সূর্য ডোবার আগে পর্ব-১৫

0
2141

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-১৫
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
.

সব অপেক্ষারই শেষ থাকে, সব কান্নাই থেমে যায় একদিন। অভিমন্যুর সবুজরঙা জিপ্ গ্যাংটকের ম্যালরোড দিয়ে ভেজা দেবদারু পাতার ঝড় উঠিয়ে চলে যাওয়ার পরও পাথরের মুর্তির মতো স্থির হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়েছিল তিন্নি। সব শেষ হয়ে গিয়েও যেন শেষ হলো না! তিন্নির তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না, অভিমন্যু সত্যি সত্যিই চলে গেছে। কেবলই মনে হচ্ছিল যেন বিশাল এক দুঃস্বপ্ন দেখছে ও, ঘুম ভেঙে যাবে এখনই আর চোখের সামনে আবার দেখতে পাবে অভিমন্যুর গাঢ় বাদামী চোখদুটি যা গত বাহাত্তর ঘন্টায় বারবার ওর সামনে ঘুরে ফিরে এসেছে – কখনো স্বপ্নে, কখনো অস্তিত্বতে। কিন্তু আশেপাশের লোকেদের কৌতুহলী দৃষ্টি, গুনগুন গুন্জন ওকে টেনে নামিয়ে আনলো কঠোর বাস্তবে।

নিঃশব্দ চোখের জলগুলো মুছে পায়ে পায়ে তিন্নি ফিরে এলো হোটেলে, সাথের হ্যান্ডব্যাগে পড়ে থাকা কি-কার্ড দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে গা এলিয়ে দিলো হোটেলের নরম বিছানায়। কাল থেকে চলে আসা মানসিক শ্রান্তি আর ননস্টপ কান্নার পর মাথাটা ভার হয়ে আছে পাহাড়ের মতো। অসহ্য যন্ত্রনায় যেন ফেটে যাবে যেকোনোসময়। ইচ্ছে না করলেও বেড ছেড়ে উঠলো আবার, রুমে রাখা রুকস্যাক ঘেঁটে পেনকিলারের স্ট্রিপ বার করে গোটা দুই ট্যাবলেট গিলে নিলো। আবার শুতে যাবে, ঝড়ের বেগে ওর ঘরে ঢুকলো মেঘা আর ঢুকেই চেঁচিয়ে উঠলো
— “সীমন্তিনী?? কখন এলি তুই? কি হয়েছিল? কেমন আছিস? সব ঠিক আছে? ওরা তোকে কিছু করেছে? এই সায়ক, দেখ সীমন্তিনী চলে এসেছে………“

ওরা সবাই বোধহয় হোট্লের কমপ্লিমেন্টারি ফ্রি-ব্রেকফাস্ট সেরে ফিরছিলো, মেঘার চিৎকার চেঁচামিচি শুনে ওদের রুমে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েছে, পুরো গ্রপের বাকি আটজন।

পিয়াসা এসেই জড়িয়ে ধরলো তিন্নিকে – “আই আ্যম সো সরি সীমন্তিনী। কানে হেডফোন ছিল, আমি একদম শুনতে পাই নি। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো অন্য গাড়িতে যাচ্ছো, ইট ওয়াজ জাস্ট আ্যন অনেস্ট মিসটেক, বিশ্বাস করো…………”

পিয়াসা আরো অনেককিছু বলে যাচ্ছিলো, ক্ষমা চাইছিল, কিন্তু কেন জানি তিন্নির খুব বিরক্ত লাগছিলো ওদের সবাইকে। কাউকে সহ্য হচ্ছিল না, ওর গায়ে তখন যেন একশোটি বিছের কামড়ের জ্বলুনি! আর কারো স্পর্শ সহ্য হচ্ছিলো না ওর। অভিমন্যুর ছোঁয়া যে এখনো তিন্নির সারা শরীরে লেগে, ও চায় না, আর কেউ ওকে স্পর্শ করুক।

পিয়াসার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তিন্নি শুকনো গলায় বললো –“আমি খুব ক্লান্ত। রিকোয়েস্ট করছি, একটু একা থাকতে দাও আমায়, প্লিজ।“

মেঘা শশব্যস্ত হয়ে উঠলো – “হ্যাঁ! নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই! এই, তোরা সব যা তো, আমি রইছি সীমন্তিনীর কাছে …..”

অদৃশ্য বিছেগুলো আরএকবার কামড়ে ধরলো কি মন? তিন্নির সারা শরীর যেন বিদ্রোহ ঘোষনা করে দিয়েছে সকল মানুষজনের উপস্থিতি! কেমন একটা কর্কশ গলায় তিন্নি প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো — “মেঘা, আমি একটু “একা” থাকতে চাই, প্লিজ আন্ডারস্ট্যান্ড। “

নরম, শান্ত, মুখচোরা যে মেয়ে সাতচড়ে রা কাটে না, তিন্নির এই আকস্মিক রুঢ়তায় মেঘা, পিয়াসা এবং বাকিরা সবাই থমকে গেলো। মুখ কালো হয়ে এলো সবার, তারপর একে একে বেরিয়ে গেলো হোটেলের ঘর থেকে ………………
.
.
.
সায়ক ছাড়া।

তিন্নি খেয়াল করে নি সায়ক বেরোয় নি ওর রুম থেকে, সজোড়ে রুমের দরজাটা বন্ধ করেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো! সায়কের নির্নিমেষ দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে গলা কেঁপে গেল ওর – “তুই বেরোস নি কেন?”

তিন্নি ব্যস্ত হয়ে দরজাটা খুলতে যেতে, আড়াল করে দাঁড়ালো সায়ক। কেমন একটা অদ্ভুত গলায় বললো — “তুই কেমন আছিস সীমন্তিনী?”

এক পা পিছু হটতে গিয়ে তিন্নি দেখলো ওর পিঠে হোটেলের বন্ধ দরজা আর সামনে ওর পথ আটকে সায়ক, চোখদুটো টকটকে লাল, মুখের ভাবভঙ্গি কেমন উত্তেজিত। পালাবার পথ নেই! তিন্নির মাথায় তখন দমকলের লাল ঘন্টি ঘন ঘন বেজে কি যেন একটা বিপদসঙ্কেত পাঠাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে সায়কের সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাব্য রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে গলা শক্ত রেখে বললো
— “আমি ক্লান্ত সায়ক। প্লিজ আমাকে একটু রেস্ট নিতে দে, তোদের সওয়াল জবাব করার পরেও অনেক সময় পাবি।“

ততক্ষনে হাতের মুঠি পাকিয়ে প্রায় তেড়ে এসেছে সায়ক — “না আমি এখনই জানতে চাই। কি হয়েছে তোর? কি করেছে ওরা তোকে?”

অবাক চোখে দাঁড়িয়ে রইলো তিন্নি, কি বলতে চাইছে সায়ক? নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে গলা শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে কেটে কেটে বললো — “কে কি করবে আমায়?”

তিন্নির হাতদুটো নিজের ঘামে ভেজা ঠান্ডা হাতে জড়িয়ে নিয়ে সায়ক ফিস ফিস করে বললো – “আমাকে সত্যি করে বল সীমন্তিনী, আমি কাউকে জানাবো না, আই প্রমিস। এখনই আমি মেডিকেল শপ থেকে ওষুধ কিনে আনছি। ইভেন ইফ সামথিং হ্যাপেনড, ইট উইল নট বি দেয়ার এনিমোর। লেট মি টেক কেয়ার অফ ইট।“

স্তব্ধ হয়ে গেল তিন্নি। টর্নেডো আছড়ে পড়ার ঠিক আগের মুহুর্তে সব যেমন পিনড্রপ সাইলেন্স হয়ে যায়, হঠাৎ করে তিন্নির মনে হলো আশেপাশের সব যেন নিস্তব্ধ, টিক টিক করে প্রবলবেগে শুধু অনেকদুরের হোটেলের লবিতে লাগানো দেওয়াল ঘড়ির কাঁটার আওয়াজ ভেসে আসছে। শরীরের সকল রক্ত যেন তিন্নির মাথায় উঠে এসেছে, যেকোনো মুহুর্তে চোখ কান দিয়ে গলগল করে গরম লাভাস্রোত বেরিয়ে আসবে। চোখ বন্ধ করে নিতে অভিমন্যুর মুখটাই তিন্নির চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আর তখনই ওর মনে হল সায়কের গরম নিঃশ্বাসের হলকা যেন ওর গায়ে এসে লাগছে, গা গুলিয়ে উঠলো ওর। সায়ক কি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাছাকাছি দাঁড়িয়ে? হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সায়ককে ধাক্কা মেরে ঠেলে সরিয়ে দিলো তিন্নি। চাপা রাগের সাথে ক্ষুব্ধ গলায় বললো – “লিমিট ক্রস করিস না! কি ভাবিস তুই? আমি একা বলে যে যখন যা খুশি করতে পারে?”

— “কেন বুঝছিস না?”
দুই পা পিছিয়ে গিয়ে সায়ক আস্তে আস্তে বললো — “আমি তোর ভালোর জন্য বলছি।”

পরপর দুটো শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল তিন্নি। সতেজে জবাব দিলো — “অভিমন্যু আমার সাথে ছিল, ও থাকতে কেউ আমায় টাচ করার সাহসটুকু রাখে না সায়ক।”

আবারও মুখ বিকৃত হয়ে উঠলো সায়কের।উদ্ধতভাবে বলে উঠলো — “কোন অভিমন্যু? সেই ট্রেনের আর্মি? হিরো সাজছিলো যে?”

কি বলবে ভেবে পেল না তিন্নি! তারমধ্যেই সায়ক মুখচোখে একটা কদর্য ভঙ্গিমা এনে হিসহিসিয়ে উঠলো — “জানতাম, লোকটা সুবিধের নয়! ট্রেনের সেই এপিসোডটার পর থেকেই ও কি তোকে ফলো করছিলো নাকি? কি করেছে তোকে একা পেয়ে? গায়ে হাত-টাত দিয়েছে? আমাকে বল একবার! এমন মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেবো, ব্যাটার চাকরি চলে যাবে!”

—- “সা-য়-ক!”
বুকের ভেতর থেকে গলা চিড়ে যে আওয়াজটা বেরিয়ে এল, অন্য কোনোসময়ে তিন্নি নিজেও বুঝতে পারতো না এটা ওরই স্বর! সায়কও মুখের কথা শেষ না করেই থমকে দাঁড়িয়ে রইলো! আগুনঝরা দৃষ্টিতে কিছুক্ষন সায়কের দিকে তাকিয়ে রইলো তিন্নি। ওর দৃষ্টির সামনে যে কেউ কুঁকড়ে যাবে, সায়কও ব্যতিক্রম নয়। মিনিটকয়েক চুপ থেকে মনে মনে বারদুয়েক অভিমন্যুর নাম নিল তিন্নি। তারপর বরফের চেয়েও ঠান্ডা স্বরে বললো –“মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজে সায়ক। আবারো সাবধান করছি তোকে, কাউকে রেসপেক্ট না করতে পারিস, তাকে অসম্মান করার কোনো অধিকার নেই তোর। বুদ্বুদে বাস করে দেশের জন্য যারা প্রাণপাত করছে তাদের মজাক ওড়াস না। এখন এ ঘর থেকে বের হয়ে যা, রেস্ট নিতে দে আমায়।“

আর একটাও কথা না বলে একরকম ঘাড়ধাক্কা দিয়েই সায়ককে ঠেলে সরিয়ে রুমের দরজাটা হাট করে খুলে দিলো তিন্নি। বাইরে মেঘা, পিয়াসা, নির্মাল্যরা তখনও দাঁড়িয়ে, ওদের মুখচোখের অবস্থা বলে দিচ্ছে এতক্ষন ধরে ভেতরের সব কথোপকথনই বাইরে শোনা গেছে। এর পরে আর দাঁড়িয়ে থাকা মানায় না, মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো সায়ক। দরজাটা সজোরে বন্ধ করে এতোক্ষনের চেপে রাখা রাগটা কান্না হয়ে বেরিয়ে এলো। দরজায় পিঠ দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওখানেই বসে পড়লো তিন্নি, কাঁদতে কাঁদতে নিজের মনেই বলতে লাগলো – “কেন অভিমন্যু? কেন আমায় এখানে এই অমানুষগুলোর মাঝে ফিরিয়ে দিয়ে গেলে? কিচ্ছু ভালো লাগছে না আমার, প্লিজ আমায় এখান থেকে নিয়ে যাও।“
.
.
.

অভিমন্যু তখন গ্যাংটক থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি রাস্তায় খালি জীপ্ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। ভালো লাগছে না ওর, কিচ্ছু ভালো লাগছে না!

**************************__****************************

শূন্য দৃষ্টিতে কতক্ষন একইভাবে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বসেছিলো তিন্নি, বেলা দুটো নাগাদ ওর রুমে কেউ নক করলো। বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দেখলো মেঘা!! একটু ভয়ে ভয়ে মেঘা বললো – “সন্ধ্যে ছয়টায় ফেরার ট্রেন, এখনই না বেরোলে আর ধরতে পারবো না।“

বুকের শেষ পাঁজরটাও ভেঙে গেলো তিন্নির, ফিরতে হবেই। এখান থেকে বহুদূরে, আর কোনোদিন দেখা হবে না সেই মানুষটার সাথে। ধংস্বস্তুপের মতো ভাঙাচোরা হয়ে কাঁপতে কাঁপতে ওখানেই বসে করলো তিন্নি!
.
.
শেষবারের মতো অভিমন্যুর প্রায় মিলিয়ে যাওয়া ঘ্রান লেগে থাকা জ্যাকেটটা আরেকবার জড়িয়ে ধরে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো তিন্নি! এই একটাই তো বাস্তব চিহ্ন অভিমন্যুর, জ্যাকেটটা না থাকলে সবাই হয়তো বলতো এ শুধুই বানানো গল্প, সত্যি সত্যি এমন আবার হয় নাকি? রুকস্যাকটা কাঁধে নিয়ে অবসন্ন পায়ে হোটেলের ঘর থেকে বেরোলো তিন্নি ,কান্না আর আসছে না , শূন্য দৃষ্টিতে স্থবিরের মতোএগিয়ে চললো অনির্দিষ্ট সামনের দিকে। রিসেপশনে সবাই কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছিলো, তিন্নিকে দেখেই সব চুপ। আলোচনাটা যে ওকে নিয়েই হচ্ছিলো তা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলো তিন্নি কিন্তু কেয়ার করলো না। কে কি ভাবলো বললো, আর কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না ওর। চুপচাপ গিয়ে NJP যাওয়ার ভাড়ার গাড়িতে উঠে বসলো, মেঘা সবার দিকে একবার ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে ইশারা করলো – “তোরাও চল।“

সারা রাস্তা একটাও কথা না বলে চুপ করে ছিলো তিন্নি, আর সবাইও। গাড়িতে যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা! কিরকম হইচই করে বেরিয়েছিল ওরা, মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে পরিস্থিতির আকাশ-পাতাল তফাৎ। কলকাতা ফেরার ট্রেন আসার মিনিট পাঁচেক আগেই স্টেশনে এসে পৌঁছেছিল ওরা, ট্রেনে ওঠার আগে শেষবারের মতো একবার নর্থ বেঙ্গলের সবুজ পাহাড় চোখ ভরে দেখে নিলো তিন্নি, অভিমন্যুর ছায়া যেন এই সবুজ পাহাড় আর নর্থবেঙ্গলের জংলী হাওয়াতেই মিশে আছে। বুকের ওপর একরাশ ভারী পাথর রেখে ট্রেনে উঠলো ও। ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় অভিমন্যুর স্পর্শ, অভিমন্যুর স্মৃতি ফেলে ঝাপসা চোখে তিন্নি এগিয়ে চললো কলকাতার দিকে।

**************************__****************************

সাইড লোয়ার বার্থে অবসন্ন শরীরে পাতলা চাদরে মুখ অবধি ঢাকা দিয়ে শুয়েছিল তিন্নি। সূর্য ডুবে গেছে গেছে অনেকক্ষন, বাইরে ঝাপসা অন্ধকার। ট্রেন চলছে নিজের গতিতে ঝমঝম ঝমঝম শব্দে। একের পর এক নাম না জানা স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছে। নিচু স্বরে সায়ক, মেঘারা কিসব আলোচনা করছে, তিন্নির কানে এসে পৌঁছচ্ছে না। হঠাৎ মুঠোফোনের তীব্র যান্ত্রিক শব্দে সবার চটকা ভেঙে গেলো, সবাই নিজের নিজের ফোন চেক করছে- কার ফোন এলো রে বাবা! শেষে মেঘা উঠে গিয়ে তিন্নিকে ধাক্কা মেরে ওঠালো – “সীমন্তিনী, দেখ তোর ফোন বাজছে। বাড়ি থেকে ফোন করছে বোধহয়।“

বাড়ির নাম্বার তো নয়, ফোনের স্ক্রিনে একটা আননোন নাম্বার দেখাচ্ছে।তারস্বরে বেজে চলা ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আর একবার বুকের রক্ত ছলকে উঠলো তিন্নির। আজ সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি তিন্নি যতবার ঈশ্বরকে স্মরণ করেছে হয়তো বিগত সাতজন্মেও তা করে নি! করলে হয়তো তিন্নিকে আজ এত কাঁদতো না! প্রত্যেক ঘন্টায় ওর প্রার্থনার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু আকুলতা একই আছে। শেষবেলায় নর্থবেঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আগে কানের তুলো সরিয়ে ফ্যাইন্যালি ভগবান কি ওর প্রার্থনা শুনলেন? ট্রেনের দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে কাঁপা কাঁপা গলায় কল রিসিভ করলো তিন্নি। এই জনারন্যে একটু প্রাইভেসির যে বড্ড প্রয়োজন!

— “হ্যালো?”

**************************__****************************

স্লীপার ক্লাসের আধখোলা দরজা দিয়ে সোঁদা ভিজে হাওয়া ছুটে আসছে, গায়ে শিরশিরানি ধরিয়ে দিচ্ছে আবারো। ওপ্রান্তের গলা শুনেই চোখ দিয়ে দরদর করে জল পড়তে লাগলো তিন্নির। ভগবান ওর ডাক শুনেছে তবে! কান্নার মধ্যেও মৃদু হাসি ফুটে উঠলো তিন্নির মুখে, প্রশ্ন করলো –“আমার নাম্বার পেলেন কি করে?”

গলায় শব্দ করে হাসলো অভিমন্যু –”আর্মিকে জিজ্ঞেস করছেন নাম্বার পেলাম কি করে? হাসালেন যে ম্যাডাম!”

কথা জোগালো না তিন্নির মুখে। চোখ বন্ধ করে নিয়ে শরীর এলিয়ে দিল চলন্ত ট্রেনের ধাতব কামরার গায়ে। শীতল ধাতব স্পর্শে যদি হৃৎপিন্ডের গতিবেগ একটু কমে!

কিছুক্ষন তিন্নির জবাবের অপেক্ষা করে থেকে একটু ব্যস্ত গলায় অভিমন্যু বললো – “কিন্তু ম্যাডাম, আপনার ক্রেডিট কার্ডটা তো আমার টেন্টেই ফেলে গেছেন!”

শুক্লপক্ষের অষ্টমীর বাঁকা চাঁদের মতো একটা কষ্টের হাসি ফুটে উঠলো তিন্নির ঠোঁটের আগায়! গলা স্বাভাবিক রাখার যথাযথ চেষ্টায় বললো –“ওহ্!! তাই কি?”

অভিমন্যুর চিন্তাজড়িত ঘন ব্যারিটোন ভেসে এলো অপর প্রান্ত থেকে –“হ্যাঁ। তাই তো দেখছি! এখানে ক্রেডিট কার্ড বার করতে গিয়েছিলেন কেন? আর আশ্চর্য্য! পাঁচ ছয় ঘন্টা হয়ে গেল প্রায়, আপনি খুঁজে দেখেন নি এখনো? এত ইম্পর্ট্যান্ট একটা জিনিষ…”

–“ন্ না… হয়তো ব্যাগ থেকে পড়ে গেছে, খেয়াল করি নি! ম্- মানে আমি তো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি না খুব বেশি …. “

মিথ্যেকথা বলতে তিন্নি অভ্যস্ত নয়, তুতলে গিয়ে এর থেকে বেশি মিথ্যে আর বানিয়ে বলতে পারলো না।

— “সীমন্তিনী?”
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে প্রায় ইন্টারোগেশন করার মতো কঠিন হয়ে অভিমন্যুর গলা বেজে উঠলো ফোনের ওপারে — “আপনি কার্ডটা ইচ্ছে করে রেখে গেছেন, তাই তো? যাতে আমি আপনাকে ফোন করি?”

ঠোঁট কামড়ে ধরলো তিন্নি! ভগবান এত বুদ্ধি কেন দিয়েছে এই মানুষটাকে? কিছুই কি লোকানো যায় না এর থেকে? হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার লজ্জায় আর সংকোচে চুপ করে রইলো তিন্নি!
— “সীমন্তিনী?”

আর একবার ওর নাম ধরে ডাকল অভিমন্যু, এবারের স্বর আরো গাঢ়। ফোন ধরেই কেঁপে উঠলো তিন্নি। যতবার অভিমন্যু ওর নাম নেয় ততবার যেন তিন্নির শিরায় শিরায় ছড়িয়ে যায় মাদক মিশ্রিত নীল নীল নেশা। জবাব দেওয়ার মতো কিছু নেইও তো, সব ছলনাই যে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে কোনো সাড়া দিলো না তিন্নি। উত্তর না পেয়ে এবার একটু জোর দিয়েই অভিমন্যু বললো – “কেন এমন পাগলামো করছেন? এটা জাস্ট একটা ইনফ্যাচুয়েশন, আপনার ট্রেন কলকাতা পৌঁছনোর আগেই এই ইনফ্যাচুয়েশন কেটে যাবে!”

এতক্ষনে স্বর ফুটলো তিন্নির গলায়, অস্ফুটে ঠোঁটদুটি নড়ে উঠলো ওর — “আর যদি না কাটে?”
হাল ছেড়ে দিলো অভিমন্যু। এতো মানসিক টানাপোড়েন আর নিতে পারছে না ও। শ্রান্ত গলায় বললো – “আমি কোনো বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে চাই না সীমন্তিনী, প্লিজ বুঝুন! প্রেম ভালবাসা আমার জন্য নয়!”

–আর বন্ধুত্ব? সেটাও কি আপনার জব প্রোফাইলে আ্যালাউড নয়?

আবারো, এর কোনো জবাব নেই অভিমন্যুর কাছে। যত্ন করে এড়িয়ে গেলো তিন্নির প্রশ্ন। নরম গলায় বললো – “ভালো থাকবেন ম্যাডাম। এমন পাগলামো আর করবেন না! রাখলাম।“

না! না! না!
আবারও সব শেষ হয়ে যেতে পারে না! তিন্নির শরীরের প্রতিটি কোষ, প্রতিটি রক্তবিন্দু বিদ্রোহ করে উঠলো যেন! অভিমন্যু ফোন রাখার ঠিক আগের মুহূর্তে ডুকরে উঠলো তিন্নি। — “অভিমন্যু… প্লিজ?”

বহুদুর থেকে স্থির অবিচল গলাটা ভেসে এলো – “বলুন।“

কান্নাভেজা গলায় প্রলাপ বলে চললো তিন্নি – “একটা অনুরোধ রাখবেন আমার? প্লিজ? প্রতিদিন শুধু “একটা” মিসডকল দেবেন আমার ফোনে? যেকোনো নাম্বার থেকে? আপনাকে আমার সাথে কথা বলতে হবে না, আপনার পার্সোনাল নাম্বার দিতে হবে না। এই কল ডিটেলস আমি মুছে ফেলবো, কথা দিচ্ছি। কোনো সম্পর্কের দায়ভার নয়, কোনো শর্ত, কোনো দায়িত্ব নয়! জাস্ট একটা মিসডকল দেবেন আমায়? আমি শুধু এটুকু জেনে খুশি থাকবো……..”

চরম কথাটি মুখে আনতে পারলো না তিন্নি, গলার স্বর বুজে এলো বারবার, দুইচোখের কোল বেয়ে নিঃশব্দ চোখের জলের অবিরাম স্রোত বয়েই চলেছে।

ধীর স্থির গলায় তিন্নির অসমাপ্ত কথা শেষ করলো অভিমন্যু। —- “যে আমি বেঁচে আছি কিনা?? কেন পাগলামো করছেন সীমন্তিনী?”

— “প্লিজ অভিমন্যু, এই একটা রিক্যোয়েস্ট রাখুন! আর কিচ্ছু চাইবো না আপনার থেকে, আর কোনো দাবি করবো না, কোনো এক্সপেকটেশন রাখবো না, কোনোদিন আপনাকে ফোন করবো না, কথা দিচ্ছি।“
অবুঝ বাচ্চার মতো কাঁদতে লাগলো তিন্নি।

বিশাল বড়ো একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে অনেকক্ষন চুপ করে রইলো অভিমন্যু। কেন এই একটি মানুষের জন্য ওর মন দুর্বল হয়ে যায় বারবার? ফোনের ওপারে নিশ্বাস চেপে অপেক্ষা করতে থাকলো তিন্নি অভিমন্যুর ফাইনাল উত্তরের জন্য। এক একটা কেটে যাওয়া মুহূর্ত যেন এক একটা বছরের সমান! নিজের সাথে বারংবার যুদ্ধ করে অনেকটা সময় নিয়ে বহুদুর থেকে অভিমন্যুর কোমল স্বর ভেসে এলো তারপর — “ওকে। প্রতি রাতে এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে যদি কোনো আননোন নাম্বার থেকে পর পর দুটো মিসডকল আসে, তবে জানবেন আমি ফোন করলাম! শুধুমাত্র আপনার জন্য।“

–থ্যাঙ্ক ইউ!
আর কোনো কথা বলার অবস্থায় ছিলো না তিন্নি, ওর নিঃশব্দ কান্নার মধ্যে দিয়ে কোনোরকমে এটুকুই ম্যানেজ করতে পারলো।

সতর্ক হিমশীতল গলাটা আবারও ফেরত চলে এলো – “আপনি কিন্তু কোন মেসেজ করবেন না, কল ব্যক করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আর কোনোদিন আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারবেন না! অলরাইট?”

কান্না চেপে জবাব দিল তিন্নি – “ঠিক আছে! করবো না।“

— আপনার বন্ধুদের………..

— কেউ জানবে না, কাউকে কিচ্ছু বলবো না আমি।
ভারী একটা নিঃশ্বাস পড়লো অভিমন্যুর! নিজের মনের সাথে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার বিষাদেই হয়তো। নরম স্বরে বললো – “সাবধানে বাড়ি যান ম্যাডাম, আর অতি অবশ্যই এবার একটা ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন! টেককেয়ার, রাখছি!”

ঠোঁট টিপে চুপ করে রইলো তিন্নি। প্রাণ থাকতে কিছুতেই অভিমন্যুকে বিদায় জানাতে পারবে না ও…আর একটু কথা বলা যায় না কি? অভিমন্যু আবার ডাকলো ওর নাম ধরে ফোনের ওপ্রান্ত থেকে –“সীমন্তিনী??”

উত্তর দিতে পারলো না তিন্নি, ওর শরীরের প্রতিটি রোমকূপ তখন শুষে নিচ্ছে অভিমন্যুর গলার স্বর, শেষবারের মতো।

–“রাখলাম!”
কিছুক্ষন অপেক্ষা করে কোনো জবাব না পেয়ে একটা ভারী নিঃশ্বাস ফেলে ফোন কেটে দিলো অভিমন্যু।
.
.
.
মুখে হাসি চোখে জল নিয়ে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে রইলো তিন্নি, কেন এই পাগলামো তার কোনো উত্তর হয় না। মন বোঝে না মনের কথা। ভালোবাসার যুদ্ধের প্রথম সোপান পেরোলো ও, আরো তো কয়েকশো সিঁড়ি ওঠা বাকি। একতরফা ভালোবাসার মাধুর্য্য তো এই। হারানোর ভয় নেই কোনো। সে নাই বা থাকলো তোমার সাথে, তুমি তো তারই জন্য বেঁচে চলেছো, ভালোবেসে চলেছো, প্রতি মুহূর্তে মনের ভেতর তারই স্পর্শ অনুভব করছো!
বুদ্ধিমানরা বলবেন– “এ আবার কিরকম ভালোবাসা?” কিন্তু, সবাইকে কি বুদ্ধিমান হতেই হবে? কিছু না চেয়েও তো ভালোবাসা যায়! যায় না? আবার, কিছু না পেয়েও তো ভালোবাসা যায়! চাওয়াপাওয়ারই যদি হিসেব কষলে, তাকে কি ভালোবাসা বলা যায়?

**************************__****************************

ওর পেছন পেছন যে সায়কও উঠে এসেছিলো তিন্নি লক্ষ্য করেনি, অভিমন্যুর সাথে ওর সব কথাই যে সায়ক কান পেতে শুনেছে, তাও জানতো না। অভিমন্যু ফোন কেটে দেওয়ার পরও বিভোর হয়ে তিন্নি ফোন হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিল, চটকা কাটলো সায়কের কর্কশ গলায় — “ওই লোকটা ফোন করেছিল তোকে?”

চমকে তাকালো তিন্নি, তারপরই বিরক্তিতে ওর মুখ ভরে গেলো। জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ না করে সায়ককে এড়িয়ে নিজের বার্থে ফেরত আসতে গেলো, রাস্তা আটকে দিলো সায়ক, তিতকুটে গলায় বললো –”দাঁড়া এখানে, কথা আছে।“

— আমার কোনো কথা নেই তোর সাথে। সর, যেতে দে।

দাঁত চিপে কর্কশ স্বরে সায়ক বললো – “ডিড হি রেপ ইউ?”

কানের গোড়ায় বাজে পড়লেও এতটা চমকাতো না তিন্নি – “আর ইউ আউট অফ ইওর মাইন্ড?”

–আমাকে বল সীমন্তিনী, লুকোস না কিছু। কাউকে কিচ্ছু বলবো না আমরা।

প্রচন্ড রাগে কাঁপছিলো তিন্নি — “তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে! এতো নোংরা চিন্তাধারা তোর? কি করে ভাবতে পারলি এমন?”

–ওয়াজ ইট কনসেনসুয়াল সেক্স দেন?

— ”সায়ক!!!!”
চেঁচিয়ে উঠলো তিন্নি। — “স্টপ ইট। জাস্ট শাট ইওর ফিলদি মাউথ।“

–ইন্ডিয়ান আর্মির বেস ক্যাম্পে একটা লোকের সাথে সারা রাত কাটিয়ে এসেছিস তুই আর আমাকে বলছিস আমার নোংরা মেন্টালিটি? লুক এট ইওয়রসেলফ, ইউ স্লাট। ক’জন করেছে তোকে? তিন জন? পাঁচ জন? দশ জন?
সায়ক হয়তো নিজেও জানে না কি বলে চলেছে ও! উত্তেজনায় ওর মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে, কথা বলতে গেলে থুতু ছিটিয়ে আসছে।

প্রচন্ড রাগে চোখে জল চলে এসেছিলো তিন্নির, ততোধিক জোরে চেঁচিয়ে উঠলো – “স্লাট শেমিং শুধু মেয়েদেরই হয়, তাই না সায়ক? অথচ আমাকে একলা অমন জায়গায় ফেলে আসতে তোদের বাধে নি? আজ যদি আমার কাছে ফোন থাকতো ……”

ওদের চেঁচামিচি শুনেই হয়তো মেঘা, নির্মাল্য এরা উঠে এসেছিলো,নির্মাল্য সায়ককে সরিয়ে নিতে যেতে চাইলো – “কি শুরু করেছিস তোরা? চুপ কর! সায়ক, যা হয়েছে একথাগুলো আমাদের দশ জনের মধ্যেই যেন থাকে, কাউকে এসব নিয়ে কেউ কিছু বলিস না।“

অবাক হয়ে গেলো তিন্নি! কি বলছে কি এরা? হততম্বের মতো বলে উঠলো—“কেন বলবো না? লুকিয়ে রাখার মতো কি অপরাধ করেছি? কেন আমার চরিত্র নিয়ে তোরা কাঁটাছেড়া করবি?”

মেঘা গলা ঝেড়ে বলতে শুরু করলো –”দেখ সীমন্তিনী, এখানে আমরা সবাই অ্যাডাল্ট, তুই সত্যিটা খুলে বললেও কেউ তোকে জাজ করবো না……….আমরা শুধু তোর রেপুটেশনের কথা ভেবেই বলছি।“

এবার কেঁদে ফেললো তিন্নি, কাঁদতে কাঁদতেই বললো – “হি ডিড নট রেপ মি। হি ডিড নট টাচ মি। কেন তোরা আমার কথা বিশ্বাস করছিস না?”

মুখচোখে তীব্র ঘৃণা ফুটিয়ে সায়ক বললো – “বাট ইউ ওয়ান্টেড, রাইট? তুই চাস নি লোকটা তোকে টাচ করুক? তোর বাবার দিব্বি খেয়ে বল?”

–“সায়ক আর একটা কথা বললে চলন্ত ট্রেন থেকে তোকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেব বলে রাখলাম।“

নির্মাল্য চেঁচিয়ে উঠলো এবার।
–চুপ কর, সবাই শুনছে। সীমন্তিনী তুমি শান্ত হয়ে সিটে গিয়ে বসো, এ নিয়ে আর কেউ একটা কথাও বলবে না, ব্যাস।

ডুকরে কেঁদে উঠলো তিন্নি – “হি ডিড নট রেপ মি। হি ডিড নট টাচ মি।“

সায়ককে সরিয়ে নিয়ে গেলো নির্মাল্য ট্রেনের অন্যদিকে, মেঘা সান্তনা দিতে গেলো, তিন্নি এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো ওর হাত। পিয়াসা এবার এগিয়ে এসে তিন্নির পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো, ছেলেরা সবাই উঠে গেলো এদিক ওদিক। পিয়াসা তিন্নির মুখটা তুলে ধরে বললো — “ইউ ফল ইন লাভ উইথ হিম, ডিডন্ট ইউ ? “

জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাতে লাগলো তিন্নি, পিয়াসা ভারী গলায় বললো – “ইটস নট লাভ সুইটহার্ট, এটা জাস্ট ইনফ্যাচুয়েশন।“

–হাউ উড ইউ নো? তুমি কি করে জানলে পিয়াসা এটা ভালোবাসা না ইনফাচুয়েশন? আমার মনের ভিতরে কি চলছে তা তোমরা কেউ কি করে জানবে?

মেঘা পিয়াসা চুপ করে গেলো। নিজের বার্থে শুয়ে পড়ে ভাবছিলো তিন্নি – কিছু সমবয়সী, তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত, কর্পোরেট জগতের “আধুনিক চিন্তাসম্মত” মানুষগুলোও কি চমৎকারভাবে মাত্র একরাতের মধ্যেই ওদের “শিক্ষিত ভদ্র” মুখোশ খুলে ফেলে তিন্নির চরিত্রের ওপর কলঙ্ক লাগাতে উৎসাহী হয়ে উঠলো ঠিক কিছু অশিক্ষিত নারীমাংসলোলুপ বখাটে মানুষগুলোর মতোই, কিসের তফাৎ তবে! কান্না পেলো না ওর, শুকনো চোখে আজকের শেষবারের প্রার্থনাটা সেরে নিলো তিন্নি,একমনে বলতে লাগলো – “হে ভগবান, এই ট্রিপটা এখানেই শেষ করো, যত জলদি পারো আমায় বাড়ি পৌঁছে দাও!”

রাতের ডাউন নর্থবেঙ্গল মেইল ট্রেনের গতিবেগও হঠাৎই যেন বেড়ে গেলো।
.
.
.
.

© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।
ক্রমশঃ (হয়তো পরশু, শরীর ঠিক থাকলে)

বিশেষ বিশেষ নোট~
নর্থবেঙ্গলের ঠান্ডা জোলো হাওয়া আর হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি ফ্রি-ব্রেকফাস্ট ছাড়া সবটাই কাল্পনিক।😈🤷🏻‍♀️
আর একটা কথা~ ভালোলাগার অংশটি কমেন্ট সেকশনে মার্ক করলে খুশি হবো।

**************************__****************************

বিঃদ্র – আপনাদের যারা এখনো “মন, তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম -Mon tomake chhunye dilam – লেখনী সুমন্দ্রা মিত্র ” পেজটি ফলো করেননি, তাদের সকলকে একান্ত বিনীত অনুরোধ মেনপেজটি লাইক ও ফলো করুনএবং পাশে গিয়ে SEE FIRST অপশনে ক্লিক করে রাখুন, পেজে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। এছাড়াও Facebook Storyতে চোখ রাখতে পারেন, মেনপেজে কিছু পোস্ট হলে এই পেজের storyতেও লিঙ্ক দেওয়া থাকে। আপনাদের বন্ধু ও পরিবারবর্গদেরও Invite করুন মেনপেজটি লাইক ও ফলো করতে। লিংক 👇
https://www.facebook.com/মন-তোমাকে-ছুঁয়ে-দিলাম-লেখনী-সুমন্দ্রা-মিত্র-110448980674312/

***********************__******************************

সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here