সূর্য ডোবার আগে পর্ব-১৪

0
2153

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-১৪
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
.
গাড়ির ইন্জিনের শব্দ, ভারী জুতোর আওয়াজ, হইহই হাসি, নানান ভাষায় অস্পষ্ট কথা, কাঠের উনুনের ধোঁয়ার গন্ধ ….. এতসব কিছুর মধ্যেও বারবার চোখের সামনে ঘুরে ফিরে আসছে সেই গাঢ় বাদামী চোখ, সেই চওড়া কপাল, খাড়া নাক! সেই চিজেল কাট পাথর কঠিন বুক, তার উষ্ণ নিঃশ্বাষে পুড়ে যাচ্ছে মুখ….!

ঘুমের ঘোর কেটে গিয়ে ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলো তিন্নি! সকাল হয়ে গেছে? অভিমন্যু কোথায়?

 

ঘুম চোখে প্রথমে তো তিন্নি বুঝতেই পারছিলো না ও কোথায়!! তারওপর সারা রাতের কান্নায় মাথাটা জগদ্দল পাথরের মতো ভার হয়ে রয়েছে। জংলা সবুজ রঙা শক্ত মোটা তেরপলের তাঁবুর পর্দা দিয়ে দিনের আবছা আলো ভেতরে ঢুকছে, সেইদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটু একটু করে কাল রাতের ঘটনাবলি ভাসা ভাসা ভাবে মনে পড়লো তিন্নির। অভিমন্যু টেন্টে নেই, কখন চলে গেছে কে জানে? অভিমন্যুর কথা মনে হতেই একটা অদৃশ্য চড় সপাটে এসে পড়লো ওর গালে, তারপরই একরাশ লজ্জা আর কুণ্ঠার তলে ডুবে গেলো তিন্নি।

“ছিঃ! ছিঃ! এ কি করে বসলো ও কাল রাতে? কতক্ষন জড়িয়ে ধরে রেখেছিল ও অভিমন্যুকে? কতক্ষন কেঁদেছিল ও? এভাবে নিজেকে খেলো করে তুললো একজন অপরিচিত লোকের কাছে,….. এত সহজে?” কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো তিন্নির, মনে মনে নিজেকে চার পাঁচটা চড় লাথি মেরেও শান্তি পেলো না! সেই প্রথম দেখার দিন থেকে কাল রাত অবধি, অভিমন্যুর সামনে একবার নয়, বারবার… নিজের কি দারুণ ইম্প্রেশনটাই না বানালো তিন্নি! অজ্ঞান হওয়া অবধি ঠিক ছিল তাই বলে সারা রাত ওভাবে জড়িয়ে ধরে রেখে কান্না?! ভগবান কি “সেল্ফ কন্ট্রোল” বলে একটুও কিছু দেন নি ওর মধ্যে? নাকি অভিমন্যু ওর কাছে এলেই তিন্নির সব সংযম এমন কর্পুরের মতো উবে যায়? না জানি অভিমন্যু কি না কি ভাবছে ওর চরিত্র সম্বন্ধে! আর কি করে তিন্নি মুখ দেখাবে আজ অভিমন্যুর সামনে?

উটপাখির মতো দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে লোহার ক্যাম্পবেডেই বসে রইলো তিন্নি, অনেকক্ষন। মনে মনে ভগবানের কাছে আকুল প্রার্থনা করতে লাগলো ক্রেতাযুগের মতো আরএকবার কি পৃথিবী ফাঁক হয়ে ওকে এই তাঁবুসমেত গিলে নিতে পারে না??

.

.

কিন্তু এটা কলিযুগ! ভগবান আজকাল বোধহয় সবসময় ভক্তের সব আর্তি কানে নেন না! অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ভাঙাচোড়া মন নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তিন্নি। যা হবার তা তো হয়েই গেছে! এখন আর কেঁদে কি হবে? অভিমন্যুর সামনাসামনি তো হতে হবেই~ এখন হোক বা এক ঘন্টা পর।

মেঘলা সকাল, আকাশের মুখ গোমড়া, যে জায়গায় ওরা আছে, তার সামনে পিছন দুদিকেই পাথুরে পাহাড়। তার সাথে ঝাপসা কুয়াশা। ভেজা ভেজা একটা হাওয়া দিচ্ছে, ভালোই ঠান্ডা এখানে। বাইরে লোকজনের হাঁটা চলা, কথা বলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কেউ বোধহয় উনুন জ্বালিয়েছে, ধোঁয়ার গন্ধ ভেসে আসছে! চোখ জ্বালা করছে কাঁচা কয়লার ধোঁয়ায়। কাল সারারাত কেঁদে মুখ চোখ ফুলে গেছে, মুখের ভেতরটাও শুকিয়ে কাঠ… একটু জল দিলে ভালো হতো – ভাবলো তিন্নি। বাইরে বেশ শীত শীত করছে। অভিমন্যুরও দেখা নাই! অগত্যা অভিমন্যুর ইউনিফর্মের মোটা শার্টটা গায়ে জড়িয়ে অনেকটা অস্বস্তি নিয়েই টেন্টের বাইরে কিন্তু কিন্তু করে মুখ বাড়ালো তিন্নি। এপাশ ওপাশ তাকিয়ে সামনের দিকে একজন প্রায় কিশোর এক সেপাহীকে দেখতে পেল, তাকেই হাত নেড়ে ডাকলো — “হাই! ভাইয়া ইঁয়াহা পানি মিলেগা কহিঁ?”

সাত সকালে মেজর অভিমন্যু স্যারের তাঁবুতে ওঁনারই জামাকাপড় পড়ে এক অল্পবয়সী সুন্দরী মেয়ে, তায় আবার এমন মিষ্টি রিনরিনে গলার স্বর! ভুত দেখার মতো চমকে গেল সেপাইটা, আঙুল দিয়ে একটু দুরে রাখা জলের ড্রামটা দেখিয়ে দিয়ে যে পথ দিয়ে আসছিলো, সে পথেই প্রায় দৌড়ে ফিরে গেল বেচারা।

অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তিন্নি! “কি অদ্ভুত রে বাবা! জীবনে কি মেয়ে দেখে নি নাকি?”

অভিমন্যুর ওভারসাইজড জামাকাপড়ে জড়ানো জড়োসড়ো পায়ে তিন্নি এগোলো জলের ড্রামের দিকে। মেজর অভিমন্যু সেনের পার্সোনাল তাঁবু থেকে তিন্নিকে বেরোতে দেখেই হঠাৎ করে যেন থমকে গেল বাইরেটা। তারপরই গুনগুন করে একটা অস্পষ্ট আওয়াজ ক্রমশ কোলাহলে পরিণত হলো। না তাকিয়েও বুঝতে পারছিল তিন্নি আশেপাশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সবকটা চোখ ওরই দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে – যেন সার্কাস চলছে! বোলতার গুনগুনের মতো আলোচনার গুঞ্জনের কারণটাও যে তিন্নিই, সেটাও স্পষ্ট। লজ্জায় অস্বস্তিতে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল তিন্নির তাও ক্লান্ত অনভ্যস্ত পায়ে কাদামাটি পেরিয়ে এগিয়ে চললো, মাটির দিকে চোখ আটকে রেখে। মনে মনে চোখ কান বন্ধ করে নিয়ে ড্রামের পাশে রাখা মগ দিয়ে বরফ শীতল জলের ঝাপটা দিতে শুরু করেছে চোখে – মুখে, সবে দু ঝাপটা জল দিতে না দিতেই আচমকা ওর হাত থেকে মগটা নিয়ে নিলো একজন! যে অবস্থায় ছিল, সেভাবেই ফ্রীজড হয়ে গেল তিন্নি, না তাকিয়েও বুঝে গেল “সে” কে। তিন্নির আশেপাশে “সে” এলেই যে এক অদৃশ্য চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরী হয়ে যায়, তার রেডিয়েশন কাঁপিয়ে দেয় তিন্নির সমগ্র সত্ত্বাকে!আবারও সারা শরীরের সব গরম রক্ত একছুটে মুখে এসে জমা হলো ওর। মনে মনে আর একবার কেঁপে উঠলো তিন্নি!

“এইবার শুরু হবে ধমক দেওয়া”!

ছিটকে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসটা গোপন করে নিল তিন্নি। আরেকপ্রস্থ বকা খাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলো, প্রত্যাশিত ভারী স্বর তিন্নিকে অবাক করে দিয়ে অপেক্ষাকৃত নরম গলায় বললো — “কি হলো? থেমে গেলেন যে?”

ঠোঁট কামড়ালো তিন্নি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই যে একরাশ লজ্জা আর কুন্ঠাবোধ ওকে জড়িয়ে ধরেছিল, ম্যালেরিয়ার জ্বরের মতো গুটিগুটি পায়ে সেটা ফিরে এসেছে আবার। মুখ তুলে তাকানোর আর সাহস হলো না তিন্নির, যদি ওর মনের দুর্বলতা ধরা পরে যায়? আবারও?

কোনরকমে শুকনো গলায় বললো — “আমার হয়ে গেছে।”

— “টেন্টে যান, আমি আসছি।”

 

কি ছিল সেই স্বরে? আদেশ? আশ্বাস? সান্তণা?? ক্ষুব্ধতা? চাপা রাগ?ঠিক ধরতে পারলো না তিন্নি! আসন্ন ঝড়ের আশংকায় মন শক্ত করে তিন্নি ফিরে এলো পায়ে পায়ে, অভিমন্যুর টেন্টে! বুকের ভেতরটা দুরদুর করছিলো ওর! তলপেটে কেমন একটা ব্যাথা পাক খেয়ে খেয়ে সারা শরীরে যেন ছড়িয়ে পড়ছে! অনেক কাল আগে স্কুলের মৌখিক পরীক্ষার আগে এমন করতো ওর! কাল রাতের অমন নির্লজ্জতার পর আজ সকালে অভিমন্যুর মুখোমুখি হওয়াটাও কি আর একটা পরীক্ষা নয়? কি জানি কি হবে?

 

মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ভারী জুতোর মশমশ শব্দে ভিতরে এলো অভিমন্যুও।পরনে আর্মির সবুজ ইউনিফর্ম! তিন্নির খুব কাছে ঠিক সামনাসামনি দাঁড়িয়ে হিমশীতল কন্ঠে বললো — “বারণ করেছিলাম না টেন্ট থেকে বেরোবেন না?”

আমূল কেঁপে উঠলো তিন্নি। অভিমন্যুর ভয়ে না, অভিমন্যুর রাগের ভয়ে! ক্ষীনগলায় বললো — “আপনি ছিলেন না… একটু জল দরকার ছিল…”

— “অপেক্ষা করতে পারতেন। সবেতেই আপনার এত তাড়া কেন?”

এইবার রাগে অভিমানে চোখে জল চলে এলো তিন্নির। হাই -হ্যালো-গুডমর্নিং কিছু নেই, সকাল সকাল, আবারও ধমক? কি ভেবেছে কি, অভিমন্যু? তিন্নির সাথে যখনতখন যেমনখুশি ভাবে কথা বলা যাবে আর ও চুপচাপ শুনে যাবে? মুখ তুলে সরাসরি অভিমন্যুর দিকে তাকিয়ে সমান তেজে পাল্টা প্রশ্ন করলো তিন্নি — “আপনিই বা সবেতেই আমায় এত বকেন কেন?”

আচমকা তিন্নির কাছ থেকে এরকম কথার ঝাঁঝ আশা করে নি অভিমন্যু। একটু হকচকিয়ে গিয়ে বললো — “আমি — আপনাকে — বকি?”

তিন্নি দমলো না। আগের মতোই সমান তেজে বলে উঠলো

— “তা নয় তো কি? সবসময় “এটা করবেন না”, “ওটা করবেন না”, “এখানে বেরোবেন না” “ওখানে যাবেন না”, “তাড়াহুড়ো করবেন না”, “তাড়াতাড়ি খাবেন না”, নরম ভাবেও তো বলা যায়! কাল থেকে সমানে আমাকে বকে যাচ্ছেন, আমি কি “বাচ্চা”?

— “আপনি বাচ্চা নন?”

প্রেম-ভালোবাসা-লজ্জা-ভয় সব মাথায় উঠলো। একটু আগের অস্বস্তিকর কুন্ঠায় জর্জরিত তিন্নি সব বেমালুম ভুলে গিয়ে রাগে চিড়বিড়িয়ে উঠলো — “মা-আ-মানে?”

শরতের নির্মল আকাশে একফালি রোদের মতো মিচকে হাসি ফুটলো অভিমন্যুর মুখে, যেন তিন্নির রাগ নয় স্ট্যান্ডআপ কমেডি চলছে এমনি হেসে বললো — “বাচ্চা মেয়েরা রথের মেলায় হারিয়ে যায় আর আপনি, পাহাড়ে বেড়াতে এসে!”

— আপ-নি একটা …….।

পরের ঘটনাগুলো কয়েক মিলিসেকেন্ডে ঘটে গেল পরপর। রাগে উত্তেজনায় অভিমন্যুর দিকে পেছন ফিরতে গিয়ে জুতোর কাদায় পা পিছলে তিন্নি হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ার আগেই হাসতে হাসতে আর্মি রিফ্লেক্সে ওর বলিষ্ঠ শক্ত হাতে তিন্নিকে ধরে ফেললো অভিমন্যু। পার্থক্য এটাই, অন্যান্যবারের মতো তিন্নিকে সাথে সাথে ছেড়ে না দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে নিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো।ওর হাত তখনো তিন্নিকে ধরে, মুখে লেগে আছে প্রশয়ের হাসি, শান্ত গলায় বললো —- “এই যেমন বাচ্চা মেয়েরা রেগে গেলে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায়! কিন্তু আপনি থামলেন কেন? বলুন? আমি কি?”

.

.

.

.

আর একবার কি হৃৎপিন্ডটা লাফিয়ে গলার কাছে চলে এল? মুখের কথা হারিয়ে গেল তিন্নি, হাঁ করে তাকিয়ে রইলো অভিমন্যুর দিকে। নিজের দেহের সবটুকু ভার ছেড়ে দিয়েছে অভিমন্যুর হাতে। অদৃশ্য সেই ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফ্লিডটার প্রখর তেজস্ক্রিয়তায় এবার বোধহয় তাঁবুর মধ্যে ছোটখাটো একটা বিস্ফোরন হয়ে যাবে। আ্যড্রিন্যালিনের শিরশিরানি শিরায় শিরায়। প্রতিটি রোমকূপ খাড়া, প্রতিটি রক্তকণিকা নেচে চলেছে নতুন নতুন ছন্দে। কালকের সারারাতের কান্নার সাইডএফেক্টে তিন্নির মুখ চোখ একটু ফোলা, গোলাপি হয়ে আছে। সদ্যধৌত মুখে তখনও দু তিন ফোঁটা জলবিন্দু লেগে আছে ভোরের শিশিরের মতো, কপালে লেগে দু একটি ভেজা চুলের রাশি, থরথর করে কাঁপছে ওর ঠোঁটদুটো। চোখ ফেরাতে পারছিল না অভিমন্যু। দুজনের মুখ খুব কাছাকাছি, অভিমন্যুর গরম নিঃশ্বাসের আঁচে পুড়ে যাচ্ছে তিন্নির মুখ। হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে গেছে প্রায় দেড়গুন।সময় যেন থমকে গেছে। আবারো করে তিন্নির মনে পড়ে গেলো কাল দুপুরে মেঘার কথাটা…. “কিস করেছিস?”

মেরুদন্ড বরাবর শীতল বিদ্যুৎপ্রবাহ বয়ে যেতে অভিমন্যুর হাতের মধ্যে আরএকবার কেঁপে উঠলো তিন্নি, আর আচমকা সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সীমা লঙ্ঘন করে ফেলার অস্বস্তিতে অভিমন্যু তড়িঘড়ি তিন্নিকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিল।কিছু মুহুর্ত সব চুপচাপ, থমকে রইলো ওরা দুজনেই।এত সহজ তো নয় ওদের সম্পর্ক!! কথা খুঁজে পেল না কেউই বেশ কিছু সময়।

অভিমন্যু গলা ঝেড়ে বলার চেষ্টা করলো — আই আ্যম সরি.. অভ্যেসে হয়ে গেছে।

“অভ্যেসে” কথাটা খট করে কানে লাগলো তিন্নির, ভুরু উঁচিয়ে তাকিয়ে রইলো অভিমন্যুর দিকে, যেন পড়ে নিচ্ছে ওর সব অভিব্যক্তি। চোখ ফিরিয়ে নিল অভিমন্যু, কেমন এক অদ্ভুত গলায় বললো — আজ শরীর কেমন আছে? যেতে পারবেন?

ভ্যানিলা আইসক্রীমের মতো নরম মিষ্টি মিষ্টি যে সুখস্বপ্নটা এতক্ষন জেগে থেকেই দেখছিল তিন্নি, অভিমন্যুর প্রশ্নটায় সেই ইউটোপিয়া থেকে এক লহমায় বাস্তবের রুক্ষ কঠিন মাটিতে আছড়ে পড়লো। সব স্বপ্ন কেন পূর্ণ হয় না? মুখ ঘুরিয়ে নিল ও।সময় নিয়ে ডুকরে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাসটি গোপন করে অস্ফুটে বললো — “যেতে তো হবেই!”

কি বলবে ভেবে পেল না অভিমন্যু। প্রায় জবাবদিহি দেওয়ার মতোই বললো

— আপনি জানেন আমি নিরুপায়! এমনিতেও এই রেসকিউটা আমরা অফিসিয়াল রেকর্ডে রাখছি না। জাস্ট একটা অফলাইন রেসকিউ মিশন বলে ডিক্লেয়ার করবো। একা একজন মহিলা, আর্মির টেন্টে সারারাত…. আমাদের সমাজকে আপনি চেনেন!

চোখে বিদ্যুত ঝলসে উঠলো তিন্নির। তীব্র গলায় বলে উঠলো — কোন সমাজ? যারা ভুল নথি সাবমিট করে ট্যাক্সের পাঁচহাজার টাকা বাঁচায়? যারা নিজেরা এসি ঘরে বসে থেকে আর্মির সমালোচনা করে? ঢিল ছোঁড়ে?

— আপনিও সেই সমাজেরই অংশ সীমন্তিনী। এমনকি আমিও।

— মানি না আমি এমন সমাজ।

চুপ করে গেল অভিমন্যু। তারপর ধীরে ধীরে বললো — রাস্তা খুলে গেছে। আপনি রেডি হয়ে নিন, ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়বো।

 

হঠাৎ করে বুকের ভেতরটা যেন খালি হয়ে গেল তিন্নির, হয়তো অভিমন্যুরও। আরএকটুও কি ধরে রাখা যেত না এ সময়টুকু? ডুকরে একটা কান্না উঠে আসছে ভেতর থেকে। ছুঁচ পড়লেও তার শব্দ শোনা যাবে এমন নিশ্চুপ তাঁবুর নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে কিছুসময় পর ধীর গলায় তিন্নি বললো

— “অভিমন্যু…. কালকের রাতের জন্য আই আ্যম সরি… আসলে একের পর এক নতুন নতুন চমক আমি আর নিতে পারছিলাম না… আমার মাথা কাজ করছিলো না…. তাই”

তিন্নির কথা শেষ হওয়ার আগেই ওকে থামিয়ে দিল অভিমন্যু — ইটস ওকে। আই আন্ডারস্ট্যান্ড!

— “নো, ইটস্ নট আ্যন্ড ইউ ডোন্ট। সজোরে বলে উঠলো তিন্নি! আজ যে ওকে বলতেই হবে!

— “আমি …… বোধহয় অধিকারের বাইরেও অনেক কিছু করে ফেলেছি! সেই প্রথম দিন থেকে! আপনি হয়তো ভাবছেন আমি খুব বেহায়া, অভব্য, অসভ্য, যাচ্ছেতাই একটা মেয়ে … কিন্তু বিশ্বাস করুন অভিমন্যু…….আমি এমন নই।একের পর এক আনইস্যুয়াল ইনসিডেন্টস… আচমকা ভয় পেয়ে গিয়ে আমি হয়তো আপনাকে… “

থেমে থেমেও ভাঙা গলায় বাকি কথাগুলো আর শেষ করতে পারলো না তিন্নি! টপটপ করে নিঃশব্দ চোখের জলগুলো তাঁবুর মাটিতে পড়তে লাগলো।

সেদিকে তাকিয়ে গাঢ় গলায় অভিমন্যু বললো — “সীমন্তিনী, আপনাকে নিয়ে এরকম কোনো চিন্তা আমার মনে আসে নি, আসবেও না। যেটা হয়েছে সেটা ক্ষনিকের দুর্বলতা, প্লিজ ভুলে যান!”

নাহ! দীর্ঘশ্বাসটা আর আটকানো গেল না! কি অবলীলাক্রমে অভিমন্যু বলে দিল “ভুলে যান”! তবে কি সত্যিই অভিমন্যুর তরফ থেকে ওর জন্য কোনো দুর্বলতা নেই? এত সহজ ভুলে যাওয়া? বুকের ভেতরটা শত টুকরো হয়ে ফেটে যাচ্ছিল তিন্নির। তবে, আর না! যে ওকে চায় না তার সামনে বারে বারে আর নিজেকে ছোটো করবে না তিন্নি। দাঁতে দাঁত চিপে মন শক্ত করে নিজেকে সামলে নিলো ও। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে প্রসঙ্গ পাল্টে বললো — “কাল রাতে ওটা কি ছিল অভিমন্যু?”

— “পাহাড়ী শিয়াল। সাধারণত ওরা মানুষজনের ধারে কাছে ঘেঁষে না! হঠাৎ কাল রাতেই বা কেন এলো, জানি না!”

চিন্তাজড়ানো স্বরে স্বগতোক্তি করলো অভিমন্যু।

“ডেস্টিনি?” “কোইনসিডেন্স?”

মুখে কিছু না বললেও বুকের ভেতরটা কেমন ছমছম করে উঠলো তিন্নির। এই ট্রিপের শুরু থেকে একের পর এক কি হয়ে চলেছে?

— “আপনার জামাকাপড় শুকিয়ে গেছে ম্যাডাম, রেডি হয়ে নিন।”অন্যমনষ্কভাবে কথাগুলো বলেই টেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল অভিমন্যু।

**************************__****************************

সকাল দশটা নাগাদ সীমন্তিনিকে একটা হুড খোলা জীপে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়লো অভিমন্যু। ইউনিফর্ম আর চোখে রে ব্যানের কালো রোদচশমা পড়া অভিমন্যুকে দেখে আরএকবার যে তিন্নির হৃদপিণ্ডের রক্ত ছলকে উঠলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে তার থেকেও বেশি অবাক হয়ে যাচ্ছিলো তিন্নি এ ভেবে, কি ইস্পাত কঠিন নার্ভ অভিমন্যুর! কাল সারা রাত জেগেও এরম ভয়ঙ্কর রাস্তাতেও সাবলীলভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। বিস্ময়, শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম, ভালোলাগা, ভালোবাসা সবকিছুর মিশ্র অনুভূতিতে বুঁদ হয়ে ছিল ওর মন, খেয়াল করে নি গাড়ি চালাতে চালাতে মাঝে মাঝেই ওর দিকে তাকাচ্ছে অভিমন্যু। কি ছিল সে দৃষ্টিতে? সে কথা থাক!

 

একের পর এক পাহাড়, উপত্যকা, ছোট হ্রদ পেরিয়ে যাচ্ছে আর তিন্নির বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠছে,ভেজা হাওয়ায় আসন্ন বিচ্ছেদের মনখারাপের গন্ধ। একটাই কথা মাথার মধ্যে টিকটিক করে যাচ্ছে — আর কোনোদিনও দেখা হবে না, আর কোনোদিনও এই ক’টা ঘন্টা কাটানো সময় ফিরে আসবে না। আজকের পর সারাজীবনের মতো অভিমন্যু হারিয়ে যাবে এই বিশাল দুনিয়ায়। আর যার জন্য তিন্নির এত কষ্ট, এত চোখের জল~ সে নির্বিকার, তার কিচ্ছু যায় আসে না! পাথরের চেয়েও কঠিন তার মন! নির্নিমেষ চোখে চলমান পাহাড়ী রাস্তার দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল তিন্নি। অভিমানী মনে সমুদ্রের তোলপাড় চললেও মুখে কুলুপ এঁটেছিলো, কথা বলতে গেলেই যে চেপে রাখা কান্নাটা বেরিয়ে আসবে। অনেকটা রাস্তা চলে আসার পর অভিমন্যু মুখ খুললো — “বাকি রাস্তাটাও কি কথা বলবেন না বলে পণ করেছেন??”

ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাসের সাথে তিন্নির চাপা অভিমান ছিটকে বেরিয়ে এলো — “আপনার আর কি? কাল থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছি, যতক্ষণ না চোখের সামনে থেকে আমাকে দূর করে দিতে পারছেন আপনার তো শান্তি নেই।”

হেসে ফেললো অভিমন্যু — “খুব রেগে আছেন মনে হচ্ছে?”

কৃষ্ণসাগরের মতো ডাগর কালো চোখদুটি জলে টইটম্বুর, অভিমন্যুর দিকে তাকাতে সেই অভিমানের সাগর থেকে এক ঝলক নোনতা জল ছলকে পড়লো — “আপনি কি কিছুই বোঝেন না অভিমন্যু? নাকি সব বুঝেও না বোঝার ভান করছেন?”

তিন্নির থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দিলো অভিমন্যু, চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে ওর ততক্ষনে। পাথুরে এবড়ো খেবড়ো পথে চুলের কাঁটার মতো অনেকগুলো বাঁক পর পর পেরিয়ে গেলো ওরা। একটা পাহাড় থেকে নামলো ওরা, আরো কয়েকশো পাহাড় বাকি।

কিছুটা সমতল রাস্তায় এসে মুখ খুললো অভিমন্যু — “সীমন্তিনী, আপনার চোখদুটো খুব ……বাঙময়।আপনার মনে কি চলছে সেটা আপনার চোখ দেখেই পড়ে ফেলা যায়। আর সেই জন্যই বলছি আপনি যা ফীল করছেন, ওটা আর কিছুই নয় — “ডামসেল ইন ডিস্ট্রেস” সিনড্রম! ইনটেলিজেন্ট মানুষ আপনি, টার্মটা নিশ্চয়ই শুনেছেন আগে?”

চিড়বিড়িয়ে উঠলো শরীর! রাগে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো তিন্নি — “মা—নে? আমি ডিজনি প্রিন্সেস???”

মুখে সামান্য হাসি ফুটে উঠলো অভিমন্যুর — “জানেন তবে! গুড!”

তারপরই হাসিটা মুছে ফেলে শান্ত গম্ভীর গলায় বললো — “আপনি ডিজনি প্রিন্সেস নন! কিন্তু আপনার কাছে “আমি” প্রিন্স চার্মিং! গত বাহাত্তর ঘন্টায় কো-ইনসিডেন্টালি পরপর দুই তিনবার আপনাকে সমূহ বিপদ থেকে রেসকিউ করেছি তাই আপনার মনে আমাকে নিয়ে একটা ছোটোখাটো ইনফ্যাচুয়েশন তৈরী হয়েছে! কিন্তু সুস্থ মাথায়, রাশন্যলি ভেবে দেখুন – যা হয়েছে এটা খুবই সামান্য ব্যাপার।”

ভিজে সলতের মতো রাগটা নিভে গেল তিন্নির!

তাই কি?? অভিমন্যুর যুক্তিকে ঠিক ফেলে দেওয়া যায় না! কিন্তু তিন্নির মন যে বলছে অন্য কথা। ইনফ্যাচুয়েশন হলে কি বারবার এভাবে বুকের রক্ত ছলকে ওঠে? দুরে যেতে হলে কান্না পায়? কাছে এলে আরও কাছে আসতে ইচ্ছে করে? হাজার একটা যুক্তি জিভের আগায় চলে এলেও শব্দ হয়ে সেগুলো বাইরে বেরোলো না! তাছাড়া শান্ত মানুষের সাথে ঝগড়াটাও ঠিক জমে না। অভিমন্যুর কথাটা ঠিক হজম হলো না তিন্নির, আবার প্রতিবাদও করে উঠতে পারলো না! আর কোনো যুক্তি খুঁজে না পেরে হতাশ গলায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেই ফেললো –“আর্মি মানেই আনরোমান্টিক!”

গমগমে গলায় হো হো করে প্রাণখোলা হাসিতে ফেটে পড়লো অভিমন্যু। আচমকা ইন্ডিকেটর দিয়ে রাস্তার এক সাইডে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে চোখের রে ব্যান রোদচশমটা খুলে সরাসরি তিন্নির দিকে তাকালো — “কি বলছেন ম্যাডাম? আমরা আনরোমান্টিক? আর্মি তো সবচেয়ে বেশি রোমান্টিক। দেশকে ভালোবেসে এই যে আমরা সীমান্তে পড়ে থাকি সে কি শুধু মাস গেলে কটা টাকা ব্যাঙ্ক আকাউন্টে ঢোকার আশায় নাকি আমার পরিবার লাইফটাইম পেনশন পাবে তার ভরসায়? তাহলে এতো এতো গ্রাজুয়েট, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, ল-ডিগ্রী নিয়ে ব্যাচেলররাও বড়ো বড়ো চাকরির অফার ছেড়ে আর্মি জয়েন করতো? এই আমাকেই দেখুন না, আগামী সাত মাস এখন এই পাহাড়ে পাহাড়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে হবে, আধ পোড়া রুটি হোক কি নুনসেদ্ধ ডাল – নিজের খাবার নিজেকে বানিয়ে খেতে হবে, রোদ-ঝড়-বৃষ্টি, শনিবার বা রবিবার, শরীর খারাপ, “গা ম্যাজম্যাজ করছে” বলে আমাদের কিছু হয় না ম্যাডাম, 365X24 ডিউটি। খুব বড়োজোর মাঝে মাঝে মনখারাপ হলে পার্সের মধ্যে রাখা একটা পাসপোর্ট সাইজের ফটো দেখবো, বাড়ির কথা মনে পড়বে।“

এক নিঃশ্বাসে এতগুলো কথা বলে দম নেওয়ার জন্য থামলো অভিমন্যু, তারপর রাস্তার দিকে চোখ ফিরিয়ে আবার বলতে লাগলো – “আমাদের ইমোশন রাখতে নেই ম্যাডাম, আবেগের থেকে যুক্তিকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। আমরা পাথর। আমাদের চোখের পলকে অব্যর্থ নিশানায় গুলি চালাতে হয়, মুখ বুজে অর্ডার ফলো করতে হয়, যেখানে বন্দুক নেই- খালি হাতে যুদ্ধ করে সে লড়াই জিতে আসতে হয়। যদি মারা যাই, তবে শহীদ আখ্যা পাবো আর যদি হেরেও বেঁচে ফিরে আসি- তার মানে পঙ্গু হয়ে ফিরে এসেছি।কারণ আপনারা সিভিলিয়ান, আপনাদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের ওপর। ক্রেজি রোমান্টিক বলেই তো চুপচাপ এতো কিছু সহ্য করে যাই, আপনারা সিভিলিয়ানদের এতো অবজ্ঞা সত্ত্বেও।“

অভিমন্যুর একটা একটা কথা সপাং সপাং কাঁটালাগানো চাবুকের মার হয়ে তিন্নির বুকের ওপর হানছিল। অভিমন্যু কি ইচ্ছে করে কথার আঘাতে ওকে জর্জরিত করার চেষ্টায় আছে? হৃদপিন্ডটা যেন কেউ সজোড়ে মুচরে দিলো দুহাতে! জলভরা চোখদুটো তুলে অস্ফুটে বললো তিন্নি — “কেন বারে বারে এভাবে আমাকে আঘাত দিচ্ছেন? আমি যে…..” কথাগুলো শেষ করতে পারলো না তিন্নি। উদগত কান্নাটা গিলে ফেলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল — “আপনি বোঝেন না?”

তিন্নির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিলো অভিমন্যু। আর একটাও কথা না বলে অভিমন্যুর সবুজ মিলিটারি জীপ্ সামনের দিকে চলতে লাগলো হু হু করে, ঝড়ের গতিতে।আড়চোখে স্পীডোমিটারটা দেখে শিরশির করে উঠলো তিন্নির বুকের ভেতরটা! ওর চুল উড়ছিল উতল হাওয়ায়, হাওয়ার দাপটে চোখ খোলা রাখতে পারছিলো না, তাও কেন জানি এবার আর এক ফোঁটাও ভয় করছিলো না তিন্নির। মৃতের মতো বসে থেকে মনে মনে হয়তো ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছিল~ “হোক আ্যক্সিডেন্ট, তবে তো আজ আর ফিরে যেতে হবে না!”

**************************__****************************

 

ভগবান আজ সত্যিই বোধহয় কানে তুলো এঁটেছিলেন, তাই সকাল থেকে তিন্নির একটা প্রার্থনাও শুনতে পান নি! আ্যক্সিডেন্ট তো দূর, সামান্য আঁচড়টুকু না লাগিয়ে তিন্নিকে নিয়ে অভিমন্যুর গাড়ি এগিয়ে চললো পাহাড় পেরিয়ে। গাড়ি যখন গ্যাংটকের চেনা রাস্তায় ঢুকে পড়লো, গাড়ীর গতি কমলে তিন্নি আবার জিজ্ঞেস করলো বেহায়ার মতো – “আপনার মনে আমার জন্য বিন্দুমাত্র জায়গা নেই? “

সাথে সাথে কোনো জবাব না দিয়ে কিছুসময় পর মসৃনভাবে গাড়িটা থামালো অভিমন্যু, মুখের পেশীগুলো তখনও কঠিন হয়ে ফুটে রয়েছে। গম্ভীর নির্লিপ্ত স্বরে বললো – “আপনার হোটেল এসে গেছে। চললাম ম্যাডাম, সেফ জার্নি। ভালো থাকবেন!”

এতো পাথরও কি মানুষের মন হয়? বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো তিন্নির। এ কোন অমানুষকে মন দিয়ে ফেলেছে ও? যন্ত্রচালিতের মতো গাড়ি থেকে নেমে শেষবারের মতো অভিমন্যুর দিকে তাকালো তিন্নি – “আমার উত্তরটা পেলাম না অভিমন্যু।“

রোদচশমার আড়ালে অভিমন্যুর চোখ দেখা গেলো না, ভারী স্বরটা ভেসে এলো — “সব প্রশ্নের উত্তর হয় না ম্যাডাম। রাদ্যার, সব প্রশ্নের উত্তর দিতে নেই। চললাম, ফিরে অতি অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন মনে করে।”

স্থাণুবৎ তিন্নিকে ওখানেই দাঁড় করিয়ে রেখে প্রচন্ড গতিতে পাতা উড়িয়ে, অভিমন্যুর সবুজ জীপটা ওর দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলো। যতক্ষন তাকিয়ে থাকা যায়, তিন্নি তাকিয়ে রইলো অভিমন্যুর গমনপথের দিকে, গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া নিঃশব্দ চোখের জলের সাথে সাথে তিন্নির ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো – “ওকে দেখো ভগবান, ওকে ভালো রেখো। যা পারো শাস্তি আমাকে দাও, কিন্তু ওকে অক্ষত রেখো। প্লিজ ভগবান, ওর যেন কিছু না হয়। ওর কিছু ক্ষতি হওয়ার আগে আমাকে উঠিয়ে নিও ঠাকুর, প্লিজ।“

হোটেলের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে একই কথা বিড়বিড়িয়ে প্রার্থনা করে চললো তিন্নি বারেবারে।

 

ক্রমশঃ
© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।
P.S ~ A damsel in distress is a psychological situational syndrome when an young woman is in danger who is infatuated by her rescuer, a male hero.
**************************__****************************

বিঃদ্র – আপনাদের যারা এখনো “মন, তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম -Mon tomake chhunye dilam – লেখনী সুমন্দ্রা মিত্র ” পেজটি ফলো করেননি, তাদের সকলকে একান্ত বিনীত অনুরোধ মেনপেজটি লাইক ও ফলো করুনএবং পাশে গিয়ে SEE FIRST অপশনে ক্লিক করে রাখুন, পেজে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। এছাড়াও Facebook Storyতে চোখ রাখতে পারেন, মেনপেজে কিছু পোস্ট হলে এই পেজের storyতেও লিঙ্ক দেওয়া থাকে। আপনাদের বন্ধু ও পরিবারবর্গদেরও Invite করুন মেনপেজটি লাইক ও ফলো করতে। লিংক 👇
https://www.facebook.com/মন-তোমাকে-ছুঁয়ে-দিলাম-লেখনী-সুমন্দ্রা-মিত্র-110448980674312/

***********************__******************************

সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n

Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here