সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ২৪

0
944

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ২৪

তাজা গোলাপ দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে বিছানার এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে আছে মুনা। পনেরো মিনিট আগে আফসারের ভাবি তাকে এ ঘরে রেখে চলে গেছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত এগারোটা তেতাল্লিশ বাজে। আফসারের সাথে এখনও তার একটা কথাও হয়নি। মুনার বুক ধুকপুক করছে। ভয়, লজ্জা দুটোর সংমিশ্রণে তার গলা শুকিয়ে গেছে। অথচ এখন পানি ঢেলে খেতেও ইচ্ছে করছে না। দরজার ছিটকিনি আটকানোর শব্দ কানে যেতেই মুনা চমকে উঠল। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল আফসার দরজা আটকাচ্ছে। আফসারকে দেখেই মুনার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল। আফসার হাতঘড়িটা খুলতে খুলতে মুনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,“একা-একা ভয় পাচ্ছিলে না কি?”

মুনা মনে-মনে ভাবল,“এই মুহূর্তে আপনার থেকে বড়ো ভয় আর কী হতে পারে?”

আফসারের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও শব্দগুলো মুনার গলায় আটকে গেল। সে বিচলিত ভঙ্গিতে এদিক-ওদিক দৃষ্টি বিচরণ করতে লাগল। আফসার তীক্ষ্ণ চোখে মুনাকে নিরীক্ষণ করে হেসে বলল,“এনি হাউ, তুমি কি ভয় পাচ্ছ?”

মুনা আফসারের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিল। আফসার ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মুনার সামনে মুখোমুখি বসে পড়ল। মুনা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতে নিতেই আফসার তার দুহাত নিজের মুঠোয় চেপে ধরল। মুনার কাঁপা-কাঁপি এতে আরও বেড়ে গেল। আফসার মুনার মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,“কাঁপছো কেন? প্লিজ শান্ত হও। মুন, আমি অন্যসব সো কলড হাসবেন্ডদের মতো বিয়ের প্রথম রাতেই তোমার থেকে নিজের অধিকার চাইব না। বিশ্বাস করো আমাকে। আমি জানি আমার সাথে মানিয়ে নিতে তোমার একটু সময় লাগবে। তুমি সময় নাও, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি শুধু বলব তুমি নিজ থেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো। তাতে আমিও তোমাকে হেল্প করব। তাহলে দেখবে খুব তাড়াতাড়িই তুমি মানিয়ে নিতে পারবে।”

মুনা কিছু বলল না। কিন্তু কথাটা শুনে সে একটু শান্ত হলো। লোকটার প্রতি তার বিশ্বাস আছে। আফসার আবার বলল,“আজ আম্মা কত খুশি দেখেছ? আমি আমার আম্মাকে সবসময় এমন হাসিখুশি দেখতে চাই। তোমার প্রতি আমার ভরসা আছে মুন। আমি জানি তুমি পারবে। কী? পারবে না?”

মুনা আফসারের দিকে না তাকিয়েই মাথা দোলালো। আফসার কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মুনার দিকে। তারপর মুচকি হেসে হঠাৎ মুনার কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেলো। মুনার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেল। সে হা করে আফসারের মুখের দিকে তাকাল। আফসার মুনার মুখের অবস্থা দেখে গলা ঝাড়া দিয়ে বলল,“অবাক হওয়ার মতো কিছু করিনি। স্ত্রীর কপালে চুমু খাওয়া সুন্নত।”

মুনা লজ্জায় মাথা নিচু করে কিছুটা সরে বসল। আফসার ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করল,“বই এনেছ?”

মুনা অবাক হয়ে বলল,“বই!”

“হ্যাঁ। বিয়ের জন্য তো আর পড়াশোনা থামিয়ে রাখলে চলবে না।”

“বিয়ের সময় পড়ে কে?”

“কেউ না পড়লেও তুমি পড়বে।”

মুনার মুখটা চুপসে গেল। তাহলে কি বন্ধুদের কথাই সত্যি হয়ে গেল না কি? আফসার হঠাৎ ফিক করে হেসে উঠল। মুনা ভ্রুকুটি করে তাকাল আফসারের দিকে। আফসার হাসতে-হাসতে বলল,“দেখলে? এতক্ষণ তুমি একটা কথাও বলছিলে না। অথচ পড়ার কথা বলতেই মুখ দিয়ে আপনা-আপনি কথা বেরিয়ে গেল। এখন তো মনে হচ্ছে আসলেই তুমি ফাঁকিবাজ।”

মুনার রাগ উঠে গেল। এমনি-এমনি কি আর এই স্যারকে পাজি বলে সে? মুনা ছোটো একটা হাই তুলল। আফসার বুঝতে পারল মুনার ঘুম পাচ্ছে। গতরাত থেকে মুনা শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি, তার ওপর আবার আজ সারাদিন বিয়ের ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। ক্লান্তিতে মুনা এখন ঘুমে ঢুলছে। আফসার প্রশ্ন করল,“ঘুম আসছে?”

মুনা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওপর-নিচে মাথা দোলালো। আফসার হতাশ কন্ঠে বলল,“দুনিয়ার সব ছেলে বাসর ঘরে বউয়ের সাথে কতশত গল্প করে, কত মিষ্টি মোমেন্ট তৈরি করে। আর আমার বউ কি না ঘুমে ঢুলছে! হায় কপাল!”

মুনার কানে কথাটা পৌঁছলেও সে কোনো উত্তর দিলো না। এই দিনটা নিয়ে এতদিন সে কত স্বপ্ন দেখেছে। অথচ আজ সেসব স্বপ্ন ভয়, অস্বস্তি আর লজ্জায় চাপা পড়ে গেছে। বরটা আফসার বলেই হয়তো এরকম হচ্ছে। মুনা আবার হাই তুলতেই আফসার বলল,“শুয়ে পড়ো।”

মুনা বিনা বাক্যে পাশের বালিশে শুয়ে পড়ল। তার এখন ঘুমের প্রয়োজন। অন্যকোনো দিকে ফোকাস করার সময় নেই। আফসার উঠে গিয়ে লাইটটা অফ করে দিলো। তারপর ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে সে বিছানায় উঠে বসল। মুনার পাশের বালিশে শুতেই মুনা টের পেয়ে এক লাফে উঠে বসল। চোখ বড়ো করে আফসারের মুখের দিকে তাকাতেই আফসার বলল,“কী হলো? আমরা লিগ্যালি হাসবেন্ড-ওয়াইফ। এখন থেকে একসাথেই ঘুমাব। তোমার কি ধারণা আমি মুভির হিরোদের মতো সোফায় ঘুমাব? স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করো মুন।”

আফসার টর্চ অফ করে ফোনটা শিয়রের পাশে রেখে দিলো। তারপর সে ওপাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে বলল,“ঘুমাও।”

মুনা গোমড়া মুখে অন্যদিকে ফিরে বসে রইল। রুমটা এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে। অপরিচিত জায়গা বলে কেমন যেন ভয়-ভয় লাগছে। মুনা একটা শুকনো ঢোক গিলে নড়েচড়ে বসল। আফসার তার লিগ্যালি হাসবেন্ড জেনেও কেন জানি প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছে। লোকটার পাশে শুতে দ্বিধা হচ্ছে। তার থেকে বড়ো কথা লোকটাকে আজ কেন জানি ভয় লাগছে। শুতেও পারছে না, আবার এই অন্ধকারে বসে থাকতেও পারছে না। মুনার খুব কান্না পেয়ে গেল। মুহুর্তে তার চোখের পাতা ভিজেও গেল। বিয়ের পর সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে এসে একটা মেয়েকে কতটা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়, সেটা মুনা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে। অথচ তার গুণধর বরকে দেখো। ওপাশ ফিরে শান্তিতে শুয়ে আছে। মুনা হেঁচকি তুলে চোখ মুছতে নিতেই হঠাৎ একটা শক্ত হাত এসে তার বাঁ হাতের বাহু ধরে হেঁচকা টান দিলো। মুনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুমড়ি খেয়ে পড়ল কারো প্রশস্ত বুকে। সে তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল! কী হয়ে গেল তা তার বোধগম্য হলো না। ভয় পেয়ে নড়েচড়ে উঠে বসতে নিতেই দুটো হাত তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। মুনা ভয়ে কেঁপে উঠল। শুকনো একটা ঢোক গিলে সে মাথা উঁচু করতেই আফসার গম্ভীর গলায় বলল,“একদম নড়বে না। কাঁদছো কেন? কান্না বন্ধ করে লক্ষ্মী মেয়ের মতো চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।”

মুনা চমকে উঠল। এতক্ষণে তার হুঁশ হলো যে আফসার তাকে দুহাত দিয়ে শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে রেখেছে। নিমেষে মুনার চোখ দুটো রসগোল্লার আকার
ধারণ করল। সাথে হৃদস্পন্দনও বেড়ে গেল। লোকটা হঠাৎ এমন কেন করছে? কান্না থামাতে বললেই হত, এভাবে জাপ্টে ধরার কী আছে! মুনার অস্বস্তি কয়েকগুণ বেড়ে গেল। সে আফসারের থেকে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করতেই আবার আফসার শান্ত স্বরে বলল,“মুন, আমি তো বললাম তুমি নিজ থেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো। আমি শুধু তোমাকে হেল্প করতে চাইছি। তাহলে এমন কেন করছো? নিজেও ঘুমাও, আর আমাকেও ঘুমাতে দাও। বিয়ের ঝামেলায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। তুমিও তো ক্লান্ত।”

মুনা এবার একটু সাহস জুগিয়ে কাঁপা-কাঁপা গলায় আস্তে করে বলল,“আমাকে ছাড়ুন, প্লিজ।”

আফসার আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,“উঁহু, আজ থেকে এখানেই তোমার জায়গা। আর কোনো কথা শুনতে চাই না। গুড নাইট।”

আফসারের কথাটা শুনে মুনা একদম চুপ হয়ে গেল। প্রত্যেকটা মেয়েই তো চায় তার জায়গা স্বামীর বুকে হোক। সেখানে আফসার নিজের মুখে কথাটা বলেছে। এই মুহূর্তে তো মুনার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু তার অস্বস্তি খুশিকে হার মানিয়েছে। মুনা আবার নড়েচড়ে উঠার চেষ্টা করল। কিন্তু আফসারের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হলো না। কিছুক্ষণ পর বুঝল আফসার ঘুমিয়ে পড়েছে। তারও প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু এভাবে সে কিছুতেই ঘুমাতে পারবে না। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে-করতে অনেকটা সময় পার করার পর মুনা ব্যর্থ হয়ে ঠিক করল, আর চেষ্টা করবে না। বৃথা চেষ্টা করার চেয়ে ঘুমিয়ে পড়াই ভালো। কথা হচ্ছে কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে সে এই লোকটাকে মুখ দেখাবে কীভাবে? লজ্জায় তো তার মাথা কাটা যাবে এর সামনে। কিন্তু কী আর করার? মুনা হতাশ ভঙ্গিতে চুপচাপ আফসারের বুকে মাথা রেখেই চোখ বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করতেই তার দুচোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভর করল।


সকালে ঘুম থেকে উঠেই ইলোরার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। উঠে বসে দেখল ডালিয়া পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সকাল নয়টা বাজে। ইলোরা দুহাতে মাথাটা হালকা চেপে ধরে ডালিয়াকে বলল,“কী রে? ভার্সিটিতে যাবি না?”

ডালিয়া ইলোরার দিকে তাকিয়ে বলল,“যাব। তুই তো পড়ে-পড়ে ঘুমাচ্ছিলি। মাথা চেপে ধরে রেখেছিস কেন?”

“ব্যথা করছে।”

“বেশি ব্যথা করছে? অয়েন্টমেন্ট দিব?”

ইলোরা মাথাটা হালকা ঝাড়া দিয়ে বলল,“ফ্রেশ হয়ে এসে লাগাব।”

ইলোরা বিছানা থেকে নেমে বাঁ হাতে কপাল চেপে ধরেই ওয়াশরুমে ঢুকল। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল ডালিয়া অয়েন্টমেন্ট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ইলোরা বিছানায় বসতেই ডালিয়া অয়েন্টমেন্ট থেকে কিছুটা নিয়ে ইলোরার কপালে ঘষে দিতে-দিতে বলল,“এই মাথা ব্যথা নিয়ে ভার্সিটিতে যাবি?”

ইলোরা উত্তর দিলো,“দেখি কমে কি না। নাস্তা করেছিস?”

“না। তুই করবি না?”

“তুই গিয়ে করে নে। আমার ভালো লাগছে না।”

ইলোরা আবার বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করল। ডালিয়া অয়েন্টমেন্টটা জায়গামতো রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। চোখ বন্ধ রেখে কখন যে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে ইলোরা টেরই পায়নি। যখন চোখ খুলল তখন দেখল বেলা এগারোটা বাজে। ইলোরা ধড়ফড়িয়ে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে মালিহা বেগমকে বলল,“আম্মু, ডালিয়া কই?”

মালিহা বেগম বললেন,“ও সাকিবের সাথে ভার্সিটিতে চলে গেছে। তোর মাথা ব্যথা কমেছে?”

“না, এখনও আছে কিছুটা। আমাকে ডাকল না কেন ওরা?”

“সাকিবই নিষেধ করেছে। মাথা ব্যথা নিয়ে যাওয়ার কী দরকার? এখনও তো না খেয়ে আছিস তুই। আয় খেতে বস তাড়াতাড়ি।”

ইলোরা ঠোঁট উল্টে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। খেতে ইচ্ছে করছে না এখন। তবু মায়ের বকাবকিতে কিছুটা খেয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর ঘুম ভাঙল ডালিয়ার ডাকে। চোখ খুলতেই ডালিয়া বলল,“সারাদিন ধরে ঘুমিয়েছিস, এখন ওঠ।”

ইলোরা উঠে বসে বলল,“আজ না আফসার স্যারের বাসায় বউ ভাতের অনুষ্ঠান?”

ডালিয়া বিছানায় বসে বলল,“হুম। মুনা অনেক রাগ করেছে আমরা কেউ যাইনি বলে।”

“ফোন করেছিল?”

“হ্যাঁ। রেগে বোম হয়ে গেছে। আমি বললাম স্যারের বাসায় যেতে কেউ রাজি হয়নি, পরে একসময় যাব আমরা সবাই। তখন বলল তোদের জীবনেও আনব না আমার শ্বশুর বাড়িতে।”

ডালিয়ার সাথে ইলোরাও হাসল। ইলোরা প্রশ্ন করল,“তা ওর বাসর কেমন কাটলো? জিজ্ঞেস করেছিস?”

ডালিয়া খিলখিল করে হেসে উঠল। হাসতে-হাসতে বলল,“সে আর বলতে! ও তো বলতেই চাইছিল না। অনেকবার জিজ্ঞেস করার পর বলল। ইন্টারেস্টিং কাহিনি ঘটে গেছে ওর বাসর নিয়ে।”

ইলোরা আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করল,“কী হয়েছে?”

ডালিয়া হাসতে-হাসতেই উত্তর দিলো,“কাল রাতে স্যার ওকে জাস্ট বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল। আর ও না কি সেজন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে থেকে এখন পর্যন্ত স্যারের সাথে একটা কথাও বলেনি। তার সামনে পড়লেই লজ্জায় এক হাত ঘোমটা দিয়ে রাখে।”

ইলোরা এবার শব্দ করে হেসে উঠল। কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে ডালিয়া ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলল,“আমি শাওয়ার নেই, তারপর তুই নিস।”

ইলোরা বলল,“ওকে।”

ইলোরা বিছানা ছেড়ে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ভাইয়ের রুমের দিকে। রুমে ঢুকে দেখল সাকিব নেই। ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে। বোধ হয় শাওয়ার নিচ্ছে। ইলোরা সাকিবের রুম থেকে বেরিয়ে এবার গেল কিচেনের দিকে। কিচেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে দেখল মালিহা বেগম মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে। কিচেনে না ঢুকে ইলোরা বসার ঘরে গেল। চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে বসার ঘরে ঢুকতেই এক ঝটকা খেল। তার যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হলো না। চোখ দুটো ছানাবড়া করে সে এক ছুটে বসার ঘর থেকে বেরিয়ে কিচেনে চলে গেল। কিচেনে ঢুকে হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল,“আম্মু, এক গ্লাস পানি দাও তো।”

মালিহা বেগম খুন্তি নাড়তে-নাড়তে বললেন,“হাতের কাছেই তো আছে। নিজে নিতে পারিস না?”

ইলোরা তাড়াতাড়ি জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি সাবাড় করে ফেলল। গ্লাসটা রেখে বড়ো করে দম নিয়ে বলল,“ভাইয়ার বন্ধুরা কখন এল?”

মালিহা বেগম মুচকি হেসে বললেন,“রনি-এরেনের কথা বলছিস? ওরা তো সাকিবের সাথেই এসেছে। এরেন যে আসবে এটা তো ভাবতেই পারিনি আমি। ছেলেটাকে এতদিন কত করে আসতে বললাম তা-ও এল না। আজকে না কি ও ইচ্ছে করেই এসেছে। এতদিন সাকিব সাধাসাধি করেও আনতে পারেনি, অথচ আজ সে নিজের ইচ্ছায় এসেছে। সত্যিই অবাক করা বিষয়! আমি তো ওকে আজই প্রথম দেখলাম। ছেলেটা দেখতে যেমন, কথাবার্তা আর আচার-আচরণও তেমন।”

মালিহা বেগম বেশ গদগদ কন্ঠে এরেনের প্রশংসার ঝুড়ি নিয়ে বসলেন। ইলোরা সেদিকে কান না দিয়ে ভাবতে লাগল,“যে ছেলে কারোর বাসায় যেতে পছন্দ করে না, সেই ছেলে কি না নিজের ইচ্ছেয় আমাদের বাসায় চলে এল! এটাও বিশ্বাস করতে হবে? ভাই তো এতদিন জোর করেও আনতে পারল না, অথচ আজ নিজের ইচ্ছেয় চলে এল কী মনে করে? আশ্চর্য!”

চলবে………………….🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here