#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ৫
🌸
আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে রোশনি।চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে।এটা কারো প্রতি রাগ নাকি কান্না না করার জন্যে লাল হয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে না।আবার হতে পারে দুটোর জন্যেই।রোশনি পেট থেকে টিশার্ট সরাতেই কোমর আর পেট জুড়ে দেখা গেলো রঙ লেগে আছে। রোশনি কোমর আর পেটে হাত রাখতেই ব্যাথায় আতকে উঠলো। এতোক্ষনে আটকে রাখা নোনা জলটুকু বৃষ্টির পানির মত গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।আর তার সাথেই তৈরি হলো অধির চৌধুরির প্রতি একরাশ ঘৃনা।কিছুক্ষন আগের ঘটনা……
রোশনির হিচকি দেওয়াতে অধিরের হুশ হয়।এতোক্ষনে অধির খেয়াল করে সে রোশনির হাত আর কোমর খুব রুডলি চেপে ধরে আছে।অধির এবার রোশনির চোখের দিকে তাকায়।রোশনির চোখ দুটোতে পানি টলমল করছে।কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার সেটা চোখ থেকে কিছুতেই পড়ছে না।অধিরের কাছে মনে হচ্ছে যেন রোশনি ইচ্ছে করেই চোখে পানি আটকে রেখেছে।রোশনির কাপা কাপা ঠোট আর পানিতে ভরা চোখ দেখেই অধিরের হাত আলগা হয়ে আসে।আর সাথে সাথেই অধির রোশনিকে ছেড়ে দুকদম পিছিয়ে আসে।রোশনি অধিরের থেকে ছাড়া পেয়ে চুপ চাপ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।অধিরের রাগটা এবার নিজের উপর হচ্ছে।সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এতোটা রিয়্যাক্ট করার কি খুব প্রয়োজন ছিলো…? অধির বাকা চোখে রোশনির দিকে তাকালো।রোশনি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।অধিরের চোখ এবার রোশনির মুখ থেকে সরে রোশনির কোমর আর হাতের দিকে পড়লো।লালচে হয়ে গেছে জায়গাটুকু।অধিরের বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলো।অধির চোখ বন্ধ করে কয়েকটা লম্বা শ্বাস নিলো।তারপর সামনে তাকাতেই টেবিলের উপর গ্লাসে পানি দেখতে পেলো।অধির পানির গ্লাসটা হাতে তুলে কয়েক কদম এগিয়ে গেলো রোশনির দিকে।রোশনি এখনো হিচকি দিয়ে চলেছে।রোশনির সামনে অধির পানির গ্লাস ধরলো।কিন্তু রোশনি এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।একটা বার অধিরের মুখের দিকে পর্যন্ত তাকাচ্ছে না।অধির এবার মুখ খুললো….
___পানিটা খেয়ে নাও,,,,হিচকি বন্ধ হয়ে যাবে….
অধিরের কথা শুনে এবার রোশনি অধিরের দিকে তাকালো।অধির যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রোশনির চোখে নিজের জন্য এক আকাশ রাগ আর ঘৃনা।রোশনি কোনো কথা না বলে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।রোশনির এখন এই লোকটার মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না।অধির এবারও শান্ত ভাবে বলে উঠলো….
___পানিটা খেতে বলেছি….
রোশনির যেন এবার আর সহ্য হলো না।তেতে উঠে বলে উঠলো…
___কে আপনি…? কেন আপনার কথা মত চলতে হবে আমাকে.? খাবো না আমি পানি..।কি করবেন..? আবারো ব্যাথা দিবেন তাই তো..? কাল পর্যন্ত আমার মনে আপনার জন্যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল।আর আজ এখন এই মুহূর্ত থেকে ঘৃনা করি আমি আপনাকে বুঝতে পেরেছেন…? আপনি ভিষন খারাপ একটা মানুষ।ভিষন খারাপ।চলে যান এখান থেকে…
রোশনি মৃদু চিৎকার করে কথাগুলো বললো।অধির তবুও শান্ত গলায় বলে উঠলো……
___ওকে,,,আমি খারাপ মানুষ।আমি যেমন আছি তেমনই খুশি আছি।আর আমাকে সম্মান করতেও হবে না তোমায়।আর কি বললে চলে যেতে..? ওকে আমি চলে যাবো।তার আগে এই পানিটা খাও,,, হিচকি দিচ্ছো এখনো,,,, দেন আমি চলে যাবো….
অধিরের শান্ত গলার কথাটাও পছন্দ হলো না রোশনির।
___খাবো না আমি পানি।চলে যান আপনি এখান থেকে….
রোশনির কথাগুলো শুনেই অধির দাতে দাত চেপে বলে উঠলো….
___আমাকে জেদ দেখাতে এসো না।তোমার ধারনাও নেই অধির চৌধুরির জেদ সম্পর্কে।ভালোই ভালোই পানিটা খেয়ে নাও নয়তো কিভাবে খাওয়াতে হয় সেটা আমার খুব ভালো করে জানা আছে।যেটা তোমার জন্যে খুব একটা ভালো হবে না।সো চুপচাপ এটা শেষ করো…..ড্রিংক ইট….
অধিরের চোখ আবারো লাল হয়ে গেছে।চোখ থেকে যেন আগুন বের হচ্ছে।রোশনি অধিরের এমন চেহারা দেখে ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেও তা প্রকাশ করছে না।রোশনি মনে মনে সাহস জুগিয়ে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি অধির বলে উঠলো….
___নো মোর ওয়ার্ড।আদারওয়াইজ……জাস্ট ডিংক ইট।ড্রিংক ইট ড্যামইট……
অধিরের লাল চোখ আর ধমকে বলা কথা শুনেই রোশনির হিচকি ওঠা আরো বেড়ে গেলো।অধির এবার রোশনির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই রোশনি অধিরের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানি খেয়ে নিলো।
___ওয়াশরুম কোন দিকে….?
রোশনি যেন কথাটা বুঝতে পারলো না।তাই অধিরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই অধির বলে উঠলো…
__ওয়াশরুম…
___ওই তো ও.ওই দ.দিকে….
রোশনি কাপা কাপা গলায় হাত উঠিয়ে দেখিয়ে দিলো।অধির কিছু না বলেই চলে গেলো ওয়াশরুমে।আর খানিক বাদে ক্লিন হয়ে বেড়িয়েও এলো।তারপর রোশনির দিকে একপলক তাকিয়েই হনহনিয়ে বেড়িয়ে গেল।
আয়াশের কথায় রোশনির ধ্যান ভাঙলো।আয়াশ দেখার আগেই চোখের পানিটুকু মুছে নিলো রোশনি।তারপর চলে গেলো নিজের কাজে।অন্যদিকে অধিরের মেজাজটা একদম চড়ে আছে।রোশনির সাথে এতোটা রুড বিহেব করা তার উচিত হয়নি।কিন্তু সেই মুহূর্তে কিছুতেই রাগটাকে কন্ট্রোলে আনতে পারে নি অধির।অধির দ্রুত পা চালিয়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই দেখে সবাই সোফায় বসে আছে।অধির ওদের সামনে যেতেই অধিরের মা উঠে এসে বলে উঠলেন….
___হোয়াট হ্যাপেন্ড বেটা…? আর তোর জামায়,শরিরে রঙ আসলো কি করে….?
সবার দৃষ্টি এখন অধিরের দিকে।অধিরের শরিরে রঙ আসলো কোথা থেকে আর অধিরই বা এমন রেগে কেন আছে..?
___মম,,আমি একা থাকতে চাই।কেউ যেন আমায় ডিস্টার্ব না করে….
অধির পানের প্যাকেটটা অাদিলের দিকে ছুড়তেই আদিল সেটা কোনো রকমে ক্যাচ করে নিলো।আর অধির গটগটিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।এদিকে কেউই বুঝতে পারছে না অধিরের এমন করার মানে।সাহিল বলে ওঠে….
___হঠাৎ করে ওর আবার কি হলো…? যখন গেলো তখন তো ঠিকই ছিলো….
সাহিলের কথার পিঠে আদিল বলে উঠলো…
___দেখে তো মনে হলো হলি খেলে এসেছে।সেটা বড় কথা নয়,,,,আমাকে রেখে একা হলি খেললো ক্যামনে ভাইয়া…? একবারও তার এই ছোট ভাইটার কথা মনে হলো না…?
আদিল ন্যাকা কান্না করে কথাটা বলতেই সাহিল পিঠে একটা চাপড় মারলো আদিলের।
__সব সময় এতো বাজে কথা কোথা থেকে আসে তোর মুখে..? দেখলি না অধির রেগে আছে।নিশ্চয় কিছু নিয়ে ঝামেলা হয়েছে…
তখনই অধিরের মা মিসেস ঝুমা চৌধুরি বলে উঠলেন….
__নিশ্চয় ওই পান কিনতে গিয়ে কিছু হয়েছে। ওকে কি এসব করা মানায়…? সব সময় আমার ছেলেটার পিছনে না লাগলে তোদের হয় না…?
মিসেস ঝুমা চৌধুরি আদিল আর সাহিলকে উদ্দেশ্য করেই বলে উঠলেন।তখনি সোফা ছেড়ে উঠে বলে উঠলেন রুমা চৌধুরি।মানে আদিল আর সাহিলের মা।
___অধির ছোট নয় ঝুমা।যে আদি আর সাহিল ওকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে কিছু বলবে আর অধিরও সেটা করতে শুরু করবে।অধির না চাইলে তাকে কখনোই ওখানে নিতে পারত না কেউ।আর আদিল আর সাহিলকে নিয়ে বাজে কথা বলা বন্ধ কর।আমি তো অধিরকে নিজের ছেলে ছাড়া আলাদা করে দেখিনি তাহলে তুই কেন আমার ছেলেদের দেখতে পারিস না বলতে পারিস…?
ঝুমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই দাদিজান সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন।তারপর কঠিন স্বরে বলে উঠলেন…
___ব্যাস,,,আর কোনো কথা নয়।অনেক হয়েছে।সব সময় এমন ঝগড়া করা বন্ধ করো তোমরা।তোমার ছেলে আমার ছেলে এসব বলা বন্ধ করো।ওরা তোমাদের দুজনের ছেলে হলেও ওরা তিনজন আমার নাতি।আর সব থেকে বড় কথা ওরা তিনজন ভাই।ওরা কখনো,নিজেদের চাচাতো ভাই বলে মনে করে না।তাই তোমরাও এই নিয়ে কোনো কথা বলবে না।আমি যেন আর একটা কথাও না শুনি।
দাদিজানের কথা শুনে আর কারোরই সাহস হলো না কথা বলার। যে যার রুমে চলে গেলো।আর দাদিজানও নিজের রুমের দিকে হাটা দিলেন।রুমা আর ঝুমা এক সাথেই পড়াশোনা করেছে।বলতে গেলে অনেকটা কাছের বান্ধবীই ছিলো তারা।একই বাড়িতে বিয়ে হওয়ায় দুজনের খুশিও ছিল দেখার মত।কিন্তু দিন যেতেই ঝুমার মনে অহংকার বাসা বাধতে শুরু করলো। চৌধুরি বাড়ির বড় বউ হিসেবে সে যেন আকাশে উড়তে লাগলো।আর আস্তে আস্তে রুমার সাথের সম্পর্কেও মরিচা ধরতে শুরু করলো।
সাহিল আর আদিল দাড়িয়ে আছে চুপচাপ।এরপর আদিল বলে উঠলো….
___আমাদের ফ্যামিলটা সিরিয়ালের মত তাইনা।সব সময় ড্রামা চলতেই থাকে।
আদিলের কাধে হাত রেখে সাহিল বলে উঠলো…
___তোর মত ড্রামাবাজ যেই ফ্যামিলিতে থাকবে সেখানে তো ড্রামা থাকবেই।এসব ছাড়,,আর চল….
রাত প্রায় একটা ছুঁইছুঁই। অধির বেলকোনিতে দাড়িয়ে আছে।প্রায় আধাঘন্টা ধরে বিছানায় চোখ বন্ধ করে পড়ে থেকেও ঘুমেরা চোখে ধরা দিলো না।চোখ বন্ধ করলেই শুধু রোশনির মুখটা ভেসে উঠছে।তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বেলকোনিতে এসে দাড়িয়েছে অধির।
সকাল সকালই পিয়া এসে হাজির হয়েছে রোশনির ছোট্ট বাড়িটাই।আর এসেই আয়াশের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠেছে।
___দোস্ত আর কতোক্ষন….? পাচ মিনিট পাচ মিনিট করে করে পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগায় ফেললি।এবার তো বের হ।আই এম ট্রায়ার্ড ইয়ার…
পিয়া কথা গুলো বলেই ফুস করে নিশ্বাস ছাড়লো।রোশনি সেই কখন থেকে ঘরে দরজা দিয়ে ড্রেস পড়ছে।আর সে চাতক পাখির মত রোশনির জন্যে অপেক্ষা করছে।রোশনি আরো সাত মিনিট পর দরজা খুলে বের হলো।রোশনি বের হতেই পিয়া উঠে দাড়ালো।
__উফফ আল্লাহ বাচাইছে বুঝলি।সত্যি বলছি দোস্ত,,আর কিছুক্ষন দেরি করলে আমাকে আর এই দুনিয়ায় পাইতি না।কি করলি বলতো এতোক্ষন ধরে দরজা আটকে..? সদ্য বিয়ে করা বউ জামাইও তো এতো টাইম নেয় না রোমান্স করতে….
পিয়ার কথার পিঠে কোনো কথা বললো না রোশনি।কিই বা বলবে সে…? কিই বা বলার থাকতে পারে। এটা বলবে যে কোমরের দাগ গুলো যাতে দেখা না যায় তাই সব ড্রেস এক এক করে পড়ে দেখছিলো।রোশনির ভাবনার মাঝেই আয়াশকে বাই বলে রোশনিকে টেনে বাইরে বেরিয়ে এলো পিয়া।তারপর রিকশা করে সোজা চলে এলো চৌধুরি ম্যানশনে।দুই তলা বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমে দাড়ায় রোশনি আর পিয়া।রিকশা ভাড়া মিটিয়ে সামনে তাকাতেই পিয়া বলে ওঠে….
___আরেব্বাস,,,,,,কি বিশাল বাড়ি দোস্ত…? এমন বাড়ি তো শুধু টিভিতেই দেখেছি…….
রোশনিও বেশ অবাক।সত্যই বাড়িটা ভিষন সুন্দর।বাইরে থেকেই এতোটা সুন্দর না জানি ভিতরটা কত সুন্দর।রোশনি আর পিয়া দুজনে মিলে ওয়েডিং প্ল্যানিং এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজে জয়েন করেছে।কারন শুধু ক্যান্টিনে কাজ করে যে টাকা আসছে তাতে মাসের শেষে টানাটানি পড়ে যায়।
দুজনে চৌধুরি ম্যানশনের বিশাল গেইটের সামনে দাড়াতেই দুজন গার্ড ওদের পথ আটকালো।পিয়া আনোয়ারা চৌধুরির কথা বলতেই গার্ডগুলো ওদের ভিতরে যাওয়ার পারমিশন দিলো।কারন গার্ডদের আগে থেকেই বলে রাখা হয়েছিল রোশনিরা আসলে যেন তাদের না আটকায়।রোশনিরা গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো।ভিতরটা যে এতো সুন্দর বলার বাইরে।বাড়ির সামনে দিয়ে লম্বা সরু রাস্তা।আর দুইপাশে লাইন করে ছোট ছোট ফুলের গাছ লাগানো।তাতে সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে আছে।আর বাড়ির একসাইডে ফুলের বাগান করা।না জানি কত রকমের ফুল ফুটে আছে সেখানে।গেটের কাছেই পিজি হাইড্রোঞ্জা গাছ লাগানো।তাতে অসংখ্য সাদা ফুল ফুটে আছে।রোশনির চোখ যায় বাড়িটার বা দিকে থাকা পুকুরটার দিকে।পুকুর থেকে কিছুটা দূরে হিজল ফুলের গাছ লাগানো।বিশাল গাছটাতে যেমন রয়েছে অসংখ্য লাল ফুল তেমনই গাছের তলায় সুন্দর ভাবে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঝড়া ফুল।ফুলের জন্যে মাটি দেখা যাচ্ছে না।রোশনির কাছে মনে হচ্ছে মাটিতে কেউ রক্তলাল আলতা লাগিয়ে দিয়েছে।তাইতো এতোটা লাল দেখাচ্ছে।পিয়া নিজে নিজেই বকবক করছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ করেই মনে হলো তার পাশে রোশনি নেই।আর সাথে সাথেই পাশে ফিরে দেখলো,সত্যিই রোশনি নেই।মেয়েটা গেল কোথায় তবে…? পিয়া পিছনে তাকিয়ে দেখলো সেখানেও নেই।ডান দিকে তাকাতেই দেখতে পেল রোশনি উপরের দিকে চেয়ে আছে পলকহীন ভাবে।পিয়া রোশনির দিকে এগিয়ে গিয়েই হালকা ধাক্কা দিলো।
___কি রে,,, এমন হা কইরা তাকায় আছোস ক্যান…?
পিয়ার কথা শেষ হতেই রোশনি হাত উঠিয়ে আঙুল দিয়ে ইশারা করলো রোশনি।পিয়া কিছু না বুঝে ভ্রু কুচকে উপরে তাকাতেই দেখতে পেলো অনেক অনেক কালো গোলাপ।আর সাথে সাথেই মুখ হা হয়ে গেলো।
___দোস্ত…আমরা কি কোনো রুপ কথার রাজ্যে চলে এলাম নাকি…? ও মাই গড,,আই কান্ট বিলিভ ইট।ইটস ওয়ান্ডারফুল,,,,,,,,,, ইটস আমেজিং……
রোশনি কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে একটা কালো গোলাপ ছুতে গেলেই মালি এসে ধমকে ওঠে।আর সাথে সাথেই রোশনি হাত নামিয়ে নেয়।এরপর রোশনি আর পিয়া চলে যায় বাড়ির মধ্যে।বাড়ির ভিতরের দৃশ্য দেখেও দুজনের মুখ অটোম্যাটিক্যালি হা হয়ে যায়।এটা সত্যি যেন কোনো রাজকুমারের স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ।রোশনির কাছে মনে হচ্ছে সে কোনো স্বপ্নপুরীতে চলে এসেছে।রোশনি আর পিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে।বিশাল ড্রয়িংরুম। আর ড্রয়িংরুম থেকে সোজা দুদিক দিয়ে চলে গেছে দোতলায় যাওয়ার সিড়ি।প্রত্যেকটা আসবাবপত্র আর ঘরে থাকা স্টাইলিশ জিনিস গুলোই বলে দিচ্ছে বাড়ির মালিকের রুচিবোধ কতোটা উন্নত।রোশনি সব কিছু ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে।এদিকে পিয়ারও একই অবস্থা।হঠাৎ করেই ওদের কেউ কিছু বলে উঠলো……
____কারা তোমরা…? আর এখানে কি করছো…?
রোশনি আর পিয়া পিছনে ফিরতেই দেখতে পেলো একজন বয়ষ্ক মহিলা।বয়সটা বেশি হলেও চেহারার মাধুরী এক ফোটাও কমাতে পারে নি।চৌখো নাক,,পাতলা ঠোট,মায়াবি দুটো চোখ যাতে সাদা গ্লাসের চশমা পড়া,কুচকানো গাল আর মাথায় সাদা চুল।আর শরিরে জড়ানো ঘিয়া রঙের সুন্দর শাড়ি।মহিলার মধ্যে কেমন যেন একটা জমিদার গিন্নি জমিদার গিন্নি ভাব দেখতে পাচ্ছে রোশনি।আচ্ছা রোশনি কি একবার জিজ্ঞাসা করবে এই কথা…? পরোক্ষনেই মনের এই অদ্ভুদ ভাবনাকে দুরে ঠেলে দিলো।তারপর আস্তে করে বলে উঠলো….
___আস সালামু আলাইকুম ম্যাম…..
রোশনি মুখে হাসি রেখেই আনোয়ারা চৌধুরিকে সালাম দিলো।
___ওয়ালাইকুম আস সালাম।তোমাদের তো ঠিক চিনতে পারলাম না…..
আনোয়ারা চৌধুরি চশমাটা বাম হাতে ঠিক করতে করতে বলে উঠলেন।তখনই পিয়া বলে উঠলো…
___জ্বি,,,আমরা দি ড্রীম ট্রাস্ট ওয়েডিং প্ল্যানার এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে এসেছি।মিষ্টার জামাল আমাদের পাঠিয়েছেন।
__ও তোমরা ওখান থেকে এসেছো।ভালোই হয়েছে তোমরা এসে গেছো।বসো,,,,তোমাদের সব বুঝিয়ে দিই…..
রোশনি আর পিয়া সোফায় বসে পড়লো।আর আনোয়ারা চৌধুরিও সিঙ্গেল সোফায় আরাম করে বসলেন।আনোয়ারা চৌধুরি বলে উঠলেন….
___আমার নাতির এংগেজমেন্ট আর বিয়ের জন্যে তোমাদের আসতে বলেছি।আর পনেরো দিন পর আমার এক নাতির এংগেজমেন্ট। তার দুই মাস পরে আমার বড় নাতির বিয়ে।আসলে বড় নাতির এংগেজমেন্ট হয়েই আছে।তাই আমি চাই,,,,,সব কিছু যেন একদম ঠিকঠাক হয়।কোনো কমতি যেন না থাকে।বাড়ি সাজানো,খাবার,পোশাক সব কিছু পারফেক্ট চাই।
রোশনি হেসে বলে উঠলো…..
__ডোন্ট ওয়ারি ম্যাম।আমরা পারফেক্টলি হ্যান্ডেল করবো।নো প্রবলেম ……
আনোয়ারা বেগমও যেন হাফ ছেড়ে বাচলেন।মেয়েটাকে দেখেই ওনার মন বলছে মেয়েটা সব সামলে নেবে।রোশনির মুখটা যেন একটু বেশিই মায়ায় ভরা মনে হচ্ছে আনোয়ারা চৌধুরির।এদিকে পিয়া একটু ওয়াশরুমে যায়।আর রোশনি আর অানোয়ারা চৌধুরি বসে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।তখনই সেখানে হেলতে দুলতে আদিল এসে দাদিজানের সোফার হাতলের উপর বসে দাদির কাধে হাত রাখে।
__সুইটি,,কি করছো এখানে….? আর ইনিই বা কে…?
রোশনি এবার আদিলের দিকে তাকালো।ফর্সা, লম্বা, কিউট করে একটা ছেলে।মাশআল্লাহ,,, বডি দেখে মনে হচ্ছে জিমের সাথে তার সম্পর্কটা বেশ গভির।
___বিয়ে আর এংগেজমেন্টের বিষয়ে আলোচনা করছি।আর ওই মেয়েটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে এসেছে।এই দেখো এতোক্ষন কথা বললাম আর এখনো পর্যন্ত নামটাই জানা হয় নি….
রোশনি মুচকি হেসে বলে উঠলো….
__জ্বি,,,আমার নাম রোশনি…
এভাবেই ওরা কথা বলতে লাগলো।আর আদিলের সাথে মুহূ্র্তেই ভাব হয়ে গেলো।আদিল রোশনিকে নিয়ে পুরো বাড়িটা দেখাতে নিয়ে গেল।কারন পুরো বাড়িটা ডেকোরেশন করার জন্যে প্রথমে বাড়িটাকে ভালো করে দেখে নিতে হবে।তারপরেই বোঝা যাবে কিভাবে সাজালে ভালো হবে।আদিল রোশনিকে নিয়ে দোতলায় যায়।উপরে গিয়ে সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে আদিল।হঠাৎ করেই আদিলের ফোনে কল আসে।মোবাইলের স্ক্রীনে নিশা নামটা দেখেই আদিল বাকা হাসলো।এটা তার নিউ গার্লফ্রেন্ড।মাত্র দুদিন হলো মেয়েটা পটেছে।আদিল রোশনিকে একা ঘুরে দেখতে বলে চলে যায়।আর রোশনিও ঘুরে ঘুরে সব দেখতে থাকে।হঠাৎ করেই একটা রুমের সামনে গিয়ে থেমে যায় রোশনি।কালো রঙের দরজাটা অল্প খোলা।আর সেটুকু দিয়েই দেয়ালে টানানো বড় একটা ছবি দেখা যাচ্ছে।ছবিতে একটা ছেলে বসে জুতার ফিতে বাধছে।ছেলেটার মুখটা দেখা যাচ্ছে না দরজার জন্যে।শুধু গলার নিচ থেকেই দেখতে পারছে রোশনি।তবুও রোশনি বুঝতে পারলো ছবির ছেলেটা মারাত্মক রকম সুন্দর।রোশনি ভাবলো এক বার উকি দিলে কেমন হয়…?রোশনি দরজায় হাত দিতেই মনে হলো অপরিচিত কারো রুমে এমন উকি দেওয়া নিশ্চয় কোনো ভদ্র মেয়ের কাজ নয়।আর রোশনি যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে।সো তার এসব করা একদমই মানায় না।রোশনি দরজা থেকে হাত সরিয়ে পিছনে ফিরে পা বাড়াতে নিলেই গম্ভির, শক্ত, পুরুষালি পরিচিত কন্ঠ শুনে থেমে যায়।আর তার সাথে থেমে যায় হৃদপিন্ড ।তারপরেই তুমুল গতিতে চলতে শুরু করে অবাধ্য হৃদপিন্ড।চোখ দুটোও আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়।দু হাতে জামা খামচে ধরে খিচে দাড়িয়ে থাকে।
চলবে…….