চোখ বুজে দু’হাত দুদিকে মেলে ধরে গলার স্বর উচু করে বললো,
-ভিজে গেলে ভিজে যাক।সব কিছু ভিজে যাক বৃষ্টির পানিতে।আজ আমি ভিজতে চাই।বাতাসে উড়তে চাই।মেঘবালিকার মত বৃষ্টিবিলাশ করতে চাই।নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই ওদের মাঝে।বৃষ্টির পানিতে শরিরের সমস্ত অঙ্গ ভেজাতে চাই।আজ বাধনহারা হতে চাই।
কথা গুলো বলতে বলতেই ঘুরতে লাগলো রোশনি।বেলকোনিটা খোলা আর মাথার উপরে ছাদও নেই।তাই বৃষ্টির পানি সোজা ওদের উপরে পড়ছে। অধির মুচকি হাসলো।প্রিয়তমার সাথে সেও ভিজবে। বৃষ্টির পানিতে শরির ভেজাবে।মরুভূমির মত খাঁ খাঁ বুকটাকে ভিজিয়ে সেখানে বন্যা নামাবে।
প্রায় ঘন্টা খানিক বৃষ্টি বিলাস করে রোশনির দিকে তাকিয়ে অধির বলে উঠলো,
-অনেক বৃষ্টি বিলাশ হয়েছে সুইটহার্ট। এবার রুমে চলো।
রোশনি ঘুরে ঘুরে আর লাফিয়ে লাফিয়ে ততোক্ষণে হাঁপিয়ে গেছে।হাফাতে হাফাতেই জবাব দিলো সে,
-না।আমি আরো ভিজবো।সারা রাত ভিজবো।
-অসুস্থ হয়ে যাবা রে বাবা।আর ভিজতে হবে না।অনেক হয়েছে।চলো এবার।
অধির রোশনির হাত ধরে রুমে নিয়ে এসে দাড় করালো।
-ওয়াশরুমে গিয়ে তাড়াতড়ি চেন্জ্ঞ করে নাও।আমি রুমেই চেন্জ্ঞ করে নিচ্ছি।ফাস্ট।
রোশনি ওয়াশরুমে ঢুকতেই অধির কাবার্ড থেকে টাউজার আর পাতলা টি-শার্ট বের করে #চেন্জ্ঞ করে নিলো।কিছুক্ষন পর রোশনি শুকনো কাপড় পড়ে বের হতেই অধির খেয়াল করলো রোশনি কাঁপছে।রোশনি কাছে এগিয়ে আসতেই অধির ভ্রু কুচকে তাকালো।কপালে হাত দিয়ে চেক করলো জ্বর এসেছে কিনা।
-জ্বর তো নেই।তাহলে এভাবে কাঁপছো কেন?শীত করছে?
রোশনি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।অধির বিছানা ঠিক করে রোশনিকে ডাকলো।রোশনি বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়তেই অধিরও ওর পাশে শুয়ে পড়লো।মোটা ব্লাঙ্কেটটা গাঁয়ের উপর ঠিক মত ছড়িয়ে দিয়ে এসিটা অফ করে দিলো।বাইরে তখনো পাল্লা দিয়ে বাতাস আর বৃষ্টি হচ্ছে।রোশনির কাঁপুনি বন্ধ হচ্ছে না দেখে অধির রোশনিকে টেনে বুকে চেপে ধরতেই রোশনি ছটফট করতে শুরু করলো। অধির আরো কিছুটা শক্ত করে জড়িয়ে নিলো রোশনিকে।বললো,
-প্লিজ সুইটহার্ট। নড়াচড়া করো না।এভাবেই থাকো।শীতে কি পরিমান কাঁপছো তুমি।আই প্রমিস আমি কিছু করবো না।শুধু এভাবেই থাকো।শীত কমে যাবে।স্বামি হিসেবে এটুকু অধিকার আমার অাছে সুইটহার্ট। প্লিজ।
রোশনিও আর কথা বাড়ালো না।সত্যিই তার শরির ভিষন ঠান্ডা হয়ে গেছে।অদ্ভুদ ভাবে অধিরের শরির বেশ গরম। অধিরের শরিরের ওম পেয়ে রোশনি গুটিশুটি মেরে অধিরের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো।নাকে মাতাল করা ঘ্রানটা বার বার এসে বারি খেতে লাগলো।রোশনির কেন জানি ভালো লাগছে এভাবে থাকতে।মনে হচ্ছে সে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় আছে।যেখানে কোনো বিপদ তাকে ছুঁতে পারবে না।
সকালের দিকে সুইমিং পুলের পাশে বেতের সোফায় বসে কিছু ডিজাইন আর্ট করছিলো সাহিল।তখনই সেখানে ফোনে কথা বলতে বলতে আদি এলো।হেলতে দুলতে সাহিলের পাশে ধপ করে বসতেই বিরক্ত চোখে তাকালো সাহিল।এভাবে বসার মত মহান কোনো কারন তার সচেতন মষ্তিষ্কে এলো না।আদির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবারো নিজের কাজে মন দিলো সে।আদি বেশ কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কাটলো।সাহিল পেন্সিল চালাতে চালাতেই প্রশ্ন করলো,
-কত নাম্বার?
-আপাততো মনে পড়ছে না।
-এতো কিভাবে পারোস ভাই? আমি তো দেখে দেখেই হাঁপিয়ে যায়।
আদি টি-শার্টটা টেনে টুনে ঠিক করে বললো,
-তোর মত বন্য প্রানীর পক্ষে এসব সম্ভব নয়।ভাগ্যিস নাতাশা ভাবি তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।নয়তো তোর মত বলদের কপালে বউ তো দূর গার্লফ্রেন্ডও জুটতো না।
-দিন দিন তুই চরম ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস আদি।বড় ভাইয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
-ও তুই আমার বড় ভাই? মনেই ছিল না।আচ্ছা যা এখন থেকে গলায় একটা সাইন-বোর্ড ঝুলিয়ে রাখবি।সেখানে বড় বড় করে লেখবি”আমি আদির বড় ভাই”।ব্যস তাহলেই ঝামেলা শেষ।ভুলে যাওয়ার আর কোনো চান্স নেই।
আদির কথায় ওর পিঠে দুমদাম কয়েকটা কিল বসালো সাহিল।আদি পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে হাসলো।কিছুক্ষন থেমে বললো,
-প্রেম না করলে জিবনে ইনজয় কিভাবে করবো? প্রেম করার অনেক ফায়দা।প্রেম করলে মন ভালো থাকে।আর মন ভালো থাকলে শরির ফিট থাকে।রাতে গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বললে ঘুম ভালো হয়।আর ঘুম ভালো হলে মেজাজও ফুরফুরে থাকে।তবে গার্লফ্রেন্ড থাকলে প্যারাও আছে।নিউটনের চতুর্থ সূত্র অনুযায়ী, প্রেমে “I Love” হলো স্থির।আর “You”সর্বদা পরিবর্তনশীল।তাই গার্লফ্রেন্ড যখনই প্যারা দিবে তখনই সেটা পরিবর্তন করে নাও।ব্যস প্যারা শেষ।
সাহিল আদির মুখের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে দির্ঘশ্বাস ফেললো।আদির কথা শুনলে মাঝে মাঝে মনে হয় সে অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা।সাহিল কিছু না বলে কাজে মনোযোগ দিলো।তখনই সেখানে দুলে দুলে রিয়া এলো।ঘাড় অবধি ছোট চুলগুলো দুপাশে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধা।দেখতে একদমই ছোট বাচ্চা মনে হচ্ছে।চেহারার আদল অনেকটা অধিরের দিকে গেছে।কোথাও যেন অনেকখানি মিল আছে।তবে মেয়েটা ভিষনই দুষ্টু প্রকৃতির।রিয়া এসে আদির পাশ ঘেষে বসতেই নাক মুখ ছিটকে তাকালো আদি।
-এই দূরে গিয়ে বস।গাঁ ঘেষে বসছ ক্যান? যা দূরে যা।
রিয়া মিষ্টি হেসে আরো কিছুটা গা ঘেষে বসলো আদির।আদি ভ্রু কুচকে তাকাতেই মিষ্টি করে হাসলো রিয়া।অলটাইম কেকের প্যাকেট ছিড়ে কেক মুখে দিতে গেলেই দেখলো আদি তাকিয়ে আছে।
-খাবি?
আদি মাথা দুলিয়ে হ্যা বলতেই কেকটা আদির দিকে এগিয়ে দিলো রিয়া।আদি কেকটা হাতে পেতেই খেতে শুরু করলো। পুরোটা শেষ করে রিয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো সে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।আদি হাসার চেষ্টা করলো।বললো,
-প্রিয় দুশমন বোন।শোন তোর এসব খাওয়া ঠিক নয়।জিম টিম তো করিস না।এসব খেয়ে খেয়ে একদিন বেলুন হয়ে যাবি।বাতাস হলে উড়ে যাওয়ার চান্সও আছে।গ্যারান্টি কি।এমনিতেও তোদের মত মানুষের জায়গা পৃথিবীতে নয়।তোরা হলি মঙ্গল গ্রহের প্রানী। তবে তোরা যেখানে থাকবি সেখানকার নাম আর মঙ্গল থাকবে বলে মনে হয় না।সেটা অমঙ্গলে পরিনত হবে।যাই হোক যা বলছিলাম।মোরাল অফ দা স্টোরি হল এখন থেকে এসব আর খাবি না।যদি খুব বেশি খারাপ লাগে তবে কিনবি।কিনে এনে আমায় দিবি।আমি না তোর ভাই? আমি খাওয়া মানেই তো তোর খাওয়া।এতে তোর খাওয়াও হবে আর তুই মোটাও হবি না।লজিক দেখেছিস?
সাহিল শুনেও না শোনার ভান করে কাজ করতে লাগলো।এসবে কান দিলে এখন তার কাজটাই আর হবে না।এসব ফালতু লজিক শোনার ইন্টারেস্টও তার নেই।রিয়া কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে মিষ্টি করে হাসলো।বললো,
-ওয়াও ভাই সত্যিই আউটস্ট্যান্ডিং লজিক ছিল এটা।আমি এতো দিন খেয়ালই করি নি আমার আদি ভাই….. সাহিল ভাইয়া আর,অধির ভাইয়ার থেকেও বেশি স্মার্ট।বেশি হ্যান্ডসাম। মেয়েরা কি আর এমনি এমনি পিছনে ঘুরঘুর করে নাকি।মাশআল্লাহ কি বডি।সাহিল ভাইয়া আর অধির ভাইয়া তোর ধারে কাছেও ঘেষতে পারবে না।তুই যে এতো হ্যান্ডসাম এন্ড স্মার্ট সেটা আমি এতো দিন নোটিসই করি নি।কি করে পারলাম এটা?
আদি চুলগুলো ঠিক করতে লাগলো।একটু এ্যাটিটিউড আনার চেষ্টা করে বললো,
-সত্যি বলছিস? আমি অধির ভাইয়া আর সাহিলের থেকেও হ্যান্ডসাম আর স্মার্ট? এতো দিনে তুই একটা ভালো কথা বলেছিস।এটা তোর অনেক আগেই বলা উচিত ছিল।যাই হোক এতো দিন পরে হলেও বিষয়টা নোটিস করেছিস বুঝতে পেরেছিস তার জন্যে আমি অনেক খুশি হয়েছি।
-তাহলে এবার আমাকেও খুশি কর ভাইয়া।
-বল তোর কি চাই? তুই যা চাবি তাই দেবো আজ।কারন তুই আমাকে আজ খুশি করেছিস।
-তাহলে আমাকে দু হাজার টাকা দে।
-মাত্র দু হাজার? এই নে পুরো পাঁচ হাজার দিলাম।এভাবে সব সময় আমার তারিফ করতে থাকবি।
ওয়ালেট থেকে পাচ হাজার টাকা রিয়ার হাতে দিতেই চোখ মুখ চিক চিক করে উঠলো রিয়ার।টাকা গুলো হাতের মুঠোই নিয়ে বলে উঠলো,
-তুই আসলেই একটা হাতি।
আদি ভ্রু কুচকে তাকালো।বললো,
-তুই আমাকে হাতি বললি?
-হাতিকে হাতি ছাড়া কি বলবো? হাতির মত এত্তো বড় শরির আর এইটুকু ব্রেইন।আমি তোর নামে এতোক্ষন মিথ্যে মিথ্যে প্রশংসা করলাম আর তুই বেলুনের মত ফুলে গেলি? আবার এর জন্যে আমাকে পুরো পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দিলি।তুই হ্যান্ডসাম, স্মার্ট কিছুই নস।তুই হলি একটা হাতি।বুনো হাতি।একটা কেকের বিনিময়ে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করে নিলাম তোর থেকে।এক্ষেত্রে আমি হলাম সুপার ডুপার স্মার্ট।
আদি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই রিয়া উঠে দৌড় লাগালো বাড়ির ভেতর।এদিকে সাহিলের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।তার ভাইটা যে আসলেই একটা হাতি বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই।আদি অসহায় চোখে সাহিলের দিকে তাকাতেই সাহিলের হাসি আরও বাড়লো।তার এখন গড়াগড়ি দিয়ে হাসতে ইচ্ছে করছে।দুদিন হলো নাতাশা ঢাকার বাইরে গেছে তার মামা বাড়িতে।দুদিন অনেক মিস করেছে সে নাতাশাকে।মন খারাপও ছিলো অনেকটা।অাজ দুদিন পরে এমন হাসতে পেরে মন খারাপ ভাবটাও শেষ হয়ে গেলো।সাহিল হাসতে হাসতেই বললো,
-বিশ্বাস কর আদি।তুই থাকলে না আমি একদমই নাতাশাকে মিস করি না।
চলবে……