শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৭

0
4030

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ৭

🌸
___তুমি এখানে কি করছো….?

অধিরের অতি শান্ত ভাবে করা ছোট্ট প্রশ্নটা শুনতেই আরো একদফা কেপে উঠলো রোশনি।রোশনি বুঝতে পারে না, এই লোকটার কথা শুনলেই কেন এমন কেপে ওঠে সে? আর ওই গভির চোখ…? উফফ,,,মনে হয় ওই চোখে বিশাল সমুদ্র রয়েছে।আর রোশনি সেই সমুদ্রের গভিরে তলিয়ে যায় …।রোশনি যখন নিজের ভাবনায় মগ্ন তখনি অধির ওর সামনে হাত উঠিয়ে তুড়ি বাজালো।আর রোশনির হুশ এলো।অধিরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো অধির ভ্রু কুচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।অধির ভ্রু নাচিয়ে বোঝালো সে এখানে কি করছে।

__আ.আসলে দাদি আমায় পাঠিয়েছে এখানে।আপনার কফি দিতে।নিচে সবাই কাজে ব্যস্ত তাই আমাকেই আসতে হলো।

রোশনি নিচের দিকে তাকিয়ে কাপা কাপা গলায় কথা গুলো বললো।রোশনির এমন করে কথা বলা দেখে অধির বাকা হাসলো।যেটা রোশনি দেখতে পেলো না।রোশনি আর কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই অধির পিছন থেকে বলে ওঠে….

__-স্টপ দেয়ার।যেতে বলেছি তোমায় আমি..? এই রুমে ঢুকতে যেমন আমার পারমিশন লাগে তেমনই এই রুম থেকে বের হতেও আমার পারমিশনই লাগে।সো….

কথাটা শুনেই থমকে দাড়িয়ে গেলো রোশনি।পিছনে ফিরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো অধিরের দিকে।অধির রোশনির সামনে এসে দাড়ালো।অধিরের চোখে কালো ফ্রেমের চশমা।এতে দারুন সুন্দর দেখাচ্ছে অধিরকে।অধির মাঝে মাঝে চশমা পড়ে।অধির রোশনির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে….

__আমি সময়ের পরে কাজ করা পছন্দ করি না।একদমই না।তুমি আমার কফি আনতে পুরো চার মিনিট লেট করেছো।যেটা আমার পছন্দ নয়।সো,,, ইউ শুড বি পানিশড্…….

এই লোকটাকে একদমই সুবিধার মনে হয় না রোশনির।ব্যাটা মতলববাজ।রোশনির কাছে সব বিজনেসম্যানকেই এটাই মনে হয়।আর তাকে শাস্তি দেওয়ার কি আছে হ্যা…? সে কি এই বাড়ির সার্ভেন্ট নাকি? সে যে অধিরের জন্যে কফি এনে দিয়েছে এটাই তো বিশাল ব্যাপার।কোথায় তার জন্যে একটা ধন্যবাদ দেবে তা না,,উল্টো আবার শাস্তি দিতে চাইছে।ব্যাটা আকড়ু….

__শাস্তি…? আমি কেন শাস্তি পাবো..?

অধির বাকা হেসে হাত ভাজ করে দাড়ালো।রোশনি ওর দিকে তাকাতেই বলে উঠলো…

__লেট করেছো শাস্তি পাবে।সো,,রেডি ফর পানিশমেন্ট…?

__কিসের পানিশমেন্ট..? আমি কি আপনার সার্ভেন্ট নাকি যে লেট হয়েছে বলে আমায় শাস্তি দিবেন..? আমি যাচ্ছি…

রোশনি সামনে হাটা দিতে গেলেই অধির সামনে এসে দাড়ায় ওর।রোশনি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে অধির সরে আবারো রোশনির সামনে দাড়ায়। রোশনি ভ্রু কুচকে তাকায়।

__দেখুন মিষ্টার চৌধুরি,,,,আমাকে যেতে দিন।

__যেতে তো অবশ্যই দেবো মিস তিলোককন্যা। তার আগে একটা কাজ করে দাও…

রোশনি অনেকটা বিরক্তি নিয়ে তাকালো অধিরের দিকে।এই লোকটাকে এখন আস্ত একটা বিরক্তির ড্রাম বলে মনে হচ্ছে ওর কাছে।ইচ্ছে করছে একে বুড়িগঙ্গার নোংরা পানিতে ইচ্ছে মত চুবাতে।লোকটার এমন হুটহাট আচরন আর কথায় দিনদিন চরম রকমের বিরক্ত হচ্ছে সে।সেই সাথে সেদিনের জমে থাকা রাগটাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।খাটাস লোক একটা।রোশনি বুঝে গেছে এই লোক না চাইলে সে কিছুতেই এখান থেকে যেতে পারবে না।

___কি করতে হবে বলুন…..

রোশনির কথা শুনে বাকা হাসলো অধির।তারপর কোন ভনিতা ছাড়ায় বলে উঠলো…

__আলমারি থেকে একটা ব্লাক শার্ট বের করে আইরন করে দাও,,,,ব্যাস

অধিরের কথাটা শুনে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল রোশনির। এই লোক কি ওকে সত্যি সত্যিই নিজের পার্সোনাল কাজের লোক ভাবতে শুরু করেছে নাকি..?

__কিহ..? আমি পারবো না।নিজের কাজ নিজে করুন…নয়তো অন্য কাউকে দিয়ে করান।আমি পারবো না…

__ওকে।তাহলে আমিও তোমায় যেতে দিচ্ছি না।তুমি বরং দাড়িয়েই থাকো।

রোশনি এক বস্তা বিরক্তি নিয়ে আলমারির সামনে গিয়ে দাড়ালো।আলমারির দরজা খুলতেই দেখতে পেলো অনেক জামা কাপড়।রোশনি বেশ অবাক হলো।একটা ছেলের যে এত গুলো জামা কাপড় থাকতে বা লাগতে পারে এটা ও জানতো না।আর সবগুলোই ব্র্যান্ডেড।রোশনি অধিরের কথা মত একটা ব্লাক শার্ট বের করে আইরন করতে লাগলো।রোশনির মুখে বিরক্তি স্পষ্ট।অধির তখন খাটে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছে।আড় চোখ রোশনির দিকে তাকালো অধির।অধিরের চোখ রোশনির পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করতে লাগলো।এই ব্যাপারটা অধির নিজেও বুঝতে পারে না।এটা অধির চৌধিরির সাথে যায় না।কোনো ভাবেই না।যেখানে মেয়েরা অধিরের দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকে সেখানে অধির সাধারন একটা মেয়ের দিকে এভাবে তাকাচ্ছে।মুহূর্তেই অধিরের মন জবাব দিলো এটা কোনো সাধারন মেয়ে নয়।কিছু তো একটা আছে এই মেয়ের মধ্যে।যা অধির চৌধুরির হিংস্র চোখদুটোকেও মুহূর্তেই শান্ত করে দেয়।হৃদপিন্ড নামক যন্ত্রটা হঠাৎ করেই কেপে কেপে ওঠে।

খোলা জানালা থেকে হালকা বাতাস এসে রোশনির চুলগুলো ছুয়ে দিচ্ছে।আর রোশনি বার বার সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।অধিরের চোখ সেদিকেই নিবদ্ধ। ওর কাছে মনে হচ্ছে এর থেকে সুন্দর আর কিছু হতেই পারে না।রোশনি যখন বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুচকে চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে তখন যেন অধিরের হৃদপিন্ডটাও কেপে উঠছে।অধিরের চোখ গেলো রোশনির কোমরের দিকে।কোমর থেকে টপসটা একটু সরে যেতেই লালচে দাগটা দেখা যাচ্ছে।মুহূর্তেই অধিরের সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।সেদিন কি খুব বেশিই লেগেছিলো রোশনির..? তারপর নিজেই নিজের করা প্রশ্নের উত্তর দিলো অধির।হ্যা অবশ্যই লেগেছিলো।এখনো লাল হয়ে আছে পুরো কোমর।নিজের মনে করা প্রশ্ন শেষ হতেই অধিরের মনে হলো এটা তার ছোয়া।হ্যা রোশনির কোমরে অধিরের ছোয়া।কথাটা মাথায় আসতেই চোখ বুজে নিলো অধির।অধির বুঝতে পারলো তার শরিরটা মৃদু কাপছে।হার্টটাও দ্রুত বিট করছে।অধির চোখ থেকে চশমা খুলে বিছানায় রেখে উঠে দাড়ায়।কয়েক পা এগিয়ে রোশনির ঠিক পিছনে গিয়ে দাড়ায়।রোশনির কিছু চুল উড়ে এসে অধিরের মুখে পড়ে।সাথে সাথেই অধির চোখ বন্ধ করে নেয়।রোশনির চুলের ঘ্রানে আরো মাতাল হয়ে যাচ্ছে অধির।কেমন নেশা নেশা লাগছে অধিরের কাছে।এদিকে রোশনি একমনে শার্ট আইরন করছে।অধির যে তার পিছনে দাড়িয়ে আছে সেটা সে খেয়ালই করে নি।রোশনির আইরন করা শেষ করে আইরন টেবিলে শার্টটা রেখে পিছনে ঘুরতে গিয়ে অধিরের বুকের সাথে ধাক্কা খায়।রোশনি নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ তুলে তাকায়।অধিরকে দেখেই চমকে ওঠে।এই লোকটা এখানে কখন এলো সেটাই বুঝতে পারছে না রোশনি।

__কাজ করে দিয়েছি। এবার আমি যাই…

রোশনি কথাটা বলে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে আসে।আর বাইরে এসে যেন হাফ ছেড়ে বাচে।রোশনির মনে হচ্ছিলো যেন এতোক্ষন সে সিংহের গুহায় আটকে ছিলো।এদিকে অধির এখনো একই ভাবে দাড়িয়ে আছে।অধিরের মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে সে হারিয়ে যাচ্ছে।এই মেয়েটা সামনে থাকলেই কেমন যেন হয়ে যায় সবকিছু।নিজেকে কেমন মাতাল মাতাল লাগে।অধির নিজের মনেই বিড়বিড় করে ওঠে..

__ও সামনে থাকলে আমার সবকিছু এলোমেলো কেন হয়ে যাচ্ছে..? অধির,…?ইউ হেভ টু স্টে এ্যাওয়ে ফ্রম হার।অধির চৌধুরি কখনো কোনো মেয়ের দিকে এভাবে তাকাতে পারে না।সো কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।জাস্ট ইগনোর হার…..

অন্যদিকে পিয়া ঘুরে ঘুরে সব কাজ সবাইকে বুঝিয়ে দোতলার দিকে যায়।সিড়ি বেয়ে উঠতেই ধাক্কা খায় আদির সাথে।দুজন দুজনের দিকে তাকাতেই দুজনের কপালে ভাজ পড়ে।সেটা যে স্পষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

__এই যে মিষ্টার সাদা বিলাই,,,,ওপসস সরি।শুধু সাদা বিলাই না,,,,সাদা কানা বিলাই।চোখ আজ কোন বেবির কাছে রেখেছো…?

আদিলও এবার ফুসে উঠলো।একেতো এই মেয়ে তাকে ধাক্কা দিয়েছে তার উপর আবার সাদা কানা বিলাই বলছে।আজ এই মেয়েকে সে কিছু তেতো কথা শুনিয়েই ছাড়বে।

__ওই মিস ঝগরুটে।আমাকে তুমি বিলাই বলছো তাও আবার কানা বিলাই..? আমাকে কোন এঙ্গেল থেকে তোমার বিড়াল মনে হয়..? আর আমি যদি বিলাই হই,,,,তুমি কি? তুমি তো ঝগরুটে জংলী বিলাই..

__এই একদম ঝগরুটে বলবে না।আমি মোটেই ঝগরুটে না।তুমি নিজেই তো ঝগড়া করছো….।আর শোনো,,, আমার সামনে এভাবে হুটহাট আসবে না।নয়তো এমন এক মুক্কা দিবো যে মুখের পুরো জিওগ্রাফি বদলে যাবে।

আদি চোখ বড় বড় করে পিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এই মেয়ের সাহস কত? তারই বাড়িতে দাড়িয়ে তাকে মারার হুমকি দিচ্ছে..? না এই মেয়েকে আজ কিছুতেই ছাড়া যাবে না।

__তুমি আমার সামনে দাড়িয়ে আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছো..? আমি যদি এখন তোমায় এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই তখন?

আদির কথা শুনে বাকা হাসলো পিয়া।মুখে হাসি রেখেই বলে উঠলো….

__তোমার মত মিনি বিলাই এর পক্ষে এটা পসিবল নয়।

পিয়ার কথা শুনে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখানে এসে দাড়ালো সাহিল।আদির পিট চাপড়ে বলে উঠলো….

___কি চলছে এখানে….?

___সাহিল,,, দেখনা।এই ঝগড়ুটে মেয়ে কখন থেকে ঝগড়া করছে আমার সাথে।একেতো আমায় ধাক্কা দিয়েছে তার উপর সাদা কানা বিলাই বলছে। এখন আবার মিনি বিলাইও বললো…।

আদির কথায় হু হা হেসে উঠলো সাহিল।তার সাথে যোগ দিলো পিয়াও।পিয়া বুঝতে পেরেছে,,,দেখতে বডি বিল্ডার হলেও আদি এখনো পুরো বাচ্চাদের মত।সাহিলকে কেমন বাচ্চাদের মত করে ওর নামে অভিযোগ করতেছিল।পিয়ার সত্যিই ভিষন হাসি পাচ্ছিলো।সাহিল এবার পিয়ার দিকে তাকালো।

___হাই…আই এম সাহিল।

পিয়াও মুচকি হেসে বলে উঠলো….

__হ্যালো।আই এম পিয়া…

এদিকে রোশনি একটা রুমে বসে কাগজে লিস্ট তৈরি করছে।তখনি রোশনির ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো জয় ফোন করেছে।সাথে সাথেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো রোশনির। ফোনটা হাতে নিয়ে নিজেকে কিছুটা গম্ভির করে ফোন রিসিভ করলো।

___কি করছো…?

__এই তো কাজ করছি।বিয়ের জন্য কি কি লাগবে তার লিস্ট বানাচ্ছিলাম। তুমি কি করছো…?

___তোমার কথায় ভাবতেছিলাম।আর কতদিন এভাবে ঝুলিয়ে রাখবে বলো তো…?

জয়ের কথায় মুচকি হাসলো রোশনি,,, জয়কে বুঝতে না দিয়ে।

___কতবার না বলেছি,,,আমাকে এসব বলবে না।তোমাকে আমি ঝুলে থাকতে বলেছি নাকি..?অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে নাও…

__সেটা করার হলে তো কবেই করে নিতাম।আচ্ছা বাদ দাও।খেয়েছো কিছু…..

এভাবেই আরো কিছুক্ষন কথা বলে রোশনি ফোন কাটে।তারপর রুম থেকে বেরিয়ে আসে।সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যার আগে রোশনি আর পিয়া বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বের হয়।আর বাইরে আসতেই রোশনি কালো গোলাপের গাছটার দিকে তাকায়।এই ফুলগুলো ভিষন ভাবে টানে ওকে।রোশনির নিজেরও ইচ্ছে করে ওদের মাঝে নিজেকে মিশিয়ে নিতে।পিয়া তাকিয়ে দেখলো রোশনি ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। পিয়া রোশনিকে ধাক্কা দিতেই রোশনির ধ্যান ভাঙে।তারপর দুজনে হাটা দেয়। এদিকে বারান্দায় দাড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে অধির রোশনিকেই দেখছিলো।এই মেয়েকে বেশ অদ্ভুদ লাগে অধিরের কাছে।অধির যখন রোশনিকে নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত তখনই পাশে রাখা ফোনটা কাপতে শুরু করলো।মোবাইলের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো দিদাম নামটা ভেসে আছে।অর্থাৎ ডায়না ফোন করেছে।ওর পুরো নাম দিদাম আহমেদ ডায়না।নামটা দেখা মাত্রই কপালে ভাজ পড়লো অধিরের।এই মুহূর্তে তার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে করছে না ওর সাথে কথা বলার।তবুও নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ফোনটা রিসিভ করে রুমে চলে গেলো অধির।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here