সিন্ধু ইগল – (৮)

সিন্ধু ইগল – (৮)
ইসরাত জাহান দ্যুতি

২০
রেজা আজই লন্ডনের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট ধরল। ফিরতে ফিরতে হয়তো বহু দেরি। কিংবা অতি দ্রুতও কাজ শেষ হতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই ওর ফিরে আসার। পরিবারের বাইরে জায়িন এই ছেলেটিকে বড্ড স্নেহ করে ছোটো ভাইয়ের মতো। এই সাত বছরে কম বার হয়নি তার জন্য জীবন ঝুঁকিতে নেমেছিল রেজা। যাওয়ার পর থেকে জায়িন খুব মিস করছে তাকে। রেজার পরিবর্তে আজ অবধি অন্য কাউকে নিজের গাড়ি ড্রাইভিং করতে দেয়নি সে। তাই আজ বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল সে, নিজেই ড্রাইভিং করে। কিন্তু চিন্তাতীত ছিল তার, সামনের বিপদটা সম্পর্কে। এই গভীর রাতে নিজের এলাকায় শত্রুপক্ষের দ্বারা আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তা তার ধারণারও বাইরে ছিল। যার অর্থ, তার বাড়ির মানুষও এখন থেকে নিরাপদ নয়। কাল থেকেই বাড়ির চারপাশে পুলিশ গার্ড নামিয়ে দিতে হবে। ঠিক এই কথাটি ভাবতেই মনে পড়ল তার, জাদু আর মাধুর বাংলোর চারপাশেও গার্ড রাখা প্রয়োজন। যেহেতু ওরা তার বাড়িতে যাতায়াত করে। আর এ নিয়ে আগে অনুমতি চাইতে হবে ওদের দু’বোনের থেকে। তবে ওদের দু’বোনের মাঝে চিন্তাটা শুধু একজনকে নিয়েই জায়িনের। যার ক্ষতি হওয়ার কথা সে ভাবনাতেও আনতে পারছে না। প্রয়োজনে সেই মানুষটিকে সে নিজেই আগলে রাখবে।

নিজের করা ভুলে নিজেই নিজেকে গালি দিতে দিতে আহত পা নিয়ে দৌঁড়ে চলেছে জায়িন। আজ সে হারে হারে টের পাচ্ছে। প্রেমের আসক্তি একজন বীরপুরুষ বা মহারাজাকেও নিরেট মাথা করে দিতে পারে। করে দিতে পারে কাঙালও। গাড়িতে বসে সে জাদুর ভাবনাতেই মশগুল ছিল। কতগুলো দিন পর আজ ভোরের আলোতে ওই স্নেহপূর্ণ মুখটি দেখতে পাবে! আর এসব ভাবনার মাঝেই গাড়ির সামনে ঝুপ করে একটি বড়ো গাছ ভেঙে পড়ে। আর সেও বোকার মতো তা দেখার জন্য গাড়ি থেকে নামতেই পর পর দু’টো গুলি কোথা থেকে যেন ছুটে আসে তার দিকে। যার একটা পায়ে এসে লেগেছে। আর অন্যটি ভাগ্যক্রমে কানের পাশ ঘেঁষে চলে গেছে৷ পায়ের আঘাতটা না লাগলে হয়তো আক্রমণ দলটার সঙ্গে গুলি যুদ্ধে নামতে পারত। কিন্তু ওরা তার আগেই ওকে দুর্বল করে দিয়েছে। অগত্যা সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ছুটতে ছুটতে পায়ের অবস্থা করুণ। টেরোরিস্ট চক্রটা যে বেশ মারাত্মক, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারল জায়িন। এখন থেকে আরও সাবধানে থাকতে হবে তাকে। খুব চেষ্টা করবে এরা, ওকে যে-কোনো দিক থেকে ঘায়েল করার।

বাড়ির রাস্তাটায় এসে পৌঁছতেই জায়িনের দেহের সর্বশক্তি নাশ হলো। রক্তে জর্জরিত পা নিয়ে আর একটুও এগোনো সম্ভব নয় তার। ধপ করেই বসে পড়ল সে রাস্তার পাশে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাউকে কল করার মুহূর্তেই চোখদু’টো ঝাপসা হয়ে এল ওর। মাথা ঝিমঝিম করছে। যে-কোনো মুহূর্তে জ্ঞান যেতে পারে। তবে তার আগেই কলটা করা জরুরি। কিন্তু কাতরাতে কাতরাতে নিচে শুয়েই পড়ল সে। কেউ জেগে থাকলে তার কাতরানির আওয়াজ নিশ্চয়ই কারও কানে যেত। রাত বাজে এখন সম্ভবত দেড়টা। পা’টা চেপে ধরে বারবার আর্তনাদের সঙ্গে ‘আম্মা! আম্মা!’ বলে ডাকতেই এক জোড়া পা এসে দাঁড়াল ওর সামনে। বুকের মাঝটায় কিঞ্চিৎ আতঙ্কে ধক্ করে উঠল তখন। শত্রুপক্ষ হলেও এই আহত অবস্থাতেই প্রাণপণ লড়াই করে যাবার আত্মবিশ্বাস আছে ওর। কিন্তু মৃত্যু ভয়টা যে সবার মাঝেই কাজ করে। ঝিমিয়ে আসা চোখদু’টো তুলে তাকিয়ে সামনের মানুষটিকে দেখে প্রশান্তিতে চোখজোড়া আবার বুঁজে তাকে কেমন মায়া জড়ানো কণ্ঠে ডেকে উঠল, ‘প্রিয়!’
অনেকটা ঘাবড়ে গিয়ে সামনের মেয়েটি জায়িনকে ধরে বলল, ‘আপনার এমন অবস্থা কী করে হলো? জায়িন, আপনি ঠিক আছেন?’
জায়িন চোখ মেলে তাকে নীরব চাউনিতে দেখল কিছুক্ষণ। তারপর দুর্বল গলায় বলল, ‘আমি ঠিক নেই জাদু। আমাকে সাহায্য করো।’
জায়িনকে ধরে টেনে ওঠাতে ওঠাতে সে কিছুটা অপ্রস্তুতভাবে জবাব দিলো, ‘আমি…আমি জাদু নই। মাধু। আপনি একটু কষ্ট করে আমাকে সাপোর্ট হিসেবে ভর দিন আমার গায়ে।’
জায়িন বলল, ‘আমার পক্ষে সম্ভব নয় জাদু। আমার ফোনের ডায়ালে গিয়ে জাকির নামটাতে কল করো।’
একটু বিরক্ত হলো বোধ হয় জায়িনকে জাদু ডাকতে শুনে। তাই আবারও শুধরে দিয়ে বলল সে, ‘ইট’স মাধু। আপনি চিনতে ভুল করেছেন।’
এই করুণ অবস্থাতেও জায়িন ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে চিনতে চেষ্টা করল, সে মাধু না কি জাদু? তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘আমি চিনতে ভুল করলাম?’
প্রশ্নটায় মাধু একটু হাসল। জায়িনের নজর তখন মাধুর অধর পল্লবে আটকাল। আর তখন জায়িনের ঠোঁটেও এই তীব্র যন্ত্রণার মাঝে ঈষৎ হাসি দেখা গেল। মাধু আর দেরি করল না। জায়িনের ফোন থেকে জাকিরকে কল করল বেশ কয়েকবার। এত রাতে গভীর ঘুমে মগ্ন জাকির। তাই রিসিভ করতে দেরি হলো তার। রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে মাধু আগে নিজের পরিচয় দিয়ে জায়িনের অবস্থার কথা জানাল। জাকির যাতে বিশ্বাস করে তাই জায়িনকেও কথা বলিয়ে দিলো। জাকির আসছি বলে ফোন কাটতেই জায়িন নিজের পুরো শরীরটা মাধুর বুকের মাঝে ছেড়ে দিলো৷ সোজা হয়ে বসে থাকার মতো শক্তি আর অনুভব করছে না সে। কিন্তু সে মুহূর্তে সারা দুনিয়াটা তখন কেঁপে উঠল বোধ হয়, মাধুর এমনটাই লাগল। কী হচ্ছে তার বক্ষঃস্থলে? রীতিমতো সেখানে দ্রিম দ্রিম শব্দের আন্দোলন চলছে। একবার জায়িনের দিকে তাকাল সে। নিজেকে এতটা অসহায় কি ইচ্ছাকৃতই দেখাচ্ছে জায়িন? কিন্তু ওর মুখটা দেখে একটুও এমনটা মনে হলো না। নাহঃ! ছেলেটা সত্যিই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে মাধুও নিজের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে আনমনেই জায়িনকে জাপটে ধরে বসে রইল। তারপর মৃদুস্বরে ডাকল ওকে, ‘জায়িন, আপনার ভাই আসছে। আরেকটু কষ্ট করুন।’
-‘সব থেকে শান্তির আশ্রয়ে আছি, প্রিয়। ছেড়ো না আমাকে।’ কণ্ঠটাও বড্ড অসহায় শোনাল ওর।
মাধু বলল, ‘আপনি আবারও আমাকে জাদু ভেবে ভুল করছেন।’
বিড়বিড় করে জায়িন বলল তখন, ‘জানি তো। তুমি জাদু নও। মাধুও নও। শুধু আমার খুব আপন।’
কিন্তু মাধু তা বুঝল না৷ জায়িন যাতে জ্ঞান না হারায় তাই মাধু বারবার কথার মাঝে রাখার চেষ্টা করছে ওকে। জায়িনকে খানিকটা জ্ঞান দেওয়ার সুরে সে বলল, ‘নিজের বাবার বিজনেস থাকতে এত রিস্কি কাজ কে করতে বলে? ছেড়ে দিলেই তো হয় এসব কাজ?’
জায়িন চাইলেও চোখ খুলে রাখতে পারছে না। খুব চেষ্টা করছে নিজেকে শক্ত রাখার। চোখদু’টো মেলে দেখতে চাইছে, যার বুকে নিশ্চিন্তে মাথা পেতে আছে তার মুখটা দেখবার। কয়েক সেকেণ্ড কাটিয়ে মুচকি হেসে উঠল জায়িন। জবাব দিলো, ‘বারো তেরো বছর যাবৎ জীবন ঝুঁকির খেলায় নেমেছি প্রিয়। আই এনজয় ইট।’
ফের প্রিয় ডাক শুনে মাধুর আর এবার রাগ বা বিরক্তি কিছুই মনে হলো না। এসবের পরিবর্তে যে অনুভূতিটা হলো, তা তার কাছে খুব অচেনা। কিন্তু এটুকু আবিষ্কার করল সে, এ ডাক তার হৃদয়ে ঝংকার তোলার মতো। তার এই অচেনা অনুভূতিকে বিশ্লেষণ করার মাঝে জায়িন বহু কষ্টে সার্থক হলো, মাথা তুলে মাধুকে একবার দেখতে। মাধু তারই দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে চেয়ে আছে। তা দেখে জায়িন আবারও মুচকি হাসল। আর সেই হাসিতেই মাধু আটকাল। আজ আবারও তার মনে হচ্ছে, এই হাসিটা তার খুব চেনা। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে সেই হাসি মাখা মুখটা দেখতে থাকল। চিনতে চেষ্টা করল, মনে করার চেষ্টা করল এই হাসিকে। কিন্তু সবই ঝাপসা তার স্মৃতিতে।

মাধু যখন গভীর দৃষ্টিতে জায়িনের হাসি দেখতে মত্ত, জায়িন তখন বলহীন হাতটা ধীরে ধীরে উঁচু করে মাধুর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। সম্বিৎ ফিরে পেল মাধু। কিন্তু সে জায়িনের কাণ্ডে হতবাক। জায়িন নিজের অজান্তেই মাধুর গালও স্পর্শ করল, তারপর ওর চোখজোড়া। বারণ করার মতো বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে যেন মাধু। চোখ বুঁজে সে জায়িনের স্পর্শ অনুভব করছে এবার। একটু পর দূর থেকে গাড়ির হেডলাইটের আলো এসে পড়ল ওদের ওপর। মাধু নিজের মাঝে ফিরে এল তখন। তাকিয়ে দেখল জায়িনের বাসা থেকেই গাড়িটা আসছে। তারপর জায়িনের দিকে তাকাল সে। চোখদু’টো বন্ধ করে পড়ে আছে জায়িন তার বুকে। বুঝতে পারল, জ্ঞান হারিয়েছে সে।

২১
পায়ের জন্য বাধ্য হয়ে জায়িনকে বিশ্রামে থাকতে হচ্ছে গত আটদিন ধরে। সুস্থ থাকলে এই আটদিনে তার কাজ বহুদূর এগিয়ে যেত। এই নিয়ে তার ডিপার্টমেন্টও বেশ মন খারাপ করে আছে। আপাতত তার পরিবর্তে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওপর মহল আশানুরূপ কোনো ফল পাচ্ছে না সেই ব্যক্তির থেকে। যার জন্য জায়িনের সুস্থ কামনাতে তারা ব্যাকুল। জায়িনের সারা বাড়িতে চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে। জাদু আর মাধুর বাড়িটাতেও গার্ড নিযুক্ত করতে চাইলে ওরা দু’জনই সাফ সাফ না জানিয়ে দেয়। বিশেষ করে মাধু রেগেও যায় খানিকটা। এই আটদিনে জাদু আর মাধু বেশ কয়েকবার দেখে গেছে জায়িনকে। তবে জায়িন আর জান্নাতি বেগমের জানামতে বেশিরভাগ সময় দেখতে আসত জাদু। মাঝেমাঝে জাদু আসাতে ভীষণ খুশি দেখাত জায়িনকে। আবার মাঝেমধ্যে জাদুর প্রতি তার রাগ আর বিরক্তও প্রকাশ পেত।

জাদুর হাতের পেশিতে আর পিঠে কিছু তাজা ক্ষতের দাগ। জায়িনের আহত অবস্থা হবার পর দিনেই জাদুর অবস্থাও খারাপ হয়। মাধু বেশ বুঝতে পারে, তার বোনের ওপর ভালোই ঝড় গেছে। এ অবশ্য নতুন নয়। এমন বহু আঘাতের চিহ্ন খুঁজলে পাওয়া যাবে জাদুর শরীরে। বলা যায়, এর থেকে বড়ো বড়ো আঘাত সহ্য করার ক্ষমতাও তার বোনের আছে। এদিক থেকে সে এক প্রকার ভাগ্যবতী। জন্মের পর থেকে তার গায়ে কেউ কখনোই হাত তোলেনি। রাজরানির মতোই তার জীবনের বাইশটা বছর কেটেছে। এখনো সে ভালোই আছে। শুধু মাঝেমধ্যে জাদুর হিংস্র রূপের সামনে পড়লে তার শরীরেও সেদিন অসহনীয় আঘাত বসে। আর তা তার এই ছোটো বোনের দ্বারাই৷

মৃদু গরম পানিতে নরম কাপড়টা ভিজিয়ে তা দিয়ে জাদুর পিঠ মুছে দিতে দিতে মাধু বেশ রাগ কণ্ঠে বলল, ‘নিজের দোষে এভাবে মার খেয়ে এলি। এখন দ্যাখ, কে বিছানায় পড়ে আছে।’
জাদু ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘এখনো রেগে আছিস আপু? সেদিনের জন্য এখনো মাফ করিসনি আমাকে?’
-‘এই খবরদার আপু বলে ডাকবি না।’
জাদু মিটিমিটি হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে কী বলে ডাকব?’
-‘যা বলে ডাকিস।’
-‘মান? কিন্তু তুই কি আদৌ মান?’
দুষ্টুমির আভাস পাওয়া গেল জাদুর কণ্ঠে। কিন্তু এই প্রশ্নে মাধুর মেজাজটা গরম হয়ে উঠল। ইচ্ছা করে জাদুর ক্ষতের জায়গাটা চেপে ধরল সে। জাদু প্রচণ্ড ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে মৃদু চিৎকার করে উঠতেই মাধু বলল, ‘সেদিন তুই কী পরিমাণ ভায়োলেন্ট হয়েছিলি তা কি তোর জানা আছে? শুধু নেশাক্ত অবস্থায় ছিলি বলে চুপচাপ সহ্য করেছি। বলেছি না আমাকে কখনোই রাগানোর চেষ্টা করবি না? আমার কথার বাইরে যাবি না? সেদিন তুই হুকুম দিয়েছিস আমাকে। বারবার বলি এই নেশাগুলো তুই করবি না। তখন তুই এমন রূপে থাকিস না আর। বিশ্রী একটা দয়ামায়াহীন মানুষ হয়ে যাস। আবারও বলছি, ড্রাগস নেওয়া বন্ধ কর।’
-‘করেছিই তো। এখানে আসার পর মাত্র তিন দিন করেছি। কিন্তু তুই তো তোর নেশা একদিনও বাদ দিসনি। তোর কি মনে হয় না তোর নেশা থেকে আমার নেশাটা বেটার? তোর নেশাটা প্রচণ্ড অস্বাভাবিক!’
মাধু ধমকে উঠল, ‘এই থাম! আমার নেশা না ওটা। আমার ওটা চাহিদা। এই চাহিদাটা না থাকাই অস্বাভাবিক। কতবার বলি, চল ডক্টর দেখাই তোকে৷ বরং তোর মনে হয় না, এই চাহিদাটা না থাকা তোর শারীরিক বা মানসিক সমস্যা?’
-‘এটা যদি সমস্যাও হয়ে থাকে, তবু আমি এর ট্রিটমেন্ট নিতে চাই না।’

বুবন লেজ নাড়াতে নাড়াতে এসে বিছানায় উঠে জাদুর মাথার কাছে বসল। জাদুর এই অবস্থায় যে তার মন খারাপ, তা জাদু আর মাধু দু’জনেই বুঝতে পারল। জাদু একটু হেসে বুবনের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাধু তখন উঠে পড়ল হাতের বাটিটা পাশের সেন্টার টেবিলে রেখে। বিকাল সময় এখন। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে একবার জায়িনের ঘরের জানালাটার দিকে তাকাল। কিছুই দেখা যাচ্ছে না সেখানে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জাদুর দিকে আরেকবার তাকাল সে। তারপর আবার জায়িনের ঘরের জানালাটা দেখতে দেখতে জাদুকে জিজ্ঞেস করল, ‘ওর কী অবস্থা এখন?’
জাদু বুবনের সঙ্গে শুয়ে পড়ে খেলা করতে করতে পালটা প্রশ্ন করল, ‘দেখতে যেতে চাস?’
-‘তুই চাস না?’
জাদু এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হেসে তাকাল মাধুর দিকে। মাধুও চেয়ে ছিল তখন ওর দিকেই। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল সে, জাদুর অমন বাঁকা হাসি দেখে। কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়েই আবার পিছু ফিরে তাকাল বোনের দিকে। দেখল, জাদু তখনো মিটিমিটি হেসে চলেছে তার দিকে চেয়ে। তারপর আর দাঁড়াল না সে। বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল।

_______
***পড়তে কি ভালো লাগছে না? মন্তব্য কেন করতে চান না আপনারা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here