সুখের_সন্ধানে পর্ব_৫০

0
868

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৫০

এতবছর পরে সিদ্ধার্থের উপস্থিতিতে আমার অসুখ মনে হচ্ছে অর্ধেক কমে গেছে। হুট করে এভাবে ওকে দেখে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বয়সের কারণে আগের থেকে অনেকটাই বদলে গেছে সিদ্ধার্থ। কিন্তু সেই আগের মতো সহাস্যমুখ আর হাসিখুশি মানুষটা এখনো বদলায়নি। আসার পর থেকেই ওর কথার ফুলঝুড়িতে আমি হারিয়ে যাচ্ছি যেন।
সকাল থেকেই মনটা ভীষণ খারাপ ছিল আমার। আজ ফজরের আযানের একটু বাদেই কলিংবেলের শব্দে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এই ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এই সাত সকালে আবার কে এল! পরে মতিনের কাছে জানতে পারি প্রিয় এসেছে। তাও একা। মিথিলাকে কয়েকবার ফোন দিয়েও পাইনি। কী এমন হলো? ছেলেটাকে নাস্তার টেবিলেও পেলাম না। কিছু যে হয়েছে এটা আমি নিশ্চিত।
সিদ্ধার্থ গতকাল ওর পরিবারসহ বাংলাদেশে এসেছে। ওর সাথে প্রিয়র আগে থেকেই পরিচয় আছে জেনে আমি আরো অবাক হয়েছি। সিদ্ধার্থ একাই এসেছে আমাকে দেখতে । সে প্রিয়র কাছে আগেই জেনেছে আমার শারীরিক অবস্থার কথা। ভেবে অবাক হলাম ছেলেটা সিদ্ধার্থের কথা আমার কাছে কেন লুকাল?
সিদ্ধার্থের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে সে বেশ সিরিয়াস মুডে বলল, একটা সিরিয়াস ম্যাটারে কথা বলব। তুমি সেলিম সাহেবকে ডাকো। তোমাদের দু’জনের সাথেই কথা ছিল আমার। আমাকে আবার উঠতে হবে।

আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। সিদ্ধার্থ কী এমন বলবে? একজন মেইডকে ডেকে আমি সেলিমকে নিয়ে আসতে বললাম । সিদ্ধার্থ আসার পরে সেলিমও কিছুক্ষণ ছিল আমাদের সাথে। পরে লাইব্রেরীতে চলে গিয়েছে। এই সময়টা সে লাইব্রেরীতে কাটায়। লাঞ্চের আগ পর্যন্ত এটাই তার নিত্যকার ডিউটি এখন।

সেলিমও আমার মতো বেশ অবাক সিদ্ধার্থের এমন জরুরি তলবে। আমি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছি সিদ্ধার্থ কী বলবে সেটা শোনার।
– ব্যাপারটা প্রিয়র বিষয়ে।
প্রিয়র নাম শুনে আমি আরো ঘাবড়ে যাচ্ছিলাম। কী এমন কথা! আর কিছুক্ষণ আগে প্রিয়র রুমে যেয়ে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে এসেছে সিদ্ধার্থ। কী এমন কথা হয়েছে দু’জনের সাথে? দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছি সিদ্ধার্থের মুখ খোলার অপেক্ষায়।

– সেলিমের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধার্থ বলল, আপনারা জানেন কি না জানি না। আসলে কী করে বলি! কিছুক্ষণ গড়িমসি করে সিদ্ধার্থ আস্তে আস্তে বলল, প্রিয় আর এনার ডিভোর্স হয়ে গেছে বেশ ক’মাস আগে। ওদের মাঝে এখন কোনো সম্পর্ক নেই । তবে একদম নেই বললে ভুল হবে। ওদের এখনো যোগাযোগ আছে তবে সেটা শুধুমাত্র আপনাদের নাতী আয়াতের জন্য।

এ কথা শোনার সাথে সাথে আমার মাথায় যেন বাজ পড়ল। একবারের জন্যও আমার মাথায় আসেনি এমন কিছু বলতে পারে সিদ্ধার্থ। আমার ছেলেটার সাথে কত কী ঘটে যাচ্ছে অথচ আমি মা হয়ে কোনো খবরই জানিনা। আমি কিছু বলব তার আগে একবার সেলিমের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম সে একেবারে নির্বিকার। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এতবড় একটা খবর অথচ তার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই।
আমি কিছু বলতে যাব তখনই সেলিম মুখ খুলল ।

– ব্যানার্জী সাহেব, আমি এটা জানি। বেশ ক’মাস আগেই ওদের ডিভোর্স হয়েছে। প্রিয় এ ক’মাস একা কোথায় থেকেছে, কী করেছে সেটাও জানি।

– এ কথা শুনে এবার তো আমি আরো অবাক। আমি কিছুটা রাগতস্বরেই বললাম, কী বলছ তুমি? এতবড় একটা খবর তুমি জানো , আর আমাকে জানানোর প্রয়োজনই মনে করোনি? আর এসব কী শুনছি? প্রিয়র ডিভোর্স?
– এত অবাক হচ্ছ কেন? এটা হবারই কথা ছিল। আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আমার ছেলেটা করছে। আমি এসব জেনেও তোমাকে জানাইনি বেশ কিছু কারণে। আমি চাইনি তুমি ফোর্স করে ছেলেটাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসো। তাছাড়া তুমি যে এমন একটা খবর স্বাভাবিকভাবে নিবে না সেটাও আমি জানতাম! আমি প্রিয়কে বুঝতে চেষ্টা করছিলাম।

– তুমি জেনেছ কী করে? ঝাঁঝের সাথে জিজ্ঞেস করলাম আমি।

– আমি প্যারালাইসড হয়ে ঘরে বসে আছি তাই বলে যে বিজনেস ওয়ার্ল্ড থেকে পুরোপুরি বিদায় নিয়েছি তা তো নয়! ইতালিতে আমার বেশ সোর্স এখনো একটিভ রয়েছে। এনা আর এনার চৌদ্দগোষ্ঠীর খোঁজখবর নিয়মিতই আমার কানে আসে। আচ্ছা , বাদ দাও সেসব।

– বাদ তো দিলাম! তুমি বলোনি কেন মানলাম কিন্তু প্রিয়? সে কেন বলেনি এতদিনে? দেশে এসেছে কতটা দিন তখনো বলেনি ! এসব কী? আমি মা হয়ে সন্তানের ব্যাপারে এতটা অন্ধকারে পড়ে আছি। আমার কোনো ভ্যালুই নেই কারো কাছে। আমার কী জানবার অধিকারও নেই। বলতে বলতে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম আমি।

– আহা! রাগ করছ কেন? বলল, সিদ্ধার্থ। সেলিম সাহেবের কথা তো শুনলেই। প্রিয়র সাথে আমার অনেক কথাই হয় আজকাল। আমি বলছি তবে শোনো। তুমি জানলে তখনই ওকে ইতালি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যা দরকার তাই করতে । প্রয়োজনে ওকে নিয়ে আসতে সেখানে নিজেই চলে যেতে। সেই ভয়েই সে জানায়নি। সে তার ছেলে আয়াতকে ছেড়ে আসতে চায়নি। আইনানুযায়ী আয়াত এখন ওর মায়ের কাছেই থাকবে। তাই চাইলেও সে আয়াতকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারবে না। বোঝই তো সন্তানকে ছেড়ে থাকার কষ্ট কতটা ভয়ানক! তোমার চাইতে এই কষ্ট আর বেশি কে বুঝবে?
সিদ্ধার্থ একটু থেমে আবার বলল, আমি তোমার কাছে ওর সম্পর্কে একদিন ডিটেইলস জানতে চেয়েছিলাম মনে পড়ে? সেদিন কনফার্ম হবার পরে ওকে নানা কৌশলে বুঝিয়ে দেশে আসার জন্য রাজী করাই। ছেলেটা একদম তোমার মতই । এত সহজে কী বোঝানো যায়? যাই হোক সে দেশে তো এসেছে কিন্তু আসার পর থেকেই তো তুমি সিক যে কারণে এখনো জানাতে পারেনি। এই তো! ওর উপর রাগ করো না , প্লিজ!

প্রিয় একা এতবড় একটা কষ্ট এতটা সময় ধরে বুকে বয়ে বেড়াচ্ছে ভাবতেই আমার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল। আর সেলিমও বা কেমন মানুষ ! এ সব খবর সে জেনেও আমাকে জানায়নি। খুব রাগ হচ্ছে বাপ ছেলে দু’জনের উপর।

এত দুশ্চিন্তার মাঝে আমার হঠাৎ করে মনের মধ্যে একটা আলোর ঝিলিক খিলে উঠল!

– তার মানে এখন থেকে আমার ছেলে আমার সাথেই থাকছে তাই তো! উত্তেজিত হয়ে বললাম আমি!

– সম্ভাবনা তো সেদিকেই গড়াচ্ছে। তবে নিশ্চিত বলতে পারছি না। বলল, সিদ্ধার্থ।

– কেন , কেন? ও কি কিছু বলেছে তোমাকে? উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলাম আমি।

– তেমন কোনোকিছু বলেনি। তবে কিছুক্ষণ আগে কথা বলে যেটা বুঝলাম তাতে ইঙ্গিতটা তেমনই মনে হলো আমার কাছে।

– কী বুঝলে ?
– এটা তো স্বীকার করো যে তোমার ছেলে এতদিন বাবার উপর অভিমান করে দেশে আসেনি।

– সে তো জানি!

– আরো একটা কারণ আছে । এবং সেই কারণটাই এখন বেশি জোরাল। প্রিয় যে তোমার বোনের মেয়েকে কতটা পছন্দ করে সেটা তো তোমার অজানা নয়!

– হুম, খুব পছন্দ করত মিথিলাকে।
– করত না এখনো করে! তোমার ছেলে এখনো তাকেই মন দিয়ে বসে আছে। মিথিলাকে ভুলে থাকতেই এতদিন সে এ মুখো হয়নি। সে মুখে কিছু না বললেও ওর সাথে কথা বলে এটা আমি নিশ্চিত। আর তোমার ছেলেকে যদি দেশে সত্যিই আটকাতে চাও তবে ওই মেয়েকে ঘরের বউ করে আনো। তবে সমস্যা হচ্ছে মেয়েটা বোধ হয় আরেকজনকে পছন্দ করে। প্রিয় এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। যেমনটা পারেনি আগেও। তাছাড়া গতরাতে মনে হয় দু’জনের মাঝে বেশ বড়সড় ভেজাল কিছু লেগেছে। প্রিয় সেজন্যই কষ্ট পেয়ে চলে এসেছে । আবার যদি কষ্ট পায় তবে এটা নিশ্চিত থাকো যে এবার ছেলের টানে দেশ ছেড়ে চলে যাবে। ওর তো মাথার স্ক্রু একটু আউলা সেটা তো তোমার অজানা নয়।
আমাদের কথা শোনার সাথে সাথে সেলিম কোনো রেস্পন্স না করেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি বুঝলাম এই লোকটা তবে এখনো সেই আগের মতই ঘাড় ত্যাড়াই রয়ে গেছে। মিথিলাকে শুধু প্রয়োজনে ব্যবহার করতেই জানে। খুব কান্না পেল। প্রিয় এখনো মিথিলাকে পছন্দ করে জেনে যতটা খুশি হয়েছি ঠিক ততটা কষ্ট পেয়েছি সেলিমের এমন ব্যবহারে।
আমি কিছু বলছি না দেখে সিদ্ধার্থ বলল, কথা বলছ না যে! মা হয়ে ছেলের জন্য এবারও কিছু করবে না?
– আমার এবার করার সুযোগ থাকলেও আমি কিছুই করব না। কারণ আমি প্রিয়রও যেমন মা , তেমনি মিথিলার। মা মরা মেয়েটা আমাকে বড় গলায় মা ডাকে। তাই সেলফিসের মতো শুধু নিজের জন্য, নিজের ছেলের জন্য ওকে আমি আবারো ছোট করতে পারব না। আমি বললে ও হয়ত অনিচ্ছাস্বত্তেও আমাকে না করতে পারবে না। কিন্তু আমি সেটা চাই না। আমি চাই ও সুখী থাকুক। যেখানে ওর সম্মান আছে সেখানে যাক। এ ঘরে এলে সেই আগের মতই ওকে শুধু ছোট করেই ভাবা হবে। সেলিমের এটিটিউড তো দেখলেই। মিথিলাকে আগেরবার যে ভাষা ব্যবহার করে এ বাড়ি থেকে বের করেছিল সেই একই আচরণ মেয়েটা আবার সহ্য করুক আমি চাই না।

– এসব কি বলছ? তুমি সেলিম সাহেবকে বোঝাও। তাছাড়া বিধিরও বুঝি এটাই মর্জি। না হলে প্রিয়রই বা কেন একটা ছেলে থাকার পরেও ডিভোর্স হবে আর মিথিলারই বা কেন উইডো হতে হবে! তুমি চাইলে সবই সম্ভব!

– আমি ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আমি এ বয়সে এসে আর ফাইট করতে চাই না। আমি চাই আমার মেয়েটা যেখানে পূর্ন সম্মান আর ভালোবাসা পাবে সেখানেই যাক। ছেলের ভালো চাইতে যেয়ে মেয়েটাকে ছোট করার ইচ্ছা নেই। আর ওরা এখন কেউ সেই ছোটটি নেই। নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে। প্রিয় যদি সত্যিই মিথিলাকে চায় তবে ওকে জয় করে আনার দায়িত্ব ওরই। মিথিলা আমার ঘরের বউ হয়ে আসলে এই পৃথিবীতে আমার থেকে বেশি সুখী কেউই হবে না। আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ওদের বরণ করার জন্য প্রস্তুত। আমি চাই না আমার অনুরোধে মিথিলা প্রিয়কে গ্রহণ করুক বা সেলিমের সাথে ফাইট করে মিথিলাকে সম্মান পাইয়ে দেই। আমি চাইলে সেটা এখন সম্ভব! কিন্তু সেই ইচ্ছেটা আমার নেই। আমি একটা সুস্থ সম্পর্ক চাই যাতে বাচ্চা দুটির জীবনে একটু শান্তির পরশ আসে। কথাগুলি বলতে বলতে আমি এতবেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম যে সিদ্ধার্থের সামনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।

– যেমন ছেলে তেমন মা! কাল রাতে তোমার ছেলে কিছু তো অঘটন ঘটিয়ে এসেছে। এত জিজ্ঞেস করছি কিছুই বলছে না। বললাম ওর পছন্দের কথা তোমাকে জানাতে তখন শুধু বলল, মিথিলা নাকি ওকে পছন্দ করে না। তোমাদের জানিয়ে লাভ নেই আর। শুধুশুধু ঝামেলা বাড়বে!

– পছন্দ না করতেই পারে। জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে সবকিছু সেই আগের মতো থাকবে এটা ভাবাটাও বোকামী। চোখ মুছতে মুছতে বললাম আমি। এ জীবনে সুখ কী আমি আজও তার নাগাল পেলাম না , সিদ্ধার্থ! যাবার আগে ছেলেটাকে একটু সুখী দেখতে চাই শুধু। উপরওয়ালা আমার এই আশাটুকুকেও কি অপূর্নই রেখে নিয়ে যাবে আমাকে! বলতে পারো সুখের সন্ধান কই মিলবে? একদিনে এতগুলি খবর আমি নিতে পারছি না।

– সিদ্ধার্থ আমাকে কী সান্ত্বনা দিবে সে নিজেই এখন ইমোশনাল হয়ে পড়েছে।

প্রিয় খুব বেশি অনুশোচনায় ভুগছে। কী ভূত চেপেছিল তার ঘাড়ে? কেন মিথিলার সাথে … ছিঃ ! মিথিলার দিকে চোখ তুলে তাকাবার সাহস কী আর এ জীবনে তার হবে? মিথিলা তাকে কত খারাপ ভাবছে সে ভেবেই পাচ্ছে না।কোথায় প্লান করেছে মিথিলা এই মাসটা তাদের এখানে থাকবে। কাছাকাছি থেকে হয়ত তার মন জয় করবে অথচ সবকিছু উলটাপালটা হয়ে গেছে। কাল রাতের ঘটনার পর মিথিলা কোনোমতেই এ বাড়িমুখো হবে না এটা সে নিশ্চিত। বুকের মধ্যে ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছে যেন তার।

সন্ধ্যা তখন সাতটা বাজে। প্রিয়র ফোনটা বেজে উঠল। সারাদিন বিছানায় পড়ে আছে আজ। একবার লাঞ্চের জন্য নিচে নামলেও খুব বেশি কথা বলেনি কারো সাথে। অনিচ্ছাস্বত্তেও ফোনটা রিসিভ করতেই দেখল সিদ্ধার্থের ফোন!

– হ্যালো , আংকেল!

– বাসাতেই আছো তো!

– হুম!

– তাহলে একটু নিচে নামো। আমি গেটেই আছি। একটা জায়গাতে যাব। একা প্রবলেম হবে তাই তোমাকে নিয়ে গেলে ভালো হয়। প্লিজ, না করো না। তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার আর্জেন্ট দরকার।

– কাল গেলে হয় না?

– হলে তো এখন তোমাকে ডিস্টার্ব করতাম না, প্লিজ!

– আচ্ছা , আসছি। পাঁচ মিনিট লাগবে। রেডি হয়ে নামছি।

সিদ্ধার্থ চুপচাপ বসে আছে । প্রিয় বলল, কই যাচ্ছি আমরা? এনি প্রবলেম। আংকেল?
– একটু কাকরাইলে একটা কাজ আছে। তুমি থাকলে খুব ভালো হয়! গেলেই দেখতে পাবে। একটা বিশেষ কাজ আছে।

এরপরে পুরো সময় নানা কথায় প্রিয়কে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছে যাতে মিথিলার জন্য কষ্ট না পায়। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। ভাগ্যের উপর তো কারো হাত নেই। আরো কত কথা!
প্রিয়ও চুপচাপ শুনছে। বলবেই বা কী! ভুল তো সে করেছে। শুক্রবার হওয়াতে রাস্তায় খুব বেশি জ্যাম নেই। তাড়াতাড়িই পৌঁছে গেল তারা। একটা মার্কেটের সামনে এসে দাঁড়াল তাদের গাড়ি।

সিদ্ধার্থের পিছু পিছু হাঁটছে প্রিয়। লিফটে বসেও একবার জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছে তারা? কিন্তু সিদ্ধার্থের উত্তর একই। “গেলেই দেখতে পাবে। “

একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকল তারা। খুব সাজানো গোছানো চারদিক। কিন্তু রেস্টুরেন্টে তেমন কাউকে চোখে পড়ছে না প্রিয়র। প্রিয় বুঝতে পারল যে তাকে আসলে ফাঁকি দিয়ে মন ভালো করার জন্য সিদ্ধার্থ আংকেল এখানে নিয়ে এসেছে। সে সিদ্ধার্থের দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কিন্তু ঠিক হলো না , আংকেল! আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।

সিদ্ধার্থ খানিকটা ঘাবড়ে যেয়ে বলল, কী… কী বুঝতে পেরেছ? এত কথা বলো না তো! সামনে চলো।

– কিন্তু কোনো মানুষই তো নেই। আর কেমন নিরিবিলি একদম! নাকি আমার জন্য ফুল রেস্টুরেন্টই বুক করে বসে আছেন? এসব পাগলামীর মানে হয়? আমি কী গার্লফ্রেন্ড নাকি আপনার? একটু হেসে বলল , প্রিয়।

– সবকিছু গার্লফ্রেণ্ডের জন্যই করতে হবে কেন? বন্ধুর জন্য করা যায় না? এই বয়সে এমন একজন ড্যাশিং ইয়াংম্যান আমার বন্ধু হয়েছে। তাকে বশে রাখতে একটু আধটু তো করাই যায়।

প্রিয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিদ্ধার্থ বলল, ওপাশে একটা রুম আছে ওখানে বসো। একটু রেস্ট নাও। আমি এক মিনিটের মধ্যে ওদের সাথে কথা বলে ফিরছি।
– রুমে বসতে হবে কেন? এখানেই বসি। পুরো রেস্টুটেন্টই মনে হচ্ছে বুক করেছেন! এটা ঠিক করেন নি। এসব জায়গা ক্রাউডিই ভালো লাগে। এমন নিরব আর রোমান্টিক প্লেসে শুধুমাত্র কাপলদেরকেই মানায়। হা হা!

-বেশি কথা বলো। যাও তো ওপাশে। আমার আরো দুইজন ফ্রেন্ড আসছে। ওদেরকে রিসিভ করে নিয়ে আসি। জাস্ট এক মিনিট।

প্রিয় কিছু বলার আগেই সিদ্ধার্থ তাকে কিঞ্চিৎ ধাক্কা দিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। প্রিয় রুমে ঢুকতেই বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলো সিদ্ধার্থ। প্রিয় কিছুটা ঘাবড়ে গেল। আসলে হচ্ছে টা কী!

রুমের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু খুব চমৎকার কাঁচা ফুলের ঘ্রাণ আসছে । বাইরে ফুল দিয়ে সাজানো তাই ঘ্রাণ বাইরেও ছিল। কিন্তু এখানের ঘ্রাণটা খুব তীব্র। হঠাৎ একটা হালকা নীল রঙের বাতি জ্বলে উঠল। আর সাথে সাথে হালকা মিউজিক।

“ ম্যায় আগার ছামনে আভি যায়া কারুউউ
লা জমি হেকি তুম মুসছে পার্দা করো!
আপনি সাদীকে দিন আভ নেহি দূর হে…।
ম্যাভি তাড়পা কারু, তুম ভি তাড়পা কারো!
বাড়ি মুশকিল হে … এ মেরা দিল হে…।।

কোনোকিছু স্বচ্ছভাবে দেখা না গেলেও সামনে যে একজন দাঁড়িয়ে আছে সেটা প্রিয় নিশ্চিত । সে কিছুটা ঘাবড়ে যেয়ে বলল, ক…কে?

সামনে থেকে কোনো উত্তর আসছে না দেখে সে ধীরপায়ে এগিয়ে গেল। কাছে যেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির মুখটি দু’ হাতে তুলে ধরল।

…মি…মিথিলা! তুমি? এ… এখানে? কিছুই মাথায় আসছে না প্রিয়র।

মিথিলার চোখজোড়া যে স্বচ্ছ জ্বলে টইটুম্বুর এটা বুঝতে বাকী রইল না প্রিয়র। সে সবকিছু মেলাতে চেষ্টা করছে। সিদ্ধার্থ আংকেলের মনে তবে এই। ওহ মাই গড! এই অসাধ্যকে সে কী করে সাধন করল? সে যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না! মিথিলাকে যেন এই নীল আলোয় পুরাই অপসরী লাগছে! মিথিলাকে কিছু বলতে যাবে তখনই মিথিলা তাকে অবাক করে দিয়ে তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে শক্ত করে দু’হাতে চেপে ধরল। মিথিলা যেন মিশে যাচ্ছে প্রিয়র বুকের মাঝে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, আ’ম সো সরি! আ’ম সো সরি! তোমার সাথে মিস বিহেভ করতে আমি চাইনি। কীভাবে কী হয়ে গেল আমিও জানি না। সো সরি!

প্রিয় এতক্ষণ স্বর্গের সিড়ি বেয়ে সাত আসমানে উঠছিল । মিথিলার কান্নার শব্দে হুঁশ ফিরল। সেও শক্ত করে মিথিলাকে বুকের সাথে চেপে ধরল! শুধু ভাবছে , এও সম্ভব!

মিথিলাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে , আরে পাগলি, সরি তো আমি! তুমি কেন সরি বলছ? আমিই মিসবিহেভ করেছি তোমার সাথে। আমারই মাথা ঠিক ছিল না। কিন্তু আমার মাথায় আসছে না তুমি এখানে কী করে?

সে অনেক কাহিনী! পরে বলি । ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, মিথিলা।

– না , আমি এখনই শুনতে চাই। অভিমানী কণ্ঠে জানতে চাইল, প্রিয়।
প্রিয় মিথিলাকে এমনভাবে বুকে জড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে বাঁধন আলগা হয়ে গেলেই মিথিলা যদি আবার পালিয়ে যায় তার থেকে। মিথিলার স্পর্শ যেন এতদিনের তপ্ত মরুর বুকে শীতলতার পরশ ছড়িয়ে যাচ্ছে। তার মনে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু কিছুই জানার আগ্রহ নেই তার। সে শুধু জানে এই সবকিছুর উত্তর শুধু একজনই । আর সে হলো সিদ্ধার্থ আংকেল। সিদ্ধার্থ আংকেলের প্রতি তার কৃতজ্ঞতায় চোখ ভিজে আসছে।

এভাবে কতক্ষণ কেটে গেল জানা নেই দু’জনের কারোরই। হঠাৎ চারপাশে আলোর ঝলমলানিতে সতর্ক হলো দু’জন। কেউ একজন কাশির শব্দ করতেই দু’জন দু’দিকে ছিটকে পড়ল যেন। মিথিলা আর প্রিয় চোর ধরা পড়ার ভঙ্গিতে তাকাতেই দেখল সামনে দাঁড়িয়ে মেহরাব আর আশা।

দু’জনেই যারপরনাই অবাক!

আশা এগিয়ে এসে বলল, এত অবাক হবার কিছু নেই । সব বলছি । আগে দু’জনেই চুপচাপ বসেন। সারপ্রাইজ তো আরো বাকী আছে।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয় তার দিকে। আশাকে তো সে আগেই দেখেছে। মেহরাবকে চিনতে পারলেও খুব অচেনা লাগছে। কতবছর পরে দেখা। মেহরাব এগিয়ে এসে প্রিয়কে জড়িয়ে ধরল।

আশাই প্রথমে কথা শুরু করল।
– আজ সকালে ভোরের দিকে মিথিলা আপুর কল এলো আমার ফোনে। এত সকালে ফোন দেখে খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম। ভাবলাম রূম্পা মায়ের কোনো খারাপ খবর না তো! রিসিভ করতেই আমরা কেমন আছি না আছি কোনোকিছু জিজ্ঞেস না করে আপু বলল, সে আইমান ভাইকে বিয়ে করতে পারবে না। শুধু আইমান ভাইকেই না সে সারাজীবন আর কাউকেই বিয়ে করতে পারবে না। এ নিয়ে আমরা যেন বাড়াবাড়ি না করি। আইমান ভাইকে যেহেতু আমি আর মেহরাব আপুর জন্য ঠিক করেছিলাম তাই আমাদেরকেই আবার বলল, আইমান ভাইকে এ কথা জানাতে। সে কিছুই জানাতে পারবে না। কারণ আইমান ভাই কষ্ট পাবে। আইমান ভাইয়ের সাথে তার এমনিতেই একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি হয়েছিল এতদিনে।

তাই আমি আর মেহরাব ঘাবড়ে গেলাম খানিকটা। আমাদের আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে বসে থাকে সারাদিন। খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। আপুর এমন রূপ আমি কখনো দেখিনি। খুব ঠাণ্ডা স্বভাবের মানুষ এত চটেছে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। মেহরাব কল দিলো আইমান ভাইকে। সে জানাল কিছুই তো হয়নি আপুর সাথে তার। সে গতরাতেই খাবার দাবার রান্না করে রেখে এসেছে মামার বাসায় । এর মধ্যে কী হলো যে এমন ডিসিশান জানিয়ে দিলো। আইমান ভাই তো খুব ক্ষেপে যায় আপুর এমন আচরণের কথা শুনে। মেহরাব বারবার সরি বলে ।তাকে আপুকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করবে বলে আশ্বাস দেয়।

মেহরাবের কাছে আমি আগেই শুনেছি আপু আর আপনার মাঝে কিছু ছিল। তাই আমি খানিকটা কিছু আন্দাজ করছিলাম। আমি মেহরাবকে কিছু না জানিয়েই সিকিউরিটি গার্ডকে কল করি। তাদের সাথে কৌশল করে কথা বলে জানতে পারি গতরাতে আপনি আমাদের বাসাতেই ছিলেন । আবার কনফার্ম হবার জন্য মামীর সাথে কথা বলে বুঝতে পারি আপনি তাহলে আপুর বাসাতে ছিলেন। বাকীটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। আপুর মনে যে আজ অবধি আপনার স্থান কোথায় সেটা আমি অনেক আগেই কথা প্রসঙ্গে জেনেছিলাম। তাই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে চেষ্টা করেছি সারাটা দিন। এর মধ্যে দুপুরে খাবার সময় আব্বার ফোন। আব্বা মেহরাবের সাথে কথা বলল। সব শুনে বুঝতে পারলাম আমার ধারনাই সঠিক । আপনাদের মাঝে কিছু হয়েছে । আব্বা জানালেন , আপনার নাকি ডিভোর্স হয়ে গেছে বেশ আগে যেটা সবার অজানা। আপনি আপুকে বিয়ে করতে চান। মেহরাব এটা শুনে প্রথমে রাজী না হলেও যখন আপনার আব্বু মানে সেলিম আংকেল মেহরাবকে বোঝাল তখন মেহরাব আর না করতে পারেনি।

এরপরে সেলিম আংকেল আর আমার শ্বশুর দু’জনে মিলে আপুর বাসায় যায়। তাকে সবকিছু খুলে বলে । আপনি যে এখনো কতটা পছন্দ করেন আপুকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন সেলিম আংকেল। আপু রাজী না হলে তখন সেলিম আংকেল অনেক কান্নাকাটি করেন আপুর সামনে। পেছনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমাও চায়। আংকেলের ভয় হয় আপু না আটকালে আপনি হয়ত আবারো ইতালি চলে যাবেন। আপনাকে হারানোর ভয় তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসেছে। সে যে কোনো মূল্যে আপুকে রাজী করাতে মরিয়া হয়ে উঠে। তাছাড়া রূম্পা মায়ের কাছেও সে আর ছোট হতে চায় না। দাদীও ফোন করে আপুকে অনেক বোঝায়। পরে সবার কথা ভেবে আপু তার মনকে আর পাষাণ করে রাখতে পারিনি। আসলে আপুর মনেও যে এটাই ছিল সেটা তো আমরা দেখতেই পেলাম মাত্র। হাসতে হাসতে বলল, আশা।

মিথিলা লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। ছোট ভাইয়ের সামনে কী একটা পরিস্থিতিতে পড়ে গেল সে। মুখ তোলার সাধ্য নেই তার।

এতক্ষণ ধরে শুধু শুনেই যাচ্ছে এসব প্রিয়। এতকিছু ঘটে গেছে সারাদিন অথচ সে কিছুই জানে না। আস্তে করে বলল, আম্মু এসব জানে?

– এখনো পর্যন্ত না! রূম্পা মাকে আর আপনাকে সারপ্রাইজ দিতেই সারাদিন মরিয়া হয়ে ছুটছে সেলিম আংকেল। আর তার সবকিছুতে পাশে থাকছেন সিদ্ধার্থ আংকেল। মানুষটিকে প্রথমবার দেখছি কিন্তু শ্রদ্ধায় মাথা নীচু হয়ে আসছে। এত অল্প সময়ের মাঝে সবকিছু এরেঞ্জ করার আইডিয়া তারই। আপনাদের জন্য আরো সারপ্রাইজ আছে । জাস্ট ওয়েট।

– মিথিলা আস্তে করে বলল, তোমরা কখন এলে?

– বিকেলের ফ্লাইটে। সেখান থেকে সরাসরি এখানে।

– তোমরা পারোও!

আমাকে সেই কখন থেকে কীসব বলে বলে ঘোরাচ্ছে ভাইয়া। কী জরুরি দরকার আছে বলে আমাকে এই অসুস্থ শরীরে নিয়ে এসেছে বাসা থেকে। কাউকে বলে আসার সুযোগও হয়নি।

বারবার জিজ্ঞেস করছি কই যাচ্ছি কিন্তু একই উত্তর ‘ সময় হলেই দেখতে পাবি।“

রেস্টুরেন্টে ঢুকে আমার তো চোখ ছানাবড়া! কে নেই এখানে? আমার ভাবি , মিথিলার মা, বাবা, মেহরাব ,আশা, আমার শাশুড়ি, সেলিম , সিদ্ধার্থ সবাই। আমি তো অবাক! কিন্তু সবাইকে দেখতে পেলেও মিথিলা আর প্রিয়কে দেখছি না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম বরের বেশে প্রিয় আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে যেন। প্রিয় কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে দোয়া চাইছে। এতটুকু তো বুঝতে পারছি যে এখানে প্রিয়র বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট চলছে কিন্তু কার সাথে আর আমিই বা কেন কিছু জানি না। কী হচ্ছে এসব?

সেলিম আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে বলল, তুমি বলেছিলে না মিথিলাকে ছেলের বউ হিসেবে পেলে পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ হবে! সারাজীবন তো কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারলাম না তোমাকে । তাই প্রথমবারের মতো তোমাকে সুখী মানুষ করতে চেষ্টা করলাম। আমি দরজার আড়াল থেকে তোমার আর মিঃ ব্যানার্জীর কথা শুনেছিলাম সকালে। মিথিলাকে প্রিয় এখনো পছন্দ করে এ কথা জেনে আমি তোমাদের মতামতের অপেক্ষা না করে প্রিয়র কাছে রওয়ানা হচ্ছিলাম গতরাতে কী হয়েছে জানতে। কারণ মিথিলাকে আগের বার অপমান করে কতবড় ভুল করেছিলাম সেটা তো টেরই পেয়েছি এত বছর। এজন্য ওখানে আর অপেক্ষা করিনি। ওকে আবার পেয়েও হারাতে চাইনি আমি।

এরপরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছি। সে গল্প পরে শুনবে। এবার আর দেরী না। আবার কী বিপদ আসে তার চেয়ে আজই আমি মিথিলাকে আমার ঘরের লক্ষী করে নিয়ে যেতে চাই। পরে সবাইকে ইনভাইট করে রিসেপশান করব বড় করে।

কথাগুলি শুনে আমার চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে। সেলিম আমাকে এতবড় সারপ্রাইজ দিবে আমি কখনই ভাবিনি। আমি আরো কত ভুল বুঝে বসে আছি তাকে। ঝাপসা চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি গুটিগুটি পায়ে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়া একটা পুতুল আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এসেই আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে পুতুলটা। অতি আনন্দেও যে মানুষ কাঁদে আজ প্রথমবার আমি টের পেলাম। মা মেয়ে কেঁদেই যাচ্ছি। কোনো দুঃখ ছাড়াই যেন কান্নার রোল পড়ে গেল মা মেয়ের। আর সেটা মুহূর্তেই সংক্রমিত হচ্ছে আমাদের পাশে দাঁড়ানো বাকী সবার মাঝে।

রাত সাড়ে এগারটা।
মিথিলা আর প্রিয়কে নিয়ে ঘরে ঢুকতেই আমার পুরানো মেইড মতিন দৌড়ে এসে আমার কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলল। আমি সাথে সাথে কী উত্তর দেব বুঝতে পারছি না। আমাকে এমন ঘাবড়ে যেতে দেখে প্রিয় এগিয়ে এলো আমার দিকে। আমি স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছি। মুহূর্তেই মুখের হাসি মিলিয়ে গেল আমার।

চলবে……

[ প্রিয় পাঠক,
আগামীপর্বে উপন্যাসটির সমাপ্তি হবে । আপনারা সবাই শেষ পর্ব পর্যন্ত সাথে থাকবেন সেই প্রত্যাশা। একটা গল্প সাজাতে আর সেটা লিখতে বেশ প্লান করে এগুতে হয়। সেটা কতটুকু পেরেছি আপনারা জানেন। আপনারা পাশে ছিলেন বলেই সাহস করে অর্ধশত পর্ব আজ পূর্ণ করলাম। এটা আমার লেখা প্রথম এত লম্বা উপন্যাস। ভালোবাসা সব পাঠকের প্রতি। মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন কেমন লাগল। খুব অনুপ্রাণিত হই আপনাদের ভালোবাসায়। ]

পর্ব- ৪৯
https://www.facebook.com/111576077291737/posts/404198954696113/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here