#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৭
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস
আগের পর্বের পর……………….
পরদিন সকালে অ্যালার্ম বাজতেই ঘুমের ঘোরেই এদিক সেদিক হাতড়ে হাতড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে আল্যার্মটা অফ করল দেবার্ঘ্য। বিছানায় উঠে বসে কিছুক্ষণ হাতের ফোনটার দিকে তাকিয়ে রইল, ডেটা কানেকশনটা অন করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে শেষে আঙ্গুলটা আইকন টায় ছুইয়ে দিতেই সেটার রং বদলে নীল বর্ণ ধারণ করল, আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হুড়মুড় করে কতগুলো নোটিফিকেশন এসে ফোনের স্ক্রীনটা ঢেকে ফেলল। কিন্তু সেই সব কিছু ভেদ করে স্ক্রীনের একটা কোনায় ভেসে ওঠা চ্যাট হেড টা দেখে দেবার্ঘ্যর মুখে একটা হাসি খেলে গেল। চ্যাট বক্স ওপেন করতেই কুহেলির মেসেজটা ফুটে উঠল স্ক্রীনে। সেটা পড়ে দেবার্ঘ্যর মনটা এক নিমেষে ভালো হয়ে গেল, কুহেলি নিজে থেকে বলেছে আজ রাতে কথা বলবে, এখন থেকেই মনে মনে রাতের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে লাগল সে। অত্যন্ত খুশি মনে উঠে কিচেনের দিকে এগোল, এখন চা বানাবে, ঘুম থেকে উঠে এক কাপ ধোয়া ওঠা চা না খেলে তার দিন শুরুই হয় না। এদিকে কুহেলি যথারীতি সময় মত রেডি হয়ে অফিসের ব্যাগটা আরও একবার দেখে নিচ্ছিল। গীতাও ততক্ষণে ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নিয়ে এসেছে। চটপট ব্রেকফাস্ট সেরে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল কুহেলি, আজ আগে গিয়ে মিটিং রুমটা নিজে চেক করবে, মিস্টার নবীন আগরওয়ালের মতই এই মিস্টার নিশীথ আগরওয়াল কেও তাকে ইমপ্রেস করতেই হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন একটা নিখুঁত ত্রুটি বিহীন প্রেজেন্টেশনের। আজ যদিও কোনও প্রেজেন্টেশন হওয়ার কথা ছিল না, শুধুই মিটিং হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কুহেলি আজকেই নিশীথ আগরওয়াল কে নতুন প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশন টা দেখাতে চায়। যথারীতি সময়ের আগে অফিসে পৌঁছে সব দেখেশুনে তৈরি করে নিজের ডেস্কে বসে ফাইলটা আরও একবার দেখে নিচ্ছিল কুহেলি। ইতিমধ্যেই বাকিরাও আসতে শুরু করে দিয়েছে, রুহি এসে ওর কাছে দাড়িয়ে বলল,
দি, আজকের মিটিংটা ভালোয় ভালোয় উৎরে গেলে বাচি।
তোমার বুঝি ভয় করছে?
করবে না!! যে এভাবে হঠাৎ একটা প্রজেক্ট পাল্টে দিতে পারে সে নির্ঘাৎ খড়ুস টাইপের হবে। কিছু পছন্দ না হলেই দেখা গেল আবার কি করে বসে?
কুহেলির কিন্তু খুব অদ্ভুত ভাবে আজ একটুও নার্ভাস লাগছে না, যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী সে। একটু পরেই আলেখ শর্মাও এসে গেলেন, তার কিছুপরেই অঙ্কিত এসে সবাইকে মিটিং রুমে চলে যেতে বলল। কথা মত সবাই, মানে এই প্রজেক্টের সাথে যুক্ত সবাই মিটিং রুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। সময়ের কিছু আগেই নিশীথ আগরওয়াল এসে উপস্থিত হলেন। আলেখের সঙ্গে যে ব্যক্তিটি রুমে প্রবেশ করলেন তাকে দেখে যে কেউ তাকে রূপোলি জগতের তারকা ভেবে ভুল করতেই পারে। এই অফিসের মেয়েদের হার্টথ্রব আলেখ শর্মার থেকেও অনেক বেশি হ্যান্ডসাম এই ব্যক্তিটি। কুহেলির পাশে দাড়ানো রুহির মুখটা তো রীতিমত হা হয়ে গেল, কুহেলির কনুইয়ের গুতো খেয়ে তবে বন্ধ হল। তবে দেখতে যতই হ্যান্ডসাম হোক না কেন, মুখে একটুও হাসি নেই, তার জায়গায় কেমন যেন একটা বিরক্তির ভাব ফুটে রয়েছে। আলেখ সবাইকে ওনার পরিচয় দিয়ে কুহেলিকে এই প্রজেক্টের হেড হিসেবে পরিচয় করাতেই নিশীথ আগরওয়াল বলে উঠলেন,
আই সি, সো ইউ আর মিস কুহেলি বাসু। আপনার জন্যই মিস্টার শর্মা মিটিংয়ের প্রথম ডেট টা ক্যানসেল করেছিলেন। লেটস সি আপনার উপস্থিতি এই মিটিং টাকে কিভাবে স্পেশ্যাল করে!
নিশীথ আগরওয়ালের কথার সুরে একটা অবিশ্বাসী ভাব খুব স্পষ্ট। তবে কুহেলির মধ্যে কোনও ভাবান্তর দেখা গেল না, খুব সহজ ভাবে হেসে বলল,
স্পেশ্যাল কিছু না হলেও আপনি নিরাশ হবেন না এটুকু বলতে পারি।
তাই! আপনার আগের প্ল্যানটায় কতগুলো চেঞ্জ করতে হয়েছে দেখেছেন নিশ্চয়ই।
দেখেছি, আর সেই চেঞ্জ গুলোকে মাথায় রেখেই আজকে এই নিউ প্রেজেন্টেশনটা রেডি করেছি। আশা করি এই নতুন প্রেজেন্টেশনটা আপনার পছন্দ হবে।
প্রেজেন্টেশনের কথা শুনে নিশীথ আগরওয়াল যেন বেশ অবাক হল, এত শর্ট টাইমে পুরো ব্যাপার টা বুঝে একটা গোটা প্রেজেন্টেশন রেডি করা মুখের কথা নয়, এটা একেবারেই আশা করেনি সে। নিশীথ আগরওয়ালের অবাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে আলেখের মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল, কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল,
সো মিস বাসু, দেরী কিসের? প্রেজেন্টেশন স্টার্ট করুন।
কুহেলি ঘরের লাইট বন্ধ করে প্রজেক্টর অন করে শুরু করল প্রেজেন্টেশন। পুরো প্রেজেন্টেশনটা কমপ্লিট হওয়ার পর যখন ঘরের আলো জ্বলে উঠল তখন কারো মুখে কোনও কথা নেই। কুহেলি সবার আগে নিশীথ আগরওয়ালের দিকে তাকাল, তিনি এখনও সাদা পর্দাটার দিকেই তাকিয়ে আছেন, চোখে বিস্ময়ের ভাব স্পষ্ট। আলেখও অবাক হয়ে গেছে, হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙে রুহি হাততালি দিয়ে উঠল, সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও হাততালি দিতে শুরু করল, এই তালিকা থেকে নিশীথ আগরওয়ালও বাদ গেল না। যে পয়েন্টস গুলো চেঞ্জ করা হয়েছিল সেইগুলো ছাড়াও কুহেলি আরও কিছু পয়েন্টস চেঞ্জ করেছে, যার ফলে প্রেজেন্টেশনটা অসম্ভব ভালো হয়েছে। নিশীথ আগরওয়ালের মুখে একটা সরু হাসির রেখা দেখা গেল, চেয়ার ছেড়ে উঠে সোজা কুহেলির দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। কুহেলিও ওর ডান হাতটা বাড়িয়ে করমর্দন করল, নিশীথ আগরওয়াল বললেন,
আই মাস্ট সে, আপনার উপস্থিতিতে সত্যিই আজকের মিটিংটা স্পেশাল হয়েছে। আজকে কোনও প্রেজেন্টেশন আমি আশা করিনি, আর আপনি এত ভাল একটা প্রেজেন্টেশন শো করলেন, গ্রেট।
তারপর আলেখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
মিস্টার শর্মা, ফ্রানকলি স্পিকিং আমি এই ডিল টা নিয়ে একদমই স্যাটিসফাইড ছিলাম না, কিন্তু এখন আমি খুশি এই ডিল টা হওয়ায়। আই হোপ আমাদের এই প্রজেক্টটা যখন কমপ্লিট হবে ইট উইল বি এ গ্রেট সাকসেস।
শিওর, চলুন আমার কেবিনে গিয়ে বাকি কথা হবে।
নো, নো, আমাকে দিল্লী যেতে হবে, একঘন্টা বাদেই ফ্লাইট, আমি এক্ষুনি বেরোব।
ওকে দেন চলুন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসছি।
এইখানে মিস্টার নিশীথ আগরওয়াল একটি অদ্ভুত প্রস্তাব করলেন।
নো মিস্টার শর্মা, আমি চাই মিস বাসু আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসুন, আই হোপ ইউ ডোন্ট মাইন্ড।
হঠাৎ এরকম একটা প্রস্তাবে আলেখ আর কুহেলি দুজনেই অবাক হয়ে গেল, আলেখ একবার কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল,
নো, নো, এতে মাইন্ড করার কি আছে? মিস বাসু আপনি মিস্টার আগরওয়ালকে এগিয়ে দিয়ে আসুন।
কুহেলি সম্মতি জানিয়ে নিশীথ আগরওয়ালকে নিয়ে লিফটের দিকে এগোল। লিফট আসলে মিস্টার আগরওয়াল প্রথমে ওনার অ্যাসিস্ট্যান্ট আর ম্যানেজারকে পাঠিয়ে দিলেন, যদিও লিফট টা যথেষ্ট বড়, খুব সহজেই চারজন যাওয়া যায় কিন্তু নিশীথ আগরওয়াল গেলেন না। পরেরবার কুহেলি আর মিস্টার আগরওয়াল লিফটে উঠলেন, লিফট তার নিজস্ব গতিতে নিচের দিকে নামতে লাগল, কুহেলি এতক্ষণ একটাও কথা বলেনি, নিশীথ আগরওয়ালই আগে কথা বললেন,
সো মিস কুহেলি বাসু, ইউ আর বেঙ্গলি রাইট?
ইয়েস স্যার।
হুম, কলেজ লাইফে আমার একজন বেঙ্গলি ফ্রেন্ড ছিল, অল্প সময়ে খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গিয়েছিল, তারপর ঠিক কবে যে কানেকশনটা ব্রেক হয়ে গেল মনে নেই।
কুহেলি কিছু না বলে শুধু একটু হাসল, হঠাৎ নিজের বন্ধুদের কথা কুহেলিকে কেন বলছেন সেটা তার বোধগম্য হল না। নিশীথ আগরওয়াল আবার বলতে শুরু করলেন,
আই মাস্ট সে, আপনারা বেঙ্গলিরা খুব ইন্টেলিজেন্ট হন, শুভ্র মানে আমার সেই ফ্রেন্ড, সেও ভিষন ইন্টেলিজেন্ট ছিল। আমি যতদূর জানতাম আপনার কালকে জয়েন করার কথা ছিল, রাইট?
ইয়েস স্যার।
আপনি এত শর্ট টাইমে এরকম একটা প্রেজেন্টেশন রেডি করে ফেলবেন আমি একেবারেই আশা করিনি।
কুহেলি এবারও কিছু বলল না, আসলে এই কথার ঠিক কি উত্তর দেওয়া যায় সেটা বুঝে উঠতে পারল না। ইতিমধ্যে লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে পৌঁছে গেল, মিস্টার আগওরয়ালের গাড়ি আগে থেকেই ওয়েট করছিল, কুহেলি ওনাকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিল। নিশীথ আগরওয়াল গাড়িতে উঠতে গিয়েও ফিরে কুহেলির দিকে তাকিয়ে বললেন,
আমার সহজে কাউকে পছন্দ হয় না, এখনও পর্যন্ত খুব কম মানুষই আমাকে ইমপ্রেস করতে পেরেছে, অ্যান্ড ইউ আর ওয়ান অফ্ দেম।
বলে কুহেলিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়িটা চোখের নিমেষে বেরিয়ে গেল। কুহেলি কিছুক্ষণ হতভম্বের মত দাড়িয়ে থেকে আবার অফিসে ফিরে এল, নিজের চেয়ারে বসা মাত্রই রুহি প্রায় লাফিয়ে এসে বলল,
ওয়াও দি, তুমি এত শর্ট টাইমে এরকম একটা প্রেজেন্টেশন বানিয়ে ফেললে!! ইভেন নিশীথ আগরওয়াল পর্যন্ত ইমপ্রেস হয়ে গেলেন। ইউ আর জাস্ট অসাম।
থাক, আর এত প্রশংসা করতে হবে না, তুমি তো নিশীথ আগরওয়াল কে দেখেই ফ্ল্যাট হয়ে গিয়েছিলে, মুখটা তো বন্ধই হচ্ছিল না।
যা বলেছ দি, কি দারুন দেখতে। আমি সত্যিই ফ্ল্যাট হয়ে গিয়েছিলাম, এই তোমাকে কি বললেন?
কি আবার বলবেন?
রুহি যেন একটু হতাশ হয়ে বলল,
কিছুই বলেননি? তাহলে স্পেশালি তোমাকে যেতে বললেন কেন?
আমি কীকরে বলব বল তো?
কুহেলি নিশীথ আগরওয়ালের শেষ কথাগুলো বলল না, নিজেই এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। ওরকম একজন বিজনেস টাইকুন হঠাৎ এত ইম্প্রেসড হয়ে গেল!
রুহি হঠাৎ জিভ কামড়ে বলে উঠল,
এই যা, স্যার তুমি আসলে তোমাকে ওনার কেবিনে পাঠিয়ে দিতে বলেছিলেন, আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।
কুহেলি এটা শুনে সোজা আলেখের কেবিনে এসে নক করল, আলেখ ওকে ভিতরে ডেকে বসতে বলে, কোনরকম ভনিতা ছাড়াই বলল,
মিস বাসু, আপনি প্রেজেন্টেশনটা এত ভালো করবেন এটা আমিও আশা করিনি। আমি জানতাম আপনি একটা ভালো প্রেজেন্টেশন ঠিকই করবেন কিন্তু আপনি যেটা করেছেন এটা তো জাস্ট ফ্যবুলাস।
কুহেলি হেসে বলল,
কিছুই না স্যার, একটা জেদ চেপে গিয়েছিল, তবে আই অ্যাম রিয়েলি গ্রেটফুল টু মিস্টার নিশীথ আগরওয়াল, উনি আগের প্ল্যানটা চেঞ্জ না করলে আমি এই প্ল্যানটা রেডি করতে পারতাম না।
দ্যটস রাইট। ও, উনি কি আপনাকে কিছু বলেছেন?
কুহেলি আলেখকেও কিছু বলল না, আসলে এই কথার আর কি বলবে!
না স্যার, তেমন কিছুই না, আমার কাজের প্রশংসা করেছিলেন।
হুম, সেটাই স্বাভাবিক, ওকে মিস বাসু তাহলে নিউ প্ল্যান ওয়াইজ কাজ শুরু করে দিন।
কুহেলি সম্মতি সূচক একটা উত্তর দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসছিল, আলেখ আবার পিছন থেকে বলে উঠল,
আর হ্যা, আজকে আর লাঞ্চটা স্কিপ করবেন না।
কুহেলি পিছন ফিরে একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বেরিয়ে এল। না, আজ আর সত্যিই লাঞ্চ স্কিপ করেনি কুহেলি, নির্দিষ্ট সময়ে লাঞ্চ সেরে আবার কাজে লেগে গিয়েছিল। ঘড়ির কাটায় পাঁচটা বাজলে একে একে অফিস খালি হতে শুরু করল, কুহেলিও আজকে আর ওভারটাইম করল না, প্রয়োজন নেই। হাতের কাজটা সেরে বেরোতে সোয়া পাঁচটা বাজল, আজ দারুন খুশি লাগছে মনটা হঠাৎ খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে, অনেকদিন আইসক্রিম খাওয়া হয় না। যেমন ভাবা তেমন কাজ, কাছেই একটা আইসক্রিম পার্লার আছে, হেঁটেই সেখানে পৌঁছে গেল কুহেলি। একটা ফাঁকা টেবিলে বসে ওর ফেভারেট ব্ল্যাক ফরেস্ট সানডে অর্ডার করল। অর্ডার আসতে একটু সময় লাগবে সেটা ও জানে তাই ফোনটা বের করে ডেটা কানেকশনটা অন করল। তেমন কোনও মেসেজ নেই শুধু অফিসের গ্রুপটাতে আজকের মিটিং নিয়ে বেশ একটা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে, আর মেয়েরা নিশীথ আগরওয়ালের লুকস নিয়ে পুরোদমে আলোচনা চালাচ্ছে। এইসব ছেলেমানুষী দেখলে কুহেলির খুব হাসি পায়। হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে এবার ফেসবুকে লগ ইন করতেই দেবার্ঘ্যর কথা মনে পড়ল, আজকে রাতে ওকে ফোন করার কথা। দেবার্ঘ্যরও এতক্ষণে অফিস শেষ হয়ে গেছে মনে করে এক্ষুনি ওকে কল করবে ঠিক করল, কনট্যাক্ট লিস্টে দেবার্ঘ্যর নামটা খুঁজে নিয়ে কল করতে কুহেলির সময় লাগল ঠিক দশ সেকেন্ড। কল কানেক্ট হওয়ার পর ঠিক দুটো রিং হতেই ওপাশ থেকে দেবার্ঘ্যর আওয়াজ ভেসে এল।
অবশেষে টাইম হল তাহলে?
হুম, হল বলেই তো কলটা করলাম।
এসেই এত বিজি?
হ্যা, আর বলবেন না, অফিসে ফিরেই একটা বিরাট শক পেয়েছিলাম।
তাই? কি শক শুনি।
ওই কাজেরই, বাট এখন আর কোনো চাপ নেই।
যাক, তাহলে তো ভালই।
হুম, শুধু ভাল না, খুব ভালো।
বাব্বা, দারুন খুশি মনে হচ্ছে, কি ব্যাপার?
কুহেলি মোটামুটি সংক্ষেপে গোটা ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল, শুনে দেবার্ঘ্য বলল,
এত দারুন ব্যাপার, গ্রেট।
ইয়েস।
ওদের কথার মাঝেই কুহেলির আইসক্রিম এসে পড়ল, একটা চামচে অল্প একটু আইসক্রিম মুখে দিয়ে একটা তৃপ্তির শব্দ করল কুহেলি। দেবার্ঘ্য বলল,
কি খাওয়া হচ্ছে?
আইসক্রিম, খাবেন?
কীকরে খাব? তুমি তো আর আমাকে বলনি।
এখন বলছি চলে আসুন।
দেবার্ঘ্যর সত্যিই ইচ্ছে হল চলে যেতে কিন্তু সেটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে মনে করে বলল,
থাক আজকে, অন্য একদিন না হয় দেখা যাবে।
কুহেলি আবার খেতে খেতে ঠিক কথা বলতে পারে না, আর এদিকে আইসক্রিম তো আর ফেলে রাখা যায় না, তাই বাধ্য হয়ে দু চারটে কথা বলে ফোনটা রেখে সম্পূর্ণ মনটা আইস্ক্রিমের দিকে দিল। আইসক্রিম পার্লারটার সামনেই একটা ট্রাফিক সিগন্যাল, বেশ একটা ব্যস্ত চৌমাথার মোড়ে হওয়ায় পার্লারে সবসময় বেশ ভিড় থাকে। আজকেও ভিড় আছে তবে অত নয়, এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকজন বসে আইসক্রিম খাচ্ছে। কুহেলির অবশ্য তাদের কারো দিকেই নজর নেই, আইসক্রিম ওর সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য বস্তু, তার উপর আবার অনেকদিন পর খাচ্ছে তাই অন্যদিকে তাকানোর কোনও ইচ্ছে ওর নেই। সামনের সিগন্যাল টায় একটা গাড়ি এসে দাড়াল, সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ হওয়ার অপেক্ষার ফাঁকে এমনিই খেয়াল বশে গাড়ির চালক একটু এদিক ওদিক তাকাতেই রাস্তার পাশের আইসক্রিম পার্লারের স্বচ্ছ কাচের ওপারে বসা কুহেলিকে দেখতে পেল। একমনে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে, অল্প অল্প করে আইস্ক্রিমের প্রতিটা কণা উপভোগ করছে, মুখে একটা পরম পরিতৃপ্তির হাসি, সেই হাসিটা কেমন করে যেন গাড়ির চালকের ঠোঁটেও ছড়িয়ে গেল। পিছনের গাড়ির হর্নের আওয়াজে চমকে সামনে তাকিয়ে সেই চালক দেখল সিগনালের আলো কখন যেন সবুজ হয়ে গেছে, এখন এগিয়ে যেতে হবে, চালকের চোখ জোড়া আরও একবার কুহেলিকে দেখে নিল, তারপর গাড়িটা এগিয়ে গেল সামনের দিকে।
ক্রমশ_______________
© স্বত্ব সংরক্ষিত
নতুন চরিত্র নিশীথ আগরওয়াল, কেমন লাগল তাকে? এরও কি কোনও ভূমিকা আছে কুহেলির জীবনে? কি মনে হয় আপনাদের, জানাবেন কিন্তু কমেন্টে। অন্যদিকে ধীরে ধীরে দেবার্ঘ্য আর কুহেলির সম্পর্কটাও আগের থেকে সহজ হচ্ছে, দুজনের মনেই কিছু অজানা অনুভুতির আনাগোনা শুরু হয়েছে, যদিও দুজনেই সেটা জানলেও এখনও সেভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। আদৌ কি বুঝবে ওরা? এদিকে কে যেন আবার গাড়ির মধ্যে থেকে কুহেলির দিকে তাকিয়ে ছিল, সে কে? কত প্রশ্ন, জানি সব নাহলেও কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনারা জানেন। আমাকে বলুন তো দেখি কতটা মেলে আমাদের চিন্তা ধারা। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকব কিন্তু। ভালো লাগুক মন্দ লাগুক আমাকে জানাতে ভুলবেন না। দেখা হবে আগামী পর্বে, ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।