সংগোপনে’ পর্ব-৪৯

0
1219

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৪৯
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

নিশীথ যাওয়ার হয়তো পাঁচ মিনিটও হয়নি, আবার রাত্রির দরজায় কারোর আগমনের সাড়া পাওয়া গেল। রাত্রি সবে নিজের ঘরে গিয়ে একটু ভাবছিল ঠিক কি হল, আর কীকরে হল। নিশীথের জীবনে এমন একটা দিক থাকতে পারে ভাবেনি কখনও। অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু তো নয়, ভালোবাসা তো আর এত কিছু বুঝে শুনে হয় না। তবে নিশীথ যে কুহেলিকে ভালোবাসে এটা শুনে সত্যিই খুব অবাক হয়েছিল রাত্রি, নিশীথ কে দেখে কখনো বুঝতেই পারেনি। খুব অদ্ভুত ভাবে এটা শুনে রাত্রি অবাক হলেও খারাপ কিন্তু লাগেনি। নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য কারো নাম শুনলে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক কিন্তু রাত্রির মনে এতটুকুও খারাপ লাগা জন্ম নেয়নি। আর খুব অদ্ভুত ভাবেই হঠাৎ করেই ওর সমস্ত দুঃখ কষ্ট সব যেন নিমেষে উধাও হয়ে গিয়েছিল। নিশীথ কে কোনদিনও নিজের করে পাবে না জেনেও যেন অতটা কষ্ট হয়নি। একটা মানুষ এভাবে নিঃস্বার্থ ভাবে দিনের পর দিন যে ভালোবেসে যেতে পারে, সেটা রাত্রির জানা ছিল না। নিশীথ কে না দেখলে হয়তো বিশ্বাসও হত না, কিন্তু নিশীথ কে দেখার পর সবটা জানার পর মনের মধ্যে থাকা ভালোবাসার সমুদ্র টা যেন আরও বেশি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন একটা মানুষ কে নিজের বন্ধু হিসেবে পাওয়ার লোভ টা সামলাতে পারেনি। নাই বা পেল নিজের করে, তাতে কোনও আক্ষেপ নেই রাত্রির। নিশীথ যেমন কুহেলির সুখেই নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছে রাত্রিও তেমনই নিশীথের সুখে নিজের সুখ খুঁজতে চাইছে। পূর্ণতার মধ্যে দিয়ে ভালোবাসার সংজ্ঞা দেওয়া যতটা সহজ অপূর্ণতার দুঃখ ভুলে শুধু নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে সুখী দেখেই আনন্দ খুঁজে নেওয়া ততটাই কঠিন। ভালোবাসা যে শুধু পাওয়ার নয় ত্যাগেরও আরেক নাম সেটা নিশীথ কে দেখলে বোঝা যায়। এমন একটা মানুষকে কি শ্রদ্ধা না করে পারা যায়! ভালোবাসা শব্দ টা যেন নিশীথের মত মানুষদের জন্যই অমর হয়ে রয়েছে সেই অনাদিকাল থেকে। রাত্রির মনেও নিশীথের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দুটোই যেন শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই বন্ধুত্বের হাতটা বাড়িয়ে দিতে একবারও দ্বিধা করেনি। নিশীথের বন্ধুত্ত্ব টুকুই যেন পরম প্রাপ্তি ওর কাছে। না, জোর করে ভালোবাসার দাবী নিয়ে সে কোনদিনও দাঁড়াবে না নিশীথের সামনে। ঠিক নিশীথের মতই একান্ত আপন করে মনের গহীন কোনও কোনে সযত্নে রেখে দেবে ভালোবাসার অনুভুতি গুলোকে। নিজের মনে এইসব ভাবনা গুলোকেই যেন একত্রিত করছিল রাত্রি কিন্তু তেমন সময় আর পেল কোথায়! পাঁচ মিনিটের মাথায় আবার কে এলো দেখার জন্য নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে যাকে দেখল তাতে একটুও অবাক হল না রাত্রি। রাত্রি একটু হেসে আবার নিজের ঘরে চলে গেল, সে জানে যে এসেছে তাকে অ্যাপায়ন করে নিজের ঘরে নিয়ে আসতে হবে না। ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে মুরুর সাথে দু একটা কথা বলেই দোতলায় রাত্রির ঘরের দিকে পা বাড়াল কুহেলি। রাত্রি নিজের ঘরের লাগোয়া ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারটায় বসে ছিল, কুহেলি ঘরে ঢুকে রাত্রিকে না দেখে ব্যালকনিতে এলো। শীতের সকালের মিঠে রোদ টা বেশ ভালই লাগে, কুহেলিও একটা চেয়ারে বসলে রাত্রি একটু হেসে বলল,

জানতাম তুমি আসবে।

কুহেলি রাত্রিকে স্বাভাবিক দেখে একটু অবাক হলেও মনে মনে খুশি হল। সামান্য হেসে বলল,

তাহলে আমার আসার কারণটাও নিশ্চয়ই জানো।

হুম।

তাহলে, বলে ফেলো নাকি প্রশ্নটা আমার মুখ থেকে শোনার পরেই বলবে?

রাত্রি আবার একটু হেসে বলল,

আলাদা করে বলার কি প্রয়োজন আছে? আই নো, ইউ নো এভরিথিং।

উহু, নট এভরিথিং, কিছুটা আন্দাজ করতে পারি।

অ্যান্ড তোমার আন্দাজ ভুল নয়।

কুহেলি এবার আর কিছু বলল না, কারণ এখন আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। রাত্রি নিজেই সবটা বলবে, এখন শুধু নির্বাক শ্রোতার ভূমিকা পালন করার পালা। রাত্রি কিছুক্ষণ থেমে কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল,

অ্যাস ইউ নো, আই লাভ হিম। কবে কখন কিভাবে সেগুলো আমাকে জিজ্ঞেস করলেও আমি উত্তর দিতে পারব না। বিকজ, আমি নিজেই জানি না ঠিক কবে থেকে নিশীথের প্রতি আমার মনে ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে। আমি শুধু এইটুকুই জানি….. আই লাভ হিম।

রাত্রি এটুকু বলে থামল, কুহেলি জানে রাত্রি কথা গুলো অন্তর থেকেই বলছে। কিন্তু তাও কুহেলি বলল,

তুমি এতটা শিওর কীকরে হচ্ছ? হতেই পারে এটা শুধুই একটা অ্যাট্র্যাকশন।

রাত্রি উত্তর না দিয়ে পাল্টা একটা প্রশ্ন করল।

তুমি কীকরে শিওর হয়েছিলে? আলেখের জন্য তোমার মনে যে অনুভূতি গুলো আছে সেগুলো যে ভালোবাসাই অন্য কিছু নয় তুমি কীকরে শিওর হয়েছিলে?

কুহেলি একটু হেসে বলল,

আলাদা করে ভেবে দেখতে গেলে সঠিক কবে বা কীকরে বুঝতে পেরেছিলাম সেটা বলা খুব মুশকিল কিন্তু শিওর হয়েছিলাম তোমার জন্য।

আমার জন্য?

কুহেলি সংক্ষেপে ব্যাপারটা রাত্রিকে বলতেই রাত্রি হেসে উঠল। কিছুক্ষণ হাসার পর বলল,

তুমি শেষে আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করছিলে? আমার একটু ডাউট হত জান তো, কিন্তু তেমন পাত্তা দিইনি। আসলে আলুকে সেই নজরে দেখার কথা ভাবতেই পারি না, তাই তুমি যে এমন কিছু ভাবতে পারো সেটাও ভাবিনি।

কুহেলি একটু হেসে বলল,

হুম, তবে আমরা কিন্তু আমার কথা বলছিলাম না।

ইয়েস, আমার কথা হচ্ছিল বাট আনসার টা তোমার উত্তরেই ছিল। তুমিও যেমন ঠিক এক্সাট বলতে পারবে না আমিও ঠিক বলতে পারব না। তবে এটা জানি…. ইটস লাভ, আর আমি একদম শিওর হলাম আজকে।

আজকে?

হুম আজকে, এই কিছুক্ষণ আগেই।

কুহেলি অবাক চোখে চেয়ে আছে দেখে রাত্রি একটু হেসে সবটাই বলল। সেই একদম শুরু থেকে শুরু করে আজ একটু আগের নিশীথের বলা কথা গুলো পর্যন্ত সব। কুহেলি এক ভাবে শুনছিল সবটা, রাত্রি শেষে বলল,

যখন নিশীথ তোমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিল তখন আমি সম্পূর্ণ রূপে শিওর হই। এটা শুধুই একটা মোহ হলে নিশীথের মনে অন্য কেউ আছে জেনেই হয়তো শেষ হয়ে যেত। কিন্তু না, আমার মনে নিশীথের প্রতি সন্মান আর ভালোবাসা আরও বেড়েছে।

কুহেলি মুখটা একটু ম্লান করে বলল,

পরোক্ষ ভাবে হলেও তোমার কষ্টের কারণ আমি। মিস্টার আগরওয়ালের মনে যে এখনও….. না, এটা ঠিক নয়, উনি এইভাবে নিজেকে কষ্ট দিতে পারেন না। আর সেই সঙ্গে তুমিও, নিজেকে কেন এভাবে কষ্ট দেবে তোমরা? নো, দিস ইজ নট রাইট, আমি মিস্টার আগরওয়ালের সাথে কথা বলব।

নো কুহেলি, তুমি এরকম কিছুই করবে না।

কিন্তু রাত্রি …

এখানে কোনও কিন্তু নেই কুহেলি। তুমি কাউকে ফোর্স করতে পারো না, ভালোবাসা যেমন জোর করে হয় না, তেমনই তাকে ভুলে যাও বললেই ভুলে যাওয়া যায় না। আর নিশীথ যদি তোমাকে ভালোবেসে তোমার সুখে নিজের সুখ খুঁজে পায় তাতে দোষের তো কিছু নেই।

রাত্রি তুমি বুঝতে পারছ না, একটা সময় আমিও এটাই ভাবতাম কিন্তু…..

কুহেলি, এখানে সত্যিই কিন্তুর কোনও জায়গা নেই। কাউকে ভালোবাসার অধিকার টা তুমি কেড়ে নিতে পারো না।

রাত্রি, এই ভালোবাসা অর্থহীন, আমি আলেখকে ভালোবাসি, আমরা নিজেদের লাইফে খুশি। কিন্তু হোয়াট অ্যাবাউট মিস্টার আগরওয়াল? আর তুমিও? কি হবে তোমাদের?

কি হবে? সব ভালোবাসা কি পূর্ণ হয়?

হয় না, জানি। কিন্তু তাই বলে কি জীবন টাও থেমে থাকবে? মিস্টার আগরওয়াল সারা টা জীবন এইভাবে কাটাবেন! আর সেই সঙ্গে তুমিও?

যদি বলি হ্যা?

দিস ইজ নট রাইট রাত্রি।

ভালোবাসায় এত ঠিক ভুল দেখতে নেই।

বাট…

প্লিজ কুহেলি, এটা নিয়ে আর কথা বলো না। আর নিজেকে ব্লেম করো না, ফিলিংস কোনোদিনই কারো হাতে থাকে না।

কুহেলি আর কিছু বলল না, কিন্তু মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। নিশীথ ওকে ভালোবাসে সেটা জানত, নিশীথ তো খোলাখুলিই সবটা বলেছিল। কিন্তু সেই ভালোবাসা কেই এখনও আঁকড়ে ধরে রেখেছে, এটা যেন আশা করেনি। এইভাবে নিশীথ নিজের বাকি জীবন টা কাটাতে চায় শুনে কুহেলির কোথাও যেন খুব খারাপ লাগছে। আর রাত্রি… সেও তো সেই পরোক্ষ ভাবে ওর জন্যই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। নিশীথ আর রাত্রির এই সিদ্ধান্ত টা যেন কুহেলি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু কিছু করতেও পারছে না, রাত্রি চায় না সে নিশীথের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলুক। আর রাত্রি না বললেও কুহেলি নিশীথ কে চেনে, কারও কথায় নিজের মত পরিবর্তন করার মত ব্যক্তি সে নয়। কুহেলি কে হঠাৎ এত চুপচাপ হয়ে যেতে দেখে রাত্রি বুঝল কুহেলি মনে মনে হয়তো নিজেকেই দোষ দিচ্ছে। রাত্রি কুহেলির একটা হাতের উপর একটা হাত রেখে বলল,

এত ভেব না কুহেলি, তোমার কোনও দোষ নেই এখানে। অ্যাকচুয়ালি এখানে কারোরই কোনও দোষ নেই, সব অনুভূতি গুলো তো পূর্ন হওয়ার জন্য নয়, তাই না?

কিন্তু রাত্রি….

কুহেলি…… প্লিজ, তুমি এত মন খারাপ করলে আমার মনটাও খারাপ হয়ে যাবে। আর আমি একদম মন খারাপ করতে চাই না, রিয়েলি। যা হচ্ছে, যেমন হচ্ছে হতে দাও, আমি নিশীথ কে ফ্রেন্ড হিসেবে পেয়ে হ্যাপি আর নিশীথ তোমাকে ফ্রেন্ড হিসেবে পেয়ে হ্যাপি। এরপর বাকিটা না হয় ডেসটিনির উপরেই ছাড়া থাক।

রাত্রি কথাটা ভুল বলেনি, জোর করে কোনও অনুভূতিকে মন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায় না। আর নিয়তির থেকে বড় যে আর কিছু নয়, সেটা কুহেলির থেকে ভালো আর কে বুঝবে? ওর আর আলেখের সম্পর্ক টাও তো সেই নিয়তির হাতেই গড়া। কুহেলি আর বেশি ভাবল না, কিছু জিনিষ হয়তো ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দেওয়াটাই ঠিক। কুহেলি একটু হেসে বলল,

বেশ, তোমার কথাই থাক। আমি কিছু বলব না, তোমাকেও না মিস্টার আগরওয়ালকেও না। কিন্তু রাত্রি, যদি কখনও আমি মনে করি আমার হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন তখন আমি তোমার কথা শুনব না।

ফাইন, পরের কথা পরে ভাবা যাবে।

হুম, যাই হোক না কেন আমি সব সময় তোমাদের হ্যাপি দেখতে চাই।

জানি তো, অ্যান্ড ট্রাস্ট মি কুহেলি, আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি হ্যাপি। নিশীথ কে নিজের করে না পাওয়ার কোনও রিগ্রেট নেই আমার, ওকে ফ্রেন্ড হিসেবে পেয়েই আমি খুশি।

কুহেলি একটু দুষ্টু হাসি এনে বলল,

হুম, সে তো দেখতেই পাচ্ছি, মিস্টার আগরওয়াল থেকে একেবারে নিশীথ।

রাত্রি এতক্ষণ নিজেও খেয়াল করেনি, কখন যে শুধু নিশীথ বলেই সম্বোধন করতে শুরু করেছে একদম লক্ষ্যই করেনি। একটু যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল রাত্রি, তবে সেটা একদম বুঝতে না দিয়ে বলল,

সো হোয়াট? ফ্রেন্ড কে নাম ধরে বলাটাই তো স্বাভাবিক তাই না? তুমি যে কিকরে এখনও মিস্টার আগরওয়াল বলে অ্যাড্রেস কর কে জানে!

কুহেলিও কিছু কম যায় না, রাত্রি নিজের অপ্রস্তুত ভাবটা লুকানোর সর্বতো রূপে চেষ্টা করলেও কুহেলির সেটা নজর এড়ায়নি। আর তাই এটাও বুঝতে কোনও অসুবিধা হয়নি যে রাত্রি নিজের অজান্তেই নিশীথের নামটা নিয়ে ফেলেছে। হয়তো এখনো প্রত্যক্ষ ভাবে নিশীথ কে মিস্টার আগরওয়াল বলেই সম্বোধন করে। চোখ দুটো একটু সরু করে ঠোঁটের কোনায় সেই দুষ্টু হাসিটা বজায় রেখেই বলল,

হুম, ঠিকই বলেছ, বন্ধুদের তো নাম নিয়েই বলা উচিৎ। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি বলত, শুরু থেকেই এভাবেই অ্যাড্রেস করে আসছি তো আর সিচুয়েশন টাও তো তুমি জানোই। তাই ওটা আর চেঞ্জ করতে পারিনি, আমি মিস্টার আগরওয়ালেই বেশি কম্ফরটেবল। কিন্তু তুমি কি আদৌ ওনাকে নিশীথ বলে অ্যাড্রেস করেছ! নাকি……

রাত্রি একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল,

মা..মানে?

মানে এই যে, তুমি এখনও ওনাকে আপনি করেই বলো অ্যান্ড মিস্টার আগরওয়াল বলেই অ্যাড্রেস কর। কি ঠিক বললাম তো?

রাত্রি আর কিছু বলল না, শুধু একটু হাসল। কুহেলি রাত্রির গাল টা একটু টিপে দিয়ে বলল,

তুমি ভীষন কিউট।

দুজনে আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর কুহেলি ফিরে এলো ওঙ্কার ভিলায়। আজ বছরের প্রথম দিন, তাই অফিস ছুটি আর তাই আজ সারাদিন কোনও কাজ নেই। আলেখ নিজের দৈনন্দিন কাজ কর্ম সেরে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ টা নিয়ে সবে একটু বসেছিল। কুহেলিকে ঘরে ঢুকতে দেখে মুখটা তুলে বলল,

কি হল? সব ঠিক আছে তো?

হুম, ঠিক আছে। তুমি এখনই ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেছ কেন?

এমনিই, তুমিও ছিলে না তাই একটু কাজ করছিলাম।

ও।

কুহেলি মুখে সব ঠিক আছে বললেও আলেখের মনে হল কিছু একটা ব্যাপার তো আছে যেটা কুহেলিকে ভাবাচ্ছে। আলেখ ল্যাপটপ টা সরিয়ে রেখে কুহেলির কাছে গিয়ে বলল,

কি হয়েছে?

কুহেলি একবার আলেখের দিকে তাকাল, অবাক সে হয়নি। আলেখ যে কিছু বলার আগেই সবটা বুঝে নিতে পারে এটা কুহেলি জানে। একটু থেমে সবটা বলল, আলেখ চুপ করে পুরোটা শোনার পরে মুখটা গম্ভীর করে বলল,

রিতু টা আর কাউকে পেল না?

এভাবে কেন বলছ? মিস্টার আগরওয়াল যথেষ্ট ভালো মানুষ।

হ্যা, সে তো দেখতেই পাচ্ছি, অন্যের ওয়াইফ কে ভালোবাসার কথা গর্বের সঙ্গে বলে বেড়াচ্ছেন।

কুহেলিকে নিয়ে নিশীথের প্রতি একটা সুপ্ত ঈর্ষা আলেখের মনে বরাবরই ছিল। একটা সময়ে এসে সেটা মিলিয়েও এসেছিল কিন্তু আজ আবার যেন সেটা জেগে উঠল। আর এবার যেন শুধুই ঈর্ষা নয়, কিছুটা রাগও হল। আর সত্যি বলতে কি, আলেখকে দোষ দেওয়াও যায় না। কেউ যদি জানতে পারে যে এখনও তার বিবাহিতা স্ত্রীকে কেউ এতোটা ভালোবাসে যে শুধু তার নামটাই হৃদয়ে লিখে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে চায়, মনে হয় না কোনও স্বামীর পক্ষেই সেটা হাসি মুখে মেনে নেওয়া সম্ভব। কুহেলি আলেখের দিকে তাকিয়ে বলল,

তুমি এভাবে কেন বলছ? সবটাই তো জানো, তুমি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগেই কিন্তু মিস্টার আগরওয়াল নিজের ফিলিংস গুলো আমাকে জানিয়েছিলেন। একজন অবিবাহিতা মেয়েকে ভালোবাসা নিশ্চয়ই অন্যায় নয়, এখন আমি তোমার পরিণীতা কিন্তু তখন তো ছিলাম না। আর ভালোবাসা কি বললেই ভুলে যাওয়া যায়? খারাপ আমারও লাগছে, আমিও চাই না উনি এভাবে নিজের লাইফটা কাটান। কিন্তু তাই বলে তুমি ওনাকে এভাবে বলতে পারো না আলেখ, উনি কোনও অন্যায় করেননি।

কুহেলির কথা গুলোও অযৌক্তিক নয়, কিন্তু এই মুহূর্তে কথা গুলো আলেখের রাগের আগুনে যেন ঘিয়ের কাজ করল।

রিয়েলি? কোনও অন্যায় করেননি? ওনার জন্য যে রিতু কষ্ট পাচ্ছে সেটার কি হবে?

রাত্রিকে তুমি দেখলে বুঝতে পারতে, ও কষ্ট হয়তো পেয়েছে কিন্তু তার থেকেও বেশি খুশি হয়েছে।

হোয়াট ননসেন্স? আমি একজনকে ভালোবাসি সে অন্য কাউকে ভালোবাসে, তার উপরে সে আবার ম্যারেড। এত কিছু জানার পরেও রিতু হ্যাপি বলতে চাইছ?

হ্যা, আর বলতে চাইছি না বলছি।

রিতু তোমাকে নিজের কষ্টটা বুঝতে দেয়নি কারণ রিতু চায় না ওর কষ্ট দেখে তুমিও কষ্ট পাও নিজেকে ব্লেম কর।

আলেখের হঠাৎ এমন ব্যবহার দেখে কুহেলি যেমন অবাক হচ্ছে তেমনি রাগও হচ্ছে। এইরকম ছেলেমানুষের মত ব্যবহার সে আলেখের কাছ থেকে আশা করেনি।

যেটা জানো না সেটা কেন বলছ? আমি নিজে একজন মেয়ে, রাত্রির মন বুঝতে আমার কোনও কষ্ট হয়নি। আমার মন রাখার জন্য একটা কথাও সে বলেনি, যা বলেছে সত্যি বলেছে। আর তুমি এভাবে কেন রিয়্যাক্ট করছ বলতো?

আর কিভাবে রিয়্যাক্ট করা উচিৎ আমার? তুমি মিস্টার আগরওয়ালের দোষটা তো দেখতেই পাচ্ছো না।

দোষ নেই তাই দেখতে পাচ্ছি না। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না, তুমি সব জানার পরেও আজ এভাবে কেন রিয়্যাক্ট করছ? সবার নিজের স্বাধীনতা আছে, মিস্টার আগরয়ালেরও সেই স্বাধীনতা টা আছে। আর উনি আমাকে ভালোবাসেন বলেই উনি খারাপ হয়ে গেলেন! এটা কেমন কথা?

কুহেলি আমিও বুঝতে পারছি না, তুমি মিস্টার আগরওয়ালের হয়ে এত কথা কেন বলছ?

আমি কারো হয়ে কথা বলছি না আলেখ, যেটা সত্যি সেটাই বলছি। তুমি শুধু শুধু ওনাকে দোষ দিচ্ছ তাই আমি বলছি। সত্যিটা তুমিও জানো, মিস্টার আগরওয়াল মানুষ হিসেবে কতটা ভালো সেটা তুমি আমার থেকেও বেশি ভালো করে জানো।

আলেখ সহজে নিজের সংযম হারায় না, কিন্তু আজ কি হল আর কেন হল সে নিজেই বুঝতে পারল না। হঠাৎ করেই রাগের চরম সীমায় পৌঁছে গেল যেন। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে অনেক সময় মানুষ এমন কিছু করে ফেলে যেটা হয়তো সে করার কথা ভাবতেও পারে না। আলেখও আজ ঠিক সেই কাজটাই করে বসল,

গ্রেট কুহেলি গ্রেট, মিস্টার আগরওয়াল যখন এতই ভালো মানুষ তখন ওনাকে রিজেক্ট করেছিলে কেন? উনি তো আমার আগেই তোমাকে প্রপোজ করেছিলেন, তাই না! কত ভালোবাসেন উনি তোমাকে! ওনাকেই তাহলে বিয়ে করতে পারতে, ওনার সঙ্গেই হয়তো আরও বেশি সুখে থাকতে। শুধু শুধু আমাকে বিয়ে করলে কেন?

আলেখের কাছ থেকে এইরকম কিছু শুনতে হবে কুহেলি কোনদিনও স্বপ্নেও ভাবেনি। প্রথমত এত রেগে যাওয়ার মত কোনও ঘটনাই ঘটেনি আর যদি রাগ হয়ও তাহলেও আলেখ কীকরে কথাগুলো বলতে পারল কুহেলিকে? আলেখ এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে সোজা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কুহেলি যেন একটা পাথরের মূর্তির মত দাড়িয়ে রইল ঠিক সেইখানটাতেই। চোখের কোণে জমছে বাষ্প, তাদের অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ার মাঝে হয়তো আর মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধান অবশিষ্ট। কুহেলি এখনও ভাবতে পারছে না আলেখ এই কথা গুলো বলে গেল! আলেখ! যাকে কিছু বলার আগেই সবটা অনায়াসে বুঝে নিতে পারে আজ সে এমন অবুঝের মত আচরণ করল! একবারও কি মনে হয়নি কথাগুলো কুহেলির অন্তরে তীক্ষ্ম শেলের মত বিদ্ধ হবে। নিশীথ কে প্রত্যাখ্যান করার কারণ আলেখ নিজেও জানে, সেদিন তো নিজেই বলেছিল ভালোবাসার উপর কারো শাসন চলে না। কখন কিভাবে কার মনের আঙ্গিনায় দোলা দিয়ে যাবে কেউ জানে না, তাহলে আজ সে এইরকম আচরণ কি করে করতে পারল? কুহেলির আর ভালোলাগছে না, মনে হচ্ছে যেন কেউ জ্বলন্ত কয়লার টুকরো মনের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। চোখের কোণায় জমে থাকা বাষ্প গুলো নিশব্দ কান্নার স্রোত হয়ে নেমে এলো কুহেলির দুগাল বেয়ে। আজ বছরের প্রথম দিনটায় এমনটাই হওয়ার ছিল? কুহেলি ছুটে চলে গেল ছাদে, ওর সুখ দুঃখের চির সাথী সেই গোলাপ গাছ দুটোর কাছে। এদিকে আলেখ বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িটা নিয়ে সোজা চলে এসেছে সেই ছোট্ট ঝিলটার পাড়ে। পরনে এখনও সেই বাড়ির ক্যাজুয়াল ট্রাউজার আর টিশার্ট, পায়ের জুতো জোড়া পর্যন্ত ঘরেরই। জীর্ণ বেঞ্চ টা এখনও তেমনই রয়েছে, আলেখ সেখানেই বসল। মাথায় যেন এখনও আগুন জ্বলছে, কিন্তু কেন জ্বলছে সেটা নিজেও জানে না। শুধু একটাই কথা মনে হচ্ছে নিশীথ আজও নিজের সবটা জুড়ে শুধুই কুহেলিকে বসিয়ে রেখেছে, তার কুহেলিকে। হ্যা, কুহেলি শুধুই তার, অন্য কারোর কোনও অধিকার নেই। আর কুহেলিও যখন নিশীথের পক্ষে কথা বলছিল তখন যেন কিছুতেই আর নিজেকে সামলাতে পারেনি আলেখ। যা মুখে এসেছে বলে দিয়েছে, এটাও একবারের জন্যও ভেবে দেখেনি এর পরিণাম কি হতে পারে। আলেখ দুহাতে মাথাটা চেপে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে ছিল, ঠিক কতক্ষন বসে ছিল বলা যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওর রাগটাও ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এল, স্বাভাবিক জ্ঞান বুদ্ধি গুলো যখন আবার নিজেদের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে লাগল তখন আলেখের মন জুড়ে জন্ম নিল চরম অনুশোচনা। নিজের বলা কথা গুলো নিজের কানেই যেন তপ্ত সীসার মত মনে হতে লাগল। এটা সে কি করে ফেলেছে? রাগে এতোটা অন্ধ সে কীকরে হতে পারে? কুহেলি কে এতোটা কষ্ট সে কীকরে দিতে পারল? তাও অকারণে, অহেতুক। নিজের উপরেই একটা ঘৃণার ভাব উদ্রেক হল, নিজেকে যেন নিজেই বলতে লাগল,

এটা আমি কি করলাম? কেন করলাম? হোয়াই? আমি কুহেলিকে ওই কথা গুলো কীকরে বলতে পারলাম? সবটা জানার পরেও আমি এভাবে রিয়্যাক্ট করলাম কেন? এতোটা ইম্পালসিভ আমি কি করে হতে পারি? নো নো, আমি অন্যায় করেছি, আমাকে কুহেলির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, চাইতেই হবে। এক্ষুনি, আমি এক্ষুনি কুহেলির কাছে ক্ষমা চাইব।

আলেখ নিজের পকেট হাতড়ে ফোন না পেয়ে ছুটে গাড়ির কাছে গেল, সারা গাড়িতে খুঁজল কিন্তু কোথাও পেল না। তারপরে মনে পড়ল, ফোনটা তো নিয়েই বেরোয়নি, তখন এমন ভাবে বেরিয়ে এসেছিল.. .. আর সময় নষ্ট না করে আলেখ গাড়ি ছোটাল ওঙ্কার ভিলার উদ্দেশ্যে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে কুহেলির কাছে পৌঁছতেই হবে। ঝড়ের গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে আলেখ মাত্র মিনিট কুড়ির মধ্যে পৌঁছে গেল। দ্রুত পদক্ষেপে প্রায় দৌড়ে নিজেদের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু ঘরে ঢোকার মুখেই থমকে দাড়িয়ে পড়তে হল। সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে হয়তো ঘণ্টা দুয়েক হবে, এর মধ্যে এসব কি হয়ে গেল? কুহেলি চুপচাপ নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়, তার পাশেই উদ্বিগ্ন মুখে বসে আছে রাত্রি আর পায়ের দিকটায় দাড়িয়ে আছে প্রভাত আর বৃন্দা। কুহেলির চোখ দুটো বন্ধ, মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে মনে হচ্ছে। আলেখের বুকের ভিতরটা যেন মুচড়ে উঠল, ছুটে গিয়ে কুহেলির পাশে বসে বলল,

কুহেলি, কি হয়েছে তোমার? তুমি এভাবে শুয়ে আছ কেন? কুহেলি?

রাত্রি আলেখের কাধে হাত দিয়ে বলল,

ডোন্ট প্যানিক আলেখ, শি উইল বি অলরাইট।

আলেখ রাত্রির দিকে তাকিয়ে বলল,

কি হয়েছে রিতু ওর? ও এভাবে কেন…..

কথাটা শেষ করতে পারল না আলেখ, গলাটা কেমন যেন রুদ্ধ হয়ে এল। এই মুহূর্তে আলেখের মনের অবস্থা ঠিক কেমন সেটা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। রাত্রি আলেখের হাত টা ধরে বলল,

চিন্তা করিস না, আমি ডক্টর আইয়ার কে কল করে দিয়েছি উনি এক্ষুনি এসে পড়বেন। কিন্তু তুই কোথায় ছিলি? তোর ফোনটাও নিয়ে যাসনি, প্রভাত তোকে কতবার ফোন করেছে কিন্তু লাভ হয়নি শেষে আমাকে ডেকে এনেছে। আমি এসেও তোকে কল করার ট্রাই করছিলাম আর তখনই চোখে পড়ল ফোনটা তো এখানেই ফেলে রেখে গেছিস। কোথায় গিয়েছিলি? আর আজকে তো হলিডে, বেরিয়েছিলিই বা কেন?

আলেখ কী উত্তর দেবে এই প্রশ্নের? কেন বেরিয়েছিল সে? আলেখ উত্তর না দিয়ে বলল,

কুহেলির কি হয়েছে আমাকে কেউ বলবে? ও হঠাৎ এভাবে কীকরে?

এবার প্রভাত বলল,

ম্যাডাম অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন ছোটে সাব, বৃন্দা জি ব্রেকফাস্ট রেডি করে আপনাদের ডাকতে বললে আমি ডাকতে গিয়ে দেখি আপনারা ঘরে নেই। নীচে গিয়ে হরিশকে জিজ্ঞেস করতে বলল আপনি বাইরে গেছেন কিন্তু ম্যাডাম কে দেখেনি। তখন আমি একবার ছাদে গেলাম, ম্যাডাম তো মাঝে মাঝেই ছাদে যান। ছাদে গিয়ে দেখি ম্যাডাম ওই গোলাপ গাছ দুটোর পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। তখনই আমি হরিশ আর বৃন্দা জিকে ডেকে ম্যাডাম কে এই রুমে নিয়ে আসি। তারপরে আপনাকে অনেক বার ফোন করেছি কিন্তু না পেয়ে রাত্রি ম্যাডাম কে ডেকে নিয়ে আসি।

আলেখের শুনে নিজের উপরেই খুব রাগ হতে লাগল। কেন তখন ঐসব উল্টোপাল্টা কথা গুলো বলতে গেল? তখন ঐ কথাগুলো না বললে এসব কিছুই হত না। কুহেলির একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অনুতপ্ত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল কুহেলির বেহুঁশ মুখটার দিকে। অজান্তেই দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল নীচে। রাত্রি আলেখের কাধে হাত রাখতেই আলেখ বলল,

সব আমার জন্য হয়েছে, সব আমার দোষ।

রাত্রি একটু অবাক হয়ে বলল,

কি বলছিস আলেখ? তুই তো ছিলিসই না, তোর জন্য কীকরে হবে?

আমি ছিলাম না বলেই তো এটা হয়েছে।

রাত্রি মনে করল আলেখ হয়তো কুহেলিকে চোখের আড়াল করেছে বলে এমন বলছে কিন্তু আলেখ যে কেন এরকম বলছে সেটা তো শুধু আলেখ জানে। একটু পরেই ডক্টর আইয়ার এসে গেলেন, আলেখ ওনাকে দেখেই ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল,

ডক্টর, ডক্টর প্লিজ দেখুন আমার কুহেলির কি হয়েছে। ও হঠাৎ এভাবে অজ্ঞান কেন হয়ে গেল ডক্টর? কি হয়েছে ওর?

রাত্রি আলেখকে সরিয়ে এনে বলল,

আলেখ, প্লিজ এরকম করিস না। ওনাকে আগে কুহেলিকে দেখতে তো দে। উনি না দেখে কীকরে বলবেন?

আলেখ একটুও শান্ত হলো না, কিন্তু প্রশ্নের তীর গুলো সাময়িক ভাবে বন্ধ রইল। ডক্টর আইয়ার কুহেলির পাশে এসে বসলেন, আর আলেখ খাটের অন্য পাশটায় উঠে কুহেলির একদম মাথার কাছটায় গিয়ে বসল। ডক্টর আইয়ার সবটা শুনে কুহেলিকে একটু চেক করলেন। এরমধ্যেই কুহেলির জ্ঞান ফিরে এলো, চোখের পলক দুটোয় মৃদু কম্পন লক্ষ্য করে আলেখ উত্তেজিত হয়ে বলল,

ডক্টর, কুহেলির জ্ঞান ফিরেছে।

কুহেলি ধীরে ধীরে চোখ মেলে বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায় আছে। যতদূর তার মনে পড়ছে আলেখ বেরিয়ে যাওয়ার পর সে তো ছাদে বসেছিল নিজের প্রিয় গাছ দুটোর পাশে। মনের সব দুঃখ গুলো উজাড় করে দিচ্ছিল তাদের কাছে, কিন্তু হঠাৎ সব কিছু যেন ঝাপসা হয়ে আসছিল আর তারপরে কিছু মনে নেই। এখন চোখ মেলে বুঝল নিজের ঘরেই আছে, আর আসে পাশে একটু বেশিই লোক জন রয়েছে। প্রভাত আর বৃন্দা কে দেখতে পেল মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে করে দাড়িয়ে আছে, আর রাত্রিও রয়েছে, তার মুখেও চিন্তার ছাপ। আর সামনে একজন অপরিচিত মহিলা বসে আছেন, দেখে ডাক্তার বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কি হয়েছে এখনও বুঝতে পারছে না। একটু ওঠার চেষ্টা করতেই বাধা পেল,

উঠছ কেন? শুয়ে থাকো চুপচাপ।

কুহেলি এতক্ষণ খেয়াল করেনি, এখন দেখল আলেখ যেন তাকে আগলে বসে আছে। আলেখকে দেখেই মনে একটা অব্যক্ত কষ্ট অনুভব করল। একরাশ অভিমান যেন ঘিরে ধরল কুহেলিকে, চোখ দুটো ফিরিয়ে ডক্টর আইয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল,

আমার কি হয়েছে?

ডক্টর আইয়ার একটা ইনজেকশন দিয়ে হেসে বললেন,

চিন্তার কোনও কারণ নেই, কোনও কারণে খুব স্ট্রেস নিয়ে ফেলেছিলেন, তাই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। আর এইরকম সময়ে স্ট্রেস নেওয়াটা ঠিক নয়, এমনিতেই এইসময়টা ভিষন ডেলিকেট। সামান্য স্ট্রেসও কিন্তু ক্ষতিকর হতে পারে, বি কেয়ারফুল।

ডক্টর আইয়ারের কথা কুহেলি কেন উপস্থিত কারোরই বোধগম্য হল না। কুহেলি একটু অবাক হয়ে বলল,

মানে? কি বলছেন ডক্টর, আমি বুঝতে পারছি না। এই সময়ে মানে?

আলেখও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ডক্টর আইয়ার হেসে বললেন,

কংগ্র্যাচুলেশন মিসেস শর্মা, আপনি মা হতে চলেছেন।

ক্রমশ____________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

আজ আমি কিছুই বলব না, যা বলার আপনারাই বলবেন। কেমন লাগল আজকের পর্বটা? জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। অপেক্ষায় থাকব কিন্তু। এরপর ঠিক কি হতে চলেছে বলে মনে হয়? খুশির জোয়ার আসবে নাকি ধেয়ে আসছে কোনও ঝড়? আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন। আজ তবে আসি, দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here