সত্য পিঞ্জর পর্ব : ২

0
1036

‘সত্য পিঞ্জর’
পর্ব ২.
তাবিনা মাহনূর
__________

জামিল স্ত্রীর প্রতি বিরক্ত হয়ে বললো, ‘তুমি এ কাজটা কীভাবে করলে আনিকা? একটা মেয়েকে এভাবে বিব্রত করার কোনো দরকার ছিল?’

আনিকা কৈফিয়তের সুরে বললো, ‘আমি আসলে ওর দিকে তাকিয়ে অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলাম। কত মিষ্টি মেয়েটা, অথচ জীবনের কোন ঠিকানা নেই।’

– তাই বলে ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চাইবে? এরপর যে মেয়েটা উঠে গেল, এই অপমান নিতে ভালো লাগলো তোমার?
– আহা আপনি রাগ করছেন কেন? আমার পুরো কথাটা শোনেন আগে। মেয়েটা অপমান করলো কোথায়? আমি যখন প্রশ্ন করেছিলাম, সে উত্তর না দিয়ে সবজির পাকোড়া আর পায়েস নিয়ে এসেছিল। হাসিমুখে খেতে বলেছিল। রান্নাঘর থেকে চা নিয়ে আমার সামনে দিয়েছিল।

তবু জামিলের মন মানে না, ‘তুমি একদম শিশুর মতো আনিকা। মেয়েটা এভাবেই অপমান করেছে তোমাকে। সে কি ঝগড়া করবে নাকি! মেয়েটা কি তোমাকে বলেছে একবারও, আপু আপনি ছয় বছর পর বাচ্চা নিলেন কেন? এতোদিন কি সমস্যা ছিল?’

আনিকা স্বামীর হাত ধরে বললো, ‘সত্যিই, এসব কোনো প্রশ্ন করেনি। কত মানুষ আমাকে কত কথা বলেছে!’

জামিল বললো, ‘সেদিন আমার সামনেই আমার আত্মীয়া তোমাকে বন্ধা বলে কষ্ট দিলো। এসব তোমার বেশি কথা বলার অভ্যাসের কারণে হয়েছে। বলার কি দরকার ছিল যে তোমার ইউটেরাসে সিস্ট আছে? এই সিস্ট যে তেমন ক্ষতি করে না এটা আর কে বোঝাবে উনাদের!’

জামিল আনিকার প্রতি অত্যন্ত দুর্বল আর যত্নশীল। আনিকাকে কষ্ট দিয়ে কথা বললে সে বেশ রেগে যায়। আনিকা সেটা বুঝতে পারে। সে হেসে জামিলের কাঁধে মাথা রেখে বললো, ‘এগুলো বাদ দিন। আপনি আমার ভাইয়ের জন্য পাত্রী খুঁজে বের করুন।’

জামিল চুপ করে আছে। তার স্ত্রী খুব সুন্দর করে ঝগড়া থামাতে জানে। এই বৈশিষ্ট্যটা তাদের দাম্পত্য জীবনকে শান্তিময় করে তোলে।
আনিকা বললো, ‘আপনার বন্ধু শিহাব তার বউ আর বোন নিয়ে একবার আমাদের বাসায় এসেছিল। ওই মেয়েটার খোঁজ নিন। আমার ভালো লেগেছিল মেয়েটাকে।’

– সতীন বানাবে?

চমকে তাকালো আনিকা, ‘মানে?’

জামিল স্ত্রীর ভয়ার্ত মুখ দেখে উচ্চস্বরে হেসে বললো, ‘দুষ্টুমি করলাম।’

আনিকা জামিলের বাহুতে ইচ্ছেমতো আঘাত করলো। হাসতে হাসতে তার হাত দুটো আঁকড়ে ধরে জামিল বললো, ‘আর কোনো কথা নয়!’

_____

রাতের মক্কা দেখতে অসাধারণ মোহনীয়। হোটেলের রুম থেকে কৃত্রিম আলোয় আলোকিত মক্কা দেখতে ভালোই লাগছে আরশের। তবে সে কল্পনা করছে আকাশের তারার আলোর উজ্জ্বলতায় মিশে থাকা দালানবিহীন মক্কাকে। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচরণ করেছেন, সাহাবীরা তার সাথী হয়ে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন।

মোবাইলে ম্যাসেজের আওয়াজ এলে মনোযোগ ভাঙলো তার। ফোন হাতে নিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে এলো। একটু আগে সে তার অনুভূতি সম্পর্কে ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়া যেন তারা আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি হজ ও উমরায় মনোযোগী হয়ে থাকে। আরশ প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি করে থাকে। এজন্য কখনো কখনো নারী ফিতনা তাকে ঘিরে ধরে। এই যেমন এখন, একজন তথাকথিত দ্বীনি বোন তাকে ইনবক্সে ম্যাসেজ করেছে, ‘আপনার অনুভূতি কত নির্মল!’

আরশের ইচ্ছে হলো ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে, ‘আমার অনুভূতি নির্মল নাকি পাখির মল, সেটা আপনি কীভাবে জানবেন?’ কিন্তু এসব লেখা মানেই শয়তানকে আরো বেশি প্রশ্রয় দেয়া। সে মেয়েটার আইডিতে গিয়ে ব্লক করে দিলো। একটা সামান্য ম্যাসেজের কারণে কাউকে ব্লক মারা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের। আরশ কাউকে এগুলো বলে না। তবে তার ধারণা, মানুষ এসব শুনলে বলবে, ‘ভাই, এতোই যখন সমস্যা তখন ফেসবুক লক করে রাখলেই পারেন।’

সে মনে মনে উত্তর তৈরি করে রেখেছে, ‘কিছু ভাই বোন আছেন যারা ফলো করে উপকৃত হন। রাজ-নীতি, আইন, ইসলামী আইন আর রাষ্ট্রীয় আইন- এ সব জানতে অনেকেই ইনবক্সে প্রশ্ন করতেন। একই প্রশ্ন বারবার আসতো বলে পোস্ট হিসেবে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে দিই যাতে মানুষ তা দেখে জানতে পারে। এ কারণে এখন এসব বিষয়ে কেউ বারবার ম্যাসেজ করে না। যেগুলো জানতে চায় সেগুলো আমার জানা না থাকলে বিভিন্ন বই পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

কিন্তু সে যেহেতু কাউকে দ্বীনি বোনদের ফিতনা নিয়ে কিছুই বলেনি, তাই এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। তবে ব্লক করার বিষয়টা শুরুতে ছিল না। তার প্রোফাইলের বায়োতে লেখা আছে, ‘বোনেরা ম্যাসেজ দেয়া থেকে বিরত থাকুন।’

সেই হিসেবে এক বোন তাকে ভিডিও কল করেছিল সরাসরি। সে চমকে উঠে তা কেটে দিয়েছিল। হাতের চাপে ধরে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যেত! প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সে ম্যাসেজ দিয়েছিল, ‘সমস্যা কি আপনার?’

মেয়েটার উত্তর ছিল, ‘ম্যাসেজ দিতে মানা করেছেন তাই কল দিলাম।’

এরপর থেকে প্রতিটা মেয়েকে সে ব্লক করে দেয় সীমা লঙ্ঘন করার পূর্বেই। কমেন্ট সেকশন ফ্রেন্ডস করে দেয়া তাই মেয়েদের কমেন্ট করার উপায় নেই। তবু শয়তান পিছু ছাড়ে না। সে ছোট এক শ্বাস ফেলে মনে মনে এসব মেয়েদের হিদায়াতের কামনা করে রাজীবকে ফোন করলো। রাজীব তার সহকর্মী। ফোনে টুকটাক আলাপ শেষে সে জানালো তার বাংলাদেশে ফেরার কথা।

রাজীব বললো, ‘তাহলে এখনই বলে দিই কথাটা। যেহেতু তোমার ওখানকার কাজ শেষ।’

– কি কথা রাজীব ভাই?
– রাশেদ স্যার তোমাকে নিয়ে অন্য পরিকল্পনা করে রেখেছেন।

ভ্রু কুঁচকে এলো আরশের, ‘কী পরিকল্পনা?’
– তোমাকে একটা মামলায় কাজ করতে হবে। তাই সিআইডি ডিপার্টমেন্ট এ পাঠাবে।

স্বস্তির শ্বাস ফেললো আরশ। সে ভেবেছিল ঝামেলায় জড়িয়ে ফেলেছে তাকে। অথবা চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে। মনে মনে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করে সে বললো, ‘গুরুতর কেস নাকি?’

– না, আবার হ্যাঁ। বেশ দৌড়াদৌড়ি আর দক্ষতার কাজ আছে এখানে, তরুণ ডিটেকটিভ লাগবে। এজন্য পুলিশের পোশাক ছেড়ে এখন সিআইডির পোশাক পরতে হবে তোমাকে।
– তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যাটা কি নিয়ে?

– আজিমপুর কবরস্থান নিয়ে। ওখানে অনেক ক্রাইম বাড়ছে। কিছুদিন আগে ওখানকার বাসিন্দা নোটিশ পাঠিয়েছে যে কবরস্থানের দেয়াল ভেঙে গিয়েছে। সেদিক দিয়ে চোর-ডাকাত, মদখোর, এরা রাতের বেলা প্রবেশ করে। তাই রক্ষীরা টের পায় না। আর টের পেলেও কিছু করার নেই। বললেই এক পোচ মেরে গলা ফুঁড়ে দিবে। আর একারণেই গত সপ্তাহে দুটো লাশ পাওয়া গিয়েছে যেটা নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে।
– ঠিকাছে ভাই। দেশে ফিরে বাকিটা শুনছি।

ভদ্রতার আলাপ সেরে ফোন রাখলো আরশ। ক্রিমিনলজি বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরিটা পেয়েছে সে। তার সুন্নী দাড়ি আর টাখনুর উপরে রাখা ফরমাল প্যান্ট কেউ ভালো চোখে দেখে না। তাকে সৎ সাহস জুগিয়েছিলেন ইহসান স্যার। যিনি এই বিভাগে দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে দ্বীন মেনে চলছেন আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে। ছোট সমস্যার সম্মুখীন হলেও বড় কোনো হুমকি তার দিকে ধেয়ে আসেনি কখনোই। কিন্তু তিনি এখন ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জে আছেন। তাই অনুপ্রেরণার বাণী আরশের নিজের কাছ থেকেই নিতে হয়। মন থেকে সে তাওয়াক্কুল রেখে নিজেকে প্রতিনিয়ত আশ্বাস দিয়ে থাকে।

হঠাৎ করেই মনে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা। দৃষ্টির হেফাজত করতে যেখানে হিমশিম খেতে হতো, সেখানে নারীরা প্রকাশ্যে তাদের সৌন্দর্য দেখিয়ে বেড়াতো। তার মাঝেই একবার ভুল করে দেখে ফেলেছিল একজনকে। একবার ভুল করে দেখে ফেললে তাতে ক্ষমা পাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেই দেখাটা ছিল অন্যরকম। একবারই তাকিয়েছে সে, বেশ সময় নিয়ে। যখন মেয়েটা তার দিকে তাকিয়েছিল তখনই সে চোখ নামিয়েছিল। একবার, শুধু একবারই দেখেছিল। কিন্তু বেশ খানিকটা সময় নিয়ে!

শুধু নামটা জানা ছিল। এছাড়া একজন অন্য নারীর সম্পর্কে আর কিছুই জানার আগ্রহ ছিল না তার। তারপরও মনের মাঝে সেদিন শয়তানি ওয়াসওয়াসা চললো। তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে সিজদাহয় গিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলো সে। প্রাণ ভরে দুআ করলো, যেন ওই এক পলক দেখা চেহারাটা সে ভুলে যেতে পারে। পরেরদিন সে জানতে পারলো, মেয়েটা তার পরিচিত ব্যাচমেটের প্রেমিকা। মুহূর্তেই মন থেকে মুছে গেল সবকিছু।

এরপর থেকে আলহামদুলিল্লাহ, তাকে কোন নারীর ছলনা স্পর্শ করতে পারেনি। সে ঊনত্রিশ বছরের যুবক। গাম্ভীর্যের আড়ালে থাকা হৃদয় গহীনের শূন্যতা সে বুঝতে পারে। আল্লাহর প্রতি ভরসা ও তাঁর রহমত আছে বলেই সে নিজেকে হেফাজত করতে পারছে।

_____

‘সুন্দরী, প্রেয়সী!
যাই ডাকি না কেন, সে যে রূপসী।
সব বিশেষণ হার মানে তার কাছে,
হৃদয়টাও যে তারই কাছে পরে আছে!
সে যে একটাই তারা, আমার রিশতা!’

গিটারের তালে গেয়ে ওঠা গানটা ঠিক সামনে বসে কেউ গাইছে। রিশতা একদম খেয়াল করেনি ব্যাপারটা। প্রতিদিন ক্লাস শেষে সে এই দিকের নির্জন জায়গাটায় বসে পড়াশোনা করে। হলের চেয়ে এই পরিবেশটা তার বেশি পছন্দ। যদিও এখানে আশেপাশে প্রেমিক প্রেমিকার সংখ্যা বেশি। এ কারণেই জায়গাটা নিরিবিলি আর ঝামেলা মুক্ত মনে হয় রিশতার। কেউ কারো দিকে খেয়াল করে না। সে এক কোণায় বেঞ্চের উপর বসে নোট করে। পড়াশোনা ছাড়া তার জীবনে আর কিছুই নেই।

আজকে সঙ্গী হিসেবে মিরা তার পাশে ছিল। পড়তে পড়তে হঠাৎ গানের আওয়াজ ভেসে আসলে সে ভেবেছিল এটা মিরার প্রেমিকের কাজ। তাই কোনোদিক না তাকিয়ে পড়ার বই আর খাতায় মুখ গুজে ছিল সে। যখন মনে হলো, গানটা তার মনোযোগে সমস্যা করছে তখন সে উপরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। এই ক্যাম্পাসের সবচেয়ে পরিচিত মুখ, গায়ক রুদ্র ভাইয়া বসে আছে তার সামনে। পিছে ভাইয়ার বন্ধুদল। রুদ্র তাকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে থেমে গেল। রিশতা পেছন ফিরে দেখলো, মিরা তার পিছে নেই। বিস্ময় নিয়ে বললো সে, ‘গানটা ইনাম ভাই গাইছিল না?’

মুহূর্তেই হাসির ফোয়ারা জেগে উঠলো। মিরা এসে তার মাথায় টোকা দিয়ে বললো, ‘এত বোকা কেন তুই? গানের মাঝে কতবার রিশতা নামটা ব্যবহার করেছে খেয়াল করিসনি?’

রিশতার বাকি স্মৃতি খুব ভালো মনে নেই। সেদিন রুদ্র বেশ কষ্ট পেয়েছিল তার আচরণে। সে খারাপ ব্যবহার করেনি, কিন্তু রুদ্রকে তখনই মেনে নেয়নি।

রুদ্র খুব কষ্ট পেয়েছিল কারণ গানটা সে শুধু রিশতার জন্য লিখেছিল। রিশতার প্রতি তার দুর্বলতা সে বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছে। এক সময় রিশতাকে মেনে নিতে হয়েছে রুদ্রর ভালোবাসার জোর। আর এটা টিকে ছিল স্বাধীনতা নামক দ্বিধায় মোড়ানো অনুভূতির কারণে।

স্বাধীনতা। এই একটা শব্দের কারণে রুদ্র আর রিশতার সম্পর্কে ছিল না কোনো তর্ক-বিতর্ক। তারা একে অপরের সিদ্ধান্তকে শুধু সম্মান নয়, স্বাধীনতা দিয়ে থাকতো। যেমন রিশতা। সে চেয়েছিল পড়াশোনার সময়ে যেন এতটুকু অভিযোগ না তুলে রুদ্র। রুদ্রর মনটা বারবার তাকে দেখতে চাইলেও কখনোই মুখ ফুটে তা বলতো না সে। আর রুদ্র ছিল চেইনস্মোকার। গানের পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে মাঝে মাঝে মদের আসর জমাতেও তার জুড়ি ছিল না। এগুলো নিয়ে সচেতনতা বলতে, রিশতা শুধু স্বাস্থ্যের দিকটা খেয়াল রাখতে বলতো। এছাড়া জোড়ালো ভাবে মানা করেনি সে। এটা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়ে যায় যা তারা দুজনেই অপছন্দ করতো।

অথচ এখনকার ভাবনায় কত তফাৎ! রিশতা এখন বুঝতে পারে, সবসময় স্বাধীনতা ভালো নয়। কিছু সময় পরাধীনতা খুব বেশি প্রয়োজন। এই পরাধীনতা হলো যত্নের, সম্মানের। স্বাধীনতা কিংবা মুক্তি শ্রদ্ধার বিষয় মনে হলেও তাতে ভালোবাসা নেই। সেখানে শুধু নিয়মের মাঝে চলা, নিয়ম করে কথা বলা। এই বুঝি কিছু একটা বলে ফেললাম আর তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করে ফেললাম! এটা কেমন স্বাধীনতা!

কিন্তু ভালোবাসার যত্নে গড়ে তোলা পরাধীনতায় কোনো নিয়ম নেই। অন্তর থেকে যেই ভাবনা মুখ ফুটে বলতে ইচ্ছে করে, সেটাই বলে দেয়া যায়। একটু ভালোবেসে বলা যায়, ‘আজ পড়াশোনা থাক না?’ অভিমান নিয়ে বলা যায়, ‘আপনি ওই মেয়ের দিকে তাকালেন কেন? আমি দেখেছি, আমার শকুন দৃষ্টি দিয়ে!’ আর নয়তো দুজনই একে অপরের প্রতি অধিকারবোধ থেকে বলবে, ‘ভালোবাসি!’

নাকি ‘ভালোবাসি’ বলাটাও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?

‘না! আমার জীবনকে আপনি কেন ভালোবাসবেন?’
কেউ কি এটা বলে?

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা এখন শুধু জৈবিক চাহিদার জন্য। সংসারকে তারা প্রতিযোগিতার অঙ্গন মনে করে, যেখানে তারা দুজন প্রতিযোগী। রিশতা আর রুদ্রর সম্পর্কও এমন ছিল বলে তারা দুজনই দুজনকে স্বাধীনতা দিয়েছে। কি জঘন্য সিস্টেম!

ভাবতে ভাবতে কখন যে ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে, রিশতা টের পায়নি। সে ওযু করে সালাত আদায় করলো। সালাত পড়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ঘুম আসছে না তার। বারবার মনে হচ্ছে, তার জীবনটাও পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়ে যাবে। সেটা খুব বেশি যত্নের, ঠিক এখনকার রিশতা যেমন চায়।

বিছানায় উঠে বসলো রিশতা। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বললো, ‘এমনটা কেন মনে হচ্ছে আল্লাহ?’

_____

(ইন শা আল্লাহ চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here