সুখের_সন্ধানে পর্ব_৪১

0
415

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৪২
দেখতে দেখতে ছয় বছর কেটে গেল। সেলিমের খুব বেশি কোনো ইম্প্রুভ হয়নি। এখন দেশের বাইরে চিকিৎসা চলছে। ডান হাতটা এখন কিছুটা নাড়াতে পারে। কিন্তু পায়ে আজ অবধি কোনো সেন্স আসেনি তার। হুইল চেয়ারই তার এখন নিত্য সঙ্গী । সেই বাঘের মত মানুষটা শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। আমি শুধু সেলিমের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ভাবি, হায়রে মানুষের জীবন? কোথায় সেই অহংকার , কোথায় সেই মিথ্যা আভিজাত্য আর গৌরবের ঠাটবাট? মানুষটাকে দেখলে খুব কষ্ট হয় আমার। ব্যবসা বাণিজ্য কোনোকিছুর দিকেই আর তার কোনো খেয়াল নেই। নিজেকে সামলাতেই যে হিমশিম খায় সে কি করে এতবড় ব্যবসা বাণিজ্য সামলাবে? আমি শুরুর দিকে কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পরে বুঝতে পারি আমারও বয়স হয়েছে। তাছাড়া মানসিকভাবে আমি সম্পূর্ন বিধ্বস্ত। যার স্বামী প্যারালাইসড হয়ে পড়ে আছে , একমাত্র ছেলেটা দেশছাড়া তার কি স্বাভাবিক থাকার মতো অবস্থায় থাকা সম্ভব?

এখন সবকিছু আমার দেবর সজলের হাতে। যা করে করুক । আমার আর ও নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। কী হবে এত এত সম্পত্তি দিয়ে? খাওয়ার মানুষই তো নেই। ছেলেটাকে কতবার অনুরোধ করলাম দেশে আসবার জন্য কিন্তু কোনো রেস্পন্স নেই তার। সেলিম কোনো কথা বলে না প্রিয়র বিষয়ে। বাপ ছেলের সাথে কোনো কথা হয়নি এখনো পর্যন্ত। প্রিয় কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও সেলিম মুখ ঘুরিয়ে রাখে। ছেলের যেমন বাবার উপর অভিমান জমে পাহাড়সম হয়েছে ঠিক একই রকম হয়েছে বাবারও। এদের মান অভিমানের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে মরছি আমি।

মিথিলা একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চাকরি করছে। বেতন বেশ ভালোই। মিথিলা ওর বাবার কাছে সম্পত্তির কিছু অংশ পেয়েছে। কিন্তু সে তা আনেনি। তার বাবা যতদিন বেঁচে আছে সে কিছুই চায় না। অবশ্য ওর দরকারও নেই ওই সম্পত্তির। আমার বাবার বাড়িটাকে আমরা ডেভেলপারকে দিয়েছিলাম। সেখানে মিথিলাও দুইটা ফ্লাট পেয়েছে। একটাতে মিথিলা থাকে বাকিটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
মেহরাব বিয়ে করেছে। বউ নিয়ে অফিসের কাছাকাছি সরকারি কোয়ার্টারে থাকে। মাঝেমাঝে আসলে মিথিলার ফ্লাটেই ওঠে। ওর ফ্লাটও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মিথিলাকে কত চেষ্টা করেছি আরেকবার বিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু সে কিছুতেই রাজী হচ্ছে না। তার একটাই কথা , বিয়ে মানুষের একবারই হয়। তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এ জীবনে সে আর বিয়ে করতে পারবে না। যেভাবে চলছে চলুক!

কত ভালো ভালো জায়গা থেকে সম্মন্ধ আসছে কিন্তু মেয়েটার মাথায় কী ভূত চেপেছে কে জানে! সে কিছুতেই আর দ্বিতীয়বারের জন্য বিয়ে করতে রাজী নয়। মেহরাবের সাথে কথা হলেই সেও শুধু একটা কথাই বলে , মিথিলাকে বিয়ের জন্য রাজী করানো যাবে কীভাবে? আমিও শুধু ভাবি , যে করে হোক মিথিলার একটা কূল হলেই শান্তি। আর কত একা জীবন কাটাবে সে?

আজ সকাল থেকে সেলিমের খুব মন খারাপ। আমি বারবার জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর দিচ্ছে না। পরে যখন রাগ করে বললাম , ঠিক আছে , আমাকে বলার দরকার নেই। যা খুশি করো । আমাকে কোনো কথা বলার উপযুক্তই বা কবে ভেবেছ?

আমাকে রাগ করতে দেখে সেলিম বলল, বসো তবে বলছি। বলিনি কারণ তোমার মন খারাপ হবে তাই।

– কি হয়েছে তাই বলো! আমার মন ভালো আর খারাপের হিসেব করে লাভ কি! মনই আছে কি নাই সেটাই তো এখন আর বুঝতে পারি না।

– সেলিম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, সজল যা শুরু করেছে তাতে তো একে একে সবই দখল করে নিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। আজও ম্যানেজার সাহেব ফোন দিয়েছিল। কিন্তু আমি কী বলব তাকে, বলো। আমার তো কিছু করার ক্ষমতাই নেই।

– তাতে কি হয়েছে? যা করে করুক।আমাদের দরকারই বা কী এত সহায় সম্পত্তির হিসাব নিকাশ রেখে ? এজন্যই তো আমিও আর যাই না অফিসে । এই বয়সে এতসব ঝামেলা নেবার কী দরকার!

– এসব কী বলছ ? আমাদের একটা ছেলে আছে। ওর কী কিছুই দরকার নেই?

– সে কি ফিরবে মনে হয়! কতবার বললাম , তুমি একটু ওর সাথে কথা বলো। তাতো বলো না। আবার ছেলের ফেরার আশা করো। এত জিদ করে কী লাভ বলো!

– তার কী একবারও মনে হয় না আমাদের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব আছে। শ্বশুরের অঢেল পেয়েছে তাই তার জন্য ঢের। আমাদের কথা মনে করার ফুরসৎ তার না থাকলেও আমি তো তার হক নষ্ট করতে পারি না। দেখি আর কিছুদিন অপেক্ষা করে। কখন দু’চোখ বন্ধ হয়ে যায় তার আগেই একটা কুল করতে হবে।

– অপেক্ষার প্রহর যদি শেষ না হয়? কি করবে তবে?

– সেটাও ভেবেছি । উইল করে রেখে যাব। সে যদি ফিরে তো সে পাবে না হলে কোনো ট্রাস্টে দান করে যাব।

– আমি কিছুটা ইততস্ত করে ধীরে ধীরে বললাম, ট্রাস্টে কেন দিয়ে যাবে? তোমার আর কোনো ওয়ারিশও তো থাকতে পারে।

– এসব কী বলছ? আমার আর কে ওয়ারিশ হতে পারে?

– জীবনের এই প্রান্তে এসে তোমার কাছে লুকাবার আর কী দরকার বলো। তাই ভাবছি সত্যিটা যেমন তোমার সামনে আসা দরকার ঠিক তেমনি আমার সামনেও আসা দরকার।

– কোন সত্যির কথা বলছ তুমি?

– কিছুটা থেমে বললাম, তোমার আর হেলেনের সন্তান আসিফের কথা বলছি। সে তোমার সন্তান । তোমার কাছে তার পাওনা আছে । তাকে কেন ঠকাবে? ট্রাস্টে দান করার আগে তার কথাটা মাথায় রেখো। তুমি হয়ত ছেলেটাকে দেখনি কিন্তু আমি দেখেছি। দেখতে একদম তোমার আর প্রিয়র মতই লাগে।

– সেলিম চোর ধরা পড়ার মতো করে আস্তে বলল, তুমি কি করে জানো?

– আমি জানি অনেক আগে থেকেই। সেই যে সিলেটে গেলাম মাহাতাব নামের এক ভদ্রলোকের শাস্তি দিতে মনে পড়ে। সেই থেকেই জানি। আমি মাহাতাবের খোঁজখবর নিতে গিয়েই জেনেছি যে সে হেলেনের হাজবেন্ড। ওর সাথেও দেখা হয়েছিল । হেলেনই সব কথা বলেছে আমাকে।

– কত বড় বাটপার! এতদিন ধরে আমাকে বলেছে তোমাকে সব বলে দিবে। এটা বলে বলে ব্লাকমেইল করেছে আর এখন তুমি বলছ তুমি সব জানো। এতদিন তবে আমাকে বলোনি কেন?

– হেলেন দুজনের সাথেই বিট্রে করেছে। সে আমাকে বলেছে আমি যেন তোমার কাছে আসিফের কথা কিছু না জানাই। তার ছেলেকে তুমি যদি নিয়ে আসো সেই ভয়ে সে গোপন করতে বলেছে। চিন্তা করো কত বড় ধাপ্পাবাজ! আমাকে বলেছে তুমি নাকি কখনো ছেলেটাকে দেখোই নি।

– এটা অবশ্য মিথ্যা বলেনি। আমি ওর ছেলেকে আজও দেখিনি। দেখতে চাইও না। শুধুশুধু মায়ার বন্ধনে জড়ানোর কোনো মানে নেই। ছেলেটা মাহাতাবের পরিচয়ে বড় হয়েছে। সত্যটাকে প্রকাশ করে কী দরকার ওর কচি মনে আঘাত দেবার? ও যাকে বাবা বলে জেনে এসেছে তাকেই বাবা বলে জানুক। তাছাড়া মাহাতাবও নিজের ছেলের মতোই ওকে দেখে।

– কিন্তু তাই বলে ওর প্রতি তোমার কোনো দায়িত্ব নেই?

– আছে। আছে বলেই প্রতি মাসের এক তারিখে হেলেনের একাউন্টে এক লক্ষ টাকা ক্যাশ চলে যায়। আসিফের পঁচিশ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত ওর খরচ বাবদ এভাবেই যাবে। তাছাড়া সিলেট শহরে স্থায়ী সম্পদ করে দিয়েছি। তাতে ওর সারাজীবন বেশ ভালোভাবেই চলে যাবে আশা করছি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এর বেশি কিছু করতে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। যৌবনে যে ভুল করেছি সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে যেয়ে আমার মৃত্যুর পরে মানুষের কাছে আসিফের সাথে আমার সম্পর্কের কোনো প্রশ্নচিহ্ন রেখে যেতে চাই না।

– বুঝেছি। একটা অনুরোধ রাখবে?

– বলো!

– প্রিয়কে তুমি একবার ডেকেই দেখো! তোমার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারবে না।

– জীবনে যত পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত এখনো শেষ হয়নি। শেষ হতে দাও। ভাগ্যে থাকলে হয়ত মরার আগে ছেলের সাথে দেখা হতেও পারে। আমি অপেক্ষায় আছি যে আমার ছেলে আর কতবছর তার বাবার কাছে না এসে পারে! অভিমানি সুরে কথাগুলি বলতে বলতে হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে সেখান থেকে সামনের দিকে চলে গেল সেলিম।

আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ভাবছি , হায়রে অভিমান! লোকটা ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না। যেমন বাপ ঠিক তেমনি ছেলে।

রাতে ঘুমাতে যাবার আগে প্রতিদিনের মতোই একটু নেটে ঢুকলাম । সেলিম ঘুমিয়ে গেছে বেশ আগেই। নিঃসঙ্গ জীবনে করারই বা আছে কি! একটু মোবাইল ঘাটাঘাটি করি ঘুমাবার আগে।

মেইল বক্সে একটা মেইল দেখে একটু চমকে উঠলাম। বহুবছর পরে পরিচিত একজনের মেইল। কত বছর ধরে সিদ্ধার্থের সাথে আমার যোগাযোগ নেই। ভুলেই গিয়েছিলাম আমার বন্ধুটিকে। যোগাযোগের অভাবে কাছের মানুষও কত দূরে চলে যায় ।

মেইলে জানিয়েছে সিদ্ধার্থ কথা বলতে চায় আমার সাথে । ওর হোয়াটস অ্যাপ নাম্বার দিয়েছে। আমার সাথে এত বছর পরে কী কথা বলতে চায় ভেবে আমি অবাক হলাম। আমি সাথে সাথেই ওকে নক করলাম।
নক করতেই সিদ্ধার্থকে পেয়ে গেলাম।

– হ্যা… হ্যালো! সিদ্ধার্থ বলছ কি?

– হুম , সিদ্ধার্থই বলছি! গলার স্বর কিন্তু একদমই বদলায়নি তোমার! কেমন আছো?

– ভালো আছি। এতদিনে মনে পড়ল তবে!

– তুমিও তো মনে করতে পারতে!

– আসলে আমরা এতটা ব্যস্ত আর যান্ত্রিক হয়ে গেছি যে বন্ধু পরিজনের খোঁজখবর নেবার মতো সময় হারিয়ে ফেলেছি। এবার বলো তোমার বউ বাচ্চারা কেমন আছে?

– ভালো আছে সবাই। সেলিম সাহেবের কী অবস্থা? ভালো আছে ?

– একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম , হুম ভালোই আছে।

– কি হয়েছে ? এত বড় দীর্ঘশ্বাস?

– নাহ , এমনিতেই।

– কোথায় উনি ? এখনো অফিসে ? বউকে সময় টময় কিছু দেয় নাকি আগের মতোই ব্যবসায় নিয়েই পড়ে থাকে?

– কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম , তুমি বোধ হয় জান না। আর জানবেই বা কী করে? এত বছর ধরে তো আমাদের কন্ট্যাক্টই ছিল না।

– কী হয়েছে? কোনো খারাপ সংবাদ তো না?

– সেরকমই! সেলিম এই ছয় বছর ধরে বিছানায়। একটা স্ট্রোক করে প্যারালাইসড হয়ে আছে।

– কী বলছ? সো স্যাড! ভেরি সরি , রূম্পা! এত বছর তোমার এমন দুঃসময়ে খোঁজখবর নিতে পারিনি। কথাবার্তা তো বলতে পারে?

– হুম তা পারে। তবে সেই আগের সেলিম আর নেই। একদম চুপচাপ।

– বুঝতে পারছি। তোমার উপর কী চলছে বুঝতে পারছি। আচ্ছা, তোমাদের ছেলে প্রিয় কোথায়? ও কি এখন ব্যবসায় বাণিজ্যের হাল ধরেছে নাকি? বিয়ে শাদী করেছে?

– আমি আবারও খানিকটা থেমে বললাম, নাহ! সেই ভাগ্য আমাদের নেই। তবে ছেলে বিয়ে করেছে। একটা ফুটফুটে ছেলেও আছে প্রিয়র। কিন্তু আমাদের সাথে তারা থাকে না।

– মানে? তবে কোথায় তোমাদের ছেলে?

– ইতালিতে থাকে।

– সিদ্ধার্থ কিছুটা সময় নিয়ে বলল, কোন শহরে থাকে ও ?

– মিলানে!

– কী করে সেখানে?

আমি শুরু থেকে সবকিছু খুলে বললাম সিদ্ধার্থের কাছে। কিছুই গোপণ করলাম না। এতদিন পর মনে হলো কারো সাথে মনের কষ্টের কথা শেয়ার করতে পেরে একটু স্বস্তি মিলল। সিদ্ধার্থের কাছে কোনোকিছু গোপন করবার মতো সম্পর্ক তো আমার না।
সিদ্ধার্থ খুব মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনল। আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে সিদ্ধার্থ আবার যোগাযোগ করবে বলে কল কেটে দিলো।

আজ মিথিলার ছুটির দিন। প্রতি ছুটির দিনেই সে চেষ্টা করে আমাদের এখানে আসার। গত সপ্তাহে ওর বাবাকে দেখতে গিয়েছিল বলে আসতে পারেনি। এসেই রান্নাঘরে ঢুকেছে আজ। সেলিম ওর হাতের ক্ষীর খুব পছন্দ করে। আজ আসতেই সেলিম মিথিলার কাছে বাচ্চাদের মতো আবদার করে বসল ক্ষীর খাবার। মিথিলাও আর দেরি করল না।

ঘন্টাখানেক বাদেই মিথিলা বাটি ভর্তি করে ক্ষীর নিয়ে হাজির। সেলিমের বাটি রেখে আরেকবাটি নিয়ে রওয়ানা হলো আমার শাশুড়ির রুমে।

– দাদী, আসতে পারি? ঘুমিয়ে গেছেন নাকি?

– কে মিথিলা নাকি? আসছিস কখন? মনে মনে তোকে মিস করছিলাম খুব। কেমন আছিস রে, দাদু?

– এই তো ! আল্লাহ যেমন রাখে। আপনার শরীরের কী অবস্থা?

– আর থাকা! এই বয়সে যা আছি তাইই আলহামদুলিল্লাহ! কখন চলে যাই সেই অপেক্ষায়। আমার সাথের কেউই তো নেই আর। আমিই যে কী করতে এখনো আছি বুঝি না। সারাদিন এই একটা খাটের উপর কতক্ষণ আর মন টিকে?

– এসব বলছেন কেন? আরো অনেক বছর আমাদের মাঝে থাকেন সেই দোয়া করি আল্লাহর কাছে। ফুপি আসবে শুনলাম!

– আর ওদের কথা বলিস না। আসব আসব করে তো এই একবছর কাটিয়ে দিলো। আসলে আসলো না আসলে না আসুক। এখন আর কারো জন্য মায়া কাজ করে না। নিজের জীবনই চলে না। শুধু মরার আগে একটাই আশা আল্লাহর কাছে । একবারের জন্য হলেও আমার নাতীর মুখটা যেন দেখে মরতে পারি। বলতে বলতে কেঁদে উঠল, প্রিয়র দাদী।

– আহা, দাদী ! আপনার এই এক সমস্যা ! ছলে ছুতায় নাতীর কথা মনে করে চোখের পানি ঝড়ান। যে আপনাদের ভুলে গেছে, আপনাদের জন্য যার মন কাঁদে না তার জন্য আর কত কাঁদবেন ? এসব বাদ দিন তো! দেখেন , আমি আপনার জন্য কী মজা করে ক্ষীর রান্না করেছি।

– আমি তো খেতে পারব নারে, দাদু। ডায়াবেটিকস যে বাড়া বেড়েছে।

– কোনো সমস্যা নেই। আমি হালকা একটু চিনি দিয়ে করেছি। সমস্যা হবে না। আংকেলের জন্য করেছি। সেখান থেকে চিনি দেবার আগে আপনার জন্য খানিকটা তুলে রেখেছি । অল্প একটু খান । সমস্যা হবে না। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

– প্রিয়র দাদী ছলছল চোখে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল, কত খেয়াল তোর? অথচ আমরা এই হীরার টুকরাকে চিনতে পারিনি। সেদিন যদি তোকে ওভাবে না বলতাম তাহলে হয়ত এই বাড়িটার এমন হালত হতো না। হাসিখুশিতে ভরে থাকত এ বাড়ির আঙ্গিনা । সেলিমও খুব আফসোস করে নিজের সিদ্ধান্তের জন্য। তোর কথা প্রায়ই বলে । তুই কিছুদিন না এলেই রুম্পাকে জিজ্ঞেস করে। আমার কাছে অনেক কথাই বলে। কিন্তু রুম্পার সামনে ধরা দেয় না। ছেলেটা এত চাপা স্বভাবের! তোর এই কষ্টের জীবনটার জন্যও নিজেকে বড় অপরাধী মনে করে সেলিম।

– আহ, দাদী! এসব বললে কিন্তু আমি আর আসব না এখানে। আমি কতবার বলেছি এসব মানুষের ভাগ্যের হাতে। ভাগ্য বদলানোর দুঃসাহস আমাদের কারো নেই। আমার ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। এখানে আপনার বা আংকেল কারোরই হাত নেই। অযথা নিজেদের ব্লেম দেওয়া বন্ধ করবেন কবে বলেন তো।

– এখন ভাগ্যের দোহাই দেওয়া ছাড়া আর আছেই বা কী বল!

– আমার শুধু ভেবে অবাক লাগে , ভাইয়াই বা কেমন মানুষ! ওর বউ ওকে নিশ্চয়ই শেকল দিয়ে আটকে রাখেনি। একবারের জন্যও কি দেশে আসতে পারে না? আংকেলের এই অবস্থা জেনেও একবারের জন্য কোনো মায়া হলো না। হায়রে পাষাণ! বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরতে ঘুরতে মায়ের আঁচলের গন্ধ এভাবে ভুলে গেলি! এত অভিমান কিসের?

চলবে…

পর্ব-৪১

https://www.facebook.com/111576077291737/posts/393208445795164/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here