শেষ বিকেলের আদর❤️সারপ্রাইজিং পর্ব ২

0
3286

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পরের অংশ

🍁
অধির বাম হাতে চোখ মুছে রোশনিকে কোলে তুলে নিলো।সিড়ি ভেঙে নিচে নামল।পা দিয়ে বেড রুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই অবাক হয়ে গেল অধির।সেই সাথে নিজের অপরাধ বোধটাও বাড়ল তরতর করে।মেয়েটা তাকে সারপ্রাইজ দিতে এতো কিছু করেছে অথচ সে কি করলো? মেয়েটাকে আঘাত করে বসল!!কষ্ট দিলো!!অধির রুমে ঢুকে রোশনিকে বিছানায় শুইয়ে দিল।মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে রুমাল দিয়ে কপালের রক্ত পরিষ্কার করে দিল।সাদা কাপড়ের ব্যান্ডেজ বেধে দিয়ে উঠে দাড়াতে নিলেই দূর্বল হাতে অধিরের হাত চেপে ধরে রোশনি।অধির অপরাধি চোখে তাকায়।রোশনি অধিরের হাত ধরে হালকা টানতেই রোশনির বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে ওঠে অধির।রোশনি অবাক হয়।এই প্রথম সে অধিরকে কাঁদতে দেখছে।একটা মানুষেরই কত রুপ?এতো তো কিছুক্ষণ আগেই কতোটা রাগ ছিল চোখে। এখন সেই চোখেই তাকে হারানোর ভয়।

-আমাকে মাফ করে দাও সুইটহার্ট। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমার জন্যে আজ তোমার প্রানও চলে যেতে পারতো।সব কিছু আমার জন্যে হয়েছে।আমি তোমার যোগ্য না।একদমই যোগ্য না।

অধিরকে বলতে না দিয়ে দূর্বল গলায় বলে উঠল রোশনি,

-হুশশশ,,,,,।আর কোনো কথা নয়।আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।আমি আজ আপনার হতে চাই অধির।সম্পূর্নরুপে আপনার।

অধির মুখ তুলে তাকাতেই অধিরের ঠোটে ঠোট ছোয়াল রোশনি।শুষে নিতে থাকলো একেকটা দির্ঘশ্বাস।অধিরও আকড়ে ধরল পিয়তমার কোমল ঠোট।সব ভুলে হারিয়ে গেল নতুন কোনো দুনিয়ায়। বাইরে তখন তুমুল বর্ষন। অাকাশ বাতাস কাপিয়ে বৃষ্টির তাণ্ডব। বৃষ্টির পানিতে সব মান -অভিমান,ক্ষোভ-অপরাধ ধুয়ে মুছে কাল হয়ত তারা নতুন সূর্যের উদয় দেখবে।নতুন করে শুরু হবে পরবর্তি পথচলা।নাকি কাছের মানুষের চক্রান্তের শিকার হয়ে নষ্ট হবে তাদের আগামির পথচলা!!!

———-

সূর্যের প্রথম কিরন এসে পড়েছে বারান্দার ঝকঝকে সাদা টাইলস এ।দূরের নাম না জানা গাছের ডালে বসে আছে এক জোড়া কুচকুচে কালো কাক।কিছুক্ষন অযথায় ডাকাডাকি করে আবারো অস্থির চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে।সূর্যের নরম রোদ গায়ে লাগতেই গা ঝাড়া দিয়ে উড়ে চলল অজানা গন্তব্যে। দ্বিতীয় কাকটা দু একবার কা কা করে সেও উড়াল দিলো সঙ্গীর পেছনে।ভারি পর্দার ফাক গেলে সূর্যের তীক্ষ্ণ আলো চোখে মুখে আচড়ে পড়তেই ঘুম ছুটে গেল রোশনির।চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে অধিরকে খোজার চেষ্টা করেও বিশেষ লাভ হল না।অবশ্য ভালোই হয়েছে অধির রুমে নেই।নয়ত তাকে লজ্জা দেওয়ার কোনো সুযোগই ছাড়তো না অসভ্যটা। রোশনি চাদরটা আরো একটু টেনে নিজেকে আড়াল করলো।রাতে অধিরের সাথে কাটানো ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত গুলো মনে করে অকারনেই লজ্জায় লাল হতে লাগল।ইশশ!! সব কিছু একদম স্বপ্নের মত ছিল।দুজন দুজনাতে মত্ত ছিল।রোশনির ভাবনা বেশি দূর গড়ালো না।তার আগেই খাবারের ট্রে হাতে রুমে প্রবেশ করল অধির।নগ্ন শরিরে শুধু ডেনিম প্যান্ট।অধির খাবারের ট্রে সাইড টেবিলে রেখে বিছানার দিকে তাকালো।সাথে সাথেই চাদরের নিচে মুখ লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রোশনি।কাল রাতের ঘটনার পর এই লোকের সামনে আগের মত স্বাভাবিক থাকা অসম্ভব। রোশনির কান্ডে নিঃশব্দে হেসে ফেলল অধির।চাদরের কোণা ধরে টান দিয়েও খুব একটা লাভ হল না।কয়েক সেকেন্ড বাদে চাদর থেকে মুখ বের করে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই দেখল অধির সোফার হাতলে ঠেস দিয়ে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে।ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি।রোশনি আবারো মুখ ঢেকে নিল।প্রায় মিনিট খানিক পরেও অধিরের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আবারো চাদর থেকে মুখ বের করে চোখ পিটপিট করে তাকালো।অধির আগের মতোই দাড়িয়ে আছে।রোশনি মুখ ঢাকতে গিয়েও ঢাকল না।ভিষন আত্মবিশ্বাসী গলায় বলল,

-আপনি ভাবছেন আমি লজ্জা পাচ্ছি?আপনার ধারনা ভুল মিষ্টার চৌধুরি।আমি একদমই লজ্জা পাচ্ছি না।

অধির ঠোটে দুষ্টু হাসি,

-সত্যিই পাচ্ছো না?কিন্তু তোমার তো লজ্জা পাওয়া উচিত সুইটহার্ট।একটা কাজ করা যেতে পারে।তুমি যেহেতু একদমই লজ্জা পাচ্ছো না তাহলে লজ্জা পাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যেতেই পারে।কি বলো…?

অধির এক ভ্রু উচু করে শেষের কথাটা বলল।রোশনি সরু চোখে তাকিয়ে বলল,

-দিন দিন আপনি চরম লেভেলের অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন অধির।আপনার উচিত মেয়েদের সাথে ভদ্র ভাষায় কথা বলা।

অধির দ্বিমত করে বলল,

-উঁহু….ওটা মেয়েরা হবে না সুইটহার্ট। শুধু মেয়ে হবে।আর এমনিতেও,,,,, আমার এই লাগামহীন অসভ্য কথাগুলো শুধু আমার বউ এর জন্যই বরাদ্দ।বুঝেছো?

রোশনি ভেংচি কাটতেই শব্দহীন হাসল অধির।রোশনির নজর অধিরের বুকে পিঠে পড়তেই আতকে উঠল রোশনি।পুরো শরির লাল লাল দাগে ভরে আছে।গলা আর বাহুতেও দাগের ছড়াছড়ি।রোশনি বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,

-এই আপনার সারা শরিরে এগুলো কিসের দাগ?ইশশ গলাতেও আছে।কিভাবে হল?

অধির সরু চোখে তাকালো।রোশনির বিষ্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

-কিভাবে হলো মানে? এগুলো তুমি করেছো সুইটহার্ট। আমার পুরো শরির তুমি খামচি দিয়ে ভরে ফেলেছো।তোমার নখ গুলো আজকেই কাটতে হবে। নয়ত এক রাতেই তুমি আমার যে হাল করেছো না জানি বাকি রাতগুলোতে কি হাল করবে!!!

অধিরের কথা শুনে রোশনির হোঁচট খাওয়ার অবস্থা।এই ছেলে বলে কি? সে কখন এসব করল? পরমুহূর্তেই লজ্জায় লাল হল।অধির দুষ্টুমি করে বলে উঠল,

-এই শরির নিয়ে আমি বাইরে কিভাবে যাবো সেটাই ভাববার বিষয়।কেউ দেখলে কি বলা যায় বলো তো সুইটহার্ট?

-উফফ অধির…!!!আপনি ইচ্ছে করে আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন।আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি? আমি কি তখন হুঁশে ছিলাম?

কথাটা শেষ করে নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল রোশনি।ইশশ!!কিসব বলছে সে? অধিরের সাথে থেকে থেকে সেও অসভ্য হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।রোশনি পিটপিট করে অধিরের দিকে তাকাতেই দেখল অধির মিটিমিটি হাসছে।লোকটা ইচ্ছে করে তাকে লজ্জা দিচ্ছে।অধির বিছানার একপাশে বসে সাইট টেবিল থেকে ট্রে তুলে নিয়ে বিছানায় রেখে বলল,

-হয়েছে…।আর লজ্জা পেতে হবে না।এখন উঠে এই স্যুপটা গুড গার্ল এর মত খেয়ে নাও তো।

রোশনি নাক ছিটকে তাকালো।বলল,

-সকাল সকাল স্যুপ কে খায় অধির?স্যান্ডউইচ অথবা টোস্ট হলে মজা হত।

-স্যুপই খেতে হবে সুইটহার্ট। নাক ছিটকে লাভ নেই।এই ব্যাপারে আমি কোনো কথা শুনবো না।তোমার শরির অনেক উইক।সেজন্য এটাই খেতে হবে।এখন তাড়াতাড়ি উঠে বসো আর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার আগে চট করে খেয়ে নাও।

রোশনি শরিরে চাদর পেচিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসল।অধির মুখের সামনে চামুচে করে স্যুপ ধরতেই চোখ কুচকে মুখে পুরে নিল রোশনি।চোখ মুখ খিচে কোনো রকমে গিলে নিয়ে বলল,

-একটু নূন তো দিতেন!!!অথবা সামান্য লেবু।কি বিদঘুটে খেতে হয়েছে আপনি জানেন?

-এটা আমি নিজে বানিয়েছি সুইটহার্ট। এর স্বাদ কেমন সেটা আমি খুব ভাল করে জানি।তোমারও জেনে রাখা ভাল,,,এটার টেস্ট এমনই হয়।এটা শরিরের জন্য ভিষন উপকারি।এখন কথা না বলে চুপ করে খেয়ে নাও।

-এগুলো ছাগলেও খাবে না।খাওয়ার অযোগ্য একটা জিনিস আপনি আমাকে খাওয়াতে পারেন না অধির।আপনার উচিত অসুস্থ মানুষের পছন্দের খাবার এনে তাকে খাওয়ানো।

অধির সরু চোখে তাকালো।বিরস গলায় বলল,

-হয়ে গেছে? যদি হয়ে গিয়ে থাকে তবে এটা তাড়াতাড়ি শেষ করো।ঠান্ডা হয়ে গেলে খেতে আরো খারাপ লাগবে।

রোশনি বুঝে গেছে এটা না খাওয়া অবধি তার রেহাই নেই।এই লোকটা হল আস্ত পাঁজি।এমন বিদঘুটে খাবারের নাম নাকি স্যুপ!!যত সব ফালতু জিনিস?চিকেন স্যুপ হলেও চালিয়ে নেওয়া যেত।অধির চোখ গরম করে তাকাতেই চোখ নাক বন্ধ করে গিলতে লাগল একের পর এক।শেষ চুমুক দিয়েই হাফ ছাড়ল রোশনি।তার এমন মনে হচ্ছে যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয় করে ফেলেছে সে।বিশ্বযুদ্ধের থেকে কোনো অংশে কম নয় এই বিদঘুটে স্যুপ খাওয়া।জঘন্য…..।

অধিরকে পলকহীন তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকাল রোশনি।ঠোট বাকিয়ে প্রশ্ন করল,

-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?পলক ফেলতে ভুলে গেছেন নাকি?

-নিজের দিকে একবার তাকাও তাহলে তুমি নিজেও পলক ফেলতে ভুলে যাবে সুইটহার্ট।

রোশনি সরু চোখে তাকালো।অধিরের কথামত নিজের দিকে তাকাতেই চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হল।চাদরটা কখন যেন কাধের উপর থেকে সরে গেছে।আর অসভ্যটা সেদিকেই ফ্যাঁলফ্যাল করে তাকিয়ে অাছে।রোশনি দ্রুত চাদর টেনে নিজেকে ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।রোশনির কান্ডে শব্দ করে হেসে উঠল অধির।হাসি থামিয়ে বলল,

-এতো টানলে চাদরটাই ছিঁড়ে যাবে সুইটহার্ট। আর এতো লজ্জা পাবার কি আছে? এমনিতেও তোমার শরিরের প্রতিটা জায়গায় আমার ছোঁয়া আছে।এখন এতো ঢেকে লাভ নেই।আর একটা কথা…।আমার সামনে এভাবে লজ্জা পেও না।আমি কিন্তু নিজেকে আটকে রাখতে পারবো না।একবার ডিসট্র্যাক হয়ে গেলে…..

অধিরের কথার মাঝেই চোখ রাঙিয়ে তাকাল রোশনি।নাক ছিটকে বলল,

-ছিঃ!!আপনি ভিষন অসভ্য অধির।আপনার লজ্জা না থাকলেও আমার আছে।আপনার কথা শুনে আমি লজ্জা পাচ্ছি।আর এক বার বাজে কথা বলবেন তো,,,মাথা ফাটিয়ে দেবো বলে দিলাম।

অধির মুচকি হেসে বলে উঠল,

-ওয়াশরুমে গরম পানি রাখা আছে।শাওয়ার নিয়ে নাও তাড়াতাড়ি।নয়ত আমার মুড হয়ে গেলে শাওয়ার নেওয়ার সময়ও দিবো না।আর হ্যা….তোমার শরিরে জ্বর আছে সো পাকনামি করে ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে খবর আছে।বাই দা ওয়ে সুইটহার্ট,,,,, মনে হচ্ছে আমার আবার মুড হচ্ছে…

রোশনি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ট্রে হাতে বড় বড় পা ফেলে রুম ত্যাগ করল অধির।রোশনি ভুস করে নিশ্বাস ছেড়ে শরিরে চাদর জড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো।ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বিরবির করে বলে উঠল,

-অসভ্য লোক একটা।সব সময় বেসামাল কথা বার্তা।উফফ আল্লাহ!!!এই গরমের দিনে গরম পানিতে কে গোসল করে? এ আমি কার পাল্লায় পড়লাম?জিবনটা পুরো ঝরঝরে করে দিল।

———

সকাল এগারোটা।একশো তিন ডিগ্রী জ্বর নিয়ে রিয়া হাজির হয়েছে জয়ের এপার্টমেন্টে।সাত তলায় এসে মেইন দরজার কাছে দাড়িয়ে পার্স থেকে দরজার চাবি বের করে দরজা খুলে সোজা ভেতরে চলে গেল রিয়া।বাসার চাবিটা সে জয়ের ওয়ালেট থেকেই কি মনে করে যেন সরিয়ে রেখেছিল। এটা মূলত ডুপ্লিকেট চাবি।রিয়া দরজা বন্ধ করে টালমাটাল পায়ে সোজা জয়ের রুমে চলে গেল।সাইড টেবিল থেকে জয়ের ফটো ফ্রেমটা তুলে বুকে চেপে ধরে বিছানায় গা এলালো।চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোটা গরম জল।রিয়া ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে সাইড টেবিল থেকে টেলিফোন তুলে নিয়ে জয়ের নাম্বারে ডায়াল করল।প্রথম বারেই রিসিভ করল জয়।সাথে সাথেই ভেসে এল উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর,

-হ্যালো!!!কে বলছেন? আমার বাসায় কিভাবে গেলেন আপনি? দরজা তো লকড ছিল।কে আপনি?

-উফফ জয়,,,থামো তো।আমি রিয়া।

-রিয়া!!!তুমি কিভাবে? দরজা তো লকড ছিল তুমি ভেতরে কিভাবে ঢুকলে?

-আমার কাছে চাবি ছিল।এই তুমি বাসায় কখন আসবে?

জয়ের এতোক্ষনে খেয়া হল রিয়া তাকে তুমি করে বলছে।কন্ঠটাও কেমন যেন শোনাচ্ছে।জয় চিন্তিত গলায় বলল,

-তুমি ঠিক আছো রিয়া? তোমার গলার স্বর অন্য রকম লাগছে।কিছু হয়েছে? শরির খারাপ?

-তোমাকে তিন দিন দেখি না সেই চিন্তাতেই জ্বর এসেছে।আমি তোমাকে দেখতেই এসেছি।কখন আসবে তুমি?

রিয়ার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা জ্বরে ভুগছে মেয়েটা।জয় ছোট্ট শ্বাস টেনে বলল,

-আমি আধা ঘন্টার মধ্যেই আসছি।আচ্ছা শুনো…?সাইড টেবিলের ড্রয়ারে দেখো আ্যাসিটামিনোফেন (Tylenol)নামক একটা ট্যাবলেট আছে।সেখান থেকে একটা ট্যাবলেট বের করে খেয়ে নাও।খুব দ্রুত জ্বর কমে যাবে।একটার বেশি খাবে না কিন্তু।আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি।ততোক্ষন পর্যন্ত রুমেই থাকবে।

জয় যখন বাসায় পৌছাল ঘড়িতে তখন এগারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট।বসার ঘর অবধি আসতেই সোফায় রিয়ার কলেজ ব্যাগটাকে পড়ে থাকতে দেখে দির্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দিকে পা বাড়ালো।বিছানার ধার ঘেষে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে রিয়া।জয় দ্রুত ছুটে এসে রিয়ার গালে হাত রেখে ডাকতে লাগল।পাশে নজর যেতেই দেখল আ্যাসিটামিনোফেন(Tylenol) এর পাশাপাশি ঘুমের ঔষুধের পাতাও পড়ে আছে।ঘুমের ঔষুধের পাতায় দুটো ট্যাবলেট নেই।তারমানে রিয়া একটা নয়,,,দুটো ঘুমের ঔষুধ খেয়েছ?জয় চিন্তিত চোখে তাকালো। রিয়ার গালে হাত রেখে কয়েক বার ডেকেও সাড়া পাওয়া গেল না।শরিরে এখন আর জ্বর নেই।জ্বর ছেড়ে যাওয়ায় গা ঘেমে জবজবে হয়ে গেছে।জয় রিয়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।বাথটাবে মধ্যে রিয়াকে বুকে চেপে বসে শাওয়ার ছাড়ল।ঠান্ডা পানিতে মুহূর্তেই ভিজে চুপচুপে হয়ে গেল দুজনে।ঠান্ডা পানি চোখে মুখে পড়ায় আর গালে জয়ের ছোট ছোট চড়ে চোখ পিটপিট করে তাকালো রিয়া।জয় ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগল,

-রিয়া,,?রিয়া তাকাও।দেখো আমি জয়।আমি তোমার কাছে আছি দেখো।প্লিজ তাকানোর চেষ্টা করো রিয়া।ঘুমের ঔষুধ কেন খেয়েছো?তাকাও আমার দিকে।ব্যস অনেক হয়েছে।একদম চোখ বন্ধ করবে না বুঝেছো তুমি? তাকাও আমার দিকে।শুনতে পাচ্ছো তুমি? আমার দিকে তাকাও রিয়া।প্লিজ রিয়া চোখ বন্ধ করো না।তাকাও আমার দিকে।

রিয়া চোখ পিট পিট করে তাকালো।দূর্বল গলায় বলল,

-আমি তাকাতে চাই না জয়।আমি চাই না উঠতে।

-প্লিজ রিয়া,,,তাকানোর চেষ্টা করো।ঘুমিও না রিয়া।প্লিজ তাকাও।কথা বলো আমার সাথে।

রিয়া চোখ বন্ধ রেখেই দূর্বল হেসে বলল,

-এই স্বপ্নটা ভিষন সুন্দর জয়।আমি জাগতে চাই না।জানো…..?স্বপ্নে তুমি আমার কাছে থাকো।আমাকে কিস করো।কিন্তু বাস্তবে তুমি আমার সাথে ঠিকমত কথাও বলতে চাও না।আমি স্বপ্নটা দেখতে চাই জয়।স্বপ্নে তোমাকে ছুঁতে চাই।আমি তাকাতে চাই না।

রিয়া আবারো অচেতন হয়ে পড়তেই রিয়ার পাতলা ঠোটে ঠোট বসালো জয়।কয়েক সেকেন্ড রিয়ার ভেতরের তিক্ততাগুলো শুষে নিয়ে সরে আসল।রিয়া ঝাপসা চোখে জয়ের চিন্তিত মুখটা দেখে নিয়ে দূর্বল হেসে অচেতন হয়ে পড়ল।জয় বার বার ডাকতেও রিয়া সাড়া দিল না।জয় শাওয়ার অফ করে রিয়াকে নিয়ে রুমে এল।

ঘন্টা খানিক পরে এক মগ কফি হাতে রুমে এল জয়।রিয়া তখনও ঘুমাচ্ছে।জয় কফির মগ সাইড টেবিলে রেখে নরম গলায় রিয়াকে ডাকতে লাগল,

-রিয়া..!!রিয়া..!!উঠে পড়ো।অনেক ঘুমিয়েছো।এবার উঠো।কফিটা খাও দেখবে ভাল লাগবে।শুনতে পাচ্ছো তুমি? রিয়া…!!

জয় রিয়াকে টেনে তুলতেই জয়ের বুকে গড়িয়ে পড়ল রিয়া।এখনো ঘুম ভাঙে নি তার।জয় ছোট্ট শ্বাস টেনে রিয়াকে আবারো শুইয়ে দিল।কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বর নেই।জয় চাদর টেনে দিয়ে বাইরে চলে এল।

আরো ঘন্টা খানিক পর রিয়ার ঘুম ভাঙলো।চোখ খুলে তাকালেই নিজেকে জয়ের বেডরুমে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো।শোয়া থেকে উঠে বসতেই মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠল।রিয়া কপাল চেপে ধরে মুখ কুচকায়।মনে করার চেষ্টা করে এখানে কিভাবে আসল।সে তো জ্বর নিয়ে কলেজে এসেছিল।তারপর কি হয়েছিল?রিয়া বিছানা থেকে নেমে দাড়াতেই নিজের দিকে খেয়াল হল।গায়ে ঢিলেঢালা টি-শার্ট আর টাউজার। রিয়া কিছু বুঝতে না পেরে রুমের বাইরে পা বাড়ালো।বসার ঘর অবধি আসতেই দেখল সোফায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে জয় বসে আছে।রিয়া আস্তে করে ডেকে উঠল,

-জয়..?

জয় চোখ তুলতেই দেখল রিয়া দাড়িয়ে আছে।জয় উঠে দাড়িয়ে কিছু বলবে তার আগেই রিয়া বলে উঠল,

-আমি এখানে কি করে এলাম? আমি তো কলেজে ছিলাম।আমার পোশাক গুলোও চেন্জ্ঞ!!কিভাবে?

জয় শক্ত গলায় বলে উঠল,

-তোমার কি সত্যিই কিছু মনে নেই নাকি আমাকে পাগল বানানোর নতুন কোনো প্ল্যান এটা?

রিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো।বলল,

-কি বলছেন এসব জয়? নতুন প্ল্যান মানে? আমি জ্বর নিয়ে কলেজে গিয়েছিলাম।তারপর কি হয়েছে আমার কিছু মনে নেই।ঘুম ভাঙার পরে দেখলাম আমি আপনার বেডরুমে।কি হয়েছিল আমার সাথে?

-এগারোটার দিকে তুমি আমাকে ফোন করেছিলে।সেটাও আমার বেডরুমের ল্যান্ড লাইন থেকে।ভেতরে কিভাবে ঢুকলে প্রশ্ন করতেই বললে চাবি নাকি তোমার কাছে ছিল।মানে তুমি আমার ওয়ালেট থেকে আমার বাসার চাবি সরিয়েছো?হাউ ডিসগাস্টিং!!! আর তার থেকেও বড় কথা জ্বর নিয়ে তুমি নিজের বাড়িতে না গিয়ে আমার বাসায় এসেছো!!!কেন…?

রিয়া চোখ নামিয়ে নিলো।জ্বরের ঘোরে সে যে এখানে চলে আসবে ভাবতেই পারে নি।জয়ের বাসার চাবিটা লুকিয়ে নেওয়াটাও ভাল হয় নি।জয় নিশ্চয় তাকে বেহায়া মেয়ে ভাবছে।ভাবারই কথা।ভালো মেয়েরা তো এমন করে না।পরমুহূর্তেই ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠল,,,”যা করেছো বেশ করেছো।ভালবাসতে গেলে বেহায়া হতে হয়।তুমি একদমই ভুল করো নি।তাই আপসোস করো না “””।রিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারো ধমকে উঠল জয়,

-তোমাকে বলেছিলাম আ্যাসিটামিনোফেন(Tylenol) এর পাতা থেকে জাস্ট একটা ট্যাবলেট খাবে।আর তুমি কি করেছো?

রিয়া বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,

-কি করেছি?

জয়ের হঠাৎই ভিষন হাসি পেয়ে গেল।মেয়েটা এতো পিচ্চি কেন?জয় যথা সম্ভব চেহারায় রাগ আনার চেষ্টা করে বলল,

-কি করেছো আবার জানতে চাইছো? জ্বরের ঔষুধের সাথে সাথে আপনি ঘুমের ঔষুধও খেয়েছেন।সেটাও দুইটা একটা সাথে।তুমি জানো ওগুলো কতোটা পাওয়ারফুল?

রিয়া আৎকে উঠে বলল,

-কি!!! আমি ঘুমের ঔষুধ খেয়েছি? ইমপসিবল। আমি তো শুধু জ্বরের ঔষুধ খেয়েছিলাম যতোটুকু মনে পড়ছে।যাইহোক,,, থ্যাংক ইউ আমাকে সামলানোর জন্যে।

-ঠিক আছে।বারান্দায় তোমার কাপড় রাখা আছে,, চেন্জ্ঞ করে নাও।আর যাও এখান থেকে।আর একটা কথা,,,,,তোমার জ্ঞান ছিল না সেজন্য তোমায় শাওয়ার এর নিচে রাখতে হয়েছিল।তবে ভেবো না তোমার কাপড় আমি চেন্জ্ঞ করেছি।পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি এসে চেন্জ্ঞ করে গেছেন।

রিয়া সরু চোখে তাকালো।বিরক্ত গলায় বলল,

-আমি জানতে চেয়েছি কে চেন্জ্ঞ করেছে? আপনি চেন্জ্ঞ করালেও আমার আপত্তি ছিল না।বিয়ে যেহেতু আপনাকেই করবো তখন আপনি চেন্জ্ঞ করালেও তেমন কোনো সমস্যা ছিল না।

জয় এবার সিরিয়াস ভাবে তাকালো।ধমকে উঠে বলল,

-মাথায় কি এসব ছাড়া আর কিছু ঘুরে না? তোমাকে একবারও বলেছি আমি তোমাকে ভালবাসি??বিয়ে করতে চাই??তাহলে এতো বাড়াবাড়ির মানে কি? আমি আর কত বার বুঝাবো,,,,আমি তোমাকে ভালবাসি না।অামি অন্য কাউকে ভালবাসি।

রিয়া ছলছল চোখে তাকালো।বলল,

-আমি জানি।আপনি রোশনি ভাবিকে ভালোবাসেন।

জয় চমকে তাকালো।ভীতু গলায় প্রশ্ন করল,

-তুমি কি করে জানো?

-সেদিন আপনার বালিশের নিচে আমি রোশনি ভাবির ছবি দেখেছিলাম।আপনি সেজন্যই আমাকে ভালবাসছেন না তাই না?

জয় চুপ করে রইল।রিয়াকে দেখলে তার মায়া হয়।কষ্ট লাগে।কিন্তু সে কি করতে পারে এতে? তার যে হাত পা বাঁধা।জয় কিছুক্ষন নিশ্চুপ দাড়িয়ে থেকে বলে উঠল,

-ভালবাসো আমায়?

-ভিষন।

-সমস্যাটা কি জানো?এই ভালবাসাটাই আমি রোশনিকে বাসি।আমি ওকে অসংখ্য বার ভালবেসেছি।অসংখ্য ভাবে ভালবেসেছি।কিন্তু আমার ভালবাসাটা ছিল এক পেক্ষিক।আই হেভ লস্ট মাই হার্ট।দ্বিতীয় বার কাউকে ভালবাসার সাহস আমার নেই।তোমার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই রিয়া।

-আমাকে ভালবাসতে হবে না আপনার।আপনি শুধু আপনার জিবনে আমাকে একটু জায়গা দিন।আমি আবার আপনাকে ভালবাসতে শেখাবো।প্লিজ জয়।আমি আপনাকে ভালবাসি।আই ওয়ান্ট টু ব্রেক ইউর হার্ট এগেইন। তবে সেটা আপনাকে ধোকা বা কষ্ট দিয়ে নয়।

-কেন বুঝতে পারছো না রিয়া? তোমার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই।কোনো ভালবাসা নেই।

-এই পৃথিবীতে সব গুনাহ এর মধ্যে সব চেয়ে বড় গুনাহ কি জানেন?নিজের মনকে মেরে ফেলা।নিজের মনকে জোর করে ভালবাসা থেকে দূরে করে রাখা।

-আমি আবারো বলছি রিয়া….আমার মনে তোমার জন্যে কিছু নেই।

-আমি আপনার কথাটা বিশ্বাস কেন করতে পারি না জয়?

-কারন তুমি বিশ্বাস নয় ভালবাসতে চাও রিয়া।বরবাদ হয়ে যাবে।ধ্বংস হয়ে যাবে।কষ্ট ছাড়া আর কিছু দিতে পারবো না আমি তোমায়।

-আমি রাজি।আমি হাসি মুখে কষ্ট পেতেও রাজি জয়।আমি শুধু আপনার কাছে থাকতে চায়।আপনার সাথে থাকতে চাই।আপনি কখনো কাউকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছেন জয়?অদ্ভুতভাবে সেই বিশ্বাসটা আমি আপনাকে করি।

-ভুল করছো তুমি।জিবনে আমি অনেক কিছু শিখেছি।তারমধ্যে এটাও শিখেছি কাউকে চোখ বন্ধ করে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করা উচিত নয়।তুমি বাড়ি ফিরে যাও রিয়া।

রিয়া হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল জয়ের দিকে।তার হাহাকার কি এই মানুষটা দেখে না? একটু ভালবাসার জন্যে ছটফট করে মরছে তবুও কেন এতো নিষ্ঠুরতা? ভালবাসায় কেন এত কষ্ট?

——–

অধির যখন বাড়ি ফিরল তখন মোটামুটি দুইটা বাজে।কলিংবেলে টিপ দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দরজা খুলে দিল রোশনি।মাত্রই গোসল সেরেছে সে।মাথায় টাওয়াল প্যাচানো।মুখ ও গলায় এখনো বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা।সুতি শাড়ির ফাক গেলে বেরিয়ে আসা মেদহীন ফর্সা পেট।অধির মুচকি হেসে কোনো দিকে না তাকিয়েই রোশনিকে কোলে তুলে নিয়ে হাটতে থাকে।রোশনিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই টুপ করে রোশনির ঠোটে চুমু দিয়ে বসে।আরো কয়েক পা এগিয়ে আসতেই বসার ঘরের সোফা জুড়ে বসে থাকা মানুষগুলোকে দেখে হোচট খায় অধির।যাকে বলে চক্ষুচড়ক গাছ।সাহিল,নাতাশা,আদি,পিয়া তাদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।অধির দ্রুত রোশনিকে কোল থেকে নামায়।ছোট ভাই আর তাদের বউদের সামনে কি একটা বিশ্রী কান্ড ঘটে গেল!!অধির ডান ভ্রু চুলকে রোশনির দিকে তাকাতেই দেখল রোশনি চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।যেন এখনি মাথা ফাটিয়ে দেবে।অধির এবার সাহিলদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই আদি শিস বাজিয়ে হো হো করে হেসে উঠল।অধির চোখ রাঙিয়ে তাকিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি।সাহিল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হালকা কেশে বলে উঠল,

-বাড়ি ছেড়ে এখানে এসে থাকার মানে কি অধির?

অধির শান্ত গলা,

-জানিস না এমনটা তো নয়? তাহলে প্রশ্ন কেন করছিস?

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here