সিন্ধুর_নীল পর্ব-১৩ লেখনীতে—ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

#সিন্ধুর_নীল পর্ব-১৩
লেখনীতে—ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১৮.
এহসানদের বাড়িতে এসে নিদ্রা উপলদ্ধি করতে পারল প্রকৃত অর্থেই এরা খুব ধনী। এহসানের বাবার ইট-সিমেন্ট থেকে শুরু করে গার্মেন্টস্ পর্যন্ত সব কিছুর ব্যবসায় আছে। নিদ্রার বুঝে আসেনা এতো টাকা এরা রাখে কোথায়? তাদেরও আছে তবে এতোটা নয় এহসানদের চারভাগের দুই ভাগ আছে তাদের। তবে সে কখনোই সেসব নিজের দাবি করেনি এবং ভাব ছাড়েনি। বরাবরই নিজের কামাইয়ে চলার মতো মন মানসিকতা তৈরি করে রেখেছে সে। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ইংরেজী ডিপার্টমেন্টের একজন ছাত্রী সে। স্বপ্ন হচ্ছে আমেরিকায় গিয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করার তারপর সেখানেই কিছু একটা করে সেটেল হওয়ার। সেই সব শখে এক গাদা গোবর ঢেলে দিল যেন! এই অনাকাঙ্খিত বিয়ের জন্য সব জলাঞ্জলি দিতে হবে হয়তো। হতাশা, গ্লানি, কষ্ট, আহাজারী সব ঘিরে রেখেছে তাকে। ইচ্ছে করছে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে কোথাও। এই সব মায়া-কায়া তাকে আটকে রেখেছে। আজব আজব পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে তাকে অপ্রত্যাশিত কিছুর সাথে বেঁধে ফেলছে। কেন হচ্ছে এসব? সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে হয়েছে বলে তাই! তবে বেশ! তাঁর ইচ্ছের উপর কথা বলার সাহস বা স্পর্ধা কিছুই নেই নিদ্রার। মহান রব যেভাবে তার ভাগ্য লিখে রেখেছে সেভাবেই হবে। সব কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত সে। ধৈর্য ধারণ করতে হবে তাকে তবেই তো পাবে মিষ্টতা। তিক্ততা কেটে তার জীবনে ভরপুর হয়ে উঠবে মিষ্টতা! কারণ সুখের পরে দুঃখ আর দুঃখের পরেই সুখ।

এহসান ঘরে এসে দরজাটা লক করে দিল। নিদ্রা বিছানাতেই বসা ছিল। কোনো রূপ কথা বলেনি সে এবং ফিরেও দেখেনি ঘরে কে প্রবেশ করল। এহসান তাতে কিছুটা বিরক্ত হলো। এই মেয়েটা হুটহাট কেমন চুপচাপ আর গম্ভীর হয়ে বসে থাকে। সারাক্ষণ কি যেন ভাবতে থাকে। এতো ভাবতে ভাবতে না জানি কত কিছু বানিয়ে ফেলে!

গোসল সেরে এসেও দেখে নিদ্রা সেই একই জায়গায় বসে আছে। তবে এবার তার গায়ে একটা সিল্কের শাড়ি। রঙটা হচ্ছে বিষাদের অর্থাৎ কালো। কিছুক্ষণ আগেও সে একটা বাথরোব পড়েই বসে ছিল। তবে এর মধ্যে সে শাড়ি পড়ে নিয়েছে। তবে যাও পড়েছে তা খুবই বেসামাল। পিঠ পেট সবই দৃশ্যমান। সম্পূর্ণ আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বসে আছে সে। তার মুখটা কাচের দেওয়াল ভেদ করে সামনের ব্যস্ত শহরের কোলাহলের দিকে চেয়ে আছে। এদিকে যে তার শরীরের প্রতি বিপরীত লিঙ্গের এক মানুষের গভীর দৃষ্টি উপচে পড়ছে তার কোনো খেয়াল নেই। এখনও বোধ হয় কিছু ভাবছে। এহসানের ইচ্ছা করছে তাকে জিজ্ঞেস করতে, তাকে বলতে,
“কি হয়েছে তোমার নিদ্রা!”
কিন্তু সে অপারগ। না পারবে বলতে না পারবে তার এতো সব চিন্তা দূর করতে। কারণ নিদ্রা নিজেই তাকে সেই অধিকার দেয়নি।

————————
রাত হয়েছে অনেক। সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষণে। পুরো বাড়িতে যদি এই মুহূর্তে কারো চোখে ঘুম না লেগে থাকে সে হচ্ছে এহসান। নিদ্রা সেই শাড়ি পড়েই শুয়ে আছে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। অথচ তার সামনেই সোফায় ল্যাপটপ হাতে নিয়ে বসে থাকা এহসানের চোখে ঘুম নেই। নিদ্রা কম্বল গায়ে জড়ায়নি। নিদ্রার দৃশ্যমান স্পর্শকাতর অঙ্গের দিকে নেশাগ্রস্থের মতো চেয়ে আছে। এই দৃষ্টি যদি নিদ্রা দেখত তবে শত বস্ত্র গায়ে জড়িয়ে নিতো। এহসান ল্যাপটপ টা বন্ধ করে পাশে রেখে দিল। পুরো রুমের আলো নিভিয়ে নিদ্রার পাশে শুয়ে পড়ে। নিদ্রাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। তাতেই নিদ্রার ঘুম আলগা হয়ে যায়। এহসান নিদ্রার গলায় হাত দিলে চোখ মেলে তাঁকায় নিদ্রা। ঘুম আকস্মিক স্পর্শে ভেঙেই গেছে। এহসানকে অতি নিকটে দেখে কিছু বলবে তার পূর্বে এহসান নিদ্রার ঠোঁটে এক আঙুল রেখে গম্ভীর গলায় বলল,
“চুপ! কোনো কথা বলবে না। গতকাল যখন বাঁধা দাওনি আজও দিও না।”

নিদ্রার আর কোনো জবাবের অপেক্ষা করার মতো সময় নেয়নি সুন্দর অভদ্র পুরুষটি। নিজের স্ত্রীকে মুঁড়িয়ে নেয় এক সুন্দর স্নিগ্ধ ভালোবাসার চাদরে। নিদ্রা একান্ত তার! আর কেউ তাকে ছোঁয়ার বা দেখার ক্ষমতা রাখেনা।

১৯.
নিহারীকার মনে ভয় ঢুকে গেছে। এখন এতো রাতে এভাবে পাহাড় বেয়ে ওঠা কতটা বিপদজনক হতে পারে তা সে জানে। মৃত্যুঞ্জয়ের কোনো ভয় ডর বলে কিচ্ছু নেই। সে কি সুন্দর গুনগুন করছে আর উপরে উঠছে। এদিকে নিহারীকা এই শীতের রাতেও যে নিহারীকা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে সেদিকেও একটু খেয়াল করছেনা সে। এতটা স্বার্থপর! এতটা? নিহারীকা এবার দাঁড়িয়ে গেল। মৃত্যুঞ্জয়ের কোনো হেলদোল নেই সে নিশ্চিন্তে ঝোঁপ ঝাড় পেরিয়ে হেঁটে চলেছে। একটু সামনে গিয়ে থেমে গেল তাতে নিহারীকা শান্তির শ্বাস ফেলে। যাক এতক্ষণে লোকটার টনক নড়েছে হয়তো! নিহারীকা আবারও ভুল হলো, মৃত্যুঞ্জয়ের ফোনে কল এসেছিল। রিংটোন বাজেনি তাই নিহারীকা ব্যাপারটা বুঝেনি। তবে ব্রাইভেট হয়েছিল আর তাতে মৃত্যুঞ্জয়ের শরীর কেঁপেছে যার বদৌলতে সে টের পেয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় এদিক ওদিক তাঁকিয়ে একটু পুরোনো কেটে রাখা গাছের উপর বসে পড়ে। কলটা লাউডেই দিয়েছিল তাই নিহারীকা স্পষ্ট শুনতে পেলো ওপাশ থেকে একটা যুবক কন্ঠ বলছে,
“তুই কোথায় আছিস জয়? বাড়ির সকলে তোর খোঁজ খবর না পেয়ে রীতিমত পাগল হয়ে গেছে। ফোন কেন বন্ধ করে রেখেছিলি?”
নিহারীকার স্পষ্ট মনে আছে মৃত্যুঞ্জয় অনেকবার ফোনে গেইম খেলেছিল তার সামনে। তারমানে ফোন বন্ধ ছিল না। হয়তো সিমটাই বন্ধ করে রেখেছিল বা খুলে রেখেছিল। তবুও সে মৃত্যুঞ্জয়ের জবাবের অপেক্ষায় থাকে যে সে কী বলবে!

“আমি যে মাঝেমধ্যেই এমন করি তা কী তোরা জানিস না? প্রতিবারই তোদের টেনশন করতে হবে?”

ওপাশের ব্যক্তিটি থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
“আমি কী করি নাকি! করে তো তোর মা-বাবা আর বাকি স্বজনেরা। আমি তো জানিই তুই ভবঘুরে সবাইকে চিন্তায় ফেলে নিজে নিশ্চিন্তে কোনো বন জঙ্গলে ঘুরে বেরাচ্ছিস।”

“যদিও এখন নিজের দোষ ঢাকতে কথাগুলো বলেছিস তবে ঠিকই বলেছিস। আমি বনে জঙ্গলেই ঘুরছি। সাথে একটা পেত্নীও আছে। সবাইকে বল টেনশন ফেনশন ভুলে গিয়ে বোম্বাই মরিচ আর গরম গরম ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। আমি এবার দেরি করে ফিরব। অনেক বড় মিশনে আছি এবার।”

“তোর মিশন রাখবি এবার!”

মৃত্যুঞ্জয় মুঁচকি হেসে বলল,
“মিশন না তোর কল রেখে দিচ্ছি।”

ওপাশের ব্যক্তির আর কিছু বলা হলো না। টুট টুট শব্দ হচ্ছে যার অর্থ লাইন কেটে গেছে, কেটে গেছে বললে ভুল হবে কেটে দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় এতক্ষণে নিহারীকার দিকে তাঁকায়। সে চোখ ছোট ছোট করে তাঁর দিকেই চেয়ে আছে। মৃত্যুঞ্জয় ভ্রু নাঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি হলো? এমন করে তাঁকাচ্ছো যে! দম শেষ নাকি? এখনও অনেক পথ বাকি আছে। এইটুকুতেই হাপিয়ে গেলে চলবেনা। বি স্ট্রং!”

গর্জে উঠে নিহারীকা বলল,
“পেত্নী কাকে বলেছেন? হ্যাঁ! কাকে বলেছেন?”

“এখানে কি আরও কয়েকটা পেত্নী আছে নাকি?”

“জ্বি না! এখানে কোনো পেত্নীই নেই।”

“কই? এইতো তুমি একজন তো আছো।”

নিহারীকা দাঁত খিচে নেয়। এই লোকটাকে সে আর সহ্য করতে পারছেনা। আর না! মৃত্যুঞ্জয় আর কিছু বলেনি। মৃদু হেসে নিহারীকাকে বলল,
“রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন-কথাটা শুনেছ তো? আজ আমার একটু মজার কথাতেই হেরে গেলে কাল শত লোক শত শত্রুর সামনে দাঁড়িয়ে যদি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রেগে যাও তবে ক্ষতিটা কার হবে? আমার না তোমার!”

নিহারীকা মাথা নিচু করে রাখে। মৃত্যুঞ্জয় বলল,
“আজ রাতেই ওপারের দৃশ্যটা আমাদের দেখে আসতে হবে নিহারীকা। এতদূর এসে যদি সেটা না দেখে যেতে পারি তবে সব কষ্ট বৃথা। আমাদের ম্যাপ অনুযায়ী সেখানে এমন জায়গা আছে যা আমাদের পয়েন্ট করতে হবে।”

নিহারীকার পক্ষে এটা কষ্টসাধ্য তবুও “হ্যাঁ” বলে ফেলল। ভেতর থেকে হঠাৎ করেই একটা স্পিরিট কাজ করা শুরু করেছে।

#চলবে।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেইক করিনি। পরে করে সব ঠিক করে নিব যদি ভুল থেকে থাকে। আমি দীর্ঘদিন অনিয়মিত ছিলাম বলে নীল ক্যাফের গল্প গ্রুপ থেকে ব্লক খেয়েছি। তাই আপনারা আর সেখানে উপন্যাসটি পাবেন না। আমি যখন শুরু করেছি তখন শেষও করব। মাঝখানে কিছু বাধা বিপত্তি আসতেই থাকবে। আজকের পর্বে সর্বোচ্চ রেসপন্স চাইছি। আজকে সবাই রেসপন্স করলে কালকে আরেক পর্ব দিব। নাহলে মনোবল আসেনা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here