সুখের_সন্ধানে পর্ব_৩২

0
379

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৩২

মিথিলা ভালো করেই জানে এই সমাজে একটা মেয়েকে কতটা যুদ্ধ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখতে হয়। মা ছাড়া এই পৃথিবীতে পদে পদে হোঁচট খেয়ে খেয়ে তাকে পথ চলতে হবে। রূম্পা মায়ের বাসায় থাকলে সে ধীরেধীরে আরো বেশি প্রিয়র প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বে। আর এ বাসা থেকে এখন বের হতে চাইলে রূম্পা মা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন। সে তার প্রবলেমের কথা জানতে চাইবে যার কোনো সদুত্তর তার কাছে নেই। তাছাড়া মেহরাবের ব্যাপারটাও ভাবতে হবে তাকেই। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে সাজিদকেই বিয়ে করবে। যুদ্ধ করে সে এই প্রতিকূল পরিবেশ পারি দিতে অপারগ । এত বেশি মানসিক শক্তি তার নেই। বাপের ঘরে ঠাই হয়নি। খালার বাড়িতেও তারা অনাহুত। মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে আজ হলেও বিয়ে হবে, কাল হলেও হবে। তাই দু’দিন আগে হলেই বা সমস্যা কী?

ওদিকে আইমান পাগলের মত তাকে যেখানে সেখানে যার তার সামনে ডিস্টার্ব করে। ইদানিং প্রিয়কে নিয়েও আজেবাজে কথা বলে। আইমান ছাত্র রাজনীতি করে তাই কিছুতেই তার পরোয়া নেই। ধরাকে সরাজ্ঞান মনে করতেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে না। যদিও মিথিলার সাথে কোনো ধরণের অশোভনীয় আচরণ এখনো সে করেনি । কিন্তু করতে কতক্ষণ? কারো সাথে তর্কে জড়ানো মিথিলার একদমই ধাঁতে নেই। কিছুতেই প্রতিবাদ করতে পারে না আইমানের । নিরবে সবই সহ্য করছে। একবার ভেবেছে তার বাবার কাছে নালিশ করবে। তার বাবা হয়ত তার পরিবারকে জানাবে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো এতে হিতে বিপরীত না হয়। আইমানের পরিবার আমাকে পছন্দ করে না। তাই তারাও আমার জন্য আইমানের এই পাগলামি সোজাভাবে নিবে না। আইমানকে শাসন করতে যাবে আর সেই শাসনের কুপ্রভাব পড়বে আমার উপর। আইমান আগের থেকে বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়বে।

সে যেদিকেই তাকাচ্ছে সেদিকেই অন্ধকার মনে হচ্ছে। এই অন্ধকারের মাঝে কেন যেন তার কাছে মনে হচ্ছে সাজিদ হয়ত তার জন্য আলোকবর্তিকা হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।
গতরাতে মিথিলা তার মাকে স্বপ্ন দেখেছে। মায়ের কোলের উপর মাথা রেখে কেঁদে কেদে এই সমস্যার সমাধান খুঁজছে সে । তার মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে, “ তোর তো অনেক বুদ্ধিরে, মা। নিজের বুদ্ধিতে যা আসে সেটাই কর। তোর সাথে সবসময় আমি আছি। একদমই ভয় পাবি না। “ মাকে জড়িয়ে ধরে আরো কীসব বলছিল এমন সময় ফজরের আযানের শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে বিছানায় বসে মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে কতক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে সেই হুশ নেই। চারদিকে যখন আলো ফুটে উঠতে শুরু করেছে তখন তাড়াতাড়ি উঠে ফজরের নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসেও মায়ের জন্য অনেক কান্নাকাটি করেছিল। একদম নাক চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছিল কাঁদতে কাঁদতে ।

মেহরাবটাকে নিয়েও তার যত চিন্তা। একদমই পরিস্থিতি বুঝতে চায় না। খুব বেশি জিদ করে আজকাল। ছোটবেলা থেকেই এই স্বভাবের জন্য কত যে মার খেয়েছে তার মায়ের হাতে। রূম্পা মা তাদের খুব আদর করেন। কিন্তু সেই আদরে মেহরাব যেন আরো বাদর হচ্ছে। দামী ফোন , দামী ব্যাগ, জুতা আরো কত কী! রূম্পা মাও কিছু এনে দিতে ক্লান্ত হয় না। মেহরাব চাইতেই সে সব দিচ্ছে । তাকে এত নিষেধ করছি মেহরাবের এসব বায়না পূরণ করতে। রূম্পা মায়ের অঢেল আছে তাই বলে এভাবে তার থেকে নেওয়া একদমই বেমানান। মিথিলা বোঝে কেন রূম্পা মা এমন করে। মা বাবাকে কাছে না পাবার কষ্টটা সে সবসময় ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু মেহরাবই বা কেমন ? এত ছোটো তো তুই এখন না। মিথিলা বোঝাতে বোঝাতে এখন ক্লান্ত। তার যে করেই হোক মেহরাবকেও এখান থেকে বের করতে হবে। এই অঢেল সম্পদের মাঝে সুখ খুঁজতে খুঁজতে নয়ত একসময় সে ভুলেই যাবে সে এ বাড়ির একজন আশ্রিত বৈকি আর কিছুই না।

সাজিদকে সে এভাবে সেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে তাকে বিয়ে করবে তার সাথে মেহরাবকেও সে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিতে হবে অনন্তপক্ষে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত। সে তার ছোট ভাইটাকে রেখে কোথাও থেকে শান্তি পাবে না। সাজিদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হাসিমুখে সব মেনে নিয়েছে। সাজিদ মিথিলাকে আশ্বস্ত করেছে এ নিয়ে তার পরিবার থেকেও কোনো আপত্তি করবে না হয়ত। তার নিজের দুই মামাও তার মায়ের কাছে থেকে মানুষ হয়েছে। তার মা নিশ্চয়ই বুঝবেন। সে এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে বলে মিথিলাকে। মিথিলা সাজিদের চোখে তার জন্য বিশ্বাস দেখেছে, সম্মান দেখেছে, ভালোবাসা দেখেছে। সে না হয় এখন সাজিদের জন্য কোনোকিছুই অনুভব করছে না তাতে কি! নিশ্চয়ই বিয়ের পরে ধীরে ধীরে সাজিদের ভালোবাসার কাছে সে নিজেকে সমর্পণ করবে এটা তার বিশ্বাস। প্রিয়র সাথে তার এমন কিছু হয়নি যে সে তা ভুলতে পারবে না। সে খুব চেষ্টা করবে নিজেকে সাজিদের রঙে রাঙিয়ে নিতে।

তবে তার রূম্পা মা এই মুহূর্তে তাকে বিয়ে দিতে রাজি হবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। সাজিদকে দেখে মনে হয়েছে খুব ভালো মনের একজন মানুষ। তার বিশ্বাস সাজিদ তাকে নিশ্চয়ই বুঝবে। যদিও মেয়েদের স্বামীর ঘর একটা ঘর যেখানে সবাই তাকে আপন ভাববে এমনটা আশা করা একটু বেশিই হয়ে যায়। তবুও আশা করতে দোষ কোথায়? আশায়ই তো মানুষ বাঁচে।
এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে যখন মিথিলা ঘুমিয়ে পড়ছিল তখন প্রিয় এসে দরজায় নক করল।

ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলল সে। চোখের সামনে প্রিয়কে দেখে তার ঘুম উধাও।

– কিরে এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছিস?

– হুম। মাথাটা ধরেছে খুব। তাই ভাবলাম ঘুম আসলে ঠিক হয়ে যাবে , তাই। কিছু কি বলবে?

– ছাদে যাবি চল। খানিকক্ষণ খোলা বাতাসে ঘুরে আসবি। ভালো লাগবে।

– সরি, ভাইয়া। এতক্ষণ ধরে ঘুমাতে চেষ্টা করে এখন প্রচুর ঘুম আসছে। আজ না হয় না যাই। এমনি কিছু কি বলবে তুমি? ঘুমালে মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে।

প্রিয় কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। আজ বিকেলে সে যখন বাইরে বেরিয়েছিল তখন সাজিদ আর মিথিলাকে একসাথে বসা দেখেছে বাসার কাছাকাছি ছোটো পার্কটির একপাশে। তখন থেকেই তাঁর মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। তার অবুঝ মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না যে ওরা দু’জন দু’জনকে খুব ভালোবাসে। কেন যেন তার মনটা বারবার তাকে তাগাদা দিচ্ছে তার মনের খবর মিথিলাকে জানানোর জন্য। কিন্তু সেটা বোধ হয় একটু বেশিই বাড়াবাড়িই হয়ে যাবে। মিথিলা তাকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখে । আর সে কি না! ছিঃ ছিঃ!

সকালবেলা মিথিলার ঘুম ভাঙ্গার সাথেসাথেই আমি যেয়ে ওর পাশে বসলাম। ওর চোখগুলি কেমন ফোলা ফোলা লাগছে। কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম;

– কি রে চোখমুখ ফোলা কেন? শরীর খারাপ লাগছে? আমাকে কিছু বলিস নি কেন? ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতাম । কী হাল করেছিস নিজের? আমি এ ক’দিন কীসব কাজে ব্যস্ত থাকায় তোর একদমই খোঁজখবর নিতে পারিনি তাই বলে তুইও কি আসতে পারলি না?

– উহ, রূম্পা মা। আগে দম নাও। একের পর এক প্রশ্ন বাণে তুমি সুস্থ একটা মানুষকে এবার অসুস্থ করে দিবে দেখছি। আমার কিছুই হয়নি। আজ আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম অন্য দিনের চাইতে। ঘুম বেশি হয়েছে তাই হয়ত নাক চোখ ফোলা লাগছে।

– ওহ! তাই বল। আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।

– এবার বলো সাত সকালে কিছু তো বলার জন্য এসেছ।

– হুম, বলবো কিছু একটা । সত্যি সত্যি উত্তর দিবি।

– মিথ্যে কোনোদিন বলেছি তোমাকে?

– তা বলিস নি। কিন্তু! কিভাবে যে বলি!

– আচ্ছা কী বলবে বলে ফেল। ঘুরানো প্যাঁচানোর দরকার নেই। অন্ততপক্ষে তোমার সাথে আমার সেই সম্পর্ক না।

– হুম, ঠিক বলেছিস। আচ্ছা , সাহস যখন দিলিই তখন জিজ্ঞেস করেই ফেলি। তুই কি সাজিদকে পছন্দ করিস?

– মিথিলা কিছুটা লজ্জাবনত চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, না …মানে…হ্যা!

– না আবার হ্যা বুঝলাম না।

– মিথিলা মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানাল।

– আমি অবশ্য ব্যাপারটা অনুমান করেছিলাম বেশ আগেই।

– আমি কি ভুল করেছি ,মা? তুমি না চাইলে না হয় ফিরে আসব ও পথ ছেড়ে!

– ভুল না সঠিক সেটা এখনো বুঝতে পারছি না। তবে ছেলেটাকে আমারও পছন্দ। মনে হচ্ছে তোকে খুব সুখে রাখবে।

– তুমি কি করে জানলে আমাদের ব্যাপারে?

– গত রাতে সাজিদের মা কল করেছিল। সেও তোকে খুব পছন্দ করে। উনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তাই ছেলে বিয়ে করিয়ে সংসারের দায়িত্ব তার হাতে তুলে দিতে চায়; তাছাড়া উনার মেয়েটাকেও বিয়ে দিতে হবে। মেয়ের বিয়ের এত দায়িত্ব উনি একা সামলাতে পারবেন না এজন্য ঘরে বউ আনতে চান আগে। উনি তোর কথা বলল। এবং এই মাসের মধ্যেই ছেলেকে বিয়ে করাতে চায়। আমি অবশ্য এতে রাজি না। এত দ্রুত সবকিছু করা যায়? তাছাড়া তোর ইয়ার ফাইনাল দু’মাস বাদে। তবে উনি তোর পড়াশুনার ব্যাপারে দেখলাম খুব পজিটিভ। বিয়ের পরেও পড়াশুনা করাবে এমনটাই বলল।

– সাজিদ ভাই জানে এসব কথা?

– সাজিদ ভাই? হুম! মেয়ে আমার বড় হয়েছে তবে! ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছে আর আমি কিছুই টের পেলাম না।

– না … মা …মানে…।

– হয়েছে … হয়েছে। এত তোতলাতে হবে না। হুম, সাজিদ জানে। সেও চাচ্ছে এ মাসেই বিয়ের কাজ সারতে। আমি উনাকে বলে দিয়েছি তোর কাছ থেকে আগে মতামত নিব সাজিদকে পছন্দ করিস কি না তারপরে বিয়ের ডেট নিয়ে কথা। এত তাড়াতাড়ি আমি তো রাজি হবো না।

মিথিলার মনে পড়ল দাদীর কথা। আগামী পনেরো দিনের মধ্যে এ বাড়ি থেকে তাকে বিদায় হতে বলেছে তার খালু। তাছাড়া এখানে যতদিন থাকবে ততই প্রিয়র প্রতি দুর্বলতা বাড়তেই থাকবে। এখান থেকে তাকে বের হতে হবে। এই যন্ত্রণা থেকে তার মুক্তি চাই। যে করেই হোক। সে নিজের লাজলজ্জা ভুলে যেয়ে বলল,

– রূম্পা মা। আমার এক্সাম শুরু হতে হতে আরো মাস তিনেক তো লেগে যাবে। তাই এক্সাম নিয়ে চিন্তা নেই ! আমি ম্যানেজ করতে পারব। তুমি এত চিন্তা করছ কেন?

– ও মা! তার মানে তলে তলে এতকিছু! আমি আছি ওর এক্সামের চিন্তায় আর ও আছে ওর বিয়ে নিয়ে। বেশ তো এডভান্স হয়েছে আমার লাজুকলতা মেয়েটা। তার মানে কি তর সইছে না , তাই না? হা হা হা! এ গল্প আমি কাকে বলি ? তোর মায়ের এখন বেঁচে থাকবার দরকার ছিল। হা হা!

– মিথিলা লজ্জায় যেন মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিল। মুখ দিয়ে আর শব্দ বেরুচ্ছে না।

দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে চিন্তা করতে করতে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। একবার মন চায় এই নরক থেকে মেয়েটাকে বের করি। সেলিমের বাজে আচরণ আর সহ্য হচ্ছে না। আরেকবার মন চায় মেয়েটার লেখাপড়া শেষ করিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করাই। একটা ভালো বুদ্ধির জন্য কারো সাথে পরামর্শ করব সেই মানুষটিও নেই। খুব মিস করছি টুম্পাকে। এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলিরে বোন?
ন ‘মাস যাকে পেটে ধরে এত কষ্ট করে বড় করলি তার এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ভার আমার উপর ফেলে চলে গেলি! খুব ভয় হচ্ছে কী সিদ্ধান্ত নিব সেটা ভাবতেই। আমি ভাইয়াকে কল দিলাম। সব শুনে ভাইয়াও সাজিদ এবং তার পরিবারকে পছন্দ করল। তাছাড়া সাজিদদের বাসা ভাইয়ার বাসা থেকে বেশ কাছাকাছি তাই ভাইয়া খুব পছন্দ করলেন। সে আমাকে বললেন, সাজিদের মাকে হ্যা করে দিতে। আমি ফাইনাল কিছু জানানোর আগে মিথিলার বাবাকে যেন কল দেই সেটাও স্মরণ করিয়ে দিলেন ভাইয়া।

আমার প্রথমে কিছুটা মেজাজ গরম হলেও পরে ভেবে দেখলাম আমরা মিথিলার জন্য যাই কিছু করি না কেন দিনশেষে মিথিলার বাবাই এই পৃথিবীর তার এখন সবচেয়ে কাছের মানুষ। তাকে না জানিয়ে আমি এমন অন্যায় করতে পারি না।

মিথিলার বাবা সবকিছু শুনে সাজিদকে পছন্দ করল বলে মনে হলো। সে মিথিলার সুখের দায়িত্ব আমার হাতে সঁপে দিয়ে নিজেকে যেন দায়মুক্ত করল। আমি বুঝলাম সেও রাজি।

আম্মার কাছে যেয়ে সবকিছু খুলে বললাম । মিথিলার এতবড় ঘর থেকে সম্মন্ধ বলছে শুনে আমার শ্বাশুরির চোখ কিছুটা ছানাবড়া।

– সাজিদের মা ভালো করে জানে তো যে মিথিলা কেন আমাদের বাড়িতে থাকে? না মানে বোঝাচ্ছি যে ওর বাবা যে সেকেন্ডবার বিয়ে করেছে সেটা কি ওনারা জানেন?

– জি মা। সাজিদ তো আর দূরের কেউ না। সে তো আমাদের ঘরের অল্পবিস্তর অনেক কিছুই জানে।

– আমি সাজিদের কথা বলছি না। আমি বলছি সাজিদের মায়ের কথা আর ওর পরিবারের বাকি সবার কথা। সাজিদ মিথিলাকে পছন্দ করে। মিথিলার অনেক কিছুই সে দেখেও না দেখার ভান করবে কিন্তু তার পরিবার কিন্তু সেটা করবে না।

– এটা একদম ঠিক বলেছেন। এজন্যই আমি সবকিছুই জানিয়েছি সাজিদের মাকে। উনি সবকিছু নাকি আগে থেকেই জানে। সেসব বললেন।

– জানলে তো ভালো। তাহলে দিয়ে দাও দুই হাত এক করে। দেরি করছ কেন? আর ওর বাবাকে জানিয়েছ? পরে না আবার উল্টাপাল্টা কিছু হলে তোমাকে এসে দোষের ভাগিদার করে।

– উল্টোপাল্টা আবার কি হবে মা? ভালো চিন্তা করেন, নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে। হ্যাঁ, আমি ওর বাবাকে জানিয়েছি, আমার ভাইয়াকেও জানিয়েছে। ভাইয়াও মোটামুটি রাজি । আর মিথিলার বাবা আসাদ তো আমার উপরেই সব দায়িত্ব দিয়েছে। মেয়ের কিসে ভালো মন্দ সব চিন্তা নাকি আমার।

– চালাক মানুষ তো! তাই তোমাকে বড় করতে যেয়ে নিজে দায়িত্ব থেকে পালাল। না হলে কি আর বাপ বেঁচে থাকতে ছেলেমেয়েদের অন্যের বাড়িতে মানুষ হতে হয়। তাও আবার মিথিলার মত একটা লক্ষী মেয়েকে।
তারা যেহেতু এ মাসেই বিয়ে চাচ্ছে তবে ব্যবস্থা করো। মিথিলা এত বছর এ বাড়িতে থাকল, তাই বিয়েটাও এখান থেকেই দেওয়ার ব্যবস্থা করো।

– কি জানি! কে দায়িত্ব থেকে পালালো আর কে দায়িত্বভার তুলে নিল নিলো। আমার দরকার অভাগা মেয়েটাকে একটা ভাল পাত্র দেখে পাত্রস্থ করা। যাতে ওর মায়ের কাছে যে আমাকে জবাবদিহি করতে না হয়। আমার মনে হয় সাজিদই সেই ছেলে আর ওর পরিবারও খুবই ভালো।

– দেখো তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? আয়োজন শুরু করো। ও হ্যা, সেলিমকে জানিয়েছ?

– একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, না এখন অবধি জানাইনি। অবশ্য তাকে এ খবর জানানো আর না জানানোর মধ্যে কি ফারাক?

– এসব কি বলছ? সেলিম এ সংসারের কর্তা। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত ওকে জানাবে না?

আমি মনে মনে হাসছি…. কর্তা! ভালই বলেছেন। এমন কর্তা যে কোনদিন এসবের একটা কোনো দায়িত্ব পালন করেছে কিনা সন্দেহ! মেয়েটাকে তো দেখতেই পারে না। এই বাড়ি থেকে ওকে বিদায় করতে পারলেই যেন বাঁচে।

আমার শাশুড়ি আর এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বললেন না দেখে আমি সেখান থেকে বেরিয়ে গেলাম।

রাতে প্রিয়কে রুমে না পেয়ে আমি ছাদে গেলাম। আমি দূর থেকেই ঘ্রাণ পেয়ে বুঝলাম প্রিয় হয়ত সিগারেট টানছে। আমাকে দেখে যাতে লজ্জা না পায় তাই গলাখাকারি দিলাম। প্রিয় সিগারেট খায় বেশ আগে থেকে এটা আমি জানি তবে আমার সামনে কখনো সে খায়নি। এটা ওকে আমি কত না নিষেধ করেছি কিন্তু কোনো ফায়দা হয়নি। এই অভ্যাস ওর রক্তে মিশে আছে। আমার শ্বশুর ছিলেন একজন চেইন স্মোকার।
প্রিয়র বাপ চাচাও তার বিকল্প নয়। তবে সান্তনা এইটুকু যে ওর বাপ চাচার মতো ড্রয়িংরুমে বসে আয়েশ করে অ্যাস্ট্রেতে ছাই ফেলতে ফেলতে সিগারেটের টানে না।

হয়ত সামনে গেলে ভবিষ্যতে এমনটা করতেও পারে। তবে এখনো পর্যন্ত যে এতটুকু আমাকে মানছে সেটাও আমার জন্য অনেক বড় পাওনা। শুধু সিগারেটই না এই পরিবারের বাকি সবার মত প্রিয়রও যে একটু আধটু অন্য নিষিদ্ধ নেশাদায়ক ড্রিংকসের দিকে নজর আছে সেটাও আমি জানি। যে ছেলে ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে এ বাড়ির যে কোন পার্টির আয়োজন হলেই এ ধরনের বস্তুর উপস্থিতি একান্ত কাম্য সে ছেলেটার এসবের প্রতি নেশা হবে এটা অবাস্তব ভাবার কিছু নেই।

প্রিয় যখন খুব দুশ্চিন্তায় থাকে তখন একের পর এক সিগারেট ফুঁকতেই থাকে। আজও ওর আশেপাশে বেশ কয়েকটা আধা খাওয়া সিগারেটের পোড়া অংশ ফেলা দেখে একটু ঘাবড়ে গেলাম। কী এমন চিন্তায় পড়ল ছেলেটা? অফিসে তো সব ঠিকঠাকই আছে। তাহলে কি ওর ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সমস্যা? বিন্দু?

বিন্দুর সাথে ওর যোগাযোগ কেমন ইদানিং সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ও আমাকে কিছু বলছেও না। কতবার বললাম, মেয়েটাকে আমার সাথে দেখা করিয়ে দিতে। নাহ, ওর সময়ই হলো না। অবশ্য আমিও ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। সিলেটে গেলাম আবার ঢাকায় এসে আরো নানান ধরনের ব্যস্ততা। যে কারণে এ বিষয়ে ওর সাথে কোন কথাই বলা হয়নি আর । ছেলেটা না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে। খানিকটা অপরাধবোধে ভুগলাম প্রিয়র খোঁজখবর না নেয়ার জন্য।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here