সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ৩৬

0
888

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৩৬

বেলা এগারোটা ষোলোতে ডালিয়াদের বাড়ি পৌঁছল সবাই। ডালিয়া বাড়িতে ঢুকেই তার মাকে খুঁজতে লাগল। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর এ বাড়িতে তার মাত্র একবার আসা হয়েছে। তাছাড়া ওর বাবা-মা মাঝে মাঝে ঢাকা গিয়ে ওকে দেখে এসেছে। মিজানুর রহমান এরেনকে দেখেই আহ্লাদে আটখানা হয়ে ওর সাথে কোলাকুলি করলেন। সাকিব এরেনকে প্রশ্ন করল,“আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?”

এরেন হেসে বলল,“নাহ্।”

ডালিয়া তার মাকে ডেকে নিয়ে এল বসার ঘরে। তারপর অরিশা, নাদিয়া আর তাহসিনের সাথে ওর বাবা-মাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। এরেন আলিয়া বেগমের সাথে কুশল বিনিময় করল। ইলোরা এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,“আব্বু-আম্মু, মিথি আর অনু আপ্পি কোথায়?”

আলিয়া বেগম বললেন,“সাজিদ একটু বাইরে গেছে আর মালিহা মনে হয় ছাদে গেছে। অনু আর মিথি ওর রুমে আছে।”

মিজানুর রহমান আলিয়া বেগমকে বললেন,“তুমি ওদের সবাইকে রুম দেখিয়ে দাও।”

তারপর তিনি এরেন, অরিশা, নাদিয়া আর তাহসিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,“বিয়ে বাড়ি তো। অনেক আত্মীয় স্বজন আসা শুরু করেছে। একটু কষ্ট করে থাকতে হবে। মানিয়ে নিও বাবা।”

তাহসিন হেসে বলল,“আমাদের কোনো সমস্যা হবে না আঙ্কেল।‌ আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”

আলিয়া বেগম সাকিবকে বললেন এরেন আর তাহসিনের সাথে সে যেন রুম শেয়ার করে। ইলোরা, ডালিয়া, নাদিয়া আর অরিশাকে বললেন অনন্যার রুমে একসাথে থাকতে। আত্মীয়-স্বজনরা আসছে তাই তাদের জন্যও থাকার জায়গা করে রাখতে হবে। আলিয়া বেগমের কথা মতো সাকিব এরেন আর তাহসিনকে রুমে নিয়ে গেল। ডালিয়া, ইলোরা, অরিশা আর নাদিয়া গেল অনন্যার রুমে। অনন্যা আর মিথিলা ওদের দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে গল্প জুড়ে দিলো। বিয়ে নিয়ে নানা প্ল্যানিং করতে করতে ঘন্টা পার করে দিলো তারা। তারপর একে একে সবাই গোসল সেরে নিল। দুপুরে খাবার সময় সবাই রুম থেকে বের হলো। সাজিদ হোসেন হেসে বললেন,“কী মেয়েরা? এসেই যে ঘরের দরজা বন্ধ করলে, এতক্ষণে বের হওয়ার সময় হলো?”

ইলোরা বলল,“তাও খাওয়ার জন্য বাবা। নইলে আজ গল্প শেষ হত না।”

এরেন বলল,“তোমরা গল্প করেছো আর আমরা গ্রাম ঘুরে দেখেছি।”

অরিশা গাল ফুলিয়ে বলল,“এটা কিন্তু ঠিক হলো না ভাইয়া। আমাদের ছাড়া গ্রাম ঘুরে এলেন?”

নাদিয়াও তাল মিলিয়ে বলল,“তাই তো। আমাদের নিয়ে গেলেই পারতেন।”

সাকিব বলল,“তোমাদের আমি ঘুরিয়ে আনবো। কিন্তু এখন না। আজ বিকেলে শপিং, কাল গায়ে হলুদ, পরশু বিয়ে। তারপর ঘুরতে পারবে।”

তাহসিন বলল,“এ তো দীর্ঘ অপেক্ষা!”

মিজানুর রহমান বললেন,“অপেক্ষার ফল অতি মিষ্ট।”

অনন্যা বলল,“তোমরা সবাই কি শুধু গল্পই করবে না খাবেও? আমার কিন্তু খুব ক্ষুধা পেয়েছে।”

সাকিব বলল,“তোর এত খাওয়ার কী দরকার? পরশু শশুরবাড়ি গিয়ে একসাথে খাস।”

“তুই থাম। তাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিস?”

“তো কী করব? তোকে ঘরে খুঁটি দিয়ে রাখব?”

অনন্যা মালিহা বেগমকে বলল,“ফুপি তোমার ছেলেকে থামতে বলো।”

সাকিব কপাল কুঁচকে বলল,“আগে তুই থাম।”

মালিহা বেগম শাসনের সুরে বললেন,“সাকিব, মেয়েটা দুদিন পর পরের বাড়ি চলে যাবে আর তুই ওর সাথে ঝগড়া করছিস?”

অনন্যা মুখ গোমড়া করে বলল,“ফুপি, এমনভাবে বলছো যেন আমাকে সারাজীবনের জন্য তাড়িয়ে দিচ্ছ।”

মালিহা বেগম অনন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললেন,“পাগলী মেয়ে, তাড়িয়ে দিবো কেন? তুই কি ফেলনা আমাদের কাছে? তোর যখন ইচ্ছে জামাইকে নিয়ে এখানে আসবি, আমাদের বাসায় যাবি।”

আলিয়া বেগম তাড়া দেখিয়ে বললেন,“গল্প পরে করো, আগে খেতে আসো সবাই। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।”

আলিয়া বেগমের তাড়ায় সবাই গিয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়ল। মালিহা বেগম আর আলিয়া বেগম মিলে সবার খাবার পরিবেশন করল। খাবার টেবিলে আড্ডা আরও জমে উঠল। হাসি-আড্ডায় খাওয়া শেষ করল সবাই। খাবার শেষে সাজিদ হোসেন আর মিজানুর রহমান কোনো একটা কাজে বাইরে গেলেন। এরেন সোফায় আরাম করে বসে সাকিবকে প্রশ্ন করল,“ডেকোরেশনের লোক কখন আসবে?”

সাকিব বলল,“কাল সকাল সকাল আসতে বলেছি। সারাদিনে হয়ে যাবে। তুই রনিকে আনতেই পারলি না?”

“ভাই, আমি অনেকবার বলেছি তাও ওকে রাজি করাতে পারিনি।”

“মামা ওকে চেনে না তাই বলেওনি। আমি বলেছি তাতে ও আসবে না। যাক আমি মামাকে দিয়ে বলাচ্ছি। যদি রাজি হয় তাহলে আজ বিকেলের মধ্যেই চলে আসতে পারবে।”

“আচ্ছা তা-ই কর।”

সাকিব মাথা নেড়ে বলল,“চল দেখি মামা কোথায় গেল।”

এরেন তাহসিনকে প্রশ্ন করল,“তাহসিন, আমাদের সাথে যাবে না বাসায় থাকবে?”

তাহসিন বলল,“বাসায় থেকে কী করব? চলুন যাই।”

তাহসিন আর এরেনকে নিয়ে সাকিব বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় গলা উঁচিয়ে বলল,“বিকেল চারটার মধ্যে সবাই রেডি হয়ে থাকবি। যে দেরি করবে তাকে কিন্তু রেখেই চলে যাব।”

অনন্যা, ডালিয়া, ইলোরা, নাদিয়া, মিথিলা আর ডালিয়ার দুজন চাচাতো বোন মিলে রুমে ঢুকে আড্ডা বসালো। নানা কথার ফুলঝুড়ি সাজাতে সাজাতে তারা প্রায় দেড় ঘন্টা পার করল। অনন্যা একসময় বলল,“চল আমরা সবাই এখন রেডি হই। নইলে সাকিব এসে তাড়া লাগিয়ে দিবে।”

অনন্যার কথায় সবাই রেডি হতে লেগে পড়ল। নাদিয়া অনন্যাকে বলল,“আচ্ছা আপ্পি, তোমরা একা শপিং করবে কেন? ভাইয়া বা তার ফ্যামিলির কেউ সাথে থাকবে না?”

অনন্যা বলল,“না, আমার শ্বশুরমশাই তো বলল আমাদেরকেই শপিং করে নিতে। তাদের না-কি কী প্রবলেম আছে। শপিং করার টাকাও জোর করে মায়ের হাতে দিয়ে গেছে।”

ডালিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,“এটা আবার কেমন কথা? বিয়ের মধ্যে তাদের আবার কী প্রবলেম?”

অনন্যা দু কাঁধ উঁচু করে ঠোঁট উল্টে বলল,“জানি না।”

ডালিয়া কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,“জানিসটা কী তাহলে? কিছু না জেনেই বিয়ে করছিস না-কি? আচ্ছা, তুই ভাইয়ার সাথে কথা বলিসনি? এসে হতে তো একবারও দেখলাম না ফোনে কথা বলতে।”

অনন্যা মুখ গোমড়া করে বলল,“ওনার সাথে আমার কথা হয়নি এখনও। বাবার থেকে ওনার বোন আমার নাম্বারও নিয়ে গেছে। আমি তো ভেবেছিলাম হয়তো উনি কল করবে, কিন্তু এখনও তো করল না।”

অনন্যার কথা শুনে সবাই হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। ইলোরা মাথায় হাত দিয়ে হতাশ গলায় বলল,“পরশু বিয়ে আর তুমি এখন পর্যন্ত হবু বরের সাথে কথাই বলোনি! এটা কেমন কথা আপ্পি?”

মিথিলা বলে উঠল,“লোকটাই বা কেমন? এই আপ্পি, বলদ টাইপের না-কি আবার?”

অনন্যা বলল,“আরে না। বাবা আর ফুপা মিলে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়েছে। সবদিক থেকেই পারফেক্ট।”

অরিশা বলল,“তাহলে ফোন কেন করল না?”

নাদিয়া বলল,“আপু, আমার মনে হয় ভাইয়া বেশি লাজুক। হয়তো লজ্জায় কল করতে পারছে না। তুমি না হয় কল করতে।”

অনন্যা চোখ বড়ো করে বলল,“আমি মেয়ে হয়ে আগে কল করব! ধুর! আমার কি লজ্জা করে না?”

মিথিলা বলল,“তাহলে আমাদেরকে নাম্বার দাও। আমরা একটু বাজিয়ে দেখি।”

অনন্যা ঠোঁট উল্টে বলল,“নাম্বারই তো নেই আমার কাছে।”

ডালিয়া বিরক্তির সুরে বলল,“ধুর! ছাতার মাথা বিয়ে করতাছোস তুই? আমি তো তোরে চালাক ভাবছিলাম আপ্পি।”

ইলোরা বলল,“আচ্ছা থাম তোরা, এটা নিয়ে আর অযথা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। একসঙ্গে বাসর ঘরেই না হয় কথা বলবে। কী বলো আপ্পি?”

মিথিলা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“বাসর ঘরেও যদি তোমার লাজুক বর লজ্জায় কথা না বলে তাহলে আমাকে ডেকো আপ্পি। কাতুকুতু দিয়ে কথা বের করব মুখ থেকে।”

মিথিলার কথায় সবাই খিলখিল করে হেসে উঠল। এরমধ্যেই বাইরে থেকে সাকিবের ডাক পড়ল। সে উচ্চস্বরে বলছে,“এই মেকাআপের বস্তারা, সেজেগুজেই কি এই দিন পার করবি? শপিংয়ে যাচ্ছিস না শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিস? আসার সময় সবকটাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে আসব।”

অনন্যা পার্স হাতে নিয়ে বলল,“শুরু হয়ে গেছে ওস্তাদের বয়ান। তাড়াতাড়ি চল সবাই।”

মেয়েরা সবাই বের হতেই সাকিব, এরেন আর তাহসিন ওদের নিয়ে রওনা হলো। ওরা একটা লেগুনায় করে যাচ্ছে। প্রায় বিশ মিনিট পার হওয়ার পর গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে একটা ভালো মার্কেটের সামনে ওরা গাড়ি দাঁড় করাল। মার্কেটের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে এরেন বলল,“যেই একদল মেয়ে নিয়ে এসেছি, দোকানদাররা দেখলে না আবার ভয় পায়।”

ইলোরা হেসে বলল,“ভয় পেলে সে সুযোগে আমরা দোকান লুট করে সব নিয়ে যাব।”

তাহসিন বলল,“হ্যাঁ, লুট করবি তোরা আর পুলিশ এসে তোদের সাথে আমাদেরও জেলে নিয়ে যাবে।”

সাকিব হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলল,“এই শোন, আমরা ওদিকটায় যাচ্ছি। মেয়েদের সাথে দোকানে ঢুকে মাথা খারাপ করতে চাই না আমি। তোরা গিয়ে কেনাকাটা করে নে।”

অনন্যা বলল,“তোকে নিবোও না আমাদের সাথে। যা ভাগ।”

সাকিব তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,“অ্যাহ্! নিয়ে এলাম আমি আর আমাকে নিবে না বলছে! তুই আমাকে কী নিবি? তোকেই তো আমি নিয়ে এলাম।”

এরেন সাকিবকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,“সাকু রে, তুই এত ঝগড়াটে কবে হইলি?”

সাকিব কপাল কুঁচকে বলল,“আমাকে তোর ঝগড়াটে মনে হয়?”

“মনে তো হইত না। আজ তো হাতেনাতে প্রমাণ পাইলাম।”

সাকিব পাল্টা জবাবে কিছু বলার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল রনি ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে বলল,“হ্যাঁ রনি, কতদূর তুই?”

ওপাশ থেকে রনি বলল,“প্রায় পৌঁছে গেছি। আর দশ মিনিটের মতো লাগবে।”

সাকিব কিছু একটা ভেবে বলল,“আচ্ছা, আমি বাসস্ট্যান্ডে আসছি। বাস থেকে নেমে তুই ওখানেই ওয়েট কর আমার জন্য।”

রনি বলল,“ওকে।”

সাকিব ফোন রাখতেই এরেন বলল,“চল আমিও যাই।”

সাকিব বাঁধা দিয়ে বলল,“দরকার নেই। তোরা এখানেই থাক। এখানে সব মেয়েরা আছে। সবাই চলে গেলে ওদের দিকে খেয়াল রাখবে কে?”

এরেন নিচের ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে বলল,“তাও ঠিক। আচ্ছা তুই যা। আমি আর তাহসিন এখানেই আছি।”

সাকিব মাথা দুলিয়ে বলল,“ওকে। আমি রনিকে নিয়ে এখানেই আসব। তারপর সবাই একসাথে বাড়ি ফিরব।”

এরেন মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। সাকিব এগিয়ে গিয়ে মেয়েদের সবাইকে বলে মার্কেট থেকে বেরিয়ে একটা অটো রিকশা ডেকে বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর রনিকে পেয়ে গেল। রনিকে নিয়ে আবার সে ওই অটো রিকশায় উঠে বসল। তারপর সোজা সেই মার্কেটে চলে গেল। এরেন ওদের দিকে এগিয়ে এসে হেসে বলল,“কী মি. রনি আহম্মেদ? একলা একা বাস জার্নি কেমন কাটলো?”

রনি দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,“ফিলিং সিঙ্গেলদের দুক্কু রে মামা।”

সাকিব টিটকারি করে বলল,“জারিনকে দরকার ছিল না-কি মামা?”

“ভাই রে, তোরা এই মিথ্যা ধারণা নিয়ে কেন বেঁচে আছিস বল তো আমাকে?”

“আমাদের ধারণা মিথ্যা না, তোর কথা মিথ্যা।”

এরেন রনির উদ্দেশ্যে বলল,“এবার ঢাকায় গিয়ে সত্য মিথ্যে প্রমাণ করে দেবো মামা। তোকে আর জারিনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করব। তখন বুঝা যাবে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।”

রনি দৃঢ়ভাবে বলল,“ওকে ডান।”

এরেন আর তাহসিনের হাতে শপিং ব্যাগ দেখে সাকিব প্রশ্ন করল,“তোরাও শপিং করেছিস?”

এরেন হেসে বলল,“অবশ্যই।”

সাকিব রনির দিকে তাকিয়ে বলল,“তো আমরা কেন বাদ যাব?”

রনি বলল,“চল দেখি কিছু পছন্দ হয় কি না।”

সাকিব আর রনি একটা দোকানে ঢুকল। এরেন এগিয়ে গিয়ে দোকানের বাইরে থেকে মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করল,“তোমাদের আর কত সময় লাগবে?”

ডালিয়া ভেতর থেকে উত্তর দিলো,“এই তো হয়ে গেছে ভাইয়া। এখনি বের হব।”

এরেন তাড়া দেখিয়ে বলল,“তাড়াতাড়ি করো। সন্ধ্যা হয়ে গেল। এখন তো মনে হচ্ছে এশার আজানও দিয়ে দিবে।”

এরেনকে দেখে ইলোরা দোকান থেকে বেরিয়ে এল। সন্ধানী দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,“ভাই কোথায়?”

এরেন অভিমান ভরা কন্ঠে বলল,“সবসময় জিজ্ঞেস করো ভাই কোথায়? কখনও তো জিজ্ঞেস করো না বর কোথায়।”

ইলোরা হেসে বলল,“তুমি তো আমার কাছেই দাঁড়িয়ে আছো।

এরেন বলল,“কাছে কোথায়? মাঝখানে প্রায় এক হাত দূরত্ব।”

ইলোরা আরও হেসে উঠল। এরেন ভ্রুকুটি করে বলল,“সব কথায় হাসছো যে? মার্কেটে কাউকে পছন্দ হয়েছে না-কি?”

ইলোরা মুখ টিপে হেসে উপর নিচে মাথা দোলালো। এরেন এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,“কোন হতভাগা আমার বউ কেড়ে নেয়ার মতলব করল?”

ইলোরা চোখ দিয়ে আরেকদিকে ইশারা করে দেখিয়ে বলল,“ঐ দেখো।”

এরেন ইলোরার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকিয়ে প্রশস্ত হাসলো। তারপর সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ইলোরার দিকে তাকাতেই ইলোরা ভ্রু নাচিয়ে বলল,“কিউট না?”

এরেন আরেকবার সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইলোরার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল,“খুব কিউট! তোমাকে যখন আমার বাড়ি নিয়ে যাব তখন এমন একটা কিউট বেবি হবে আমাদের।”

“মুখ বন্ধ রাখো। এটা মার্কেট, তোমার বাসা না।” কথাটা বলে ইলোরা দোকানের দিকে পা বাড়াতে লাগল। এরেন পেছন থেকে ইলোরার ডান হাতটা খপ করে ধরে ফেলল। ইলোরা ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত মোচড়াতে মোচড়াতে নিচু স্বরে বলল,“কী করছো? এখানে সবাই আছে। কেউ দোকান থেকে বের হলে সর্বনাশ হবে। ছাড়ো।”

এরেন ইলোরার হাতের মুঠোয় একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,“যাও।”

ইলোরা একবার হাতের ব্যাগের দিকে আরেকবার এরেনের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,“কী এটা?”

এরেন মুচকি হেসে বলল,“বাড়ি গিয়ে খুলে দেখো।”

ইলোরা আর কিছু বলার আগেই এরেন অন্যদিকে চলে গেল। শপিং শেষ করে যখন সবাই একত্রে মার্কেট থেকে বের হলো তখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে। সাকিব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,“কেউ কিছু খাবি? তাহলে একটা রেস্টুরেন্টে বসি চল।”

মিথিলা লাফিয়ে উঠে বলল,“কেউ না খেলেও আমি খাব। চলো চলো।”

একে-একে সবাই-ই রাজি হলো। সবাই মিলে মার্কেটের পাশের একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে বসল। তারপর যার যার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে একটা লেগুনায় উঠে বসল। বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় আটটা বেজে গেল। সাকিব বাড়ি পৌঁছেই রনির সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে আড্ডা বসালো। আড্ডার ফাঁকে ইলোরা চুপিচুপি রুমে গিয়ে এরেনের দেয়া ব্যাগটা বের করল। এত শপিংয়ের ভীরে এটার দিকে আলাদা করে কারোর নজর পড়েনি। শপিং ব্যাগটা খুলে একটা প্যাকেট পেল। প্যাকেট দেখেই বুঝল ভেতরে কী আছে। তাড়াতাড়ি প্যাকেট খুলে সে বেশ অবাক হলো। ভেতরে নীল রঙের খুব সুন্দর একটা কাতান শাড়ি। শাড়িটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে সে আপন মনে হাসল। তারপর আবার শাড়িটা লাগেজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এল। বসার ঘরের একপাশে এরেন দাঁড়িয়ে ফোন দেখছে। ইলোরা চারদিকে ভালোভাবে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখল সবাই আড্ডায় মগ্ন। সাকিবকেও আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। ইলোরা সন্তর্পণে গিয়ে এরেনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। এরেন ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,“ম্যাডামের কি বরের দেয়া গিফট পছন্দ হয়েছে?”

ইলোরা নিচু স্বরে বলল,“অনেক বেশি সুন্দর।”

এরেন মুচকি হেসে বলল,“অনেক বেশি সুন্দর না রে পাগলী। পছন্দের মানুষ কোনোকিছু দিলে এমনই মনে হয়।”

“উঁহু। সত্যি, একটু বেশিই সুন্দর। কিন্তু এখন এটা দিলে কেন?”

“তো কখন দিতাম?”

“এখন তো এটা আমাকে লুকিয়ে রাখতে হবে।”

“এটা তুমি পরশুদিন পড়বে।”

ইলোরা চোখ বড়ো করে বলল,“পাগল হয়েছ তুমি! বিয়ের দিন এই শাড়ি পড়লে তো সবাই জিজ্ঞেস করবে এটা কার শাড়ি। তখন আমি কী বলব?”

এরেন স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলো,“বলবে তোমার শাড়ি।”

“বললেই হলো? আম্মু যখন জিজ্ঞেস করবে এটা কোথায় পেয়েছি তখন?”

“বলবে তুমি টাকা জমিয়ে রেখেছিলে তা দিয়ে কিনেছো।”

“কিন্তু………….।”

“আর কিছু শুনতে চাই না।” বলেই এরেন গিয়ে সোফার এক কোণে বসে তাহসিনের সাথে কথা বলতে লাগল। ইলোরা কিছুক্ষণ গাল ফুলিয়ে এরেনের দিকে তাকিয়ে থেকে সেও গিয়ে সবার আড্ডার মাঝে বসে পড়ল।

চলবে………………….🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here