সম্পর্কের মারপ্যাঁচ পাঠ-১

প্রভাতি কাঁদতে কাঁদতে রুদ্রর রুমে গিয়ে নিজের পরনের ফ্রকের চেইনটা খুলে দিলো।

“রুদ্র ভাই দেখো চাচি আমাকে কিভাবে মেরেছে।আমি ইচ্ছে করে কাঁচের গ্লাসটা ভাঙি নাই বিশ্বাস করো।” বলেই প্রভাতি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।”

রুদ্র এক নজর প্রভাতির পিঠের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেললো। ১৩ বছরের বাচ্চা একটা মেয়ের উপর তার মা কিভাবে এতো অমানবিক অত্যাচার করতে পারে ভেবে পায় না সে। একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে চেয়ার থেকে উঠে প্রভাতির কাছে গিয়ে তার জামার চেইনটা লাগিয়ে দিলো।

তার পুরো পিঠে লাল লাল জখমের দাগ হয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো শক্ত কিছু দিয়ে পিটিয়েছে।

“তুমি কিছু বলছোনা কেনো?আমাকে কেন এতো মারে চাচি? আমি কি করেছি বলো না!”

রুদ্র কিছুই বলতে পারলোনা। সে প্রভাতিকে টান দিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরলো,তার ভিতর বয়ে যাওয়া ঝরকে থামাতে।সে নিজেও জানে না এই ছোট্ট মেয়েটির মধ্যে কি আছে। কিন্তু এই ছোট্ট মেয়েটি তাকে খুব টানে। এক অদ্ভুত মুগ্ধতা কাজ করে তার প্রভাতিকে দেখলে।

রুদ্র মলম বের করে প্রভাতির হাতে দিয়ে বললো,
“যাহ ময়নার মায়ের কাছে গিয়ে বল তোকে যেনো মলম লাগিয়ে দেয়।”

“কেনো তুমি লাগিয়ে দিলে কি হবে?”
প্রভাতির এমন কথায় রুদ্র চুপ হয়ে গেলো।এই মেয়ে যে কবে বড় হবে কে জানে।কবে যে তার জ্ঞান বুদ্ধি হবে! ।

“উহু তুই যা এখন।আমার কিছু কাজ আছে।”
“প্রভাতি গাল ফুলিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। ”

রুদ্র কিছু একটা ভেবে তার মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো।রুমে ঢুকতেই তার চোখ পরলো ফ্লোরে পরে থাকা লাঠির দিকে। তারপর তার মায়ের দিকে তাকালো।তার মা ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরেই বসে আছে। বুঝতে পারলো সে প্রভাতিকে মেরে হাপিয়ে উঠেছে।

“এতো মেরে নিজেকে ক্লান্ত করার কি দরকার মা?”

রুবি বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেললেন।

” একটা গ্লাসই তো ভেঙেছিলো।তার জন্য তুমি ওকে এমন করে মারলে। ”

“তোকে বলেছিলাম না আমি ওর থেকে দূরে থাকতে।তাহলে কেন ওর সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলছিলি তুই? তুই ওর কাছে আসার চেষ্টা করলেই এর শাস্তি ও পাবে।” বলেই রুবি বেগম ফ্লোর থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলেন হাত মুখ ধুতে।

রুদ্র অপলক দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মা এতোটা নিষ্ঠুর প্রকৃতির না।কিন্তু প্রভাতির ক্ষেত্রেই সে এমন কেনো করে তার খুব জানতে ইচ্ছে করে।কেনো যেনো তার মনে হয় এর পিছে অন্য কোনো রহস্য আছে।

“আজব মা আমি এতোদিন পর এখানে এসেছি একটু কথাও বলবোনা!তোমার ইচ্ছেতেই তো সব করেছি তাও কেনো এতো রাগ।এস.এস.সি দিয়ে তুমি আমাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছো আমি তাও চুপ করে মেনে নিয়েছি।গত দু বছরের আমি মাত্র ৩ বার এখানে এসেছি কারণ তুমি পছন্দ করতে না বলে তাও কেনো এমনটা করছো? বাবা মা মরা মেয়েটাকে দেখে কি তোমার একটুও মায়া হয়না? ” রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললো।

“আর একটা কিছু বলবি এর মাশুল ঐ মেয়েকে দিতে হবে বলে দিলাম।”

এটা শুনে রুদ্র চুপ হয়ে গেলো। সে তার মাকে খুব ভালো করে চিনে।রুদ্র আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ি থেকেই বের হয়ে গেলো।

রুবি বেগম খাটে উঠে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলেন।তার চোখ বেয়ে পানি পরছে। চোখ বন্ধ করতেই তার মনে পরে গেলো অতীতের সব স্মৃতি।

রুদ্র পুকুর পাড়ে বসে পুকুরে ঢিল ছুড়ে নিজের রাগ কমাচ্ছে। রুদ্র পাশে কারো উপস্তিতি অনুভব করতে পেরে পাশ ফিরে তাকালো।দেখলো শুমন দাড়িয়ে আছে।শুমন রুদ্রর ফ্রেন্ড। তারা আগে একসাথে স্কুলে পরতো।

“কিরে কবে এলি? একবারো জানালি না যে?”

“এইতো কাল এসেছি।কেমন আছিস?”

“এইতো ভালো।শোন না আমার তোর সাথে কথা ছিলো।”

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে শুমনের দিকে তাকালো।তার সাথে কি এমন কথা থাকতে পারে।

“শোন আমার না প্রভাতিকে খুব পছন্দ।আমার মনে হয় প্রভাতিরও আমাকে খুব পছন্দ।”

এটা শুনে রুদ্র আকাশ থেকে পরলো।রাগে তার কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে।

“আর কদিন পরই তো আমাদের এইচ.এস.সি। ওটা শেষ করে বাবার ব্যাবসা সামলাবো।তখন প্রভাতিকে আমি বিয়ে করতে চাই।তুই সব ম্যানেজ করে দে না।এমনিতেও তোর মা ওকে একদম পছন্দ করে না। যখন স্কুলে যায়, প্রায় দিনই দেখি ওর হাতে মুখে মারের দাগ।আমি ওকে এখান থেকে বের করতে চাই। আমি ওকে খুব খুশি রাখবো।”

রুদ্র রাগে পারছে না পারছে শুমনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।তার সাহস কি করে হয় তার প্রভাতিকে বিয়ে করার কথা বলে।রুদ্র কিছু না বলেই সেখান থেকে উঠে গেলো।

শুমন রুদ্রকে ডাকলেও সে তার ডাকে সারা না দিয়ে হন হন করে সেখান থেকে চলে গেলো।

রুদ্র বাড়ি গিয়ে দেখলো তার মা বাসায় নাই।হাতে পরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বিকেল ৪ টে বাজে।এই সময় তার মা বাসায় থাকে না।আসতে আসতে ৫ টা বাজবে। সে প্রাভতির রুমের দিকে পা বাড়ালো।

রুমে ঢুকতেই দেখলো প্রভাতি জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে।
রুদ্র কিছু না ভেবেই যেয়ে প্রভাতিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

এই প্রথম কেউ তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলো সে।এর আগেও রুদ্র তাকে জড়িয়ে ধরেছে কিন্তু এমন করে কখনো ধরে নি।

রুদ্র প্রভাতির চুলে তার মুখ ডুবালো।প্রভাতির চুল হাটু সমান। হালকা কোক্রানো যে কেউ এই চুলের প্রেমে পরে যাবে।

প্রভাতি এখনো অনেকটা অবুঝ। তাই ওর তেমন কোনো অনুভুতি হলোনা।

“ভাইয়া ছাড়ো তো। এমনিতে গরম লাগছে আমার।”

প্রাভতির এমন কথায় রুদ্রের টনক নরলো।এই মেয়ের থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশাও করা যায়না।মাত্র ক্লাস ৫ এ পরে।কি ই বা বুঝবে।

রুদ্রের শুমনের বলা কথা মনে পরে গেলো।

“এই তোর শুমনকে কেমন লাগে? ”

“শুমন ভাইয়া তো খুব ভালো মানুষ।আমাকে চকলেট দেয়।”

প্রাভাতির মুখে শুমনের প্রশংসা শুনে রাগ এবার আসমানে উঠে গেলো তার।

“তুই যদি আর কোনো দিন ওর সাথে কথা বলিস মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।” বলেই হন হন করে রুদ্র রুম থেকে চলে গেলো।

প্রভাতি পুরোই বোকা বনে গেলো।এই ছোট্ট মাথায় তার কিছুই ঢুকলোনা।

★★★★★★★★★★

তিথি তার জানালা দিয়ে সামনের বিল্ডিং এর ৩য় ফ্লোরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে। নাহ বারান্দার দরজা বন্ধ।রুদ্র আসার কোনো নাম নেই। গত দুদিন ধরে রুদ্রকে দেখতে না পেয়ে তার মন কেমন যেনো ছটফট করছে।রুদ্রের নাম্বার ও তো তার কাছে নেই।

তিথি রেগেমেগে জানালা বন্ধ করে দিলো।তার খুব কান্না পাচ্ছে।

★★★★★★★★★★

রাতে খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি দেখেই প্রাভাতি লাফাতে লাফাতে ছাদে চলে গেলো। রুদ্রদের এক বাসাটা এক তালা।চারিদিকে গাছ গাছালি। বৃষ্টি হলে বাড়িটির সৌন্দর্য যেনো আরো বেড়ে যায়।রুদ্র মায়ের রুমে উকি দিয়ে দেখলো তার মা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। সে চুপি চুপি ছাদে চলে গেলো।ছাদে গিয়ে দেখলো প্রভাতি ভিজছে। রুদ্রকে দেখে প্রভাতি তাকেও টেনে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিলো।রুদ্র অপলক দৃষ্টিতে প্রভাতির দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে এভাবে তাকিয়ে থেকেই সে জনম জনম পার করে দিতে পারবে।

খুব সকালে কিছু আওয়াজে রুদ্রর ঘুম ভেঙে গেলো।আওয়াজ টা উঠান থেকে আসছে।সে ঘুম ঘুম চোখে উঠনের দিকে গেলো।সেখনাএ যেয়ে সে যা দেখলো তা দেখার পর তার হাত পা কাঁপতে লাগলো।তখনি………

#সম্পর্কের_মারপ্যাঁচ
পর্ব-১
#tani_tass_ritt

(অনেক দিন পর গল্প লিখলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here