সুখের_সন্ধানে পর্ব_২৬

0
461

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_২৬

সেলিম আর হেলেনের একটা বাচ্চা আছে এটা জানার পর থেকে নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। হঠাৎ কেন যেন খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি মনে হচ্ছে। যদিও এর কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। হেলেন এখন অন্য কারো বউ, দুই বাচ্চার মা। তাছাড়া সেলিম আজ অবধি জানেনা তার ছেলে হয়েছে কি , মেয়ে হয়েছে! বেঁচে আছে না মরে গেছে। তারপরেও খুব ভয় হচ্ছে ওই হেলেনকে ! কারণ আমিও যেমন সেলিমের সন্তান প্রিয়কে জন্ম দিয়েছি। ঠিক তেমনি হেলেনও তার আরেক সন্তান আসিফকে জন্ম দিয়েছে। এই সেলিমকে একদিন আমি পাগলের মতো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। সেও আমাকে একইভাবে ভালোবাসত। হেলেন ইস্যুতে জীবনে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছিলাম । কিন্তু এই বয়সে এসে আবারও সেই হেলেন! যদিও এটা ভেবে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি যে সেলিম আর হেলেনের কাছে যায়নি। সে ভুল করেছে। ভুল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। কিন্তু একই ভুল যদি আবার করত তবে এবার আমি হয়ত অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতাম। সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুতেই সেলিমের কাছে আমি ওর আর হেলেনের বাচ্চার ব্যাপারে কথা তুলব না। সে যেহেতু তার ভুল থেকে দূরে থাকতে চাইছে এটাই এখন একমাত্র সমাধান। তাছাড়া হেলেনও এটাই চাইছে। তাই আপাতত নিশ্চিন্ত থাকা যায়। কিন্তু মন থেকে কী করে মুছব সেটাই বুঝতে পারছি না। ভালোই হতো যদি ওই মাহাতাবের খোঁজখবর না নিতাম। জীবনের কিছু কিছু অজানা অধ্যায় অজানা থাকলেই বুঝি খুব ভালো হয় এটা আজ আমি বুঝলাম।

রাত আড়াইটা বেজে গেছে । অথচ এখনো পর্যন্ত প্রিয় আসার নামগন্ধ নেই। মিথিলা কয়েকবার ফোন দিয়েছে। ফোন বেজেই চলছে কিন্তু রিসিভ করার কোনো খোঁজখবর নেই। সে বাধ্য হয়ে ওর অফিসে ফোন দিয়েছিল সেখান থেকে জানিয়েছে প্রিয় নাকি রাত আটটার দিকে বেরিয়েছে। এতটা সময় কোথায় আছে , কী করছে, কোনো বিপদে পড়েনি তো! আরো কত চিন্তায় বুঁদ হয়ে আছে সে এর মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠল। সে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল। প্রিয় আজকাল আর এতরাতে মিথিলাকে দরজা খুলতে দেখে অবাক হয় না। সে জানে কেউ জেগে না থাকলেও মিথিলা তার জন্য ঠিকই জেগে আছে। মাঝেমাঝে মিলাতে পারে না কেন মিথিলা তার প্রতি এত কেয়ারিং! মিথিলার সাথে তার তো খুব বেশি কথাও হয় না। সে মিথিলার প্রতি কেয়ার করা থাক দূরের কথা!
মিথিলার সাথে কোনো কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। মিথিলাও তার এমন আচরণে অবাক হলো না। এটা তার নিত্য আচরণ। তবে অবাক হলো আজ প্রিয়র শরীর থেকে সেই বাজে ঘ্রাণ নেই তার মানে সে আজ ড্রিংক করেনি। মিথিলা না খেয়ে বসে আছে অথচ ভদ্রলোক তাকে কিছু জিজ্ঞেসও করল না। আজকাল প্রায় রাতেই এমন মিথিলা না খেয়ে থাকে। সে নিজেও নিজের এমন আচরণের জন্য অবাক হয়। সে ভেবে পায় না সে কী তবে প্রিয়র প্রতি দুর্বল? কিন্তু না! এটা কী করে সম্ভব? প্রিয় আকাশের তারা হলে সে এই ধরিত্রীর ধূলা। সে প্রিয়দের বাড়ির আশ্রিতা। এর থেকে একবিন্দুও বেশি কিছু তাকে ভাবে না প্রিয় এটা সে ভালো করেই জানে। সে যে প্রিয়র খালাতো বোন এটাও হয়ত প্রিয় ভুলে বসে আছে। সে নিজের মনের এমন ঔদ্ধত্যতায় বিরক্ত হলো বেশ। কিন্তু মন বড় বেয়াড়া ! সে কারো শাসন বারণ মানার ধার ধারে না।
মিথিলা একবার নিজেকে থামাতে চাইলেও প্রিয়র রুমে যাওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারল না। খাবে কি না সেটা জানার জন্য তার রুমে যেয়ে দেখল প্রিয় মাত্র প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটের আগায় পুরেছে। লাইটার দিয়ে জ্বালাতে হবে ঠিক তখন সে ঠোঁট থেকে সিগারেটটা টেনে ছুঁড়ে ফেলল। হঠাৎ করে মিথিলার এমন দুঃসাহসিক আচরণে প্রিয় যারপরনাই ক্ষেপে গেল। সাত পাঁচ কিছু না ভেবেই সে ঠাস করে মিথিলার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। এত জোরে মেরেছে যে মিথিলাও অবাক! তার ঠোঁটের কোণ দাঁতের সাথে লেগে কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। মিথিলার সেদিকে হুশ নেই। যেন এক ঘোরের মধ্যে আছে। সে ছলছল চোখে প্রিয়র দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। মিথিলার চাহনি দেখে প্রিয়ও নিজের এমন ব্যবহারে হতবাক। কী করেছে সে? নিজের প্রতি একদম নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বুঝতে পারল। একজনের রাগ আরেকজনের উপর এভাবে দেখানোর কোনো মানে নেই। মেয়েটা প্রতিদিন না খেয়ে জেগে বসে থাকে ওর জন্য। আর তাকেই কি না! উহ! কেন যে ?

মিথিলা রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন সে হাত ধরে টেনে নিয়ে সোফায় বসায়। ফার্স্ট এইড বক্স থেকে তুলা বের করে মিথিলার ঠোঁটের কোণের রক্ত মুছে দিলো। মিথিলা নিষেধ করতেও পারছে না। বা নিষেধ করার জন্য ভেতর থেকে কোনো তাড়নাও অনুভব করছে না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে প্রিয়র দিকে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে প্রিয় বলল, আ’ম ভেরি সরি! আই ডিড ভেরি রঙ উইদ ইউ। প্লিজ, ফরগিভ মি! প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ! বলে হাতজোড় করছে মিথিলার সামনে।

– নো, নো! আ’ম সো সরি । খুব বেশি অধিকার দেখিয়ে ফেলেছিলাম। মাঝেমাঝে কী হয় নিজেই বুঝি না! কাঁপা গলায় আস্তে করে বলল মিথিলা।
– আরে পাগল! তুই সরি বলছিস কেনো? তুই তো আমার ভালোর জন্য করেছিস। আসলেই আমার বাসার মধ্যে বসে এমন কাজ করা একদমই ঠিক হয়নি। তুই আগেও নিষেধ করেছিস। পাশেই দাদুর রুম । অথচ আমি এমন ইরেস্পন্সিবলের মতো বিহেভ করলাম। থ্যাংক ইউ, আবারো আমার ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য। কী যে হচ্ছে! মাথাটা বিগড়ে যাচ্ছে দিনদিন।
– আচ্ছা, আমি রুমে যাই। তুমি ঘুমাও! বলেই মিথিলা চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে যাবার জন্য উঠতে গেল।
– আরে বোস না! তুই মনে হয় কিছু বলতে এসেছিলি? না বসলে মনে করব তুই আমাকে মাফ করিস নি।
– না, এমনিতেই এসেছিলাম। আর ভাইয়া আমি কিছু মনে করিনি। তুমি আমার বড়। তোমার রাইট আছে।

মিথিলা ভেতরে ভেতরে খুব মুষড়ে পড়েছে প্রিয়র আচরণে। কিন্তু কিছুতেই বাহিরে সেটা প্রকাশ করছে না।

– বললেই হলো। কী বলতে এসেছিস তাড়াতাড়ি বল!
– কী বলব আমার মনে নেই।
– এক থাপ্পড় খেয়ে সব ভুলে গিয়েছিস? আরেকটা তবে দেই। দিলে দেখবি সব মনে পড়ে যাবে হেসে বলল, প্রিয়।
– মিথিলা মৃদু হেসে উত্তর দিলো , চেষ্টা করে দেখতে পারো ।
– এখন একদমই মুড নেই রে। পরের জন্য পাওনা রইল।
– আরেকটা গালও সবসময় বাড়ানো থাকল। যখন মন চায় দিও। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল।
প্রিয় বুঝতে পারছে মিথিলার ভেতরের অবস্থা। স্বাভাবিক করার জন্য নানান কথা বলছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
– হুম, দেয়াটা অবশ্য এখন বেশিই জরুরী। একগালে থাপ্পড় মারলে বিয়ে হয় না জানিস তো! তাই আরেক গালে আসলেই দেওয়া দরকার। একটা মজার খবর আছে জানিস!
– কী?
– আমার ফ্রেন্ড সাজিদ আছে না! ওই যে আমাদের ফার্ম অডিট করে ! এখন সিলেটে আছে । সেদিন আমাদের বাসায় আসলো আম্মুর সাথে দেখা করতে।
– চিনতে পারছি না।
– আরে ওই যে ! যাকে তুই নাকি চা বানিয়ে খাইয়েছিলি । চিনির বদলে লবন দিয়ে দিয়েছিলি। মনে পড়ছে কিছু?
– ও হ্যা মনে পড়েছে। খুব লজ্জা লাগছে। উনি কি কিছু নালিশ করেছে তোমার কাছে? সচরারচর আমি তো চা বানাই না। কুলসুম খালা বানায়। উনার জ্বর থাকায় সেদিন আমিই তোমার ফ্রেন্ডকে চা বানিয়ে দেই। উনি নাকি চায়ে দুই চামচ চিনি খায় আমাকে বলল। আমিও চিনি ভেবে দুই চামচ লবণ দিয়ে চা বানিয়ে দিলাম। য়ামার পক্ষ থেকে সরি বলে দিও। আমিও কখনো সুযোগ পেলে বলব।

– সাজিদ কিছু বলল না তখন?
– কিছুই তো বলল না তোমার বন্ধু। আমি উনার সামনেই বসা ছিলাম। কেমন ক্যাবলাকান্তের মতো ভাব করে চা টা খেয়ে গেল। রূম্পা মা রেডি হচ্ছিলেন বের হবার জন্য। পরে একসাথে বেরিয়ে গেল দু’জনে।
– তুই পরে বুঝলি কিভাবে যে ওটা লবণ ছিল?
– রূম্পা মা আর তোমার বন্ধু বেরিয়ে যাবার পরে আমি নিজের জন্য এককাপ ব্লাক কফি করি। মুখে দিতেই টের পাই যে উনাকেও তবে লবণ দিয়েই চা দিয়েছি। আমি হাফ চা চামচ দিয়েই খেতে পারিনি আর উনি কী করে দু চামচ লবণের চা খেয়েছিল কে জানে? খুব লজ্জা হচ্ছিল এমন একটা কাজ করার জন্য। তোমাকে তবে নালিশ করেছে?
– নালিশ ঠিক না! ও হাসতে হাসতে বলেছিল গতকাল।
– ওহ! প্লিজ উনাকে সরি বলো আমার পক্ষ থেকে। আরেকদিন আসতে বলো । আমি সুন্দর চা বানিয়ে দিব । এবার অবশ্যই চিনি দিয়ে বানাব। আচ্ছা, আমি তবে উঠি ,ভাইয়া। সকাল হয়ে যাবে আরেকটু বাদেই।
– আরে তাতে কী! কাল তো ফ্রাইডে। সারাদিন ঘুমাস। মজার কথাই তো বলিনি। বোস আরেকটু। সিরিয়াস কথা তো বলাই হয়নি।
– আচ্ছা, বলো।
– সাজিদ মে বি তোকে পছন্দ করে ফেলেছে। আমার কাছে তো সেটাই মনে হলো।
– যাও! কীসব বলছ?
– সত্যি বলছি। তোর সম্পর্কে কত কত কথা জানতে চাইল। কোথায় পড়িস , কী সাবজেক্টে পড়িস, আমার কী হোস, ক’ ভাইবোন, আরো কত কী! ফোন নাম্বারটা মনে হচ্ছিল এই বুঝি চাইবে কিন্তু সাহস হয়নি হয়ত। হা হা হা।
– এই তোমার সিরিয়াস কথা?
– এটা তোর কাছে সিরিয়াস মনে হয় না?
– একদমই না।
– মনে হতো । যদি কাউকে ভালোবাসতি তবে! আচ্ছা, একটা কথা বলতো কাউকে কখনো নিজের চাইতে বেশি ভালোবেসেছিস?
– মিথিলা নিশ্চুপ দেখে সে আবার জিজ্ঞেস করল, কিরে কথা বলছিস না যে!
– মিথিলা একটু কেঁপে উঠে বলল, উহু! ওসব করার সময় কই?
– ভালো করেছিস। করতেও যাস না। ভালোবাসলে শুধু কষ্ট পেতে হয়।
মিথিলা খেয়াল করল কথাগুলি বলার সময় প্রিয় যেন খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। সে একবার চাইল কিছু জিজ্ঞেস করে আবার সাহস হলো না। এমনিতেই অনধিকার চর্চা করতে যেয়ে একবার অপমানিত হয়েছে আর ইচ্ছা হচ্ছে না। সে সবকিছু ভুলে গেছে এমন ভাব করে মৃদু একটা হাসি দিয়ে উঠতে গেল।

– কি রে উঠছিস যে! আচ্ছা, চল ছাদে যাই।
– না , মানে ভাইয়া! ঘুমাতে যাব।
– কাল সারাদিন ঘুমাস। চল তো!

কিছুটা জোর করেই মিথিলাকে ছাদে নিয়ে গেল প্রিয়।

– দেখছিস আজকের চাঁদটা কত সুন্দর!
– হুম!
– ভাইয়া, কিছু কী বলবে নাকি চাঁদ দেখাতে নিয়ে এসেছ? সত্যিই খুব ঘুম পাচ্ছে।
– হুম , বলব। আজ বলতে চাই। আমার মনে হয় কাউকে বলতে পারলে আমি খানিকটা স্বস্তি পাব। কিছুদিন ধরে ভেবেছি তোর সাথে কথা বলব কিন্তু হয়ে উঠেনি। তুই আমার জন্য খুব ভাবিস এটা আমি বুঝি। তাই মনে হলো তোকে বলা যায়।
– কিছু কী হয়েছে তোমার সাথে? কোনো কারণে কষ্ট পাচ্ছ?
– হুম। বলছি তবে! আমি বিন্দু নামে একজনকে খুব পছন্দ করি না মানে করতাম। আম্মুও ওর কথা কিছুটা জানে। আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ত। এই দেড় বছর ধরে ওর সাথে বেশ ক্লোজ আমি।

কেন যেন মিথিলার গলাটা শুকিয়ে আসছে এ কথা শোনার পর। সে আস্তে করে বলল, তারপর?
– ওর জন্য আমি কী করিনি! একটা লোয়ার মিডল ক্লাস ঘরের মেয়েকে আমি লাক্সারিয়াস লাইফ দিয়েছি। ওর সাথে আমি কোনো অপবিত্র সম্পর্কে জড়াইনি। আমাদের সম্পর্কটাকে আমি পবিত্রতার চোখেই দেখেছি। ওকে সব ধরণের বিপদ আপদ থেকে প্রটেক্ট করেছি। এতদিন সব বেশ ভালোই চলছিল। ইচ্ছে ছিল যেহেতু আমার পড়াশুনার চ্যাপ্টার আপাতত শেষ ওকে বাসায় আম্মু আব্বুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। আম্মুও বেশ কিছুদিন ধরে ওর কথা বলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু পরিচিত সোর্স থেকে বিন্দুর নামে বেশ আজেবাজে কথা কানে আসছিল। অবশ্য আমার কাছেও ওর চলাফেরা খানিকটা সন্দেহজনক লাগছিল। শেষে আমি ওর ব্যাপারে গোপণে তদন্তে নেমে পড়ি। ও এতদিন ধরে আমাকে যে পরিচয় দিয়েছে তা সম্পূর্ণই মিথ্যা। ওখানে ওর কোনো বাবা মা, বাবা, পরিবার নেই। ও একটা চক্রের সদস্য। ওদের কাজই হচ্ছে ভালো ভালো ভার্সিটিতে পড়াশুনার নাম করে ওই ভার্সিটির ছেলেদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া।
– কী বলছ এসব!
– আমার অনেক টাকা ওর পেছনে নষ্ট হয়েছে। তাতে কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু সবচেয়ে বড় কষ্ট ওকে তো সত্যিই ভালোবেসেছি। ওকেও আমার কাছে খুব ইনোসেন্ট মনে হয়েছে শুরুর দিন থেকে। কিছুতেই নিজের কানে শোনা আর নিজের চোখে দেখা ওর কুকীর্তিগুলিকে আমি এখনো মেনে নিতে পারছি না, বিশ্বাস করতে পারছি না মানুষ এত খারাপ হতে পারে। কত স্বপ্ন দেখেছি ওকে নিয়ে। সব তবে মিথ্যা?

– নিজেকে সামলে নাও, ভাইয়া। এই পৃথিবীতে কত জঘণ্য চরিত্রের মানুষ যে আছে! আরো বড় বিপদ হবার আগে নিজেকে সামলেছ এটাই সৌভাগ্য তোমার। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

– বিপদ হতে আর বাকী কী! ও আমার সাথে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে চলে। এমন ভাব হাতখানা ছুঁলেও যেন অন্যায় হয়ে যাচ্ছে এমন ভাবে করেছে। আমি তো ওর ইনোসেন্ট লুক আর এই নিষ্পাপ চালচলনের প্রেমে পড়েই নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ওর কাছে সমর্পণ করেছিলাম। অথচ আমি নিজেই দেখেছি এখন ওর কুকীর্তি। আমার সাথে ইনোসেন্ট ভাব দেখিয়ে আমার ইমোশান নিয়ে খেলা করেছে অথচ পেছনে অন্য ছেলেদের সাথে বিছানায় যাওয়া ওর নিত্য ব্যবসা। আমি জেনে গিয়েছি দেখে ওর চক্রের সহায়তায় ও এখন নতুন চাল শুরু করেছে।

– কী করেছে?

– সে বলছে সে নাকি আমার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে। হয় তাকে আমার বিয়ে করতে হবে নয়ত সে এ কথা আমার পরিবারের কানে , আত্মীয় স্বজন, আমার অফিসের সবার কাছে ছড়িয়ে দিবে। প্রয়োজনে থানায় মামলা দিবে আমার নামে। সাংবাদিক ডেকে সম্মেলন করবে।

– এসব কী বলছ? এ দেখছি ভারি বিপদ!

– আমি তো ওকে বিয়ে করতেই চেয়েছিলাম কিন্তু এভাবে তো নয়! আমি সব জেনে ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছি টের পেয়ে আমাকে ট্রাপে ফেলার জন্য এই নতুন নাটক সাজিয়েছে। কিন্তু আমি তো ওকে এ জীবনেও বিয়ে করব না। ও কার না কার বাচ্চা নিয়ে আমার ঘাড় মটকাতে চাচ্ছে।

– এত বড় অসভ্য!

– অসভ্যামির কথা তো তোকে বলিইনি। আর বলতেও চাই না। সব কথা বলার মতো না। আমি এতবার তাকে বলছি তার সাথে এমন কিছুই করিনি। কিন্তু সে বলছে আমি নাকি সব জেনেবুঝে অস্বীকার করছি যাতে বাচ্চার দায়িত্ব না নিতে হয়। আজ যদি সত্যিই ওর গর্ভের সন্তান আমার সন্তান হতো আমি অবশ্যই ওকে একসেপ্ট করতাম! ও আমাকে এভাবে কেন ট্রাপে ফেলছে আমি বুঝতে পারছি না। ওকে দেখলেও এখন আমার বমি আসে। এত চেষ্টা করছি ওর থেকে দূরে থাকার কিন্তু কি করে থাকব? ও তো আমার বাসা , অফিস সবই চিনে। আজ অফিসে পর্যন্ত এসেছিল। আমাকে আর তিনদিনের সময় দিয়েছে। এরমধ্যে যদি ওকে বিয়ে না করি তবে আম্মু আব্বুকে জানিয়ে দিবে, সম্মেলন করবে। বিচার চাইবে, জোর করে আমার বাসায় উঠবে। এখন তুই বল, আমি কোনো পাপ না করে কেন ওর পাপের ভাগীদার হবো? ওর সাথে আমার প্রেমের কথা মোটামুটি অনেকেই জানে। ও সেই সুযোগটাই নিচ্ছে। আর তাদের কাউকে বললে বিশ্বাসও করবে না যে এই বাচ্চা আমার না। আমি যে কী করব বুঝতে পারছি না। সময় তো চলে যাচ্ছে। আব্বু আম্মুর কানে পৌঁছালে আমি মুখ দেখাব কী করে? তারা যদি জোর করে আমার সাথে ওই বিচটার বিয়ে দিয়ে দেয়!
– এক কাজ করো সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে ওকে জানিয়ে দাও তুমি ওকে বিয়ে করছ। তাইলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়!
– পাগল হয়েছিস তুই?

চলবে…………

পর্ব- ২৫

https://www.facebook.com/111576077291737/posts/364093465373329/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here