#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
১৪.
স্কুল শেষে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হেমার সাথে কথা বলছি আর শ্রাবণ ভাইয়ার জন্য ওয়েট করছি।দুটোর সময় স্কুল শেষ হয়েছে এখন দুটো বেজে পাঁচ মিনিট তাও উনি আসেননি।আমার ফ্রেন্ডরা সবাই চলে গেছে শুধু হেমা শ্রাবণ ভাইয়াকে দেখার জন্য আছে।আমি হেমার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,
“তুই তাহলে শ্রাবণ ভাইয়াকে সত্যি বয়ফ্রেন্ড বানাবি?”
হেমা বলল,”হুম কিন্তু আমি উনাকে মারতে পারবোনা তুই অন্যকিছু করতে বল আমি সব করবো তুই শুধু আমাকে উনার গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে দিবি।”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,”তাইলে তুমি ভাগো।”
হেমা মুচকি হেসে বলল,”আমার কাছে সিজানের ফোন নাম্বার আছে।”
আমি স্কুলের গেইটের সামনে আইসক্রিমের দোকানের দিকে তাকিয়ে বললাম,”আমার কাছেও আছে।সিজান কিছুদিন আগেই আমাকে ফোন করেছিল।ও বলেছে এক্সাম শেষ হলেই আমাকে গার্লফ্রেন্ড বানাবে।চল তো আইসক্রিম খাবো।”
হেমা মন খারাপ করে বলল,”ভাল লাগছে না তুই খা।”
আমি ওকে টেনে দোকানের সামনে নিয়ে যেয়ে দুটো আইসক্রিম নিয়ে খেতে লাগলাম।হেমা অনেক মন খারাপ করে আছে দেখে আমার একটুও ভাল লাগছেনা তাই ভাবলাম একমাত্র বেস্টু যখন এত করে চাইছে তখন ওকে শ্রাবণ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে দিই।আমি হেমাকে নিয়ে দোকান থেকে কিছুটা সাইডে এসে বললাম,
“হয়েছে আর মন খারাপ করে থাকতে হবেনা আমি দেখছি কি করা যায়।”
খুশিতে হেমার মুখ চকচক করে উঠলো।হেমা আমার একবাহু জড়িয়ে ধরে বলল,”তাহলে শ্রাবণ ভাইয়ার ফোন নাম্বার দে।”
আমাদের সামনে রাস্তা থেকে কেউ হেমাকে ডাকতেই আমরা সেদিকে তাকিয়ে দেখি হেমার বাবা গাড়িতে বসে হেমাকে ডাকছে।হেমা বলল,”বাবা এই সময় এখানে কেন?আচ্ছা শোন,কাল কিন্তু অবশ্যই শ্রাবণ ভাইয়ার নাম্বার দিবি।”
আমি বললাম,”ওকে।”
হেমা এক দৌঁড়ে ওর বাবার কাছে চলে গেল। আমি একা একা দাঁড়িয়ে থাকলাম।হেমা আর আমার বাসা বিপরীত দিকে হওয়ায় আমরা কখনও একসাথে বাসায় যেতে পারিনা।হাতে থাকা বাকি আইসক্রিম কামড়ে খেয়ে আমি আবার একটা আইসক্রিম নিলাম।দুই মিনিটের মধ্যে এটাও কামড়ে খেয়ে শেষ করে আরেকটা নিয়ে খাওয়া শুরু করেছি তখনই পেছন থেকে কেউ আমার হাত থেকে আইসক্রিম কেড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিল।আমি ভ্রু কুচকে পেছনে তাকিয়ে দেখি শ্রাবণ ভাইয়া।আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি রাগী কন্ঠে বললেন,
“আইসক্রিম খেতে না করেছি তাও কেন খেয়েছিস?ঠান্ডা লাগবে তো।”
আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”তাতে আপনার কি?”
উনি এক হাতে কপালের চুল মাথার উপর ঠেলে দিয়ে বললেন,”আমারই সব।”
“তাতে আমার কি?আপনার সব হলেই কি আর নাহলেই কি আমি আইসক্রিম খাবোই।”
আমার কথা শেষ হতেই উনি আমার একহাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন।আমি উনার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললাম,
“আপনি আবার আমার হাত ধরেছেন?আমি কিন্তু আবার ফুপ্পিকে বলে দিবো।”
উনি আমাকে নিয়ে গাড়ির পেছন সিটে বসে আমার কাঁধের উপর দিয়ে হাত রেখে আমার সাথে লেগে বসলেন।আমি উনাকে ঠেলে সরাতে পারছিনা।আমি রেগে চেঁচিয়ে বললাম,
“জোঁকের মতো লেগে আছো কেন?হিরুডো হয়েছো?চলো বাসায় ফুপ্পির হাতে তোমাকে মাইর খাইয়ে নিবো।”
উনি আমাকে আরও শক্ত করে ধরে বললেন,”আমিও আম্মুকে বলে দিবো তুই আমার ফোন ফাটিয়েছিস।”
আমি ভীত চোখে উনার দিকে তাকালাম।তারপর হাসার চেষ্টা করে বললাম,”ফুপ্পি আমাকে কিছু বলবেনা হু।”
উনি দুষ্টু হেসে বললেন,”কিন্তু আমি তোকে ছেড়ে দিবো ভাবছিস?আজকের মধ্যে আমাকে হয় নিউ ফোন কিনে দিবি নাহলে টাকা দিবি, না টাকা নয় আমার ওইরকমই ফোন চাই।”
আমি মন খারাপ করে বললাম,”আমার কাছে অত টাকা নেই আর ওইরকম ফোন কোথায় পাবো?আচ্ছা আপনি তাহলে আমার ফোনটায় নিয়ে নিন।”
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে নাক সিটকে বললেন,”তোর ফোন?কোথায় আমার ফোন আর কোথায় তোর ফোন।তোর ফোন নিবো না।”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”তাহলে কি নিবেন?আমার ল্যাপটপ নিবেন?”
উনি হাসতে হাসতে বললেন,”তোর ওই খেলনা ল্যাপটপ আমার কোন কাজে আসবেনা।”
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,”তাহলে কি নিবেন?সিজানকে…”
উনি আমার নাক মুখ চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বললেন,”একদম বাজে কথা বলবিনা,খুন করে ফেলবো।”
আমি উনার হাত টেনে সরিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বললাম,”সামান্য ক’টা টাকার জন্য আমাকে খুন করবেন?বাসায় চলুন বাবাকে বলে আপনাকে সব টাকা দিয়ে দিবো।”
উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,”তোর বাবার টাকা কেন নিবো?ফোন তুই নষ্ট করেছিস টাকাও তুই দিবি।”
আমি অসহায় মুখ করে উনার দিকে তাকালাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,”তুই যদি আজকের মধ্যে টাকা দিতে না পারিস তাহলে আজকে রাত বারোটা এক মিনিট থেকে তুই আমাকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বানাবি।”
আমি হা করে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হেসে বললেন,”আর যদি না পারিস তাহলে আমার টাকা আমাকে দিয়ে দিবি।ফোন শুধু ফেটে গেলে তোকে কিছু বলতাম না কিন্তু ফোনটাতো আর অন হয়না,নষ্ট হয়ে গেছে তাই তোকে ছাড়া যাবে না।”
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,”আমি আগে রকিকে বয়ফ্রেন্ড বানাবো তারপর অন্যদের তারপর আপনি।”
উনি আমার গাল ধরে বললেন,”ঠিক আছে বানিয়ো কিন্তু আগে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হবো তারপর অন্যরা।”
আমি গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,”আমি আপনাকে বয়ফ্রেন্ড বানাবোনা।”
উনি রেগে গেলেন।আমাকে ছেড়ে দিয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়ে সামনে ড্রাইভিং সিটে বসলেন।আমি পেছন থেকে ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অনেক জোড়ে ড্রাইভ করতে লাগলেন।লুকিং গ্লাসে উনার তীক্ষ্ণ চোখ দেখতে পাচ্ছি।কপালের উপর কালো সিল্কি চুল গুলো পড়ে আছে।আমি একটু চিন্তায় পরে গেলাম।শ্রাবণ ভাইয়া তো রকি সিজানের থেকে বেশি সুন্দর তাহলে কি উনাকেই বয়ফ্রেন্ড করবো?আমি না করলে হেমা করবে তখন হেমার বয়ফ্রেন্ড আমার টার চেয়ে বেশি সুন্দর হবে।না না এটা হতে পারেনা আমার বয়ফ্রেন্ডকে বেশি সুন্দর হতে হবে।আর শ্রাবণ ভাইয়াকে আমার সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে কিন্তু উনি তো আমাকে কথায় কথায় থাপ্পড় দেন।আচ্ছা আমি যদি উনার গার্লফ্রেন্ড হয়ে উনাকে অনেক জ্বালায়, সবগুলো থাপ্পড় আর কামড়ের প্রতিশোধ নিই তাহলে কেমন হয়?খুবই ভাল হয়।এসব চিন্তা করেই হঠাৎই আমি লাফিয়ে উঠে বললাম,”ইয়েস ইয়েস ইয়েস এটাই ভাল হবে।”
শ্রাবণ ভাইয়া লুকিং গ্লাসে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,”কি ভাল হবে?”
আমি পেছন থেকে সামনের সিটে যেয়ে বসে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আপনাকে বয়ফ্রেন্ড বানালে আমার সিম ফেরত দিবেন?আর থাপ্পড় টাপ্পর কিছু মারবেন নাতো?”উনি সামনে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন তারপর সিরিয়াস মুখ করে বললেন,
“তুই আমাকে কন্ডিশন দিচ্ছিস?লাগবেনা তোর বয়ফ্রেন্ড হওয়া,তুই আমাকে নিউ ফোন কিনে দে।”
আমি আবার চিন্তায় পরে গেলাম।জানালার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকলাম।ভাবতে ভাবতে শ্রাবণ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,
“আমি কেন ফোন কিনে দিবো?তুমি আমাকে মেরেছো তার শাস্তি স্বরুপ তেমার ফোন ফেটে গেছে,এখন সব শোধ বোধ আর শোন আমি ইচ্ছে করে তোমার ফোন ফেলে দিইনি,বুঝেছো তুমি?আমাকে আর ফোনের কথা বলবানা কখনও।”
উনি গাড়ি থামিয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”আমিও ইচ্ছে করে তোকে মারিনি তাহলে তুই কেন সারাদিন সবার কাছে আমার নামে কমপ্লাইন করিস?”
আমার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল।আমি গাড়ির সিটের উপর হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললাম,”একশো বার করবো হাজার বার করবো তাতে তোর কি?তুই আমাকে থাপ্পড় মেরেছিস,কামড় দিয়েছিস,সিম নিয়েছিস,তোর জন্য বাবা আমাকে বকেছে,আমার হাত পুড়েছে আর…. আর…আমাকে প্রতিদিন মিল্ক খেতে হয় আর সবজিও।আমি তোর ফোন কেন তোর এই গাড়িও ভাঙবো।তুই একটা বা********।”
গড় গড় করে কথাগুলো বলে উনার গাড়ির সামনে ঝুলিয়ে রাখা এক থোকা কৃত্রিম কালো আঙুর ফল টেনে ছিড়ে ফেললাম আর সাথে সাথেই একটা চিৎকার দিলাম কারন উনি আমার কোমড়ে অনেক জোড়ে চিমটি দিয়েছেন।আমি চিৎকার দিয়ে উনার হাত সরাতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।উনি চিমটি দিয়ে রেখে রাগী কন্ঠে বললেন,
“আর কখনও গালি দিবি?”
আমি কান্না করতে করতে বললাম,”না না দিবোনা ছেড়ে দিন!”
উনি আরও জোড়ে চিমটি দিয়ে বললেন,”আম্মুকে বলে দিবি সব?”
“বলবোনা কিছু অ্যা অ্যা অ্যা..”
উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি ড্রেসের উপর দিয়ে চিমটি দেওয়া জায়গায় হাত দিয়ে মালিশ করতে থাকলাম।সিটে ঠিক করে বসে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আপনি আর কখনও আমার সাথে কথা বলবেন না।”
উনি আমার চোখ মুছে দিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,”একদম ত্যাড়ামি করবিনা,ভাল বাচ্চার মতো আমার সব কথা শুনবি নাহলে মেরে তোর হাড় গুড়ো করে দিবো।”
বলেই উনি ড্রাইভ করতে লাগলেন।আমি মুখ ফুলিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আমার জানা সব গুলো গালি উনার উপর এপ্লাই করলাম।উনি এসব শুনতে পেলে নিশ্চয় এতক্ষণ আমাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতেন।একটু পর আমরা বাসায় চলে আসলাম।নয়তলায় এসে আমিও শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে উনাদের ফ্ল্যাটে গেলাম।উনি নিজের রুমে যেতেই আমি ফুপ্পির কাছে যেয়ে উনার নামে নালিশ জানালাম।ড্রেস কোমড় থেকে সরিয়ে ফুপ্পিকে লাল হয়ে থাকা চিমটি কাঁটা জায়গাও দেখালাম তারপর মনের আনন্দে হেলিয়ে দুলিয়ে নিজের বাসায় চলে আসলাম।
রাত আটটা বেজে গেছে তাও শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে পড়াতে আসলেননা।আজকে আমার ছুটি ভেবে আমি টিভি দেখতে চলে গেলাম।টিভি অন করতে না করতেই শ্রাবণ ভাইয়া টিভির সামনে এসে হাজির।আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম।উনি কালো টিশার্ট আর কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরে আছেন।উনাকে খুব স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে,মনে হয় এই মাত্র শাওয়ার নিয়েছেন কারন উনার চুলগুলো সব ভেজা দেখাচ্ছে।উনার নাক আর কান লাল হয়ে আছে।বাম হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন।উনাকে ভাল করে দেখা শেষ হলে আমি এবার উনার পেছনে টিভির দিকে উকি দিতে লাগলাম তখনই উনি দ্রুত পায়ে আমার কাছে এসে এক হাতে আমার কান ধরে টেনে নিয়ে রুমে আসলেন।রুমে এসে আমার কান ছেড়ে দিয়ে চেয়ার টেনে বসে রাগী কন্ঠে বললেন,
“এত পড়াচোর কেন তুই?আসতে একটু লেইট করেছি আর যেয়ে টিভিতে বসেছিস?আজকে সারারাত জেগে পড়বি।”
আমি চেয়ারে বসে উনার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বাংলা বই বের করলাম।সাথে সাথে উনি আমার দিকে হাইয়ার ম্যাথ বই এগিয়ে দিলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি রেগে লাল হয়ে আছেন।আমি মনে মনে ভাবলাম ফুপ্পিকে সব বলে এসেছি সেজন্য কি উনি এমন করে রেগে আছেন?আমি খাতা কলম বের করে বই খুলে উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে মিন মিন করে বললাম,
“আজকে ত্রিকোণমিতি,আমি ভাল পারিনা।”
উনি এক ধমক দিয়ে বললেন,”তাহলে কি পারিস তুই?”
উনার ধমক শুনে আমি হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠেছি।উনি চোখ মুখ শক্ত করে সামনে থাকা খাতাটা আমার মুখে ছুড়ে দিয়ে বললেন,
” বসে আছিস কেন?আমাকে কি তোর ফালতু মনে হচ্ছে?আমার সময়ের দাম নেই তোর কাছে?সারাদিন তোকে নিয়ে পরে থাকলে তোর বাপ আমার পড়া করে দিয়ে আসবে?”
আমি খাতাটা ঠিক করে বই নিজের দিকে টেনে নিয়ে মাথা নিচু করে অংক দেখতে লাগলাম।ত্রিকোণমিতির সূত্র আর মানগুলো আমার মনে থাকেনা তাই পারিনা। আসলে আমি চেষ্টা করিনা তাই পারিনা।অনুশীলনীর একনাম্বারের সব গুলো অংকের মান বের করে খাতাটা শ্রাবণ ভাইয়ার দিকে এগিয়ে দিলাম।উনি একটানে সব গুলো অংক কেঁটে দিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,
“কি করেছিস এসব?ট্যান সমান লম্ব বাই অতিভূজ?তোর মাথায় কি হাইড্রোজেন গ্যাস আছে?সব পড়া মাথার মধ্যে নিয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়ে সেগুলো বেলুনের মতো আকাশে উড়িয়ে দিস?সেজন্য একটা পড়াও মনে রাখতে পারিস না?”
উনি আমার খাতায় কি যেন লিখতে লাগলেন আমি মাথা নিচু করে আছি জন্য দেখতে পাচ্ছি না।উনি আমাকে এত বকছেন দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে।উনি লিখতে লিখতে আবার রাগী কন্ঠে বললেন,
“কাল থেকে তুই ব্যাঙ খাবি,ব্যাঙের মাংসে প্রচুর প্রোটিন আছে ওটা খেলে বুদ্ধি বাড়বে ।তোর মতো পুডিং-হেডেড মেয়ের ব্যাঙ খাওয়ায় উচিত,ডাফার নাম্বার ওয়ান!”
উনার কথা শুনে আমার মুখ অমাবস্যা রাতের মতো অন্ধকার হয়ে গেল।আমাকে উনি এত বোকা ভাবেন!ব্যাঙের মতো বিশ্রী প্রাণী আমাকে খেতে বলছেন!উনি খাতায় ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে লিখছিলেন আমি উনার মুখের দিকে তাকাতেই উনি রেগে আমার মুখের উপর খাতাটা ছুড়ে মারলেন।খাতাটা আমার মুখে লেগে ফ্লোরে পরে গেল।আমি এবার কেঁদেই দিয়েছি।উনি এক হাতে টেবিলে বারি দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে রুম থেকে চলে গেলেন।আমি একইভাবে মাথানিচু করে জোড়ে জোড়ে হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকলাম।আধ ঘন্টা ধরে কান্নাকাটি করে আমি খাতাটা টেবিলে গুছিয়ে রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে বেলকুনিতে গেলাম।এখন আমার নিজের উপর রাগ হচ্ছে।আমি আসলেই বোকা।শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে অতগুলো কথা শুনিয়ে চলে গেলেন আর আমি কিছু বললাম না,গাধার মতো বসে থেকে কান্না করে সর্দি লাগিয়ে ফেললাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আটটা বাজে।ন’টায় আমার স্কুল, রাতে মেডিসিন খাওয়ার জন্য সকালে উঠতে অনেক লেট হয়ে গেছে।ফ্রেশ হয়ে স্কুলের জন্য রেডি হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে দেখি সাড়ে আটটা বাজে।আধ ঘন্টার মধ্যে হয়তো যেতে পারবোনা,ফাস্ট ক্লাসে স্যারের বকা খেতে হবে।আমি দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখি বাবা- ভাইয়া ব্রেকফাস্ট করছে।আমি বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়া আসেনি?”
ভাইয়া বলল,”না এখন থেকে তুই ড্রাইভারের সাথে যাবি,শ্রাবণ ব্যস্ত আছে।”
আমি ‘অহ’ বলেই চলে আসতে লাগলাম।পেছন থেকে বাবা ভাইয়া ভাবি দাদি আমাকে খেতে বলল কিন্তু আমি কারো কথা শুনলাম না।লিফট ফাঁকা পেয়ে দৌঁড়ে যেয়ে লিফটে উঠে নিচে চলে আসলাম।ড্রাইভার চাচা গাড়িতে নেই দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।আশেপাশে কোথাও নেই দেখে আমি গেইটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমি একটা রিক্সা ডাকলাম।রিক্সাটা আমার কাছে আসার আগেই গেইট দিয়ে শ্রাবণ ভাইয়া কালো গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে আসলেন।আমি একবার ওইদিকে তাকিয়ে গাড়ির কাছে এগিয়ে যেতে লাগলাম কিন্তু উনি গাড়ি থামালেন না।সোজা চলে গেলেন,আমি হা করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।এটা কি ছিল!!!উনি কি আমাকে ইনসাল্ট করলেন!!রিক্সা আমার কাছে আসতেই আমি রিক্সায় উঠে স্কুলে চলে আসলাম।রাস্তায় প্রচুর জ্যাম থাকায় প্রথম ক্লাস ধরতেই পারিনি।তবে জ্যামে দেখলাম শ্রাবণ ভাইয়াও আটকে ছিলেন।উনি আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে ছিলেন।উনি আমাকে ইগনোর করছেন দেখে আমিও আগ বাড়িয়ে উনাকে কিছু বলিনি।উনার গাড়ির পাশে রিক্সায় বসে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছিল তাই রিক্সা থেকে নেমে বাকিটা রাস্তা ফুটপাত দিয়ে হেঁটেই চলে এসেছি।
হেমার সাথে দেখা হতেই ও শ্রাবণ ভাইয়ার ফোন নাম্বার নিতে চাইলো।আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম শ্রাবণ ভাইয়ার ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই আর উনি আমার সাথে কত খারাপ ব্যবহার করেন তাও হেমাকে বললাম।সব শুনে হেমা আমারই দোষ দিল।আমিও হেমাকে বলে দিলাম ও যেন আমাকে শ্রাবণ ভাইয়ার কথা আর না বলে।হেমার সাথে আমার মনমালিন্য হলো, দুজন ক্লাসের দুই মেরুতে বসে স্কুল শেষ করলাম।স্কুল শেষে ড্রাইভার চাচার সাথে বাসায় ফিরে এলাম।
সারাদিন শ্রাবণ ভাইয়ার প্রোগ্রাম ফলো করে চললাম কিন্তু আজকে রাতে উনি পড়াতে আসলেন না।কালকে স্কুলে ইংলিশ আর জেনারেল ম্যাথ এক্সাম আছে জন্য আমি শুধু দুটো সাবজেক্ট পড়লাম,ক্লাসের পড়া গুলো আর দেখলাম না।ন’টা পঞ্চাশে ঘুমোতে গেলাম।কেবল একটু ঘুম ঘুম ভাব হয়েছে তখনই তৌসি এসে আমাকে টেনে তুললো।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“তুই এত রাতে এখানে কি করছিস?”
তৌসি এক্সাইটেড হয়ে বলল,”এত রাত?কেবল দশটা বাজে।তাড়াতাড়ি ছাদে চল,ওখানে সবাই আছে।দুদিন পরই তো পহেলা ডিসেম্বর, ড্রিম ওয়ার্ল্ডের তিনবছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে।সব ভাইয়া আপুরা মিটিং করছে।”
তৌসি আমাকে জোড় করে ছাদে নিয়ে আসলো।এখানে এসে দেখি সোসাইটির সব ছেলে-মেয়ে এসেছে। ভাইয়া আর শ্রাবণ ভাইয়াও এখানে উপস্থিত।খোলা আকাশের নিচে পূর্ণিমার আলোতে সবাই ফ্লোরে বসে আছে।আমি বুঝতে পারছিনা এই শীতের মধ্যে এরা অডিটোরিয়ামে না বসে এখানে কেন বসেছে।আমি শীতের পোষাক না নিয়েই চলে এসেছি তাই আমার শীত করছে।আমাকে রেখেই তৌসি গিয়ে শ্রাবণ ভাইয়ার কাছে বসলো।আমি যেয়ে ফিহা আপুর কাছে বসলাম।আমার শীত করছিল দেখে আপু আমার দিকে একটু চাদর এগিয়ে দিল।দুজন ভাগাভাগি করে এক চাদরের মধ্যে বসে থাকলাম।সবাই বিভিন্ন কন্টেস্টে নাম দিতে লাগলো।গতবার ড্রিম ওয়ার্ল্ড বিউটি কন্টেস্টের আয়োজন করা হয়েছিল,আমি ফার্স্ট হয়েছিলাম।এবারও এখানকার পনেরো থেকে ত্রিশ বছর বয়সি ছত্রিশটি মেয়ে নাম দিয়েছে।আমি একটা কন্টেস্টেও নাম দিলাম না।সবার নাম ট্যাবে তুলে নেওয়া হচ্ছে। পাঁচতলার একটা আপু বলল,”কি ব্যাপার জুঁই,তুমি নাম দিবানা?”
আমি একটা হাঁচি ফেলে নাক মুছে বললাম,”না।”
রকি একটু দূরে থেকে অবাক হয়ে বলল,”না?এবার কিন্তু বেশি গিফট থাকবে,নাম দিয়ে দাও। ”
আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,”উহুম,দিবোনা।”
পাশের ফিহা আপু বলল,”আমরা দুজন মিলে একটা নৃত্য দিই নাও,গতবার তুমি ওই দোলা দোলা গানটা সিলেক্ট করেছিলে ওটাই তাহলে এবার দিবো।”
আমি আরেকটা হাঁচি ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,”এবার আমার প্রবলেম আছে তুমি অন্য পার্টনার খুঁজে নাও।”
তারপর ওখান থেকে উঠে চলে আসতে লাগলাম।পেছন থেকে ভাইয়া বলল,”জুঁই শোন,পরে কিন্তু আর নাম নেওয়া হবেনা।নাম দিলে দে পরে যেন আবার নাম দেওয়ার জন্য কান্নাকাটি করিসনা।”
আমি আরেকটা হাঁচি ফেলে বললাম,”না কান্না করবোনা।”
বলেই আমি দ্রত পায়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে চলে আসলাম।একটু ঠান্ডা লেগেছে জন্য হাঁচি পরা শুরু হয়েছে।রুমে এসে মেডিসিন খেয়ে কম্বলের মধ্যে ঢুকে শুয়ে পরলাম।
চলবে…..
(দেরিতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।অনেক বড় পার্ট দিলাম,আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে।)