শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব ৫৫

0
4512

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৫৫

🌼
দু’মাসে অনেকটাই সুস্থ্য হয়ে উঠেছে রিয়া।তবে এখনো মাঝে মাঝেই মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।কপালের একপাশে কালো দাগটা এখনো স্পষ্ট।সেদিনের সেই লৌহমর্ষক ঘটনাটা মনে পড়লেও এখনো ভয়ে শিউরে ওঠে জয়।রিয়া যে সত্যি সত্যিই এমন একটা কাজ করে বসবে সেটা ভাবতেও পারেনি সেদিন।বেলকোনিতে দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিল জয়।আঙুলের ভাজে জলন্ত সিগারেট।টানা বাহাত্তর ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরেছিল রিয়ার।জয়ের অবস্থা ছিল শোচনীয়। তিনটা দিন তিন বছরের মত মনে হয়েছিল তার।অবশেষে রিয়ার জ্ঞান ফেরার পর দেহে প্রান ফিরেছিল সে।পনেরো দিনের মাথায় রিয়াকে যখন হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হল তখনই বাধল এক বিপত্তি।কিছুতেই রিয়াকে কাছ ছাড়া করবে না জয়।রিয়াও সেদিন লাজ লজ্জা ভুলে বেশরমের মত বলেছিল সে জয়ের কাছেই থাকতে চাই।সেদিনের সেই নির্লজ্জতার কারনে আদির কাছে কতো কথায় না শুনতে হয় এখনো।বাড়ির মেয়েকে তো এভাবে কোনো ছেলের কাছে রাখা যায় না।সেজন্যে পরের দিনই ঘরোয়া ভাবে বিয়ে পড়ানো হয় তাদের।সারা দিন রাতের ক্লান্তিহীন সেবায় সুস্থতা ফিরে পায় রিয়া।তবে সেই ঘটনা পিছু ছাড়ে নি জয়ের।ঘুমের মাঝেও হঠাৎ হঠাৎ ভেসে ওঠে লাফিয়ে পড়ার দৃশ্যটা।জয় ছোট্ট শ্বাস টেনে সিগারেট মুখে তুলতে নিলেই কেউ একজন দ্রুত গতিতে ছিনিয়ে নেয়।জয় পাশ ফিরে তাকাতেই রিয়া দাত বের করে হাসে।জয় কিছু বলবে তার আগেই ঠোটের মাঝে চেপে ধরে জলন্ত সিগারেট।সাদা ধোয়াগুলো নাক মুখ দিয়ে বের করতে গিয়ে খুকখুক করে কেশে ওঠে।জয় রিয়ার হাত থেকে সিগারেট কেঁড়ে নিয়ে পা দিয়ে পিষে দেয়।মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার।এই মেয়ে সব সময় উল্টা পাল্টা কাজ করে তার মেজাজ খারাপ করার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে।

-কে খাইতে বলছে এটা…? আমাকে প্যারা না দিলে শান্তি পাওনা তাই না?

রিয়া জয়ের পায়ের পাতার উপর ভর করে গলা জড়িয়ে দাড়ালো।জয়ের ঠোটে টুপ করে চুমু খেয়ে বলল,

-সত্যি বলবো…? আপনাকে প্যারা না দিলে আসলেই আমার ভাল লাগে না।আর তোমায় কত বার বলেছি সিগারেট খাবে না।তবুও কেন ছাড়ো না শুনি? আমি ভাবতেছি তুমি যখন সিগারেট ছাড়তে পারতেছো না তখন আমি সিগারেট খাওয়াটা শিখে নিই।দুজনে একসাথে বসে খাওয়া যাবে।কি বলো?

জয় ভ্রু কুচকে তাকালো।বলল,

-আগে ঠিক করো আপনি বলবে নাকি তুমি।এক সময় আপনি তো একসময় তুমি!!এভাবে কে কথা বলে?

রিয়া ঠোট গোল করে তাকালো।বলল,

-এতো তাড়াতাড়ি কি আপনি থেকে তুমিতে আসা যায় নাকি? আমার সময় লাগবে।আচ্ছা শুনো।

-হুম বলো।

-আমার না আদর আদর পাচ্ছো। বুঝছো? এই আমাদের তো এখনো বাসর রাতই হয় নাই।ও মাই গড!!!তুমি ভাবতে পারতেছো,,,বিয়ের এতো দিনেও বাসর রাত হলো না!!দাড়াও,,,আমি এখুনি আম্মুুরে বলেতেছি।

রিয়া চলে আসতে নিলেই হাত ধরে আটকায় জয়।সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে,

-আম্মুরে বলবা মানে? আম্মুরে কি বলবা?আর এসব কি বলতেছো? বাসর মানে?মাথা ঠিক আছে তোমার?

-অবশ্যই ঠিক আছে।আমার বাসর করা লাগবে বুঝছো।আমার কত দিনের শখ জানো!!

জয় ভ্যাবাচ্যাকা চোখে তাকালো। বলল,

-বাসর করা তোমার শখ!!!কবে থেকে?

-অনেক দিন থেকে।এখন চলো আম্মুকে একটু বকা দিয়ে আসি।আমি নাহয় সিক ছিলাম সেকারনে মনে ছিল না।কিন্তু ওনার তো আমাকে মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল নাকি?তুমিও দোষি।তুমিও আমারে মনে করায় দাও নাই।এজন্যই এতো লেইট করে বাসর করতে হবে আমার।

জয় আহত চোখে তাকালো।বলল,

-প্লিজ রিয়া,,,বার বার এই ওয়ার্ডটা ইউজ করো না।

-কেন?বাসর বললে কি সমস্যা?

-বলতে মানা করছি তাই বলবা না।

-সমস্যা কি সেটা তো বলবা?

জয় মুখ কাচুমাচু করে বলল,

-আমি এই শব্দটা নিতে পারতেছি না।মানে আমি তোমাকে ঠিক বুঝাতে পারবো না।যাই হোক তুমি এই শব্দটা ব্যবহার করবা না।ব্যস…

রিয়া কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বলল,

-এখন তো আরো বেশি বেশি করে বলবো।বাসর রাত,,,বাসর রাত,,বাসর রাত…..

জয়ের এবার কান্না পাচ্ছে।এই মেয়েকে নিয়ে কি করবে সে?জয়কে নাক ছিটকাতে দেখে থেমে গেল রিয়া।জয়ের থুতনিতে ছোট্ট করে কামড় দিতেই উঁহ করে শব্দ করল জয়।থুতনিতে হাত বুলাতে বুলাতে বিরবির করে বলল,

-রাক্ষুসী একটা।

রিয়া চোখ ছোট ছোট করে সচেতন চোখে তাকিয়ে বলল,

-এই আপনি আমাকে রাক্ষুসী বললেন?

-আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে,,,রাজ কুমারীকে রাক্ষুসী বলবো?কথায় কথাও এভাবে কামড় দাও কেন? তোমার জন্যে অফিসে আমাকে লজ্জায় পড়তে হয়।

রিয়া সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আবারো জয়ের গলা জড়িয়ে ধরে দাড়ালো।আদুরে সুর তুলে বলল,

-চলো না বাসর করি।

জয়ের বিষম খাওয়ার মত অবস্থা।এভাবে বাসর করার কথা আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে কোনো ছেলেকে বলেছে কিনা জয়ের সন্দেহ আছে।এই মেয়ের মাথা আগে তো খারাপ ছিলোই দো’তলা থেকে পড়ে গিয়ে পুরোটাই খারাপ হয়ে গেছে।জয় কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে চলে আসতে নিলেই রিয়া বলে ওঠে,

-এই কোথাও যাচ্ছো তুমি?

জয় দাতে দাত চেপে হাসল।বলল,

-আপনার সাথে বাসর করার প্ল্যানিং করতে যাচ্ছি।প্রিপারেশনের একটা ব্যাপার আছে না?

রিয়া হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে কৌতুহলি গলায় বলল,

-সত্যি!!!তারমানে আজ আমাদের বাসর হবে?

জয় হতাশ চোখে চেয়ে থেকে ভুঁস করে নিশ্বাস ছাড়ল।এই মেয়ের সাথে থাকলে সেও খুব তাড়াতাড়ি পাগল হয়ে যাবে।কোন মেয়ে বাসর করার জন্যে এমন লাফায়?বাসর কাকে বলে সেটাই হয়ত ঠিকঠাক বুঝে না আবার আসছে বাসর করতে।জয় রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই খুশিতে বাকবাকুম করে নাচতে লাচতে লাগল রিয়া। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রুমে এসে বিছানার উপর পা তুলে বস।সাইড টেবিলের উপর চিচিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-এই চিচি..? শুন,,,তোকে একটা সিক্রেট কথা বলি।কাউকে বলিস না কিন্তু। আজ না আমরা বাসর করবো বুঝেছিস।আমার তো খুশির ঠ্যালায় নাচতে ইচ্ছে করতেছে।এই তুই মুখ ফুলিয়ে তাকাইতেছোস ক্যান? আমি জানি তুই ওই বজ্জাতটাকে লাইক করিস না।লোকটা অতোটাও খারাপ না বুঝলি।এতো মুখ ফুলানোর দরকার নেই ওকে?কাল ও তোর জিবন বাচিয়েছে।কাল যদি তোকে না বাচাতো তাহলে এতোক্ষনে তুই বিড়ালের পেটে থাকতি বুঝেছিস?আর এমনিতেও,,,বিড়ালটা কিন্তু খারাপ ছিল না।আমি বিড়ালটাকে আ্যাডাপ্ট করে নিতাম যদি তোরা দুজনে ফ্রেন্ডশিপ করে নিতি।তুই সাইড টেবিলে থাকতি,,আর ও আমার পায়ের কাছে বসে থাকতো,,আর আমার হাতে থাকতো একটা বই।উফফ!!কি কিউট হতো বিষয়টা!!!কিন্তু এটাতো সম্ভব নয়।একটা বিড়াল এবং একটা মাছ কখনো বন্ধু হতে পারে না।

রিয়ার কথার মাঝেই ম্যাও ম্যাও আওয়াজ তুলে গুটি গুটি পায়ে ভেতরে এল সাদা রঙের পরিষ্কার এক বিড়াল।এক লাফে সোজা রিয়ার কোলের উপর উঠে বসতেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটল রিয়ার।আলতো হাতে বিড়ালের নরম শরিরে হাত বুলাতেই আল্লাদে দু তিন বার ম্যাও ম্যাও করে ডেকে উঠল বিড়ালটা।রিয়া বিড়ালটাকে আরো একটু আদর করে দিয়ে খাবার দিলো।এক মূহুর্ত দেরি না করে কুটকুট আওয়াজ তুলে খেলে শুরু করল বিড়ালটা।রিয়া আরো এক বার হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

-আমি বলেছিলাম না কাল,,,,,,তুমি যদি চিচিকে না খাও তাহলে আমি তোমায় অনেক খাবার দিবো খেতে।নাও,,,এবার আরাম করে এই মাছ গুলো খাও।চিচিকে বাদে এই মাছগুলো তুমি খেতে পারো।চিচি আর আমার রিলেশন অনেক পুরোনো। আমরা তো স্কুল লাইফ থেকে একসাথে।আমাদের কাহিনি অনেক পুরোনো।তোমার যখনই খিদে পাবে তুমি আমার কাছে চলে আসবে।আমি তোমাকে অনেক অনেক খাবার দিবো।আজকের মত কাল আবারো আসবে তো?জবাব তো দাও…!

রিয়ার কথার মাঝেই রুমে এল জয়।বিড়ালের সাথে রিয়াকে কথা বলতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।রিয়ার বোধহয় পছন্দ হল না বিষয়টা।জয়ের কোলের উপর থেকে ল্যাপটপটা সরিয়ে নিজেই বসে পড়ল জয়ের কোলে।গলা জড়িয়ে ধরতেই ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল জয়,

-এটা কি হল?

-কি হল মানে? বাসরের কথা ভুলে গেছে? কাজ টাজ বাদ।বাসর কবে হবে সেটা বলো।

-রিয়া পাগলামি করো না।আমাকে কাজ করতে দাও।

রিয়া জিদ ধরে বলল,

-না।বাসরের আগে কোনো কাজ টাজ হবে না।আগে বাসর তারপর কাজ।এখন বলো বাসর কখন করবো আমরা?

জয় হতাশ চোখে তাকালো।খুব তাড়াতাড়ি তাকে পাবনার পথে পাড়ি দিতে হবে।বেশিদিন আর সুস্থ থাকা সম্ভব নয়।

-রিয়া..? এভাবে কে বাসর করার জন্যে পাগলামি করে বলো? মানুষে শুনলে হাসবে না? তুমি তো লক্ষি মেয়ে তাই না? আর দেখো,,,তোমার শরিরটাও তো এখনো পুরোপুরি রিকভার করে নি তাই না?আগে ফিজিক্যালি প্রিপিয়ার্ড হও তারপর নাহয় বাসর করবো।ওকে?আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি বুঝতে পারছো তুমি?

রিয়া বোকা বোকা চোখে চেয়ে থেকে ঠোট উল্টে বলল,

-তাহলে বিয়ে করে লাভ কি হলো?বিয়ের পরে যদি বাসরই না হয় তাহলে বিয়ে করার কি প্রয়োজন? মানে প্রোমোশন হয়ে গেছে কিন্তু স্যালারি বাড়ল না।বিষয়টা এমন হয়ে গেল না?প্রোমোশন যখন হয়েছে তখন আমার স্যালারিও বাড়ানো চাই।বাসর কবে করবা সেটা বলো…..।

জয় নাক ছিটকে বলল,

-ছিঃ রিয়া।তোমার মুখের ভাষা গুলো ভিষন অশ্লীল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

-কি করবো?তুমি তো আস্ত একটা নিরামিষ। তুমি তো কখনো অশ্লীল কথা বলো না সেজন্যে নিজেকেই বলতে হচ্ছে।তবে আজ থেকে তোমার সাথে কথা টথা বন্ধ।বাসর না হওয়া অবধি নো কথা।বুঝেছো…?কথা বলতে আসবা তো মাথা ফাটিয়ে দিবো।

রিয়া চট করে জয়ের কোল থেকে সরে গিয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ল।জয় ছোট্ট শ্বাস টেনে উঁকি দিয়ে তাকালো।নরম গলায় কয়েক বার ডেকেও রিয়ার সাড়া পাওয়া গেল না।কিছুক্ষন অসহায় বসে থেকে বলল,

-কথা বলছো না কেন?

রিয়া এবার পাশ ফিরে তাকিয়ে বলে উঠল,

-বললাম না বাসরের আগে কথা টথা বন্ধ…!তুমি এখন ইগনোর মোডে আছো।ইউ আর কারেন্টলি ব্লক।সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।

__

বিশাল রুম জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে রোশনি,পিয়া, নাতাশা আর রিয়া।এতো গুলো মানুষ থাকতেও রুম জুড়ে পিনপতন নিরবতা।সেই নিরবতাকে ঠেলে দিয়ে মুখ খুলল রিয়া।দুঃখ দুঃখ মুখ করে বলল,

-তোমরা বুঝতে পারছো আমার কষ্টটা?এতো দিনেও আমার বাসর হলো না।এটা তো রিতিমত গিনিসবুকে উঠে যাবে।আমার তো হাত পা ছড়িয়ে কান্না করে বন্যা তৈরি করতে ইচ্ছে করছে।সেই বন্যায় ওই বদমাইশ জয়কে ভাসিয়ে পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দিতে মন চাচ্ছে।বলে কি না আমি ফিজিক্যালি স্ট্রং না।তোর কোনো ধারনা আছে আমার পাওয়ার সম্পর্কে? আমি তো এক দিনে দুই তিন বারও বাসর করতে পারবো।হুহ…!

রিয়ার কথায় কেউ দুঃখ বা অবাক হল বলে মনে হল না।রিয়া এবং আদি দুটোই লাগাম ছাড়া কথা বলে।তাদের কথায় অবাক হতে গেলে সারা দিন অবাকের উপরই তাদের থাকতে হবে।অবাক হতে হতেই একদিন শহিদ হয়ে দুনিয়া ছাড়তে হবে।রিয়ার কথা শেষ হতে পিয়া বলতে শুরু করল,

-তোমারটা তো শুধু বাসর করে নি। এদিকে আমারটা কি করেছে জানো? আল্লাহ ৭ানে কত মেয়ের সাথে প্রেম করেছে।ইনফ্যাক্ট এখনো করছে।সেদিন একটা মেয়ে ফোন দিয়ে বলে,,, “হ্যালো পিয়া বলছেন? আমি বিদিশা।আদির এক্স।শুনেছি আপনি নাকি আদিকে ভালো টালো বাসেন না।তাহলে কাইন্ডলি যদি ওকে ছেড়ে দিতেন।ইউ নো হোয়াট? আই স্টীল লাভ হিম।ভিষন মিস করি ওকে।প্লিজ আপু ওকে ছেড়ে দিন।”বুঝতে পারছো কত বড় বেয়াদব ছেলে।দুনিয়ার সব মেয়ের সাথে প্রেম করে বসে আছে।আর এখন তারা আমার কাছে ফোন দিয়ে এসব বলতেছে।আর সারা দিন আমার সাথে ঝগড়া তো আছেই। খাটাস একটা।

পিয়ার কথার পিঠে দুঃখ দুঃখ মুখ করে তাকালো নাতাশা।বাম হাতে নাকের ডগা থেকে চশমা ঠেলে দিয়ে বলল,

-তোদের থেকেও বড় প্যারায় আমি আছি বুঝছোস?

রিয়া ফোড়ন কেটে বলল,

-তোমার আবার কি সমস্যা ভাবি? তোমাদের তো বাসর হয়েছে।তাছাড়া সাহিল ভাইয়া তো ঝগড়া টগড়াও করে না তোমার সাথে।

-সেটাই তো আসল সমস্যা।কত স্বপ্ন ছিল বিয়ের পর চুটিয়ে ঝগড়া করবো।কিন্তু আমার সব স্বপ্নে পানি ঢেলে দিয়েছে তোর খাটাস ভাই।কত ভাবে ঝগড়া বাধাতে চাইলাম কিন্তু না,,,কোনো সুযোগই দিলো না খাটাসটা।ঝগড়া করার জন্যে মাঝরাতে উঠে আইসক্রিম খেতে চাইলে ফ্রীজ থেকে এনে দেয়।বুঝতে পারছিস কতো বড় চালাক!!ফ্রীজ ভর্তি করে আইসক্রিম রেখে দিয়েছে।পকেট ফাকা করে শপিং করলেও মুখ থেকে একটা কথাও বের করে না। মুখটা কুচকায় না পর্যন্ত।ইনফ্যাক্ট শপিং করে বাড়ি ফিরে যদি আবারো শপিং করার কথা বলি তখন একটা টু শব্দ না করে আবারো যেতে রাজি হয়ে যায়!!!সেদিন রাতে প্ল্যান চেন্জ্ঞ করলাম।বজ্জাতটা তখন ঘুমাচ্ছিলো।মাঝ রাতে ইচ্ছাকৃত ডেকে তুলে বললাম,, “বৃষ্টি কে? ঘুমের মাঝে বৃষ্টি বৃষ্টি কেন করছিলা? আমার কথা শুনে কি বলে জানিস?বলে কিনা,,,,, বৃষ্টি নাকি আমাদের মেয়ে।স্বপ্নে নাকি দেখেছে আমাদের মেয়ে হয়েছে এবং তার নাম ও বৃষ্টি রেখেছে।কত বড় মিথ্যাবাদী দেখছোস? ও কখনোই বৃষ্টির কথা বলে নাই।আমিই ঝগড়া করার জন্য হুদাই মিথ্যে করে বৃষ্টির কথা বললাম।কোথায় তর্ক করে বলবে আমি বৃষ্টির নাম বলি নাই তা না উল্টে মেয়ে বানিয়ে দিলো?আমার ঝগড়ার প্ল্যানটা মাঠে মেরে দিয়ে আরাম করে ঘুমাতে লাগলো।চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ পর্যন্ত দেখলাম না।শালা খাটাস!!কোনো ভুল না করেও নিয়ম করে সরি বলবে।ঘুম থেকে উঠার পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে সরি বলাটা রেগুলার রুটিন হয়ে গেছে। এমনকি আমার দোষ থাকলেও ও সরি বলে!!এমন একটা ভাব যেন,,, বউ ইজ অলওয়েজ রাইট।শালা বেয়াদব!!বিয়ের আগেও যেমন ছিল বিয়ের পরেও তেমনই আছে।নো চেন্জ্ঞ!!নারী মানে যদি হয় শক্তি তাহলে পুরুষ মানে হল সহ্যশক্তি।যেটার জলজ্যান্ত প্রমান হল সাহিল।

কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে নিয়ে লম্বা শ্বাস নিল নাতাশা।সাহিলের মাথা ফাটিয়ে দিতে মন চাচ্ছে এই মুহূর্তে। কিছুক্ষন নিরব থেকে আবারো বলতে শুরু করল নাতাশা,

-পুরুষ মানুষ মেনডাক এর মত হয় বুঝলি…?

পিয়া আর রিয়া ভ্রু কুচকে তাকায়।পিয়া সরু গলায় প্রশ্ন করে,

-মেনডাক কেন বললে?

-গরম পানিতে মেনডাক ছেড়ে দিলে কি হবে?

পিয়া কিছু বলার আগের ফোঁড়ন কাটল রিয়া।ঠোট গোল করে বলল,

-সিদ্ধ হয়ে যাবে।

নাতাশা দ্বিমত মত করে বললো,

-নো সুইটি।সিদ্ধ হওয়ার আগেই ও পানি থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে যাবে।পুরুষ মানুষও ঠিক এমনই।বিয়ে হতেই ওরা পালাতে চাই।এদের সাথে কি করা উচিত?

-কি করা উচিত?

-প্রথমে ওকে ঠান্ডা পানিতে রাখো।তারপর নিচে আগুন জ্বালিয়ে দাও।এবার শান্তিতে অপেক্ষা করো পানি গরম হওয়া পর্যন্ত।মেনডাক ভাববে আরে এটা তো ভিষন আরামদায়ক জায়গা। ও বুঝতেই পারবে না তাকে আসলে সিদ্ধ করা হচ্ছে।সেভাবেই হাজবেন্ডকে প্রথমে ভালবেসে ডিল করো।পরে তাকে নিজের আয়ত্তে করে নাও।

-তাহলে জয়ও কি মেনডাক?

রিয়ার বোকামো ভরা প্রশ্ন শেষ হতেই ফুঁসে উঠল রোশনি।এতোক্ষন খুব মনোযোগ দিয়ে এদের আজাইরা প্যাচাল শুনছিল সে।এবার আর চুপ করে থাকা যাচ্ছে না।সে এদের ডেকেছে যাতে তার সমস্যার কোনো সমাধান দেয় কিন্তু না।এরা তো নিজেদের সমস্যা নিয়েই বাঁচে না।রোশনি দাতে দাত চেপে ধমকে উঠে বলল,

-চুপ করবে তোমরা? কি তখন থেকে মেনডাক মেনডাক লাগিয়ে রেখেছো? আমি তোমাদের এখানে ডেকেছি যাতে আমার সমস্যার সমাধান দিতে পারো।তা না করে ব্যাঙ নিয়ে পড়ে আছো।যেই পানিতে ব্যাঙ সিদ্ধ করছিলে না? ওই পানিতেই আমি তোমাদের সিদ্ধ করবো।তাড়াতাড়ি আমার প্রবলেম সলভ্ করো।নয়ত……

রোশনির কথায় সবাই সোজা হয়ে বসে হাসার চেষ্টা করল।জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নিয়ে নাতাশা বলে উঠল,

-আরে রেগে যাস কেন? আমরা তো তোর প্রবলেম সলভ্ করতেই এসেছি।তুই একটা কাজ কর।সব সময় অধিরের সাথে ফেবিকলের মত লেগে থাক।ও যেমনটা তোর সাথে করত ঠিক তেমন বিহেভ কর।অধির যত দূরে যেতে চাইবে তুই ততোই কাছে যাবি।কতোক্ষন আর কাছে না এসে থাকবে…?এক সময় না এক সময় মেনডাক এর মত সিদ্ধ তো হয়েই যাবে।

আবারো সেই ব্যাঙ!!!রোশনি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই থেমে গেল নাতাশা।অপ্রস্তুত হাসার চেষ্টা করে চশমা ঠিক করল।রোশনি নিজের মনেই বিরবির করল,,”আইডিয়াটা খারাপ না”…..।

___

প্রতিদিনের মত আজও সোফায় শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে অধির।রোশনি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে খুব সূক্ষ্মভাবে অধিরকে পর্যবেক্ষণ করছে।পরনে কালো রঙের টাউজার আর ছাই রঙের ঢিলেঢালা টি-শার্ট। অধির কোনো কথা ছাড়ায় বিছানা থেকে চাদর আর বালিশ নিয়ে সোফায় গা এলালো।রোশনি কিছুক্ষন ধম মেরে বসে থেকে উঠে দাড়ালো।দোষটা যখন তার তখন সম্পর্কটা ঠিক করার দায়িত্বটাও তার।রোশনি রুমের লাইট অফ করে ড্রীম লাইট জ্বালালো।খুব সাবধানে এসে দাড়ালো অধিরের পাশে।রোশনি জানে অধির এখনো ঘুমাইনি।রোশনি ছোট্ট শ্বাস টেনে চট করে অধিরের পাশ ঘেষে শুয়ে পড়ল।সোফাতে একজন কমফরটেবলি শুতে পারলেও দুজনের জন্যে বেশ টাফ। ফলস্বরূপ রোশনি প্রায় অধিরের বুকের উপর।অধির প্রায় সাথে সাথেই চোখ মেলে তাকিয়ে রুষ্ট গলায় বলে উঠল,

-হোয়াট দা হেল!!! সমস্যা কি?এখানে কি জন্য..?

রোশনি অধিরের কথাগুলোকে সম্পূর্ন উপেক্ষা করে অধিরের গলা জড়িয়ে বুকে মুখ গুজল।টি-শার্ট টেনে নিচে নামিয়ে উদম বুকে নাক ঘষতেই অধির বলে উঠল,

-সমস্যা কি? এসব করার মানে কি? বিছানায় যাও।

রোশনি মুখ তুলে তাকালো।অধিরের গলাটা কি অন্যরকম শোনালো? কাঁপলো মনে হল!!এতো দিন পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটার স্পর্শ পেলে কাঁপাটাই স্বাভাবিক।রোশনি ঠোট টিপে হেসে আবারো বুকে মাথা রাখল।বুকে নাক ঘষে বলল,

-বিছানায় কেন ঘুমাবো?হাজবেন্ডকে রেখে একা ঘুমালে পাপ হয় বুঝেছো? ইউ আর মাই হাজবেন্ড এন্ড অফকোর্স উই স্লিপ টুগেদার।
আর আমি আমার স্বামি ছাড়া ঘুমাতে পারবো না।

অধির বিষ্ময়ে ভ্রু কুচকে তাকালো।এই মেয়ের হঠাৎ কি হল? হঠাৎ আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে!!অধিরের ভাবনার মাঝেই রোশনি মুখ তুলে তাকালো।নাক ছিটকে অধিরের টি-শার্ট নিচ থেকে উপরে তুলতে নিতেই আটকালো অধির।বিরক্তিতে মুখ কুচকে বলল,

-হোয়াট দা হেল!!!টি-শার্ট কেন খুলছো?

-এটা পঁচা বুঝেছো? এর জন্যে আমি তোমার গন্ধ নিতে পারছি না।এটাকে খুলো তাড়াতাড়ি।

অধির বিষ্ময়ে হা হয়ে গেল।এই মেয়ের কি হয়েছে আজ? কথা টথা পুরো তার মত বলতেছে।বিয়ের পরে অধির যখন এভাবে কথা বলত তখন রাগে ফুলে উঠত রোশনি।কয়েক মাস আগেও যখন এভাবে কথা বলত তখন লজ্জায় বুকে মুখ গুজতো।আর আজ কি না সেই মেয়েই এভাবে কথা বলছে?

-এখান থেকে যাও রোশনি।আমার মেজাজ খারাপ করো না।

রোশনি খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করল বলে মনে হল না।অধিরের অনিচ্ছা সত্বেও এক প্রকার জোর করেই টি-শার্ট খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারল রোশনি।অধির কিছু বলতে যেতেই টুপ করে ঠোটে চুমু দিয়ে বসল রোশনি।অধির ভ্রু কুচকে তাকালো।রোশনি দ্বিতীয় বারের মত অধিরের শুকনো ঠোটে ঠোট ছোঁয়ালো।এরপর মুখ লুকালো অধিরের প্রশস্ত বুকে। উদম বুকে দু তিনটে কামড় দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে গেল অধিরের সাথে।পুরোনো ব্যথায় চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা নোনা জল।খোলা বুকে গরম পানির স্পর্শ পেতেই চোখ বুজল অধির।ভেতর থেকে বেরিয়ে এল বিষাক্ত কিছু দির্ঘশ্বাস।তপ্ত কিছু অভিমান।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here