শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৬

0
4129

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ৬

🌸
__হে হু আর ইউ..? আর রুমে উঁকি কেন দিচ্ছিলে..?

অধিরের কথা শুনে রোশনি যেন আরো জমে গেলো।হঠাৎ করেই রোশনির মনে হলো তাকে এখান থেকে যাওয়া উচিত।কারন দ্বিতীয় বার এই লোকটার মুখ দেখা আর লোকটার সাথে কথা বলার কোনো রকম ইচ্ছে রোশনির নেই।রোশনি একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই অধির আবারো বলে উঠলো…

___হে স্টপ দেয়ার।ডোন্ট মুভ…..

রোশনিও থেমে যায়।আর অধির রোশনির সামনে এসে দাড়ায়।অধিরের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না তার সামনে তিলোককন্যা দাড়িয়ে আছে।অধির অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রোশনির দিকে।অধিরের নজর থমকে যায় রোশনির নাকে। রোশনির নাকে এন্টিকের নোজ পিন।প্রথম যেদিন রোশনিকে দেখেছিলো সেদিন ছিলো না। ইনফ্যাক্ট কালও রোশনির নাকে নোজ পিন দেখেনি অধির।ফর্সা মুখটাতে যেন নোজপিনটা মারাত্মক সুন্দর লাগছে।রোশনি অধিরের দিকে তাকিয়ে আছে।অধিরের চোখ দুটো ভিষন শান্ত লাগছে রোশনির কাছে।অধিরের চুলগুলো সব সময় স্টাইল করে খাড়া করা থাকে।কিন্তু এখন চুলোগুলো কি সুন্দর ভাবে নিয়ম মেনে কপালে পড়ে আছে।আর চুল থেকে ফোটায় ফোটায় পানিও পড়ছে।লোকটা কি মাত্রই গোসল করেছে..?অধিরের প্রশস্ত লোমহীন বুকের দিকে দৃষ্টি যেতেই বুকটা কেপে উঠলো রোশনির।বেশিক্ষণ তাকিয়েও থাকতে পারলো না। চোখ নামিয়ে নিলো।

__তুমি এখানে কি করছো….?

রোশনি তবুও চুপ করে দাড়িয়ে আছে।এই লোকটার সামনে আসলেই যে কেন তার সব কথা গলায় আটকে যায় বুঝতে পারে না রোশনি।নিজের করা প্রশ্নের কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে আবারো মুখ খুললো অধির…

___তিলোককন্যা……??

অধিরের কন্ঠ শান্ত,,,,আর অধিরের এমন শান্ত ভাবে তিলোককন্যা বলাতে আরো একদফা কেপে উঠলো রোশনি।আর সাথে সাথেই শুরু হলো হিচকি। রোশনিকে হিচকি দিতে দেখেই ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।

__এই মেয়ে,,, সব সময় এমন হিচকি দিতে থাকো কেন…?এখানেই দাড়িয়ে থাকবে,,, একদম নড়বে না…

অধির দ্রুত পা ফেলে রুমে ঢুকে গেলো।আর রোশনি কিছু না বুঝে তাকিয়ে রইলো অধিরের যাওয়ার দিকে।অধির ঠিক যতটা দ্রুত রুমে গেলো ঠিক ততোটা দ্রুতই পানির গ্লাস হাতে বেড়িয়ে এলো।রোশনির সামনে গ্লাস ধরে বলে উঠলো…..

__ড্রিংক ইট….

রোশনিও বিনা বাক্যে অধিরের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেতে লাগলো।অধিরের দিকে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে পানি খেতে গিয়েই কাশি উঠে গেলো।রোশনিকে এমন কাশতে দেখে অধির রোশনির হাত থেকে গ্লাস নিয়ে রোশনির পিঠে হালকা করে চাপড় দিতে লাগলো।আর কিছুক্ষণের মধ্যে কাশিটা সেড়েও গেলো।অধির ভ্রু কুচকে বলে উঠলো….

___প্রবলেম কি তোমার হ্যা…?যখনই তোমায় দেখি তখনই কিছুনা কিছু একটা বাধিয়ে বসো।কখনো সেন্স লেস হও, তো কখনো হিচকি দিতে থাকো,,,আবার কখনো তো কাশতেও শুরু করো।এক্সজ্যাক্ট প্রবলেবটা কি বলো তো….?আচ্ছা ছাড়ো এসব।এখন বলো তুমি এখানে কি করছো….?

রোশনি হাত মুচরাতে মুচরাতে বলে ওঠে….

___আমি বিয়ের জন্য এসেছি….

রোশনির কথাটা শুনতেই অধির চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ওর দিকে। রোশনি কি বলছে সেটা ঠিক মাথায় ঢুকছে না অধিরের।

__তুমি….বিয়ে করার জন্য এসেছো…? কাকে…?

__আমার বিয়ের জন্য না।সাহিল চৌধুরির বিয়ের জন্য।আমি ওয়েডিং প্ল্যানিং এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে এসেছি…

__ওকে।কিন্তু তুমি আমার রুমে উকি দিচ্ছিলে কেন…?

রোশনি এবার কি বলবে অধিরকে..? সে তো এমনিই এই রুমটার দিকে তাকিয়েছিল।আর ছবির ওই ছেলেটাকে দেখতেই তো সে উকি দিতে চেয়েছিলো।উকি দিতে চেয়েছিলো দেয় তো আর নি।আর রোশনি যদি আগে থেকে জানতো এটা ওই বজ্জাত অধির চৌধুরির রুম তাহলে তো সে কখনোই এখানে আসতো না।উকি দেওয়া তো দুরের কথা।রোশনি আমতা আমতা করে বলে উঠলো…..

___আমি কোথায় উকি দিচ্ছিলাম..? আমি তো ব্যাস এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম…

অধির বাকা হেসে বলে উঠলো…

___কিন্তু আমি যে স্পষ্ট দেখলাম তুমি আমার রুমে উকি দিচ্ছিলে…?

__আমি একদমই উকি দেই নি।হ্যা উকি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু দেই নি…..

___আচ্ছা।তো কেন উকি দিতে চাচ্ছিলে শুনি…?

রোশনি আবারো আমতা আমতা করে বলে ওঠে…

___আমি তো শুধু ছবির ওই ছেলেটার মুখটা দেখতে চাচ্ছিলাম।

অধির ঠোটে বাকা হাসি রেখে আবারো বলে উঠলো….

__কেন…? ছবির ছেলেটাকে দেখে কি করবে…? আর ছেলেটার মুখটা দেখো নি এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে।ছেলেটাকে দেখে যদি প্রেমে পড়ে যেতে তখন…?

রোশনি কিছু বলবে তার আগেই দেখতে পায় অধির মিটমিট করে হাসছে।রোশনি অধিরের এমন হাসি দেখে আর কিছু বললো না।রোশনি অধিরকে এর আগে হাসতে দেখেনি।লোকটার হাসিটা মারাত্মক।

রোশনি কিছু না বলে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়।তখনই পিছন থেকে অধির বলে ওঠে…

___এই যে তিলোককন্যা,,,,তোমার নামটা কিন্তু আজও জানা হলো না…..

রোশনি কিছু না বলেই মৃদু দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে এলো।নিচে আসতেই দেখে পিয়া চোখ মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছুটা রাগান্বিত দেখাচ্ছে ওকে।রোশনিকে আসতে দেখেই পিয়া রোশনির হাত ধরে টেনে বাইরে বেরিয়ে আসে।তারপর রিকশা ডেকে উঠে পড়ে।

__কি হয়েছে বলবি তো…? এমন রেগে আছিস কেন…?

রোশনির কথা শেষ হতেই পিয়া মুখ খুললো….

___আর বলিস না।একটা সাদা বিলাই এর সাথে দেখা হয়েছে বুঝলি।ব্যাটা সাদা বিলাই হইলে কি হবে আস্ত একটা খবিশ।

রোশনি কিছুই বুঝতে পারলো না।তবে পিয়া যে ভিষন বিরক্ত তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা…..

পিয়া ওয়ারুম থেকে বেরিয়ে কিছুটা যেতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগে।তাকিয়ে দেখে ফর্সা করে কিউট একটা ছেলে কানে মোবাইল ধরে দাড়িয়ে আছে।পিয়া আদির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে….

__এই যে মিষ্টার সাদা বিলাই,,,,,দেখে চলতে পারো না…? দিলে তো ধাক্কা…? চোখ কি বেবির কাছে রেখে আসছো নাকি…?

আদি নিশার সাথে কথা বলতে ছিলো।হেটে হেটে কথা বলতে বলতে কখন যে পিয়া সামনে এসে গেছে বুঝতেই পারে নি।তাই তো ধাক্কা লেগে গেছে।আদি সামনে তাকাতেই দেখতে পায় সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে।মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী। সে হা করে পিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।আর নিশা এদিকে আদিকে সমানে বেবি বেবি করে ডেকে যাচ্ছে। যা পিয়া স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।

আদির কাছে মেয়েটাকে প্রথমে কিউট লাগলেও মেয়েটার কথা শুনে আর তার কাছে কোনো ভাবেই কিউট লাগছে না।আদি ফোন কেটে চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো….

__এই যে কথা বলা পুতুল,,,,,আমি না হয় আমার চোখ দুটো বেবির কাছে দিয়ে রেখেছি কিন্তু তুমি তোমার চোখ দুটো কার কাছে রেখে এসেছো..? নাকি বিক্রি করে বাদাম ভাজা খেয়ে নিয়েছো…?

অাদির কথায় ফুসে উঠলো পিয়া।এই ছেলেকে দেখতে যতোটা মাসুম দেখায় আসলে ততোটা নয়।

__এই মিষ্টার সাদা বিলাই,,,,,,একদম বাজে কথা বলবে না….

___বুঝি বুঝি,,,,সামনে এমন হট এন্ড চকলেট বয় থাকলে সব মেয়েরায় চোখে শর্সে ফুল দেখে।আমি জানি তুমি ইচ্ছে করেই আমাকে ধাক্কা দিয়েছো।বাট আই ডোন্ট মাইন্ড বেবি…..

বলেই আদি বাম চোখ মারে।আর পিয়া হাত ভাজ করে সোজা হয়ে দাড়ায়।

__কে হট এন্ড চকলেট বয়…? তুমি…? আয়নায় কখনো নিজের মুখটা দেখেছো..? কোন এঙ্গেল থেকে তোমার মনে হয় তুমি হট এন্ড চকলেট বয়…? যেই আয়নায় তোমাকে এমন মনে হয় সেই আয়না না তাড়াতাড়ি বদলে ফেলো বুঝলে…? তোমাকে দেখে আমার একটা গান মনে পড়ে গেলো শুনবে….?

পিয়া আদির উত্তর শোনার প্রয়োজন মনে না করেই গেয়ে উঠলো…..

__কাভি দেখা হে তুনে শিশে মে খুদকো….
আকাল ছে খাচ্চার
সাকাল ছে বান্দার
হারকাতে হে গুন্ডোওয়ালি
বাতো ছে তু হে মাওয়ালি…..

আদি রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিয়া চোখ টিপে শিশ বাজাতে বাজাতে চলে যায়।

এদিকে পিয়ার মুখে এসব শুনে রোশনি মুচকি হাসতে শুরু করে।পিয়া চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই রোশনি মুখে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়।

বিকেলে রোশনি আর আয়াশ মিলে পাশের একটা পার্কে যায়।ওরা পার্কে ঢুকতেই দেখে বেঞ্চে বসে আছে জয়। গায়ের সাদা রঙের শার্টটাও ঘামে ভিজে গেছে। বার বার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে জয়।কি জানি কতোক্ষন ধরে বসে অপেক্ষা করছে এই ভ্যাপসা গরমের মধ্যে।রোশনি মুচকি হেসে ওর দিকে এগিয়ে গেলো।আর সোজা জয়ের পাশে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে পড়লো।জয় এবার রোশনির দিকে তাকালো।এই মেয়েটার জন্যে সে পুরো ত্রিশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছে। আর তার এখন আসার সময় হলো।একটা বার সরি তো দূরে থাক,, কেমন আছি সেটা পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করলো না।এমনকি তার পাশে যে কোনো ছেলে বসে আছে সেদিকেও যেন তার খেয়াল নেই।জয় ভেবে পায় না,,,এই মেয়েটা শুধু তার বেলাতেই কেন এমন ড্যাম কেয়ার ভাব দেখায়..?জয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়াশ এসে জয়ের সামনে দাড়ালো।জয় মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো…

__হাই মিস্টার ছোটু…? হোয়াটস আপ….?

__আই এম গুড…..তোমার কি খবর বলো…? আজ কতোক্ষন ধরে ওয়েট করছিলে….?

বলেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো আয়াশ।আর জয় একবার রোশনির দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বলে উঠলো…

___বেশি না।মাত্র ত্রিশ মিনিট।থ্যাংক গড,,,,,,আধা ঘন্টা পরে হলেও এলে।আমি তো ভাবলাম তোমরা আসবেই না।আসলে কি বলো তো….?তোমাদের জন্যে যে জয় নামে কোনো অসহায় ছেলে অপেক্ষা করছে সেটা কারো মনেই থাকে না।এই রোদের মধ্যে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে অপেক্ষা করা আমার নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গেছে।

রোশনি যেন জয়ের কথা গুলো শুনতেই পেলো না এমন ভাব করে জয়ের হাতে থাকা বাদাম ভাজার কাগজটা কেড়ে নিয়ে খেতে শুরু করলো।এদিকে জয়ের কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো আয়াশ….

___তোমার জন্যে আমার মাঝে মাঝে ভিষন সিমপ্যাথি পায় জানো…? তবে লেগে থাকো,,,,ঠিক একদিন পটে যাবে….

___বলছিস…?লেগে থাকতে আমার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু তোর ওই নিরামিষ বোন কি আদৌও পটবে…? আমার তো ডাউট আছে।পুরো একটা বছর লেগে আছি।তোর বোনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দেখবি আমি এই দুনিয়া থেকেই না চলে যায়।বয়স তো আর কম হলো না বল…? পুরো সাতাশ বছর।তোর মুখ থেকে জিজু আর শোনা হলো না রে আমার…? জয়ই ডাকতে থাক….ভিষন দুঃখ বুঝলি,,,ভিষন দুঃখ….

জয়ের দুঃখ শুনে আয়াশ যেই একটু সিমপ্যাথি দেখাতে যাবে তার আগেই রোশনি চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো…

__এই তোমরা দুজনে কি এত ফিসফিস করছো শুনি…?

জয় কপালে জমে থাকা ঘামটুকু মুছে নিয়ে বলে উঠলো….

__আমার দুঃখের কথা বলছি।তোমার তো আর আমার আমার দুঃখ দেখার সময় নাই তাই এই লিলিপুটের কাছেই দুঃখের কথা বলতে হচ্ছে।

__ওহ,,,,ওকে। তুমি কন্টিনিউ করো…..

বলেই আবারো বাদাম খাওয়ায় মন দিলো।জয় আবার আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো….

__বুঝলি ছোটু।আর মনে হয় বেশি দিন বাচবো না।সকাল বিকাল যদি এমন ঝুলে থাকি তাহলে কি বাচা যায় বল…?

জয় আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোশনি চোখ রাঙিয়ে জয়কে চুপ করিয়ে দিলো।আর ওদের দিকে তাকিয়ে আয়াশ মুখ টিপে হাসতে লাগলো।তারপর ওরা আরো কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে এলো।আর বাড়িতে ফিরে চাচির কিছু তেতো কথাও শুনলো ওরা।

রাত বেশ গভীর।পাশেই গুটিশুটি মেরে আয়াশ ঘুমিয়ে আছে।রোশনির চোখে ঘুম নেই।তবে ঠোটের কোনে মুচকি হাসি লেগে আছে ওর।আজ ও ভিষন খুশি।কারন জয়ের সাথে দেখা হয়েছে।জয়ের সাথে ওর প্রতিদিন দেখা হয না।সপ্তাহে এক দিন দেখা হয়।জয় একটা কোম্পানিতে চাকরি করে।তাই প্রতিদিন সময় করে উঠতে পারে না জয়।তাই তো সপ্তাহে একটা দিন এসে দেখা করে যায় রোশনির সাথে।তবে প্রতিদিনই কথা হয় ওদের।জয় রোশনিকে প্রচন্ড ভালোবাসে।এটা রোশনিও জানে।এক বছর আগেই ওকে প্রপোজ করেছিলো জয়।সেদিন বেচারা কি নার্ভাসটাই। না ছিলো ।পুরো ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা।রোশনির ভিষন হাসি পাচ্ছিলো সেদিন।সামান্য প্রপোজ করাতেও যে কোনো ছেলের এমন অবস্থা হতে পারে তা রোশনির জানা ছিলো না।সেদিন রোশনি শুধু একটা কথায় বলেছিল জয়কে””””””””””দেখো জয়,,,,আমি এখন রিলেশনে যেতে চাচ্ছি না।আমি এই বিষয়ে এখনো ভাবিও নি।আর সবচেয়ে বড় কথা আমরা খুব ভাল ফ্রেন্ড।সো এসব ফালতু চিন্তা ভাবনা মাথায় এনে আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট করো না…..””””””ব্যাস,,,,এর পর প্রায় দুই মাসের মত আর এই ব্যাপারে কিছু বলে নি জয়।কিন্তু দুই মাস পর থেকেই আবারও শুরু ।আর রোশনিও ওকে বারবার না করে এসেছে।কিন্তু জয় যেন হার মানতেই চায় না।লেগে থাকে রোশনির পিছনে।তবে প্রথম দিকে জয়ের প্রতি রোশনির ফিলিংস না থাকলেও এখন রোশনি জয়ের জন্য কিছু ফিল করে।তবে সেটা ভালোবাসা নাকি অন্য কিছু রোশনি জানে না।জয়ের এতো এতো কেয়ার রোশনিকে বাধ্য করছে ওর প্রতি দূর্বল হতে।তবে রোশনি কিছু দিন যাবত বুঝতে পারছে সেও ওই পাগলাটে ছেলের প্রেমে পড়ে গেছে।তবুও জয়কে বুঝতে দিচ্ছে না রোশনি।ছেলেটাকে আরো একটু নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে চায় ও।এতো সহজে হ্যা সে বলবে না।এসব ভেবেই মুচকি হাসে রোশনি।তারপর এক সময় ঘুমিয়েও পড়ে।

আরো কয়েকটা দিন কেটে গেছে।আজ সকাল সকালই চৌধুরি ম্যানশনে চলে এসেছে রোশনি আর পিয়া।আনোয়ারা চৌধুরি খাটে বসে আছেন। তারই সামনে নোটবুক হাতে দাড়িয়ে আছে রোশনি আর পিয়া।আর মাত্র পাচ দিন বাকি।কালকেই সিঙ্গাপুর থেকে চলে আসবে সাহিলের উডবি নাতাশা জামান।পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার।ফ্যাশন ডিজাইনের উপর কোর্স করতেই ওখানে যাওয়া নাতাশার।সাহিলের সাথে তিন বছরের সম্পর্ক ওর।কাল রাতেই আনোয়ারা চৌধুরি নাতাশাকে ফোন করে জানিয়েছে এংগেজমেন্টের কথা।এদিকে আনোয়ারা চৌধুরি সব কিছু বুঝিয়ে বলছেন রোশনিদের।কিভাবে সাজাতে হবে..? খাবারের মেনুতে কি কি থাকবে আরো অনেক কিছু।রোশনি পিয়াকে দাদিজানের কাছে রেখে বাইরে আসে।তারপর দুজন লোককে ডেকে ডেকোরেশনের জন্য যা যা লাগবে সব কিছু আনতে বলে।ওরাও চলে যায় নিজেদের কাজে।রোশনি আরো কয়েকজনকে কিছু কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে।তখনই একটা মেয়ে সার্ভেন্ট রোশনির পাশ কেটে যাচ্ছিলো অধিরের রুমে।অধিরের ব্লাক কফি দিতে।হঠাৎ করেই তখন ওই মেয়েটাকে আনোয়ারা চৌধুরি ডেকে ওঠেন।

__ এদিকে এসো তুমি….

মেয়ে সার্ভেন্টটা নরম স্বরে বলে ওঠে…..

__ম্যাম আমি অধির স্যারের জন্য কফি নিয়ে যাচ্ছিলাম….

দাদিজান তখন রোশনির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে…

__রোশনি,,,,যা তুই কফিটা অধিরকে দিয়ে আয়…

রোশনি কথাটা শুনা মাত্র যেন জমে গেলো।ওই লোকটাকে কেন যেন ভিষন ভয় পায় রোশনি।আবার রাগও হয়।সেদিন কি জোরেই না চেপে ধরেছিলো হাত আর কোমর।এখনও দাগ পড়ে আছে।ব্যাথাটা অবশ্য নেই।রোশনি আমতা আমতা করে বলে ওঠে…

__কিন্তু ম্যাম,,,আমি কেন…?

আনোয়ারা চৌধুরি একটা ধমক দিয়ে বলে উঠলেন ….

__এই তোকে বলেছিনা আমাকে ওই সাদা চামড়ার লোকদের মত ম্যাম ম্যাম করবি না।দাদি বলে ডাকবি।আর একবার ম্যাম বলতে শুনলেই দেবো একটা…আর এখন যা,,,কফিটা দিয়ে আয়,,,,অনেক কাজ বাকি আছে।জলদি যা….

উনি আর কিছু না শুনেই চলে গেলেন।কাজের মেয়েটা রোশনির সামনে দাড়িয়ে বলে উঠলো…

__ম্যাম,,,কফিটা নিয়ে যান।দেরি হলে স্যার রাগ করবে…

মেয়েটার কন্ঠটা বেশ ভীত শোনালো।রোশনি এবার মেয়েটার দিকে তাকালো।গোল গাল শরিরে ইউনিফর্ম পড়া।রোশনি খেয়াল করলো এই বাড়িতে শেফ,সার্ভেন্ট সবারই একই রকম ড্রেস।শুধু দুটো মেইন শেফের ড্রেস আলাদা।আর বডিগার্ডের ড্রেসগুলো সব কালো।রোশনির ভাবনার মাঝেই মেয়েটা আবারো বলে উঠলো…

__ম্যাম প্লিজ,,,তাড়াতাড়ি করুন।নয়তো…

রোশনি এবার মেয়েটার হাত থেকে কফির মগ সহ ট্রে হাতে তুলে নিলো।তারপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে শুরু করলো।যতোই সিড়ি দিয়ে উঠছে ততোই যেন জমে যাচ্ছে রোশনি।তবুও সামনের দিকে এগুতে থাকলো রোশনি।অধিরের রুমের সামনে দাড়িয়ে কয়েক বার জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো।যাবে কি যাবে না,,ভাবতেই মন বলে উঠলো,,,না গেলে ব্যাপারটা খুব বাজে হবে।তাই আরেকটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে দরজায় আস্তে করে টোকা দিলো রোশনি।সাথে সাথেই সেই গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনা গেলো।

___কাম ইন….

রোশনি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।দেখলো অধির বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে এক মনে।রোশনি কাপা কাপা পায়ে অধিরের সামনে দাড়াতেই অধির ল্যাপটপে চোখ রেখে বলে উঠলো….

__দেরি কেন হলো…? ইউ নো আমি ডিসিপ্লিন মেনটেইন না করে চলা পছন্দ করি না…?হুয়াই আর ইউ লেট…?

রোশনি কি বলবে বুঝতে পারছে না।অধির এখনো ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে।রোশনি কিছু না বলে ট্রে থেকে কফির মগ তুলে অধিরের দিকে এগিয়ে দেয়।অধির চোখের সামনে এমন কফির মগ দেখে ভ্রু কুচকালো।এটা কোন ধরনের আচরন..? কিছু না বলে এমন মুখের সামনে মগ ধরে দাড়িয়ে আছে।অধির রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে তাকাতেই দেখতে পায় রোশনি দাড়িয়ে আছে।অধিরের কুচকানো ভ্রু দুটো আরো কিছুটা কুচকে গেলো।এখন এই সময় অধির রোশনিকে আশা করে নি।একদমই করে নি।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here