#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৫৬
🌼
সকালে ঘুম থেকে উঠে অধিরকে পাওয়া গেল না।রোশনি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে মুচকি হাসল।কতো দিন পর আজ তৃপ্তির ঘুম ঘুমালো সে।সকালটা আজ অন্য রকম সুন্দর মনে হচ্ছে রোশনির।রোশনি উঠে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।বাগানে অধিরকে খালি গায়ে দেখা গেল।বাগানের গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে সে।রোশনি অপলক চেয়ে রইল সুঠামদেহি পুরুষটার দিকে।এই সুন্দর দেখতে পাগল ছেলেটা তার নিজের,, ভাবতেই গা শিরশির করে ওঠে।রোশনি বেলকোনি ছেড়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো।খুব অল্প সময়ে নাস্তা রেডি করে রুমে ফিরে এল।ওয়াশরুমের পানির আওয়াজে নিশ্চিত হল মানুষটা শাওয়ার নিচ্ছে।রোশনির মাথায় হঠাৎই দুষ্টু বুদ্ধি চাপল।আলমারি খুলে অধিরের প্রত্যেকটা শার্টের একটা করে বোতাম ছিঁড়ে সুই সুতা নিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে অধিরের বেরোনোর অপেক্ষা করতে লাগল।বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না রোশনির।দু তিন মিনিটের মাথায় অধির বেরিয়ে এল।রোশনির হাতে সুই সুতা দেখে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আলমারি থেকে শার্ট বের করল অধির।রোশনির ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি।অধির শার্টে বোতাম দিতে গিয়ে দেখল একটা বোতাম নেই।অধির শার্ট খুলতে গেলেই রোশনি বড় বড় পা ফেলে অধিরের সামনে দাড়ায়।অধির ভ্রু কুচকে তাকাতেই রোশনি বলে ওঠে,
-খুলতে হবে না।আমি বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছি।
অধির রোশনির কথায় পাত্তা না দিয়ে শার্ট খুলে বিছানায় ছুড়ে মারল।আলমারি থেকে দ্বিতীয় শার্ট বের করে পড়তে গেলেও একই বিপত্তি ঘটল।একটা বোতাম নেই।অধির তৃতীয় শার্ট পড়তে গিয়েও একই সমস্যার সম্মুখীন হল।অধিরের ভ্রু কুচকে গেল।প্রত্যেকটা শার্টের নিয়ম করে একটা বোতামই গায়েব। অধিরের বুঝতে অসুবিধা হল না কাজটা কে করেছে।রোশনির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই দুষ্টু হাসল রোশনি।বলল,
-এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই।আমার ইচ্ছে হয়েছে বাংলা সিনেমার বউদের মত স্বামির শার্টের বোতাম নিজ হাতে লাগিয়ে দিবো ।সেই কখন থেকে সুই সুতা হাতে নিয়ে বসে আছি ধারনা আছে?
অধির ছোট্ট শ্বাস টেনে আলমারি থেকে আকাশি রঙের টি-শার্ট বের করে পড়ে নিতেই ঠোট উল্টে তাকালো রোশনি।এই ছেলে তার থেকেও একধাপ এগিয়ে।খাটাস কোথাকার…!! রোশনির নজর সাইড টেবিলে যেতেই দেখল সিজার পড়ে আছে।রোশনির খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠল।এক মূহুর্ত দেরি না করে চট করে সিজার হাতে তুলে নিয়ে অধিরের গেন্ঞ্জি টেনে ধরল।অধির কিছু বুঝে ওঠার আগের গলা থেকে ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ তুলে কেটে দু টুকরো করে ফেলল টি-শার্ট।অধির বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে রইল শুধু।অধিরের হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে টান দিয়ে কাটা গেন্ঞ্জিটা খুলে ছুড়ে ফেলল রোশনি।সাদা রঙের শার্ট নিয়ে নিজ হাতে অধিরকে পড়িয়ে দিল।এরপর অধিরের মুখোমুখি দাড়িয়ে সুই সুতা নিয়ে খুব যত্ন নিয়ে বোতাম লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।অধিরও ঠাঁই দাড়িয়ে রইল।মেয়েটা ভিষনই জেদি।একবার যখন ভেবে নিয়েছে বোতাম লাগাবে তখন দুনিয়া উল্টে গেলেও বোতাম না লাগিয়ে থামবে না।রোশনি বোতাম লাগানো শেষ করে আচমকায় অধিরের ঠোটে গভির ভাবে ঠোট ছোঁয়ালো।আবেশে চোখ বুজে এলো অধিরের।বেশ কিছুক্ষন পর রোশনি সরে আসতেই চোখ খুলে তাকালো অধির।রোশনির দিকে না তাকিয়েই বাম হাতে ঠোট মুছলো।রোশনি সাথে সাথেই আবারো অধিরের ঠোটে ঠোট ছোয়াল।
-একদম ঠোট মুছবে না।
অধির ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রোশনির কথাকে সম্পূর্ন উপেক্ষা করে ঠোট মুছলো।রোশনি চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আবারো ঠোট ছোয়ালো,
-মুছলে কিন্তু আবার দিবো।একদম মুছবে না বলে দিচ্ছি।
অধির আবারো ঠোট মুছল।রোশনি তেজ দেখিয়ে বলল,
-এই সমস্যা কি তোমার?বললাম না ঠোট মুছবে না।
কথা শেষ করে আবারো ঠোট ছোয়াল রোশনি।অধির আবারো একই কাজ করতে রোশনিও নিজের জেদ বজায় রেখে একের পর এক ঠোট ছোয়াতে লাগ অধিরের ঠোটে।তিন চার বার এমন করার পর রোশনি দুষ্টু হেসে বলে উঠল,
-তুমি বার বার ঠোট মুছছো যাতে আমি তোমাকে আবারো চুমু দিই তাই না?তুমি চাইছো আমি তোমাকে আরো বেশি চুমু দিই?সেটা সোজাসুজি মুখে বললেই তো হয় অধির।এভাবে বুঝানোর কি মানে…!!আমি তো আর না করবো না।যদিও আমি লজ্জা পাচ্ছি।
রোশনির চোখে মুখে লজ্জার কোনো ছিটে ফোটাও খুজে পেল না অধির।মেয়েটা হঠাৎ করেই ভিষন অশ্লীল হয়ে গেছে।অধির চোখে মুখে যথাসম্ভব বিরক্তি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে ঠোট না মুছেই রোশনির সামনে থেকে সরে গেল।রোশনিও দুষ্টু হেসে পা বাড়ালো অধিরের পিছু পিছু।
___
রৌদ্রময় দুপুরের তপ্ত গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরেছে আদি।ঘামে ভিজে জবজবে শরির।ঠান্ডা পানিতে গোসল না করা পর্যন্ত রেহাই নেই।আদি টানা ত্রিশ মিনিট সময় নিয়ে গোসল সেড়ে রুমে এল। পিয়াকে বিছনায় গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে আড় চোখে তাকালো।ভেজা চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,
-গাল ফুলিয়ে বসে আছো কেন?কি সমস্যা?
পিয়া আদির দিকে না তাকিয়েই ঠোট উল্টে বলল,
-কিছু একটা কামড়ে দিয়েছে।
আদি সরু চোখে তাকিয়ে দু পা এগিয়ে পিয়ার সামনে দাড়ালো।পিয়া চোখ তুলে তাকাতেই থমকে গেল।আদির ফুলে ওঠা মাংস পেশিতে আটকে গেল অস্থির চোখ জোড়া।পিয়াকে এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকাল আদি,
-কি দেখো?
আদির প্রশ্নে ঘোর কাটল পিয়ার।চোখ সরিয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,
-কিছু না।
আদির ঠোটে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠল,
-বুঝি বুঝি।সবই বুঝি।সামনে এমন হট ছেলে থাকলে সব মেয়েই তাকাবে।আই ডোন্ট মাইন্ড।
পিয়া চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।বলল,
-তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কিছুই না ওকে? এভাবে সামনে এসে দাড়ালে আমার চোখ তো তোমার দিকে যাবেই।আর একটা কথা,,,,আজকাল মেয়েরা এসব মাসাল, সিক্স প্যাকস এসবে ইমপ্রেস হয়না।তাদের ব্রেইনওয়ালা ছেলেদের ভাল লাগে।যেটা তোমার নেই।
পিয়া কথা শেষ করেও বার দু’য়েক আড় চোখে তাকালো আদির উদম বুকের দিকে।আদি ঠোট টিপে হেসে বলল,
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি।বাই দা ওয়ে কোথায় কামড়েছে দেখি।
-না। দেখানো যাবে না।
আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বলল,
-সেটা এমন লাফিয়ে বলার কি আছে? আর না দেখালে বুঝবো কি করে কিসে কামড়েছে।দেখাও।
পিয়া কিছুক্ষন ভেবে নিয়ে টি-শার্ট উচু করতেই ভ্রু কুচকে তাকালো আদি।নাভির ঠিক পাশেই টকটকে লাল হয়ে আছে অনেক খানি জায়গা জুড়ে।আদি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
-কখন কামড়েছে জানো?
-না।সকালে ব্যথা অনুভব করতেই দেখি এই অবস্থা।
-কিসে কামড়ালো বুঝতে পারছি না।আচ্ছা চিন্তা করো না।ডক্টর দেখালেই ঠিক হয়ে যাবে।আপাততো আমার কাছে একটা মলম আছে সেটা লাগাও।
আদি ড্রয়ার থেকে মলম এনে পিয়ার হাতে দিল।পিয়া আঙুলে মলম নিয়ে পেটে স্পর্শ করতেই অস্ফুট স্বরে আওয়াজ করে ওঠে।পুরো জায়গাটা ব্যাথায় ভরা।আদি ছোট্ট শ্বাস টেনে পিয়ার হাত থেকে মলম নিয়ে নিজেই লাগাতে শুরু করল।খুব আলতো হাতে পেটে আঙুল ছোঁয়াতেই সারা শরির শিরশির করে উঠল পিয়ার।আদিকে বাধা দিতে গিয়েও পারল না।আদি বেশ অনেকটা সময় নিয়ে মলম লাগিয়ে উঠে দাড়ালো।পিয়া কিছু না বলে রুম থেকে চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে ডেকে ওঠে আদি,
-পিয়া…?
পিয়া পেছনে ফিরে তাকাতেই আদি বলে ওঠে,
-আমার উত্তরটা এখনো পায় নি।
পিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আবারো বলে উঠল,
-তোমাকে নিয়ে আমার কি ফিলিংস,, সেটা আমি তোমাকে বলে দিয়েছি।এখন আমি তোমারটা জানতে চাই।আর কত অপেক্ষা করতে হবে আমায়?
পিয়া কোনো জবাব না দিয়েই প্রস্থান করল।পিয়া চলে যেতেই ছোট্ট শ্বাস ছাড়ল আদি।পরমুহূর্তেই মাথা চুলকে হেসে উঠল।শেষ পর্যন্ত এই গুন্ডি আর ঝগড়ুটে মেয়ের প্রেমে পড়েই গেল।টম এন্ড জেরির মত সব সময় একে অপরের পিছে লেগে থাকতে থাকতেই কখন যে মায়ায় আটকে গেল বুঝতেই পারে নি।একটা সময় যাকে দেখলে নাক ছিটকাতো এখন তাকে দেখার জন্যেই চোখ দুটো নিরন্তর চেয়ে থাকে।একটু ছুয়ে দেখার জন্যে মনটা হাসফাস করে।দিকহীন জিবনটা যেন হঠাৎই দিশা খুজে পেয়েছে।অনেক তো হল।এবার নাহয় অগোছালো জিবনটাকে একটু গোছানো যাক।ধরাবাঁধা মিষ্টি কিছু নিয়ম আর আদুরে শাষনে বাঁধা পড়ুক দুরন্ত এই মন।।উড়তে থাকা ডানাগুলোকে বিশ্রাম দিয়ে এবার নাহয় ছোট্ট নীড়ে সংসার গড়ুক।
___
ঘড়ির কাটা বলছে এখন তিনটা বেজে পাঁচ মিনিট।নাতাশা বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে চিপস খাচ্ছিলো।স্থীর চোখ জোড়া টিভির টলটলে স্ক্রীনে নিবদ্ধ।টিভির স্ক্রীনে রোজ আর জ্যাকের হাস্যজ্জল মুখ চকচক করছে।টাইটানিক মুভিটা এই নিয়ে কত বার দেখা হল ঠিক মনে নেই নাতাশার।তবে দেখার সংখা খুব কম নয়।সেই তালিকার হিসেব বাড়াতে আজ আবারো টিভি খুলে বসেছে।জ্যাক আর রোজ তখন বাতাসে গা ভাসিয়ে স্বাধীন পাখির ন্যায় উড়তে ব্যস্ত। নাতাশা নাকের উপর থেকে চশমা ঠেলে দিয়ে বালিশের উপর থেকে ফোন তুলে নিল।প্যাকেটের শেষ চিপসের টুকরোটা মুখে পুড়ে দিয়ে ফোন লাগালো সাহিলের নাম্বারে।প্রথম বারে রিসিভ না হলেও দুই বারের মাথায় রিসিভ হল ফোন।সাহিলকে হ্যালো বলারও সুযোগ না দিয়ে নাতাশা বলে উঠল,
-প্রথম বারে ফোন ধরো নাই ক্যান?কি সমস্যা?
ওপাশ থেকে ভেসে এল নরম গলার স্বর,
-আমি ড্রাইভ করছি নাতাশা।
-সব সময় কোনো না কোনো এক্সকিউজ রেডিই থাকে তোমার। তুমি না অফিসে ছিলে তাহলে গাড়িতে করে কই যাও?
-কনট্রাকশনের কাজ চলছে সেটাই দেখতে গিয়েছিলাম।সব কিছু পার্ফেক্টলিই চলতেছে।
-তোমার পাশে কে?
-কে মানে?
-বেশি ঢং না করে তাড়াতাড়ি বলো তোমার পাশে কে?
-তুমি কিভাবে জানলে আমার পাশে কেউ আছে?
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।এখন বলো পাশে কে?
-আমার পাশে আদি বসে আছে।
নাতাশা সরু গলায় প্রশ্ন করল,
-সত্যিই তো? নাকি কোনো মেয়ে বসে আছে? এই তোমার পি.এ সোনিয়া বসে নেই তো? তুমি মিথ্যে বলছো তাই না?
-সিরিয়াসলি!!! তুমি আবারো শুরু করেছো?তুমি না আমার বউ কম ডিটেকটিভ বেশি।বললাম তো আমার পাশে আদি বসে আছে।তোমার এই সন্দেহের মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে নাতাশা।আই হেট ইউ বুঝেছো?
-থাক হয়েছে। এতো হেট ইউ বলার প্রয়োজন নেই।আচ্ছা শুনো….
নাতাশা কিছু বলার আগেই আদির গলা ভেসে এল।উচ্ছল গলায় বলে উঠল,
-এই আপু শুনো,,,,,,তোমার বর আজ কি করেছে জানো? একটা মেয়ের সাথে বত্রিশ পাটি দাত বের করে করে কথা বলেছে।এমনকি আসার সময় হাগ পর্যন্ত করেছে।কি বলবো তোমায়? কিভাবে ড্যাবড্যাব করে চেয়েছিল তুমি ভাবতেও পারবে না।
আদির কথা শুনে চোখ গরম করে তাকালো সাহিল।তবে আদির মধ্যে কোনো ভাবান্তর হল না।নাাতাশা ফুসে উঠে বলল,
-এই যে সাহিল্লা…আজ তুই শুধু বাড়ি আয় তারপর তোর চোখ যদি না তুলেছি আমার নামও নাতাশা জামান চৌধুরি নয়।অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরা বের করবো তোর আজ।
-আমার নামটাকে এভাবে বিকৃত করলা? ছোট ভাইয়ের সামনে অনন্ত তুই তুকারি করো না।
নাতাশা এবার দ্বিগুন রেগে উঠে বলল,
-আসছে আমার বীরপুরুষ। তুই করে বলা যাবে না।শুনো,,,,,রাগের সময় তুই তুমি সব সমান।তুই অন্য মাইয়ার সাথে কথা বলছোস ক্যান?
-উনি আমাদের নতুন ক্লায়েন্ট ছিল নাতাশা।ইনফ্যাক্ট উনি হয়ত আমার থেকে বয়সে দু এক বছর বড়ই হবে।
-আচ্ছা…!! এখন তাহলে সাহেবের সিনিয়র মাইয়াগো পছন্দ হওয়া শুরু হইছে? তুই খালি বাসায় আয়।তোর আজকে খবর আছে।তোর কত বড় সাহস তুই মাইয়াগো দিকে তাকাস।কথা বলছ।জড়াইয়া ধরস।
-আচ্ছা বাবা আমার ভুল হইছে।আমি বাংলাদেশের কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূর চোখ তুলেও তাকাবো না।এবারের মত ক্ষমা করে দিন।
নাতাশার মন গলার আগেই পাশ থেকে দ্বিতীয় বারের মত ফোঁড়ন কাটল আদি,
-আপু সাহিল তোমাকে আবার ঢপ দিচ্ছে।তোমাকে কথার জ্বালে ফাঁসাচ্ছে। ও শুধু বাংলাদেশের মেয়ের কথা বলেছে।তারমানে
ফরেনার মেয়েগুলোর সাথে ঠিকই কথা বলবে।ড্যাবড্যাব করে তাকাবে।চুমু টুমুও দিতে পারে।
আদির কথায় আবারো ফুঁসে উঠল নাতাশা।সাহিল চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ফিচেল হেসে চোখ টিপল আদি।এই ছেলে সুযোগ পেলেই তাকে ডুবাবে।এক মাত্র এই ছেলের জন্যেই একদিন তার জিবনটা পানসে হয়ে যাবে।সেদিন সাহিল ছাড়বে না আদিকে।ইচ্ছেমত কিলাবে সেদিন।বজ্জাত পোলা একটা।এটা কি আদৌও তার নিজের মায়ের পেটের ভাই? সন্দেহ আছে…….।
____
শেষ বিকেলের ম্লান আলো শুষে নিয়েছে দিনের ঝাঝালো রোদ।রোশনি বারান্দায় বসে বই পড়ছিল।মোটা বইয়ের পাতায় বিদ্যমান কালো কালিতে লেখা শব্দগুলো ঠোট নেড়ে নেড়ে পড়ে গেলেও মষ্তিষ্ক অবধি পৌছাচ্ছে না।একই লাইন দুই থেকে তিন বার পড়েও সারমর্ম বুঝা যাচ্ছে না।সমস্যা বইয়ের লেখা গুলোর না।পুরো সমস্যায় তার। নিজের।মাথার মধ্যে অন্য চিন্তা ঘুরপাক করলে বই এর আর কি দোষ।মষ্তিষ্ক তো আর এক সাথে দু রকম কাজ করতে পারবে না।রোশনি বই বন্ধ করে ভুস করে নিশ্বাস ছাড়ল।দোলনার উপর পা তুলে বসে আরো একবার ফোন লাগালো অধিরের নাম্বারে।রিসিভ হল না।রোশনি জানত অধির ফোন উঠাবে না।উঠানোর হলে অনেক আগেই উঠাতো।এই নিয়ে পঁচিশ বারের মত ফোন দেওয়া হয়েছে।খাটাসটা এক বারের জন্যেও রিসিভ করে নি।রোশনি ঠোট উল্টে কন্ট্রাক্ট লিস্ট ঘাটতে ঘাটতেই হঠাৎ শাহিনের নাম্বারটা চোখে পড়ল।রোশনি পা ভাজ করে আরাম করে বসে শাহিনের নাম্বারে ডায়াল করল।এই একটা মানুষই ফেবিকলের মত সারাক্ষন চিপকে থাকে অধিরের সাথে।বডিগার্ড বলে কথা…।শো অফ কোথাকার….।রোশনির ভাবনার মাঝেই গুরুগম্ভীর নরম গলায় ভেসে এল এক পরিচিত কন্ঠস্বর,
-ইয়েস ম্যাম।বলুন…।
-আগে ইংরেজদের মত ম্যাম ম্যাম করা বন্ধ করুন শাহিন ভাই। আমার আনকমফরটেবল লাগে।
শাহিন বোধহয় মুচকি হাসল,
-ওকে।ম্যাম বাদ।এবার বলুন কি জন্যে ফোন দিয়েছেন?
-ভাইয়া বলছিলাম কি… অধির এখন কোথায় আছে?
-স্যার তো এখন একটা রেস্টুরেন্টে আছেন।আমিও স্যারের সাথেই আছি।কিন্তু এটা তো স্যারকে ফোন করেও জেনে নিতে পারতেন।
রোশনি বিরক্তিতে নাক ছিটকে বলল,
-খাটাসটা আমার ফোন তুলছে না।আচ্ছা এটা ছাড়ুন। অধির রেস্টুরেন্টে কি করছে?
-স্যার তো কারো সাথে দেখা করতে এসেছেন।
-কার সাথে?
-সঠিক বলতে পারবো না।ওনাকে আমি চিনি না।আর স্যারও আমায় কিছু বলেন নি।
-উনি ছেলে নাকি মেয়ে?
-মেয়ে…।
রোশনি এবার দাতে দাত চেপে প্রশ্ন করল,
-বয়স কত?
-সরি ম্যাম ঠিক বুঝলাম না।
রোশনি আমতা আমতা করে বলে উঠল,
-না মানে দেখতে কেমন? মধ্যবয়সি বা বৃদ্ধ্যা…
-না ম্যাম।দেখতে তো আপনার বয়সিই মনে হচ্ছে।
রোশনির রাগ তরতর করে বাড়ল।বউ এর দিকে নজর না দিয়ে ব্যাটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে মেয়েদের সাথে প্রেমালাপ করছে!!বের করছি ওর প্রেমালাম।রোশনি চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
-এড্রেসটা এখনি টেক্সট করে পাঠান শাহিন ভাই।
শাহিনের কোনো কথা না শুনেই ফোন কাটল রোশনি।শাহিন কান থেকে ফোন নামিয়ে হতভম্ব চোখে চেয়ে রইল।এড্রেস কেন দিবে সে? এড্রেস নেওয়ার জন্যেই কি ফোন করেছিল? কি জানি..!!শাহিন রোশনিকে এড্রেস সেন্ড করে নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলল,”স্যার ঠিকই বলে।এই মেয়ে সত্যিই পাগল”।
__
রোশনি রেস্টুরেন্টের কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে আসতেই কোনার একটা টেবিলে অধিরকে চোখে পড়ল।তার ঠিক মুখোমুখিই বসে আছে অতি মর্ডান একটা মেয়ে।রোশনি চোখ মুখ শক্ত করে গটগট আওয়াজ তুলে ওদের সামনে গিয়ে দাড়াতেই ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।রোশনিকে এখানে সে এক্সপেক্ট করে নি।কি করছে এই মেয়ে এখানে? আর এতো রেগেই বা আছে কেন?
-তোমাকে আমি কতবার ফোন দিয়েছি জানো?গুনে গুনে পঁচিশ বার ফোন দিয়েছি তোমায়।আমার ফোন তোলার সময় হয় নি আর তুমি এখানে মেয়ে নিয়ে বসে আছো? আবার কফি খাওয়া হচ্ছে?
অধির এখনো বিষ্মিত চোখে চেয়ে আছে।পাশে বসা অতি আধুনিক মেয়েটা ভ্রু কুচকে বলে উঠল,
-হেই…হু আর ইউ?হুয়াই আর ইউ টকিং টু হিম লাইক দিস?
রোশনি এবার ফুঁসে উঠে বলল,
-একজন যেতে না যেতেই আসছে আরেক ইংরেজ।যত্তসব ফাউল লোকজন।আর তুমি..? এখনো হাবার মত বসে আছো কেন? উঠো….
মেয়েটা বিষ্ময়ে হতবাক।এই মেয়ের সাহস তাকে অবাক করছে। অধির চৌধুরির সামনে যেখানে উচু গলায় কথা বলার সাহস কারো নেই সেখানে এই মেয়ে তাকে রিতিমত ধমকাচ্ছে।সেটাও অধির চুপচাপ সহ্য করে নিচ্ছে..? স্ট্রেঞ্জ..!! অধির ভ্রু জোড়া সোজা করে নিচু গলায় বলে উঠল,
-রোশনি আমি এখানে কাজে এসেছি।তুমি এখান থেকে যাও।ডিস্টার্ব করো না।
রোশনির মেজাজ খিচে গেল।কি কাজ করছে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছে।রোশনির রাগ আরো একধাপ বাড়িয়ে দিতে মেয়েটা অধিরের হাতের উপর হাত রাখল।রোশনি চোখ গরম করে তাকালো অধিরের দিকে।অধির শুকনো ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
-আই এম সো সরি মিরা।তোমার সাথে পরে কথা বলে নিবো।এখন আমি উঠি।
মিরা আরো কিছুটা অবাক হলো।নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-ইটস ওকে।নো প্রবলেম।
অধির চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াতেই মেয়েটা এসে হাগ করল অধিরের সাথে।অধির রোশনির দিকে তাকাতেই দেখল রোশনির চোখ মুখ রাগে কাঁপছে।অধির দ্রুত মিরাকে সরিয়ে দিতেই ভ্রু কুচকে তাকালো মিরা।প্রায় সাথে সাথেই টেবিলের উপর থেকে পানি ভর্তি গ্লাস উঠিয়ে ছুড়ে মারল অধিরের দিকে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ সহ পুরো বুক ভিজে একাকার হয়ে গেল।অধির মুখ বুজে সবটা সহ্য করল।এখানে আর কোনো সিনক্রিয়েট সে চাই না।অলরেডি উপস্থিত সকলেই তাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।রোশনির সেদিকে বিশেষ পাত্তা নেই।অধিরের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠল,
-আর কোনো মেয়েকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে আছে? এখন তো শুধু এক গ্লাস পানি ছুঁড়ে শান্ত হয়েছি এরপর বুড়িগঙ্গার পানিতে চুবাবো।বলে দিলাম।
কথা শেষ করে অধির ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল রোশনি।হতভম্ব মিরার ঘোর এখনো কাটে নি।কে এই মেয়ে..?অধিরের উপর এতো কিসের অধিকারবোধ? জানা দরকার…..।
_
কেন রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না,
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না।
এই মন কেমনের জন্মদিন
চুপ করে থাকা কঠিন,
তোমার কাছে খরস্রোতাও গতিহীন।
নতুন সকাল গুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
দূরে গেলেও এটাই সত্যি তুমি আমারই,
শুধু আমারই ..
রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না,
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না।
জলে ভেজা, চোখবোজা
ঘুম খোঁজা ভোর,
নিশানা তীর, স্মৃতির ভীড়
এলোমেলো ঘর’দোর।
মেঘ আসে এলো কিসে
ছুঁয়ে দিলেই সব চুপ,
সেই মেঘবালিকার গল্প হোক,
শহরজুড়ে বৃষ্টি হোক,
রোদ্দুর হোক আজ শুধুই তাহার ডাকনাম।
পাতাভরা সব দু-টুকরোরা
কাল বৈশাখীর মতো মুখচোরা,
সব ভিজে যাক শুধু বেঁচে থাক অভিমান
নতুন সকালগুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
বেঁধে রাখতে পারলে তুমিও হতে আমারই
শুধু আমারই …
অধির ঘরে ঢুকেই কানে এল করুন সুর।এই প্রথম রোশনিকে গাইতে শুনলো অধির।গানের সুরে অস্পষ্ট এক বেদনা।অভিমান।অধির ছোট্ট শ্বাস টেনে ল্যাপটপ হাতে সোফায় বসতেই সামনে এসে দাড়ালো রোশনি।কোমরে হাত গুজে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে অধিরের গম্ভির মুখের দিকে।অধির সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কাজে মনোযোগ দিল।মিনিট খানিকের মাথায় ল্যাপটপ সরিয়ে কোলের উপর বসে পড়ল রোশনি।অধির ভ্রু কুচকে তাকাতেই গলা জড়িয়ে দাত বের করে হাসল।মুখটা এগিয়ে আনতেই মাথাটা পেছনের দিকে সরিয়ে নিল অধির।এতে রোশনি দমলো বলে মনে হল না।গেন্ঞ্জির কলার টেনে এগিয়ে এনে ডান হাতে থুতনি চেপে ঠোট ছোঁয়ালো অধিরের শুষ্ক ঠোট জোড়ায়।অধির বাধা দিতে গিয়েও দিলো না।আরো কিছুটা গভির ভাবে ছুঁয়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-তুমি বলেছিলে দিনশেষে এরকম মুগ্ধতায় জড়াতে চাও।আমি ভুলিনি।জড়িয়ে নিলাম মুগ্ধতায়।আমি কথা রেখেছি।এবার তোমার পালা।বলেছিলে যতো যাই হয়ে যাক হাত ছাড়বে না।তাহলে কেন ছেড়ে যেতে দিচ্ছো অধির?
চলবে……