#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
৫.
দুপুর দুটোয় স্কুল থেকে বাসায় এসে দেখি ছোট ফুপ্পি আর তার ছেলে মেয়ে নেয়াজ-নিতু এসেছে।ছোট ফুপ্পিরা যশোর থাকে।নেয়াজ ভাইয়া এইস.এস.সি. দিবে আর নিতু আপু অনার্সে পড়ে।আমার থেকে ওরা বড় আর নিয়মিত দেখাও হয় না তাই ওদের সাথে আমার ভাব সাব কম।ওদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ওরা শ্রাবণ ভাইয়াকে দেখতে এসেছে।বিকেলে ওরা বড় ফুপ্পির বাসায় যাবে।সবার সাথে হালকা পাতলা কথা বলে আমি নিজের রুমে চলে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে খেয়ে একটু শুয়েছি তখনই নিতু আপু আসলো।আমি উঠে বসে নিতু আপুর সাথে কথা বলতে লাগলাম।আপুর সাথে গল্প করতে আমার একটুও ভাল লাগছে না কারন নিতু আপু বার বার শ্রাবণ ভাইয়ার কথা বলছে।একসময় আমি মেজাজ খারাপ করে বলেই দিলাম,
“আপু অন্য কিছু বলো,শ্রাবণ ভাইয়ার কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না।”
নিতু আপু বিছানার উপর আমার গা ঘেষে বসে বলল,”শোন না,শ্রাবণ কি খুব স্মার্ট?ইংলিশে কথা বলছে?ফেসবুকে যেমনটা দেখেছি তেমনি আছে?”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,”আমি কি করে জানবো?আমার তো ফেসবুক নেই।বাংলাতেই কথা বলে। উনাদের বাসায় যাও, গেলেই তো দেখতে পাবা।”
নিতু আপু মুচকি হেসে বলল,”তোকে প্রথমবার দেখে কি বলেছিল?বিদেশিদের মতো করেছিল?মানে হাই,হ্যালো,হাগ,কিস এসব করেছিল?”
আমি কোলের উপর রাখা টেডি বিয়ারের নাকে খামছি দিয়ে বললাম,”প্রথমবার দেখে আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।”
নিতু আপু অবাক হয়ে বলল,”সেকি কেন?”
তারপর হালকা হেসে বলল,”তুই মজা করছিস তাইনা?শ্রাবণ তোকে থাপ্পড় দিবে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
আমি রেগে বললাম,”এই তুমি এখন যাও তো আমার এখন ঘুমাতে হবে নাহলে রাত দশটা না বাজতেই ঘুম ধরবে।আমার তো আর তোমার মতো সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠলে চলে না আমাকে সকাল ছ’টায় উঠতে হয়।”
কথা গুলো বলেই আমি টেডি বিয়ারকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলাম।নিতু আপুও আমার পাশে শুয়ে বক বক করতে লাগলো তাই বিকেলে আর ঘুম হলো না।সন্ধ্যায় ফুপ্পিরা শ্রাবণ ভাইয়াদের বাসায় চলে গেল।আমাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমি শ্রাবণ ভাইয়ার উপর রাগ করে যাই নি।কাল শুক্রবার তাই পড়াশুনা সাইডে রেখে কাল আমি বসে বসে শ্রাবণ ভাইয়াকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার প্ল্যান করবো।
ফ্রেশ হয়ে একটা গোলাপি স্কার্ট আর সাদা শর্ট টপস পরলাম।ভাবির কাছে যেয়ে আমার চুলগুলো দুদিকে দুটো বিনুনি করে নিলাম।বাসার মধ্যে বক বক করে হচ্ছিলো না তাই নিচে রকিদের ফ্ল্যাটে যেতে লাগলাম।রকির বাবা আমার বাবার ফ্রেন্ড।দুবছর হলো রকিরা এখানে ফ্ল্যাট নিয়েছে।রকির একটা খালা আছে তার নাম লীনা।ওই লীনা অ্যান্টির জন্য রকিদের সাথে আমার এত ভাব।লীনা অ্যান্টিকে আমার খুব ভাল লাগে কারন লীনা অ্যান্টি আমাকে খুব ভালোবাসে আর অনেকটা আম্মুর মতো দেখতে।লম্বা চুল,চোখ গুলো কি সুন্দর মায়াবী আর আম্মুর মতোই ফর্সা।আম্মুর মতো দেখতে এজন্যই আমি লীনা অ্যান্টিকে বাবার সাথে বিয়ে দিতে চাই কিন্তু বাবা কিছুতেই বিয়ে করতে চায় না।এসবের জন্যই তো বাসায় আমাকে নিয়ে খুব ঝামেলা হচ্ছিলো।আমি খাওয়া-দাওয়া আর পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছিলাম।লীনা অ্যান্টির আগে একবার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু হাসবেন্ড মারা গেছে।রকিরা ছাড়া লীনা অ্যান্টির আর কেউ নেই তাই অ্যান্টি রকিদের বাসাতেই থাকে।
আমি দুই বেনি নাচাতে নাচাতে লিফটের সামনে দাঁড়ালাম তখনই লিফটের দরজা খুলে শ্রাবণ ভাইয়া বেড়িয়ে আসলেন।আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি কারন উনার নাক,কপাল,গাল,হাত লাইটের আলো পরে একদম চকচক করছে।কালো টিশার্ট আর কালো জিন্স প্যান্টে উনাকে খুব চার্মিং লাগছে।উনি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,
“এই তুই এখানে কি করছিস?কোথায় যাচ্ছিস?”
আমি মনে করার ভান করে বললাম,”কোথায় যেন যাচ্ছিলাম।অহ হ্যা মনে পড়েছে।আমি তো রকিদের বাসায় লীনা অ্যান্টির কাছে যাচ্ছি।”
উনি আমার একটা বেনি ধরে বাসায় নিয়ে আসতে আসতে বললেন,”আর কখনও যদি ওই বাসায় যাস তোকে আমার সাথে লন্ডন নিয়ে চলে যাবো তারপর দেখবো তুই কি করে লাফিয়ে লাফিয়ে রকিদের বাসায় যাস।”
আমি চুল ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললাম,”লন্ডন নিয়ে যাবেন?চলুন এখনি যাবো।আমরা তো প্লেনে যাবো তাইনা?আচ্ছা ওরা আমাকে প্লেনের ককপিটে ঢুকতে দিবে?পাইলটের সিটে একটু বসতে দিবে?পাইলট গুলো কি বুড়ো?বুড়ো পাইলট হলে আম্মুকে চিনতে পারবে।আমরা বুড়ো পাইলটের প্লেনে যাবো ওকে?তাহলে পুরো রাস্তা আম্মুর অনেক গল্প শোনা হবে।আম্মুর ডায়েরীতে দেখেছি জোসেফ নামের একটা পাইলট অ্যাঙ্কেল আম্মুর খুব ভাল ফ্রেন্ড।আমরা জোসেফ অ্যাঙ্কেলের প্লেনে যাবো ওকে?”
উনি আমাকে রুমে নিয়ে এসে আমার বেনি ছেড়ে দিলেন।আমার সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত আমার গালে রেখে মুচকি হেসে বললেন,
“ওক্কে মাই সুইটহার্ট।”
আমার খুশি আর দেখে কে।আমি অনেক এক্সাইটেড হয়ে উনার হাতের উপর হাত রেখে বললাম,”কবে যাবো আমরা?কাল তো ফ্রাইডে আমার স্কুল ছুটি,চলুন কালই ঘুরে আসি তাহলে।”
উনি হালকা হাসলেন তারপর টেবিলের কাছে যেয়ে চেয়ার টেনে বসে বললেন,
“কাল নয় আগে তুমি গুড গার্ল হও তারপর।”
আমিও আমার চেয়ারে বসে ভ্রু কুচকে বললাম,”আমি ব্যাড গার্ল?”
উনি আমার ফিজিক্স বই খুলতে খুলতে বললেন,”ইয়াহ ব্যাড গার্লই তো।সবাইকে গালি দাও,সবার সাথে ঝগরা-মারামারি করো,কারও কথা শুনো না,সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই স্কুলে চলে যাও,বার বার এটা ওটা নিয়ে জেদ করো।আরও কত কি করো তার কোন ঠিক নেই।তুমিই বলো গুড গার্লরা এসব করে?”
আমি ভাব নিয়ে বললাম,”আপনার থেকে আমি অনেক গুড আছি।আপনি কি করেন হুম?শুধু শুধু আমাকে বকেন আর চড় থাপ্পড় দেন।আপনি একটা ব্যাড বয়।আপনার সাথে প্লেনে যাবোনা আপনি একা যান।”
উনি মুখ মলিন করে বললেন,”আমি তোমাকে কখনও মারতে চাইনা,তুমি জানো তোমাকে মারলে আমার কত কষ্ট হয়?তুমি তো সেসব জানো না শুধু জানো কি করে দুষ্টুমি করতে হয়।”
আমি হাসতে হাসতে বললাম,”এই আপনি কি মেথরের বউকে বিয়ে করেছেন নাকি?সেই কখন থেকে আমাকে তুমি তুমি করছেন।”
উনি রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”অনেক বক বক করেছিস এবার এটা করে দেখা।”
উনি আমাকে নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র প্রতিপাদন করতে দিলেন।আমি খাতা কলম বের করে ঠোঁট উল্টে লিখা শুরু করলাম।উনি আমাকে একটার পর একটা প্রবলেম সলভ করতে দিলেন।এদিকে বিকেলে ঘুমাইনি জন্য ন’টা না বাজতেই আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি লিখতে লিখতে হাই তুলে বললাম,
“হেমা কি যেন একটা লাল মেডিসিনের কথা বলল,খেলে নাকি আর ঘুম ধরেনা।কাল স্কুলে গেলে ওটা নিয়ে আসতে হবে।উফ্ এখনই এত ঘুম পাচ্ছে।”
শ্রাবণ ভাইয়া হুট করে আমার খাতা টান দিয়ে বললেন,
“হোয়াট!!!কিসের মেডিসিন?স্কুলে এসব পাওয়া যায়?এই তুই ওসব মেডিসিন খেয়েছিস নাকি?”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”নাতো খাইনি।কিনতে হবে,হেমা বলছিল ওটা খেলে সারা রাত জেগে পড়া যায়।বি সেকশনের কারা কারা যেন খেয়েছে…”
আর কিছু বলার আগেই উনি আমাকে টেনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আমার দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“সবাই খেলেও তুই ওটা খাবিনা।ওটা ড্রাগস,ওটা ভাল জিনিস নয়।কেউ দিতে চাইলে নিবিনা।যদি নিস আমি কিন্তু তোকে মেরেই ফেলবো।তোর রাত জেগে পড়তে হবে না।যখন ঘুম পাবে তখনই ঘুমাবি।ওটা নিয়ে কিন্তু কারও সাথে ডিসকাস করবিনা।খুব খারাপ জিনিস ওটা।টিচাররা জানতে পারলে স্কুল থেকে রাস্টিকেট করে দিবে আর পুলিশেও দিবে।এখন থেকে তুই আমার সাথে স্কুলে যাবি।”
আমি ভীত চোখে তাকিয়ে বললাম,”ওটা ড্রাগস?আমি খাইনি ওটা,মারবেন না আমাকে।”
শ্রাবণ ভাইয়া রাগী মুখ করে বললেন,”আমি যদি বুঝতে পারি তুই ওটা খেয়েছিস তাহলে তোকে খুন করে ফেলবো।”
আমি উনার হুমকি শুনে ভয় পেয়ে গেলাম।উনার এক একেক টা থাপ্পড়েই অনেক ব্যথা পাই তাহলে খুন করলে তো আরও বেশি ব্যথা পাবো।আমি উনাকে আম্মুর নামে প্রমিস করে বললাম আমি কখনও ওসব খাবো না।উনি আজকের মতো পড়ানো শেষ করে দিলেন।বাসায় সবাইকে বললেন বড় ফুপ্পি আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে তাই আমি উনার সাথে বেড়িয়ে আসলাম।গাড়িতে এসে উনি ড্রাইভ করছেন আর আমাকে সব বিধি নিষেধ দিচ্ছেন আর আমি উনার একটা কথাও না শুনে উনার ফোনে মিনি মিলিশিয়া গেইম খেলতে লাগলাম।হঠাৎই গেইম ওভার হয়ে গেল।আমি ঠোঁট উল্টে উনার দিকে তাকালাম।উনি সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছেন।আমি উনার ফোন সামনের বক্সে রেখে বললাম,
“এখনও বাসায় যাই নি?এত ধীরে ড্রাইভ করছেন কেন?তাড়াতাড়ি চলুন।”
উনি আমার দিকে একবার তাকালেন কিন্তু কিছু বললেন না।আমি সিটের উপর পা তুলে বসে জানালার দিকে তাকালাম।কিছু একটা ভেবে আবার উনার ফোন নিয়ে ওয়ালপেপারের দিকে তাকালাম।আমার একটা পিকচার উনার ওয়ালপেপারে দেখে চেঁচিয়ে বললাম,
“এটা আমি না?আমিই তো।এটা আপনি কোথায় পেলেন?এই সাদা ড্রেস তো আমি গত বছর বার্থ ডে তে পরেছিলাম।”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললেন,
“কে বলেছে ওটা তুই?ওটা তো আমার খরগোশ,মাই টাইনি রাবিট।”
আমি হাসতে হাসতে বললাম,”আরে বোকা লোক, এটা খরগোশ নয়, এটা আমি।বিশ্বাস নাহলে আমাদের বাসায় চলুন আপনাকে এইরকমই আরেকটা পিকচার দেখাবো
।অ্যালবামে আমার অনেক পিকচার আছে।এত পিকচার রেখে এই পচাটা ডি.পি. করেছেন?ভাল লাগছেনা এটা।অন্যকিছু ট্রাই করি।”
বলতেই উনি আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন।আমি মুখ ফুলিয়ে বাহিরে তাকালাম।কাচ নামিয়ে দিয়ে ভাল করে রাতের শহর দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম নিজেও জানিনা।
চলবে………..!
(আপনারা প্লিজ একটু গঠনমূলক কমেন্ট করুন।শুধু নাইস নেক্সট এসব দেখে আমার খুব একটা ভাল লাগছেনা তাই গল্প লিখতেও ইচ্ছে করছেনা।)