সত্য পিঞ্জর পর্ব : ৩

0
728

‘সত্য পিঞ্জর’
পর্ব ৩.
তাবিনা মাহনূর

__________

ঢাকায় ফেরার তৃতীয় দিন অফিসে গেল আরশ। এই দুইদিন আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে গিয়ে সময় পার হয়ে গিয়েছে। সৌদি থেকে ফিরলে সবার জন্য অবশ্যই জমজমের পানি আর খেজুর আনতে হয়, এটা অলিখিত নিয়মে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও কাছের মানুষদের জন্য মুসাল্লা এনেছেন নাজিফা। এগুলো যখন মানুষকে দেয়া হয়, তখন খুব শান্তি পান তিনি। মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর আনন্দ অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না।

অফিসে গিয়ে রাজীবকে দেখে সালাম দিয়ে আলিঙ্গন করলো আরশ। হাতে থাকা প্যাকেট তাকে দিয়ে বললো, ‘ভাই, সামান্য কিছু জিনিস এনেছি।’

রাজীব প্যাকেট হাতে নিয়ে বললো, ‘জমজমের পানি আছে তো?’
– জি ভাই।
– ওটাই অসামান্য আরশ। এই একটা জিনিস আনলে আর কিছু লাগে না।

কথোপকথন শেষে আরশ রাশেদের কেবিনে গেল। দরজা খুলতেই রাশেদ তাকে দেখে হাসিমুখে বললেন, ‘ভালোই ট্যুর দিয়ে আসলে আরশ?’

রাশেদ আধুনিক মুসলিম। সালাত আদায় করেন না, রমাদানে সিয়াম রাখেন না, সুন্নত মেনে চলেন না কিন্তু বিপদ দেখলে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে যান। অবশ্য বিপদে আল্লাহকে তিনি স্মরণ করেন, এটাই অনেক বিস্ময়ের বিষয়। এমন মানুষগুলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে, ভরসা করে। তাদেরকে আন্তরিকভাবে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া হলে অনেকেই হিদায়াতের সন্ধান পেয়ে যেতেন। তবে হিদায়াত সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সম্মানিত করেন, যাকে ইচ্ছা তাকে লাঞ্ছিত করেন। মানুষ শুধু চেষ্টা করতে পারে।

রাশেদকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে আরশ বললো, ‘আপনার জন্য স্যার।’
রাশেদ বেশ খুশি হয়ে একটা খেজুর মুখে দিয়ে হাতের ইশারায় আরশকে বসতে বললেন। আরশ বসলে তিনি তার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানালেন।

– উমরা করে এসে শরীর ভালো আছে তো?
– আলহামদুলিল্লাহ, উমরা করে আরো বেশি সুস্থ মনে হচ্ছে নিজেকে।
– আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে আমরা এখন অফিসিয়াল কথাবার্তায় চলে আসি।
– জি।

রাশেদ খাওয়া শেষ করে মূল আলাপে মনোযোগী হলেন, ‘তুমি এই বিভাগে নতুন। মাত্র এক দেড় বছরের যাত্রা তোমার। কিন্তু এর মাঝেই কাজের প্রতি তোমার প্রবল আগ্রহ আমি সহ উপর মহলের লোকেরা পর্যবেক্ষণ করেছে। তাই আজিমপুরের কেসটা তোমাকে ডিল করতে হচ্ছে। এটা আমার সিদ্ধান্ত। এখন তুমি বলো, তুমি কি চাইছো?’

আরশ বললো, ‘আমার আপত্তি নেই স্যার। কিন্তু ঘটনাটা যদি পরিষ্কার জানতে পারতাম আমার জন্য সুবিধা হতো।’

– শোনো, আজিমপুর কবরস্থানে অনেকদিন ধরেই ক্রাইম চলছে। এটা নতুন কিছু নয়। তাই কারো মাথা ব্যথা ছিল না এই নিয়ে। সমস্যা বেঁধেছে সামনের ইলেকশন নিয়ে। এবারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলেকশনে আজিমপুর যেই ওয়ার্ডের অধীনে, সেখানে দুজন বেশ ক্ষমতাশালী মানুষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন। তাদের মধ্যে আফজাল হক এতদিন সেখানকার কাউন্সিলর ছিলেন। কিন্তু ইলেকশনে উনার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লাবিব মোর্শেদ উনার সমকক্ষ। তাই এই দুজনের মাঝে মনঃযুদ্ধ চলছে।

আরশ প্রশ্ন করলো, ‘কেউ কি আফজাল হককে ফাঁসাতে চাইছে?’

রাশেদ মুচকি হেসে বললেন, ‘আরশ, এগুলো খুবই সাধারণ বিষয়। আজিমপুর কবরস্থানে নেশাখোরদের আড্ডা, খুন, লাশের হাড় চুরি- এসব নিত্যনতুন ঘটনা নয়। কত কাউন্সিলর গেল, কত আসলো! কেউই এ ব্যাপারে মাথা ঘামায়নি। কারণ স্থানীয় মানুষ সচেতন হয়নি কিংবা এসব নিয়ে ভাবার সাহস পায়নি। এখন নতুন করে কেন এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত করতে হচ্ছে অনুমান করতে পারছো?’

আরশ ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘বিরোধী দলের প্রতি ক্ষোভ কিংবা ইলেকশনে বিজয় নিশ্চিত করা?’

– আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানো? লাবিব আর আফজাল একই দলের পদপ্রার্থী। এ কারণে ঝামেলা বেশি পোহাতে হচ্ছে। আমরা তো তাদের দাস। এখন আমাদেরকে যে কিনে নিবে, আমরা তারই হতে বাধ্য। কিন্তু সমস্যা হলো নির্বাচন নিয়ে। যাকেই আমরা অপরাধী হিসেবে দেখাই না কেন, সে যদি ইলেকশন জয়ী হয় তাহলে আমাদের চাকরি তো থাকবেই না, উল্টো প্রাণ নিয়ে আশংকায় থাকতে হবে।

আরশ বুঝতে পারলো, এই বিভাগে এতদিন তাকে নোংরা রাজ-নীতিতে জড়াতে হয়নি। কিন্তু সামনের পরিস্থিতি অনুকূলে নাও থাকতে পারে।

– কিন্তু যাকে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে থাকতে দেখবো, তাকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করলে নিশ্চয়ই তার হার নিশ্চিত?

রাশেদ হতাশ হয়ে বললেন, ‘তুমি এতো বোকা কেন আরশ?’

আরশের নিজেকে সত্যিই বোকা মনে হচ্ছে। যদিও সে কারণটা জানে না। রাশেদ বললেন, ‘নির্বাচন কীভাবে হয়?’
চুপ করে আছে আরশ। রাশেদ বললেন, ‘অবশ্যই জনগণের ভোটেই হয়। দেয়ালেরও কান আছে, জানো তো?’
আরশ মুচকি হাসলো। রাশেদও হেসে বললেন, ‘যাই করো না কেন, আমরা মাইনকার চিপায় ফেঁসে যাবো।’

আরশ আবার হেসে ফেললো। মুচকি হাসিটা ধরে রেখে সে বললো, ‘আমাদের তাহলে কি করা উচিত স্যার? অন্যায় দেখেও না দেখার ভান করবো?’

রাশেদ বললেন, ‘এজন্যই আমি একটা পরিকল্পনা করেছি। তোমাকে এএসপির পোশাক ছেড়ে এখন সিআইডির পোশাক পরতে হবে।’

আরশ সম্মতি জানিয়ে বললো, ‘আমি প্রস্তুত আছি।’

_____

স্কুল থেকে ফিরে গোসল সেরে নিলো রিশতা। স্কুলে ক্লাস নাইন-টেনের বাচ্চাদের বাংলা পড়াতে গিয়ে সে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ে। বাংলা বিষয়টা তার অপছন্দের। সে পড়াশোনা করেছে আইন বিভাগে। এই বিভাগে প্রায় এক বছর চাকরি করার পর ছেড়ে দিয়েছে। এখানে শুধুই দুর্নীতি। রিশতার ইচ্ছে ছিল ব্যারিস্টার হওয়ার। উচ্চ পদে যেতে হলে অতিরিক্ত তেল মারা ও চাপাবাজি শিখতে হবে, সেই সাথে অপরাধকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করা হয়, সেখানেই এই বিষয় দুটিকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে, তা মেনে নিতে কষ্ট হয় রিশতার। বাধ্য হয়েই মনকে শিক্ষকতার দিকে ফিরিয়ে নিলো সে। অন্যায়ের মাঝে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

গোসল সেরে যুহরের সালাত আদায় করে ভাত খেয়ে নিল সে। আজমেরী গিয়েছেন বোনের বাসায়। মর্জিনা খালা ঘুমিয়ে আছেন। খাওয়া শেষে রিশতা শশুরের ঘরে উঁকি দিলো। হিশাম সাহেবের চোখ খোলা। তারমানে তিনি ঘুমাননি। তিনি শুধু চোখ আর মুখ নাড়াতে পারেন। হাত-পা নাড়ানো, কথা বলা- সম্ভব হয়নি উনার। রিশতা হাসিমুখে বললো, ‘বাবা, আলুর দম দিয়ে রুটি খাবেন?’

হিশাম একবার চোখের পলক ফেললেন। এর অর্থ ‘হ্যাঁ’। রিশতা দ্রুত খাবার আনলো। হিশামের পিঠ বাঁকিয়ে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো সে। আলুর দম চটকে রুটির ছোট্ট টুকরা দিলো যেন চিবিয়ে খেতে না হয়। হিশাম অবশ্য বেশি খেতে পারলেন না। বমি করে ফেললেন। রিশতার দিকে করুণ চোখে তাকালেন তিনি। রিশতা হেসে বললো, ‘বাবা, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি কি বকা দিব আপনাকে? আমি তো আপনার মা।’

শশুরের জামা পরিষ্কার করে বিছানা পরিষ্কার করলো রিশতা। ঘরে গিয়ে আবার গোসল করলো সে। মনে পড়লো, হিশামকে খাবার পানি দেয়া হয়নি। গ্লাসে পানি নিয়ে ঘরে গেল সে। হিশামের চোখ ভর্তি অশ্রু। তা দেখে রিশতা বললো, ‘এই রোগের উছিলায় আল্লাহ আপনার গুনাহ মাফ করে দিবেন ইন শা আল্লাহ।’

রিশতা চোখের পানি মুছে দিয়ে পেছন ফিরে দেখলো, মর্জিনা খালা পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। সে বললো, ‘খালা খেয়েছিলেন?’
– হ্যাঁ খাইছি।
– আচ্ছা, সালাত পড়ে নিন।

মর্জিনা ভেতরে এসে হিশামকে দেখলেন। তারপর হেসে হেসে বললেন, ‘ভাইজান, বৌমা কি সারাজীবন এখানে থাকবে?’
হিশাম চুপ করে তাকিয়ে থাকলেন। মর্জিনা কি বলতে চাইছে সেটা তিনি বুঝতে পারলেন না। মর্জিনা আবার বললো, ‘আমরা যদি বৌমাকে বিয়ে দিই, তাহলে আপনি রাজি হবেন ভাইজান?’

দ্রুত পলক ফেললেন হিশাম। ঘন ঘন পলক ফেলার কারণে তার চোখে আবার জলের দেখা মিললো। তিনি উত্তেজিত হয়ে মুখ নাড়াতে লাগলেন। খুব চেষ্টা করলেন কিছু বলতে, কিন্তু মুখ দিয়ে ফ্যানা ছাড়া আর কোনো শব্দ বের হলো না।

রিশতা মর্জিনার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘খালা! আপনি এমন মজা করবেন না অসুস্থ মানুষটার সাথে। যান সালাত পড়ে নিন। সময় চলে যাচ্ছে।’

মর্জিনা যাচ্ছেন আর হাসতে হাসতে বলছেন, ‘মেয়ে মানুষ বিয়ে ছাড়া চলা মুশকিল। আমি নাহয় হিজড়া, তাই বিয়ে ছাড়া চলতেছি। কিন্তু তুমি যা সুন্দরী!’

আজমেরী বেগমের এই কাজটার জন্য রিশতা তাকে আলাদা সম্মান দিয়ে থাকে। তা হলো, মর্জিনার মতো একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে বাড়িতে আশ্রয় দেয়া। অবশ্য এর পেছনে একটা কারণ আছে। আজমেরীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় হন মর্জিনা। এজন্য উনার ভাষা আঞ্চলিক নয়। গায়ের গড়ন শক্তিশালী আর কন্ঠ মোটা হওয়ায় তার পরিবার তাকে নিয়ে সন্দেহ করেছিল। ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি কিছু টেস্ট দেন। এরপর যখন তার সমস্যা ধরা পড়ে, তখন তাকে নিয়ে আলোচনা হয় যে তাকে কোথায় রেখে আসা উচিত হবে। সেসময় আজমেরী দূর সম্পর্কের এই বোনকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন।

আর এতে লাভ হয়েছে তারই। কেননা ঘরে তিন জন পুরুষ। তার হাতের কাজে সাহায্য করার মতো কাজের মেয়ে রাখতে তিনি সাহস পেতেন না। যতই হোক, তিনি নিজের সন্তানদের বিশ্বাস করতেন না এসব ব্যাপারে। হিজড়া হওয়ায় এসব ঝামেলা থেকে চিন্তামুক্ত থাকতেন তিনি।

আছরের সালাত আদায় করে রিশতা একবার আনিকাকে দেখতে যাওয়ার কথা ভাবলো। বাসায় সে একাই থাকে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের একা থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবু উপায় নেই বলে আনিকার দিন কাটে একা। রিশতা মর্জিনা খালাকে বলে উপরে চলে গেল। আনিকা দরজা খুলে মুচকি হেসে বললো, ‘আসসালামু আলাইকুম রিশতা। এসো, ভেতরে এসো।’

দুজন মিলে বিভিন্ন গল্পে মেতে উঠলো। আনিকার কাছ থেকে সাহাবীদের সম্পর্কে জানতে খুব ভালো লাগলো রিশতার। আজ সে সাহাবিয়া খানসা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) এর জীবনী শুনলো। তাঁর চার সন্তান যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দৃঢ় তাকওয়ার অধিকারিণী এবং গর্বিত মা।

গল্পের এক ফাঁকে আনিকা রান্নাঘরে গেল চা বানাতে। তাকে সাহায্য করতে রিশতাও চলে গেল। রিশতা চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে। গল্প যা হয়, আনিকাই বলে। রিশতা সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনে। কলিং বেলের আওয়াজ এলে আনিকা বললো, ‘তুমি দাঁড়াও, আমি দেখি কে এসেছে।’

রিশতা তাকে থামিয়ে বললো, ‘আপনি বেশি চলাচল করবেন না আপু। আমি দেখছি।’

_____

আরশের অপেক্ষা শেষে দরজা খুলে গেল। আরশ মুচকি হেসে একবার উপরে তাকিয়ে দ্রুত দৃষ্টি নামালো। সে ভুল দেখেছে কিনা বুঝতে পারছে না। এই চেহারা গত পাঁচ বছর আগে একবার দেখেছিল, তাও আল্লাহর কাছে কত দুআ করেছিল ভুলে যেতে। সে ভাবছে, অন্য মেয়েকে হয়তো রিশতা ভেবে নিয়েছে। দুই ধাপ পেছনে গিয়ে নম্বরপ্লেট দেখলো সে। ঠিকই আছে, 4-A লেখা। সামনে থেকে আওয়াজ এলো, ‘আপনি কি আনিকা আপুর কাছে এসেছেন?’

রিশতার কন্ঠ চেনা নেই আরশের। কখনোই কথা হয়নি তাদের। সেই একবার শুধু দেখেছিল। চেহারাটা মনে রাখার একটাই কারণ, সবুজাভ চোখটা। মেয়েটার নাম যেমন উর্দু, দেখতেও পাকিস্তানিদের মতো।

নিচে তাকিয়ে উত্তর দিলো আরশ, ‘জি।’

– তাহলে ঠিক জায়গাতেই আছেন। ভেতরে আসুন।
– আপু কোথায়?
– রান্নাঘরে।

রিশতা পথ ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। আরশ ঢুকলো না। আনিকা যতক্ষণ না তার সামনে এলো, ততক্ষণ পর্যন্ত সে দাঁড়িয়ে থাকলো। আনিকা ভাইকে দেখে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো, ‘তোর না সন্ধ্যার সময় আসার কথা ছিল?’

আরশ ভেতরে ঢুকলে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেল আনিকা। কিন্তু সে দুই হাত উপরে তুলে বললো, ‘আপু! আমি হাত মুখ না ধুয়ে তোমাকে ধরবো না। ধরলে বাবুর ক্ষতি হতে পারে।’

ভাইয়ের সচেতনতা দেখে হেসে ফেললো আনিকা। রিশতার খুব ভালো লাগছে। তার আপন ভাই বোন নেই। থাকলে ছায়ার মতো পাশে থাকতো হয়তো! আরশ ফ্রেশ হতে গেলে রিশতা বললো, ‘আমি এখন আসি আপু।’

আনিকা চা নিয়ে এসে বললো, ‘আসি মানে? চা না খেয়ে যেতে দিচ্ছি না। আমার ভাইকে নিয়ে টেনশন করো না। ও খুব শালীন আর ভদ্র। বখাটে টাইপের না।’

– না আপু, আমি এটা ভেবে বলিনি। আপনারা ভাই-বোন সময় দিন নিজেদের।
– আমাকে নিতে এসেছে ও। বাসায় গেলে সবসময় একসাথে থাকা যাবে। এখন চা খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?

কাপে এক চুমুক দিয়ে রিশতা মিষ্টি হেসে বললো, ‘মা শা আল্লাহ! আপনার চা দারুণ হয়েছে আপু।’

আরশ কথোপকথন শুনতে পেয়ে সেদিকে আর গেল না। রিশতা চা খেয়ে চলে গেল। এবার ভাইকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে গেল আনিকা। স্যান্ডউইচ আর কেক দিয়ে ভাইয়ের পাশে বসলো সে। আরশ খেতে খেতে প্রশ্ন করলো, ‘ভাইয়া জানে আজ তুমি আমার সাথে ধানমন্ডি যাবে?’

– হ্যাঁ জানে। তিনি মহা খুশি, বউকে আর একা থাকতে হচ্ছে না।
– একা কোথায় ছিলে? গল্পের মানুষ আছে দেখছি।
– আরে না, প্রতিবেশীরা প্রতিদিন আসে নাকি? তাও রিশতা আজ এলো আমার বাবু পেটে বলে। নাহলে ওর সাথে মাসে একবারও কথা হয় না।

রিশতা! সে তাহলে ভুল দেখেনি। তবে এ নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। মেয়েটা রুদ্রর গার্লফ্রেন্ড ছিল। হয়তো এখন বিয়ে হয়েছে তাদের। তার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল আনিকার কথা শুনে।

– মায়া লাগে মেয়েটাকে দেখলে। বিধবা হয়ে ছয়টা মাস ধরে একা একা চলছে।

বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো আরশ, ‘রুদ্র মারা গিয়েছে?’

_____

(চলবে ইন শা আল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here