সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-১০

0
1205

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ১০

ক্লাস শেষ করে ইলোরা আর ডালিয়া ক্যাম্পাসের চারদিকে সাকিবকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু আশেপাশে কোথাও সাকিবকে দেখা যাচ্ছে না। ভাবল হয়তো গেটের সামনে আছে। দুজনে সাকিবকে খুঁজতে খুঁজতে গেটের সামনে চলে এল,‌ সেখানেও নেই। ইলোরা এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,“ভাই তো প্রতিদিন ক্যাম্পাসেই থাকে। গেল কই আজ?”

ডালিয়া বলল,“আছে হয়তো আশেপাশে কোথাও। ফোন কর তো।”

ইলোরা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সাকিবের নাম্বারে ডায়াল করল। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই সাকিব ফোন রিসিভ করল। ইলোরা বলল,“ভাই, কোথায় তুমি?”

ওপাশ থেকে সাকিব বলল,“ভার্সিটির কাছেই আছি। জাস্ট দুই মিনিট ওয়েট কর। আসছি আমি।”

ইলোরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাকিব ফোন কেটে দিলো। ঠিক এক মিনিট পঞ্চাশ সেকেন্ডের মধ্যেই সাকিবকে দেখা গেল। কারো সাথে কথা বলতে বলতে ভার্সিটির গেটের দিকে আসছে। ইলোরা আর ডালিয়া কয়েক পা এগিয়ে যেতেই ইলোরার মুখটা চুপসে গেল। ভাইয়ের সাথে এরেন আসছে। ইলোরা চায় না ছেলেটার সামনে পড়তে। তবু বারবার সে সামনে চলে আসে। যতবার ছেলেটা সামনে চলে আসে ততবারই ইলোরা পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে যায়। কিন্তু এখন তো ভাইয়ের সাথে আছে। চাইলেও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। ইলোরা হাঁসফাঁস করতে লাগল। সাকিব আর এরেন সামনে এসে দাঁড়াল। ইলোরা ভুল করেও এরেনের দিকে তাকাল না। এরেনকে দেখে ডালিয়া হাসিমুখে বলল,“কেমন আছেন ভাইয়া?”

এরেন বলল,“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”

ডালিয়া উত্তর দিলো,“ভালো আছি।”

সাকিব বলল,“তোরা এখানে একটু দাঁড়া। আমি এক্ষুনি আসছি।”

ইলোরা প্রশ্ন করল,“কোথায় যাচ্ছ?”

সাকিব বলল,“ভেতরে যাচ্ছি। কাজ আছে একটু। বেশি সময় লাগবে না। এরেন আছে তোদের সাথে, সমস্যা নেই।”

ইলোরা আরও কিছু বলতে মুখ খুলতেই সাকিব দ্রুত পায়ে হেঁটে গেট পেরিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে গেল। ইলোরা কিছুটা বিরক্ত হলো ভাইয়ের উপর। না তাকিয়েও ভালোভাবেই বুঝতে পারল এরেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে। শুরু হয়ে গেল অস্বস্তি নামক প্যারা। ইলোরা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ভেবেচিন্তে ফোনের দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করল। এরেন, ডালিয়া দুজনেই চুপ। একজন কথা বলার জন্য উসখুস করছে, আরেকজন অস্বস্তি কাটাতে ফোনে ব্যস্ত হয়েছে, আর অন্যজন বলার মতো কোনো কথাই খুঁজে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর নীরবতা ভেঙে এরেনই আগে বলে উঠল,“তোমাদের নাম কী যেন? ভুলে গেছি।”

ডালিয়া সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো,“আমি ডালিয়া।”

এরেন হেসে বলল,“বাহ্! সুন্দর নাম। আর তোমার নাম?”

ইলোরা এবার পড়ল বিপাকে। যেচে যখন জিজ্ঞেস করছে তখন কথা না বলেও উপায় নেই। ইলোরা ফোনের দিকেই দৃষ্টি রেখে বলল,“ইলোরা জাহান।”

“বেশ ইউনিক নাম। আন্টি রেখেছে?”

“আব্বু রেখেছে।”

“সেদিনকার সেই ছেলেগুলো কি আর ডিস্টার্ব করেছিল?”

ইলোরা ডানে বামে মাথা দোলালো। এরেন কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বলল,“ভুল করেও সাকিবকে বোলো না যেন। গন্ডগোল বেঁধে যাবে।”

ইলোরার ইচ্ছে হলো জিজ্ঞেস করতে যে ছেলেগুলোর সাথে ভাইয়ের কিসের শত্রুতা। কিন্তু বিবেক বাঁধ সেধে বসল। ছেলেটার সাথে বেশি কথা না বলা সমীচিন বলে মনে করল। এমনিতেই ইলোরার মাথায় এই ছেলে জেঁকে বসেছে। প্রত্যেকদিন দেখা হওয়ার সুবাদে বাসায় গেলেও সারাক্ষণ এই ছেলে মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করে। এই কদিনে সে বেশ বুঝতে পারছে যে না চাইতেও ছেলেটা তার ভাবনায় জড়িয়ে গেছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ছেলেটার সাথে তার একটা পবিত্র সম্পর্ক আছে। এই পবিত্র কারণেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেলেটাকে নিয়ে ভাবতে বসে সে। দুর্ঘটনার সেই ভোরের কথা হাজার চেষ্টা করেও সে ভুলতে পারেনি। সে জানে না ছেলেটা তার মতো এসব ভাবে কি না। হয়তো ভাবে না। এতদিনে হয়তো ওসব কিছু সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। কিন্তু ইলোরা তো পারছে না। পারবেই বা কীভাবে? প্রতিদিন এভাবে ছেলেটার সাথে দেখা হলে তো ওসব ভোলা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ইলোরা মনে মনে ঠিক করল যেভাবে হোক এই ছেলেকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। ব্যাপারটা আর বাড়তে দেয়া ঠিক হবে না। ইলোরা ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এরেন প্রশ্ন করল,“তো? ভার্সিটির ক্লাস কেমন লাগছে?”

ডালিয়া হেসে বলল,“ভালো। ভাইয়া, ফুপি কিন্তু কালও আপনার কথা বলেছে।”

এরেন বলল,“সাকিব তো আমাকে সবসময় বাসায় নিতে চায়, আমিই যাই না। সামনের সপ্তাহে তো এক্সাম শুরু। এক্সাম শেষ হলে এবার যাব ইন শা আল্লাহ্।”

ইলোরা চমকে এরেনের দিকে তাকাল। এতদিনে একবারও গেল না আর আজ বলছে এক্সাম শেষ হলে যাবে! কেন? আম্মু যেতে বলেছে বলে না-কি নিজের ইচ্ছে? এরেন ইলোরার চোখে চোখ রাখতেই ইলোরা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। ছেলেটার সামনে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে অস্বস্তি বাড়বে বই কমবে না। ইলোরা অস্থির হয়ে উঠল ভাইয়ের অপেক্ষায়। বারবার গেটের দিকে তাকাতে লাগল। এরেন বুঝতে পেরে হাসিমুখে বলল,“চলে আসবে এখনই, চিন্তা কোরো না।”

ঠিক তখনই সাকিব চলে এল। হেসে এরেনকে জিজ্ঞেস করল,“তুই কি এখন বাসায় চলে যাবি?”

এরেন হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,“হ্যাঁ, আম্মী দুবার ফোন করে ফেলেছে অলরেডি। আমি যাই। আল্লাহ্ হাফেজ।”

এরেন একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ল। ইলোরা আড়চোখে একবার তাকাল। কিন্তু ততক্ষণে রিকশা অনেকদূর চলে গেছে। সাকিব একটা সিএনজি ডেকে ইলোরা আর ডালিয়াকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।


তাহসিনের অস্বাভাবিক আচরণ দিনদিন বেড়েই চলেছে। ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে ডালিয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সন্ধ্যায় পড়তে বসলে বিরতিহীন ভাবে ফোন করতে থাকে। এমনকি আড্ডার সময় দিন দুনিয়া ভুলে ডালিয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে বন্ধুমহলে সবাই তাহসিনের মনের খবর পেয়ে গেছে। নাদিয়া এতে প্রচন্ড বিরক্ত। ডালিয়াকে এখন আর সহ্য করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু ফ্রেন্ড বলে কিছু বলতেও পারে না। তাছাড়া ডালিয়া খুব ভালো মেয়ে তা সে জানে। ডালিয়া তাহসিনের এমন আচরণ চুপচাপ শুধু সহ্য করে আসছে। তাকে দেখে সবাই এটাই ধরে নিয়েছে যে সে তাহসিনকে কখনোই একসেপ্ট করবে না। করবে কী করে? তার তো এসব বিষয়ে আগ্রহই নেই। নাদিয়া তো একারণে তাহসিনকে একদিন বলে বসেছিল,“আমি তোকে পছন্দ করি আর তুই আমাকে জাস্ট ফ্রেন্ড বলে এড়িয়ে যাস। আর এখন তুই ডালিয়াকে পছন্দ করিস আর ও তোকে জাস্ট ফ্রেন্ড বলেই এড়িয়ে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ।”

সেদিন নাদিয়ার এমন কথা শুনে তাহসিনের যথেষ্ট রাগ হলেও সে শান্ত স্বরে শুধু বলেছিল,“আমি কিন্তু এখনও ওকে প্রপোজ করিনি। যেদিন প্রপোজ করব আর ও আমাকে রিজেক্ট করবে, সেদিনই তোর এই কথাটা আমি মেনে নেব। তার আগে না।”

ডালিয়া সবার সব কথাই শোনে কিন্তু কানে নেয় না। সবকিছু সাইডে রেখে সে সবসময় সবার সাথে স্বাভাবিকভাবেই মেশার চেষ্টা করে। প্রতিদিনের মতো আজও তাহসিন ননস্টপ ফোন করে চলেছে। ডালিয়া সেসবে পাত্তা না দিয়ে বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে চলেছে। মিথিলা টেবিলের উপর একহাতে মাথা রেখে হতাশ চোখে ডালিয়ার ফোনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ইলোরা রুমে নেই। কিছুক্ষণ পর ইলোরা ছোট একবাটি আচার হাতে নিয়ে খেতে খেতে রুমে ঢুকল। মিথিলা তাকে দেখে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করল,“কী খাচ্ছ আপ্পি?”

ইলোরা আচার চিবোতে চিবোতে বলল,“তোর কী দরকার? পড়তে বসেছিস মন দিয়ে পড়। এদিকে চোখ আসে কেন?”

ইলোরা বাটি থেকে আচারের একটা টুকরো মুখে তুলতেই মিথিলা বলল,“আচার খাচ্ছ? দাও না একটু।”

ইলোরা ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,“নিজে এনে খা। আমারটার দিকে নজর দিবি না।”

মিথিলা মুখটা গোমড়া করে অনুরোধের সুরে বলল,“দাও না। তোমাকে আমি দেই না? একটু দাও।”

ইলোরা মুখ ভেংচি কেটে বলল,“আম্মুকে ডাকব? লোভী মেয়ে। তাড়াতাড়ি নিজের পড়া পড়।”

মিথিলার মুখটা চুপসে গেল। সে অসহায় চোখে ডালিয়ার দিকে তাকাল। ডালিয়া পড়া থামিয়ে হেসে বলল,“মিথি, তুই গিয়ে নিয়ে খা, যা।”

মিথিলা নড়ল না। ইলোরার হঠাৎ চোখ চলে গেল টেবিলের উপর রাখা ডালিয়ার ফোনের উপর। সে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই ডালিয়া হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলল,“এই ফোন নিচ্ছিস কেন? দে দে।”

ইলোরা কয়েক পা দূরে সরে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“আরে এত হাইপার হচ্ছিস কেন? আমার ফ্রেন্ডের সাথে কী আমি কথা বলতে পারি না? তুই তোর পড়ায় মনোযোগ দে, আমি ওর সাথে কথা বলছি।”

ইলোরাকে আর কিছু বলে লাভ হবে না ভেবে ডালিয়া আবার চেয়ারে বসে পড়ল। উৎসুক দৃষ্টিতে ইলোরার দিকে তাকিয়ে রইল। ইলোরা হাতের বাটিটা বিছানায় রেখে ফোন নিয়ে সামনের বারান্দার দিকে পা বাড়াল। ডালিয়া উচ্চস্বরে বলল,“এখানে দাঁড়িয়ে কথা বললে কী সমস্যা?”

ইলোরা যেতে যেতে বলল,“সেসব জেনে তোর কী হবে? চুপচাপ পড়তে থাক।”

বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানোর আগেই ফোনটা কেটে গেল। প্রায় সাথে সাথেই আবার ফোনটা নিঃশব্দে বেজে উঠল। ইলোরা তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল, কিন্তু কোনো কথা বলল না। ওপাশ থেকে তাহসিনের উত্তেজিত কন্ঠ শোনা গেল। তাহসিন বলল,“ফাইনালি ফোনটা ধরলি। আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে বল তো? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”

ইলোরা ফট করে বলে বসল,“এখন তো রাত। সূর্য আসবে কোত্থেকে? চাঁদকে তুই সূর্য দেখছিস? হায় হায়! এই তুই অন্ধ-টন্ধ হয়ে গেলি না-কি?”

তাহসিন থতমত খেয়ে গেল। তবে কিছুক্ষণের মাথায়ই বুঝতে পারল ফোনটা ইলোরা ধরেছে। সে গলা ঝাড়া দিয়ে বলল,“সে তো হয়েছিই। প্রেমে অন্ধ হয়েছি। তোর বোনই শুধু বুঝল না।”

ইলোরা আফসোসের সুরে বলল,“আহারে, কী দুঃখ! কী আর করার আছে বল? আমার বোন তো মনে হয় তোকে আমার দুলাভাই হওয়ার সুযোগটা দিবে না।”

তাহসিন হতাশ ভঙ্গিতে বলল,“একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে তো পটাতে পারিস। তা তো করছিস না।”

ইলোরা অবাক হয়ে বলল,“আমার বোনকে আমাকেই পটাতে বলছিস, তাও আবার প্রেম করার জন্য? লাইক সিরিয়াসলি!”

“হ্যাঁ, তো? আমি তো তোরই ফ্রেন্ড। তোর ফ্রেন্ড কাউকে পছন্দ করে অথচ সামনে এগোতে পারছে না। এটা জেনে তো তোর উচিত ফ্রেন্ডকে হেল্প করা। তা তো করছিস না। বোনের প্রতি বস্তা ভর্তি দরদ আছে আর ফ্রেন্ডের প্রতি এক চিমটিও নেই!”

“এখন কী আমার বোনকে পটাতে না পেরে
আমাকে পটানোর চেষ্টা করছিস? যাতে আমি আবার আমার বোনকে পটিয়ে ফেলি। ওসব হচ্ছে না ব্রো।”

তাহসিন এবার শব্দ করে হেসে কৌতুক করে বলল,“ভাবছিলাম তোরে একটা জামাই খুঁইজা দিমু। মনে হইতাছে তা আর হইতো না।”

ইলোরা এবার খিলখিল করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল,“আমার জামাই তোকে খুঁজতে হবে না ভাই। এখন ফোন রাখ।”

তাহসিন একটু সিরিয়াস হয়ে প্রশ্ন করল,“ডালিয়া একটাবার ফোন ধরলে কী হয় বল তো?”

ইলোরা পাল্টা প্রশ্ন করল,“ও ধরবে না জেনেও তুই প্রতিদিন এমন ননস্টপ ফোন করিস কেন বল তো?”

“কথা বলতে ইচ্ছে করে তাই করি। ফোন করব না করব না ভেবেও করে ফেলি।”

ইলোরা মাথায় হাত রেখে বলল,“মাই গড! পুরো প্রেমিক হয়ে গেছিস দেখছি?”

“যার জন্য প্রেমিক হয়েছি তারই হেলদোল নেই।”

“যাক, কাঁন্দিস না। এখন রাখছি।”

তাহসিন এবার একটু নরম সুরে বলল,“ওকে একটু বুঝাবি প্লিজ? আমি যেদিন ওকে প্রপোজ করব সেদিন যাতে ও আমাকে ফিরিয়ে না দেয়। প্লিজ ইলো।”

ইলোরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুচকি হেসে বলল,“ওকে। আই উইল ট্রাই।”

তাহসিন খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,“রিয়েলি? থ্যাংক ইউ সো মাচ দোস্ত।”

ইলোরা হাসিমুখে বলল,“ওসব পরে দিস। আল্লাহ্ হাফেজ।”

ইলোরা ফোনটা কেটে আপন মনে হেসে ফেলল। হঠাৎ তার মস্তিষ্ক জানান দিলো, তাহসিন ডালিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছে। আচ্ছা, যদি এমন হয় যে এরেন তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। সেটা কী কখনও সম্ভব? হতেও তো পারে। বউকে ভালোবাসবে না তো কাকে ভালোবাসবে? সেও হয়তো ভাবে সেই ভোরের কথা। হয়তো ভাবে তারও একটা বউ আছে। আচ্ছা? এরেন যে দেখা হলেই যেচে কথা বলার চেষ্টা করে, তা কী শুধুই বন্ধুর বোন বলে? না-কি সে তার বউ ভেবে কথা বলতে চায়? যদি কোনোদিন হঠাৎ বলে বসে আমি বিয়েটা মেনে নিয়েছি, তোমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। তখন কী হবে? আদৌ কি সেটা সম্ভব? ধুর, তা কী করে সম্ভব? বিয়েটা তো একটা এক্সিডেন্ট ছিল। দুজনের কেউই সেটা মানতে পারেনি। যেখানে সম্পর্কেরই কোনো ঠিক নেই সেখানে ভালোবাসার কথা আসে কোত্থেকে? এমনও তো হতে পারে এরেন অন্য কাউকে ভালোবাসে, আর তাকেই বিয়ে করবে। তাহলে সে? নিজের হাসবেন্ড অন্য কাউকে বিয়ে করবে আর সে তা চুপচাপ মেনে নিবে? কিন্তু তা তো নাও হতে পারে। এই যে তার সাথে প্রতিদিন দেখা হয়, একটু আধটু কথা হয়। এমনও তো হতে পারে, এরেন আস্তে আস্তে তাকে সত্যি সত্যিই ভালোবেসে ফেলল। হবে কি? হ্যাঁ, হতেও পারে। যদি এটা না হয় তাহলে তো তাকে আরেকটা বিয়ে করতে হবে। কিন্তু এরেন তো তার হাসবেন্ড। আবার বিয়ে হলে সেই হাসবেন্ড হবে তার সেকেন্ড হাসবেন্ড। সেই লোককে সে কীভাবে বলবে যে তার আগেও একটা বিয়ে হয়েছিল। না না, এটা সম্ভব না তার পক্ষে। দমকা হাওয়া গায়ে লাগতেই ইলোরার ধ্যান ভাঙল। এতক্ষণ কীসব ভাবছিল মনে করেই সে চমকে উঠল। ডান হাতের আঙুলে কপাল চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলল,“পাগল হয়ে গেলি না-কি ইলোরা? কীসব আজেবাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে বসে আছিস? ঝেড়ে ফেল, ঝেড়ে ফেল।”

মাথাটা হালকা ঝাঁকি দিয়ে ইলোরা বারান্দা থেকে রুমে চলে এল। ডালিয়া আর মিথিলা মন দিয়ে পড়ছে। তার দিকে কেউ ফিরেও তাকাল না। ইলোরা ফোনটা ডালিয়ার বইয়ের পাশে রেখে বিছানার দিকে পা বাড়াল। আচারের বাটিটা হাতে নিতেই অবাক হয়ে গেল। বাটি পুরো খালি। এক চিমটিও আচার নেই তাতে। ইলোরা সন্দিহান দৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকাল। তারপর রাগত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,“আমার আচার খেয়েছিস কেন?”

মিথিলা বই থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বোনের দিকে তাকাল। অবাক হওয়ার ভান করে বলল,“কখন? আমি তো এখান থেকে উঠিইনি। আমি এখানে আর তোমার আচারের বাটি বিছানায়।”

“আচ্ছা? তো শেষ হলো কীভাবে? ভূত এসে খেয়ে শেষ করেছে?”

“আমি জানব কীভাবে? তোমার আচার, তুমিই জানো।”

ইলোরা এবার ডালিয়াকে জিজ্ঞেস করল,“এই ডালিয়া, তুই সাক্ষী দে। ও খাইছে না?”

ডালিয়া পড়া থামিয়ে ইলোরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই মিথিলা শব্দ করে হেসে ফট করে বলে বসল,“আরে ডালিয়া আপ্পি কী বলবে? ও-ও তো আমার সাথে খেয়েছে।”

কথাটা বলেই মিথিলা দাঁতে জিব কাটল। ডালিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে মিথিলার দিকে তাকাল। ইলোরা আরো অবাক হয়ে বলে উঠল,“কিহ্! দাঁড়া তোদের খাওয়া বের করছি আমি। ছোঁচা কোথাকার!”

ইলোরা বাটি রেখে বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে তেড়ে এল ডালিয়া আর মিথিলার দিকে। তা দেখে মিথিলা চেয়ার ছেড়ে উঠে ডালিয়ার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে দরজা দিয়ে ভোঁ দৌড় দিল। ইলোরা বালিশ ফেলে দিয়ে ওদের পিছু পিছু ছুটল। বসার ঘরে সাকিব আর মালিহা বেগম বসে ছিলেন। মিথিলা আর ডালিয়া সাকিবকে টেনে দাঁড় করিয়ে তার পেছনে লুকিয়ে পড়ল। সাকিব কিছু বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মালিহা বেগমও হা করে তাকিয়ে রইলেন। ততক্ষণে ইলোরাও এসে সামনে দাঁড়াল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,“ভাই, সরো সামনে থেকে।”

মিথিলা পেছন থেকে সাকিবের শার্ট টেনে ধরে বলল,“ভাই, সরবে না।”

সাকিব ওদের তিনজনের দিকে চোখ বুলিয়ে প্রশ্ন করল,“কী শুরু করেছিস? হয়েছেটা কী?”

ইলোরা ঠোঁট উল্টে নালিশের সুরে বলল,“ওরা দুজন মিলে আমার আচার খেয়ে ফেলেছে।”

মালিহা বেগম প্রশ্ন করলেন,“একটু আগে যে নিলি ঐ আচার?”

ইলোরা উপর নিচে মাথা দোলালো। সাকিব ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বলল,“ওর আচার খেয়েছিস কেন তোরা?”

ডালিয়া বলে উঠল,“ভাই, আমার কিন্তু কোনো দোষ নাই। মিথি আমাকে দিয়েছে তাই আমি খেয়েছি। নইলে খেতাম না।”

মিথিলা কোমরে দুহাত রেখে বিদ্রুপ করে বলল,“বাহ্ আপ্পি! খাওয়ার সময় তো না বললে না। এখন সব দোষ আমার হয়ে গেল!”

মালিহা বেগম ধমক দিয়ে বললেন,“ছোটো বাচ্চাদের মতো কী শুরু করেছিস? ঘরে কী আচারের অভাব ছিল যে ওরটা খেতে হলো তোদের? আর অমি, ওরা খেয়েছে তো কী হয়েছে শুনি? দুষ্টুমি করে খেয়েছে।”

ইলোরা গাল ফুলিয়ে বলল,“আমাকে বকছো কেন আম্মু? ওরা আমারটা চুরি করে খেয়েছে কেন?”

মিথিলা বলল,“তোমার থেকে চেয়েছিলাম, তখন তো দিলে না।”

সাকিব কিছুটা জোরে বলল,“এই এই চুপ। সবাই চুপ। আর একটা কথাও যেন না শুনি। ইলু, ওরা তোর আচার চুরি করেছে তো? তোর জন্য আমি বাইরে থেকে সব রকম আচার নিয়ে আসব। খুশি?”

ইলোরা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,“সত্যি? ওকে ভাই।”

মিথিলা পেছন থেকে বলে উঠল,“আর আমাদের জন্য?”

সাকিব বলল,“তোরা চুরি করেছিস। সো তোরা ঘরের আচারই খাবি।”

ডালিয়া মিথিলার হাত ধরে টেনে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে ব্যথিত গলায় বলল,“চল মিথি, আমরা তো বানের জলে ভেসে এসেছি। তাই বাইরের আচার আমাদের ভাগ্যে জুটবে না। আমরা বরং ঘরের আচার খেয়েই সন্তুষ্ট থাকি।”

চলবে…………………….🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here