শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৩৩

0
3755

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৩৩

🌼
কিছুক্ষন আগেই মিসেস আনোয়ারা চৌধুরি ঘোষনা করেছেন এই সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সাহিল আর নাতাশার বিয়ে দেখতে চান।এই সপ্তাহের আর মাত্র চার দিন বাকি।এতো তাড়াতাড়ি সব কিছুর ❤️এরেন্জমেন্ট করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য বিষয়।নানা রকম সমস্যা দেখিয়েও মিসেস আনোয়ারা চৌধুরিকে দিয়ে বিয়ের ডেইট পেছানো সম্ভব হয় নি।তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল।বিয়ে এই সপ্তাহতে হবে মানে এই সপ্তাহতেই হবে।নো নড়চড়।এর পেছনের কারনটাও অনেকটাই যুক্তিহীন আর হাস্যকরও বটে।তিনি ভোর রাতে ভিষনই খারাপ রকমের স্বপ্ন দেখেছেন।সেই স্বপ্নের রেশ ধরেই এই বিয়ের ব্যবস্থা। আদি,রিয়া, সাহিল, নাতাশা অনেক চেষ্টা করেও সেই স্বপ্ন সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে নি।মিসেস আনোয়ারা চৌধুরির মতে খারাপ স্বপ্ন কাউকে বলতে নেই।তাহলে সেটা সত্যি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।তার উপর সেটা যদি ভোর রাতের দুঃস্বপ্ন হয় তাহলে তো কথায় নেই।
। স্বপ্নের বিষয়ে কিছু বলা মানেই ঘোর বিপদ। তাই তিনি তার স্বপ্ন সম্পর্কে কাউকেই অবগত করতে চান না।তিনি এখন আল্লাহর কাছে শুধু এটাই চাইছেন যেন বিয়ের মত শুভ আর পবিত্র বিষয়ের মধ্যে দিয়ে সব বিপদ তিনি দূর করে দেন।

রোশনি তখন বিছানায় বসে গভির মনোযোগে বইয়ের পাতা উল্টাতে ব্যস্ত।হাতে মৌরি মরিয়মের লেখা প্রেমাতাল উপন্যাসের বই।এর আগেও সে এটা বার দু’য়েক পড়েছে।তবুও কেন জানি বার বার পড়তে ইচ্ছে করে।মুগ্ধের উপর সে চরম ভাবে ক্রাশড।বইটা তাকে পিয়া দিয়েছিল।পিয়ার সবসময়ই এসব বই, গল্প, উপন্যাস থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে।তার কোনো এক কাজিন তাকে বইটা গিফট করেছিল।এরপর ঘুরতে ঘুরতে একদিন তার কাছে এসে পৌঁছেছে।প্রথম বার যখন গল্পটা পড়েছিল তখন অদ্ভুদ ভাবেই মুগ্ধের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল সে।মুগ্ধের মতোই জিবন সঙ্গি চেয়েছিল সেদিন।কল্পনায় সেও একটা মুগ্ধ খুজে নিয়েছিল।কল্পনার সেই মুগ্ধ ছিল একান্ত তার নিজের পুরুষ।স্বপ্ন বুনতো তিতিরের মত সেও তার নিজস্ব মুগ্ধের সাথে পাহাড়, ঝর্নায় হারিয়ে যাবে।তার জন্যেও নিজস্ব সেই পুরুষটা মুরগি রান্না করবে।পাহাড়ের চূড়ায় দাড়িয়ে সূর্যাদয় দেখাবে।পাহাড়ি ঝর্নায় শরির ভেজাবে।সব শেষে তার জন্যে অপেক্ষার প্রহর গুনবে।রোশনির ভাবনার মাঝেই অধিরের মৃদু আর্তনাদ কানে এলো। ভাবনার সুতো কাটতেই বইটাকে বালিশের নিচে রেখে সচেতন চোখে তাকালো রোশনি।ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে অধির শার্টে বাটন লাগানোর চেষ্টা করছে।অধিরের আর্তনাদের কারনটাও চট করেই বুঝে গেলো সে। রোশনির মন খারাপ হলো।অপরাধির কালো ছায়া নামলো গোল গাল ফর্সা মুখটাতে। কিছুক্ষন মাথা নিচু করে বসে থেকে উঠে দাড়ালো। গুটি গুটি পায়ে অধিরের পাশে গিয়ে দাড়াতেই ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।কিছুক্ষন রোশনির মুখে স্থির চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,

-এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন? কিছু বলবে?

রোশনি চোখ তুলে তাকালো না।মেঝেতে দৃষ্টি রেখেই মিইয়ে আসা গলায় বললো,

-আপনার খুব বেশি লেগেছে না?বিশ্বাস করুন আমি বুঝিনি আপনি এতোটা আঘাত পাবেন।প্লিজ ক্ষমা করে দিন।নয়তো এর জন্যে আমায় শাস্তি দিন।আপনি যা শাস্তি দিবেন আমি বিনা বাক্যে মেনে নেবো।

অধির সোজা হয়ে দাড়ালো।একহাত পকেটে ঢুকিয়ে বলে উঠলো,

-সত্যিই বিনা বাক্যে মেনে নেবে তো?

-হুম।

-ওকে।তাহলে পানিশমেন্ট দিয়েই দিই কি বলো? কিন্তু কি পানিশমেন্ট দেওয়া যায় বলো তো?উমমমম,,,,,,পেয়েছি।তুমি যেটা করেছো আমিও সেটা করি তোমার সাথে? কি বলো? তবে কামড় দিয়ে নয় অন্যভাবে দাগ বসাতে চায়।সো শুরু করি ঘরওয়ালি?

অধিরের কথা শেষ হতেই চোখ তুলে তাকালো রোশনি।অধিরের মুখে দুষ্ট হাসি দেখেই চোখ রাঙিয়ে তাকালো সে।লোকটা আসলেই অসভ্য।

-আপনি আসলেই অসভ্য।আপনার প্রতি মায়া দেখানোও উচিত না।কামড় দিয়েছি বেশ করেছি।আরো জোরে দেওয়া উচিত ছিলো।অসভ্য লোক একটা।

রোশনি কথাগুলো বলতে বলতেই বেখেয়ালে অধিরের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বসে।অধির মৃদু আর্তনাদ করতেই রোশনি এগিয়ে এসে অধিরের বুকে হাত রাখে।ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,

-সরি সরি।আমার মনে ছিলো না।

অধিরের শার্টের উপরের দুটো বাটন খোলা।রোশনি হাত উঠিয়ে বুকের কাছে শার্টটা সরাতেই আতকে ওঠে।বুকের বা দিকটাই কালচে লাল ক্ষতটা দেখে কান্না পেয়ে যায়।দাতের চিহ্নটা স্পষ্ট। মনে হচ্ছে আগুনে ঝলছে গেছে জায়গাটা।অজান্তে যে সে অধিরকে এতোটা আঘাত করে বসবে কল্পনাও করে নি সে।রোশনির চোখ ছলছল করে উঠলো।ডানহাতটা দিয়ে ক্ষত জায়গায় আলতো ভাবে ছুঁয়ে দিতেই মুচকি হাসলো অধির।রোশনির কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিতেই ছলছল চোখে তাকালো রোশনি।মিইয়ে আসা গলায় বললো,

-আমার জন্যেই আপনি এতো ব্যথা পেলেন।আমি ভিষন খারাপ মেয়ে।না জেনে বুঝে মানুষকে শুধু কষ্ট দিয়ে বসি।আমি….

রোশনিকে কথা শেষ করতে দিলো না অধির।আঙুল তুলে রোশনির ঠোটে রেখে চুপ করালো।

-হুশশশশ।কে বললো আমার বউটা খারাপ? আমার বউ ভিষন লক্ষি মেয়ে।তাকে একদম খারাপ মেয়ে বলবে না বলে দিলাম।

অধির থামলো।রোশনির চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়তেই মুচকি হেসে পানিটুকু যত্ন নিয়ে মুছে দিলো।

-আমার কষ্টে যদি তোমার চোখ থেকে পানি ঝরে তাহলে এমন আঘাত আমি আরো পেতে চাই সুইটহার্ট। তোমার ঠোটের ছোঁয়া পাওয়ার জন্যে হলেও এমন আঘাত আমি রোজ রোজ পেতে চাই।

সকালের ঘটনা।রোশনি তখন অধিরের বাহুডোরে আবদ্ধ।রোশনি চেষ্টা করেও অধিরের বাহুডোর থেকে বেরোতে পারছে না।মুখ উঠিয়ে উপরের দিকে তাকাতেই দেখলো অধির নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।তার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে উনি দিব্যি আরামে ঘুমাবেন? এটা সে কিছুতেই মেনে নেবে না।রোশনির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।শয়তানি হেসে অধিরের উদম বুকের বা পাশটাই কামড়ে ধরলো।অধির কোনো রিয়্যাকশন করলো না।এমনকি নড়াচড়াও করলো না।রোশনি আরো একটু জোরে কামড় দিলো।কিন্তু না অধির আগেই মতোই ঘুমে বিভোর।রোশনি ভ্রু কুচকালো।এতো জোরে কামড় দিচ্ছে অথচ লোকটা উহ আহ তো দূর নড়ছেও না।লোকটার মনের মত শরিরটাও যে লোহার তৈরি সেটা মনেই ছিলো না তার।মনে মনে ঠিক করলো এমন জোরে কামড় দেবে এবার চান্দু বাপ বাপ করে টের পাবে মজা।যেই ভাবা সেই কাজ।রোশনি প্রচন্ড জোরে কামড়ে ধরলো।অধিরের বুকে রিতিমত দাত বসে গেছে রোশনির।তবুও লোকটা একটা টু শব্দ করছে না।রোশনি দেখলো অধিরের বুক লাল টকটকে হয়ে গেছে।ফর্সা চামড়ায় টকটকে ক্ষতটা স্পষ্ট ফুটে উঠছে।চামড়া ভেদ করে এখনি যেন রক্ত ছিটকে বেরিয়ে আসবে।রোশনি নিজেই ভয় পেয়ে গেলো এটা দেখে।দ্বিধা নিয়ে অধিরের মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো অধির আগের মতোই শুয়ে আছে।বন্ধ চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।রোশনি থমকালো।চমকালো।চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো।এতোটা কষ্ট মুখ বন্ধ করে সহ্য করছে মানুষটা? রোশনি ফুঁপিয়ে উঠলো।অধিরের হাতের বাধন ছাড়িয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে কান্নায় ভেঙে পড়লো।রোশনি চলে যেতেই চোখ খুলে তাকালো অধির।বুকের বা দিকটাই তাকিয়ে মুচকি হাসলো।চোখের কোনের পানিটুকু মুছে বললো,

-তোমার দেওয়া প্রথম আঘাত সুইটহার্ট।তোমার মত এটাকেও আমি যত্ন করে রাখবো।

বর্তমান,,,,,

অধির ছাঁয়া আশ্রমে মনিমার সামনে বসে আছে।কিছুক্ষন নিরব থেকে হুট করেই প্রশ্ন করলেন মনি মা,

-রোশনি তোমায় বিয়ে করেছে? কিন্তু কেন?

অধির হাসলো।এক ভ্রু উপরে তুলে বললো,

-কেন? ওর কি বিয়ে করার কথা ছিলো না?

-সেটা না।তবে আমার জানা মতে ওর বিয়েটা তোমার সাথে হওয়ার কথা ছিলো না।

-জিবনে সব কিছু প্ল্যান মাফিক হয় না।হুটহাট করে হঠাৎই অদ্ভুদ কিছু ঘটনা ঘটে যায় আমার সাথে।সেই ঘটনার হাত ধরেই নতুন দিকে মোড় নেয় জিবন।বিয়ে হওয়ার কথা না থাকলেও হয়ে গেছে।এসব ছাড়ুন। আসল কথায় আসা যাক।এখানে এসেছি রোশনি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে।আশা করি আপনি আমায় জানাবেন।

মনি মা ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অধিরকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে নড়েচড়ে বসলেন।

-কি জানতে চাও?

-রোশনিকে এখানে কে বা কারা নিয়ে এসেছিলো?আর ওর বাবা মাই বা কোথায়?

মনি মা দির্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

-রোশনি যখন এখানে আসে তখন ওর বয়স বোধ হয় চার বছরের মত ছিল।গোলগাল ফর্সা শরিরে নোংরা জামা পড়া ছোট্ট একটা পুতুুল।এক ভদ্র লোক ওকে এখানে রেখে যায়।নিজের নামটা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে নি তখন রোশনি।তারপর থেকে এখানেই বেড়ে ওঠে মেয়েটা।

-আয়াশের সাথে কিভাবে পরিচয়?

-রোশনি তখন ক্লাস টেনের স্টুডেন্ট।স্কুল থেকে ফিরছিলো তখন রোশনি।রাস্তায় একটা ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ছুটে যায় সেদিকে।ছেলেটা তখন অনেকটাই ছোট।এক্সিডেন্ট করেছিল।লোকজন দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু দেখছিল ছেলেটাকে।কেউ এগিয়ে আসে নি।সেদিন রোশনিই ছেলেটাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।পুলিশের সাহায্যে ছেলেটার বাবাকে খবরটা জানায়।ছেলেটা আয়াশই ছিল। আয়াশ সুস্থ্য হওয়ার পর রোশনির সাথে প্রায়ই দেখা করতে এখানে আসতোআয়াশ আর ওর বাবা।রোশনির সাথে ততোদিনে আয়াশের খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে ওঠে।এরপর আয়াশের বাবা রোশনিকে এখান থেকে নিয়ে যান।আয়াশের মা ছিলো না।তাই রোশনির সাথে কদিনেই তার বন্ডিংটা খুব গভির হয়ে ওঠে ।রোশনি যখন ইন্টারে ভর্তি হলো তখনই আয়াশের বাবা মারা যান।এরপর রোশনিকে ঘিরেই আয়াশের পৃথিবী গড়ে ওঠে।

-আপনি কি বলতে পারবেন রোশনিকে কে এখানে নিয়ে এসেছিল?

-হ্যা অবশ্যই।একটু অপেক্ষা করো। আমি চেক করে বলছি।

-অফকোর্স।

মনি মা চলে যেতেই দির্ঘশ্বাস ফেললো অধির।মানুষের জিবন কতটা কঠিন।কতোটা কঠিন সময় পার করেছে রোশনি।অধির মনে মনে ঠিক করে সে রোশনির বাবা মাকে খুজে বের করবেই।পরোক্ষনেই মনে হয় তারা কি আদৌও বেচে আছে? বেচে থাকুক বা না থাকুন সে খোজ করেই ছাড়বে।খুজে দেখতে তো দোষ নেই।অধিরের ভাবনার মাঝেই মনি মা এলেন। অধিরের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন,

-এখানে সবকিছু আছে।

অধির ফাইলে চোখ বুলালো।সেখানে নিজাম মেহবুবের নামটা চোখে পড়তেই ভ্রু কুচকে এলো তার।লোকটাকে সে চেনে।বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যানদের মধ্যে একজন উনি।ওনার ছেলে এখন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইকুন।অধির ফাইলটা মনিমার দিকে এগিয়ে দিলেন।

-ধন্যবাদ।

-মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।নতুন করে আর তাকে কষ্ট পেতে দিও না। আমিও চাই তুমি যেন ওর বাবা মার সন্ধান পাও।মেয়েটা যেন আবার হাসতে শেখে।

-চিন্তা করবেন না।আমি থাকতে ওকে আর কোনো কষ্ট ছুঁতে পারবে না।এবার তাহলে চলি।

________________

বিশাল ড্রয়িংরুমের দামি সোফায় বসে আছে অধির।আশে পাশে তাকাতেই চোখ গেলো দেয়ালে টানানো একটা বাচ্চা মেয়ের ছবির দিকে।পাতলা ঠোঁট জোড়ায় বিস্তর হাসি।অধির গভির মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখতে লাগলো।মেয়েটা ভিষনই মিষ্টি।কোমর অবধি লম্বা চুলগুলো পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে আছে।অধির অবাক হলো।মেয়েটার বয়স খুব বেশি হলে চার থেকে পাচ বছর হবে।এইটুকু মেয়ের এতো বড় চুল? তবে মানিয়েছে বেশ।অধির নজর সরিয়ে হাত ঘড়িতে চোখ বুলালো।পাঁচ মিনিট হলো সে অপেক্ষা করছে।হঠাৎ কারো আধো আধো কথায় চোখ তুলে তাকালো অধির।সামনে দাড়ানো গোল গাল ছোট্ট মেয়েটাকে দেখতেই ভ্রু কুচকে এলো তার।এতোক্ষন যে মেয়েটাকে সে ছবিতে দেখছিলো সেই মেয়েটাই তার সামনে দাড়িয়ে আছে।অধির মেয়েটার চুলের দিকে তাকালো।না খোলা নয়।দুপাশে বেনি করা।লম্বা বেনিগুলো কোমর অবধি পৌছেছে।অধিরকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাতের পুতুলটাকে আরো কিছুটা শক্ত করে চেপে ধরলো মেয়েটা।ঠোট উলটে আধো আধো গলায় বললো,

-তুমি কে? এখানে কি কলছো?তুমি আমাল বাবাই এল মত তাকিয়ে অাছো কেন?আমাল বাবাইও এমন কলে তাকায়।আমাল মাম্মাম যখন দুষ্টুমি কলে তখন বাবাই এমন কলে তাকিয়ে থাকে মাম্মামেল দিকে।আমাল মাম্মাম না অনেক দুষ্টুতোমাল মাম্মামও কি অনেক দুষ্টু?

মেয়েটার কথায় হাসলো অধির।হাত দিয়ে ইশারা করে কাছে ডাকতেই গুটি গুটি পায়ে এসে সামনে দাড়ালো মেয়েটা।অধির ঠোটের কোনে হাসির রেখা টেনে বলে উঠলো,

-আমার মাম্মা একদমই দুষ্টু নয় মামনি।আমার মাম্মাম তো অনেক বড় তাই এখন আর দুষ্টুমি করে না।

-আমাল মাম্মামও অনেক বল(বড়)।বাবাই তাও মাম্মামকে পিচ্চি বলে।

কথাটা বলতেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো মেয়েটা।অধির খুব মনোযোগ দিয়ে সে হাসি দেখলো।মেয়েটা হাসি থামাতেই প্রশ্ন করলো অধির,

-তোমার নাম কি প্রিন্সেস?

-আমাল নাম বালিশ মেহবুব।তোমাল মত আমাল বাবাইও আমাকে প্লিন্সেস বলে।

বালিশ নামটা শুনে ভ্রু কুচকালো অধির।বালিশ কি করে কারো নাম হতে পারে।সচেতন মষ্তিষ্কে কিছুটা চাপ দিতেই ব্যপারটা মাথায় এলো তার।

-তোমার নাম বারিশ?

মেয়েটা মাথা দুলিয়ে হ্যা বললো।একগাল হেসে সেও প্রশ্ন ছুড়লো,

-তোমাল নাম কি?

-আমার নাম অধির।অধির চৌধুরি।

বারিশ নিজের মনে কয়েকবার আওড়ালো নামটা।তারপর বললো,

-অধিল চৌধুলি?

অধির সচেতন চোখে তাকালো।তার নামটা যে এভাবেও উচ্চারিত হবে কোনো দিন ভাবে নি সে।

-অধিল চৌধুলি নয় বাবা।এটা অধির চৌধুরি।

-ওটাই তো বললাম। অধিল চৌধুলি।

অধির দির্ঘশ্বাস ফেললো।নামের এমন অকাল মৃত্যুতে তার মন খারাপ হচ্ছে।ব্যপক মন খারাপ হচ্ছে।অধিরের মন খারাপের মাঝেই দুটো ছেলে এসে দাড়ালো বারিশের পাশে।অধির খেয়াল করলো ছেলে দুটো জমজ।ওদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,

-উফফ বারিশ।তুই আবারো “র”কে “ল” বলছিস? তোকে কত বার শিখিয়েছি এটা “ল” নয় “র” হবে।ওনার নাম অধির চৌধুরি।অধিল চৌধুলি বলছিস কেন? ঠিক করে উচ্চারন কর।

বারিশ ঠোট ফুলিয়ে পাশের ছেলেটার দিকে তাকালো।বললো,

-লোহান ভাইয়া দেখো না ইহান ভাইয়া আমায় বকে।

রোহান ভ্রু কুচকে তাকালো।নাক ছিটকে বললো,

-এই একদম আমাকে লোহান ভাইয়া ডাকবি না।আমার নাম রোহান।রোহান বলে ডাক।

রোহানের ধমকে আবারো ঠোট ফোলালো বারিশ।

-আমি লোহানই বলেছি।

-তোর মত বলদের পক্ষে কোনো দিনই আমার নামটা ঠিক মত উচ্চারন করা সম্ভব নয়।আর একবার লোহান ভাইয়া ডাকবি তো একটা চড়ে তোর দাত ফেলে দেবো ফাজিল মেয়ে।

রোহানের কথায় বারিশ মুখ ভেংচি কেটে ইহানের দিকে সরে গেলো।

-তোমাল নাম লোহান লেখেছো (রেখেছো) কেন? ইহান ভাইয়াল মত একটা ভালো নাম লাখলেই পালতে।পচা নাম তোমাল।

-কি? তোর এতো বড় সাহস তুই আমার নামকে পচা বলিস? দাড়া আজ তোর খবর আছে।

রোহান বারিশের দিকে তেড়ে যেতেই বারিশ দৌড় লাগালো।সামনে বাবাকে দেখে বাবার পেছনে গিয়ে লুকালো।

-বাবাই বাবাই লোহান ভাইয়া আমায় মালে।আমায় বকে।

-বকবো না তো কি করবো? তুই আমার নামটাকে এমন বিশ্রী ভাবে উচ্চারন করিস কেন?

-অনেক হয়েছে ঝগড়া লড়াই।এবার উপরে যাও।মাম্মাম সবার জন্যে চকলেসটস কেক বানিয়েছে।জলদি যাও নয়তো মাম্মাম সব একাই খেয়ে নিবে।

কথাটা বলতে দেরি হলেও বারিশের ছুটতে দেরি হলো না।বারিশকে ছুটতে দেখে পেছন পেছন রোহানও ছুট লাগালো।

-এই আস্তে যা ফাজিল মেয়ে।মাছের মত লাফাইতাছোস ক্যান? পড়লে তোর খবর আছে।

ইহানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো সামনে দাড়ানো মানুষটা।বললো,

-তুমি দাড়িয়ে আছো কেন বাবাই? সুবহা তোমার জন্যে উপরে ওয়েট করছে তো কেক নিয়ে।

-সুবহা এসেছে? এতোক্ষন বলো নি কেন বড় বাবাই?

সামনের ব্যক্তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌড়ে উপরে চলে গেলো ইহান।ইহানের দৌড় দেখে মুচকি হেসে অধিরের দিকে তাকালো সে।ঠোটে হাসির রেখা টেনে হাত বারিয়ে বললো,

-হ্যালো মিষ্টার অধির চৌধুরি।

অধিরও মুচকি হাসলো।হাত মিলিয়ে বললো,

-হ্যালো মিষ্টার নিল মেহবুব।

-সরি অনেকক্ষন অপেক্ষা করানোর জন্যে।বোর হয়েছেন নিশ্চয়?

-ইটস ওকে।আপনার এন্জেলটা না থাকলে হয়তো বোর হতাম।ভিষন মিষ্টি আপনার মেয়েটা।

-মিষ্টি কি না জানি না।তবে ভিষন দুষ্টু। মা মেয়ের দুষ্টুমিতে আমার অবস্থা করুন।

নিলের কথায় হাসলো অধির।নিল তার নিল রঙা চোখ দুটো অধিরের মুখে স্থির রেখে বললো,

-তা আপনি হঠাৎ আমার বাড়িতে?

-একটা দরকারে এসেছি।

-হ্যা সেটাই স্বাভাবিক।নয়তো অধির চৌধুরির সময় কোথায় আমার বাড়িতে আসার।

-বিজনেসম্যানদের সময়টারই বড্ড অভাব মিষ্টার নিল।আর এটা আপনার থেকে ভালো আর কে জানে।

নিল হাসলো।দুজনের কথার মাঝেই বড় বড় পা ফেলে ওদের সামনে এসে দাড়ালো আবির।অধিরকে দেখে হাত বাড়ালো। বললো,

-অধির চৌধুরি আমাদের বাড়িতে? হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!!!

অধির হাত মেলালো।বললো,

-হ্যালো মিষ্টার আবির মেহবুব।

-হ্যালো।তা হঠাৎ এখানে আসার কারন? নিশ্চয় বিশেষ কোনো কারন হবে?

-হ্যা বিশেষ কারনই বলতে পারেন।আজ থেকে প্রায় সতেরো আঠারো বছর আগে মিষ্টার নিজাম মেহবুব একটা মেয়েকে রাস্তায় পেয়েছিলেন।এরপর তিনি সেই মেয়েকে ছাঁয়া আশ্রমে রেখে আসেন।সেই মেয়েটা সম্পর্কেই জানতে এসেছি।

-বাবা তো এখন দেশে নেই।তবে বাবার থেকে শুনেছিলাম প্রায় সতেরো বছর আগে তিনি এক মেয়েকে রাস্তায় পান।এর পর বাবা মেয়েটাকে আশ্রমে রেখে আসেন।

নিলের কথা শেষ হতেই প্রশ্ন ছুড়লো অধির।

-উনি কি মেয়েটার বাবা মা সম্পর্কে কিছু জানেন?

-না বাবা তেমন কিছু তো জানেন না।মেয়েটা তার নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে নি তখন।তবে কারো নাম নিয়ে নাকি কাদছিল।

-নামটা বলতে পারবেন?

-উমমমম রোদ টাইপ কিছু ছিলো।ও হ্যা মনে পড়েছে।আলো। আলো দি আলোদি বলে কাদছিল।

-থ্যাংক ইউ মিষ্টার নিল।অনেক উপকার করলেন।নিজাম মেহবুব বিডিতে ফিরলে শুধু আমায় একবার ইনফর্ম করে জানাবেন প্লিজ।

-ইয়া অফকোর্স।কিন্তু আপনি এসব কেন জানতে চাইছেন?মেয়েটাকে চেনেন আপনি?কি হয় আপনার?

অধির ঠোটে হাসি টেনে বললো,

-ওয়াইফ।সি ইজ মাই ওয়াইফ।

পাশ থেকে আবির বলে উঠলো,

-ও মাই গড।দুদিন আগে যে নিউজটা দেখলাম সেই নিউজের মেয়েটা আর সেদিনের সেই পিচ্চি মেয়েটা এক!!!আর সেই মেয়েটা আবার আপনার বউও? হোয়াট এ কোইন্সিডেন্স!!!! ইটস আনবিলিভেবল।

ওদের কথার মাঝেই ট্রে ভর্তি খাবার এনে টেবিলে রাখলো রিত্তি আর মিথি।অধিরের সাথে দুজনের পরিচয় করিয়ে দিতেই মিষ্টি হাসলো দুজনে।অধির একপলক রিত্তিকে দেখেই চোখ ফেরালো।বারিশ মেয়েটার সাথে রিত্তির অনেকটাই মিল খুজে পেল অধির।রিত্তির আরো একটা বিষয় খেয়াল করতেই দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।রিত্তিও রোশনির মত মুখ ভঙ্গি করে কথা বলছে। কথার মাঝে মাঝে অকারনেই ঠোট উল্টাচ্ছে।চোখে মুখে আচড়ে পড়া চুলগুলো অলস হাতে কানের পেছনে গুজে দিচ্ছে।রোশনিও ঠিক এমনই করে।রোশনির কথা মনে হতেই দির্ঘশ্বাস ফেললো অধির।ওর বাবা মাকে খুজে বের করে ভিষন রকম চমকে দিতে ইচ্ছে করতে তার।রোশনির হাসি ভরা মুখটা দেখার প্রবল লোভ জন্মাচ্ছে মনে।মেয়েটার হাসি হাসি মুখটা দেখার জন্যে হলেও সে তার বাবা মাকে খুজে বের করবে।

চলবে….

[অনেকেই “তুই আমার” গল্পের সিজন ৩ চেয়েছিলেন। বারিশ-রোহান,সুবহা-ইহান কে নিয়ে সিজন ৩ এর জন্য অনুরোধ করেছিলেন
।কিন্তু আমি আর নতুন করে সিজন বাড়াতে চাচ্ছি না।ওরা ওভাবেই ঠিক আছে।তাই যারা ওদের মিস করছিলেন তাদের জন্যে এই গল্পে ক্ষনিকের জন্য ওদের নিয়ে এলাম।কার কেমন লাগলো জানাবেন।আর যারা “তুই আমার ” গল্পটা এখনো পড়েন নি তারা প্লিজ গল্পটা পড়বেন।ধন্যবাদ ]

সবাইকে রামাদান কারীমের শুভেচ্ছা।

#ProudMusulman

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here