সম্পর্কের মারপ্যাঁচ পাঠ-৭

#সম্পর্কের_মারপ্যাঁচ
পর্ব-৭
#tani_tass_ritt

হঠাৎ ই তিথি রুদ্রের হাত ধরে ফেললো।

“আমার দিকে তাকাও।দেখোতো আমাকে কালো শাড়ী তে কেমন লাগছে? কালো রং না তোমার খুব পছন্দ। ”

রুদ্র তিথির দিকে ভালো করে তাকালো।
আসলেই মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে।কালো শাড়ী, কপালে কালো টিপ, ঠোঁটে লাল লিপ্সটিক,চোখে হালকা কাজল, খোলা চুলে অসম্ভব মায়াবী লাগছে।
রুদ্র তিথিকে দেখে মনে মনে প্রভাতিকে কল্পনা করছে।পিচ্চিটাকে না জানি কত সুন্দর লাগতো এই সাজে।

“তুমি কিছু বলছোনা যে আমাকে কেমন লাগছে?”
তিথির কথায় রুদ্রের হুশ ফিরলো।

“ভালো লাগছে।”

তিথি রুদ্রের হাত টা ছেড়ে দিলো।
মুচকি হেসে,
“প্রভাতির কথা চিন্তা করছো বুঝি? কি ভাবছো প্রভাতিকে এমন করে সাজলে কেমন লাগবে?”

রুদ্র হতভম্ব হয়ে গেলো তিথির কথা শুনে।এই মেয়ে মনের কথা বুঝে কিভাবে।

রুদ্র চুপ করে রইলো। কোনো উত্তর দিলো না।

তিথি কিছুক্ষন চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।নিজের মনে সাহস যোগাচ্ছে।কেনোনা এখন সে যা করবে তার জন্য তার সাহস লাগবে।ভেঙে পরলে চলবে না।

কিন্তু তার যে প্রচন্ড কান্না আসছে।এই বুঝি চোখের পানি বের হয়ে যাবে।অনেক কষ্টে তিথি তার কান্না আটকালো।লম্বা একটা শ্বাস নিলো।

“রুদ্র তুমি প্রভাতির কাছে ফিরে যেতে পারো।আমি তোমাকে আর আটকাবো না।আর এই কদিনের জন্য আমি দঃখিত।আমি জানি আমার জন্য তোমাদের বিশেষ করে তোমার অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।”

রুদ্র নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সে কি ভুল শুনছে নাকি ঠিক শুনছে।সে অবাক হয়ে তিথির দিকে চেয়ে আছে।

“এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।আমিও মানুষ।আমি তোমার প্রেমে এতোটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছিলো।আমার মনে জিদ চেপে গিয়েছিলো তোমাকে পাওয়ার।কেনোনা ছোটবেলা থেকে আমি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।তোমাকে পাব না এটা মানতে পারছিলাম না।”

রুদ্র কিছু বলতে যাবে তখনি
“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।আমি আগে শেষ করি তারপর না হয় তুমি যা বলার বলো।”

রুদ্র মাথা নাড়লো।

“তুমি যখন রিয়াদের বাসায় এসেছিলে তখন থেকেই আমার তোমাকে ভালোলাগে।আর এই ভালোলাগা যে কবে ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝিনি।আর এই ভালোবাসার থেকেই আমার পাগলামি শুরু।

জানো আমি রোজ তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম।তুমি বারান্দায় বসে থাকতে পছন্দ করতে। আমি তোমাকে জানালা দিয়ে দেখতাম।তুমি যতক্ষন বারান্দায় বসে থাকতে আমি ততক্ষন তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।তোমাকে দেখা তৃষ্ণা আমার দিন দিন বেরেই যাচ্ছিলো।

একদিন না দেখলে পাগল পাগল লাগতো।আমি জানি তুমি এগুলো কিছুই জানোনা।এমনকি কোনো দিনো খেয়ালও করোনি।তোমার যত ভাবনা সব তো প্রভাতিকে নিয়ে।

তোমার চোখে পরার জন্য কতকি করেছি। তোমার পছন্দের রঙের জামা পরেছি।যাতে একটু আমার দিকে তাকাও।কিন্তু আফসোস আমার দিকে তাকিয়েও দেখনি তুমি।”

এতো টুকু বলে থেমে গেলো তিথি।

রুদ্রের খারাপ লাগছে তিথির কথা শুনে।কিন্তু সে ও যে নিরুপায়।প্রভাতিকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবা তার দ্বারা সম্ভব না।

“আমি ভেবেছিলাম তুমি পড়াশুনা নিয়ে বিজি থাকো তাই হয়তোবা আমার দিকে খেয়াল করো না।কিন্তু আমার ভুলটা ভেঙে গেলো যখন আমি তোমাদের বাড়ি গেলাম।সেখানে প্রভাতিকে দেখেই সবটা বুঝে গিয়েছিলাম।প্রভাতির জন্য তোমার যে কেয়ার সেটা দেখে যে কেউই বুঝে যাবে। কিন্তু এটা আমি মানতে পারিনি।কেননা প্রভাতি গ্রামে থাকে।ও তেমন স্মার্ট ও না।আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে জয় করতে পারবো।তুমি আমার ভালোবাসা দেখে প্রভাতিকে ভুলে যাবে।এটাই আমার সব থেকে বড় ভুল ছিলো।

তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি এতোটাই নিচে নেমে গিয়েছি যে নিজের দিকে তাকাতেও আমার লজ্জা লাগছে।নিজেকে বড্ড বেহায়া মনে হচ্ছে আমার।

এইকদিন তুমি আমার সাথে ছিলে এটার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি আমার সাথে থেকেও আমার সাথে ছিলে না।তোমার চোখে কোনোদিন আমি আমার জন্য নূন্যতম কোনো অনুভুতি দেখিনি।খালি দেখেছি বিরক্ত।আমি তোমার ভালোবাসার মানুষ নাই হতে পারি কিন্তু বিরক্তিকর হতে পারবো না।

আজকের পর থেকে আমি তোমাকে আর জ্বালাবো না।তুমি মুক্ত।”

তিথি আর থাকতে পারছেনা।তার বুক ফেটে কান্না আসছে।চোখের অবাধ্য পানিগুলোকে কোনোভাবেই থামাতে পারছে না।”

রুদ্র তিথি এক হাতে ধরে,
“তুমি অনেক ভালো মেয়ে তিথি।তোমার জন্য আরো ভালো কেউ অপেক্ষা করছে।যে তোমাকে তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসবে।”

তিথি রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।

“আমি তোমাকে কোনোদিনও ভুলতে পারবোনা।তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা।আমি খুব হিংসে হয় প্রভাতিকে। ভালোবাসলে এতো কষ্ট কেনো পেতে হয়!”

রুদ্র কিছু বলছে না।মেয়েটা কাঁদুক। কাঁদলে মন হালকা হবে। সে তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

এভাবে কতক্ষণ পার হলো কেউ জানেনা।একটা সময় তিথিই নিজ থেকে রুদ্রকে ছেড়ে দিলো।

“তুমি প্লিজ এখান থেকে যাও।তোমাকে দেখে আমার কষ্ট আরো বাড়ছে।আবার দেখা যাবে আমি তোমাকে আটকে ফেলেছি।”

রুদ্র তিথির গাল টেনে দিলো।
“ভালো থেকো।” বলেই রুদ্র হাটা শুরু করলো।পিছ ফিরে আর তাকালো না।তাকালে দেখতে পেতো তিথির সেই মায়া ভরা মুখটা। আর এই মায়ায় যে একবার জড়িয়ে যায় সে আর বের হতে পারেনা।

রুদ্র যাওয়ার পর তিথি ফ্লোরেই বসে পরলো।
তিথির মা রুমে এসে তার মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে তার বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

তিথি তার মায়ের কোলে শুয়ে রইলো।এই কষ্ট থেকে বের হওয়ার উপায় তার জানা নেই।

রুদ্র প্রথমেই রিয়াকে ফোন দিয়ে সব বললো। এবং এটাও জানালো সে বাসায় আসবে না ডিরেক্ট এখান থেকে বাড়ি যাবে।সে আর দেরি করতে চায় না।এমনিতেই অনেক বাধা পরেছে।

রিয়াও আর না করলোনা।কেননা এতোদিন পর তাই ভাইটাকে এতো বেশি খুশি খুশি লাগছে।।

রুদ্র বাসে বসে আছে।তার আর তর সইছে না।কখন সে পৌছাবে তার প্রভাতির কাছে।

এইদিকে আয়শা বেগম রিয়ার কাছে শুনলেন রুদ্র নাকি বাড়ি যাচ্ছে।তার মাথায় আকশ ভেঙে পরলো।কেননা তার বোন তাকে বার বার না করে দিয়েছে যাতে রুদ্র কোনোভাবেই এখন বাড়ি না আসে।

কেনোনা সে তৌকির আর প্রভাতির বিয়ের কথা ভাবছে।এখন রুদ্র আসলে নির্ঘাত কোনো ক্যালেংকারি করবে।

আয়শা বেগম দ্রুত তাএ বোনকে ফোন দিলেন।দুবার রিং বাজার পর ফোনটা রিসিভ হলো।

“হ্যালো বুবু ঝামেলা হয়ে গিয়েছে।”
“কি হয়েছে? ”
“বুবু রুদ্র বলে বাড়ি যাচ্ছে।”
“মানে কি বলছিস? তোকে না বলেছিলাম ও যাতে কোনোভাবে এখানে না আসে।”
“আরে বুবু আমি জানতাম নাকি।আমি রিয়ার থেকে শুনলাম।রুদ্র তিথির বাসার থেকে ডিরেক্ট বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।”
রুবি বেগম ভেবে পাচ্ছেন না সে এখন করবে টা কি।
“আচ্ছা তুই ফোন রাখ দেখছি আমি কি করা যায়।”

রুবি বেগম ফোনটা কেটেই সালমা বেগম কে ফোন দিলেন।

” শুন আমি চাচ্ছি তুই আর তৌকির কালই এসে পর।আমি তৌকির আর প্রভাতির বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি।”

“তুই এতো তাড়াহুড়ো কেন করছিস? আর প্রভাতি তো এখনো ছোট।”
“আচ্ছা।”

সালমা বেগম আর কিছু বললেন না।

তৌকিরের রুমে গিয়ে,
“তৌকির বাবা শুনছিস তোর রুবি আন্টি কাল যেতে বলেছে।তোর আর প্রভাতির বিয়ের কথা বার্তা বলতে।”

“মা তোমার মনে হচ্ছে না উনি খুব জলদি করছে।”
“হ্যা রে আমারো কেমন যেনো লাগছে।”

“আচ্ছা মা তুমি যাও। আমি দেখছি।”

তৌকিরের সব কিছু কেমন যেনো লাগছে।মনে হচ্ছে অনেক বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।

★★★★★★

রুদ্র বাড়ি এসেই ডিরেক্ট প্রভাতির রুমে চলে গেলো।
যেয়ে দেখলো প্রভাতি ফোনে হেসে হেসে কথা বলছে।সে অবাক হলো প্রভাতির হাতে ফোন দেখে।

প্রভাতি দরজার দিকে চোখ পরতেই আৎকে উঠলো।
“রুদ্র ভাইয়া।” বলেই তার হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো।অপর পাশ থেকে তৌকির হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।

রুদ্র কে দেখে তার হাত পা কাঁপছে।অসম্ভব ভালো লাগছে তার।
“কেমন আছিস রে? ”

প্রভাতি কিছু বলতে যাবে তখনি রুবি বেগম প্রভাতির রুমে এলেন।

রুদ্র কে দেখে তার রাগ উঠে গেলো।
“তুই আমার সাথে দেখা না করে এই রুমে কি করছিস?”বলেই রুদ্রকে সেখান থেকে নিয়ে গেলো।

” তুই ফ্রেশ হয়ে নে। আমি তোকে খাবার দিচ্ছি।”

রুদ্র ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো।তার যে আর তর সইছে না প্রভাতি রুম থেকে বের হচ্ছে না বলে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

তখনি রুদ্রের ফোন বেজে উঠলো।রিয়া কল দিয়েছে।

“হ্যালো ভাইয়া কি অবস্থা তোর? প্রভাতির সাথে কথা হলো?”
“আর বলিস না।মা তো ওর ধারের কাছেই ঘেষতে দিচ্ছে না।”

“উফ তুই তাহলে কখন বলবি?”

“আজ কালের মধ্যে যেভাবেই হোক আমি ওকে প্রপোজ করবো।।আমি আর দেড়ি করতে চাইনা। ”

“আচ্ছা ভাইয়া।”
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।

রুদ্র পিছে ফিরে চমকে গেলো। দরজার সামনে….

চলবে….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।তাড়াহুড়ো করে লিখতে হচ্ছে।সময়ই পাচ্ছিনা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here