সুখের_সন্ধানে পর্ব_৩৮

0
454

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৩৮
বরের বেশে অপূর্ব লাগছে আজ প্রিয়কে। মিথিলারা এসে পৌঁছেছে কিছুক্ষণ আগে। সাজিদ খানিকক্ষণ যেয়ে প্রিয়র পাশে বসল । নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানাল প্রিয়কে। প্রিয়ও বেশ হাসিমুখে সাজিদের শুভকামনা গ্রহন করছে। মিথিলার এই দেড় বছরে হাতে গোণা মাত্র দু’একবার কথা হয়েছে প্রিয়র সাথে। সাজিদ যেহেতু ব্যাপারটা পছন্দ করে না তাই মিথিলা ইচ্ছা করেই প্রিয়কে এভয়েড করে । প্রিয়ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মিথিলার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলে।

মিথিলা এনার পাশে এসে বসেছে। গোল্ডেন পারের বটল গ্রীন আর অরেঞ্জ কালারের জড়ি সূতোর বুনোনে অলওভার মিনাকারী কাজ করা মেরুন লাল রঙের কাতান বেনারশী শাড়িটিতে মিথিলাকে আজ এত অপূর্ব লাগছে। রেডি হয়ে আসার সময় মিথিলা যখন আয়নায় দাঁড়িয়ে লিপস্টিক পরছিল তখন সাজিদ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে, আজ ওখানে কত কত সুন্দরী আসবে! সুন্দরীরা সবাই কত সাজে সাজবে। কিন্তু আমি জানি এর মাঝে একমাত্র আমার বউই হবে সেরা সুন্দরী। আমি শিওর ! আজ যে তোমাকে এক পলক দেখবে সে পলকই ফেলতে পারবে না ।
মিথিলা ভীষণ লজ্জা পায় সাজিদের এমন কথায়।

এনার পাশে মিথিলাকেই বেশি বউ বউ লাগছে। এনা একটু বেশিই খোলামেলা আর আধুনিক। একদমই নতুন বউয়ের মত ঘোমটা করে বসে নেই। এর সাথে কথা বলছে ওর সাথে কথা বলছে। হাসাহাসি করছে, সেলফি তোলছে , আবার কখনো নিজেই নানাভাবে পোজ দিয়ে ক্যামেরাম্যানকে ছবি তুলতে বলছে।

মিথিলার সাথে এনার টুকটাক কথাবার্তা হলো। হঠাৎ কথা বলতে বলতে এনা বলল, তুমি তো প্রিয়র সেই কাজিন যাকে প্রিয় পছন্দ করত, তাই না?

হুট করে এনার এমন প্রশ্নে মিথিলা খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। এ কেমন ধরণের প্রশ্ন? এনা মিথিলার দিকে উত্তরের অপেক্ষায় এমনভাবে তাকিয়ে আছে যে মিথিলার জবাব না দিয়ে আর উয়ায় নেই। সে কিছুটা বিব্রত হয়ে আস্তে করে বলল,

– ভাবি, সরি! আমি আসলে আপনার প্রশ্ন বুঝতে পারছি না।

– সহজ করেই তো জিজ্ঞেস করলাম। কঠিন করে তো জিজ্ঞেস করিনি। বলেছি, তুমিই তো সেই মেয়ে যাকে আমার হাজবেন্ড মানে প্রিয় একসময় খুব পছন্দ করত ? বিয়েও নাকি করতে চেয়েছিল?
– ছিঃ ছিঃ, ভাবী! এসব কোথা দিয়ে শুনলেন? এমন কিছুই না। ভাইয়া আমার কাছে শুধুই বড়ই ভাই। এসব নিয়ে আপনাদের আজকের এমন দিনে কথা না বলাটাই বোধ হয় ভালো দেখাবে। কার কাছে কী শুনেছেন , প্লিজ ওসবে কান দিবেন না।

– আই নো এভ্রিথিং ! প্রিয়ই আমাকে বলেছে। অবাক হলে? ইভেন আমি বিন্দুর কথাও জানি। সো , তোমার হাইড করার কিছুই নেই। মানুষকে মানুষের ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। এটাতে আমার কোনো প্রবলেম নেই। তবে প্রিয়র চয়েস মন্দ ছিল না দেখছি। তুমি বেশ সুন্দরী।

– মিথিলা আস্তে করে সৌজন্যতা দেখাতে বলল, ধন্যবাদ।

মিথিলার এসব কথা শুনে দম আটকে আসছে। এনা আধুনিক পরিবেশে আধুনিক মন মানসিকতায় বেড়ে উঠেছে । তাই তার কাছে এসব কথা বলা ঠিক যতটা সহজ মিথিলার কাছে ঠিক ততটাই কঠিন। সেই দুঃসহ দিনগুলিকে ভুলে এখন সাজিদের সাথে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করেছে। সাজিদকে ভালোবাসতে শুরু করেছে আর এর মধ্যে আবার সেই পুরানো গুঞ্জন। এসব থেকে বেরুতে তাকে কত শত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এখানে এসে আবার সেই কষ্টের অতীত এভাবে সামনে আসবে সে ভাবতেই পারেনি। সাজিদের কানে এসব কথা গেলে নতুন করে সেও আবার কষ্ট পাবে। এই ঠোঁটকাটা মেয়েটার প্রতি তার কোনো ভরসা নেই। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে বেরুতে হবে।

এদিক সেদিক তাকাল সাজিদের খোঁজে । সাজিদকে পেয়েও গেল। এক পাশে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।

মিথিলা তার কাছে যেয়ে জানাল , বিয়ে বাড়ির শোরগোলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছে তার। তখনই বেরুতে চায় সে। সাজিদও আর ‘না’ করল না। তাদের খাওয়া দাওয়া পর্ব আগেই শেষ । তাই সাজিদ মিথিলা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরুতে যাবে তখনই মুখোমুখি হলো প্রিয়র। প্রিয়র সাথে সাজিদ টুকটাক কথাবার্তা বললেও মিথিলা একটু এভয়েড করে চলছে। সে চায় না কোনোধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হোক। তাছাড়া প্রিয়র নতুন বউকে তার এখন সবচেয়ে বেশি ভয়। মিষ্টি মিষ্টি কথার ছলে দারুণ করে অপমান করায় সে যে বেশ অভ্যস্ত সেটা মিথিলার কাছে বেশ স্পষ্ট।

– কী ব্যাপার? চলে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে তোরা? ফাংশান শেষ হতে এখনো তো বেশ দেরি।

– হ্যা ভাইয়া। খুব মাথাব্যথা হচ্ছে। তাই বাসায় চলে যাচ্ছি। রূম্পা মায়ের সাথেও কথা বলে এলাম মাত্র। তোমাদের নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা রইল। ভাবি খুব মিষ্টি দেখতে, মা শা আল্লাহ! তোমার পাশে বেশ মানিয়েছে।

– ধন্যবাদ। এবার বল, আমি কি ডাক্তার ডাকব? বাসায় যেতে যেতে প্রবলেম আরো বেড়ে যাবে না তো তোর? উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, প্রিয়।

– আরে নাহ! কিছুই হবে না । সাজিদ আছে সাথেই। আর ব্যথাটাও ততটা সিরিয়াস না। আজকাল এমন একটু আধটু হয় মাঝেমাঝে ।

– ডাক্তার দেখাস নি? সাইনাস বা মাইগ্রেন কি না! একটু চেক আপ করাস দ্রুত।

– হুম, ভাইয়া। করাব। তুমি এসব নিয়ে ভেব না। আমি ডাক্তার দেখিয়ে নিবো। তুমি ভাবির পাশে যেয়ে বসো। ভাবি একা বসে আছে । তোমাকে মিস করছে হয়ত।

এরমধ্যে হঠাৎ মেহরাব এসে সাজিদকে কিছু একটা বলার জন্য হাত ধরে টানতে টানতে একটু অন্যদিকে নিয়ে গেল।

– প্রিয় খানিকটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, মিস ? আর আমাকে? আমাকে কেউ মিস করে না। আমিই মিস করে জীবন পার করে দিলাম। আমাকে মিস করার মতো মানুষের এই পৃথিবীতে এখনো জন্ম হয়নি।

– মিথিলা প্রিয়র কথা বুঝতে পেরে কথাটা স্বাভাবিক করার জন্য বলল, কী যে বলো ভাইয়া! আমাদের পরীর মতো ভাবি তোমাকে খুব ভালোবাসে। কতবার আমার কাছে তোমার কথা জিজ্ঞেস করল। যাও , তাড়াতাড়ি যাও। আমিও যাই । পরে আবার কথা হবে।

– হাহাহা! আচ্ছা, যা তবে। সাবধানে যাস। নিজের খেয়াল করিস।

প্রিয়র মুখের বিষণ্ণতার মাঝে মিথিলা কী এক বেদনার ছাপ দেখতে পেল। খানিকটা অবাক হলো। সে ভাবছে এমন কথা প্রিয় কেন বলছে? তবে কী সে এই বিয়েতে খুশি না? তার মন চাইল রূম্পা মায়ের সাথে কথা বলবে এ ব্যাপারে! কিন্তু পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত বদলাল।

এসব কথা জিজ্ঞেস করার সে কে? সে কেন প্রিয়র ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে? তারা মেহমান হিসেবে ইনভাইট পেয়েছে । মেহমানের মতই খেয়ে দেয়ে চলে যাবে। এর বেশি অধিকার দেখাতে গেলে সেটা অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে।

রাস্তায় আসতে আসতে মিথিলার শুধু এটাই মনে হচ্ছে, ” ভাইয়ার কি দরকার ছিল এনার কাছে এসব গল্প করার। বিন্দুর কথা বলেছে সেটা ঠিক আছে কিন্তু আমার কথাটা না বললে কি হতো না! তাছাড়া আমাদের মধ্যে এমন কিছুতো হয়নি যে যেটা তাকে বলতে হবে।”

তার ভয় হচ্ছে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কত সময় এনার সাথে দেখা হয়ে যাবে। মেয়েটাকে দেখে যতটা ঠোঁটকাটা মনে হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে যতবারই দেখা হবে ততবারই এ নিয়ে সে কথা তুলবে।
প্রিয় জেনে শুনে এনার কাছে কেন বলেছে ভাবতেই তার খুব রাগ হচ্ছে ।

সাজিদ হয়তো কিছু একটা বুঝতে পেরেছে তাই পুরো রাস্তায় কিছু জিজ্ঞেস করল না তাকে। অন্য সময় হলে জিজ্ঞেস করত কেমন লাগছে? এখন কি আগের থেকে বেটার ফিল করছে কিনা! কিন্তু এ ধরনের কোনো কথাই সে জিজ্ঞেস করছে না। মিথিলা বুঝতে পারল সাজিদ কিছুটা হলেও হয়ত কিছু আঁচ করেছে।

এনাকে প্রিয়র রুমে দিয়ে আমি মাত্র রুমে এসেছি তখনই সেলিম বলে উঠলো, কি ব্যাপার ঘুমানোর প্রস্তুতি চলছে মনে হচ্ছে?

– রাত তো কম হলো না। সারাদিন কম ধকল যায়নি। ঘুমাবো না তো কী করব? হাত-পা ভেঙেচুরে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।

– এখনি শুয়ে পড়বে নাকি? এনা মাত্র এ বাড়িতে আসলো। মেয়েটার কিছু লাগে কিনা!

আমি রাগের সাথে বললাম তাহলে কি বলছ, ছেলে আর ছেলে বউয়ের বাসর ঘরে যেয়ে আমি বসে থাকব?

– সেটা বললাম কখন? কিছু লাগে কিনা এনার, নতুন পরিবেশ।

– সেটা যখন বলোনি তবে কি এনার জন্য ওদের দরজার সামনে পাহারাদারের মত বসে থাকবো কখন তোমার আদরের বউ মা উঠে আবার কোনটা চায়।

-;কোন কথা পুরোপুরি না শুনেই রিয়্যাক্ট করা তোমার স্বভাবে পরিণত হচ্ছে।

– তোমার এসব কথা শুনতে আমার একদম ভালো লাগে না। এনাকে নিয়ে যেসব আদিখ্যেতা করছ সেটা কিন্তু একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।

– এখানে আদিখ্যেতার কি দেখলে?

আমি আর কথা না বাড়িয়ে হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।

আজ সাত মাস হলো এনা এ বাড়ির বউ। এর মাঝে একবার ইতালিতে যেয়েও ঘুরে এসেছে। এনার সাথে প্রিয়র বন্ডিংটা কেমন আমি আজও বুঝলাম না। এনা বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকে। বাংলাদেশে বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব জুটেছে তার। এদের সাথে ক্লাব, পার্টি এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা নিয়ে ব্যস্ত থাকাই তার বড় দায়িত্ব। প্রিয় অফিস থেকে এসে প্রায় দিনই দেখে এনা তখনো ঘরে ফিরেনি।

অফিস থেকে ফিরে এসে স্ত্রী ঘরে না থাকলে স্বামীরা যেভাবে হাঁকডাক দিয়ে খোঁজ করে এমনটা কখনো দেখিনি প্রিয়র মাঝে। মাঝেমাঝে মনে হয় এদের মাঝে খুব মিল। আবার মনে হয় পাড়া প্রতিবেশির মতো আচরণ একজনের সাথে অন্যজনের।

প্রিয় আর এনার সম্পর্কটা আমার আর সেলিমের জীবনেরই যে পুনরাবৃত্তি হতে চলছে সেটা আমি ভালো করেই টের পাচ্ছি। মা হয়ে শুধু দেখেই যাচ্ছি কিছু করতে পারছি না। মাঝেমাঝে মন চায় কিছু বলি কিন্তু আবার অশান্তি হবে ভেবে আর কথা বলি না। এর মাঝে কয়েকবার টুকটাক কথা কাটাকাটিও হয়েছে এনার সাথে আমার। সবকিছুতেই খুব বেশি বেপরোয়া মেয়েটা। তার উপর সেলিমের আদিখ্যেতা তো আছে। মেজাজ আগুন হয়ে যায় এদের ভাবচক্র দেখলে। আমার ছেলেটা একদম অন্য মানুষ যেন এখন। আগের মতো সেই চাঞ্চল্য দেখা যায় না আর। বউয়ের সবকিছুতেই একদম নিরুত্তাপ সে। আমি কিছু বললেও কানে তোলে না নাকি গায়ে লাগায় না সেটাই বুঝি না। এনাকে মনে মনে অনেকবার মাফ করে দিয়ে বুকে টেনে নেবার চেষ্টা করি কিন্তু প্রতিবারই মেয়েটা আমার ভাবনায় ছেদ ফেলে। আপন করার পরিবর্তে দূরেই যাচ্ছে দিনদিন।

আজ প্রচণ্ড ক্ষেপেছি আমি। আজ আর মুখ না খুলে থাকতে পারলাম না। গতরাত থেকে প্রিয় জ্বরে কাতরাচ্ছে কিন্তু এনার কোনো মাথাব্যথা নেই। সে প্রতিদিনের মতো নাস্তা করে তার সারাদিনের প্লান নিয়ে ব্যস্ত। আমি নিজে প্রিয়র পাশে বসে মাথায় পানি দিয়ে পুরো শরীর ভেজা কাপড়ে মুছিয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে মাত্র নিচে এসেছি। এতক্ষণ ছেলেটার পাশে বসেছিলাম । কিছুতেই পাশ থেকে আসতে দিতে চাচ্ছিল না। অসুস্থ হলে আপন মানুষ পাশে বসে থাকলে কতটা প্রশান্তি লাগে সেটা শুধুমাত্র অসুস্থ মানুষই জানে। আমি কিছুক্ষণের জন্য বলে নিচে এলাম। এনা নাস্তার জন্য নিচে এসেছে বহু সময় কিন্তু যাবার আর নাম নেই। ভেবেছিলাম ও গেলেই আমি নামব। কিন্তু এত দেরি করছে তাই নিজেই ওর খোঁজখবর নেবার জন্য আসলাম। এসে দেখি সে খুব আয়েশ করে চা খাচ্ছে। চা খেতে খেতে কারো সাথে কথা বলছে যে কোথাও যাবে সে ব্যাপারে কথা বলতে। আমি এবার মুখ বন্ধ করে থাকতে পারলাম না।

– প্রিয় যে অসুস্থ সেদিকে তোমার কোনো খেয়াল আছে?

– হালকা সিজনাল জ্বর, এ আর এমন কি?

– সিজনাল জ্বর হোক আর যাই হোক সে সুস্থ নয় এটা তো বুঝতে পারছ?

– নির্বিকারভাবে ফোন স্ক্রলিং করতে করতে আস্তে করে বলল, হুম। মেডিসিন দিয়ে এসেছি। দু’ একঘণ্টা যেতে দিন জ্বর পড়ে যাবে।

– মেডিসিন দিয়ে এসেছ বাট খেয়েছে কিনা সেটা দেখেছ? তাছাড়া মেডিসিন দিলেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?

– প্রিয় কোনো বাচ্চা তো নয়! তাকে মুখে তুলে নিশ্চয়ই খাইয়ে দিতে হবে না! আর ওর ফুল বডি স্পঞ্জ করার জন্য আয়নার মাকে বলে এসেছি। সে করতে দেয়নি । সেখানে আমার তো কোনো ফল্ট দেখছি না।

– তুমি ভাবলে কি করে সার্ভেন্টদের সামনে কাপড় খুলে প্রিয় দাঁড়াবে ? আর ওদের হাতে শরীর স্পঞ্জ করতে সে এলাউ করবে? এবার বেশ তিরিক্ষি মেজাজে বললাম আমি।

– সরি, দ্যাটস নট মাই হেডেক! আর আপনার ছেলে একজন মা সমতুল্য মানুষের সামনে কাপড় খুলতে লজ্জা পাওয়ার মতো ছেলে এটা আমার জানা ছিল না। যে অলরেডি কাজিনের সামনে কাপড় খুলতে লজ্জা পায়নি তার আবার এত লজ্জা আসে কোথা থেকে?

– হোয়াট? কান গরম হয়ে গেল এবার আমার। চিৎকার করে উঠলাম আমি।

– জানেন না কিছু মনে হচ্ছে? কাজিনের সাথে তার রঙ্গলীলার গল্প তো এ বাড়ির প্রত্যেকটি সার্ভেন্ট পর্যন্ত জানে। আর আপনি মা হয়ে টের পাননি কিছুই। পাবেনই বা কী করে ? ইয়াং ছেলেমেয়েদের একসাথে রেখে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন ! এই ফাঁকে যে তারা কি দিয়ে কি করেছে সে কথা তো আর জানা থাকার কথা আপনার না। বাই দ্যা ওয়ে, ওটা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। পাস্ট ইজ অলওয়েজ পাস্ট ফর মি! পাস্টকে টেনে এনে প্রেজেন্ট টাইমকে স্পয়েল করার মতো মুর্খ আমি না।

– তুমি কিসের সাথে কি বলছ! কোন পরিবেশে কী কথা বলতে হয় তোমার কি অজানা? কথা হচ্ছে প্রিয়র অসুস্থতার কথা নিয়ে আর তুমি কিসব আবোল তাবোল কথা বলছ? মাথা ঠিক আছে তোমার?

– সরি মা! কথা প্রসঙ্গে কথা চলে এল। মাফ করবেন।

– কথা প্রসঙ্গে কথা এলেও তুমি কী নিয়ে কথা বলছ তোমার সেন্সে থাকা উচিত ছিল। তুমি আমার ছেলে আই মিন তোমার হাজবেন্ড এর ক্যারেক্টার নিয়ে কথা তুলেছ। আর একটা ইনোসেন্ট মেয়েকে নিয়ে এসব বাজে কথা বলার আগে একবার হলেও ভাবা উচিত ছিল তোমার। তোমাকে নিয়ে কেউ এমন কথা বললে তোমার কেমন লাগত?

– আমি এমন কিছু করে থাকলে মানুষ নিশ্চয়ই বলবে। টলারেট করারও তখন সামর্থ্য রাখতে বাধ্য আমি। হাইড করার তো কিছুই নেই। আর আমি সত্যি বলেছি। মিথ্যা বলা আমার ধাঁতে নেই। আমার পেরেন্টস আমাকে এমন শিক্ষা দেয়নি।

– তোমার পেরেন্টস কি শিক্ষা দিয়েছে তার নমুনা তো এই ক’মাসে বেশ দেখিয়েছ। এ নিয়ে আর নতুন করে বলে তোমার মুখ ব্যাথা করবার দরকার কী? যে নিজের হাসবেন্ডের সাথেই একটা স্বাভাবিক রিলেশান রাখতে পারে না সে যে কত বড় গুণী মেয়ে সে তো টেরই পাচ্ছি।

– হা হা! মা, ইফ আ’ম নট রং, আপনি মনে হয় খুব স্বাভাবিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পার করেছেন সারা জীবন? কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে বলল এনা।

এই মেয়ে যে ভালোমতোই গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে এ আর আমার বুঝতে বাদ রইল না। এবং কে তাকে এসব করতে উস্কানি দিচ্ছে বা সাহায্য করছে সেও আমার অজানা নয়। আমার ছোট জা মালিহার কাজ এসব। মালিহার সাথে এনার বেশ খাতির। এনা মালিহার মায়ের আবার কেমন যেন বোন হয়। তাই মালিহাকে আমাদের সবার চাইতে আপন মনে করে এনা। চাচি ডাকার পরিবর্তে বড় গলায় খালামণি বলে ডাকে। মালিহা আমার এ বাড়িতে থাকাটা কোনোভাবেই নিতে পারে না সে আমি জানি। তাই আমার জীবনটাকে দুর্বিষহ করতে যা যা দরকার সবই করছে। মেয়েটা এমনিতেই বেয়ারা তার উপর এসব উল্টাপাল্টা উসকানিতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ওর কথাবার্তা শুনে রাগে আমার শরীর জ্বলছে।

– তুমি দেখছি চরম লেভেলের বেয়াদব। কাকে নিয়ে কী বলতে হয় বা কী বলা যায় সেটুকু শিক্ষাও তোমার পেরেন্টস দিয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। শোনো মেয়ে! এটা তোমার শ্বশুরবাড়ি! সো, বাপের বাড়ি বসে মুখে লাগাম দিয়ে হয়ত কথা বলা শেখায়নি তোমার গার্ডিয়ান কিন্তু দয়া করে এখানে একটু লাগাম টেনে কথা বলার অভ্যাসটা চালু করার চেষ্টা করো। কম তো বড় হওনি। ফিডার ছেড়েছ বহু আগে। তাই এই ফিডার খাওয়া বাচ্চাদের মতো কথাবার্তা না বলে ম্যাচিওর হবার ট্রাই করো। সেটা জীবনটাকে অনেক বেশি সুন্দর করবে।

– হোয়াট রাবিশ!

– মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ। কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছ তোমার বোঝা উচিত। ইডিয়ট! নিজের হাজবেন্ডকে অসুস্থ অবস্থায় ফেলে রেখে যে মেয়ে ট্যুর প্লান নিয়ে ব্যস্ত তার থেকে আর ভালো কী বা আর আশা করা যায়! ডিসগাস্টিং! কোন কপালের ফেরে যে এই মেয়ের সাথে আমার ছেলেটার দেখা? ভদ্রতার বালাই পর্যন্ত নেই।

– কী বোঝাতে চাচ্ছেন ? আমি ফেলনা কেউ?

– ফেলনা আর দামির কথা আমি বলছি না। শিষ্টাচার শিখতে খুব বেশি পয়সা খরচ হয় কি? শাশুড়ির সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তোমার মনে হয় জানার বাইরে।

কথায় কথায় আরো নানা কথা আসতে লাগল। আমি প্রিয়র কাছে যাবার জন্য সেখান থেকে নাশতা না করেই উঠে যাচ্ছিলাম তখন ফোঁসফোঁস করতে করতে এনা আমার পথ আগলে দাঁড়ায় । মেজাজটা চরমে উঠে গেল তখন আমার। ্মন চাইল একটা কষিয়ে থাপ্পড় মারি।

আমার শাশুড়ি আমাদের চেঁচামেচি শুনে রুমের বাইরে এল। উনি বয়সের ভারে এখন আর আগের মতো চলাফেরা করতে পারেন না। খুব বেশি দরকার না হলে রুম থেকে বের হন না। খাওয়া দাওয়াও রুমেই করেন। কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই বের হয়েছেন। আমি উনাকে দেখেও না দেখার ভাণ করলাম। নয়ত বলবে , “ছোট্ট মেয়ে! ছেড়ে দাও না। না বুঝে করেছে।“

এনা এবার খুব ক্ষেপে যেয়ে বলল, আপনিও যে কতবড় সাধু সেও আমার অজানা নয়। শাশুড়ির সাথে সম্পর্ক বোধ হয় আপনারও খুব সুখকর কিছু ছিল না। য়ামার মনে হয় নিজের পাস্ট ভুলে গিয়েছেন। আপনার ব্যবহার যদি এতই ভালো ছিল তবে দাদীর থেকে এত দূরে কেন থাকতেন?

– তুমি লিমিট ক্রস করে যাচ্ছ। একটার পর একটা আজেবাজে কথা বলেই যাচ্ছ। তোমার সাথে কথা বলতেই রুচি নেই। থাকো তোমার আড্ডা আলোচনা নিয়ে। যা খুশি করো। আমার ছেলেকে দেখার জন্য আমি এখনো বেঁচে আছি। বলে হনহন করে প্রিয়র রুমে ফিরে গেলাম। রাগে থরথর করে গা কাঁপছে !

চলবে…

কিছু ব্যক্তিগত ইস্যুর কারণে এবার লম্বা বিরতির পর এলাম। সবাই খুবই বিরক্ত হয়েছেন আমি জানি। আমি হলেও হতাম ।
কিন্তু আমি ভীষণ অপারগ ছিলাম । আমারও খুব খারাপ লাগছিল এতদিন গল্প পোস্ট করতে না পারার জন্য।
আশা করছি সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে নিবেন। শুভরাত্রি।

পর্ব- ৩৭

https://www.facebook.com/111576077291737/posts/380473777068631/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here