সংগোপনে’ পর্ব-৫০

0
1137

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৫০
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

কংগ্র্যাচুলেশন মিসেস শর্মা, আপনি মা হতে চলেছেন।

কথাটা শোনার পর গোটা ঘরে যেন একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতার সৃষ্টি হল। কুহেলি আর আলেখ দুজনেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ডক্টর আইয়ারের দিকে। যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না কথাটা, মানে হঠাৎ করে এমন একটা সুখবর তাও আবার নতুন বছরের প্রথম দিনে। প্রভাত আর বৃন্দার মুখে কিন্তু ছড়িয়ে পড়েছে হাসির রেখা, রাত্রিও বিস্ময়ের প্রথম পর্ব টা সামলে নিয়ে দারুন উত্তেজিত হয়ে উঠল।

ডক্টর আর ইউ শিওর?

ইয়েস, আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি উনি নিশ্চিত ভাবে প্রেগন্যান্ট। তবুও একজন গাইনোকলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী সব টেস্ট করানোর পরেই হান্ড্রেড পার্সেন্ট কনফার্ম হওয়া যাবে।

ওহ মাই গড, কুহেলি….. ইউ আর গোয়িং টু বি এ মম।

রাত্রি উত্তেজনা আর আনন্দের বশে কুহেলি কে ওঠার সুযোগ টুকুও না দিয়েই জড়িয়ে ধরল। আলেখও এতক্ষণে যেন বুঝতে পেরেছে, এগুলো সব সত্যিই ঘটছে কোনও স্বপ্ন নয়। প্রথমটায় শুনে যেন কেমন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল, কিন্তু এখন সেই ঘোর টা কাটতেই প্রায় লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে এসে ডক্টরের কাছে এসে বললো,

ডক্টর আর ইউ রিয়েলি শিওর? আমি.. আমি সত্যিই….

ডক্টর আইয়ার হাসি মুখে আলেখের অসমাপ্ত কথাটা সম্পূর্ণ করলেন।

ইয়েস মিস্টার শর্মা, আপনি বাবা হতে চলেছেন। কংগ্র্যাচুলেশন।

আলেখ যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল। দু হাত দিয়ে ডক্টর আইয়ারের হাত টা ধরে বলল,

থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ ডক্টর, আপনি জানেন না আপনি কত বড় একটা গুড নিউজ দিয়েছেন।

ডক্টর আইয়ার হেসে বললেন,

এখন থেকে কিন্তু আরও বেশি যত্ন নিতে হবে ওনার, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন গাইনোকলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এই সময়ে কি করা উচিৎ কিভাবে চলা উচিৎ সেটা ওনারাই ভালো বলতে পারবেন।

শিওর ডক্টর।

তবে হ্যা, একটা কথা আমি বলতে পারি, উনি যে সেন্সলেস হয়েছিলেন সেটা কিন্তু সম্পূর্ণ স্ট্রেসের কারণে। যেহেতু উনি প্রেগনেন্ট তাই সামান্য স্ট্রেসও ওনাকে অনেকটা বেশি এফেক্ট করতে পারে। অ্যান্ড দিজ ইজ নট গুড ফর হার অ্যান্ড ফর দ্য বেবী অলসো। সো বি ভেরি কেয়ারফুল ফ্রম নাও মিস্টার শর্মা।

আলেখের মুখটা নিমেষের মধ্যে অন্ধকার হয়ে এলো, ওর জন্যই তো আজ কুহেলি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন মন খারাপ করার সময় নয়, ওদের জীবনে নতুন আনন্দের সমাগম ঘটেছে। আলেখ আবার হাসি ফিরিয়ে এনে বলল,

আজ থেকে কুহেলি কোনরকম স্ট্রেস নেবে না, আই উইল মেক শিওর দ্যাট।

আলেখ নিজে ডক্টর আইয়ার কে এগিয়ে দিয়ে এলো। আর এদিকে ততক্ষণে রাত্রি পারলে বাড়ি মাথায় করে নেয়। অনর্গল বকবক করেই চলেছে, কুহেলিকে একটাও কথা বলার সুযোগ দেয়নি।

ওহ কুহেলি, আই অ্যাম সো হ্যাপি। তুমি মা হতে চলেছ, আই অ্যাম সো একসাইটেড। নিউ ইয়ারের ফার্স্ট ডে তে এত বড় একটা গুড নিউজ, উফ্ আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমি সত্যিই এবার…. এই দেখো, আবার সেই কনফিউশন, যে জুনিওর মেম্বার আসছেন তিনি আমাকে কি বলে ডাকবেন?

কুহেলি এতক্ষণ শুধু চুপ করে শুয়ে ছিল, বোঝার চেষ্টা করছিল এটা কি সত্যি? ও সত্যিই মা হতে চলেছে? একটু উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসে নিজের পেটে একবার হাত রাখল। যেন অনুভব করার চেষ্টা করছে ছোট্ট নতুন প্রাণ টাকে। সত্যিই ওর শরীরে এখন আরও একটা নতুন প্রাণ রয়েছে! ওর নিজের অংশ? রাত্রির কথা গুলো যেন শুনতেই পাচ্ছে না, শুধু ভাবছে ওর ভিতরে বেড়ে উঠছে একটা নতুন প্রাণ। ওর অজান্তেই ঠোঁট জুড়ে খেলে গেল একটা হাসি, সেই হাসিতে ফুটে উঠল একটা পরম প্রাপ্তির আভাস। মাতৃত্বের অনুভূতি টাই বোধহয় এমন, সব দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারে, পৌঁছে দিতে পারে সুখ সাগরের অতল গভীরে। কুহেলি তেমনই সব ভুলে সুখের সাগরে ভেসে চলেছিল কোনও অজানার উদ্দেশ্যে, হঠাৎ রাত্রির কথায় যেন ফিরে এল বাস্তবে।

কি হল? এই কুহেলি? কোথায় হারিয়ে গেলে?

হ্যা?

কি ভাবছ? আমি এত কিছু বললাম তুমি কিছু শুনেছ কি?

কুহেলি হাসি মুখেই বলল,

সরি রাত্রি আমি কিছু শুনিনি। কি বলছিলে তুমি?

হুম, বুঝি বুঝি, এখন তো শুধু বেবির কথাই ভাববে আমার কথা আর মনে থাকবে কেন?

রাত্রি, আমি সত্যিই মা হতে চলেছি?

অফকোর্স, ডক্টর তো নিজে বলে গেলেন।

কুহেলির যেন আনন্দের সীমা নেই, যাকে এখনও অনুভব করতে পারছে না তার অস্তিত্ব এতটাই আনন্দময়! রাত্রি আবারও বকবক শুরু করল আর এরমধ্যেই আলেখ আবার ফিরে এলো ঘরে। আলেখকে দেখে রাত্রি লাফিয়ে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

আলু, আই অ্যাম সো হ্যাপি ফর ইউ। তুই বাবা হতে চলেছিস, জাস্ট ইম্যাজিন ইয়ার। তুই, মাই আলু, আর কদিন পরেই বাবা হতে চলেছে। কংগ্র্যাচুলেশনস ইয়ার।

থ্যাঙ্কস রিতু।

এরমধ্যে বৃন্দা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বলল,

আসব?

আলেখ পিছন ফিরে দেখল বৃন্দা হাতে একটা ট্রে নিয়ে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে।

এস বৃন্দা দি।

বৃন্দা ঘরে ঢুকে বলল,

এত ভালো একটা খবর মিষ্টি মুখ না করলে কি চলে?

বৃন্দার হাতের ট্রে তে সাজানো আছে নানা রকম মিষ্টি। আসলে এই বাড়িতে সবসময়ই মিষ্টি মজুত থাকেই, কারণ কুহেলি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসে। রিতু সবার আগে একটা মিষ্টি নিয়ে আগে কুহেলির কাছে এসে বলল,

সবার আগে তুমি মিষ্টি মুখ করবে, নাও হা করো।

কুহেলি কিছু বলার আগেই রাত্রি মিষ্টিটা কুহেলির মুখে চালান করে দিয়েছে। তারপর রাত্রি দায়িত্ত্ব নিয়ে আলেখ আর বৃন্দার মুখেও মিষ্টি চালান করল। একদম ছোট বাচ্চাদের মত আনন্দে লাফিয়ে চলেছে মেয়েটা। তারপর নিজেও একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে আলেখকে বলল,

আলু, তুই ওরকম দাড়িয়ে আছিস কেন? কুহেলিকে মিষ্টি মুখ করাবি না?

আলেখ একটা মিষ্টি হাতে নিয়ে কুহেলির পাশে গিয়ে বসল। কুহেলি কোনও কথা বলল না, যেমন বসে ছিল তেমনই বসে রইল। আলেখ একটু হেসে কুহেলির মুখের সামনে মিষ্টিটা তুলে ধরে বলল,

থ্যাঙ্ক ইউ কুহেলি, আমাকে এত ভালো একটা নিউজ দেওয়ার জন্য।

কুহেলি আলেখের দিকে না তাকিয়েই বলল,

এখন আর মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে না।

আলেখ বুঝতে পারল কুহেলি এখনও তার উপর রেগে আছে। আর সেটাই স্বাভাবিক, আজ যে ব্যবহার সে করেছে তাতে রাগ করাটাই স্বাভাবিক। আলেখ একটু বিষন্ন মনে হাত টা সরিয়ে নিল, রাত্রি দেখল ব্যাপারটা, একটু অদ্ভুত লাগল এমন একটা সুসংবাদ শুনেও এরকম ব্যবহার কেন করছে এরা? কিছু যে একটা হয়েছে সেটা বুঝতে পারল, আর এই মুহূর্তে যে ওদের দুজনকে একটু একা সময় দেওয়া উচিৎ সেটাও বুঝল।

আচ্ছা আলু, আমি এখন আসি বুঝলি। কুহেলি তুমি রেস্ট করো, আমার একটু কাজ আছে। তবে হ্যা, পার্টিটা কিন্তু ডিউ রইল।

কুহেলি বলল,

এক্ষুনি চলে যাবে? আরেকটু বসো না।

কুহেলি আসলে আলেখের সঙ্গে একা হতে চাইছিল না, তার ইচ্ছে করছে আলেখকে দুহাতে জড়িয়ে ধরতে। তাদের এমন সুখের দিনে আলেখের বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু না, সে পারবে না, আজ আলেখ তার মনে যে আঘাত দিয়েছে তারপরে এত সহজে সে আলেখকে ক্ষমা করতে পারবে না। ভালোবাসা যত গভীর হয় অভিমান টাও ততই গভীর হয়। সে জানে আলেখ কথা গুলো ওর ভালোবাসা থেকে সৃষ্টি হওয়া রাগের বশেই বলেছে, মন থেকে এমন কথা আলেখ কখনোই বলতে পারে না। কিন্তু তবুও, এত রাগ তাও অকারণে, কেন হবে? আর রাগে এতটাই অন্ধ কীকরে হতে পারে, যে কি বলছে কেন বলছে তার খেয়াল টুকুও থাকবে না? ওই কটা কথায় যে কুহেলির অন্তর কতটা আহত হয়েছে সেটাও কি একবারও ভাবেনি? কেন করল আলেখ এরকম? আজ এই শ্রেষ্ঠ সুখের সময়েও চেয়েও কুহেলি সম্পূর্ণ খুশি হতে পারছে না। রাত্রি একবার আলেখের দিকে তাকিয়ে দেখল তার চোখে এই খুশির আনন্দ ছাপিয়েও ভিড় করেছে কোনও এক না বলা বেদনা। ভিষন ইচ্ছে করছে জানতে, এমন কি হল ওদের মাঝে তাও হঠাৎ করে। কিন্তু এখন সেসব ওর না জানলেও চলবে, সেটা রাত্রি জানে, আলেখের চোখ দুটো বলে দিচ্ছে সে এখন কিছুটা সময় কুহেলির সঙ্গে নিভৃতে কাটাতে চায়। রাত্রি একটু হেসে বলল,

সরি কুহেলি, থাকতে তো আমারও ইচ্ছে করছে, ইনফ্যাক্ট আমার তো তোমাকে ছেড়ে যেতেই ইচ্ছে করছে না। কিন্তু কিছু করার নেই, সত্যিই একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করতে হবে, অ্যামি কল করেছিল নতুন একটা অফার এসেছে সেটা নিয়েই আর্জেন্টলি ডিসকাস করতে হবে।

রাত্রি পুরোটা মিথ্যে বলল না, অফারটা সত্যিই এসেছে কিন্তু এখনই সেটা নিয়ে আর্জেন্টলি ডিসকাস করার কোনও প্রয়োজন নেই। কুহেলি আর কিছু বলল না, রাত্রি আলেখ আর কুহেলিকে আরও একবার অভিনন্দন জানিয়ে বেরিয়ে গেল। বৃন্দাও অনেক আগেই আবার নিজের কাজে ফিরে গেছে, আজ সেও দারুন খুশি এই সুসংবাদে। তাই মেনুর পরিবর্তন করে কিছু পুষ্টিকর খাবার রান্না করছে, যেটা এই মুহূর্তে কুহেলির পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয়। ঘরে এই মুহুর্তে শুধু কুহেলি আর আলেখ, অদ্ভুত এক নীরবতা বিরাজ করছে ওদের দুজনের মাঝখানে। আলেখ কুহেলির দিকে তাকিয়ে দেখল সে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে, চোখ দুটোয় ভিড় করে আছে একরাশ অভিমান। আলেখ কুহেলির আরও কিছুটা কাছে সরে বসে নরম সুরে ডাকল,

কুহেলি।

কুহেলি কোনও সাড়া দিল না, আলেখের দিকে একবারের জন্যও তাকিয়ে দেখলও না। চোখ দুটোর কোণে আবার বাষ্প জমতে শুরু করেছে, কিন্তু কুহেলি প্রাণপণ চেষ্টা করছে তাদের ধরে রাখার। আলেখ বুঝল অভিমানের যে বিরাট হিমগিরি সৃষ্টি হয়েছে তাকে এত সহজে বিগলিত করা সম্ভব নয়। আলেখের অন্তরটা অসহ বেদনায় দগ্ধ হতে লাগল, ওর এখন ইচ্ছে করছে কুহেলিকে বুকের মাঝে নিয়ে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যেতে কিন্তু পারছে না। তার নিজের কৃত কর্মের জন্যই আজ তাদের জীবনের সব থেকে শ্রেষ্ঠ সুখ সংবাদ টা পেয়েও পরিপূর্ণ সুখের জোয়ারে গা ভাসাতে পারছে না। আলেখ কুহেলির একটা হাতের উপরে হাত রেখে বলল,

আমার সঙ্গে কথা বলবে না কুহু?

আলেখের মুখে কুহু ডাকটা শুনে কুহেলির অন্তর পর্যন্ত যেন শিহরিত হয়ে উঠল। আলেখের মুখে এই কুহু ডাক টা যেন অন্য মাত্রা পায়, কুহেলি ভীষণ ভালোবাসে ওর মুখে এই ডাক টা শুনতে। কিন্তু আলেখ ওদের বিশেষ অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ছাড়া এই নামটা ব্যবহার করে না। তবে এখন কেন ডাকল? কুহেলি জানে সবটাই ওকে নরম করার জন্য, ওকে দুর্বল করার জন্য। না, কুহেলি দুর্বল হবে না, আলেখকে বুঝতে হবে সে অন্যায় করেছে। এইরকম অবুঝের মত আচরণ তাকে মানায় না, কোনও কিছু না ভেবেই কুহেলিকে কতটা আঘাত করেছে সেটা ওকে বুঝতে হবে। কুহেলি বহু কষ্টে চোখ ফেটে নেমে আসতে চাওয়া নোনা জলের স্রোতকে রুদ্ধ করে তেমনই উল্টো দিকে মুখ করে রইল। কুহেলির এই উপেক্ষা আলেখের মর্মে যেন বিষাক্ত তীরের মত বিদ্ধ হতে লাগল। আকুল স্বরে বলল,

কুহু, প্লিজ এমন করো না। আমি জানি আমি ভুল করেছি, অন্যায় করেছি। তুমি আমাকে শাস্তি দাও, তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু প্লিজ, এইভাবে আমাকে ইগনোর করো না, আমার সঙ্গে কথা বলো প্লিজ কুহু।

কুহেলির ভীষন ইচ্ছে করছে আলেখের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে, কি করবে, বড্ড ভালোবাসে যে। আর আলেখও যে ওকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে সেটাও জানে। কিন্তু না, এখনই আলেখকে বুঝতে হবে অপরিসীম ভালোবাসা থেকে একটা সম্পর্কে অধিকার বোধ কিছুটা ঈর্ষা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তারও একটা সীমা আছে, অকারণে কোনও কিছু না ভেবে অন্যজনকে এতোটা আঘাত করা উচিৎ নয়। কুহেলি আগের মতোই মৌন হয়ে রইল, কিন্তু এবার আর বসে থাকল না, উঠে দরজার দিকে এগোতে গেলেই আলেখ ব্যস্ত হয়ে ওর হাত টা টেনে ধরল। উঠে দাড়িয়ে কুহেলির সামনে এসে বলল,

কোথায় যাচ্ছ? তুমি এখনও দুর্বল, এখন কোথাও যেও না। এখানে বসো, তোমার যা লাগবে আমাকে বলো আমি এনে দিচ্ছি।

আলেখ কুহেলিকে আবার খাটে বসাতে গেলে কুহেলি বাধা দিল। হিম শীতল কণ্ঠে উত্তর দিল,

আমার কাজ আমি নিজেই করে নিতে পারব, কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই।

আলেখ যেন আর সহ্য করতে পারল না, কুহেলির দুটো হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

তুমি কেন এইরকম করছ কুহু? প্লিজ, আমি বলছি তো আমি অন্যায় করেছি। তোমার যা ইচ্ছে তুমি আমাকে শাস্তি দিতে পারো আমি কিচ্ছু বলব না। কিন্তু এইভাবে আমার থেকে দূরে সরে যেও না প্লিজ। তুমি আমার সঙ্গে কথা না বললে আমি কীকরে থাকব কুহু? আর তুমি অস্বীকার করলেও আমি জানি আমার সঙ্গে কথা না বলে তুমিও খুশি থাকতে পারবে না। আমাদের বেবির জন্য তোমাকে এখন সবসময় হাসি খুশি থাকতে হবে কুহু, তুমি শুনলে না ডক্টর আইয়ার কি বলে গেলেন, এখন কোনরকম স্ট্রেস নেওয়া চলবে না। আমার কথা না ভাব, আমাদের বেবির কথা টা একবার ভাব প্লিজ।

কুহেলি মনে মনে বলল,

আমাদের বেবির কোনও ক্ষতি আমি হতে দেব না, কিন্তু তোমাকেও বুঝতে হবে তুমি ঠিক কি ভুল করেছ।

আলেখের দিকে একবার তাকিয়ে কুহেলি আগের মতোই শীতল কণ্ঠে বলল,

আমি এখন তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই না আলেখ, আশা করি বুঝতে পারছ। আমি এখন একটু একা থাকতে চাই, আর বাড়িতেও কথা বলব, সো প্লিজ আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ কর।

কুহেলির কথা গুলো আলেখের অন্তর পর্যন্ত কাপিয়ে দিল। কুহেলি কতটা অভিমানী সেটা তার অজানা নয়, আর এত সহজে যে তাকে সে ক্ষমা করবে না সেটা বলাই বাহুল্য। আলেখ আর কিছু বলল না, শুধু একটু অনুনয়ের সুরে বলল,

বেশ, তুমি যদি আমাকে এইভাবেই শাস্তি দিতে চাও তাহলে তাই সই। কিন্তু তুমি এখন কোথাও যেও না প্লিজ, তুমি এখানে বসে কথা বলো আমি চলে যাচ্ছি।

বলে কুহেলিকে আবার বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ল্যাপটপ টা ওর সামনে রেখে আর একটাও কথা না বলে বেরিয়ে গেল। আলেখের চোখ দুটোয় অনুশোচনার ছায়া পড়ে নিতে কুহেলির অসুবিধা হয়নি কিন্তু তাও এত সহজে সে তাকে ক্ষমা করবে না। তখন ঐ কয়েকটা মাত্র কথায় কুহেলি যতটা কষ্ট পেয়েছে তার তুলনায় এটা কিছুই নয়। কুহেলির অজান্তেই দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল চোখের কোল বেয়ে। কুহেলি নিজের পেটে একটা হাত রেখে আর্দ্র কণ্ঠে বলল,

দেখেছিস তো, তোর পাপা কত দুষ্টু। তখন আমাকে কষ্ট দিল আর এখন নিজে কষ্ট পাচ্ছে সঙ্গে আবার আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। একদম কথা বলব না তোর পাপার সঙ্গে আমি, তুইও বলবি না। পাক কষ্ট, শুধু শুধু তোর মাম্মাকে কষ্ট দিয়েছে, এখন কিছুদিন নিজেও কষ্ট পাক।

নিজের কার্যকলাপ দেখে কুহেলি নিজেই হেসে উঠল, এখনই সে তার বেবির সঙ্গে কথা বলছে! এখনও হয়তো দু মাসও হয়নি। কুহেলি একটু ভেবে সব দিক হিসেব করে দেখল বড়োজোর পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ হতে পারে। সঠিক হিসেব টা গাইনোকলোজিস্ট বলতে পারবেন, কিন্তু তাও কুহেলির আন্দাজে তার বেশি কিছুতেই হবে না। এখনও তো ভালো করে তার অস্তিত্ব তৈরীই হয়নি, আর এখন থেকেই কুহেলি নিজের সুখ দুঃখের কথা তাকে শোনাচ্ছে! মাতৃত্বের অনুভূতিটাই বোধহয় এইরকম হয়। কুহেলি সব ভুলে গেল, এমন কি আলেখের উপর রাগ… না না রাগ নয়, অভিমান, সেটার কথাও ভুলে গেল। হঠাৎ গোটা মনটা দারুন খুশিতে ভরে উঠল, আচ্ছা এটাই কি মুড সুইং? এত দ্রুত মুড সুইং হয়? কে জানে! এখন অত ভাবতে ইচ্ছে করছে না, ল্যাপটপ টা খুলে সোজা ভিডিও কল করল বাড়িতে। আনন্দের বশে এটাও লক্ষ্য করল না যে চৈতালী দেবী অনলাইন নেই। পরে খেয়াল হতেই ফোন করে অন হতে বলল, চৈতালী দেবী ফোনেই কুহেলির সুর শুনে বুঝে নিয়েছিলেন বিশেষ কিছু একটা ঘটেছে। ভিডিও কল কানেক্ট হতেই কুহেলি প্রায় ছেলেমানুষের মত বলে উঠল,

মা, আই মিস ইউ।

এতদিন ধরে মেয়ে বাইরে থাকছে। প্রথমে পড়াশোনা, তারপর কাজ আর এখন তো বিবাহসুত্রেই আলাদা থাকে। কিন্তু আজ অবধি কখনও কুহেলি এইভাবে মিস করার কথা বলেনি। আবার মুখ দেখে মনেও হচ্ছে না যে কোনও দুঃখ আছে, বরং বেশ খুশিই দেখাচ্ছে। চৈতালী দেবী একটু কৌতুহলী হয়ে বললেন,

কি ব্যাপার রে কুহু? আজ হঠাৎ এইভাবে কথা বলছিস যে?

কেন? কিভাবে বলছি?

কেন? তুই বুঝতে পারছিস না?

কুহেলি ছেলেমানুষী সুরে বলল,

উহু, বুঝতে পারছি না।

এই, কি ব্যাপার একটু খুলে বলতো।

আগে বলো ঠাম্মু কোথায়?

মা তো, নিজের ঘরে আছে। এই তো সবে ওষুধ খাইয়ে এলাম, দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা।

চৈতালী দেবী উঠে ল্যাপটপ টা নিয়ে শৈলজা দেবীর ঘরে গেলেন। শৈলজা দেবী শুয়ে পড়েছিলেন কিন্তু ঘুমাননি, চৈতালী দেবীর হাতে ল্যাপটপ দেখেই বুঝতে পারলেন তাঁর কুহু নিশ্চয়ই ভিডিও কল করেছে। এক মুখ হাসি নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসলেন, চৈতালী দেবী ল্যাপটপ টা সামনে রেখে ওনার পাশে বসলেন। কুহু ওনাকে দেখেই উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,

ঠাম্মু, কেমন আছ?

এই যে তোকে দেখলাম, তারপরে কি আর ভালো না থেকে পারি?

হুম, শরীর ঠিক আছে তো? ওষুধ গুলো সময়মত খাচ্ছ তো?

হ্যা রে বাবা, এবার বল দেখি কি বলতে ফোন করেছিস?

তুমি কি করে জানলে আমি কিছু বলার জন্য ফোন করেছি?

ওটা কি যেন বলে… হ্যা, সিক্রেট। এখন বল তো দেখি।

কুহেলি একটু লাজুক লাজুক মুখ করে বলল,

আসলে… আসলে… আমি… আমি না… মানে… আমি…

এত ইতস্তত করছে দেখে চৈতালী দেবীর একটু যেন খটকা লাগল আর শৈলজা দেবীর অভিজ্ঞ চোখ যা দেখার দেখেও নিল আর যা বোঝার বুঝেও নিল। শৈলজা দেবী একগাল হাসি নিয়ে বললেন,

কিরে কুহু? এমন একটা সুখবর দিতে লজ্জা পাচ্ছিস কেন?

কুহেলি হা করে তাকিয়ে রইল, ওর অবাক মুখটা দেখে শৈলজা দেবী হেসে বললেন,

অত অবাক হতে হবে না, তোর লাল টুকটুকে মুখ খানাই সব বলে দিচ্ছে রে। কবে জানলি রে?

কুহেলি লাজে রাঙা হয়ে বলল,

আজকেই, এই তো কিছুক্ষণ আগেই।

চৈতালী দেবী ভীষন খুশী হয়ে বললেন,

কুহু, তুই সত্যি মা হতে চলেছিস? আমি তো ভাবতেই পারছি না রে, মা আমাদের ছোট্ট কুহু এত বড় হয়ে গেল?

শেষের কথাটা শৈলজা দেবীকে উদ্দেশ্য করে বলা হল। শৈলজা দেবী একটা তৃপ্তির হাসি এনে বললেন,

সত্যি, কত বড় হয়ে গেলি রে মা? আজ আমি ভিষন খুশি, তোর জীবন টা এইভাবে সম্পূর্ণ হতে দেখে আমার যে কি ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারব না রে।

আরও বেশ কিছুক্ষণ ওরা তিনজনে কথা বললেন, ওদের তিনজনেরই আজ আনন্দের সীমা নেই। মাঝখানে একবার শৈলজা দেবী আলেখের কথা জিজ্ঞেস করলে কুহেলি বেশ কায়দা করেই এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সামান্য কিছু মুহুর্তের জন্য হলেও ওর মুখের অভিব্যক্তির পরিবর্তন শৈলজা দেবী বা চৈতালী দেবী কারোরই নজর এড়ায়নি। তবে শৈলজা দেবী কিছু বলেননি, উনি জানেন, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মাঝে মধ্যে অমন একটু মান অভিমান হয়। আর তাতে বরং ভালোবাসা আরও মজবুত হয়, কিন্তু চৈতালী দেবী কথা শেষ করার আগে বললেন,

কুহু, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করব না, তোদের হাসবেন্ড ওয়াইফের পার্সোনাল ম্যাটার আমি জানতে চাই না। কিন্তু যাই হোক না কেন, বেশি বাড়াবাড়ি করবি না কিন্তু, তাড়াতাড়ি সব মিটিয়ে নিস।

কুহেলি একটু অভিমানী গলায় বলল,

আমি কেন মিটাতে যাব? যে করেছে সে মিটাবে।

কুহু, অবুঝের মত কথা বলিস না।

হ্যা, তুমি তো তোমার জামাইয়ের দোষ চোখেই দেখবে না। সব দোষ তো আমারই, আমি কিছু না করলেও আমাকেই সব মিটাতে হবে।

আহা, আমি তাই বললাম? কিন্তু শোন, সবসময় অত দোষ গুণ বিচার করতে নেই। যার দোষই থাক না কেন, একজন মিটিয়ে নিলেই হল।

মা, তুমি যদি এখন এইসব কথাই বল, তাহলে আমি রাখলাম।

আরে, রাগ করছিস কেন? ঠিক আছে কিছু বলব না। শোন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন গাইনিকলোজিস্ট দেখিয়ে নে, দেরী করিস না। টেস্ট না করে কিন্তু এইসব বিষয়ে পুরোপুরি শিওর হওয়া যায় না, মানে কনফার্ম হওয়া যায় না। যদিও কোনও অভিজ্ঞ ডক্টর অবশ্যই টেস্ট ছাড়াই বুঝতে পারেন তাও এটা একটা পদ্ধতি বলতে পারিস। উইদাউট টেস্টে কেউই এখন শিওর হয়ে কিছু বলেন না, আর সেটা উচিতও নয়। তাই বলছি অ্যাস সুন অ্যাস পসিবল কোনও ভালো গাইনকলোজিস্ট দেখিয়ে নে। আর হ্যা, এখন থেকে একটু সাবধানে থাকিস, আর কাজটা পারলে কম করিস।

ঠিক আছে।

আচ্ছা, দুপুরে খেয়েছিস?

না, এখনও খাইনি।

সে কি! এখনও খাসনি কেন? আগে গিয়ে কিছু খা। এখন রাখ, আবার পরে কথা বলব।

চৈতালী দেবী কলটা ডিসকানেক্ট করে দিলেন, কুহেলি ল্যাপটপ টা সরিয়ে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে একবার নভতেজ বাবুর নম্বর টা ডায়াল করল। কিন্তু লাইনটা কানেক্ট হল না, এমন টা প্রায়ই হয়, কোথায় কোথায় যে ঘুরছেন। বেশিরভাগ সময় তো কল কানেক্ট হয় না, আজ অবধি যতবার কথা হয়েছে প্রতিবারই নভতেজ বাবুই ফোন করেছেন। কুহেলির ভারী অদ্ভুত লাগে, এমন কোথায় ঘুরছেন যে কোনো সময়ই কল কানেক্ট হয় না। কিন্তু অতোটাও গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু আজ খুব খারাপ লাগছে, এমন একটা খবর তো আগে ওনারই জানা উচিৎ ছিল। কিন্তু কীকরে জানাবে? ইশ, এখন যদি জানাতে পারত তাহলে কুহেলি নিশ্চিত উনি সব ছেড়ে কালকেই ফিরে আসতেন, কিন্তু, কি আর করা যাবে, উপায় নেই। কুহেলি ফোন টা রেখে আবার শুয়ে পড়ল, শরীর টা এখনও একটু দুর্বল লাগছে, ঘুমও পাচ্ছে। বোধহয় তখন যে ইনজেকশন টা দিলেন ডক্টর তার জন্যই হবে। কুহেলি চুপচাপ শুয়ে রইল, খেতে যেতেও আর ইচ্ছে করল না। আলেখও সেই যে বেরিয়ে গেল আর আসেনি, অদ্ভুত সে বলল একা থাকতে চায় আর অমনি একা রেখে দিয়ে চলে গেল? কুহেলির অভিমানের পাহাড় আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেল, মনে মনে বলল,

যেখানে খুশি যাক, যা খুশি করুক, আমি আর কথাই বলব না।

এদিকে আলেখ বেরিয়ে সোজা রাত্রির কাছে এসেছে, মনটা খুবই খারাপ লাগছে। ওর জন্যই কুহেলি আজ ওকে উপেক্ষা করছে, যদিও কুহেলির চোখেও কষ্টটা দেখতে পেয়েছে। ওকে কষ্ট দিয়ে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে তাও কিছুতেই ওর সঙ্গে কথা বলছে না। ওর মনে জমে থাকা অভিমানের পাহাড় যে এত তাড়াতাড়ি বিগলিত হবে না সেটা আলেখ জানে। রাত্রি তখনই কিছু একটা আন্দাজ করেছিল, আর এখন আলেখকে নিজের বাড়িতে দেখে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেল যে কিছু একটা তো হয়েছেই। আর আলেখের চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ব্যাপার টা নেহাৎ তুচ্ছ নয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তো সবই ঠিক ছিল তাহলে হঠাৎ কি হল! রাত্রি আলেখকে সোজা ছাদে নিয়ে গেল, শীতকালে সূর্য কিরণের উষ্ণ ছোয়া টা মন্দ লাগে না। দুজনে দুটো চেয়ারে বসার পর রাত্রি বলল,

কি হয়েছে আলু? এনিথিং সিরিয়াস?

আলেখ কিছুক্ষণ চুপ করেই রইল, রাত্রি আবার বলল,

দেখ, আমি বুঝতে পারছি কিছু একটা তো হয়েছেই, তোরা দুজনেই কেমন যেন একটা অড বিহেভ করছিস। বিশেষ করে কুহেলি, ওকে দেখে তো মনে হচ্ছিল রীতিমত তোকে অ্যাভয়েড করছে। আর ওর চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কোনও কারণে তোর উপরে রেগে আছে। কি হয়েছে রে? কাল পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিল। হঠাৎ এমন কি হল, যে তোদের লাইফের এত বড় একটা গুড নিউজ শুনেও তোরা এইরকম বিহেভ করছিস?

আলেখ কিছুক্ষণ থেমে সবটাই খুলে বলল রাত্রিকে। রাত্রি পুরোটা শোনার পর রেগে গিয়ে বলল,

আর ইউ ম্যাড? বলার আগে কি একবারও ভাবিস না? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া ওই সামান্য কয়েকটা কথা কুহেলিকে ঠিক কতটা হার্ট করতে পারে?

আলেখ একটু হতাশ সুরে বলল,

তুইও রাগ কর আমার উপরে, কুহেলি তো আমার মুখই দেখতে চাইছে না কথা বলা তো দূরের কথা। এবার তুইও আমার উপরে রাগ কর, আই ডিসার্ভ ইট।

রাত্রি একটু শান্ত হয়ে বলল,

ওরকম বলিস না, তুই নিজেও জানিস কুহেলি তোকে কতটা ভালোবাসে। সেখানে তুই লাইক অ্যান ইডিয়ট কি উল্টোপাল্টা কথা গুলো বলেছিস একবার ভাব।

আই নো, আমি ভুল করেছি। বাট রিতু, তুই তো জানিস হাউ মাচ আই লাভ হার। যখনই মনে হল, অন্য কেউ আমার কুহেলিকে এখনও এতোটা ভালোবাসে, বিশ্বাস কর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। কি বলেছি কি করেছি নিজেই বুঝতে পারিনি, তখন যেন আমি নিজের মধ্যেই ছিলাম না।

আই নো, বাট এটা তুই ঠিক করিস নি। দেখ, নিশ… মিস্টার আগরওয়াল সত্যিই কুহেলি কে ভালোবাসেন। আর সত্যি যদি কাউকে ভালোবাসা হয়, তাকে ভোলা টা এত সহজ নয়। আর যদি কেউ নিজেই ভুলতে না চায় তাহলে তো কোনও কথাই নেই। কিন্ত এর কোনোটাই কিন্তু দোষের নয়, তুই এটা তো নিশ্চয়ই স্বীকার করবি যে মিস্টার আগরওয়াল আজ পর্যন্ত কোনদিনও তোদের মাঝখানে আসেননি বা আসার চেষ্টাও করেননি। কি, ঠিক বলছি তো?

আলেখ শুধু নীরবে সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল। রাত্রি বলল,

তাহলে, তুই তো জানিস সবটা তাও এইরকম চাইল্ডিশ বিহেভ করলি কেন?

তোকে তো বললাম, কেন করেছি আমি নিজেও জানি না।

হুম, আচ্ছা বাদ দে, ভুলে যা। এখন তো বুঝতে পারছিস, এখানে না মিস্টার আগরওয়ালের কোনও দোষ আছে না আমার আর না কুহেলির। ইভেন তোরও কোনও দোষ নেই, কুহেলি কে এতোটা ভালবাসিস বলেই এইরকম একটা ইমপালসিভ ব্যবহার করে ফেলেছিস। কিন্তু দোষ না হলেও ভুল কিন্তু করেছিস, তাই যত তাড়াতাড়ি পারিস কুহেলির কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।

তুই কি ভাবছিস আমি ট্রাই করিনি? করেছি বাট, ও কিছুতেই শুনছে না। কথা বলা তো অনেক পরের কথা, আমার দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত।

হুম, সেটাই স্বাভাবিক। আর এই অবস্থায় তো ওর ইমোশন গুলো আরও অনেক বেশি স্ট্রং হবে। যাই হোক না কেন, হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। কিপ ট্রাইং আলু বেবি, কুহেলি তোকে যা ভালোবাসে তাতে খুব বেশিক্ষণ ওই অভিমানের ওয়াল টা টিকবে না।

রাত্রির কথায় আলেখও না হেসে পারল না। ঠিকই তো বলেছে রাত্রি, তার কুহেলি কতক্ষন তার উপর অভিমান করে থাকবে? সেও আলেখ শর্মা, এত সহজে সেও ছেড়ে দেবে না। আর না, আর এক মুহূর্তও সে তার কুহেলি আর তাদের নতুন অতিথি তাদের বেবির থেকে দূরে সরে থাকবে না। কুহেলি চাইলেও না, সেও দেখবে কুহেলি কতক্ষন তার সাথে কথা না বলে থাকতে পারে। এখন থেকে প্রত্যেকটা মুহূর্ত সে কুহেলির সঙ্গেই কাটাবে, তাতে কুহেলি যাই বলুক না কেন। কথা গুলো মনে হতেই ওর ঠোঁটের কোণায় সেই পরিচিত হাসিটা ফিরে এলো। সেটা দেখে রাত্রিরও ভালোলাগল, আলেখের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল,

এবার এখানে বসে বসে না হেসে, নিজের বউয়ের কাছে যা। দেখ গিয়ে এতক্ষণে হয়তো তোকে না দেখতে পেয়ে আরও রেগে বসে আছে। মুখে যতই বলুক দেখতে চাই না, মনে মনে সবসময় তোর সঙ্গেই থাকতে চায়। যা যা, তাড়াতাড়ি যা, শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করিস না তো।

রাত্রি প্রায় ঠেলে আলেখকে চেয়ার থেকে তুলে দিল। আলেখও উঠে হাসিমুখেই পা বাড়াল ওঙ্কার ভিলার দিকে, তার কুহেলির কাছে।

ক্রমশ_____________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

কেমন লাগছে আলেখ আর কুহেলির মান অভিমানের পালা? কি মনে হয় বলুন তো, আলেখ কি এত সহজেই পারবে কুহেলির অভিমানের বরফ গলাতে? নিজেদের মতামত জানাবেন কিন্তু, আমি প্রতিবারের মত এবারও অপেক্ষা করব। আর হ্যা, আমি প্রেগন্যান্সির বিষয়ে একেবারেই আনাড়ি, কিচ্ছু জানি না। তাই যদি কোনও তথ্য ভুল লিখে থাকি তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর আমাকে ভুলটা বলেও দেবেন কিন্তু। তাহলে আমি সেটা শুধরে নেওয়ার একটা সুযোগ পাব। আজ তবে আসি দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here