সূর্য ডোবার আগে পর্ব-১৩

0
3034

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-১৩
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
.

শক্ত, মোটা, সবুজরঙা তেরপল, তারই সাথে আরো কিসব মোটা জলনিরোধক মেটেরিয়াল দিয়ে বানানো তাঁবুর কাপড়, আয়তনে … ওই কাজ চালানোর মতো আর কি! ভেতরে আসবাব বলতে… একটা স্টীলের ক্যাম্পবেড, ছোট লোহার একটা টুল আর টেবিল, তাতে বেশকিছু কাগজ পত্র, ফাইল, ল্যাপটপ, চার্জার, এসব ছড়ানো। দুটি হ্যাজাক ঝুলছে, তাতেই যা আলো হয়ে আছে তাঁবুর মধ্যে!

অভিমন্যুর দেওয়া টি শার্ট আর পাজামায় চেন্জ করে বেশ কিছুক্ষন হততম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো তিন্নি, ওর ব্রেন যেন এতক্ষনে পুরো ঘটনাটা প্রসেস করা শুরু করেছে! কি গেল আজকের দিনটা! যদি আজ অভিমন্যুর বদলে অন্য কেউ আসতো ওকে রেসকিউ করতে, তবে কি হতে পারতো সেটা ভেবেই বুকের রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছিল তিন্নির! অথবা, যদি ওই চা দোকানী আর্মি চেকপয়েন্টে খবর না দিতো? খারাপ ভাবনাগুলো যত চাড়া দিয়ে বেড়ে উঠতে লাগলো মনের মধ্যে, কষ্টমাখানো একটা রাগও ছড়িয়ে যেতে লাগলো তিন্নির সারা শরীরে। সায়করা কেউ ওর খবর অবধি করলো না এটা ভেবেই খুব অবাক লাগছিলো তিন্নির, এতোটাই ইরেস্পন্সিবল? “এদের” সাথে ঘুরতে আসার জন্য ও মা’র ওপর অভিমান করছিলো? আজ রাতে তিন্নির ফোন না পেয়ে মা নিশ্চই খুব চিন্তা করবে! বাবাকে দোষ দেবে! সব তিন্নির জেদের জন্য – ভালো করে কিছু না জেনে, খোঁজখবর না নিয়ে আধচেনা কিছু “বন্ধু” নামক কলিগের সাথে ঘুরতে আসার ফল। নাকে কানে মুলছে তিন্নি আর যদি কোনোদিন একা একা বেড়াতে আসার কথাও মুখে আনে!!! কি কুক্ষনেই না বন্ধুদের সাথে ঘুরতে আসার নর্থ বেঙ্গল আসার জেদ করেছিল তিন্নি!

“না এলে এতো কিছু হতোই না”

– কথাটা মনে হতে সাথে সাথেই সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো ওর।

.

.

.

.

~ না এলে যে অভিমন্যুর সাথে দেখা হতো না?!!!!

ভাগ্য ওর সাথে এ কি সর্বনেশে খেলায় মেতেছে? বার বার দুইবার? কো-ইন্সিডেন্স? যে বিপদে তিন্নিকে বাঁচানোর কেউ ছিল না, সেই বিপদের সময়গুলোতেই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে কেন বারে বারে অভিমন্যু এগিয়ে আসে ওকে উদ্ধার করতে? গত দুই বছরে এই প্রথম পরপর দুই দিন ওর ব্ল্যাকআউট হয়ে গেলো, পরপর দুইদিনই ও নিজেকে আবিষ্কার করলো অভিমন্যুর কোলে – ডেস্টিনির ইশারায়? আজকে ট্রাকে করে ফেরার সময় অভিমন্যুকে ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃতভাবে যতবার স্পর্শ করেছে তিন্নি, বুকের রক্ত ছলকে উঠেছে ওর। যতবার অভিমন্যু ওর চোখের দিকে তাকিয়েছে, নিশ্বাস নিতে ভুলে যাচ্ছিলো তিন্নি! কেন?

নিজের মনকেই প্রশ্ন করলো তিন্নি! আচ্ছা, অভিমন্যুরও কি একই ফিলিংস হচ্ছে? কারণে-অকারণে ওকে ধরে ফেলছে, কোলে তুলে নিচ্ছে, অভিমন্যুর উষ্ণ নিশ্বাস, ওর হাত ধরে থাকা বারবার …… যদিও কোলে নেওয়ার কথাটা মনে হতেই একইসাথে খুব লজ্জা আর অস্বস্তি হলো তিন্নির। ও কি “বাচ্চা” নাকি যে কোলে করে গাড়ি থেকে নামাতে হয়? সবাই কেমন হাঁ হয়ে তাকিয়েছিলো অভিমন্যুও কি দেখে নি? আবার… এমন নয় তো, অভিমন্যু সত্যি ওকে “বাচ্চা মেয়ে” ভাবছে? হয়তো ….. অভিমন্যুর মনে তিন্নির মতো অতি সাধারণ একটা মেয়ের জন্য কোনো জায়গাই নেই, সেইজন্যই হয়তো ওর নামটুকু জানার প্রয়োজন বোধ করে নি? শব্দের চেয়েও দ্রুতগামী হয়ে একের পর এক প্রশ্ন আর ভাবনারা তিন্নির মাথায় যেন ছোটাছুটি ধাক্কাধাক্কি লাগিয়ে দিয়েছিল, পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল ওর হৃৎপিন্ডের গতিবেগও! কিন্তু শেষের কথাটা মনে হতেই ফুটো বেলুনের মতো তিন্নির বুকের ভেতরটা আবার চুপসে গেলো। অভিমন্যুর স্বাভাবিক সৌজন্যবোধকেই ও অন্যকিছু ভেবে বসছে না তো? কথায় কথায় অভিমন্যু কেমন যেন শব্দের ছোবল আর বাক্যের হুল ফোটায়! যেন বিদ্রুপ করছে ওকে, যেন তিন্নি ওর সমকক্ষ হওয়া তো দুর, সমমননও নয়! ধমক দিয়ে কথা বলা, তির্যক মন্তব্য…. অভিমন্যুর মনে কি তিন্নির জন্য কোনো অনভুতিই নেই? সবটাই কি একতরফা? ওর কল্পনামাত্র?

.
.
.
এক ঘন্টার মতো হয়ে গেছে, তিন্নি একা একা টেন্টে বসে।অভিমন্যু তো এখনো আসছে না…!!. কি করবো কি করবো ভাবতে ভাবতে ট্যাবটা খুলে বসলো তিন্নি। বেড়াতে আসার আগে শুভর ট্যাবটায় অনেকগুলো কবিতা সংকলন, উপন্যাস সমগ্র পিডিএফ ফরম্যাটে সেভ করে নিয়ে এসেছিলো ট্রেনে পড়ার জন্য, তারই একটা খুললো – “সংকলিত জীবনানন্দ দাশ”। জীবনান্দের কবিতা পড়তে পড়তে সব মনখারাপ, চিন্তা দূর হয়ে যায় তিন্নির, আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। প্রযুক্তির কল্যানে কর্মব্যস্ত আধুনিক পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন দেশের দুর এক দুর্গম সীমান্তে ইলেকট্রিক বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়েছিল তিন্নি! ঘন্টাখানেক পর নিজের টেন্টে ঢুকতে গিয়ে দরজার কাছে পা আটকে গেলো অভিমন্যুর।

প্রবেশপথের দিকে মুখ করে অভিমন্যুর ক্যাম্পবেডের ওপর ওরই টিশার্ট-ট্রাউজারে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে তিন্নি।এলোমেলো কালো চুল ছড়িয়ে ওর মুখের আশেপাশে, সামনে খোলা ট্যাব। বাইরে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আর তাঁবুর ভেতরে হ্যাজাকের হলদে আলোয় বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে থাকা তিন্নি…. হালকা একটা মুগ্ধতা ছুঁয়ে যাচ্ছিলো অভিমন্যুর মন, হয়তো নিজের জামাকাপড়ে তিন্নিকে দেখেই। বেশ কিছুক্ষন নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থেকে দৃশ্যটা যেন মনের মধ্যে এঁকে নিলো অভিমন্যু, তারপর গলা ঝেড়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো ….. গম্ভীর গলা শুনে চমকে উঠে বসলো তিন্নি। কখন যে অভিমন্যু টেন্টে ফিরে এসেছে ও খেয়ালই করে নি।
হাতে দুটো খাবারের প্লেট নিয়ে হাসি মুখে অভিমন্যু বললো — “কি পড়া হচ্ছে শুনি?”

বিব্রত হয়ে চোখ নামিয়ে নিলো তিন্নি –“জীবনানন্দের কবিতা।”

— বাহ্ বা! আপনার তো অনেক গুণ। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে জব করেও সাহিত্য চর্চা … আজকালকার দিনে দেখাই যায় না।

আবার সেই তির্যক হুল ফোটানো কথা! ক্ষুব্ধস্বরে বলতে বাধ্য হলো তিন্নি — ব্যঙ্গ করছেন?

যেন খুব হতাশ হয়েছে এমন ভাবে অভিমন্যু বললো
— প্রশংসা করলেও দোষ? ম্যাডাম আমার সোজা কথাকেও আপনার ব্যাঁকা মনে হয়, কি করতে পারি বলুন?

এতক্ষনে মুখ তুলে তিন্নি দেখলো অভিমন্যুর চোখ ভর্তি হাসি, মুখেও হালকা একটা হাসির আভাস। হেসে ফেললো ও ‘ও। এগিয়ে এসে খাবারের প্লেট দুটো সামনের টেবিলে রাখলো অভিমন্যু — খেয়ে নেবেন আসুন। ঠান্ডা হয়ে যাবে।

এনামেলের থালায় মোটা মোটা আটার রুটি আর সবজি মেশানো ডাল, ব্যস। চুপচাপ থালাটা টেনে খেতে শুরু করলো তিন্নি, এরকম মোটা রুটি ও জীবনে খায় নি! অনভ্যাসের জেরে প্রথম গ্রাসেই সেই রুটি সোজা গলায় আটকে জোরে বিষম খেলো তিন্নি। ক্যাপ খুলে জলের বোতলটা এগিয়ে দিতে দিতে মৃদু ধমক দিয়ে উঠলো অভিমন্যু

— আস্তে খাও। এত তাড়া কিসের?

সহসা ফ্রীজড হয়ে গেল তিন্নি। ঠিক শুনলো কানে? অভিমন্যু ওকে “তুমি” করে বলছে? অভিমন্যু নিজেও বুঝতে পেরে থমকে গেল, অপ্রস্তুতের হাসি হেসে বললো — সরি! “তুমি” বলে ফেললাম, মাফ করবেন।

থালার দিকে চোখ আটকে রেখে তাকিয়ে রুটি খুঁটতে খুঁটতে তিন্নি আস্তে করে বললো — বয়সে আমি আপনার থেকে ছোটো, “তুমি”ই ঠিক আছে।

বেশকিছুক্ষন চুপ করে থেকে ঘন গলায় অভিমন্যু বললো
— না ম্যাডাম! সম্বোধনটা দুরত্বের, বয়সের নয়। কালকের পর আপনার সাথে আর দেখা হবে না, অচেনার এই দুরত্বটুকু থাকাই তো ভালো।

হাতের খাবারটা মুখে তোলার আগে মাঝপথেই থমকে গেল তিন্নি। কিছু কিছু সত্যি কথা কাঁটা লাগানো চাবুকের মতো সোজা বুকের ভেতরে গিয়ে আঘাত করে! একদৃষ্টিতে তিন্নির দিকে তাকিয়ে থেকে ওর মুখের অভিব্যক্তিগুলো পড়ে নিলো অভিমন্যু। মানুষ আর মানুষের মনের ভাব পোড় খাওয়া আর্মি অফিসারদের বুঝতে খুব কষ্ট হয় না। আজ বিকেলে তিন্নিকে ওই পাহাড়ি ঝুপড়ি থেকে রেসকিউ করার পর থেকে তিন্নির চোখ বারবার বলে দিচ্ছিল, অভিমন্যুর প্রতি ওর দুর্বলতা। ওর নিজেরও কি একই অনুভূতি নয়? বড় করে একটা শ্বাস ফেলে মনকে শক্ত করলো অভিমন্যু।

“ ইটস্ জাস্ট আ্যন ইনফ্যাচুয়েশন, নাথিং এলস্।”

কথার মোড় ঘোরাতে সহজ গলায় বললো
–কি ম্যাডাম? থেমে গেলেন যে? খাবার ভালো নয় জানি তাও একটু কষ্ট করে খেয়ে নিন! এখানে আমরা খাবার নষ্ট করি না।

মুখ বুজে খাওয়া শুরু করলো তিন্নি, সাথে অভিমন্যুও! একটু পর হঠাৎ মনে পড়েছে যেন, মুখ তুলে বললো — ওহ হ্যাঁ, বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আপনার হোটেলের রিসেপশনে ফোন করে দেওয়া হয়েছে যে আপনি আর্মির সেফটিতে আছেন, পুলিশে রিপোর্ট করার দরকার নেই।

— “থ্যাংক ইউ!”
অস্ফুটে ওর ঠোঁট নড়ে উঠলেও আর তাকালো না তিন্নি, একটু আগে অভিমন্যুর বলা কথাগুলোর ক্ষত শুকোয়নি এখনো!

মুখের চারপাশে চুলগুলো ছড়িয়ে থাকায় আর তাঁবুর ভেতরের স্বল্প হ্যাজাকের আলোয় তিন্নির নিচু হয়ে থাকা মুখ দেখতে পাচ্ছিলো না অভিমন্যু তবে একটু বুঝতে পারলো মেয়েটা আঘাত পেয়েছে ওর কথায়। মনটা একটু ভিজে এলো অভিমন্যুর। না চাইতেও কেন বারবার মেয়েটাকে আঘাত করছে ও? তাঁবুর গুমোট পরিবেশ সহজ করতে একটু হেসে বললো — শুধু “থ্যাংক ইউ” বলে কাজ চালিয়ে নিলে হবে?

আবছা গলায় বিড়বিড় করে উঠলো তিন্নি — আপনাকে দেওয়ার মতো আর কিছু তো সাধ্যি নেই আমার।

চুপ করে গেলো অভিমন্যু, অনেকক্ষন পর মুখ খুললো — যদি কিছু মনে না করেন, ডিনারের পর একটু কবিতা পড়ে শোনাবেন? অনেকদিন হয়ে গেল শুনি না এসব। অবশ্যই…. যদি আপনার আপত্তি না থাকে।

পলকে দুইচোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তিন্নির। — আপনি শুনবেন??? ডিনারের পর কেন? এখনই শোনাতে পারি।

এনামেলের থালায় শুকনো, মোটা রুটি খোঁটা থামিয়ে দুইচোখ বুজলো তিন্নি, বোধহয় প্রস্তুতি নিতে। কিছু কিছু কবিতা ওর ঠোঁটস্থ, দেখার দরকার পড়ে না। তারপর শুরু করলো

একটি নক্ষত্র আসে; তারপর একা পায়ে চ’লে
ঝাউয়ের কিনার ঘেঁষে হেমন্তের তারাভরা রাতে
সে আসবে মনে হয়; – আমার দুয়ার অন্ধকারে
কখন খুলেছে তার সপ্রতিভ হাতে!
হঠাৎ কখন সন্ধ্যা মেয়েটির হাতের আঘাতে
সকল সমুদ্র সূর্য সত্বর তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাত্রি হতে পারে
সে এসে এগিয়ে দেয়;
শিয়রে আকাশ দূর দিকে
উজ্জ্বল ও নিরুজ্জ্বল নক্ষত্র গ্রহের আলোড়নে
অঘ্রানের রাত্রি হয়;
এ-রকম হিরন্ময় রাত্রি ইতিহাস ছাড়া আর কিছু
রেখেছে কি মনে।

শেষ ট্রাম মুছে গেছে, শেষ শব্দ, কলকাতা এখন
জীবনের জগতের প্রকৃতির অন্তিম নিশীথ;
চারিদিকে ঘর বাড়ি পোড়ো-সাঁকো সমাধির ভিড়;
সে অনেক ক্লান্তি ক্ষয় অবিনশ্বর পথে ফিরে
যেন ঢের মহাসাগরের থেকে এসেছে নারীর
পুরোনো হৃদয় নব নিবিড় শরীরে।

দুইচোখ বুজে আবেগরুদ্ধ স্বরে থেমে থেমে স্পষ্ট উচ্চারণে সবটা বলে গেলো তিন্নি, একবারও আটকালো না কোথাও।

শুনশান নির্জন রুক্ষ প্রান্তর, দেশের দুর্গমতম সীমান্তে, শত্রুপক্ষের সৈন্যের মাঝে এক অস্থায়ী তাঁবুতে এক অসামান্য নারীর উদ্দাত্ত কণ্ঠে জীবনানন্দের কবিতা শুনে কি এক অব্যক্ত অনুভুতিতে বারবার কাঁটা দিয়ে উঠলো অভিমন্যুর গায়ে! শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তার প্রতিধ্বনি ঘুরে ঘুরে ফিরছিল টেন্টের গায়ে… তারপর সব নিস্তব্ধ। তিন্নির গলার রেশটুকু মিলিয়ে যাওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষন বুঁদ হয়ে বসে রইলো অভিমন্যু, অনেক্ষন পর যেন হুঁশ ফিরে এলো ওর
— অসাধারণ। এত সুন্দর আপনার গলা? কোথাও শিখেছেন?

সারা শরীর ঝনঝন করে উঠলো তিন্নির। এই প্রথম বোধহয় মন থেকে ওর কোনো প্রশংসা করলো অভিমন্যু, একরাশ লজ্জা কোথা থেকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো তিন্নিকে।অদৃশ্য সেই ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ডটা আবার ফিরে আসছে কি? মুখ নামিয়ে নিয়ে বললো
— আমার বাবা। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি করতেন আর অবসরে কবিতা চর্চা!

— ওহ্ আই আ্যম সরি। ঠিক বুঝতে পারি নি।

অবাক হয়ে চোখ তুললো তিন্নি — “সরি” কেন??

–মানে আপনার বাবা… চাকরি “করতেন” বললেন…

অমাবস্যার একাদশীর চাঁদের মতো একফালি হাসি ফুটে উঠলো তিন্নির মুখে — “ওহ্!! না না, বাবা আমাদের সাথেই আছেন, টাচউড। আসলে যখন আমি ক্লাস ইলেভেনে পড়ি, বাবার একটা স্ট্রোক হয়, অফিসে কাজ করতে করতে, তারপর কোমড়ের তলা থেকে প্যারালাইসিস। চাকরিটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সাত আট বছর হয়ে গেল বাবা এখন হুইলচেয়ারে বন্দী।”

— আর আপনার হার্টের প্রব্লেম?
তীরের মতো ধাঁ করে প্রশ্নটা ছিটকে এলো অভিমন্যুর মুখ থেকে, তিন্নি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে! কাঁধ ঝাঁকালো অভিমন্যু, ক্যাজুয়ালি বললো — “গেস করলাম। আপনার হার্টবিট নরমালের থেকে বেশি, হাত পা বেশ ঠান্ডা থাকে, যখন তখন সেন্সলেন্স হন কিন্তু দাঁতে দাঁত লাগে না তার মানে এপিলেপ্সি নেই …. হার্ট ডিসিসের হিস্ট্রিও রয়েছে ফ্যামিলিতে….”

— “ছোট্ট ফুটো আছে একটা…আমি ….. ঠিক কমফর্টেবল নই এটা নিয়ে কথা বলতে।“
অবাক ভাবটা সামলে নিয়ে অস্ফুটে বিড়বিড় করলো তিন্নি।

নরম হয়ে এলো অভিমন্যুর গলা –বাড়িতে আর কে কে আছেন?

— মা আছে, ভাই আছে। ভাই আমার থেকে দুই বছরের ছোটো। আর আছে মিসেস বিয়াঙ্কা, আমার বেড়াল।

চোখ উঁচিয়ে তাকালো অভিমন্যু –বাহ্ দারুণ নাম তো? মিসেস বিয়াঙ্কা!

নিজের ঘোরে তিন্নি বিভোর ছিল, মেজর অভিমন্যু সেনের মতো ধাঁদু গোয়েন্দা অফিসারের ইন্টারোগেশন বুঝতে পারে নি ও! একবারের জন্যও ওর মনে হয় নি, তিন্নির নিজের পরিবার নিয়ে বলা সবকটা কথা মেজর অভিমন্যু সেন জিজ্ঞেস করছেন শুধুমাত্র ক্রস ভেরিফিকেশনের জন্য! তিন্নি ক্যাম্পে আসার পরই ওর ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফরমেশন নিয়ে সকল খবর আপাতত মেজর অভিমন্যু সেনের নখদর্পনে …. ওর মেডিকেল হিস্ট্রি, ফোন নাম্বার, আধার কার্ড, প্যানকার্ডের নাম্বার অবধি এখন “র” য়ের ডেটাবেসে রেজিস্টার হয়ে রয়েছে। তিন্নির যদিও তা জানার কথা নয়! এতক্ষন কথা বলতে বলতে বেশ সহজ হয়ে গেছে তিন্নি। খোলামনেই প্রশ্ন করলো — আর আপনার বাড়িতে? সবাই চিন্তা করে না আপনি যে এভাবে সেনার চাকরিতে বাড়ি থেকে এতদুরে পড়ে থাকেন?

একনিমেষে সেনার কাঠিন্য এসে ভিড় করলো অভিমন্যুর চোখে। মেয়েটা সত্যিই সরল, অভিমন্যুর নরম ভাবে কথা বলা তিন্নির চোখে কি এফেক্ট ফেলে, সেটা না পড়ার বা না বোঝার মতো naive উনি নন।
নাহ। এর থেকে বেশি এগোতে দেওয়া উচিত নয় ব্যাপারটা, আর ঘনিষ্ঠতা নয়। নিজেকে সংযত করলো অভিমন্যু, সেনা কখনো ডিউটি ভোলে না। খাওয়ার প্লেটদুটো হাতে নিযে উঠে দাঁড়ালো –”উঠি এবার, রাত হলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে আপনার, বিশ্রাম নিন।“

থম মেরে গেল তিন্নি! এইতো এখনই এত সহজভাবে কথা হচ্ছিল, পলকে সব পাল্টে গেল? বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করা কি এমন অপরাধ? অব্যক্ত এক অভিমানে চোখ ভর্তি জল ছলছল করে উঠলো ওর, আর একটুও কি সাহচর্য্য পাওয়া যায় না? যন্ত্রের মতো উঠে দাঁড়িয়ে কাতর গলায় প্রায় মিনতি করলো তিন্নি — “অভিমন্যু? আর একটু বসবেন? প্লিজ?”

গম্ভীর কঠিন গলায় অভিমন্যু বললো — “না সীমন্তিনী। একদিনের আ্যক্সিডেন্টাল আলাপকে বন্ধুত্ব ভেবে ভুল করবেন না। চললাম, রাতে টেন্ট থেকে বেরোবেন না।”
.
.
.
.
He knows!
তিন্নি বুঝে গেল অভিমন্যুর কাছে ও ধরা পড়ে গেছে, ধরা পড়ে গেছে ওর দুর্বলতা। আর তারই সাথে সাথে এটাও বুঝে গেল, অভিমন্যুর মনে তিন্নির জন্য একটুও জায়গা নেই, একটুও দুর্বলতা নেই! এতক্ষনের সহজ কথোপকথন – অভিমন্যুর তরফ থেকে ছিল শুধুই শুকনো ফর্মালিটি, সহজাত কর্ত্যব্যপালন! প্রত্যাখ্যানের আঘাতে আহত চোখদুটি তুলে ধরলো তিন্নি, ওর চোখের কোণায় জল টলমল করছে, যেকোনো সময়ে উপচে পরবে। থেমে থেমে বললো — “কোনটা আ্যক্সিডেন্টাল আর কোনটা ডেস্টিনি আপনি কি করে বুঝবেন?”

কি উত্তর হয় এ প্রশ্নের? তিন্নির এই অনুভুতিগুলো অভিমন্যুর কাছে অতিরিক্ত রকমের স্পষ্ট, মিলিটারি তাঁবুর ভেতরের স্বল্প হ্যাজাকের আলোয় খোলা চুল, চোখভর্তি জল নিয়ে সতেজে সটান দাঁড়িয়ে থাকা তিন্নির চোখে চোখ রাখতে পারলেন না মেজর অভিমন্যু সেন। এখনো কি তবে ওনার পাথর হৃদয় পুরোপুরি পাথর হয়ে যায় নি? স্রোতস্বীনি নদীর মতো কুলকুল করে এখনো কি বয়ে চলে একটু হলেও মানবিকতা? বা ভালোবাসা? নিজের ওপর ভরসা হলো না অভিমন্যুর, আর যদি নিজের অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে? ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত মনকে সেনার ডিউটি আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিল সব কথার জবাব হয় না, সব প্রশ্নের উত্তর দিতে নেই।

–“আসি!”
দৃঢ় পায়ে টেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল অভিমন্যু।
.
.
.
এতক্ষন ধরে রাখা উত্তপ্ত নোনতা বৃষ্টিগুলো এইবার টপটপ করে ঝরে পড়লো তিন্নির দুইগাল বেয়ে। তবে কি মানব ঠিকই বলেছিলো, তিন্নি মৃত মাছের মতো ঠান্ডা? কেউ কোনোদিন তিন্নির কাছে আসবে না? কেউ ওকে ভালোবাসবে না?
অভিমন্যুর প্রতি ওর এই অদম্য আকর্ষণের ফল যে এমনটাই হবে তা তো জানাই ছিল! তাও কেন এত কষ্ট হচ্ছে? কেন ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরি তাকে, ছাড়বো না যতক্ষন না সে-ও মিশিয়ে নিচ্ছে আমাকে তার বুকে? কেন মনে হচ্ছে তাকে না পেলে বাঁচবো না? একদিনের আলাপে কেন এত মন পুড়ছে, কেন এত বুক জ্বলছে? এতগুলো “কেন” র ভিড়ে কাঁদতে কাঁদতে ওখানেই বসে পড়লো তিন্নি। ওর নিস্তরঙ্গ জীবনে এ কি প্রবল কালবৈশাখী এসে সবকিছু ওলোটপালোট করে দিলো! বেশ তো ছিল তিন্নি, কলকাতা-শ্রীরামপুর ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করে, অফিস নিয়ে, কোডিং করে আর কবিতা নিয়ে! ছয় মাসের সম্পর্কের পর সারা কলেজের সামনে মানব “ফ্রিজিড” বলে ওকে অপমান করে, ডাম্প করে যেতে তিন্নি একফোঁটা কাঁদে নি আর মাত্র দুদিনের আলাপে অভিমন্যুকে ভালোবেসে ওর প্রত্যাখ্যানে তিন্নি কেঁদে কুল পাচ্ছে না!

একলা টেন্টে কতক্ষন ওখানেই পড়ে পড়ে কাঁদলো তিন্নি, কেউ তার হিসেব রাখে নি। হিসেবে রাখলে হয়তো সিকিম আর বাংলার তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে এতো সমস্যা হতো না। কিন্তু চোখের জলও একসময় শেষ হয়ে যায়, সব কান্নাই থেমে যায় একদিন না একদিন। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে সাথের বালিশটা জড়িয়ে ধরে ওতে মিশে থাকা অভিমন্যুর প্রবল পুরুষালি ঘ্রাণ নিতে নিতে ঘুমের অতলে ডুবে গেল তিন্নি।

**************************__****************************

মাঝরাতে কিসের একটা অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে গেল তিন্নির। বাইরে কি কেউ ওর টেন্টের চেন খোলার চেষ্টা করছে? তাঁবুর সাদা পর্দায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে টকটকে লালচে হলদে মেশানো একজোড়া চোখ ওরই দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, জ্বলজ্বল করছে। বুনো জান্তব গন্ধে টেন্টের চারপাশ ভরে গেছে, লোমশ চারপেয়ে প্রাণীটির ঘন নিঃশ্বাস স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে এবার, যেকোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়বে। গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল তিন্নির, নড়াচড়া ভুলে গেছে, কম্বলের তলায় কুলকুল করে শীতল ঘাম দিচ্ছে। একটু একটু করে জন্তুটার ছায়াটা স্পষ্ট হচ্ছে তাঁবুর গায়ে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে তিন্নি পড়ে রইলো অসাড় হয়ে, শেষে কি নেকড়ের হাতে প্রাণ দিতে হবে?

দুর থেকে একটা গুলির আওয়াজ হলো, তারপরই কয়েকজোড়া ছুটন্ত পদশব্দ এগিয়ে এলো তিন্নির টেন্টের কাছে। উঠে বসার আর শক্তিটুকু নেই তিন্নির মধ্যে, কাটা কলাগাছের মতো একই ভাবে পড়ে রইলো ও। চোখের সামনে সব অন্ধকার, অভিমন্যুর গলা স্পষ্ট হলো এবার — আপনি ঠিক আছেন? এই যে ম্যাডাম? আমি অভিমন্যু। আপনি ঠিক আছেন?

মুখ খুলতে পারছে না তিন্নি, সারা শরীর অসাড়। গত আটচল্লিশ ঘন্টা ধরে একের পর এক যা যা হয়ে চলেছে ওর সাথে, ওর মাথা আর রেসপন্স করছে না এবার। সামনের অস্পষ্ট মুখটার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তিন্নি যেন বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি সব হারিয়ে ফেলেছে ও।

ক্যাম্পবেডের পাশে বসে কম্বলের ভেতর থেকে তিন্নিকে বের করে আনলো অভিমন্যু, দুহাতে ওর বরফের মতো ঠান্ডা শরীরটা বসিয়ে দিয়ে ধরে জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তিন্নিকে ওর নাম ধরে সম্বোধন করলো
— সীমন্তিনী? আপনি ঠিক আছেন?

আর তখনই যেন সম্বিৎ ফিরে এলো তিন্নির। অভিমন্যুর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে উচ্ছসিত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো — প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না অভিমন্যু। এভাবে আর একলা রেখে যাবেন না প্লিজ।

পাগলের মতো দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে অভিমন্যুর চওড়া কাঁধে মুখ লুকিয়ে অসহায়ের মতো আকুল হয়ে কাঁদতে লাগলো তিন্নি। তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করতে করতে অভিমন্যু বললো
— ঠিক আছে! আপনি ঘুমোন, কিচ্ছু হবে না আর। আমি আছি এখানে, সারারাত।

দুজনের কেউ আর একটাও কথা বললো না, অভিমন্যুকে জড়িয়ে ধরে শুধু ফুঁপিয়ে কেঁদে চললো তিন্নি আর একই ভাবে ওর মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলো অভিমন্যু ঠিক যেভাবে কোনো বাচ্চাকে কেউ শান্ত করে, ঘুম পাড়ায়। অনেকক্ষন পর যখন তিন্নির ফোঁপানো বন্ধ হলো, আলতো করে তিন্নিকে নিজের থেকে আলাদা করলো অভিমন্যু। খুব সাবধানে কাঁচের পুতুলের মতো যত্ন করে ধীরে ধীরে ওকে শুইয়ে দিতে গেল …….. একটা শব্দও উচ্চারন না করে, প্রবল প্রতিবাদে মাথা নেড়ে আবারও ওকে জড়িয়ে ধরে রইলো তিন্নি। হাল ছেড়ে দিয়ে সারারাত ওভাবেই বিছানার পাশে বসে থাকলো অভিমন্যু, আর তিন্নি ওর বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে লাগলো। তিন্নির প্রতিটা অশ্রুকণা ভিজিয়ে দিচ্ছিল অভিমন্যুর জামা, পুড়িয়ে দিচ্ছিল ওর বুকের ভেতরটা। ওরা দুজনেই জানে এ চোখের জলের কারণ অন্য। এ চোখের জল কালকের আসন্ন বিচ্ছেদের কান্না। আর হয়তো কোনোদিন ওরা মিলবে না, আর কোনোদিন ওদের দেখা হবে না। আর কোনোদিন তিন্নি ওকে জড়িয়ে ধরবে না।

এত চোখের জলও মানুষের হয়? অভিমন্যুকে জড়িয়ে ধরে সব কান্না আজ রাতেই কেঁদে নিচ্ছিলো তিন্নি, কাল থেকে তো শুধুই একার কান্না।

**************************__****************************

ভোরের আলো তখন ফুটি ফুটি করছে, শ্রান্ত হয়ে তিন্নি এমনিই ঘুমিয়ে পড়েছে, খুব সাবধানে অভিমন্যু ওকে নিজের থেকে সরিয়ে শুইয়ে দিলো ক্যাম্পবেডের ওপর। মুখের ওপর এসে পড়া রেশমের মতো নরম চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে, যেন মনের মধ্যে এঁকে নিলো তিন্নির ছবি, তারপর খুব সাবধানে মেজর অভিমন্যু সেনের ঠোঁট স্পর্শ করলো তিন্নির কপাল। মাত্র তিন সেকেন্ড। নিজের সবটুকু ভালোবাসা ওই একটি চুম্বনের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করে নিজেকে সরিয়ে নিলেন মেজর। ঘুমের মধ্যেই আরো এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো তিন্নির চোখের কোণ থেকে।
.
.
.
কি এক অন্ধ আকর্ষণে বার বার ভাগ্য মিলিয়ে দিচ্ছে ওদের দুজনকে! ভাগ্য না কোইন্সিডেন্স?? যুক্তিবাদী মন বলে এক কথা আর অভিমন্যুর পাথর কঠিন শরীরের ভেতর লুকিয়ে থাকা নরম মনটা বলছে আরেক কথা! শুধুই আ্যট্রাকশন? পর পর দুদিন অক্সিডেন্টাল দেখা না হলে কি অভিমন্যুর মনে সীমন্তিনী এভাবে জায়গা করে নিতে পারতো? কাল রাতে সীমন্তিনী যখন ওর বুকের ওপর মাথা রেখে আকুল হয়ে কেঁদে যাচ্ছিলো, অভিমন্যুরও যে বড্ডো ইচ্ছে করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরে, ওর পাতলা গোলাপি ঠোঁটদুটো নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে — একতরফা নয়, তোমার মনের আগুনের ছোঁয়ায় আমিও জ্বলছি অনির্বাণ! পারে নি বলতে, নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে নি অভিমন্যু! উল্টে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, বার বার কথার আঘাতে সীমন্তিনিকে জর্জরিত করেছে, যাতে সীমন্তিনী ওর প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে। সীমন্তিনীর ব্যাথাতুর চোখ ভর্তি জল টলমল দেখে ,ওর বুকটাও কি ফেটে চৌচির হয়ে যায় যায় নি? তাও নিজেকে সরিয়ে এনেছে অভিমন্য। সীমন্তিনী অনেক দুর্বল, মানসিক ভাবে, শারীরিক ভাবে – মেজর অভিমন্যু সেনের কঠিন জীবনের সাথে ও কোনোদিন মানাতে পারবে না, সারাজীবন দগ্ধে মরবে! নিজের হাতে সীমন্তিনীর জীবন নষ্ট করতে পারে না অভিমন্যু! জোরে জোরে বললো –

“ইটস জাস্ট এন ইনফ্যাচুয়েশন, ইট উইল পাস। ওয়ানস্ শী ইজ আউট অফ সাইট, শী উইল বি আউট অফ মাইন্ড টু।“

**************************__****************************

ক্রমশঃ
(রেশটুকু থেকে যাক। আজ রাত আটটায় একটি বিশেষ পোস্ট করবো পেজে, সবাই পড়বেন প্লিজ🙏❤️)

© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।

বিঃদ্র – আপনাদের যারা এখনো “মন, তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম -Mon tomake chhunye dilam – লেখনী সুমন্দ্রা মিত্র ” পেজটি ফলো করেননি, তাদের সকলকে একান্ত বিনীত অনুরোধ মেনপেজটি লাইক ও ফলো করুনএবং পাশে গিয়ে SEE FIRST অপশনে ক্লিক করে রাখুন, পেজে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। এছাড়াও Facebook Storyতে চোখ রাখতে পারেন, মেনপেজে কিছু পোস্ট হলে এই পেজের storyতেও লিঙ্ক দেওয়া থাকে। আপনাদের বন্ধু ও পরিবারবর্গদেরও Invite করুন মেনপেজটি লাইক ও ফলো করতে। লিংক 👇
https://www.facebook.com/মন-তোমাকে-ছুঁয়ে-দিলাম-লেখনী-সুমন্দ্রা-মিত্র-110448980674312/

***********************__******************************

সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here