সবটা অন্যরকম♥ পর্ব_৪৪

সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_৪৪
Writer-Afnan Lara
.
খালামণি উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।আরেকটু কাছে এসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি।
-একদম সাদাতের মতন দেখতে লোকটা।নাম ও সাদাত বললো।দিবাকে জানাতে হবে আমায়।এক্ষুনি
.
সাদাত স্যার মাইকটা ধরলেন কথা বলার জন্য ঠিক সেসময়ে তার চোখ পড়লো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটির উপর।তাকে স্যার ভালো মতন চেনেন।
-উনি তো মৌসুমীর বড় বোন মৌ আপা।উনাকে তো আমি চিনি!কতবার দেখেছি।উনি এখানে!!
.
খালামণি ছুটে গেলেন দিবাকে খুঁজতে।সাদাত স্যার ও মাইক রেখে ছুটলেন ওদিকেই
.
-দাঁড়ান মৌ আপা!!
.
খালামণি থেমে পিছন ফিরে তাকালেন।সাদাত স্যার ছুটে আসতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেলেন।হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন”আপনি মৌ আপা না?”
.
খালামণি কপালের ঘাম মুছে বললেন”হ্যাঁ”
.
-কেমন আছেন আপনি?
.
-ভালো!
.
খালামনি কিছু বলতে পারছেন না।কি থেকে কি শুরু করবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না উনি।সাদাত স্যার হেসে বললেন”আমায় চিনতে পেরেছেন নাকি চেনেন নাই”
কথাটা বলে সাদাত স্যার তার চোখের চশমা খুললেন
এরপর আবারও হেসে বললেন”আগের সাদাত তো পরিপাটি ছিল এখনকার সাদাত বড়ই বেসামাল লোক”
.
দিবা কলির কাজটা করে এদিকে এসে বললো”স্যার কেমন আছেন?”
.
-আরে দিবা যে
.
-স্যার,উনি আমার খালামণি।।খালামণি ইনি হলেন আমাদের সাদাত স্যার।
.
“খালামণি” কথাটা শুনে সাদাত দিবার দিকে চোখ বড় করে তাকালো।এরপর চোখটা নামিয়ে নিয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন”মৌসুমীর মেয়ে তো ভারী সুন্দর।তবে ওর চেহারার মতন লাগে না।দেখতে একদম….
.
কথা শেষ না করতেই সাদাত দিবার গায়ে থাকা লাল শাড়ীটার উপর নজর রাখলো।যত প্রশ্ন আছে সব ঘুরপাক খাচ্ছে চোখের সামনে।খালামণি মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছেন।
দিবা কৌতুহল নিয়ে বললো”স্যার আপনি আমার মাকে চেনেন?”
.
সাদাত স্যার মুচকি হেসে বললেন”হুম চিনি,খুব ভালো করেই চিনি”
.
খালামণি ঢোক গিলে দিবার হাতে মিনিকে দিয়ে বললেন”সাদাত!!জানো ও কে?”
.
-মৌসুমীর মেয়ে।তাই তো?বেশ দেখতে হয়েছে।শাড়ীটাতে ভালোই লাগছে।কিন্তু জসিমের মতন লাগে না।কার মতন হয়েছে?ওর দাদুর মতন নাকি?
.
খালামণি দিবার কাঁধে হাত রেখে বললেন”ও তোমার আর মৌসুমীর মেয়ে”
.
সাদাত স্যারের হাতে থাকা চশমাটা পড়ে গেলো নিচে।দিবা খালামণির দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো তারপর দূরে সরে গেলো।তার মানে এই সেই সাদাত
.
সাদাত স্যার ছলছল চোখে দিবার দিকে তাকিয়ে আছেন
খালামণি হেসে বললেন”আশ্চর্য হলে??নাকি বিশ্বাস করতে চাও না?
আমার বোনের সাথে কি কি করেছো তা তো তুমিই জানো।সেটার ফল স্বরুপ দিবা এই পৃথিবীতে এসেছে এবং আজ তোমার সামনে সে।
জসিমের মেয়ে নয় বরং ও তোমার নিজের মেয়ে।তোমারই রক্ত।
.
দিবার চোখে পানি।দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে।মাথা ঘুরছে তার।বেসামাল হয়ে পড়ে যেতে নিতেই আহনাফ এসে ধরলো ওকে
.
-কি হলো দিবা?তুমি ঠিক আছো?
.
দিবা মাথা ধরে বললো”আমায় এখান থেকে নিয়ে যান প্লিস”
.
আহনাফ মায়ের দিকে তাকালো।মা ইশারা করলেন চেয়ারের দিকে।আহনাফ ওকে নিয়ে চেয়ারে বসালো
দিবা মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে।সাদাত স্যার দিবার থেকে চোখ সরাতে পারছেন না।পাঁচ মিনিট ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে দিবার কাছে এসে দাঁড়ালেন
হাঁটু গেড়ে নিচে বসলেন।দিবার হাত আলতো করে ছুঁয়ে সাদাত স্যার বললেন”সত্যিই কি তাই মানুষ বলতো তোমার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক আছে কিনা?কথাটা তাহলে সত্যি?এই কথাটা মৌসুমী আমায় জানায়নি কেন?”
.
কথাটা চিৎকার করে বললেন স্যার
.
দিবা উঠে পিছিয়ে গিয়ে বললো”কেন বলতো??কাকে বলতো?যে তাকে ঠকিয়েছিল?বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল??যার ভুলের মাশুল আমার মাকে অন্য একটা বিবাহিত লোককে বিয়ে করে দিতে হয়েছিলো???
যার কারণে আমার মায়ের মুখের হাসি চলে গেছে চিরজীবনের জন্য??”
.
সাদাত স্যার কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছেন না।হাউমাউ করে শুধু কেঁদেই যাচ্ছেন তিনি
খালামণি এগিয়ে এসে বললেন”দিবা তো ঠিকই বলছে।তুমি মৌসুমীকে বের করে দিয়েছিলে আর ও কনসিভ করার কথা তোমায় বললে তুমি তোমার মাকে উপেক্ষা করে বুঝি আবার মৌসুমীকে ঘরে তুলতে??
মাকে যখন এতই ভয় পাও তো কি দরকার ছিল মৌসুমীকে নিয়ে যাওয়ার?”
.
দিবা চোখ মুছে মিনিকে ঝাপটে ধরে চলে গেলো গেটের দিকে।বাসায় ফিরে যাবে সে।এখানে আর এক মূহুর্ত ও থাকা তার পক্ষে সম্ভব নাহ
.
আহনাফ ছুটে গিয়ে ওকে থামালো
.
-কি?আমি বাসায় যেতে চাই।পথ ছাড়ুন আমার
.
-না।এতদিন পর তোমার বাবাকে পেয়েছো।একবার জড়িয়েও তো ধরতে পারো
.
-উনি আমার বাবা নন।কোনো অধিকার নেই তার আমার উপর।নামেই বাবা উনি।এতদিন পর এসে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলে আমি গলে যাব?আপনি জানেন না কত বাজে সিচুয়েশনে আমি বড় হয়েছি।
.
-জানি।তোমার কষ্টের দিন শেষ দিবা।
.
-না শেষ নয়।উনাকে দেখে আমার সেই কষ্ট গুলোর কথা মনে পড়ে বুক ফেটে কান্না আসছে।আমি থাকতে চাই না এখানে
.
দিবা হনহনিয়ে চলে গেলো বাহিরের দিকে
আহনাফ ফোন বের করে আরিফকে ফোন করলো ভার্সিটিতে এসে মাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য
ও দিবাকে আনতে যাচ্ছে
আরিফ ঠিক আছে বলে রওনা হয়েছে
এদিকে আহনাফ দিবাকে আটকানোর চেষ্টা করছে শুধু
.
সাদাত স্যার নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে খালামণির সামনে এসে বললেন”মৌসুমী কোথায়?”
.
-খুলনাতে।
.
-তাহলে দিবা এখানে কেন?
.
-সে অনেক কাহিনী।একটা বাবা হারা মেয়ের জীবন কেমন তা দিবাকে দেখলেই মানুষ বুঝতে পারবে।মৌসুমীর চেয়েও দিবা বেশি স্ট্রাগল করেছে এবং করছে ওর জীবনে
তার সব দায়ভার শুধু তোমার
তোমার করা একটা ভুল মৌসুমীর জীবনের সাথে সাথে দিবার জন্ম থেকে সব সুখ নষ্ট করে ফেলেছে।মেয়েটা বাধ্য হয়েছে আমার বাসায় এসে থাকতে।
.
-আমি জানতাম না দিবার কথা।কখনও শুনি ও নাই।জানলে কিছু একটা করতাম আমি।মৌসুমীর দরকার ছিল আমায় কথাটা জানানোর।দিবা আমার মেয়ে!!
.
-জানাবেই বা কিভাবে।তুমি ওকে বের করে দেওয়ার পরে বাবা জোর করে ওকে জসিমের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় এরপর ও যে খুলনায় গেলো আর কখনও ওকে দেখিনি আমরা।এমনকি দিবার কথা আমি জানলাম এক মাস হলো
.
-এত অভিমান!!এত অভিমান যে ও আমায় আমার মেয়ের কথা জানালো না?
.
-এর চেয়েও কঠোর শাস্তি তোমার প্রাপ্য ছিল।আসি আমি
.
-মৌ আপা দাঁড়ান প্লিস।দিবা আমায় ভুল বুঝছে।আমায় ওর সাথে কথা বলতে দিন একটু।আমি ওকে বুঝাবো
.
-কি বুঝাবে?ও নিজের চোখে নিজের আর নিজের মায়ের কষ্ট দেখেছে সেই ছোট বেলা থেকে।ওসব ভুলাতে পারবে তুমি?
বাচ্চা মেয়েটাকে একদিনে এত কষ্ট দিও না।ও তোমায় দেখে কষ্ট পেয়েছে।
.♣
-দিবা?
.
আপনি কেন এমন করছেন।আমায় একটু একা থাকতে দিন।হাত ছাড়ুন আমার
.
-না ছাড়বো না।মিনিকে এমন করে ধরছো কেন তুমি?বাপের উপর রাগ ওর উপর দিকে ঝাড়বা??আর একটুর জন্য বেচারা পড়েই যাচ্ছিলো।আসো বাইকে বসো।তোমায় বাসায় দিয়ে আসব আমি
.
-না।আমি একা যাব
.
-আর বেশি কথা বললে চড় খাবা।বাসায় গিয়ে নিজের রুমে বসে সারাদিন ধরে কান্না করিও।আমার কিছু না
তবে বাহিরে এরকম উন্মাদের মতন ঘুরবে না।
তুমি একা নও সাথে একটা ফুটফুটে আজাইরা বেড়ালও আছে।
.
-মিঁয়াও
.
-দেখো।ও সাঁয় ও দিলো।নিজেকে সে ফুটফুটে ভাবে।
আসো আমার বাইকে উঠে বসো
.
আহনাফ দিবাকে টেনে বাইকের কাছে নিয়ে আসলো।দিবা চোখ মুছে উঠে বসলো সেখানে
আহনাফ মিনিকে সামনে এনে বসিয়েছে
চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে সে এখন।দিবা বারবার নাক টানছে।সাদাত স্যার তার বাবা হয় সে তা জানলো আজ
-অথচ ভেতরের ক্ষোভের কারণে একটিবার জড়িয়েও ধরতে পারলাম না
এভাবে দেখা হয়ে যাবে জানতামই না।এখন এরকম করে কেন।উনি কি উনার দ্বিতীয় সংসারে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাটানি করবেন নাকি।আমি কখনও যাব না।আমি এখানে ভালো আছি।
.
-জানো আমি ভাবছি সাদাত স্যার আবার তোমায় নিয়ে যেতে না বলে
.
-আমি যাব না।ঐ লোকটাকে আমি ঘৃনা করি
আচ্ছা উর্মি ম্যাডাম বলেছিলেন স্যার বিয়ে করেননি।এটার সত্যতা কতটুকু?
.
-তুমি একটা বোকা!!সেদিন স্যারের বাসায় কোনো মহিলাকে দেখেছো স্যারের মা ছাড়া?
.
-হয়ত উনার ফ্যামিলি এখানে থাকে না
.
-না।সাদাত স্যার বিয়ে করেন নাই।আমি এখন বুঝলাম স্যার কেন বিয়ে করেন নাই।খালামণিকে অনেক ভালোবাসেন উনি।এরকম লাভার আজকাল পাওয়াই যায় না
.
-এতই যখন মাকে ভালোবাসত তখন আমার মাকে একা বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন কেন?
.
-ঐ যে তোমার ডাইনি দাদুর কারণে
.
-ডাইনি বলবেন না।উনি কত ভালো ঐদিন দেখছিলাম
.
-তাহলে তোমার বাবা ভালো না।বাকি সব ভালো
.
-না বাবাও ভালো
.
আহনাফ ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো”কি বলছো ভেবে বলছো তো??সবাই যদি ভালো হয় তো এমন কাঁদছো কেন তুমি?তোমার তো হাসা উচিত।ইনফ্যাক্ট, চলো আমরা সাদাত স্যারের বাসায় যাই পার্টি দিতে”
.
-আপনি এত বকরবকর করেন কেন। আমাকে কাঁদতে দিন একটু
.
-কাঁদো।জোরে জোরে কাঁদো।আমি তো যাই বলি তাই দোষ
কাঁদলে কি তোমার বাবা ছাড়া কাটানো সেসব বছরগুলো ফিরে আসবে?নাকি এখন যে পরিস্থিতি আছে সেটা ঠিক হবে?
.
-কেঁদে মন হালকা করতে চাই।এটা তো বাসায় যাওয়ার রাস্তা না আপনি কোনদিক দিয়ে যাচ্ছেন?
.
-আমরা বাসায় ফিরছি না।প্রথমে ভাবলাম বাসায় ফেরা উচিত।পরে ভেবে দেখলাম, নাহ!!অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে তোমার মনটা ভালো করা জরুরি আগে
.
-কোথায় যাবেন?
.
-দেখতে পাবে
.
দূরের একটা লেকের কাছে এসে আহনাফ বাইক থামালো।দিবাকে নামিয়ে হাত ধরে নিয়ে গেলো লেকের পাশে।তারপর জোর করে ঘাসের উপর বসিয়েও দিলো ওকে।মিনিকে নিয়ে সে নিজেও বসলো।মিনি সবুজ ঘাস পেয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে তার উপর।শুয়ে শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে এখন
আহনাফ দিবাকে একটা ঠেলা দিয়ে বললো”চা খাবে?আইস্ক্রিম?বাদাম?ছোলা?”
.
-আপনার মাথা খাব
.
-যদিও আজ শেম্পু করিনি।আচ্ছা তাও খেতে পারো
.
-ভালো লাগছে না আমার।মায়ের সাথে কথা বলতে চাই।ইভান ভাইয়াকে ফোন করে বলেন না মাকে ফোনটা দিতে
.
-ইভান এখন অফিসে।খালামণিকে কি করে কল দেবে?
.
হুম তাই তো।
.
আহনাফ দিবার মাথায় হাত রেখে ওর চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো”আমি আছি না?তোমার খালামণি আছে না?তাহলে কেন এত কাঁদছো?ধরে নাও কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আসলে ঘটেইনি।আগে যেমন ছিলে তেমনি লাইফ লিড করতে থাকো সব ঠিক হয়ে যাবে”
.
দিবা আহনাফের দিকে ঘুরে বসলো”আচ্ছা আমার কি করা উচিত সত্যি করে বলুন?”
.
-আপাতত আইস্ক্রিম খেয়ে মাথা কুল করা উচিত।ওয়েট এ মিনিট।আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি।ম্যাঙ্গো অর চকলেট?
.
-ভ্যানিলা
.
-ওকে।মিনি তো আইসক্রিম খাবে না।ওর জন্য কি আনি?
.
মিনি আহনাফের পিছু পিছু হাঁটা ধরলো।দিবা লেকের পানির দিকে চেয়ে চোখের পানি মুছে নিচ্ছে।তারপর গায়ের শাড়ীটার দিকে চেয়ে বললো”শাড়ীটাকে লাকি বলতাম নাকি কুফা বলতাম??”
চলবে♥
(গল্পে কোথাও আহনাফ-দিবার জায়গায় শান্ত- আহানা দেখলে বুঝে পড়ে নিবেন।বইয়ে প্রকাশ হবে বলে প্রেমের পাঁচফোড়নের পাণ্ডুলিপি সকালে লিখি
আর সবটা অন্যরকম রাতে লিখছি। তাই মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাচ্ছে)
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here