#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-২৫
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
.
সবুজ আর সবুজ চারদিক।
বিভিন্ন শেডের, বিভিন্ন শেপের। পাইন গাছের ঘন সবুজ, দেবদারুর হালকা সবুজ, শিরিসের ফ্যাকাশে সবুজ। মাঝে মাঝে সেই সবুজের একঘেঁয়েমি ভুলিয়ে দিচ্ছে সদ্য ফোটা রডোডেন্ড্রনের থোকা থোকা গোলাপি ফুল। দূরে হিমালয়ের পাহাড় মেঘে ঢাকা, আর ঘিঞ্জি গ্যাংটক শহরের কুয়াশামাখা রংবেরঙের বাড়ির মধ্যে গ্যাংটক সৈনিক হাসপাতাল যেন একটুকরো সুকুমার ওয়েসিস।
সকাল আটটা হবে বোধহয়, আবছা কুয়াশার চাদরে সূর্যের মুখ ঢাকা। কিচিরমিচির পাখির ডাক ভেসে আসছে চারপাশের এভারগ্রিন এরিয়া থেকে। গ্যাংটকের আর্মি হাসপাতালে আয়া-নার্স- ওয়ার্ডবয়দের ছোটাছুটির ভিড়ে খোলা বারান্দায় মেজর অভিমন্যু সেন আর প্রবীণ ডক্টরের কথোপকথন চলছিল তিন্নিকে নিয়ে।
— ইউ আর লাকি টু হ্যাভ হার ইন ইওর লাইফ মেজর।
সৌম্যকান্তি, অভিজ্ঞ, প্রবীণ সেনাডাক্তার তিন্নির প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রায়। মেজর অভিমন্যু সেন তখনও উত্তেজিত, নিজের শারীরিক অবস্থার দিকে ওঁনার খেয়াল নেই, বুকের ভিতরে জ্বলছে একটি জলজ্যান্ত ভিসুভিয়াস। চাপা ক্রোধের সাথে অস্ফুটে বলে উঠলেন
— শি শুড নট হ্যাভ কাম হিয়ার।
— শি শুড নট বাট শি ডিড এনিওয়ে। আ্যপ্রিসিয়েট দ্যাট মেজর।
সিনিওরিটির পদমর্যাদার মান রেখে ডাক্তারবাবুর মৃদু ধমকের প্রত্যুত্তর করলো না অভিমন্যু, তবে মনের মধ্যে চেপে থাকা ধিকিধিকি ক্রোধের আঁচ তখনও শান্ত হয় নি ওর। প্রসঙ্গ পাল্টে পরের প্রশ্নতে ফিরে গেলো
—- এখন কেমন আছে সীমন্তিনী? কাল রাতে আচমকা ওভাবে সেন্সলেস হয়ে গেল….. এনিথিং সিরিয়াস আ্যবাউট হার হেলথ ?
—- ওয়েল, শি ডাজ হ্যাভ এন উইক হার্ট …. তবে মেডিক্যালি স্পিকিং, কালকে মিস আচারিয়ার সেন্সলেস হয়ে যাওয়াটা সম্ভবত সারাদিন চলা মেন্টাল স্ট্রেস এন্ড ট্রমার কারণেই হয়েছিল, তার সাথে ডিহাইড্রেশন।রাতে আমরা দুই ডোস মরফিন পুশ করেছি, আফটার এ লং ন্যাপ শি উইল বি অলরাইট।
— থ্যাংক ইউ ডক্টর।
— মাই প্লেজার অভিমন্যু। টেক কেয়ার অফ হার। শি ইজ প্রেসিয়াস।
ফাঁকা হাসপাতাল করিডোরে হালকা জুতোর নিঃশব্দ পায়ে প্রবীণ ডক্টর চলে যেতে যেতে মেজরের মৃদু স্বর ওঁনার কান ছুঁয়ে গেলো — আই নো ডক্টর, আই উইল নট লেট্ এনিথিং হ্যাপেন টু হার।
**************************__****************************
চেনা স্পর্শ, চেনা অনুভূতি!
না, আজ আর চমকে ওঠার নেই! তিন্নি নিশ্চিত, আজ চোখ খুললে “তাকে”ই দেখতে পাবে, স্বপ্নে নয় – সশরীরে। ওর ডানহাতটা যে বহু পরিচিত, বড্ড প্রিয় সেই শক্ত মুঠিতে গ্রেফতার। সকালের মিষ্টি রোদ জানলার সবুজ রঙা পর্দার ফাঁক দিয়ে এসে কেবিনের ভেতর আলোছায়ার খেলা লাগিয়ে দিয়েছে। ওষুধের ঝাঁঝালো গন্ধ, দূর থেকে ভেসে আসছে আ্যম্বুলেন্সের সাইরেন, নরম কেডস পায়ে নার্স আর ওয়ার্ডবয়দের ছুটোছুটির মাঝে ভারী হয়ে থাকা চোখের পাতাদুটো অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খুললো তিন্নি। ঘরের আবছা আলো অন্ধকার চোখে সয়ে আসতে দেখলো ওর ঠান্ডা হাত তখনও অভিমন্যুর কড়াপড়া বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয়, অসম্ভব কঠিন দৃষ্টিতে নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে আছে অভিমন্যু তিন্নির দিকে। চোয়াল শক্ত, মাথার আর ঘাড়ের শিরা ফুলে উঠেছে। তিন্নি চোখ মেলে তাকাতে সেই নির্নিমেষ দৃষ্টি পলকের জন্য একটু কোমল হয়ে এসেও আবার ধক করে জ্বলে উঠলো চাপা রাগে। হাই-হ্যালো-গুডমর্নিং কিচ্ছু নয়, সাড়ে চারমাস পর মুখোমুখি হয়ে হিমশীতল কণ্ঠে অভিমন্যুর প্রথম সম্ভাষণ তিন্নিকে
— কেন এলে তুমি? এই তোমার শরীরের অবস্থা, তারপরও?
শরীর ভারী হয়ে আছে, হাতে একটা স্যালাইনের চ্যানেল, সারারাত সিডেটিভ চলেছে বোধহয়। কতদিন পর আবার দেখা হলো যেন? দিন-তারিখ-সময় সব গুলিয়ে গেছে তিন্নির। এতো শারীরিক কষ্টেও হাসি পেলো ওর। বড়ো দুঃখের সেই হাসি আর শান্ত স্নিগ্ধ চোখে ছলছল করছে খুশির অশ্রু! হাসিকান্না মেশানো ধীর গলায় জিজ্ঞেস করলো
– – কেমন আছো?
— আমার প্রশ্নের উত্তর এটা নয় সীমন্তিনী।
এতো অবুঝ কেন লোকটা? সে বোঝে না “কেন?” মুচড়ে উঠলো বুকের ভেতরটা, তীব্র অভিমানে মুচড়ে উঠলো ঠোঁট। অভিমানী গলা বলে উঠলো
—- আবার তুমি বকছো আমায়?
একনিমেষে নরম হয়ে এলো অভিমন্যুর হাতের মুঠো, গলায় আর আগের ঝাঁঝ নেই, তাও ভরাট গলায় বললো
– হ্য্যঁ বকছি! কেন এলে তুমি?
— তুমি আসতে না?
হাতের মুঠি আলগা হয়ে গেলো অভিমন্যুর! কি এক তীব্র উত্তেজনায় সশব্দে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, হয়তো নিজের রাগ বা মনের উদ্গত আবেগ সংযত করতেই! ভারী একটা নিঃশ্বাস ফেলে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো অভিমন্যু, বাইরের দিকে তাকিয়ে ধীর স্বরে বললো
— হয়তো না সীমন্তিনী….. হয়তো না।
জানা কথা, জানা ব্যাথা!
ওষুধের ঘোর না থাকলে তিন্নি একথা মুখেও আনতো না। সত্যিই এ নিয়ে তিন্নির কোনো প্রত্যাশা নেই। তাও কিছু কিছু অনিবার্য সত্যকথা বুকের কোন গভীরে গিয়ে শেল বেঁধে, তা’তো সে’ই জানে। অভিমন্যু দেখতে পেলো না টুপ্ করে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো তিন্নির চোখের কোল বেয়ে। জোর করে হেসে উঠলো তিন্নি
– বেশ তো! না আসতে।আমি তো এলাম!
আগের মতোই ধীর স্বরে অভিমন্যুর ঠোঁট দুটি নড়ে উঠলো, তিন্নির দিকে পেছন ফিরেই
— কেন এলে?
অসহায়ভাবে তিন্নি অনেকক্ষন অ-নেকক্ষন চেয়ে রইলো অভিমন্যুর দিকে। অভিমন্যু কি রেগে গেছে? একে কি করে বোঝাবে তিন্নি খবরটা শোনার পর থেকে ওর মনের মধ্যে বয়ে চলা উথলপাতাল কালবৈশাখীর ঢেউ? পাথরকঠিন এই আদ্যন্ত “আনরোমান্টিক” মানুষটিকে কি করে বোঝাবে তিন্নি কেন ও ছুটে এসেছে এক ডাকে, এক কাপড়ে, আগুপিছু কিচ্ছু চিন্তাভাবনা না করেই? অনেকটা সময় নিয়ে স্থলিতস্বরে তিন্নি বললো
— তুমি জানো না? তোমাকে ছেড়ে আমি কোথায় যাবো অভিমন্যু?
এতক্ষনে তিন্নির দিকে ফিরলো অভিমন্যু। মেজর অভিমন্যু সেনেরঅনুভূতিহীন চোখের কোনটা কি আজ একটু হলেও ভেজা? মেঘের মতো অবিচল গম্ভীর স্বরে অভিমন্যু বললো
– এত ভালোবাসা ভালো নয় সীমন্তিনী। পরে তুমিই কষ্ট পাবে।
আবারো হাসি ফুটে উঠলো তিন্নির মুখে, বড়ো দুঃখের সেই হাসি! নরম গলায় বললো
— কিন্তু এখন তো সুখী আছি। আমাকে এই মুহুর্তে বাঁচতে দাও অভিমন্যু। তোমার সাথে, তোমার পাশে থাকতে দাও… আমার মতো করে।
কি জবাব হয় এই নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদনের? পাথরদিল পোড়খাওয়া মেজর কি করে বকবেন এই পাগল মেয়েটাকে?
চুপ করে গেলো অভিমন্যু। জানলার কাছ থেকে সরে এসে বসলো তিন্নির বেডের পাশে, হাত বাড়িয়ে টেনে নিলো নড়বড়ে তিনপেয়ে লোহার টুলটা। উস্কোখুস্কো একমাথা কালো ঘন চুল, অবাধ্য চুলগুলো মুখের উপর এলোমেলো ছড়িয়ে। আলতো হাতে তিন্নির রুগ্ন শুষ্ক মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিলো চুলগুলো। কতদিন পর চেনা স্পর্শটা আবার পেলো তিন্নি। পরম শান্তিতে চোখ বুজিয়ে নিয়ে করবো না করবো না করেও তারপর সেই অমোঘ প্রশ্নটা করেই ফেললো, কাল থেকে যে প্রশ্নটা কুরে কুরে খাচ্ছে বুকের ভেতর, একমুহূর্ত স্বস্তি দেয় নি। একদম নিচু গলায় বিড়বিড় করে উঠলো
— আমি তোমার এমার্জেন্সি কন্টাক্ট! কেন?
একমুহূর্ত থমকে গেলো অভিমন্যুর হাত, তারপর একই ভাবে তিন্নির চুলে আঙ্গুলগুলো খেলা করে বেড়াতে লাগলো, ভারী স্বরে বললো
—– তুমি আর আমার ফ্যামিলি। ইউ বোথ ডিসার্ভ টু নো, ইন কেস আমার কিছু হয়ে যায়……
না বলেও তবে ভালোবাসা বোঝানো যায়? এত করুনভাবে? নোনতা জল বাধ মানে না, গুমড়ে ওঠে বুকের ওপর। কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না তিন্নি! আবছা হয়ে আসা গলায় ফুটে উঠলো স্বর
— থ্যাংক ইউ।
— কেন?
— আমাকে এতটা কাছের ভাবার জন্য!
— ওহ…হুমম! ইউ আর ওয়েলকাম ম্যাডাম।
আলতো হাতে তিন্নির চুলে হাত বোলাতে বোলাতে কিছুসময় পর অভিমন্যুর মনে পড়লো আজকের দ্বিতীয় জ্বলন্ত সমস্যাটি।চিন্তাজড়ানো গলায় বললো
— এভাবে চলে এলে…… বাড়িতে কি বলেছো?
অভিমন্যুর নরম ছোঁয়ায় একটু একটু করে গলে যাচ্ছিলো তিন্নি, ওর প্রশ্নটায় আড়ষ্ঠকাঠ হয়ে উঠলো, কাল রঞ্জনবাবুর সাথে চেঁচিয়ে কথা বলাটা মনে হতেই হয়তো! কর্নেল স্যারের ফোন পাওয়ামাত্র কলকাতা থেকে বেরিয়ে আসা, (আসলে) অভিমন্যুর কাছে পৌঁছনোটাই ওর কাছে মূল প্রায়োরিটি ছিল, তার পরবর্তী কনসেকোয়েন্স কি কি হতে পারে সে কথা ভাবার সময় ছিল না তিন্নির। এখন একরাত পেরিয়ে গেছে, কাল দুপুরের পর থেকে বাড়িতে একটাও ফোন করে নি তিন্নি! মা বাবা কি ভাবছেন কে জানে! আস্তে করে বললো
— এখানে এসেছি বলি নি, বলেছি অফিসের কাজে আটকে গেছি, বাড়ি ফিরতে পারবো না……
স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অভিমন্যু তিন্নির দিকে। তিন্নির পানপাতার মতো মুখ, ছোট্ট কপাল, তিরতিরে পাতলা গোলাপি ঠোঁট, দীঘল কালো ছলছলে চোখ, আর সেই চোখে ফুটে ওঠা পাগলকরা বিধ্বংসী ভালোবাসার গোপন অঙ্গীকার, কেমন একটা ছাইচাপা আগুন যা দ্বগ্ধ করে দিচ্ছিলো অভিমন্যুর সকল প্রতিরোধ, সকল সংযম। অভিমন্যুর চোখের তারায় খেলা করে যাচ্ছিলো একের পর এক অনুভূতি, সিডেটিভের আচ্ছন্নতায় তিন্নি ঠিক পড়তে পারছিলো না! কি ছিল সেই দৃষ্টিতে? সে কথা থাক! পাঠকরা বুঝে নিন।
কিন্তু অভিমন্যুর প্রায় অন্তর্ভেদী দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষন চোখ খোলা রাখতে পারলো না তিন্নি, যেন ওর ভেতর অবধি পড়ে নিচ্ছে সব! জোর করে চোখের পাতা বুজিয়ে নিলো। কপালের ওপর এলিয়ে থাকা চুলগুলো তিন্নির কানের পাশে গুঁজে দিতে দিতে নরমস্বরে অভিমন্যু বললো
—– তুমি যদি চাও…….আমি কি কথা বলবো তোমার বাড়িতে?
অভিমন্যুর শক্ত হাতের তলায় কেঁপে উঠলো তিন্নি। মনের ভেতরে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো – কি বলবে তুমি অভিমন্যু? বাড়িতে তো কেউ তোমার অস্তিত্বই জানে না, নাম তো দূরের কথা। আমি যে সবাইকে মিথ্যে বলে ছুটে চলে এসেছি তোমার কাছে। কেউ তো জানে না গত সাড়ে চারমাস ধরে তুমি আমার জীবনের প্রতিটি রন্ধে মিশে গেছো। আর সবার কাছে তুমি যে অস্তিত্বহীন!
নাহ, বুক ফেটে আসা শব্দগুলো গলায় আটকে রাখলো তিন্নি। ও যে এতো দুর্বল নয়। বাড়িতে কথা বলা মানে ওদের এই গোপন সম্পর্কটাকে স্বীকৃতি দেওয়া। কিন্তু এইভাবে?এই পরিস্তিতিতে? কি করে সম্ভব তা?কোন মধ্যবিত্ত বাঙালিবাড়ি মেনে নেবে তাদের পূর্নযুবতী মেয়ে বাড়িতে মিথ্যে বলে অফিসের কাজের নাম করে গ্যাংটকের সেনা হাসপাতালে চলে এসেছে তার আহত প্রেমিককে দেখতে? অথবা যার সাথে এর আগেও দেশের অন্যতম প্রত্যন্ত দুর্গম সেনা ছাউনিতে সে একরাত কাটিয়ে এসেছে, একলা? সমাজের চোখে এ যে কলঙ্ক! আর এসব কথা জানতে পারলে সবচেয়ে বেশি আঘাত পাবে সেই মানুষটা যার অপার ভরসায় তিন্নি এখানে আসতে পেরেছে! বাবার বিশ্বাস এভাবে ভেঙে দিতে পারে না তিন্নি। তারচেয়ে এ সম্পর্ক এখন গোপন রাখাই শ্রেয়! পরে দেখা যাবে….আগামী কয়েকদিনের সব ঝড়ঝাপটা, সাইক্লোন তিন্নি সামলে নেবে ভালোবাসার এই মানুষটার জন্য।
মনস্থির করে নিয়ে অনেকটা বাতাস বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে তিন্নি চোখ খুললো, দৃঢ় স্বরে বললো
—-– আমি সব সামলে নেবো অভিমন্যু। তুমি এখন আমার পাশে বসো তো চুপটি করে।
কথায় কথায় নিঃশব্দ কান্নায় কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়া কপোতপাখির মতো নরম মেয়েটার শরীরের ভেতরে যে এমন শক্ত একটা মন লুকিয়ে আছে, অভিমন্যু বোধহয় সেটাই উপলব্ধি করছিলো ওর স্পর্শ দিয়ে। শুধুমাত্র একটি ফোনকলের ওপর ভিত্তি করে যে মেয়ে এককথায় সুদূর কলকাতা থেকে গ্যাংটকের সেনা হসপিটালে এসে হাজির হয় তার আহত প্রেমিককে দেখতে; একবেলার মধ্যে, কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে – সেই মেয়ের মনের জোর অনুমান করার চেষ্টা করেই হয়তো বিভ্রান্ত হচ্ছিলেন মেজর অভিমন্যু সেন, মনে মনে হয়তো বা গর্বিতও হচ্ছিলেন। কি একটা যেন হচ্ছিলো বুকের ভেতর। আপাতদৃষ্টিতে হয়তো দুর্বল, ইমম্যাচিওর অথচ ভেতরে ভেতরে প্রখর তেজস্বী মেয়েটির তীব্র ব্যক্তিত্ব চুম্বকের মতো টানছিলো অভিমন্যুকে। কিছুক্ষন সব চুপচাপ, দূরে কোথাও দেওয়াল ঘড়ির টিকটক আওয়াজ হচ্ছে, সাইরেনের আওয়াজগুলোও ফিকে হয়ে আসছে ক্রমশ।
অভিমন্যু একইভাবে আলতো হাতে তিন্নির চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো, অনেকক্ষনের নিস্তব্ধতা ভেঙে আবার বলে উঠলো
— তুমি খুব জেদী।
কোনো অনুযোগ বা অভিযোগ না, যেন কনক্লুশন!
চোখ মেলে তাকিয়ে শুক্লপক্ষের অষ্টমীর চাঁদের মতো একফালি হাসি ফুটে উঠলো তিন্নির মুখে, চেয়ে থাকতে থাকতে সেই হাসি ধীরে ধীরে সংক্রামিত হলো অভিমন্যুর চোখে, তারপর ঠোঁটের কোনায়। আজকের এই সকালে প্রথমবার।
—- আ্যন্ড আই মিসড ইউ।
অভিমন্যুর ঘন হয়ে আসা হাস্কি স্বরে তিন্নির মেরুদন্ড বরাবর ইলেকট্রিক শক বয়ে গেলো যেন। কড়াপড়া শক্ত আঙ্গুলগুলো আরেকবার ছুঁয়ে গেলো তিন্নির গাল, কানের পাশ। কতদিন পর আবার ওরা মুখোমুখি, সশরীরে। স্যাটেলাইট ফোনের রেডিওওয়েভে আজ আর ওরা আটকে নেই। একে অপরের স্পর্শে, চোখের গভীরতায় হারিয়ে যেতে আজ কোনো বাধা নেই। প্রতিটি রোমকূপ খাড়া, প্রতিটি শিরায় বেজে চলেছে মাতাল করা সুর, নেচে চলেছে রক্তকণিকারা। বৃষ্টিভেজা সিকিমের পাহাড়ি প্রকৃতিতে সাড়ে চারমাস আগে যে অদৃশ্য ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ডটা বারবার ঘিরে ধরছিলো ওদের, মাঝে মাঝে ফোন পেরিয়ে সিকিম আর শ্রীরামপুরকে একতারে বেঁধে রাখছিলো, সাড়ে চারমাস পর আজ ভরা শরতে সেই তীব্র তড়িৎচুম্বকীয় আকর্ষণ আবারো বেড়ে উঠেছে, কলেবরে একটা ছোটখাটো হাইড্রোজেন বোমার মতো। সহসা খেয়াল হলো অভিমন্যুর মুখটা যেন বড্ডো কাছে, নিশ্বাসের গরম আঁচ নিজের নরম গালে টের পাচ্ছিলো তিন্নি। সারা গায়ে যেন বিদ্যুৎ খেলে বেড়াচ্ছে, শরীর ঝনঝন করছে। ওষুধের ঘোর হোক বা স্বজ্ঞানে, আগাপাশতলা কিছু না ভেবেই অভিমন্যুর চোখে চোখ রেখে পারফেক্ট ফ্রেঞ্চ আ্যকসেন্টে ধীরে ধীরে প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করলো
— Je T’aime.
মেজর অভিমন্যু সেনের পাথরকঠিন বুকের রক্তও কি কখনো কখনো ছলকে ওঠে? তিন্নির চোখে চোখ রেখে সেই নেশা ধরিয়ে দেওয়া আবেগজমাট ঘন কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন
— Je T’aime Aussi.
তারপরই নিজের সকল সংযম হারিয়ে তিন্নির কেঁপে ওঠা বহুদিনের উপোষী নরম গোলাপি ঠোঁটদুটোয় ডুবে গেলেন উনি। চোখ বন্ধ করে নিতে নিতে আর দুফোঁটা নোনতা গরম জল গড়িয়ে পড়লো তিন্নির গাল বেয়ে, ঠোঁট দিয়ে সেই জল শুষে নিলেন মেজর অভিমন্যু সেন।
.
.
.
প্রথম চুম্বন? না দ্বিতীয়? সাড়ে চারমাস আগের সিকিমের পার্বত্য শীতল উপত্যকায় মিলিটারি তাঁবুতে বৃষ্টিভেজা সেই ভোরে তিন্নি কি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছিল?
ক্রমশঃ
© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।
রাগ করেছি, কেউ শেয়ার করছেন না, কমেন্ট করে লাইক করতে ভুলে যাচ্ছেন! এমন করলে খেলবো না🙄💔
***********************__******************************
সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n