#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
১৩.
সন্ধ্যায় বাবা আর ভাইয়ার সামনে খুনের আসামির মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁদছি।এই মুহূর্তে বাবা আমার উপর খুব রেগে আছে।রাগ হওয়ারই কথা,আমি যে আজ শ্রাবণ ভাইয়ার হাতে গরম পানি ঢেলেছি।আমার কোন দোষ ছিল না তাও বাবা আমাকেই দোষ দিচ্ছে,আমি নাকি ইচ্ছে করে এমনটা করেছি।
আসলে হয়েছে কি, আমার একটু খুক খুক করে কাশি হচ্ছিল।শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে পড়াতে এসে কাশি দেখে ভাবিকে এক গ্লাস আদা,এলাচ,লবঙ্গ দেওয়া গরম পানি দিতে বললেন।ভাবি গরম পানি এনে দিয়েছিল।বেশি গরমের জন্য আমি তখন খেতে পারছিলামনা তাই শ্রাবণ ভাইয়া গ্লাসটা একটু সরিয়ে রেখেছিলেন।একটু পর আমার হাত লেগে গ্লাসের গরম পানি গুলো শ্রাবণ ভাইয়ার হাতে ঢেলে পরেছিল।শ্রাবণ ভাইয়া আউচ বলে ধুরমুর করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে হাত ঝারছিলেন তখনই বাবা আমার রুমে এসেছিল।বাবা যা বুঝার নিজের মতো বুঝে নিয়ে শ্রাবণ ভাইয়াকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে বকতে শুরু করলো।শ্রাবণ ভাইয়া যাওয়ার আগে বলে গেলেন আমার কোন দোষ নেই বাবা তাও ভাবছে আমি দুষ্টুমি করে এমনটা করেছি।
বর্তমানে আমি ওড়নার এক কোনা দিকে নাক চোখ মুছে বললাম,
“আমি সত্যি ইচ্ছে করে ফেলিনি হাত লেগে পরে গেছে।”
বাবা সোফায় বসে থেকে উচু গলায় আঙুল ঝাকিয়ে বলছে,
“আদর দিয়ে দিয়ে তোকে বাদর বানিয়ে ফেলেছি।ছেলেটা তোকে একটু শাসন করে দেখে তুই এমনটা করেছিস।”
আমি আর কিছু বললাম না।চুপচাপ মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। দাদি বাবার পাশে সোফায় বসে থেকে বাবাকে বলছে,
“থাক অনেক হইছে তোমরা এবার ছাড়ো ওরে।বলছে তো ইচ্ছে করে করেনি আর এমন ভুল করবেনা।”
ভাইয়া আমাকে চলে যেতে বলতেই আমি এক দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।বেডে পা ঝুলিয়ে বসে কান্না করতে থাকলাম।বাবার উপর খুব অভিমান হয়েছে আমার।বাবা এখনও আমার কথা বিশ্বাস করছে না দেখেই আমার খুব খারাপ লাগছে।হঠাৎই আমি এক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিলাম।দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে শক্ত করে নিয়ে কিচেনে চলে গেলাম।কিচেনে যেয়ে চুলায় পাতিল বসিয়ে পানি ঢেলে দিলাম তারপর পানির মধ্যে গুড়ো মরিচ লবন যা যা মশলা ছিল সব একটু করে দিলাম।পানি টগবগ করে উঠতেই ভাবি কিচেনের দিকে আসতে আসতে বলল,
“একি!তুই এখানে কি করছিস? জুঁই,কি লাগবে তোর?আমাকে বলিসনি কেন?”
ভাবি আমার কাছে আসার আগেই আমি চুলা অফ করে পাতিলের ফুটন্ত পানি বাম হাতের উল্টো পিঠে ঢেলে দিলাম।ভাবি ততক্ষণে আমার কাছে চলে এসেছে। আমি চোখ মুখ শক্ত করে পাতিলটা রেখে দিলাম।ভাবি আমার হাত ধরে চেঁচিয়ে বলল,
“কি করলি এটা?ইশ! কি অবস্থা হয়েছে হাতের।দাদি?বাবা?তালহা?দেখে যাও জুঁই কি করেছে।”
আমি এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে থাকলেও এখন আর পারলাম না।হাত এত বেশি জ্বলছে যে আমার হাত কেটে ফেললেও এত কষ্ট হবেনা।চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম।সবাই রুম থেকে দৌড়ে কিচেনে আসলো।ভাবি আমার হাত সিংকে ধরে পানি ছেড়ে দিল।সবাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ভাবির থেকে সব শুনলো।ভাইয়া ফ্রিজে বরফ নিতে গেল।ভাবি আর বাবা আমাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসিয়ে দিল।আমি কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে বললাম,”এখন তোমার বিশ্বাস হয়েছে?বিশ্বাস না হলেও সমস্যা নেই আমি শাস্তি পেয়ে গেছি।”
বাবা করুন কন্ঠে বলল,”আমি তো জানতাম আমার মেয়ে মিথ্যে বলেনা তাও আমি তোকে বকেছি,সরি আম্মু আর কখনও তোর কথা অবিশ্বাস করবো না।”
আমি কিছু বললাম না।ভাইয়া জগে করে বরফ ঠান্ডা পানি নিয়ে এসে আমার হাত সেখানে ডুবিয়ে দিল।এতক্ষণে একটু স্বস্তি পাচ্ছি।ভাবির সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকলাম।এতক্ষণ বাবা বকছিল এখন ভাইয়া আবার শুরু করলো।কলিং বেল বেজে উঠতেই দাদি ধীরে ধীরে হেঁটে দরজা খুলতে গেল।ভাইয়া আমার হাত জগ থেকে তোলার সাথে সাথে আবার জ্বলতে লাগলো তাই আবার পানিতে ডুবিয়ে দিলাম।একটু পর তৌসি দোঁড়ে আমাদের কাছে আসলো।তারমানে তৌসিই বেল বাজাচ্ছিল,ওর হাতে একটা বাটি দেখতে পাচ্ছি।তৌসি বাটিটা টেবিলে রেখে অবাক হয়ে আমার হাত দেখে বলল,”আমি আম্মুকে ডেকে আনছি।”
বলেই তৌসি চলে গেল।ভাবি আমার পাশে থেকে উঠে রুমে মেডিসিন আনতে গেল।ভাইয়া এবার আমার হাত বের করে জগ নিয়ে চলে গেল।দাদি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাত মোছার জন্য কাপড় আনতে গেল।বাবা চোখ মুখ কুচকে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,”ইশ!কি অবস্থা করেছিস।”
আমি উঠে দাঁড়িয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বললাম,”ধূর কিছু হয়নি।তুমি এত ভীতু কেন বাবা?একটু লাল হয়েছে বা হয়নি তাতেই তোমার মুখের অবস্থা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।”
বলেই আমি একহাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে ফেললাম।কিছু হয়নি বলাটা আমার অভিমানের কথা।আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি,মাথা ঘুরছে আমার।রুমের কাছে আসতেই শ্রাবণ ভাইয়া আর বাবার কথা শুনতে পেলাম।এখান থেকে উনাকে দেখা যাচ্ছে না।উনি ব্যস্ত হয়ে বললেন,”মামা কি হয়েছে জুঁইয়ের?”
আমি দ্রুত রুমে চলে আসলাম।বালিশ ছাড়াই বেডে শুয়ে কপালের উপর ডানহাত দিয়ে রাখলাম।তখনই সবাই আমার রুমে আসলো।আমি একবার ওই দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলাম।শ্রাবণ ভাইয়া এসে আমার পাশে বসে আমার বামহাত নিজের কোলের উপর নিয়ে দেখতে লাগলেন।ফুপ্পি এসে আমার অন্যপাশে বসে চোখের উপর থেকে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে আমার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে দিল।আমি আবার কপালের উপর হাত রেখে বললাম,
“মাথা ঘুরছে।”
ভাবি আমার পাশে বসে হাতে ঠান্ডা কিছু লাগাতে লাগলো।শ্রাবণ ভাইয়া আমার হাত ধরে থেকে রাগী কন্ঠে বলছে,”আমি তো বলে গেলাম ও ইচ্ছে করে করেনি তাও ওকে কেন বকেছো তোমরা?”
ভাইয়া বলল,”তোর এমন টা মনে হচ্ছে কিন্তু ও তো ইচ্ছে করে করতেই পারে।সারাদিন আমার কাছে তোর নামে কমপ্লাইন করে আমি কিছু বলিনা দেখে হয়তো নিজেই…..”
ভাইয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে শ্রাবণ ভাইয়া বললেন,”ও দুষ্টু হতে পারে কিন্তু ডেভিল না।ওরকম শয়তানি বুদ্ধি ওর মাথায় নেই।ভুল করেছো তোমরা আর কষ্ট পাচ্ছে ও।”
আমি রেগে উঠে বসে কম্বল টেনে গায়ে দিতে দিতে বললাম,”উফ্ এত কথা বলছো কেন তোমরা? যাও এখান থেকে,ভাল লাগছেনা তোমাদের।লাইট অফ করো,ঘুম পাচ্ছে আমার।”
বলেই কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পরলাম।এদের সামনে কষ্ট প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে না।শ্রাবণ ভাইয়া কম্বলের মধ্যে থেকে আমার হাত বের করতে করতে বলল,”দেখি হাত বের কর তোর।”
আমি চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকলাম।শ্রাবণ ভাইয়া আমার মুখ থেকে কম্বল টেনে সরিয়ে দিয়ে হাত ধরতেই আমি উঠে বসে পাশে থাকা ফাস্ট এইড বক্সটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,
“যাবে তোমরা?যাও এখান থেকে,ভাল লাগেনা তোমাদের এসব সিমপ্যাথি।”
আমি আবার শুয়ে পরলাম।আর কারও কথা শুনতে পেলাম না।পায়ের শব্দে বুঝতে পারলাম সবাই চলে যাচ্ছে কিন্তু শ্রাবণ ভাইয়া আর ফুপ্পি আমার পাশেই বসে থাকলো।আমি কম্বলের মধ্যে চুপ করে শুয়ে থাকলাম।হাতের ব্যাথায় কান্না পাচ্ছে আমার।আমি ধীরে ধীরে হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকলাম।শ্রাবণ ভাইয়া আমার হাত টেনে বের করে উনার কোলের উপর রেখে ঠান্ডা কিছু দিতে লাগলেন। ফুপ্পি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।প্রায় এক ঘন্টা পর আমার একটু ঘুম ঘুম ভাব হতেই শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে টেনে তুলে বসিয়ে দিলেন।মাথা ঘুরা নেই কিন্তু হাতের অবস্থা খারাপ,লাল লাল ফোসকা পরেছে।ভাবি খাবার নিয়ে এসে আমাকে খাওয়াতে লাগলো।আমি থম থমে মুখ করে একটু খেলাম।আবার সবাই আমার রুমে এসেছে।আমি কারও সাথে কথা বললাম না আর কারো দিকে তাকায়ওনি,রেগে আছি সবার উপর।শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে দুটো মেডিসিন দিতেই আমি সেগুলো খেয়ে শুয়ে পরলাম।সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে কোথায় কষ্ট হচ্ছে, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে কিনা।আমি কারো কথার কোন জবাব না দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
হাতে চিন চিনে ব্যাথা হওয়ায় ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখি শ্রাবণ ভাইয়া আমার হাতে গজ বেধে দিচ্ছেন।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি অনেকটা সকাল হয়ে গেছে।আমি হাত টান দিয়ে উঠে বসে হাত থেকে গজ খুলতে লাগলাম।শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে বাঁধা দিয়ে বললেন,
“খুলোনা তোমার টেডি আর কম্বলের পশম আটকে যাচ্ছে ওখানে।”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”তাতে আপনার কি?বের হন আমার রুম থেকে,আমাদের বাসায় আর আসবেন না।”
উনি আমার গাল টেনে বললেন,”সো কিউট!”
আমি রেগে গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিলাম আর খেয়াল করলাম উনার হাতে গরম পানি পরে কিছুই হয়নি,শুধু হালকা লালচে হয়ে আছে আর আমি বোকার মতো নিজের হাতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি।আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আপনার হাতে তো কিছুই হয়নি,ভালই তো ব্যাথা পাওয়ার অভিনয় করে আমাকে বকা খাওয়ালেন।আপনার জন্য আমার হাতটা সেদ্ধ হয়ে গেল।”
উনি দুষ্ট হেসে আমার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন, “আমার জন্য যখন এত কষ্ট পেলে আসো আমি তোমাকে একটু আদর করে দিই।”
আমি বেড থেকে নেমে ভাবির কাছে এক দৌঁড় দিয়েছি,উনিও হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন না।উনি পেছন থেকে আমার জামা ধরে আমাকে আটকিয়ে দিলেন।আমি পেছন দিকে ঘুরে রাগী চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার কোমরে দুই হাত দিতেই ফুপ্পি আর ভাবির কথার আওয়াজ পেয়েই উনি তড়িৎ গতিতে আমার থেকে আট-দশ হাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন।আমি জোড়ে জোড়ে হাসতে হাসতে বললাম,
“ভয় লাগে চান্দু? দাঁড়ান ফুপ্পিকে বলে দিবো।”
উনি অসহায় ফেস করে বললেন,”বলিস না,আম্মু তাহলে আর এখানে আসতে দিবেনা।”
আমি খুশি হয়ে বললাম,”তাহলে তো আরো আগে বলবো।”
উনি রাগী মুখ করে বললেন,”এসব বলতে তোর লজ্জা করেনা একটুও?”
আমি ভ্রু কুচকে উনার কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বললাম,”কিসের লজ্জা?তুমি আমাকে কামড়ে মাংস তুলে নিবে আর আমি কাউকে না বলে চুপ করে বসে থাকবো?ফাইট ইজ ফাইট,তুমি ফাইট করলে আমিও করবো।”
বলেই উনার হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম।ভাবি আর ফুপ্পি ততক্ষণে রুমে চলে এসেছে। ভাবি আমার কাছে এসে বলল,”জুঁই কি করছিস ছাড়।”
আমি উনার হাত ছেড়ে দিয়ে বললাম,”উফ্ দাঁত ব্যাথা করছে।”
উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি মুচকি হাসছেন আর উনার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি লাল দাগ হয়ে গিয়েছে।এত জোড়ে কামড় দিলাম তাও উনি কাঁদা বাদ দিয়ে হাসছেন।উনার হাসি দেখে আমার গা জ্বলে গেল।আমি ফুপ্পির দিকে তাকিয়ে বললাম,”আরও তিনটে কামড় আর ছয়টা থাপ্পড় বাকি থাকলো,তোমরা তো কিছু বলবা না।এখন থেকে আমার প্রতিশোধ আমাকেই নিতে হবে।তোমরা না আসলে শ্রাবণ ভাইয়া এখনই আমাকে মারতো।”
ফুপ্পি শ্রাবণ ভাইয়ার দিকে রাগী চোখে তাকালো।শ্রাবণ ভাইয়া রুম থেকে চলে গেলেন।আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে থাকলাম তখন ফুপ্পি আমার পাশে বসে আমাকে বলল শ্রাবণ ভাইয়াকে যেন কাছে আসতে না দিই।উনাকে যেন আমার গায়ে হাত দিতে না দিই।আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছি তাই ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে হবে।শ্রাবণ ভাইয়াও তো ছেলে আর আমার থেকে অনেক বড় তাই উনার সাথে ভদ্রতা বজায় রেখে চলতে হবে।নাহলে সবাই আমাকে খারাপ মেয়ে বলবে।আমি খারাপ মেয়ে হবো না তাই ফুপ্পির কথা ভাল করে মেনে চলতে হবে।
বিকেলে সোফায় বসে আমি আর ভাবি টিভি দেখছিলাম আর চিপস খাচ্ছিলাম তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।তৌসিকে ভেবে আমি দৌঁড়ে যেয়ে দরজা খুলে দিলাম।খুলে দেখি আমার সামনে শুভ দাঁড়িয়ে আছে।উনাকে দেখে একটু ক্লান্ত লাগছে আর একটু হাপাচ্ছেও।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”আপনি আজকে আবার এসেছেন?”
উনি হালকা হেসে বললেন,”কেন তুমি খুশি হওনি?বাহিরে যাবা?আজকে আমাদের পার্টি আছে।”
আমি ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম,”ভাবস তোমার কাজিন এসেছে।”
তারপর শুভর দিকে তাকিয়ে বললাম,” যান ভেতরে গিয়ে বসুন। আমি অপরিচিতদের সাথে বাহিরে যাইনা,তাছাড়াও একটুপর শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে যেতে হবে।”
শুভ মুখ মলিন করে বলল,”আমি অপরিচিত?আচ্ছা আমরা পরিচিত হই চলো।তোমার আইসক্রিম খেতে ভাল লাগে?আজকে আমরা আইসক্রিম খাবো তাহলে।”
আমি বিরক্ত হয়ে উনাকে ভেতরে যেতে বললাম।উনি ভেতরে যেয়ে ভাবির সাথে কথা বলতে লাগলেন, আমি বাহিরে আসতে লাগলাম তখনই শুভ বলল,
“জুঁই কোথায় যাচ্ছো?তোমার সাথে কথা বলার জন্য এতগুলো সিঁড়ি ভেঙে এখানে আসলাম আর তুমি চলে যাচ্ছো?”
ভাবি বলল,”সেকি!লিফটের আবার কি হল?”
আমি ওদের কথাকে পাত্তা না দিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রকি সিঁড়ি দিয়ে উঠে ছাদের দিকে যাচ্ছে।আমি রকির কাছে যেতে যেতে বললাম,”এই রকি দাঁড়াও,আমিও যাবো।”
রকি পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।ওর কাছে যেতেই ও আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,”ফুল?হাতে কি হয়েছে তোমার?”
আমি সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বললাম,”গরম পানির সাথে ক্রাশ খেয়েছে। আচ্ছা তুমি আমাকে সিম দিলানা তো।”
রকি আমার পেছন পেছন আসতে আসতে বলল,”এখন আমার কাছে এক্সট্রা সিম নেই,তোমার এক্সাম শেষ হোক তারপর দিবো।”
আমি রেলিং এ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,”এক্সট্রা নেই তাহলে কিনে দাও,আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দিবো।তোমার তো ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে তাহলে কিনে দাও একটা সিম।”
রকি বলল,”আইডি হারিয়ে ফেলেছি, তাই তো কিনতে পারছিনা।”
আমি মুখ ফুলিয়ে ছাদে আসতেই দেখি শ্রাবণ ভাইয়া কার সাথে যেন ভিডিও কলে কথা বলছে।একটু কাছে এগিয়ে যেতেই ফোনের মধ্যে থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পেলাম কিন্তু কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।শ্রাবণ ভাইয়ার কথাও কিছু বুঝতে পারছিনা,দুজনই খুব স্পীডের সাথে ইংলিশে অনড়গল কথা বলে যাচ্ছে।একটা ওয়ার্ড বুঝতে ওদের একটা সেনটেন্স বলা শেষ হয়ে যাচ্ছে।আমি যে শ্রাবণ ভাইয়ার পেছনে এসেছি সেটা উনি দেখতে পাননি তাই হঠাৎ উনি পেছন দিকে ঘুরতেই আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে আমি আর উনার ফোন নিচে পরে গেলাম।উনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে টেনে তুলে রাগী কন্ঠে বললেন,
“বোকার মতো পেছনে দাঁড়িয়ে কি করছিলি?কোথায় লেগেছে?”
আমি ফ্লোরে পরে থাকা উনার ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,”আপনার ফোন তো ফেটে গেল এখন কি হবে?”
উনি আমার হাত চেক করে বললেন,”এখানে লেগেছে?”
পেছন থেকে রকি বলল,”এই শ্রাবণ ভাইয়া তোমার কথায় সত্যি হলো লিফট নষ্ট হয়ে গেছে।”
শ্রাবণ ভাইয়া রকির দিকে তাকিয়ে বললেন,”এই এলবেটর আর ঠিক হবে না দেখো।”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”এলবেটর কি শ্রাবণ ভাইয়া?”
উনি আমার নাক টেনে বললেন,”লিফট!”
আমি উনার ফোন তুলে উনার হাতে দিয়ে বললাম,”তোমার ফোন তো আমার জন্য ফেটে গেল,এখন কি হবে?”
উনি ফোন পকেটে ঢুকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,”তোর তো টাকার অভাব নেই,তুই আমাকে একটা নিউ ফোন কিনে দিবি।ওনলি নাইনটি থাউজেন্ট হলেই আমার ফোন হয়ে যাবে।”
আমি হা করে উনার দিকে তাকালাম।রকি হাসতে হাসতে বলল”নব্বই হাজার টাকা,ফুল এত টাকা কোথায় পাবা?”
আমি ব্রাশ মার্কা হাসি দিয়ে বললাম,”কেন তুমি দিবা,আমাকে নাকি বিয়ে করবা তাহলে তুমিই দিও টাকা।”
রকি হাসতে হাসতে বলল,”তুমি বরং শ্রাবণ ভাইয়াকেই বিয়ে করো তাহলে আমার আর টাকা দেওয়া লাগবেনা,তাইনা শ্রাবণ ভাইয়া?
দুজনার হাসি দেখে আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,”আমি সিজানকে বিয়ে করবো।সিজান দিবে সব টাকা।”
রকি হাসতে হাসতে বলল,”সিজান কোথায় থেকে দিবে?ওর বাবাবা ওকে অত টাকা দিবেনা।সিজানকে বেঁচে দিলেও অত টাকা আসবেনা।তারচেয়ে ভাল তুমি শ্রাবণ ভাইয়াকেই বিয়ে কর।”
আমি শ্রাবণ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।আমি উনাকে মুখ ভেঙচি দিয়ে রকির দিকে তাকিয়ে বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়াকে বিয়ে করা যায় না রকি,ওটাতো ভাইয়া।আমি সিজানকেই বিয়ে করবো নাহলে তোমাকে করা লাগবে।তুমি তো…..”
আর কিছু বলার আগেই শ্রাবণ ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন।আমি উনার সাথে যেতে যেতে বললাম,”এই শ্রাবণ ভাইয়া আপনি আবার আমার হাত ধরেছেন কেন?হাত ছাড়ুন।ফুপ্পি বলেছে আপনাকে যেন গায়ে হাত দিতে না দিই।”
সিঁড়ির কাছে এসে উনি আমাকে কোলে নিয়ে নিচে চলে আসলেন।আমাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে উনি আমাকে আমার চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে আমাকে কেমিস্ট্রি বই এগিয়ে দিয়ে পড়তে বলে বাহিরে গেলেন।আমি উঠে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম কারন শুভকে দেখলাম সোফায় বসে আছে।ছেলেটাকে আমার একদম ভাল লাগেনা,উনি যাতে আমার রুমে না আসতে পারেন তারজন্য দরজা লাগিয়ে দিলাম।
চলবে…………..