#সিন্ধুর_নীল (পর্ব-৪)
নিদ্রা নিজেকে পুনরায় পরিপাটি করে নিচে নেমে আসে। স্টিলেটো বদলে এখন একটা কিটেন পায়ে পড়ে নিয়েছে। তাই হাটতেও আর কষ্ট হচ্ছেনা আগের মতো। লিফ্ট বেয়েই নিচে নেমেছে। নিদ্রা পৃথিলাকে কল করে জানতে পারল তারা সব কাজিন পুলের পাশেই এক জায়গায় বসে আছে। তার গন্তব্যও এখন সেথায়। দু’তিন কদম হেঁটে গেলেই পুল জোন। নিদ্রা ধীরে সুস্থে হাঁটছে আর আশপাশটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জায়গাটা আসলেই খুব সুন্দর। এদিক ওদিক তাঁকিয়ে হাঁটার কারণে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে যায়। নিদ্রা দেখে তার সামনে একটি সুন্দর মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের রঙ ফর্সাও নয় আবার কালোও নয়, তামাটে বলা চলে। নিদ্রার মাথায় ব্রাউনিশ কথাটা খেলে যায়। নিদ্রা মুঁচকি হেসে বিনয়ের সাথে তাকে দুঃখীত জানায়। মেয়েটিও হেসে বলল,
“দুঃখীত বলার দরকার নেই। আসলে আমিই বেশি দ্রুত হাঁটছিলাম তাই…. তুমি কোথাও ব্যাথা পেয়েছ কী?”
“না না ব্যাথা পাওয়ার মতো তো কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।”
“নাম কী তোমার?”
“আমার নামটা শুনে তুমি আবার আমার মজা উঁড়িও না। প্লিজ!”
“কেন? মজা উঁড়াতে যাব কেন! তোমার নাম কী ফানি টাইপ!”
“একদমই না! আমার নাম সবচেয়ে সুন্দর বলে আমি মনে করি।”
“তাই? তাহলে সুন্দর নামটা তো শুনতেই হবে। বল তো!”
“প্রথমা নিদ্রা। তোমার নাম কী?”
নিহারীকা চমকায় তারই সাথে থমকায়। নিদ্রা নামটি তো তারও। তার সেই নাম যেই নামটিকে সবচেয়ে ভালোবাসা স্বত্তেও লুকিয়ে রেখেছে। তবে নিদ্রার নামটি কেমন ধাঁরালো মনে হয়েছে ওর কাছে। প্রথমা! এই প্রথমা কথাটিতে কিছু একটা আছে যা শুনতেই কেমন সূচালো অনুভূতি তৈরি হয়। নিহারীকাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে নিদ্রা খানিক হেসে বলল,
“চুপ হয়ে গেলে যে! নিশ্চয়ই তুমিও এখন ভাবী বলে ডাকার পরিকল্পনা করছ! শুনো, যদি এমন পরিকল্পনা মাথায় এসে থাকে তবে তা বাদ দাও। তোমাকে আমার ভাল লেগেছে খুব তাই আমি চাইছি তুমি যেন আমাকে না রাগাও। এখানে এসেছি থেকে সবাই ভাবী ভাবী করে মাথা গরম করে দিচ্ছে। শুনলাম নতুন বউয়ের নাম নাকি নিদ্রা। বিশ্বাস কর! তার উপর আমার অনেক রাগ হয়েছে। আমি তাই তো একবারও তাকে দেখতে চাইনি। নামের কী অভাব আছে দুনিয়ায়! নিদ্রাই কেন রাখতে হবে?”
নিহারীকার হাসি পায় কিন্তু হাসতে পারছেনা। হয়তো নিদ্রা তাতে আরো বেশি রেগে যাবে। তাই সে তাল মিলিয়ে বলল,
“ঠিক ই তো! দুনিয়ায় তো আরও অনেক নাম আছে। নিদ্রা নাম রাখা উচিত হয়নি।”
নিদ্রার হঠাৎ করেই লজ্জা লাগে। সে নিজের স্বভাব থেকে বেরিয়ে কেমন একটা বাচ্চামো করে ফেলছে এই অচেনা মেয়েটির সামনে। তার সাথে এটা একদমই বেমানান। নিজেকে সংযত করে নিহারীকাকে বলল,
“তোমার নাম বললে না তো!”
“নিহারীকা।”
“আগে পিছে কিছু নেই?”
“হুম আছে। নিহারীকা এমদাদ।”
“তুমি কি ছেলেপক্ষ! আমার তো মনে হয় তোমাকে এসেছি থেকে দেখিনি। মানে এখনই দেখা হলো তো তাই।”
“আমি মেয়েপক্ষ। তা তুমি নতুন বউ দেখবে না?”
“আপাতত ইচ্ছা করছেনা। আমি কাজিনদের কাছে যাচ্ছি আড্ডা দিচ্ছে সবাই। তুমি যাবে?”
“না। আসলে আমাদের ফিরতে হবে। সবাই গাড়িতেই আমিই লেইট।”
“চলো গাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসি তোমায়।”
“না না আমি একাই যেতে পারব। তুমি বরং কাজিনদের কাছে যাও পরে গিয়ে দেখবা আড্ডা শেষ। তার আগেই যাও।”
“না সমস্যা নেই তোমার সাথেই যাই।”
“ফরমালিটস এর কোনো দরকার নেই নিদ্রা। এইতো আমি তো পার্কিং এড়িয়ার কাছাকাছিই আছি। ঐ দেখো! আমার চাচাতো বোন হাত বাড়িয়ে আমায় ডাকছে। আমি যাই তুমি ভালো থেকো পরে দেখা হবে।”
নিহারীকা দৌঁড়েই চলে যায় পেছন থেকে নিদ্রা ডাক দিয়ে বলে,
“তুমি বউয়ের কি হও বললে না তো!”
নিহারীকা পেছন ফিরে শুধু চোখ টিপ মারে। নিদ্রা কাজটায় থতমত খেয়ে যায়। নিহারীকা তাকে চোখ মারলো কেন তা সে বুঝে পায়না।
৬.
এহসান নিজের রুমে বসে আছে। তখন অভ্রকে কল করার পর অভ্র এসে সেই রুমের দরজা খুলে দিয়ে যায়। বজ্জাত গুলো দরজা লাগিয়ে দিয়ে যে গেল তাদের কোনো খেয়ালই নেই নাকি! এদিকে নিহারীকার বাড়ি ফিরতে হবে। আড়াই ঘন্টা শুধু শুধু বসে ছিল। সময়টাও কাটছিল না এমন মনে হয়েছিল। এহসান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। গন্তব্য এখন পুল সাইড। সবাই নাকি সেখানেই আছে। এহসান প্রথমে ভেবেছে সব কয়টাকে বকে দিবে পরে ভাবে তা ঠিক হবে না। বিয়ে বাড়িতে এমন মজা করা হয়। স্বাভাবিক!
নির্ঝর সেই কখন থেকে নিদ্রাকে খুঁজে চলেছে কিন্তু পাচ্ছেনা। হঠাৎ করেই নিদ্রাকে তাদের আড্ডার আসরে দেখে আনন্দিত হয়ে ওঠে। খেয়াল করে তার পাশেই আর দুইটা সিট খালি আছে। দুই সিট বাদে বসে আছে অভ্র। নির্ঝর ভাবে নিদ্রা তারপাশে বসবে আর সেটা ভাবতেই তার মনটা উঁড়ু উঁড়ু করছে। নির্ঝরের সব আশায় পানি ঢেলে তার পাশের চেয়ারটায় এহসান এসে বসে পড়ে। অগত্যা নিদ্রাকে এহসান আর অভ্রর মাঝামাঝিই বসতে হয়। নিদ্রা দূর থেকে অভ্রকে দেখে মনে মনে এটাই চাইছিল সে যেন অভ্রর পাশাপাশিই বসতে পারে। অভ্রর পাশে বসে তার মনের ভেতরের অবস্থাটা এমন যে সে বোধ হয় এভারেস্ট জয় করে নিয়েছে! এহসান খেয়াল করে নিদ্রা তার পাশে বসাতে বুকের ভেতর কিছু লাফাচ্ছে। শরীর জমে যাচ্ছে। নিজের এমন কন্ডিশনে সে নিজেই বোকা বনে যাচ্ছে। কোথাও নিদ্রার প্রতি ভালোলাগা কাজ করছে। কিন্তু এহসান জানে সে ঠিক করছেনা। এদিকে বেহায়া মনটাও তো মানছেনা। আড়চোখে নিদ্রাকেই বারবার দেখে চলেছে। অভ্র নিদ্রার দিকে তাঁকিয়ে একটু সৌজন্য মূলক হাসি দেয় তাতেই নিদ্রা কাহিল! টেবিলের নিচে থাকা এহসানের হাতটা অজান্তেই খামচে ধরে। সে হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য হয়ে পড়ছে। কি করছে না করছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই, বোধ বুদ্ধি হচ্ছেনা! এহসান নিদ্রার আকস্মিক কাজটায় অবাক চোখে নিদ্রার দিকে তাঁকায়। দেখে নিদ্রা এক ধ্যানে অভ্রকে দেখছে আর অভ্রর সব মনযোগ আড্ডায়। এদিকে কারো নজর নেই। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ গল্পে। নিদ্রা অজান্তেই এহসানের মনের মধ্যে এক তান্ডব বাঁধিয়ে দিল। এহসান ঠিকই বুঝছে নিদ্রার মনের অবস্থা। অভ্রর প্রতি নিদ্রার ভালো লাগাটাও বেশ ধরতে পারছে। কিন্তু তারপরেও নিদ্রার প্রতি তার এমন সব অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে যা হওয়ার নয়!
নিদ্রার যখন ভালোলাগার রেশটা কিছুটা কাটে তখন দেখে সে একটা জঘন্য কাজ করে ফেলেছে। দ্রুত এহসানের হাত ছাঁড়িয়ে এহসানের কানের কাছে মুখটা এনে মিনমিন কন্ঠে বলল,
“সরি!”
এহসান কিছুই বলেনা। নিদ্রার মুখপানে তাঁকিয়ে মৃদু হাসে। নিদ্রা লজ্জায় পড়ে যায় ভীষণ! উঠে যেতেও পারছেনা বসে থাকাও সম্ভব না। বিশ্রী পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে সে। এদিকে অভ্রর নজর এড়ায়নি নিদ্রার এহসানের কানে ফিসফিস করে কথা বলাটা। সে তাতে অবশ্য কোনো কিছুই প্রকাশ করেনা। আসলে তাতে তার কিছুই যায় আসেনা।
এহসানের মনের মধ্যে এখন একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, “নিদ্রা তার সর্বনাশ!”
#চলবে।
(কেমন লেগেছে জানাবেন।)