সূর্য ডোবার আগে পর্ব-১৬

0
2176

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-১৬
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
.

জুনের মাঝামাঝি, খাতায় কলমে বর্ষাকাল হলেও এই ক’দিন টানা ভ্যাপসা গরম চলছে। ফুলস্পীডে ফ্যান চললেও শরীর ঘেমে যায়! পিঁক পিঁক করে মুঠোফোনের যান্ত্রিকস্বর জানিয়ে দিলো, সময় হয়ে গেছে – এবার উঠে পড়তে হবে!

ভারী একটা নিশ্বাস ফেললো তিন্নি। এতো ভোরেও শরীর অবসন্ন, মন ভার হয়ে আছে, সারারাত জেগে কান্নার ক্লান্তি চোখে মুখে স্পষ্ট। আল্যার্মটা বন্ধ করে আজও কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে থাকলো তিন্নি, গায়ের চাদরটা পায়ের কাছে পড়ে। মা বাবার বেডরুম থেকে কথা কাটাকাটির অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে আসছে, না শুনতে চাইলেও কানে এসেই পড়ছে! গত দিনকয়েক ধরে একই রুটিন, যদিও আজ আর না শোনার ভাণ করে তিন্নিকে বিছানায় মটকা মেরে শুয়ে থাকলে চলবে না, অফিস যেতেই হবে। ইচ্ছে না করলেও জোর করেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়লো, পরিপাটি করে বাসি বিছানা তুলে তিন্নি যখন বাইরে এলো, ঘড়িতে তখন সাড়ে ছয়টাও বাজে নি! উঁকি মেরে দেখলো রান্নাঘরের গ্যাসে কিছু একটা চাপানো, কেউ নেই। মা বাবার বেডরুমের বন্ধ দরজার ওপারে চাপা ঝগড়ার আওয়াজটা আরো স্পষ্ট এবার। ভাস্বতী দেবীর তীক্ষ্ণ গলা ভেসে আসছে

— কি দরকার ছিল তোমার মেয়েকে পারমিশন দেওয়ার, এমন একা একা ঘুরতে যাওয়ার ?

— দরকার তো অনেককিছুই ছিল না ভাস্বতী, তোমারই বা কি কোনো দরকার ছিল মেয়েটার ওপর এমনভাবে জুলুম করার, দিনের পর দিন?

— আমি জুলুম করি? তিন্নির ওপর? ও আমার মেয়ে নয়? আমি পেটে ধরি নি ওকে?

— সে কথা হচ্ছে না। ডাক্তারবাবু কি বলে গেলেন তুমি শোনো নি বোধহয়! এটা যে একদিনের ব্যাপার নয়, ভাস্বতী। দিনের পর দিন মানসিক চাপে, অবসাদে, শরীরের যত্ন না নিয়ে আজ তিন্নির এই হাল! সপ্তাহে পাঁচদিন মেয়েটা কলকাতা অবধি ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করে, কোন সকালে বেরোয়, আর ফেরে সেই রাত্রে! অফিস আর বাড়ি ছাড়া কি আছে ওর জীবনে? না কোনো বন্ধুবান্ধব, না একটা সুস্থ পরিবেশ বাড়িতে! নিজের প্রয়োজনে আজ অবধি ছুটি অবধি নেয় না! ওকে একটু খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে দাও ভাস্বতী, ওর বয়সী অন্য মেয়েদের দেখো তারা কত হাসিখুশি! তিন্নির চোখের জল তুমি দেখতে পাও না?

— চাকরি করে বলে কি মেয়েকে মাথায় তুলে নাচতে হবে? লেখাপড়া শিখিয়েছি, কষ্ট করে মানুষ করেছি তা শোধ করবে না? যখন যা খুশি করার স্বাধীনতা দিতে হবে?

— তুমি আমি ওকে স্বাধীনতা দেওয়ার কেউ নই ভাস্বতী, এটা ভুলে যেও ন। তিন্নি অ্যাডাল্ট, আঠারো বছর বয়স থেকেই ও স্বাধীন।

— তবে আর কি? মেয়েকে যথেচ্ছার করতে দাও! ধিঙ্গি মেয়ে ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়াক , রাত কাটাক, ঘুরতে যাক !

— শুভ বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গেলে তুমি ওকে বাধা দিতে ভাস্বতী?

— শুভ ছেলে। ছেলেদের চরিত্রে দাগ লাগে না !

— আর বেকার ছেলে দিদির ঘাড়ে বসে নিজের শখ আহ্লাদগুলো কিন্তু পূরণ করছে! তাকে তুমি শাসনও করো না আর এদিকে মেয়েকে……

— সব দোষ তো আমার, তোমার আদরের মেয়ে তো ধোয়া তুলসীপাতা! সাধে আটকাই আমি? আজ না হয় কাল, তিন্নি পরের বাড়ি চলেই যাবে। এসব গুণপনা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির ঘর করতে পারবে তোমার মেয়ে?

 

শেষের মুখঝামটার পর রঞ্জনবাবুর আর গলা শোনা গেলো না। কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে বাথরুমে চলে গেলো তিন্নি। সেই ছোটবেলা থেকে প্রতিদিন এককথা শুনে ও ক্লান্ত! এবাড়িতে আর একদণ্ডও থাকতে মন চাইছে না ওর!

 

.

.

.

ট্রিপ থেকে ফিরে এসেই প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তিন্নি, গায়ে প্রবল জ্বর, শরীরে থেকে থেকে কাঁপুনি দিচ্ছে – ডাক্তার এসে বললেন, ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গি নয়, প্রচন্ড মানসিক চাপে হয়তো এমন হয়েছে। তাও বেশ কিছু ব্লাডটেস্ট করার পরামর্শ দিয়ে উনি চলে গেলেন ফীজ নিয়ে। পর পর দুই দিন অফিস যেতে পারলো না তিন্নি, এমার্জেন্সি মেডিকেল লিভ নিলো বাধ্য হয়ে। রঞ্জনবাবু ভাস্বতীদেবীর ওপর রাগারাগি করতে লাগলেন, ওনার জেদের জন্য তিন্নিকে ডেইলি প্যাসেঞ্জেরি করতে হয়েছে আর তার জন্যই ওর শরীর এভাবে দুর্বল হয়ে উঠেছে। গত দুই দিন নিজের ঘরে অসুস্থ শরীরেএকলা শুয়ে থেকে তিন্নি মা -বাবার ঝগড়া শুনে গেছে সারাদিন , আর সান্তনা খুঁজতে আশ্রয় নিয়েছে অভিমন্যুর মিলিয়ে যাওয়া ঘ্রান লেগে থাকা আর্মি জ্যাকেটটা জড়িয়ে ধরে। ভাগ্যের কি অদ্ভুত পরিহাস! তিনদিন , মাত্র তিনদিনের আলাপে একটা মানুষের অস্তিত্ব ওর সকল যন্ত্রনা ভুলিয়ে দেয় আবার ওর মনের নতুন যন্ত্রণার কারণও সেই মানুষটাই। সিকিম থেকে ফেরার থেকে স্যাঁতসেঁতে শ্যাওলা পড়া একটা দুঃখ দুঃখ ভাব সবসময় তিন্নিকে জড়িয়ে ধরে থাকে সবসময়। কান্নাও আসে না আর, শুধু চুপ করে গেছে ও, আগের থেকেও আরো অনেক অ-নেক চুপ, ঠান্ডা মৃতদেহের মতো।

বাড়ির অশান্তি, দিদির বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়া – শুভর যথারীতি এ ব্যাপারে মাথাব্যথা নেই। সে নিজের খেয়ালে ব্যস্ত , দিদির ওষুধগুলো এনে দিয়েই ও বেরিয়ে গেছে বন্ধুদের সাথে বারীন দা’র জিমে আড্ডা দিতে। যদিও মুখে যাই বলুন, ভাস্বতীদেবীও ভয় পেয়ে গেছেন। মায়ের মন, একটা “কু” তো ডাকছে মনের মধ্যে যে , ” যে মেয়ের প্রথমবার বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাওয়া নিয়ে এতো উৎসাহ ছিল, মাত্র তিনদিনে কি এমন হলো যে প্রায় আধমরা হয়ে ফিরে এলো!” ডাক্তারও যে রোগ ধরতে পারছে না। তার ওপর, মেয়ের শরীর খারাপের চিন্তার সাথে এ চিন্তাটাও ঢুকেছে ওঁনার মনে, যদি তিন্নি সত্যিই এত অসুস্থ হয় পড়ে তবে চাকরি করবে কি করে? আর চাকরি না করলে মাসগেলে অতগুলো টাকা, পঙ্গু স্বামীর চিকিৎসার খরচ, সংসার —- একা হাতে কি করে সামলাবেন উনি?

আজ তিনদিনের দিন সকালে অন্যদিনের থেকে ঘন্টাখানেক আগেই তিন্নি অফিস যাওয়ার জন্য যখন রেডি হয়ে বেরোলো, তার মিনিট দশেক আগেই বড়ো একটা চমক অপেক্ষা করছিলো তিন্নির জন্য। খাবার টেবিলে চিরাচরিত আধজলন্ত অচ্ছেদ্দার ভাত আর খোসা সমেত আলুসেদ্ধর বদলে আজ ভাতের থালা, মাছের ঝোল টেবিলে পরিপাটি সাজানো। অবাক হয়ে থাকা তিন্নির হাতে একটা বড়োসড়ো টিফিনবাক্স ধরিয়ে দিয়ে ভাস্বতীদেবী বলেছিলেন – “জানি, তোর “পছন্দের” মা হয়ে উঠতে পারি নি কোনোদিন, ঠিক যেমন তোর উচ্চশিক্ষিত বাবার অশিক্ষিত স্ত্রী। তবুও তোকে পেটে ধরেছি ……………, কলকাতার বাজারদর না হয় আমি জানি না কিন্তু তুই এটুকু তো বলতেই পারতিস ওই টাকায় হাত খরচ কুলোয় না?”

 

ঠোঁট টিপে চুপ করেছিল তিন্নি। ভুল করেও মুখে আনলো না যে, যখন ও সত্যিই বলেছিলো ওই কটা টাকায় হাতখরচ কুলোয় না, বাড়িতে কি প্রবল অশান্তি হয়েছিল। এতদিনের অভিজ্ঞতায় তিন্নি জেনে গেছে এসব কথা বলতে নেই, উল্টে কথার পিঠে কথা বাড়ে। তারপর ইমোশনাল অত্যাচার, চিৎকার, চোখের জল আর পাড়া কাঁপিয়ে নাটক! তারচেয়ে মা যখন নিজেই অনুতপ্ত, চোখে আঙ্গুল দিয়ে সত্যিটা নাই বা দেখিয়ে দিলো আজ। চুপচাপ টিফিন বাক্স নিয়ে, রঞ্জনবাবুকে অনান্যদিনের মতো দুইগালে হামি খেয়ে সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো তিন্নি, অন্যান্য দিনের থেকে অনে-ক আগে। আশা করা যায় আজ থেকে আর অফিসের কেউ ওর দেরি করে আসা নিয়ে আঙ্গুল তুলবে না।

**************************__****************************

অন্যদিনের থেকে ঘন্টাখানেক আগেই বেরোনোয় আজ ট্রেন, অটোর লাইন-সবেতেই তুলনামূলক কম ভিড়! সব পেরিয়ে যখন সেক্টর ফাইভের চোদ্দতলার অফিসে ঢুকলো তিন্নি, তখন ঘড়ির কাঁটা সকাল নয়টাও পেরোয় নি। এতদিন পর অফিস এসে সম্পূর্ণভাবে বায়ুনরোধক এসি ফ্লোরেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো তিন্নি, এই তো ওর চেনা পরিবেশ, চেনা কমফোর্ট। এ’কয়দিন বাড়িতে রাতদিন অশান্তিকর পরিবেশে দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিলো ওর! ওডিসির ফ্লোরের মেয়েদের ওয়াশরুমটায় ঢুকে সময় নিয়ে সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে হাত ধুলো তিন্নি, ঘামে ভেজা মুখ রুমাল দিয়ে মুছে ব্যাগে রাখা কাজলটা চোখে টেনে নিল, আর ঠোঁটে একটু লিপগ্লস। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ঠিকরে বেরিয়ে এলো তিন্নির! হয়তো বা নিজের চোখে অন্য কারো ছায়া দেখেই। এক মুহূর্ত মাত্র, তারপরই দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত মেকি হাসিটা ঠোঁটের দুপাশে অদৃশ্য সেলোটেপ দিয়ে আটকে রেখে নিজের কিউবিকলের দিকে পা বাড়ালো, দৃপ্ত পায়ে। আগামী নয় ঘন্টা এই মেকি হাসিটা তিন্নির ঠোঁটে লেগে থাকবে দক্ষ অভিনেত্রীর মতো, একটুও নড়চড় হবে না। কারো সাথে কোনো কথা নেই, কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে ও যেন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। চা কফির ব্রেক নেবে না, মাঝে হয়তো শুধু টিফিন করতে উঠবে বা হয়তো তাও না। সাদা আলো ঠিকরে আসা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে কোডিং এন্ড প্রোগ্রামিংয়ে ডুবে যাবে সীমন্তিনী আচারিয়া, সেক্টর ফাইভের চোদ্দতলার ফ্লোরে সহকর্মীদের কাছে সময়বিশেষে যে “মিস স্যাড ফেস” বা “মিস ডাঁটিয়াল” নামেই পরিচিত।

এতো আগে অফিস এসে তিন্নি দেখলো বেশিরভাগ চেয়ারই ফাঁকা, এমনকি ওদের টীমলিড মিথিলেশও তখনো অবধি এসে পৌঁছয় নি। এতদিন তিন্নি ভাবতো ও হয়তো একাই সবার চেয়ে ঘন্টাখানেক দেরি করে আসে, কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। নিয়মকে কাঁচকলা দেখিয়ে কেউই সময়ে আসে না, সায়কও না। নিজের নির্দিষ্ট কিউবিকলে বসে কম্পিউটারটা অন করেই দেখলো মিথিলেশের মেল একটা কাল রাতের, ওকে ডেকে পাঠিয়েছে – “আর্জেন্ট মিটিং।“ মৃদু হেসে নিজের পেন্ডিং কাজগুলো গোছাতে লাগলো তিন্নি, আড়চোখে খেয়াল করলো মিথিলেশ এলো আরো মিনিট পনেরো- বিশেক পরে। কম্পিউটার লক করে প্রায় পিছু পিছুই মিথিলেশের কেবিনে এলো তিন্নি, সহজ কেজো গলায় বললো

– “গুডমর্নিং মিথিলেশ। ডেকে পাঠিয়েছিলে?”

মিথিলেশ প্রত্যাশা করেনি তিন্নি আজ এতো তাড়াতাড়ি অফিসে চলে আসবে, ওর মিটিং ডাকার মুখ্য উদ্দেশ্যটাই ছিল লেটে অফিস আসা নিয়ে তিন্নিকে ওয়ার্নিং দেওয়া। একটু ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো মিথিলেশ। অপ্রস্তুত হয়ে হেসে বললো – “ ওহ্ তুমি??? হ্যাঁ ডেকেছিলাম! এখন তোমার শরীর কেমন আছে?”

— আগের থেকে বেটার।

অস্বস্তিকর নীরবতা পেরিয়ে গেলো কয়েক মুহূর্ত। কি নিয়ে কথা শুরু করবে মিথিলেশ বুঝতে পারছিলো না, টেবিল থেকে পেপারওয়েটটা তুলে নিয়ে ঘোরাতে লাগলো। হাতঘড়িতে সময় দেখলো তিন্নি, একমিনিট হয়ে যেতে গলা খাঁকরি দিলো – “খুব ইম্পরট্যান্ট কিছু না হলে আমি যাই? অনেক পেন্ডিং কাজ আছে।“

— “দেখো সীমন্তিনী, যে জন্য তোমায় ডাকা…….” একটা ঢোঁক গিলে শুরু করলো মিথিলেশ —- “তোমাকে নিয়ে প্রজেক্টে একটু প্রব্লেম হয়েছে।“

ভুরু উঁচিয়ে তাকালো তিন্নি – “কি প্রব্লেম?”

— “মানে বেশ কিছু এমপ্ল্যয়ী তোমার সাথে এক টিমে কাজ করতে চাইছে না!”

বিদ্যুৎচমকের মতো একটাই নাম মাথায় এলো — “সায়ক!!!”

তিন্নি মনে মনে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে গেলো, সায়ক ছাড়া এ কাজ আর কারো নয়। তাও মিথিলেশ নিজের মুখে সেটা স্বীকার করুক সেটাই চাইছিলো তিন্নি। মুখে বললো – “কে কাজ করতে চাইছে না? তার রিজন কি?”

— কে কমপ্লেন করেছে সেটা ইম্পর্ট্যান্ট নয়, আমি চাই তুমি ব্যাপারটা মিটিয়ে নাও।

— কার প্রব্লেম সেটা না জানলে কার সাথে কি মেটাবো মিথিলেশ? যতদূর মনে হচ্ছে আমার কোনো প্রজেক্ট , কোডিং থেকে ক্লায়েন্ট কোনো কমপ্লেইন করে নি , এমনকি ছুটি নেওয়ার আগেও যে প্রজেক্টটা ডেডলাইনের আগেই শেষ করেছিলাম, সেটারও ফিডব্যাক ভালোই।

— কাজের জন্য নয়, ইটস্ আ্যবাউট দ্য ওয়্যে ইউ বিহেভ।

ছুরির শানিত ফলের মতো ধারালো গলায় বললো তিন্নি – “হাউ শুড আই বিহেভ? অফিসটা আমার কাজের জায়গা মিথিলেশ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক মেন্টেন করার জন্য তো নয়?”

— টিমে থাকতে গেলে এটুকু করতেই হয়। এই যে তুমি না বলে ঘুরে এসেই আবার দুদিনের সিকলিভ নিয়ে নিলে এগুলো তো ঠিক নয়, তাই না?

— ইফ ইউ ওয়ান্ট, ডাক্তারের রিপোর্ট দেখাতে পারি। তাছাড়া যাদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম তারাও জানে ওখানে পৌঁছে আমায় কি কি সিচ্যুয়েশন ফেস করতে হয়েছে।

তিন্নির কথার যুক্তিতে পেরে উঠলো না মিথিলেশ! বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো – “সেটা তোমার পার্সোনাল ম্যাটার সীমন্তিনী, আমাকে এতে ইনভল্ভ করো না।“

আর এমন দ্বিচারিতা মেনে নেওয়া যায় না, কাটা কাটা স্বরে তিন্নি বললো – “সায়ক কমপ্লেইন করেছে, তাই তো?”

চোখ ফিরিয়ে নিল মিথিলেশ। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো –“আমি তোমাকে কোনো নাম দেব না সীমন্তিনী, তবে এটা তোমার ফার্স্ট ওয়ার্নিং, এরপর হয়তো HR রিপোর্ট করতে হবে।“

তিন্নি চলে আসছিলো, মিথিলেশ ওকে ডাকলো আবার – “আই এক্সপেক্ট ইউ টু বিহেভ লাইক এ প্রফেশনাল। সায়কের সাথে তোমার যে জয়েন্ট আসাইনমেন্টের কাজ তা চলছে তার ফাংশনাল রিকুইরেমেন্ট আর ফাইনাল ডসিয়ার তিনদিনের মধ্যে আমাকে প্রেজেন্ট করবে।“

কথা না বাড়িয়ে নিজের সিটে ফিরে এলো তিন্নি। সায়ক মুখ বাড়িয়ে দেখছিলো, তিন্নিকে দেখেই নিজের কিউবিকলে ঢুকে পড়লে, একদৃষ্টিতে কিছুক্ষন সেইদিকে তাকিয়ে থেকে নিজের চেয়ার টেনে কম্পিউটারের সামনে বসলো তিন্নি। কলকাতার সেক্টর ফাইভের চোদ্দতলার কাঁচ দিয়ে ঢাকা সম্পূর্ণ এসি ফ্লোরের শীতল আবহাওয়া কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন ওকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলো সিকিমের সেই পার্বত্য উপত্যকায়…..মিলিটারি ছাউনিতে, সেই বৃষ্টিভেজা দিনটায়। সেই গাঢ় বাদামি চোখদুটো, সেই তীব্র পুরুষালি হাতের ছোঁয়া আজও যে তিন্নিকে তাড়া করে বেড়ায় দিনে রাতে, স্বপ্নে বা জেগে থাকায়! ফিরে আসাটা কি খুব জরুরি ছিল? ডুকরে আসা দীর্ঘশ্বাসটা লুকিয়ে নিলো তিন্নি, মেকি হাসিটা ঠোঁটের আগায় আটকে একবারের জন্যও কম্পিউটার থেকে চোখ না সরিয়ে পরবর্তী ঘণ্টাগুলো কিবোর্ডে শব্দ করে ঝড়ের গতিতে পাতার পর পাতা ফ্রেশ প্রোগ্রামিং কোডিং লিখে যেতে লাগলো। একমাত্র কাজের মধ্যে ডুবে থাকলেই যে অভিমন্যুকে ভুলে থাকতে পারবে ও!

.
.
.
.

© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।
ক্রমশঃ (কাল দুপুর দুটোয়)

**************************__****************************

বিঃদ্র – আপনাদের যারা এখনো “মন, তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম -Mon tomake chhunye dilam – লেখনী সুমন্দ্রা মিত্র ” পেজটি ফলো করেননি, তাদের সকলকে একান্ত বিনীত অনুরোধ মেনপেজটি লাইক ও ফলো করুনএবং পাশে গিয়ে SEE FIRST অপশনে ক্লিক করে রাখুন, পেজে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। এছাড়াও Facebook Storyতে চোখ রাখতে পারেন, মেনপেজে কিছু পোস্ট হলে এই পেজের storyতেও লিঙ্ক দেওয়া থাকে। আপনাদের বন্ধু ও পরিবারবর্গদেরও Invite করুন মেনপেজটি লাইক ও ফলো করতে। লিংক 👇
https://www.facebook.com/মন-তোমাকে-ছুঁয়ে-দিলাম-লেখনী-সুমন্দ্রা-মিত্র-110448980674312/

***********************__******************************

সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here