সংসর্গ (পর্ব ৪) ফ্যান্টাসি_গল্প তুষার_আব্দুল্লাহ_রিজভী

সংসর্গ (পর্ব ৪)
ফ্যান্টাসি_গল্প
তুষার_আব্দুল্লাহ_রিজভী

কিছুদিন কেটে গেল। সেদিনের ঘোর এখনো কাটেনি শুভ্রের। মেয়েটার জ্ঞান ফিরছে আবার চলে গেছে। শুভ্রও মেয়েটার সামনে না যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় মনে করে দূরে থাকলে তা বেশিদিন চলেনি। মেয়েটা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে গেছে। মেয়েটার পরিপূর্ণ যত্ম নিয়েছে শুভ্রের পরিবার।

এর মাঝে একদিন দেখা হলো মেয়েটার সাথে শুভ্রের। মেয়েটা তখন আগের মতো করেনি। তার শরীর কাঁপেনি। ঠিক ছিল। সেদিন মেয়েটা কথা বলেছিল কিছু সময়। পরিচয় হয়েছে তাদের বলা যায়। একে অপরকে চেনে এখন। মেয়েটার নাম অরিন।

শুভ্র অরিনকে পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। গ্রামের মানুষগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। অনেক মিশুক স্বভাবের অরিন। হাসিখুশি থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সৌন্দর্যের দিক থেকে কোনো দেবীর থেকে কম নয় সে।

মেয়েটাকে সুস্থ হতে দেখে শুভ্রকে জানায় অরণ্যে ঘুরিয়ে আনতে। এতে মন ভালো হয়ে যাবে আরো। হয়তো মেয়েটাও সুস্থ বেশি অনুভব করবে। এক জায়গায় পড়ে থেকে থেকে বিরক্ত সবারই লাগার কথা। সেখানে সুন্দর কোমলমত চেহারার মেয়েটার বিরক্ত লাগারও কথা অস্বাভাবিক নয়।

আজ অরণ্যে নিয়ে এসেছে অরিনকে শুভ্র। শুভ্র যেখানে এসে গান গায় ঠিক সেই জায়গায়৷ শুভ্র প্রথমে একটা গান গেয়ে নিল। অরণ্যের সব পশুপাখিগুলোকে একত্রে দেখে অরিণের মন ভরে উঠল খুশিতে। এমন পরিবেশ আগে কখনো দেখেনি এমন মনে হলো শুভ্রের কাছে। এতো হাসি খুশি আজ দেখল অরিনকে। অরণ্যের পশুপাখির সাথে খেলতে লাগল অরিণ।

অরিন শুভ্রে কাছে আসতেই শুভ্র বলল, “আপনাকে তো এভাবে না দেখলে বোঝায় যেতো না আপনি অনেক চঞ্চল।”

অরিন বলল, “তাই বুঝি। তবে আপনার গানের গলাটা সুন্দর, মনোমুগ্ধকর, শ্রুতিমধুর।”

শুভ্র লজ্জাবোধ করে বলল, “আরে না। তেমন না। আমি আসলে এই অরণ্যকে গান শোনাতে ভালোবাসি। এখানকার সব কিছুই এতে খুশি হয়। তাই গাই প্রতিদিন এখানে এসে। তবে এর বাহিরে গান গাই না। আর গল্প করি।”

আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল অরিন, “অরণ্যের সাথে কীভাবে গল্প করেন?”

“আপনি যেভাবে কিছুক্ষণ আগে ওদের সাথে খেললেন। আমিও ওভাবেই করি। অরণ্য আমার ভালো বন্ধুও।”

“আচ্ছা। বুঝলাম।”

“আরো বুঝে যাবেন কিছু সময়ের মধ্যে।

শুভ্র গুহার নিচে এসেছিল। আবার উপরে উঠতে উঠতে বলল, “আচ্ছা গুহার উপরে আসুন এখানে বসে বসে গল্প করি। ভালো লাগবে।”

শুভ্র কথা বলতে বলতে গুহার উপরে উঠে গেছে। অরিনও না করল না। পশুপাখির সাথে খেলতে খেলতে সেও অনেক ক্লান্ত। গুহার উপরে উঠে গেল।

শুভ্র জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা আপনি এখানে আসলেন কী করে? যতদূর জানি এখানে কেউ আসে না বা এখানকার বাহিরে মানুষ আছে বলে তো মনে হয় না।”

অরিন হাসল। বলল, “আপনাদের এই জায়গাটা বেশ সুন্দর। তবে এর বাহিরেও অনেক কিছু আছে। আপনারা জানেন না সেটা। আপনারা অনেক কিছুই জানেন না যেটা আমি জানি। আর এখানে আসার আমার একটা উদ্দেশ্য আছে।”

শুভ্র আশ্চর্য হয়ে গেল কথাগুলো শুনে। বলে উঠল, “যেমন?”

অরিন বলল, “আপনাদের এইখানে তো বাহিরের দুনিয়ার তুলনায় কেবল একটু জায়গা মাত্র। সেটাকেই ঘিরে বেঁচে আছেন সকলে। মানুষও খুব কম। আর এটাকে ঘিরে রেখেছে পাহাড় গুলো চারদিক থেকে। যেটার ওপাশে যাওয়া নিষেধ যতদূর জানি।”

“মানে আপনি বলতে চাইছেন এই পাহাড়গুলোর ওপাশে বিশাল জগৎ আছে, তাই তো।”

“হ্যাঁ, সেখানেও মানুষ আছে, বহু মানুষ। হিসেব করে শেষ করতে পারবেন না।”

“তাহলে আমাদের এখানে আজও কেউ আসলো না কেন বা যাওয়ার সাহস করে না কেন?”

“আমি সবি জানি। আমার উদ্দেশ্য আছে এখানে আসার। বললামই তো। বড়ো উদ্দেশ্য হলো আপনাকে নিয়ে যাওয়া, মাসেহ।”

“কী বলছেন? সব জানেন মানে বুঝলাম না? আর আমার নাম শুভ্র, মাসেহ না।”

শুভ্র অরিনের কথা যত শুনছে তত অবাক হচ্ছে। কী বলছে মেয়েটা এসব। সব শোনার আগ্রহ জন্মাচ্ছে কথায় কথায়।

অরিন বলল, “জানি আমি। আপনার জীবন আমার সাথে জুড়ে আছে সেটা জানেন?”

“কী আবল-তাবল বলছেন। এটা কিভাবে সম্ভব?”

“আমি ঠিকি বলছি। আপনি আমাকে প্রায় স্বপ্নে দেখেন। আমিও দেখি আপনাকে। যেমনটা আমাকে উদ্ধার করেছিলেন ঠিক তেমনি। স্বপ্নে উদ্ধার করতে গিয়েও পারেন না।”

“কীভাবে সম্ভব এসব!?”

“কারণ আমি সব জানি। আপনি আমার সংসর্গ মাসেহ।”

“বুঝতে পারছি না কিছুই বুঝিয়ে বলবেন কী?”

“অবশ্যই। শুনুন তাহলে,” অরিন একটু থেমে আবার বলতে লাগল, “আমি ওসপপুরের রাজকন্যা। আমার বাবা সেখানকার রাজা ছিলেন। আমার যেদিন জন্ম হয় সেদিন আপনারও জন্ম হয়। কাকতালীয় হলেও এটা সত্যি। আপনার সাথে আমার ভাগ্য জুড়ে দেয় দেবী কথনকুপ। আমার বাবা কথনকুপের পূজারি ছিলেন। দেবী সব জানিয়ে রাখে বাবাকে। একদিন বিশাল এক বিপত্তি আসবে আমাদের রাজ্যে। সেদিন আপনি আমারে রক্ষা করতে পারবেন। আপনিই এক মাত্র পারবেন এই বিপদ দূর করতে।”

“কিন্তু আমি কেন? আর কিসের বিপদ?”

“আপনি হলেন পবিত্র রক্ত। আপনাদের গ্রাম হলো বাহিরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা গ্রাম। দেবী স্বয়ং নিজে আপনাদের রক্ষা কর্তি। বাহিরের দুনিয়ার থেকেও আপনাদের আলাদা রাখার কারণ হলো আপনাদের মাঝে কিছু শক্তি লুকায়িত আছে। যদি কেউ তা একবার আবিষ্কার করতে পারে, পুরো পৃথিবী ধ্বংস হতেও সময় লাগবে না। তাই আপনাদের সুরক্ষা করে আলাদা করে রেখেছেব দেবী। যাতে আপনাদের এখান থেকে কারো কোনো ক্ষতি না হয়। দেবীর অনুমতি ৬৬৬ জন মানুষকে তার অধীনে রাখার। তাই কেউ জন্ম নিলে এখানে একজনকে নিয়ে যায় স্বয়ং মৃত্যু দেবতা। আর বিপদের কথা বলতে, আমার বাবা ন্যায় পরায়ণ একজন রাজা। তার রাজ্যে না চুরি আছে না কেউ না খেয়ে দিন পার করত। কিন্তু বাবার বড়ো ভাই এসব সহ্য করতে পারতেন না। ছোটো বেলা থেকেই বাবাকে দেখতে পারতেন না। কিন্তু বাবার ন্যায় নিষ্ঠার জন্য বাবার বাবা তাকে রাজা ঘোষণা করেন। কিন্তু বাবার বড়ো ভাই ক্ষোপ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে বুঝায় সব ঠিকঠাক। সেও মেনে নিয়েছে সব। কিন্তু সে চাল চালে পরবর্তীতে। কয়েক বছর যাবার পর সে বাবার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে। বাবাকে হত্যা করে। তারপর আমাকে আর আমার মাকে আটকে রাখে। আমার মাকে কয়েকদিন পর বের করে নিয়ে যায়। তারপর তাকে বিয়ে করে। জোর করে বিয়ে করে। পরবর্তীতে দেবী একদিন দেখা দেন। তিনি আমাকে সব জানান। আপনার কাছে পৌঁছানোর রাস্তা করে দেবেন দেবী নিজেই৷ কিন্তু আমার চাচা প্রাসাদে পাহাড়ের ব্যবস্থা আরও বাড়িয়ে দেন। আমিও বের হতে পারছিলাম না। দেবী তার দৈব শক্তি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতেন। এতে তার শক্তি কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে। আমাকে মেরে ফেলা তো আমার চাচার কাছে যেন স্বাভাবিক বিষয়। তাই একদিন আমার কামরায় এসে আমাকে খড়গের আঘাত করলেন পেটে। তারপর কেমন জানি বাতাসের সৃষ্টি হলো। আমি যেখানে পড়ে গিয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলাম তখন সেখানে গোলাকৃতি একটা গভীর গর্তের সৃষ্টি হলো। চারপাশে বাতাসের বেগ বাড়তে থাকল। আমি সেই গর্তে একটা চিৎকার করে পড়ে গেলাম আর তারপর এখানে। এরপর যা হয়েছে তা দেখেছেন আর বুঝেছেন আশা করি।”

“হ্যাঁ, তা বুঝেছি। কিন্তু আপনি এখানে এলেন ঠিক আছে ফিরবেন কীভাবে?”

“আপনি নিয়ে যাবেন।”

“সেটা কীভাবে?”

“দেবী কথনকুপের মূর্তির পায়ের তলে একটা গোপন রাস্তা আছে। আর সেখানে গ্রন্থাগার। সেখানকার কোনো বইয়ের পাতায় পেয়ে যাবেন রাস্তা।”

“আপনি এসব জানলেন কীভাবে?”

“ওই যে বললাম, দেবী কথনকুপ আমাকে সব বলেছে। আর আপনি নন আমিও স্বপ্ন দেখতাম আপনাকে। আপনাকে বাঁচাতে দেখতাম। দেখতাম রক্ষা করতে আসছেন কিন্তু কোনো ক্রমে রক্ষা করার আগেই ঘুম ভেঙে যেতো। দেবী নিজে সেদিন দৈব শক্তি ব্যবহার করে এখানে পাঠিয়ে দেন এই অবস্থাতেও। দেবীর কী অবস্থা সেটা এখনো জানি না। নিষেধ বলে কথা ছিল এটা।”

শুভ্র সব বুঝতে পারল। সব বুঝে নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে বলল, “তাহলে এখন আমাকে কী করতে হবে?”

“আপনি আমার সাথে যাবেন। তারপর সেই রাজাকে ধ্বংস করবেন। সবাইকে মুক্তি দেবেন এই অশান্তি থেকে, এই শত্রুর হাত থেকে। সে রাজা হওয়ার পর থেকে অবিচার জুলুমের শিকার হয়েছে প্রজাগণ।”

“যদি না পারি।”

“না পরলে কী আর করার, আপনার আমার মৃত্যু ঘটবে। কারণ আপনি আমার সংসর্গ। যদি ব্যর্থ হন তাহলে দেবী দুজনের জীবনকে ফেরত নেবেন। আর আপনাকে স্বয়ং দেবী বেছে নিয়েছেন।”

“না, এ হতে দেবো না। আপনার মতো সৌন্দর্য আর কোমল মেয়েকে মৃত্যু কখনোই সময়ের আগে হাতছানি দিতে পারবে না। না পারবে সেই রাজা কারোর প্রতি আর জুলুম করতে।”

“তাহলে আমাদের রক্ষা করুণ মাসেহ।”

“হ্যাঁ করব। আমার জীবন দিয়ে হলেও সকলকে রক্ষা করে ছাড়ব।”

শুভ্রের চোখেমুখে একটা ভয়ানক দৃষ্টি অবলোকন করল অরিন। এই দৃষ্টিটা তার একদম অচেনা-অজানা। হঠাৎ অরিনের ভেতর কেমন একটা উত্তেজনা কাজ করল। ভালোবাসার টান এটা। তখন অরিন নিজেকে সামলাতে পারল না। মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল শুভ্রের মুখের সামনে। তারপর শুভ্রের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুম্বন আঁকতে শুরু করল অরিন। শুভ্রও নিজেকে সামলাতে না পেরে চুম্বন আঁকতে শুরু করল।

সিজন ১ (সমাপ্ত)

(বি:দ্র: এই গল্পের প্রথম সিজন শেষ হলো। পরের সিজন লিখতে বেশ সময় লাগতে পারে। কারণ অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এটা তো মাত্র শুরু হলো। সেগুলো সংগ্রহ করতে বেশ কিছু বই ঘাটতে হবে। আশাকরি সব সংগ্রহ করে খুব শীঘ্রই দিতে পারব পরের সিজন। ভুলত্রুটি মার্জনীয়। অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগল। ধন্যবার)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here