সংগোপনে’ পর্ব-৪৮

0
1285

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৪৮
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

নিশীথ রাত্রির ঘরে বসে আছে প্রায় পাঁচ মিনিট হতে চলল, কেউ এখনও একটাও কথা বলেনি। নিশীথ জানে সে কি বলতে চায়, আর আজ যে তাকে বলতেই হবে সেটাও সে জানে কিন্তু তাও একটা দ্বিধা মনের মধ্যে থেকেই যাচ্ছে। আজ প্রথম বার নিশীথ আগরওয়াল কিভাবে কথা শুরু করবে সেটা বুঝতে পারছে না। যার সামনে দাড়িয়ে অন্যদের কথা হারিয়ে যায় আজ তার কথারা ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না! কি অদ্ভুত তাই না! রাত্রি সোফার একটা কোণে বসে রয়েছে, নিশীথের দিকে তাকাতেও কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। বারবার শুধু মনে হচ্ছে নিশীথের সামনে ঠিক কি বলেছিল কালকে, খুব ইচ্ছে করছে সবটা জানতে। আর যে সব থেকে ভালো ভাবে বলতে পারবে কালকে ঠিক কি হয়েছিল সেও তার সামনেই বসে আছে কিন্তু তাও যেন মুখ থেকে একটাও শব্দ বেরোচ্ছে না। অবশেষে এই বিব্রতকর নিস্তব্ধতার অবসান ঘটল নিশীথের কণ্ঠস্বরে। নিশীথ কিভাবে কথা শুরু করবে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ চোখ চলে যায় সেন্টার টেবিলের ওপর রাখা গ্লাসটার দিকে। মুরু শরবত টা দিয়ে যাওয়ার পর সেটা সেইভাবেই পড়ে রয়েছে, রাত্রির ওটার কথা মনেও ছিল না। নিশীথ রাত্রির দিকে তাকিয়ে বলল,

আপনি এটা খাননি?

রাত্রি নিজের ভাবনার জালে যেন ধীরে ধীরে জড়িয়ে যাচ্ছিল, নিশীথের কণ্ঠস্বর যেন হঠাৎ করেই সব জালগুলো ছিড়ে দিল। চমকে নিশীথের দিকে তাকিয়ে বলল,

হ্যা?

নিশীথ গ্লাসের দিকে ইশারা করে বলল,

এটা খাননি?

ওহ, হ্যা, আসলে ভুলে গিয়েছিলাম।

রাত্রি কথাটা বলে আবার চোখ দুটো নামিয়ে নিল, নিশীথের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছে না। রাত্রির অস্বস্তিটা নিশীথের নজর এড়াল না, নিশীথ নিজেও একটু অস্বস্তি বোধ করছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের মনে সবটা একবার গুছিয়ে নিল নিশীথ, বলতে তাকে হবেই। নিজেকে শান্ত করে নিশীথ বলতে শুরু করল,

আপনি হয়তো ভাবছেন এভাবে হঠাৎ আমার আপনার সাথে কি কথা থাকতে পারে, আর সেটা এমন কি কথা যেটা নীচে ড্রয়িং রুমে বসে বলা যেত না। আসলে কয়েকটা কথা আপনাকে জানানো খুব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে কালকের পর।

এই কালকের পর কথা টুকুই রাত্রির হৃদস্পন্দন দ্রুত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। রাত্রি তড়িৎস্পৃষ্টের মত চমকে উঠে নিশীথের দিকে তাকাল, মনের মধ্যে জমতে থাকা ঈষৎ কালো আশঙ্কার মেঘ টা যেন হঠাৎ করেই ওর সমগ্র মনের আকাশে ছেয়ে গেল। নিশীথ খুব শান্ত ভাবে বলে চলল,

আজ যে কথা গুলো আমি আপনাকে বলতে যাচ্ছি সেগুলো আমি ছাড়া আর মাত্র দুজন জানে। সেটাও আমি তাদের জানতে দিয়েছিলাম বলেই তারা জানে, আজ আপনি জানতে চলেছেন। আই হোপ আপনি বুঝতে পারছেন কথাটা আমার কাছে কতটা গোপনীয়।

রাত্রির হৃদপিন্ড নামক যন্ত্র টা যেন আর নিজের স্থানে স্থির হয়ে থাকতে চাইছে না। স্পন্দনের দ্রুততা এতটাই তীব্র যে তাদের শব্দ রাত্রির কাছে দামামার মত মনে হচ্ছে। ওর মনের আকাশে জমে থাকা আশঙ্কার কালো মেঘ ভেদ করে নতুন প্রশ্নেরা উকি দিতে লাগল। কি এমন কথা বলতে চাইছে নিশীথ, যার গোপনীয়তা এত বেশি! আর এত গোপনীয় কথা সে রাত্রিকে বলতে চাইছেই বা কেন? আর নিশীথের জীবনের এত গোপনীয় একটা কথার সঙ্গে কালকে রাতের ঘটনার কি সম্পর্ক থাকতে পারে? কি এমন হয়েছিল কাল রাতে? রাত্রির মনে যেন প্রশ্নেরা ঝড় তুলল, সেই ঝড়ে সব চিন্তা গুলো এলো মেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। রাত্রির চোখে ভিড় করে আসা প্রশ্ন গুলো বুঝে নিতে নিশীথের কোনও অসুবিধা হল না। নিশীথ কিছুক্ষণ থেমে বলল,

জানি আপনার মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে, আর সেটা হওয়াই স্বাভাবিক, কালকের কোনও কথাই আপনার মনে থাকার কথা নয়।

রাত্রির মনের ভয় টা যেন আরও জেকে বসতে লাগল। কি এমন বলেছে সে কালকে? তাহলে কি সত্যিই সে কালকে নিজের মনের কথাটা নিশীথ কে বলে দিয়েছে? রাত্রি বলতে চাইছে অনেক কিছু, কিন্তু পারছে না, একটা শব্দও যেন কন্ঠনালী পেরিয়ে আসতে পারছে না। নিশীথ আবার কিছুক্ষণের নীরবতার পর বলতে শুরু করল,

ঘুরিয়ে কথা বলা আমি পছন্দ করি না, যা বলি সোজা সুজি বলি। আজকেও যা বলতে চাইছি সেটা সোজাসুজিই বলব। আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন, আরও এক্সাট করে বলতে গেলে ইউ লাভ মি।

কথা টা শুনে রাত্রির চোখ দুটো নিজের থেকেই বন্ধ হয়ে এলো। ওর মনের আশঙ্কা টা যে সত্যি সত্যিই এভাবে জীবন্ত হয়ে উঠবে আশা করেনি। অস্বস্তি লজ্জা ভয় সংকোচ সব কিছুর একটা মিশ্র অনুভুতি যেন হঠাৎ ওর সমগ্র দেহ মন জুড়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করল। নিশীথ রাত্রির মনের অবস্থা ভালো করেই বুঝতে পারছে কিন্তু এখন এই সাময়িক অস্বস্তিকে প্রাধান্য দিলে ভবিষ্যতে আরও বেশি অস্বস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নিশীথ আবার বলতে শুরু করল,

মিস রাত্রি, আমি শুরু থেকেই আপনার ফিলিংস গুলো বুঝতে পেরেছিলাম। হয়তো আপনি বোঝার অনেক আগেই, কিন্তু প্রথমে একটু ভুল করেছিলাম। ভেবেছিলাম অন্যদের মতই আপনারও হয়তো একটা সাময়িক ইম্ফ্যাকচুয়েশন সৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, আপনি ভুলে যাবেন আমাকে। আর ঠিক এই কারণেই আমি সেদিন আপনাকে অ্যাভয়েড করেছিলাম। কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম, আপনার মোহ যাতে গভীর অনুভূতির রূপ নেওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় সেই চেষ্টা করেছিলাম। তবে বুঝতে পারিনি আপনার ফিলিংস গুলো কোনদিনও মোহের পর্যায়ে ছিলই না, আপনি তো…..

নিশীথ বলতে বলতে থেমে গেল, অমোঘ সত্যিটা বলতে গিয়েও কোনও কারণে থেমে গেল। রাত্রি এতক্ষণ শুধুই শুনছিল, এছাড়া আর কীই বা করার আছে তার। এত অকপট ভাবে সব কিছু বলতে পারার জন্যও যে একটা বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় সেটা রাত্রি খুব ভালো করেই জানে। কারণ সে নিজে বারবার বলতে চেয়েও কিছুতেই পারেনি আর নিশীথ কত সহজে সবটা বলছে। না চাইতেও যেন মুগ্ধ হয়ে গেল রাত্রি, কিন্তু নিশীথ সেই প্রথম থেকেই সবটা জানত? বুঝতে পেরেছিল সবটাই? কিন্তু ওর অনুভূতি গুলো তো একান্তই ওর ছিল, নিশীথের প্রতি সেগুলোকে জোর করে চাপিয়ে দিতে তো চায়নি সে। তবে নিশীথ কেন সেই অনুভূতি গুলোকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে চেয়েছিল? প্রশ্ন গুলোর উত্তর রাত্রিকে আর কষ্ট করে খুঁজতে হল না, কারণ নিশীথের পরবর্তী কথাগুলোতেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেল।

আই নো আপনি হয়তো ভাবছেন আমি কেন এরকম করলাম? আমার এরকম করার পিছনে কি কারণ থাকতে পারে? ট্রাস্ট মি মিস রাত্রি আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি, কাউকে মন থেকে ভালোবাসার পরেও যদি সেই ভালোবাসা অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাহলে ঠিক কতটা কষ্ট হয় সেটা আমি জানি। সেই কষ্ট টা আমি আপনাকে ফিল করতে দিতে চাইনি বলেই এত কিছু করেছিলাম। কিন্তু গতকাল রাতে আপনার মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট দেখে আমি বুঝতে পেরেছি আমি কতটা ভুল ভেবেছিলাম। আমি কোনদিনও ভাবিনি আমার কোনও কাজের জাস্টিফিকেশন আমি কাউকে দেব কিন্তু কালকের পর অন্তত আপনাকে সবটা খুলে বলাটা আমার কাছে খুব প্রয়োজনীয় মনে হয়েছিল। না হলে আপনার কষ্ট আরও বাড়বে, আর সেটা আমি চাই না।

রাত্রি যেন নিশ্বাস বন্ধ করে শুনছে সবটা, নিশীথ যে কারণের জন্যই হোক ওর কষ্টের কথা ভেবেই এতকিছু করেছে ভেবেই মনের কোনও একটা কোনায় একটা আনন্দের ছোয়া লাগল। কিন্তু সেই আনন্দের ঢেউ নিজের অস্তিত্বের রেখা রাত্রির হৃদয়ের বালুতটে একে দেওয়ার আগেই মিলিয়ে গেল। কারণ নিশীথ তার এতদিনের গোপন কথাটা রাত্রিকে বলেছে, আর যেটা রাত্রি শুনেছে সেটা শোনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কোনদিনও স্বপ্নেও হয়তো রাত্রি এটা কল্পনাও করতে পারত না। নিশীথ কেমন যেন ভাবলেশহীন মুখে বলে চলেছে,

আমার পক্ষে আপনার ফিলিংস গুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া সম্ভব ছিল না, কারণ তাতে আপনার ইচ্ছেরা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠত। কিন্তু আপনার সেই ইচ্ছে পূরণ করার সাধ্য আমার নেই, আপনি যে ফিলিংস গুলো আজ বুঝতে পারছেন, ফিল করছেন সেটা আমি অনেক আগেই ফিল করেছিলাম….. কুহেলির জন্য।

রাত্রির বিস্ফারিত নেত্রের দিকে তাকিয়ে নিশীথ বুঝতে পারল, রাত্রির জন্য এটা ঠিক কত বড় অপ্রত্যাশিত একটা সংবাদ। নিশীথের ঠোঁটের কোণায় একটা অদ্ভুত হাসির রেখা ফুটে উঠই যেন মিলিয়ে গেল। কিছুটা যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ যেন ওই এক চিলতে হাসির রেখায় আবদ্ধ হয়ে রয়ে গেল। নিশীথ রাত্রির চোখে চোখ রেখে শান্ত স্বরে বলল,

হ্যা, আমি কুহেলি কে ভালোবাসি, আই লাভ হার। এটা ভাববেন না, এটা কোনও সিক্রেট লাভ, নো, কুহেলি জানে আমি ওকে ভালবাসি, ইভেন মিস্টার শর্মা আলসো নো দ্যাট। যে দুজনের কথা শুরুতে আপনাকে বলেছিলাম এরাই সেই দুজন। আমি ছাড়া এটা শুধু মাত্র ওরা দুজনই জানে, আর এখন আপনি জানলেন। কুহেলি অনেক আগে থেকেই জানেন বিকজ মিস্টার শর্মা ওনাকে বিয়ের প্রপোজাল দেওয়ার আগেই আমি কুহেলিকে প্রপোজ করেছিলাম। বাট, যে আমার কোনদিনও ছিলই না তাকে কীকরেই বা পেতাম! ইউ নো, কুহেলি আমাকে প্রথম দিকে একদম পছন্দ করতেন না, সেটা করার অবশ্যই ওনার কাছে একটা কারণ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা গড়ে ওঠে অ্যান্ড আই অ্যাম হ্যাপি উইথ দ্যাট। কুহেলির খুশিতেই আমিও খুশি, ওনাকে নিজের করে না পাওয়ার একটা কষ্ট নিশ্চয়ই আছে কিন্ত তার থেকেও বেশি আনন্দ হয় ওনাকে খুশি দেখে। এখন বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই আমি কেন এমনটা করেছি, আমার মনে কুহেলির জন্য যে জায়গাটা আছে সেটা আমি অন্য কাউকে দিতে পারব না। তাই অযথা কাউকে নিজের কাছে আসতে দিয়ে তাকে আঘাত দিতে চাই না। আপনাকেও এই একই কারণে…….

রাত্রি এতক্ষণ যেন একটা স্থানুবত মূর্তির মত শুনছিল সবটা, কিছুটা বুঝতে পারছিল আর কিছুটা যেন কোনো দুর্বোধ্য প্রহেলিকার মত মনে হচ্ছিল। নিশীথ আগরওয়াল কুহেলিকে ভালোবাসে! যেন পৃথিবীর সবথেকে আশ্চর্য্য ঘটনা এটা। কিন্তু ধীরে ধীরে সবটাই পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারল রাত্রি, আর শুধু শুধু মস্তিষ্কের জটিল সমীকরণের গোলকধাঁধায় পা না দিয়ে নিজের মনের ডাকে সাড়া দিয়ে নিশীথ কে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

কিন্তু তারপরেও তো আপনি কুহেলির বন্ধু।

নিশীথ হঠাৎ এমন একটা কথায় যেন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রাত্রির দিকে, বিস্মিত কণ্ঠে বলল,

মানে?

নিশীথ কে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে রাত্রি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবে বলতে শুরু করল। একটু আগের সেই অস্বস্তি, সংকোচ, বেদনা কোনোকিছুরই আর চিহ্ন মাত্র নেই।

মানে, কুহেলি আপনার ভালোবাসাকে স্বীকার না করলেও নিজের ফ্রেন্ডশিপ থেকে আপনাকে বঞ্চিত করেনি। তাহলে আমি কেন সেই সুযোগ টুকুও পাব না? আমি কি আপনার বন্ধুত্বের যোগ্যও নই?

এখানে প্রশ্ন টা যোগ্যতার নয়।

তাহলে কিসের?

নিজের লাভড ওয়ান কে সব সময় চোখের সামনে দেখলে নিজের ফিলিংস কে নিয়ন্ত্রণে রাখা সব সময় সম্ভব হয় না।

আপনি পারেন নি?

আমি পেরেছি বলেই জানি এটা কতটা কষ্টকর। কুহেলিকে আমি কোনদিনও ভুলতে পারব না, আমার মনে ওর জন্য যে ভালোবাসা রয়েছে সেটাও কোনদিনও পরিবর্তিত হবে না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাটা এতটাও সহজ নয়, সবার পক্ষে সম্ভব নয়।

আপনি কীকরে বুঝলেন আমার পক্ষে এটা পসিবল না ইম্পসিবল? একটা সুযোগও তো দেননি, তাহলে কীকরে বলছেন?

মিস রাত্রি আপনি বুঝতে পারছেন না….

আমি ঠিকই বুঝতে পারছি মিস্টার আগরওয়াল। বেশি কিছু তো চাইছি না, আপনারই মত শুধু বন্ধুত্বের হাত টুকু ধরতে চাইছি। ঠিক আপনারই মত ভালোবাসার অনুভুতি গুলোকে একান্তই নিজের করে রেখে শুধুই আপনার বন্ধুত্ত্ব টা চাইছি। একবার কি সুযোগ দেওয়া যায় না? আপনি যেমন কুহেলির বন্ধু হয়েই খুশি তেমনই আমিও আপনার বন্ধু হয়েই খুশি থাকব।

মিস রাত্রি…

ভয় পাচ্ছেন?

নিশীথ অবাক হয়ে বলল,

ভয়? কিসের ভয়?

যদি আমাকে বন্ধু হিসেবে মেনে নেন হয়তো একদিন….

রাত্রির কথাটা শেষ করতে না দিয়েই নিশীথ দৃঢ় সুরে বলে উঠল,

ইম্পসিবল, সেটা কোনদিনও সম্ভব নয়।

তাহলে, এত আপত্তি করছেন কেন?

আমি তো আপনার কথা ভেবেই বলছি। সব সময় বলাটা যত সহজ মনে হয় করাটা অতটা সহজ হয় না, এতে আপনারই বেশি কষ্ট হবে, আর আমি সেটা চাই না।

আমার কষ্ট টা না হয় আমি বুঝে নেব, আপনি আমাকে কষ্ট দিতে চান না শুনে ভালোলাগল। বাট, এখন যে আপনি আমার ফ্রেন্ডশিপ টা রিজেক্ট করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন সেটা কি ঠিক হচ্ছে?

রাত্রি যেন হঠাৎ করেই খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। নিশীথের একটু অবাক লাগলেও মনে মনে খুশিই হল, ওর কারণে রাত্রি কষ্ট পাক সেটা সে চায় না। রাত্রি আবার বলল,

একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন কিন্তু, এই রাত্রি অহুজা ফ্রেন্ড হিসেবে কিন্তু খুব একটা খারাপ নয়।

রাত্রির পাতলা ঠোঁট দুটো জুড়ে ছড়িয়ে আছে একটা মিষ্টি হাসি, নিশীথের চোখ দুটো যেন আপনা থেকেই আটকে গেল ওই ঠোঁট জোড়ায়। হঠাৎ গতকাল রাতের সেই মুহূর্ত টা ভেসে উঠল চোখের সামনে, জীবনের প্রথম চুম্বন। হঠাৎই একটা মৃদু অস্বস্তিতে ভরে উঠল মনটা, নিশীথ কে ওরকম স্থির হয়ে যেতে দেখে রাত্রি বলল,

কি হল? কি ভাবছেন?

হ্যা?

নিশীথ যেন কোনও ঘোরের মধ্যে থেকে জেগে উঠল, রাত্রি আবার বলল,

এত কি ভাবছেন?

না, কিছু না।

রাত্রি একটু হেসে ওর ডান হাত টা নিশীথের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

তাহলে, আজ থেকে কি নিজেকে আপনার ফ্রেন্ড মনে করতে পারি?

নিশীথ নিজেকে স্বাভাবিক করে একটু হেসে বলল,

ইউ আর রিয়েলি ভেরি স্টাবর্ন।

হুম, বলতে পারেন।

ভেবে দেখুন, নিশীথ আগরওয়ালের বন্ধুত্ব সবার ভালোলাগে না।

আমার ভালোলাগা মন্দলাগা টা না হয় আমিই বুঝে নেব আপনি নিজের কথা বলুন।

নিশীথ ওর সেই চির পরিচিত হাসিটা ঠোঁটের কোণায় এনে রাত্রির বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরে বলল,

পরে যদি রিগ্রেট করতে হয় তখন কিন্তু আমাকে ব্লেম করতে পারবেন না।

ডোন্ট ওয়ারি, আমি এমন কোনও কাজ করিনা যাতে আমাকে রিগ্রেট করতে হয়।

নিশীথ একটু হেসে রাত্রির হাত টা ছেড়ে দিয়ে বলল,

ফাইন, আমি তাহলে এখন আসি।

নিশীথ উঠে বেরোনোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দেখে রাত্রিও উঠে দাড়াল। একটু ইতস্তত করে বলেই ফেলল,

বলছিলাম….

নিশীথ যেতে গিয়ে থেমে গেল, রাত্রির দিকে তাকিয়ে দেখল, কোনও কারণে রাত্রি কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু ইতস্তত করছে। নিশীথ খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন, এর হেজিটেট করতে হবে না।

রাত্রি একটু থেমে বলল,

মানে, আমি….আমি কি কালকে খুব মিস বিহেভ করেছি?

নিশীথের কালকের কথা শোনা মাত্রই আবার সেই মুহূর্তটা মনে পড়ে গেল। অস্বস্তি টা আবার যেন ঘিরে ধরছে ওকে, রাত্রির যে কিছু মনে নেই এটাই স্বাভাবিক আর মনে না থাকাতেই যেন নিশীথ স্বস্তি পেয়েছে, না হলে পরিস্থিতি আরও বিব্রতকর হতে পারত। নিশীথ নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে মনের অস্বস্তি টাকে বাইরে বুঝতে না দিয়ে বলল,

নাথিং মাচ, ড্রাংক অবস্থায় বাকিরা যা করে থাকে আপনিও তাই করেছিলন। মনে জমে থাকা সব কথা গুলো বলে নিজেকে হাল্কা করে নিয়েছিলেন।

রাত্রি এখন আর কোনো অস্বস্তি বোধ করল না, নিশীথ তো সেই শুরু থেকেই সবটা বুঝতে পেরেছিল তাহলে আর শুধু শুধু নিজেকে বিব্রত করার কি অর্থ। মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, স্বীকারোক্তি ছাড়া আর যে তেমন কিছু করেনি এটাই অনেক। কিন্তু রাত্রির ভাবনা যে কতটা ভুল সেটা তো…. যাক গে, রাত্রি যে এখন কিছুটা হলেও খুশি হতে পেরেছে এটাই যথেষ্ট। রাত্রি নিশীথ কে বাড়ির মূল দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল, নিশীথ বাই বলে চলে যেতে গিয়েও থেমে আবার পিছন ফিরে বলল,

কালকেও সিচুয়েশনের জন্য বলা হয়নি আর আজকেও ভুলেই যাচ্ছিলাম।

রাত্রি একটা সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে নিশীথের দিকে তাকিয়ে বলল,

কি?

নিশীথ একটু হেসে বলল,

হ্যাপি নিউ ইয়ার।

রাত্রিও সামান্য হেসে বলল,

হ্যাপি নিউ ইয়ার।

ক্রমশ___________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

কেমন লাগল আজকের পর্ব জানাবেন কিন্তু, বন্ধুত্বের শুভ সূচনা তো হল কিন্তু তারপর? কি মনে হয় আপনাদের জানাবেন কিন্তু। অপেক্ষা করব। আজ তবে আসি দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here