সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-৩

0
1364

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৩

দরজায় করাঘাতের শব্দে ঘুম ছুটে গেল এরেনের। সতর্ক হয়ে দ্রুত উঠে বসল সে। ভাবল হয়তো গতরাতের ছেলেটা ডাকতে এসেছে। কিন্তু সে তো বলেছিল ডাকতে হবে না। তবু এল! ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখল সকাল ছয়টা বাজে। এরেন পাটির ওপাশে তাকাতেই দেখল ইলোরা গুটিসুটি মেরে আরামে ঘুমিয়ে আছে। ওপাশ থেকে কেউ দরজায় করাঘাত করেই চলেছে। এরেন অবাক হওয়ার সাথে সাথে কিছুটা বিরক্তও হলো। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে দরজার কাছে এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই সে অবাক। দরজার সামনে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে চারজন বয়স্ক আর তিনজন মধ্যবয়স্ক। সবার পরনে পাজামা-পাঞ্জাবী আর মাথায় টুপি। লোকগুলোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তারা সবাই বেশ রেগে আছেন। সবার মুখের ভাব শক্তপোক্ত। এরেন কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে নরম কন্ঠে প্রশ্ন করল,“আপনারা কারা?”

এরেনের কথা শেষ হতেই একজন বয়স্ক লোক কড়া গলায় বলল,“এই প্রশ্ন তো আমরা তোমাদের করতে এসেছি। আমরা এই এলাকারই মানুষ। তোমরা কারা?”

এরেন সোজাসুজি জবাব দিলো,“আমরা ঢাকার মানুষ। গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে আমাদের বাস নষ্ট হয়ে যায়। তারপর গাড়ি খুঁজতে খুঁজতে এই এলাকা পর্যন্ত চলে আসি। আপনাদের এলাকার কয়েকটা ছেলেই আমাদের বলে যে গাড়ি পাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। একটা ছেলে এই ঘরটায় আমাদের রাত পার করতে দিয়েছে। বাইরে খুব বেশি ঠান্ডা পড়ছিল তাই। আমরা একটু পরেই চলে যাব।”

মধ্যবয়স্ক লোকের মধ্যে একজন ঘরের ভেতরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির রেখে খুব ঠান্ডা গলায় বলল,“সবই বুঝলাম। কিন্তু তোমার সাথে ঐ মেয়েটা কে?”

লোকটার কথায় এরেন পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল ইলোরা তার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।‌ সে অবাক চোখে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এরেন বুঝতে পারল ইলোরা মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে। দরজার সামনে থেকে লোকটা আবার ঠান্ডা গলায় বলল,“কী হলো? বলো, মেয়েটা কে?”

এরেন উত্তর দিলো,“ও আমার বন্ধুর বোন।”

আরেকজন মধ্যবয়স্ক লোক বলল,“বন্ধুর বোন তোমার সাথে কী করছে?”

“আমরা এক বাসেই কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিলাম। বাস নষ্ট হওয়ায় দুজনেই বিপদে পড়ে গেছি।”

“এক বাসে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিলে না-কি একসাথে?”

“না। বাসে হঠাৎ ওর সাথে দেখা হয়েছে আমার। ও একা কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিল, তাই আমার বন্ধু আমাকে বলেছে ওর খেয়াল রাখতে।”

“আর তুমি এমন খেয়ালই রাখছো যে এক ঘরে রাত কাটাতেও দ্বিধা বোধ করোনি। সুযোগের সদ্ব্যবহার!”

বয়স্ক লোকটার মুখের এই বিশ্রী কথাটা এরেনের কানে কাঁটার মতো বিঁধল। সে চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,“হোয়াট!”

আরেকজন মধ্যবয়স্ক লোক কটাক্ষ করে বলল,“আজকালকার ছেলে-মেয়েদের তো এমনই স্বভাব ভাই। এখন আর কারোর বিয়ের প্রয়োজন হয় না। তার ওপর এরা তো আবার শহুরে বড়লোকের গোল্লায় যাওয়া ছেলে-মেয়ে।”

মুহুর্তে এরেনের মুখে প্রচন্ড রাগ এসে ভর করল। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“ভাষা ঠিক করে কথা বলুন। বয়সে বড়ো বলে যা-তা বলবেন আর আমি চুপচাপ শুনে যাব, অত বেশি ভদ্রও না আমি।”

ঠান্ডা স্বভাবের লোকটা বলে উঠল,“তুমি যে কোনো ভদ্র ছেলে নও সেটা আমরা তোমার কাজেই বুঝতে পেরেছি। নির্লজ্জের মতো কাজ করেও তোমার মুখে এত বড়ো কথা শোভা পায় না।”

এরেন রাগী গলায় বলল,“নির্লজ্জের মতো কোন কাজ করেছি আমি?”

“একটা মেয়েকে নিয়ে রাত কাটিয়েও এই সোজা কথাটা বুঝতে পারছো না বাপ?”

“ও আমার বন্ধুর বোন। আর আমরা বিপদে পড়ে এখানে এসেছি। কতবার বলব?”

একজন বয়স্ক লোক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,“ধরা পড়লে সবাই এই কথাই বলে।”

পরক্ষণেই লোকটা গলা উঁচু করে জোরে ডেকে উঠলেন,“কই গো মেয়ে? এদিকে এসো।”

ইলোরা কাঁপা কাঁপা শরীরে এক পা দু’পা করে এগিয়ে এসে এরেনের পাশে দাঁড়াল। তাকে দেখেই লোকটা আবার বলে উঠল,“দেখে তো খুব ভদ্র মেয়ে বলেই মনে হয়। এমন একটা কাজ করতে মগজে ঠেকল না একবারও?”

ইলোরা তীব্র ঘৃণা নিয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকাল, কিন্তু কোনো কথা বলতে পারল না। কেন জানি তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখের কোণে পানি এসে জমা হয়েছে। সে ছলছল চোখে এরেনের দিকে তাকাল। মেয়েটার চাহনি দেখে এরেনের খুব মায়া হলো। এবার তার মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল। সে কড়া গলায় বলল,“দেখেন চাচা। দয়া করে আর কোনো বাজে কথা বলবেন না। শুনতে খারাপ লাগছে। আপনারা যেমন ভাবছেন আমরা মোটেও তেমন না। তাই আপনারা কেন এসেছেন সেটা স্পষ্ট করে বলুন।”

ঠান্ডা স্বভাবের লোকটা বলল,“শোনো বাবা। আমার এলাকায় আমি কোনোদিনও এসব অসভ্য কাজ সহ্য করি না। আর তোমরা তো ঢাকা থেকে আমাদের এলাকায় এসে পড়েছ। শুধুমাত্র বন্ধুর বোন পরিচয়ে একটা অবিবাহিত মেয়েকে নিয়ে এক ঘরে রাত কাটানোটা শুধু আমরা কেন, কোনো মানুষই স্বাভাবিকভাবে নেবে না। তুমি যে সত্য কথা বলছো বা এই মেয়েটাকে নিয়ে তুমি পালাওনি, তারই বা কী নিশ্চয়তা আছে?”

ইলোরা হুট করে বলে উঠল,“আপনারা চাইলে আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলতে পারেন।”

একজন বয়স্ক লোক কড়া গলায় বলল,“আমরা কারো সাথে কথা বলতেও চাই না আর কিছু শুনতেও চাই না। আমরা আমাদের এলাকায় এসব অসভ্যতামি সহ্য করব না। চেয়ারম্যান সাহেব, আপনি বললে এখনই এদের বিয়ে দিয়ে দেই।”

এরেন আর ইলোরা একসাথে চমকে উঠল। এরেন চিৎকার করে বলে উঠল,“এসব কী বলছেন আপনি? আপনারা আমাদের ভুল বুঝে এত বড়ো একটা কাজ করতে চাইছেন! ও আমার বন্ধুর বোন, আর তাছাড়া আমি ওকে ঠিকভাবে চিনিও না। বিশ্বাস করুন, আমরা সত্যিই বিপদে পড়েছি। আমাদের কথা বিশ্বাস না হলে এই বাড়ির ছেলেটাকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন। ও সব জানে।”

এরেনের কথা শেষ হতেই একজন মধ্যবয়স্ক লোক উচ্চস্বরে ডেকে উঠলেন,“এই রাসেদ, হামিদ এদিকে আয় তোরা।”

লোকটার ডাক শুনেই চারটা ছেলে এসে তার পাশে দাঁড়াল। এরেন ভালোভাবে তাকাতেই দেখল এরা গতরাতের সেই ছেলেগুলো। এরেন আর ইলোরা দুজনই মনে মনে একটু স্বস্তি পেল। এবার এই ছেলেগুলোই সত্যি কথা বলতে পারবে। এরেন দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ছেলেগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,“ভাই, তোমরাই তো গতকাল রাতে আমাদের হেল্প করেছিলে। তোমরা তো সব জানো যে আমরা কত বড়ো বিপদে পড়ে এখানে এসেছি। প্লিজ ওনাদের একটু বুঝিয়ে বলো তোমরা।”

এরেনের কথায় ছেলেগুলোর মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি দেখা গেল। যে ছেলেটা গতরাতে তাদের কাচারি ঘরে থাকতে দিয়েছিল সেই ছেলেটা বলে উঠল,“আমাদের এলাকায় এসে মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করবে আর আমরা চুপচাপ দেখে যাব ভেবেছো ভাই? তোমার কুকর্ম হাতে-নাতে ধরিয়ে দিলাম। এবার ঠেলা সামলাও।”

এরেন স্পষ্ট দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখল ছেলেটার মুখে শয়তানি হাসি। এরেনের বুঝতে বাকি রইল না যে এরা ইচ্ছে করে তাদের ফাঁসিয়েছে। উপরে ভালো সেজে মনের মধ্যে এমন বদ মতলব রেখেই ওরা তাদের এই কাচারি ঘরে থাকতে দিয়েছে। আর সকাল হতেই এলাকার চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য লোকজন ডেকে এনে ভুলভাল বুঝিয়েছে। রাগে-ক্ষোভে এরেনের মুখ লাল হয়ে গেল। তেড়ে গিয়ে সে ঐ ছেলেটার জ্যাকেটের কলার চেপে ধরল। রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“তুই ইচ্ছে করে আমাদের ফাঁসিয়েছিস? উপরে ভালো সেজে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে এমন নোংরা চাল চেলেছিস? তোকে তো আমি…….।”

এরেন আরও জোরে ছেলেটার কলার চেপে ধরতেই পাশ থেকে গতরাতের তিনজন ছেলে এসে এরেনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। এরেন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে বলল,“এরা আমাদের ফাঁসিয়েছে। এখন কি আপনি সেটাই বিশ্বাস করবেন?”

চেয়ারম্যান ঠান্ডা গলায় জবাব দিলো,“আমি যা চোখে দেখেছি তা-ই বিশ্বাস করেছি। একটা অবিবাহিত মেয়েকে নিয়ে যেহেতু একঘরে রাত কাটাতে পেরেছো, সেহেতু তোমাদের দিকে আঙুল তোলাটা স্বাভাবিক। এখন তুমি যদি মেয়েটাকে বিয়ে করে নিজের স্ত্রীর পরিচয় দাও তবেই তোমরা এখান থেকে ছাড়া পাবে। নয়তো তোমাকে এলাকার ছেলেরা গণপিটুনি দিবে। এমনকি এই মেয়েটারও মুখ থাকবে না। এবার তোমরাই ঠিক করো কী করবে।”

এরেন চিৎকার করে বলল,“এসব কোন ধরণের নিয়ম? আপনি এলাকার চেয়ারম্যান হয়ে এমন অবিচার করছেন? আশ্চর্য! কিছু ভুল ধারণা থেকে দুটো জীবন নষ্ট করে দিবেন? এটা কোনো বিচার হলো?”

চেয়ারম্যান আবারও একইরকম ভঙ্গিতে বললেন,“তুমি যে এই মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিবে না তার কী গ্যারান্টি আছে?”

“আমাদের মধ্যে তেমন কোন সম্পর্ক নেই।”

“তোমাদেরকে মাত্র দশ মিনিট সময় দিলাম। মেয়েটার সাথে কথা বলে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাও। ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে গেলে সুস্থ শরীরে ফিরে যেতে পারবে। আর তা না হলে নিজেদের মান সম্মান হারাবে। এসব ঘটনা ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না।”

ইলোরা আঁতকে উঠল। এরেন হতভম্ব হয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। লোকগুলো নিজেদের মধ্যে কটুক্তি করতে করতে দরজার সামনে থেকে সরে কিছুদূর গিয়ে দাঁড়াল। ইলোরার চোখ দিয়ে এতক্ষণ অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছিল। এবার সে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে পাটির উপর বসে দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠল। এরেন অসহায় দৃষ্টিতে ইলোরার দিকে তাকাল। ধীর পায়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে ইলোরার কাছে এগিয়ে গেল। ইলোরার থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে পাটিতে বসে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। হঠাৎ ইলোরা মুখ থেকে হাত সরিয়ে ভেজা কন্ঠে বলল,“এসব নোংরা কথা কোনোভাবে আব্বুর কানে গেলে সে নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক করে বসবে। আমার জন্য কেউ মুখ দেখাতে পারবে না।”

ইলোরা আবার শব্দ করে কেঁদে উঠল। এরেনের বুকটা কেঁপে উঠল। শুধু কী ইলোরার পরিবার? তার নিজের পরিবারের সম্মানও তো ধুলায় মিশে যাবে। তাকে নিয়ে তার বাবা-মা কতো গর্ব করে। সেই বাবা মায়ের সম্মানহানি কী করে মেনে নিবে সে? খুব বাজেভাবে ফেঁসে গেছে তারা। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো রাস্তাই খোলা নেই। এরেন কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“সবই তো শুনলে। আমাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এখন তুমি কী চাও বলো। তুমি যা চাইবে তাই হবে।”

ইলোরা ক্রমাগত কেঁদেই চলেছে। কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে একটা লোক উচ্চস্বরে বলে উঠল,“অনেকক্ষণ তো হলো। এবার বেরিয়ে এসো। তাড়াতাড়ি নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাও।”

এরেন দাঁতে দাঁত চেপে হাতের মুঠি শক্ত করল। ইলোরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল,“আমাদের হাতে আর কিছুই নেই। এখন আমাদের সম্মান বাঁচাতে হলে এরা যা করতে চায় তা-ই করতে দিতে হবে। আর কোনো উপায় নেই।”

এরেনও অসহায় চোখে ইলোরার দিকে তাকাল। ইলোরা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল। এরেন কিছুটা সময় সেভাবেই চুপচাপ বসে থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। চোখ বন্ধ করে নিজেকে দমিয়ে নিয়ে বাইরে চলে গেল। তাকে দেখে একজন বয়স্ক লোক প্রশ্ন করলেন,“কী ঠিক করলে? রাজি আছো?”

এরেন একটা শুকনো ঢোক গিলে মৃদু কন্ঠে বলল,“আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন।”

উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। চেয়ারম্যান সাহেব একজন বয়স্ক লোককে উদ্দেশ্য করে বললেন,“কাজি সাহেব, চলুন। বিয়ের কাজটা সেরে ফেলি।”

এরেন বুঝতে পারল এরা আঁটঘাট বেঁধেই নেমেছে। আগে থেকেই কাজিকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। এরেনসহ সবাই কাচারি ঘরটায় ঢুকল। ছেলেগুলো কাজি সাহেবের খাতাপত্র নিয়েই অপেক্ষা করছিল। সেগুলো হাসিমুখে এগিয়ে দিল। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন হয়ে গেল। বিয়ে পড়ানো শেষ হলে চেয়ারম্যান সাহেব এরেনকে বললেন,“মেয়েটাকে স্ত্রীর সম্মান দিয়ো। আল্লাহ এই বিয়েটা তোমাদের কপালে লিখে রেখেছিলেন। তার ইশারা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না। কোন ঘটনা থেকে তোমাদের বিয়েটা হয়েছে সেসব কথা এই এলাকার বাইরে যাবে না। তাই নিশ্চিন্তে ফিরে যাও আর সুখী হও।”

উপস্থিত লোকগুলো সবাই একে একে টুকটাক কথা বলে তারপর সবাই যেমনি এসেছিল তেমনি চলে গেল। ছেলেগুলোও তাদের সাথে চলে গেল। সকালের সোনালী সূর্য ইতোমধ্যেই আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে তীব্র আলোক ছটা এসে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে উঠেছে। পাশের রাস্তা থেকে যানবাহনের হর্নের শব্দও শোনা যাচ্ছে। চারদিকে কোলাহল বেড়ে চলেছে। আর এত কোলাহলের মধ্যেও দুটো মানুষ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। নীরবতা ভেঙে হঠাৎ এরেন বলে উঠল,“কিছুক্ষণ আগে যা হয়েছে পুরোটাই একটা এক্সিডেন্ট। ওসব ভুলে যাও। ভেবে নাও কিছুই হয়নি। যা হয়েছে তাতে তোমার বা আমার কারোরই হাত নেই। এটা আমাদের দূর্ভাগ্য। পরিবারের অনুপস্থিতে বা কারো মনের অনিচ্ছায় বিয়ে হলে আমার মনে হয় সেই বিয়ের কোনো মূল্য নেই। তাই মন থেকে সবটা মুছে ফেলো। আশা করি তুমি বুঝতে পারছো আমি কী বলছি?”

এরেন প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে ইলোরার দিকে তাকাল। ইলোরা ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়ল। এরেন নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,“এখানে আর দেরি করা ঠিক হবে না। চলো তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেই।”

ইলোরা ভেজা চোখ দুটো সরু করে প্রশ্ন করল,“আপনি যাবেন না?”

এরেন শান্ত স্বরে বলল,“যা ঘটে গেল তাতে আমি তোমার সামনে থাকলে তোমার অস্বস্তি বাড়বে। তার থেকে ভালো দুজন দুজনের গন্তব্যে চলে যাই।”

ইলোরা বলল,“আমি নিজেকে সামলাতে পারি। অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পারব আমি। বরং আপনি যদি আমার সাথে না যেতে চান তাহলে তাতে এটা প্রমাণ হবে যে আপনি নিজেই অস্বস্তিতে ভুগছেন। আমি যখন একবার বলেছি আপনাকে হেল্প করব তখন আমি সেটা করবই। তাছাড়া আপনি নিজেই তো এইমাত্র বললেন যে যা হয়েছে তা নিতান্তই একটা এক্সিডেন্ট। তাহলে তো এসব এক্সিডেন্ট ভুলে গিয়ে আমরা যেভাবে চলছিলাম সেভাবেই চলতে পারি। তাই না?”

এরেন কিছুক্ষণ আপন মনে ভেবে তারপর মাথা নেড়ে বলল,“ঠিক আছে। আমি তোমার সাথে তোমার মামার বাড়ি যাচ্ছি, চলো।”

ইলোরা অম্লান হাসল। এরকম একটা পরিস্থিতিতে যেকোন মেয়েরই খুব অস্বস্তিতে পড়ার কথা। তারও যথেষ্ট অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু এরেনের কথায় সেই অস্বস্তিটা অনেকটা কেটে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়াল। দুজনই নিজেদের সব অস্বস্তি মনের মধ্যে চেপে রেখে আবার চলল গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

চলবে……………………..🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here