#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৩২
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস
আগের পর্বের পর————-
হ্যাপি বার্থডে কুহেলি।
ঘড়ির কাটায় ঠিক রাত বারোটা। কুহেলি জেগেই ছিল, তখন বেশ কিছুক্ষণ ছাদে বসে নিজের এলোমেলো হয়ে যাওয়া মনটাকে একটু গুছিয়ে নেমে এসেছিল নীচে। ডিনার সেরে নিজের ঘরে এসে কোনও কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়েছিল। আলেখের দিকে তাকাতেও যেন অস্বস্তি হচ্ছিল, এই বুঝি ধরা পড়ে গেল, এই বোধহয় আলেখ ওর মনের গোপন কথাটা পড়ে নিল। ঘুম না আসলেও চোখ দুটো বন্ধ করে শুয়েছিল। আলেখ যে এখনও জেগে রয়েছে সেটা বুঝতে পারেনি, আলেখ আবার বলল,
আমি জানি তুমি ঘুমাওনি।
অদ্ভুত তো! কীকরে বুঝল! ও তো সেই কখন থেকে একভাবে শুয়ে রয়েছে, একটুও নড়েনি।
তুমি ঘুমিয়ে পড়লে এতক্ষণে কম করে দশ বার এপাশ ওপাশ ফিরে শুতে।
আজব ব্যাপার তো! মানুষটা মনের কথাও শুনতে পায় নাকি! তবে নাহ, এবার আর তেমন কোনও উত্তর এলো না। কুহেলি আলেখের দিকে না ফিরেই ছোট্ট করে থ্যাঙ্কস বলল। আলেখের মুখোমুখি হতে কেমন যেন একটা সঙ্কোচ হচ্ছে। আলেখ একবার কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল,
আমি কিন্তু তোমাকে ফার্স্ট বার্থডে উইশ করলাম, আর তুমি এমন একটা শুকনো থ্যাঙ্কস বলে ছেড়ে দিলে!
কুহেলি একটু ভেবে আলেখের দিকে ফিরল, সারা ঘরটা হালকা নীল আলোয় ভরে আছে। নীলচে আলোর মায়াবী পরিবেশে আলেখের চোখ দুটোও যেন মায়াবী মনে হচ্ছে। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে কুহেলির গোটা শরীরটা যেন অবশ হয়ে এল। আলেখ হঠাৎ ওর দিকে একটু সরে এসে আলতো করে কুহেলির কপালে ওর উষ্ণ অধরের পরশ ছুঁইয়ে খুব নীচু স্বরে বলল,
হ্যাপি বার্থডে, তোমার সব ইচ্ছে গুলো যেন পূর্ণ হয়।
কুহেলির সর্বাঙ্গ যেন অবশ হয়ে এল। আলেখের উষ্ণ নিঃশ্বাসের ছোয়ায় যেন ওর মনটা মাতাল হয়ে উঠছে। ভিষন ইচ্ছে করছে ওই প্রশস্ত বুকে হারিয়ে যেতে। কিন্তু…. নাহ, ইচ্ছে গুলোকে এতোটা লাগাম ছাড়া হতে দিতে পারল না কুহেলি। আবেশে শুধু চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। আলেখ একটু হেসে ফিরে গেল নিজের জায়গায়। দুটো মন এত কাছাকাছি এসেও যেন অদৃশ্য একটা বাধা পেরোতে পারল না। পাশাপাশি দুটো মন ভালোবাসার কিছু ভিন্ন অনুভূতির চাদর গায়ে জড়িয়ে কখন যেন তলিয়ে গেল ঘুমের অতলে। আজকের সকালটা কুহেলির একটু অন্যভাবে শুরু হল, অ্যালার্মের বদলে ঘুম ভাঙ্গল রিংটোনের শব্দে। ঘুম জড়ানো চোখেই হাতে নিল ফোনটা, স্ক্রীনে ভাসছে চৈতালী দেবীর নাম। মনটা খুশিতে ভরে গেল কুহেলির, ফোনটা রিসিভ করে উঠে বসল।
হ্যাপি বার্থডে কুহু।
প্রণাম নিও মা।
নিলাম, ঘুম থেকে উঠেছিস না এখনও ঘুমাচ্ছিস?
এইতো উঠলাম।
স্নান সেরে আগে কিন্তু তোর শ্বশুর মশাইকে প্রণাম করবি।
হুম, ঠামমু কোথায়?
এইতো, নে।
শুভ জন্মদিন কুহু।
শৈলজা দেবীর গলাটা শুনে কুহেলির মনের খুশিটা দ্বিগুণ হয়ে গেল। এই মানুষটা যে ওর ঠিক কতটা জুড়ে আছে, সেটা হয়তো ও নিজেও জানে না।
প্রণাম নিও ঠাম্মু।
বুক ভরে আশীর্বাদ করলাম তোকে, খুব সুখী হ।
তোমরা এলে না কেন?
চৈতালীর একটা খুব জরুরি সার্জারি আছে। কীকরে যেতাম বল, তুইই তো বলিস সবার আগে কাজ।
নিশ্চয়ই, সবার আগে কাজ। আর তাছাড়া আমার জন্মদিনের থেকেও সেই পেশেন্টের সার্জারিটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বেশ কিছুক্ষণ কথা হল ওদের, সকালটা বেশ ভালোভাবেই শুরু হল। আলেখ অভ্যাস মত ভোরে উঠে জগিংয়ে গেছে, ফিরতে এখনও কিছুটা সময় আছে। কুহেলির আজ অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই, তাও একেবারে স্নান টা সেরেই নিল। একটা উজ্জ্বল হলুদ রঙের কুর্তি আর সাদা রঙের পালাজো পরে আয়নার সামনে বসে এলোমেলো ভিজে চুলগুলো আচড়ে নিচ্ছিল কুহেলি। আলেখ তখনই জগিং সেরে সদ্য পা দিয়েছে ঘরে, আয়নায় ফুটে ওঠা কুহেলির স্নিগ্ধ প্রতিবিম্ব টার দিকে দৃষ্টি যেতেই চোখ জোড়া যেন সেদিকেই স্থির হয়ে গেল। সবুজ চোখের তারায় ভিড় করল একরাশ মুগ্ধতা। কোথায় যেন পড়েছিল, নারীর শান্ত স্নিগ্ধ রূপের নরম আগুনের শিখায় দগ্ধ হয় পুরুষের হৃদয়। আজ সেই দহনের উত্তাপ যেন আলেখের হৃদয় থেকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে লাগল সারা শরীরে। কুহেলি লক্ষ্য করেনি আলেখের উপস্থিতি, না হলে দেখতে পেত ওর ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে আলেখের চোখ দুটোয় ফুটে উঠেছে সীমাহীন ভালোবাসা। কুহেলি সিঁথিতে সিদুর দিয়ে উঠে দাড়ানোয় যেন আলেখের ঘোর কাটল। একটু হেসে বলল,
গুড মর্নিং, তোমার তো আজ ছুটি। এত তাড়াতাড়ি না উঠলেই পারতে।
কুহেলিও অল্প হেসে বলল,
অভ্যাস, বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারিনা, আর তাছাড়াও মা ফোন করেছিল।
ও।
ওদের কথোপকথন টা আর এগোল না। আলেখ চলে গেল ফ্রেশ হতে আর কুহেলি চলে এলো নীচে। ছোটবেলা থেকেই শৈলজা দেবী আজকের দিনে ওর নামে পুজো দিতেন। কুহেলিও থাকত ওনার সঙ্গে, আজও শৈলজা দেবী পুজো করছেন তবে সঙ্গে কুহেলি নেই। কুহেলি নীচে এসেই আগে বাড়ির ছোট্ট মন্দিরটায় গেল, মাতারানির মূর্তির সামনে বসে যেন অনুভব করল আজও সে তার ঠাম্মুর পাশেই রয়েছে। মাতারানির আশীর্বাদ নিয়ে কুহেলি সোজা গেল নভতেজ বাবুর ঘরে। উনি কুহেলিকে দেখেই বললেন,
আরে কুহেলি বেটা, হ্যাপি বার্থডে।
কুহেলি ওনার পা ছুয়ে প্রণাম করতে গেলেই উনি বাধা দিয়ে বললেন,
তোমাকে না বারন করেছিলাম, ঘরের লক্ষ্মীরা পায়ে হাত দেয়না।
কুহেলি হেসে বলল,
জানি ড্যাড, কিন্তু আজকের দিনে তোমার আশীর্বাদ না পেলে আমার দিনটা যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
নভতেজ বাবু আলতো হাতে কুহেলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
আমার আশীর্বাদ তো সবসময় তোমার সঙ্গেই আছে। তার জন্য প্রণাম করার কোনও প্রয়োজন নেই।
কুহেলি আর কিছু বলল না, এরপরে আর কিছু বলা চলে না। এরপরে শুরু হল চরম ব্যস্ততা, অবশ্যই কুহেলি বাদে। ওর আজকে কোনও কাজ নেই, আলেখ ঝটপট ব্রেকফাস্ট সেরে অফিসে চলে গেল আর নভতেজ বাবু শুরু করলেন তদারকি। পার্টি সন্ধ্যেবেলায় কিন্তু দুপুরের আহারের আয়োজনেও কোনও কমতি নেই। নভতেজ বাবু নিজে বৃন্দাকে মেনু বলে দিয়েছেন, আবার সব ওনার কথা মত হচ্ছে কিনা সেটাও দেখছেন। কুহেলি একবার একটু কিচেনে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু নভতেজ বাবু একেবারে ধমক দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিলেন। আজ নাকি ও কোনও কাজেই হাত দিতে পারবে না। অগত্যা নিজের ঘরে এসে মোবাইলটা নিয়ে বেশ কিছুদিন পরে একটু সোশ্যাল মিডিয়ায় পদার্পণ করল। অন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নোটিফিকেশনের তোড়ে স্ক্রিনটা ঢেকে গেল, শুভেচ্ছা বার্তার অভাব নেই। কিছুক্ষণ তাদের প্রতিউত্তর দিতে পেরিয়ে গেল, তবে তারপরেই আর করার মত কিছু পেল না। এই চুপচাপ বসে থাকাটা বড্ড বিরক্তিকর। তবে বেশিক্ষণ চুপচাপ বসতে হল না, একটু পরেই রাত্রি এসে হাজির।
কুহেলি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
এসেই রাত্রি এমন তাড়াহুড়ো শুরু করল যে কুহেলি প্রথমটায় কিছু বুঝতেই পারল না।
এখন রেডি হয়ে কি করব?
স্যালোঁতে যেতে হবে, অ্যাপয়েন্টমেন্টের টাইম হয়ে এসেছে। তাড়াতাড়ি করো না হলে দেরী হয়ে যাবে কিন্তু।
রাত্রি এমন তাড়া লাগাল যে কুহেলি আর কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগই পেল না। কুহেলি তৈরি হলেই রাত্রি ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। কুহেলি একবার একটু বলার চেষ্টা করেছিল এসবের কি দরকার, কিন্তু তাতে রাত্রি কোনো পাত্তাই দিল না। মেয়েটা সত্যিই খুব মিষ্টি, কুহেলির সঙ্গে এইতো মাত্র কয়েক দিনের আলাপ কিন্তু দেখে মনে হবে যেন কত দিনের চেনা। কুহেলির বেশ ভালোলাগে রাত্রিকে, কিন্তু চাইলেও ওর মত সহজ হয়ে মিশতে পারে না। যখনই আলেখের সঙ্গে ওকে দেখে তখনই মনটা খারাপ যায়, কেন যেন সেই মুহূর্তে আর সহ্যই করতে পারে না। উহু, কেন যেন কথাটা আসছে কেন! কারনটা তো এখন আর অজানা নয়। আলেখের কথা মনে হতেই মনে একটা অন্যরকম ভালোলাগার সৃষ্টি হল। কিন্তু ভালোলাগাটা খারাপলাগায় বদলে যেতে দেরী হল না। ভালোবাসার অনুভূতি গুলো যতদিন ছিল না ততদিন বেশ ভালোই ছিল, এখন যেন সবকিছু আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে। ওদের ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে গেল, বাড়িতে ফিরেই দেখল বিহান আর রাজীব এসেছে। বাকিরা কেউ আসতে পারেননি, কিন্তু ওরা ঠিকই এসেছে। কুহেলিকে দেখে বিহান প্রায় ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
হ্যাপি বার্থডে ভাবি।
রাজীব বিহানের মত এত চঞ্চল নয়, একটু শান্ত প্রকৃতির। সেও এগিয়ে এসে ওকে উইশ করল। কুহেলির ওদের দুজনকেই খুব ভালোলাগে, দেওরের থেকেও বেশি ওদের ভাই বলেই মনে হয়। লাঞ্চের সময় হয়ে যাওয়ায় ওরা সোজা ডাইনিং টেবিলের দিকেই অগ্রসর হল। কুহেলি আর রাত্রি একটু ফ্রেশ হয়ে আসার পরেই সবাই মিলে একযোগে শুরু হল মহাভোজ। হ্যা, মহাভোজই বটে। কুহেলির জন্য আজ বিশেষ ব্যবস্থা, প্লেটের চারপাশে বাটির সংখ্যা গুনে শেষ করা যাচ্ছে না। কি নেই সেখানে! বাঙালি আর পাঞ্জাবি ধারার মনে হয় প্রায় সব পদ গুলোই আজ স্থান পেয়েছে এখানে। মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট থেকে শুরু করে আমের চাটনি আর ওদিকে বাটার চিকেন থেকে শুরু করে শেষপাতে ফিরনি, কিছুই মনে হয় বাদ নেই। ও হ্যা, পায়েস টাও বাদ যায়নি কিন্তু। আপত্তি করে যে লাভ নেই সেটা কুহেলি খুব ভালো করেই জানে সুতরাং বিনা বাক্যব্যয়ে খাওয়া শুরু করল। সবাই মিলে এক সঙ্গে বসে খাওয়ার মধ্যে যে কি আনন্দ সেটা যারা অনুভব না করেছে তারা বুঝবে না। কুহেলির খুব ভালোলাগছিল, শুধু আলেখের অনুপস্থিতি টা আজকে যেন একটু বেশিই অনুভব করছিল। খাওয়ার পর সবাই একটু বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে যার যার ঘরের দিকে এগোল। কুহেলি রাত্রিকে এখানেই থাকতে বলল কিন্তু সে বলল,
নাহ, আমি এখন একটু হাত পা ছড়িয়ে আরাম করব। যা গুরুভোজ হয়েছে, নড়ার ক্ষমতা নেই। একটু শান্তি মত শুতে না পারলে সন্ধ্যের পার্টিতে আর এনজয় করতে পারব না। অ্যান্ড ট্রাস্ট মি, আমার শোয়ার ভঙ্গিমা যদি একবার কেউ দেখে ফেলে না তাহলে আমার মান সন্মান বলতে আর কিছু থাকবে না। তাই সেই রিস্ক আমি নিতে পারছি না, সরি।
কুহেলি হেসে ফেলল, মেয়েটা সত্যিই দারুন কথা বলে। রাত্রি চলে যাওয়ার পর কুহেলিও নিজের ঘরে এসে দেহ টা এলিয়ে দিল খাটে। খাওয়াটা সত্যিই বড্ড বেশি হয়ে গেছে। তবে ঘুম এল না, আসলে দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস না থাকলে যা হয়। শুয়ে শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করছিল, বহুদিন বাদে নিশীথ আগরওয়ালের একটা মেসেজ দেখতে পেল। ছোট্ট একটা শুভেচ্ছাবার্তা, ‘হ্যাপি বার্থডে’। কুহেলি একটা ছোট্ট থ্যাঙ্কস টাইপ করে সেন্ড করে দিল। এরমধ্যেই এল দিঠির ফোন, ওর সাথে কথা বলতে বলতে কোথা থেকে যে সময় পেরিয়ে গেল টেরই পেল না। অবশেষে যখন কথা শেষ হল তখন ইতিমধ্যে সাড়ে চারটে। কুহেলি উঠে একটু ফ্রেশ হয়ে নিল, এরমধ্যেই রাত্রিও হাজির। তার দাবী সে আজ নিজে হাতে কুহেলিকে তৈরি করবে। কুহেলি একটু আপত্তি করে বলল,
ইটস ওকে রাত্রি, তোমাকে শুধু শুধু এত কষ্ট করতে হবে না আমি নিজেই রেডি হয়ে নেব।
কিন্তু রাত্রি কোনও কথাই শুনল না, সে আজ নিজেই সাজাবে কুহেলিকে। কুহেলি তাও আরও দু একবার একটু আপত্তি করার চেষ্টা করল কিন্তু রাত্রি সেসব নিমেষে নাকচ করে দিল। শেষে আত্মসমর্পণ ছাড়া কুহেলির কাছে আর কোনও উপায় থাকল না। ওদের এই মিষ্টি বাকবিতণ্ডার মধ্যেই কখন যে আলেখ ঘরে এসেছে দুজনের কেউ খেয়াল করেনি। আলেখ একটু হেসে বলল,
কি ব্যাপার এত কথা কাটাকাটি কি নিয়ে?
কুহেলি কিছু বলার আগে রাত্রিই উত্তর দিল।
এটা তোর কথা কাটাকাটি মনে হল?
তুই আছিস মানে কথা কাটাকাটি হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
শাট আপ। আর তুই এখানে এসেছিস কেন! আমাদের এখন অনেক কাজ, বেরো এখান থেকে।
এটা কিরকম কথা হল! আমার ঘরে আমি আসতে পারব না?
না, এখন তো মোটেই পারবি না। যা তো এখান থেকে।
আরে, আমিও তো ফ্রেশ হয়ে রেডি হব নাকি!
গেস্ট রুমে যা।
আমার নিজের রুম থাকতে গেস্টরুমে কেন যাব?
উফ্, এত কথা বলছিস কেন? যেতে বলেছি যা।
বলে রাত্রি আলেখকে ঠেলে ঘর থেকে বের করতে উদ্যত হল। কুহেলি এতক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে ছিল, কিছু বলার সুযোগ টাই বা পেল কোথায়! মনের কোনায় আবার যেন মন খারাপের মেঘটা জমতে শুরু করল। তবে এবার আর রাগ হল না, রাগ করার মত অধিকার ওর এখনও হয়তো তৈরি হয়নি। ভবিষ্যতেও সে অধিকার কোনদিনও হবে কিনা জানা নেই। রাত্রি তখনও আলেখকে ঘর থেকে বের করতে ব্যস্ত, এবার আলেখ বলল,
আরে দাড়া দাড়া, যাচ্ছি, কিন্তু গেস্ট রুমে ফ্রেশ হয়ে পরব টা কি! আমার ড্রেস টা তো নিতে দে।
ওকে, ঝটপট যা লাগবে নিয়ে তাড়াতাড়ি বিদেয় হ তো। আর মোটামুটি কয়েক ঘণ্টার জন্য ভুলে যা এটা তোর রুম।
কি দাদাগিরি করছিস বলতো!
বেশ করছি।
আলেখ হেসে ওর ব্যাগটা জায়গা মতো রেখে ওয়ার্ডরোব থেকে প্রয়োজনীয় পোশাক গুলো নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একবার কুহেলির দিকে তাকিয়ে একটু আলতো হাসল। কুহেলির ঠোঁটেও একটা মৃদু হাসি ফুটে উঠেই যেন মিলিয়ে গেল। সেটা আলেখ লক্ষ্য করলেও তেমন গুরুত্ব দিল না। আলেখ ভাবল এখনও হয়তো রাত্রির কারণেই কুহেলির মন খারাপ কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখলে হয়তো বুঝতে পারত আজ কুহেলির মনখারাপের কারনটা একটু আলাদা। আলেখ চলে যাওয়ার পর রাত্রি এবার কুহেলিকে নিয়ে পড়ল। গতকাল শপিংয়ে রাত্রি নিজে পছন্দ করে কুহেলির জন্য একটা সফট পিঙ্ক কালারের হোয়াইট স্টোনের হালকা কাজ করা লং গাউন কিনেছে। কুহেলি কালকে রাগের চোটে যেন অন্ধ হয়েছিল, ঠিক করে দেখেইনি রাত্রি কি কিনেছে। এখন ড্রেসটা পরে এসে বলল,
রাত্রি এটা আমি পরতে পারব না।
রাত্রি ভিষন অবাক হল, কালকে তো সে কুহেলিকে জিজ্ঞেস করেই এটা নিয়েছিল তাহলে এখন কি হল! বেচারি তো আর জানে না, কুহেলি কালকে ভালো করে ড্রেসটার দিকে তাকায় পর্যন্ত নি।
কেন? ফিটিংয়ে প্রবলেম হচ্ছে? কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে না।
না, ফিটিং ঠিক আছে।
তাহলে কি প্রবলেম?
এটা ব্যাক লেস, আর আমি কোনদিনও এইধরনের ড্রেস পরিনি। আই অ্যাম নট কম্ফরটেবল।
হোয়াট! কিন্তু তুমি তো নিজেই এটা পছন্দ করলে! মানে আমি যখন তোমাকে এটা দেখলাম তুমি তো বললে এটা তোমার পছন্দ। ইভেন সাইজ টাও তো তুমি নিজেই বললে!
কুহেলি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল, কথাটা তো ঠিকই। রাত্রি ওকে দেখিয়ে তবেই এটা নিয়েছে। কিন্তু এখন কীকরে বলবে যে ও তো কাল এটার রং টা পর্যন্ত খেয়াল করেনি। একটু ইতস্তত করে বলল,
আসলে… আসলে আমি তখন খেয়াল করিনি এটা ব্যাক লেস।
বুঝলাম, কিন্তু ব্যাক লেস হলেও সমস্যা টা কোথায়? তুমি কোনদিনও ট্রাই করনি তাই হয়তো তোমার একটু অড লাগছে বাট ট্রাস্ট মি কুহেলি ইউ আর লুকিং ড্যাম গুড ইন দিস ড্রেস।
কুহেলি একবার আয়নায় দেখল নিজেকে, সত্যি মন্দ লাগছে না। আর খারাপ কেন লাগবে! সুন্দরী কুহেলিকে সব পোষাকেই অসামান্যা লাগে। কিন্তু তাও কুহেলির কেমন যেন একটু অস্বস্তি হতে লাগল। আসলে কোনদিনও পরেনি, এই প্রথম তাই একটু অস্বস্তি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে রাত্রি সেসবে আমল না দিয়ে ওর লম্বা চুলগুলোকে দারুন দক্ষতার সঙ্গে একটা ফ্রেঞ্চ নটের আকার দিয়ে দিল। সামনের কিছুটা অংশ হালকা কার্ল করে ছেড়ে দিল, আর নটের পাশে একটা সিলভার স্টোনের ডিজাইনার ফ্লাওয়ার সেট করে দিল। গলায় একটা হালকা ডায়মন্ডের নেকলেস আর কানে ম্যাচিং ছোট্ট দুটো ডায়মন্ডের টপ, ডান হাতে একটা ব্রেসলেট। মানানসই মেকআপের সঙ্গে হালকা গোলাপী লিপস্টিকের ছোয়ায় যেন কুহেলির সৌন্দর্য্য লক্ষ্য গুন বৃদ্ধি পেল। সাজানো শেষ করে রাত্রি যেন আপন মনেই বলে উঠল,
ওয়াও, স্টানিং!
কুহেলি আয়নায় ফুটে ওঠা ওর প্রতিবিম্ব টার দিকে তাকিয়ে যেন অভিভূত হয়ে গেল। সত্যিই আজ বেশ অন্যরকম লাগছে, ওর শান্ত স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্যে যেন হঠাৎ করেই একটা অন্য মাত্রা যুক্ত হয়েছে। রাত্রি কুহেলির কানের কাছে মুখটা এনে বলল,
হায়, আজ আমার আলু বেচারা হার্টফেল না করে!
কুহেলির গাল দুটোয় যেন ঈষৎ লালের আভা লাগল, ওকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে রাত্রি বলল,
অনেক হয়েছে, আর লজ্জা পেয়ে কাজ নেই। এবার সর তো দেখি, আমি একটু রেডি হই। তোমার পাশে দাড়ানোর মত একটু কিছু করতে হবে তো, না হলে আজ আর আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাবে না।
কুহেলি হেসে বলল,
এমন মানুষ এই দুনিয়ায় আছে নাকি! যে রাত্রি অহুজার দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারবে!
তাও ঠিক, এই রাত্রি অহুজা যে কত প্রেমিক হৃদয়ের স্বপ্নের নারী তার হিসেব করতে বসলে গোটা বছরটা শেষ হয়ে যাবে।
দুজনেই একসঙ্গে হেসে উঠল। খুব অদ্ভুত ভাবে ধীরে ধীরে কুহেলি রাত্রির সঙ্গে অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে। দেখতে দেখতে সন্ধ্যে হয়ে এল, নিমন্ত্রিত অভ্যাগতদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। আলেখ ইতিমধ্যে নীচে চলে এসেছে। আজ ওর পরনে ব্ল্যাক শার্ট আর সঙ্গে হোয়াইট স্যুট। সুদর্শন আলেখ শর্মার জন্য এর থেকে বেশি অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। বিহান আর রাজীব এদিক সেদিক ঘুরে সব প্রস্তুতি দেখছে আর আলেখ নভতেজ বাবুর সঙ্গে অতিথি আপ্যায়ন করছে। একসময় নিশীথ আগরওয়াল এল, নভতেজ বাবু হেসে অভ্যর্থনা জানালেও আলেখ যেন খুশি হতে পারল না। আজকাল নিশীথকে দেখলেই কেন যেন অদ্ভুত একটা বিরক্তি ভর করে। কিন্তু সেটা বাইরে প্রকাশ না করে হাসিমুখেই অভ্যর্থনা জানাল। ঠিক সাতটার সময় রাত্রি কুহেলিকে নিয়ে নীচে নামল, সিড়ি দিয়ে নেমে আসা কুহেলির দিকে তাকিয়ে আলেখের হৃদযন্ত্র যেন স্পন্দিত হতেই ভুলে গেল। আজ যেন একটু বেশিই সুন্দর লাগছে কুহেলিকে। ধীরে ধীরে কুহেলি নেমে এল নীচে, আলেখ তখনও একইভাবে চেয়ে আছে কুহেলির দিকে। আবারও বিহানের কনুইয়ের গুতো খেয়ে হুশ ফিরল। বিহান একটু মজা করে বলল,
উফ্, সত্যি সেই প্রথম দিন থেকে দেখছি যখন তখন আউট হয়ে যাস তুই। তোর নিজেরই তো ওয়াইফ, আর কত দেখবি?
আলেখ একটু মুচকি হেসে বলল,
নিজের ওয়াইফ বলেই তো দেখছি, অন্যের ওয়াইফের দিকে তাকানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।
সাবাশ।
আলেখ এগিয়ে গিয়ে কুহেলির পাশে দাঁড়াল, এক্ষুনি কেক কাটার পর্ব শুরু হবে। কেকটা টেবিলে সাজানোর ফাঁকে আলেখ সবার নজর এড়িয়ে কুহেলির কানের কাছে মুখ এনে নীচু স্বরে ছোট্ট করে বলল,
বিউটিফুল।
কুহেলি যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেল, সেটা লক্ষ্য করে আলেখের ঠোঁটের হাসিটা আরও একটু প্রশস্ত হল। কেক সাজানো শেষ, কুহেলির প্রিয় ব্ল্যাক ফরেস্ট, উপরে সুন্দর করে ওর নাম লেখা। কুহেলির ভিষন লজ্জা লাগছিল, এভাবে এত লোকের মধ্যমণি হয়ে কেক কাটা। এসব ছেলেবেলায় ভাললাগত, এখন এইসবের কোনও মানে হয়! কিন্তু কি আর করা যাবে, ক্যান্ডেল ব্লো করে কেকটা কাটতেই চারিদিক থেকে সেই চির পরিচিত সুর ভেসে এল, ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’। কেকটা কাটা হলে একটা ছোট পিস কেটে নভতেজ বাবুকে খাওয়াতে গেলে উনি বললেন,
উহু, আগে আলেখ তারপর বাকি সবাই। কুহেলি একটু লজ্জা পেল, কিন্তু না খাইয়ে উপায় নেই। রাত্রি বিহান রাজীব সবাই একযোগে চেচামেচি জুড়ে দিয়েছে। আলেখ হাসি মুখে দাড়িয়ে ছিল, কুহেলি কেকের টুকরো টা ওর মুখের কাছে ধরতেই সামান্য একটু খেয়ে বাকিটা কুহেলিকে খাইয়ে দিল। আশেপাশে হাততালির বন্যা বয়ে গেল, কুহেলি একে একে সবাইকে কেক খাইয়ে দিল। কেকের পর্বটা মিটলে এবার শুরু হল হালকা মিউজিক, এবারও বিহানের জোরাজুরি তেই ওদের দুজনকে ড্যান্স ফ্লোরে নামতেই হল। তবে এবার আর শুধু ওরা নয় আরও অনেকেই রয়েছে। আলেখ আলতো করে কুহেলির একটা হাত ধরে নিয়ে এল ফ্লোরের ঠিক মাঝখানটায়। হালকা সুরে তখন বাজছে
‘দিল কেহতা হ্যায় শুন চল উনসে মিল’
আলেখ একহাতে কুহেলির কোমরটা জড়িয়ে টেনে আনল ওর কাছে, আরেকটা হাত দিয়ে আলতো করে ধরল কুহেলির একটা হাত। কুহেলি যেন কোনও একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে, আলেখের শরীর থেকে ভেসে আসা সেই কড়া অথচ মৃদু ঘ্রাণ টা যেন ধীরে ধীরে অচ্ছন্ন করে ফেলছে ওকে। ওর সবুজ চোখের তারায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। ওর একটা হাত কখন যেন ওর অজান্তেই উঠে এসেছে আলেখের কাধে। গানের সুরে ভেসে যেন অন্য জগতে পাড়ি দিয়েছিল ওরা। ওদের আশেপাশে যে আরও অনেকে রয়েছে তাদের উপস্থিতির কথা যেন দুজনের কারোরই মনে ছিল না। একটা সময় হঠাৎ হাততালির শব্দে দুজনে যেন সুদূর কোনও অচিনপুর থেকে ফিরে এল। সবার দৃষ্টি ওদেরই দিকে, কখন যেন বাকিরা নিজেদের ড্যান্স ছেড়ে মন দিয়েছিল ওদের দিকে। কুহেলি একটু লজ্জা পেয়ে একটা পাশে সরে গেল, আলেখও একটু হেসে অন্যদিকে চলে গেল। আবার শুরু হল মিউজিক আর তার সঙ্গে আবারও সবাই মেতে উঠল নাচে। রাত্রি আর বিহান বেশ ভালো নাচছে, কুহেলি একটা দিকে বসে ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ নিশীথ ওর পাশে এসে বসে বলল,
হ্যাপি বার্থডে।
কুহেলি প্রথমে খেয়াল করেনি, তাই একটু চমকে উঠল। পাশে তাকিয়ে নিশীথ কে দেখে বলল,
ওহ, আপনি। থ্যাঙ্ক ইউ।
নিশীথ একটু হেসে বলল,
ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস।
কুহেলি অল্প হাসল, নিশীথ হঠাৎ কুহেলির সামনে দাড়িয়ে ওর ডান হাত টা এগিয়ে দিয়ে বলল,
মে আই?
কুহেলি আশা করেনি নিশীথ ওকে ড্যান্সের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে। একটু যেন ইতস্তত করতে লাগল, নিশীথ সেটা বুঝে বলল,
কাম অন, ইটস জাস্ট এ ড্যান্স।
কুহেলি একটু হেসে ওর বা হাতটা নিশীথের হাতের উপর রাখল। নিশীথ আলতো করে ওর হাতটা ধরে এগিয়ে গেল ফ্লোরের দিকে। খুব সফ্ট একটা মিউজিক চলছে, নিশীথ আলতো করে ওর একটা হাত কুহেলির কোমরে রেখে অন্য হাতে ওর একটা হাত ধরল। কুহেলি ওর বা হাত টা আলতো করে নিশীথের কাধের উপরে রাখল। একটা স্বাভাবিক দূরত্ব বজায় রেখেই হালকা তালে চলতে লাগল নাচ। আলেখ একটা দিকে কয়েকজন বিজনেস ম্যানের সঙ্গে কথা বলছিল। আসলে যতই বার্থডে পার্টি হোক আর এনগেজমেন্ট পার্টি হোক বিজনেস ম্যানরা সুযোগ পেলেই ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা করতে ছাড়ে না। কথা বলতে বলতে হঠাৎ ওর নজর গেল ড্যান্স ফ্লোরের দিকে। কুহেলির সঙ্গে নিশীথ কে দেখেই যেন ওর অসম্ভব রাগ হল। কুহেলির কোমরে থাকা নিশীথের হাত টা দেখে আলেখের সর্বাঙ্গে যেন আগুন জ্বলতে লাগল। আলেখ সহজে রাগে না, নিজের সব অনুভূতি গুলোকে সংযত রাখার একটা অসীম ক্ষমতা আছে ওর। কিন্তু আজ যেন সে কিছুতেই সংযত করতে পারছে না নিজেকে, ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ছুটে গিয়ে একটানে কুহেলিকে সরিয়ে দেয় নিশীথের কাছ থেকে। হাতে থাকা জুসের গ্লাসটা সশব্দে একটা টেবিলে রেখে প্রভাতকে ডেকে কিছু একটা বলে সোজা উপরে চলে গেল। কুহেলি আর নিশীথ কিছুক্ষণ পরে ড্যান্স ফ্লোর থেকে সরে এল। নিশীথকে একজন পরিচিত ব্যক্তি এসে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ প্রভাত এসে কুহেলিকে বলল,
ম্যাম ছোট স্যার আপনাকে একটু ওপরে ডাকছেন।
কুহেলি একটু অবাক হয়ে বলল,
এখন! কেন?
সেটা জানিনা, উনি বললেন আপনাকে এক্ষুনি যেন উপরে যেতে বলি।
ঠিক আছে, তুমি যাও।
কুহেলি একটু অবাক হল, এভাবে চলন্ত পার্টির মাঝখান থেকে আলাদা ডাকার মানে কি! এমন কি হল? একটু উদ্বিগ্ন হয়েই কুহেলি উপরে উঠতে লাগল। ওদের ঘরের দরজাটা খোলাই আছে, ওই তো আলেখ ওর দিকে পিছন ফিরে দাড়িয়ে আছে। কুহেলি ঘরে ঢুকে বেশ উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,
কি হল? এভাবে ডাকলে কেন? কোনও সমস্যা হয়েছে?
আলেখ কোনও উত্তর না দিয়ে ঝড়ের বেগে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে একটা হ্যাচকা টানে কুহেলিকে ওই বন্ধ দরজার সঙ্গে ঠেসে ধরে ওর দুটো হাত মুঠো করে চেপে ধরল দরজায়। আলেখের এই অতর্কিত আক্রমণে কুহেলি যেন হতভম্ব হয়ে গেল। আলেখের শান্ত চোখ দুটোয় যেন একটা অসম্ভব রাগের আভাস ফুটে উঠেছে। আলেখের এই রূপ কুহেলি আগে কখনও দেখেনি, এই রূপ সে কল্পনাও করতে পারেনা। বিস্ময়ে যেন হতবাক হয়ে গেল, এমনকি আলেখের বজ্রমুষ্ঠিতে আবদ্ধ ওর হাত দুটো ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করার কথাও মনে এলো না। আলেখ কুহেলির ভয় আর বিস্ময় মিশ্রিত চোখের দিকে তাকিয়ে বেশ গম্ভীর আর উত্তেজিত গলায় বলল,
তুমি এখন আর মিস কুহেলি বাসু নও, তুমি এখন মিসেস কুহেলি আলেখ শর্মা। হোয়াই কান্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট?
হঠাৎ এই কথাগুলো বলার অর্থ কুহেলি বুঝতে পারল না, এমনিতেই আলেখের এই রূপ দেখে ওর সব কথা গুলো যেন হারিয়ে গেছে। আলেখ যেন ওকে চুপ করে থাকতে দেখে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ল, ওর হাত দুটো ছেড়ে কাধ দুটো শক্ত করে ধরে বলল,
তুমি কেন বোঝো না বলো তো? কেন বোঝো না? ওই নিশীথ আগরওয়ালের সঙ্গে তোমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমি সহ্য করতে পারি না।
কুহেলি এটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। আলেখ তো সবই জানে তাহলে আজ হঠাৎ এভাবে বলছে কেন! আলেখ বলে চলল,
তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার নিশীথকে কে দিয়েছে? হাউ ডেয়ার হি? তুমি কেন ওর সাথে ড্যান্স করছিলে? হোয়াই?
কুহেলি স্তব্ধ হয়ে গেছে, উত্তর দেওয়া তো অনেক দূরের কথা ওর মনে হল ওর সব কিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ও নিশীথের সঙ্গে একটু ড্যান্স করেছে বলে আলেখ এইভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে! কিন্তু কেন? কুহেলিকে এই প্রশ্নের উত্তর আর কষ্ট করে খুঁজতে হল না, আলেখ নিজেই উত্তর দিল। আজ যেন ওর সব অনুভূতিরা বহুদিনের ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরির মত জেগে উঠেছে। হঠাৎ দুটো হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে থাকা কুহেলির কাধ দুটো আরও একটু শক্ত করে ধরে ঝাকিয়ে বলল,
হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট আই লাভ ইউ।
ক্রমশ______________
© স্বত্ব সংরক্ষিত
আজকের পর্ব নিয়ে আর বিশেষ কিছুই বলব না। কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না, অপেক্ষায় থাকব কিন্তু। আজ তবে এইটুকুই। দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।
আর একটা কথা, সময়ের অভাবে সবসময় আপনাদের সুন্দর সুন্দর কমেন্ট গুলোর রিপ্লাই করে উঠতে পারি না। কিন্তু আমি সব কমেন্ট পড়ি আর যথাসাধ্য উত্তর দেওয়ারও চেষ্টা করি। আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যিই আপ্লুত। এইভাবেই পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।