সূর্য ডোবার আগে পর্ব-২৬

0
1965

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-২৬
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
প্রতি অঙ্গ কাঁদে তব প্রতি অঙ্গ তরে।
প্রাণের মিলন মাগে দেহের মিলন।
হৃদয়ে আচ্ছন্ন দেহ হৃদয়ের ভরে
মুরছি পড়িতে চায় তব দেহ ‘পরে।
তোমার নয়ন পানে ধাইছে নয়ন,
অধর মরিতে চায় তোমার অধরে।

কত জন্মের অসম্পূর্ণতা, কত শতকের অপেক্ষার অবসান হলো বহু প্রত্যাশিত, চির আকাঙ্খিত একটি সুদীর্ঘ চুম্বনে।
মিনিটকয়েক নাকি কয়েক হাজার বছর পর আলাদা হলো ওরা। পরিপূর্ণতার অনুভূতিতে ওদের দুজনের মন এক সুরে বাঁধা পড়ে গেছে আজ। চোখে জল, মুখে হাসি, রক্তে বাজছে দ্রিদিম মাদল আর হৃদপিণ্ডের শব্দ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণপ্রায়। বলতে গেলে কোনো প্রাইভেসি নেই তাও কেন জানি একটুও লজ্জা পেলো না তিন্নি। এ যেন খুব স্বাভাবিক ঘটনা,পুর্বনির্ধারিত! জন্ম জন্মান্তরের সঙ্গী ওরা- এ যেন হওয়ারই ছিল। চোখে চোখ মিলিয়ে হাসলো দুজনে, পূর্ণতার হাসি!

অভিমন্যুর কড়াপড়া শক্ত আঙ্গুলগুলো আলতো হাতে আরেকবার ছুঁয়ে গেলো তিন্নির ঠোঁটের কোণ, কপালে এলিয়ে থাকা চুল, কানের পাশ। তারপর হঠাৎ কি মনে পড়লো ওর, গলায় শব্দ করে হেসে উঠলো! একমুঠো অবাক জিজ্ঞাসা নিয়ে তিন্নি ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে চোখ ভরা হাসি নিয়ে অভিমন্যু বললো – “কখনো ট্রেনে, কখনো পাহাড়ি ঝোপড়িতে, কখনো মিলিটারি টেন্টে আর কখনো হসপিটালের বেডে! নর্মাল সার্কামস্টান্সে আমাদের দেখা হয় না, না?”

দুই সেকেন্ড নিস্তব্ধতা।
তারপরই উচ্ছল পাহাড়ী ঝর্ণার কলকল শব্দের মতো বাঁধভাঙা হাসিতে ভেঙে পড়লো তিন্নি, হাসির দমকে ফুলে ফুলে উঠছিলো ওর পিঠ। প্রিয় নারীর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটু একটু করে নরম ভালোলাগায় ভরে যাচ্ছিলো অভিমন্যুর পাথরকঠিন বুকের ভিতরটা। টুপটুপ করে অনুভূতিরা ঝরে পড়ছিল, গলে পড়া জ্বলন্ত মোমের মতো। একই মানুষকে কতবার নতুন করে ভালোবেসে ফেলে মন?

.
.
.

কখন যে তিন্নি ঘুমিয়ে পড়েছিল আবারো, কোনো খেয়াল নেই। অনেকসময় পর তিন্নি যেন সচেতন হলো ওর পারিপার্শিক অবস্থা নিয়ে! ব্যস্তচোখে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষারত অভিমন্যুর দিকে তাকিয়ে কাঁচুমাঁচু হয়ে বললো
– সরি, কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারি নি। কটা বাজে? অনেকক্ষন ঘুমিয়েছি আমি? ডাকো নি কেন?

অভিমন্যু ততক্ষনে হসপিটালের জামাকাপড় পাল্টে নিয়েছে। একেবারে ফিটফাট, ধোপদুরস্ত। তিন্নির প্রশ্নবানে হেসে ফেলে হাতঘড়িতে সময় দেখে বললো
– ইটস ওকে। রাতে তোমার পালসরেট খুব বেড়ে গিয়েছিল, সিডেটিভ দিতে হয়েছিল… তারই রেশ! উঠবে?​

— হুমম।

ঝিম হয়ে আছে মাথা। কিছুক্ষন থুম হয়ে বসে থেকে তিন্নি নামতে গেলো বেড থেকে। সিডেটিভের রেশেই হোক বা এতক্ষন পর মাটিতে পা দেওয়ার সাথে সাথে টলে গেলো ভারী হয়ে থাকা শরীর আর মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যে ওকে শক্ত হাতে ধরে ফেললো অভিমন্যু। উদ্বিগ্ন হয়ে বললো – পারবে তুমি? নার্স ডাকবো?

— ন্ নাহ! আমি পারবো ঠিক।

ধরে ধরে তিন্নিকে লাগোয়া বাথরুম অবধি পৌঁছে দিয়ে অভিমন্যু বললো – “বাইরেই আছি, কোনো দরকার হলে ডাকবে।“

ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে তিন্নি দেখলো অভিমন্যু দাঁড়িয়ে জানলার কাছে… ওর পায়ের শব্দ পেয়ে পিছন ফিরে জিজ্ঞাসু মুখ নিয়ে চাইলো
— “কালকে ফিরবে তো?”

ঝুপ করে আলো আলো মনটা কালো বাস্তবে ফিরে এলো। প্রশ্নটার জবাব দিতে কেমন একটু নার্ভাস লাগছিলো তিন্নির, মুখ নিচু করে নিয়ে বললো

— ভাবছিলাম, যদি আজ রাতের ট্রেনে ফিরে যাই….

— আজ না! প্লিজ?

তিন্নি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো! অভিমন্যু ওকে রিক্যোয়েস্ট করছে? চট করে নিজেকে সামলে নিল অভিমন্যুও। গম্ভীর স্বরে বললো

—তুমি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নও সীমন্তিনী! কাল রাতের মরফিনের এফেক্ট কাটে নি, তার সাথে স্ট্রেস আ্যন্ড ডিহাইড্রেশন তো আছেই। আই ক্যান নট টেক রিস্ক টু লেট্ ইউ ট্রাভেল, দ্যাট টু বাই ট্রেন!

কেমন এক অদ্ভুত চোখে অভিমন্যু একদৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে তিন্নির দিকে, কিছুক্ষন সেদিকপানে চেয়ে গা শিরশিরিয়ে উঠলো তিন্নির। ধপ্ করে বসে পড়লো হসপিটালের সরু লোহার বেডের ওপর।
অভিমন্যু এসে বসলো ওর ঠিক পাশটিতে। জিভ শুকিয়ে আসছে তিন্নির, পেটের ভিতর কেমন যেন একঝাঁক প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে, আর কানে মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। উত্তর দিতে পারলো না তিন্নি, চোখ তুলে চাইতে পারছিলো না পাছে মনের ভাব ওর চোখে ধরা পড়ে যায়! তিন্নির ঠান্ডা হয়ে আসা নরম হাতদুটো নিজের শক্ত কড়াপড়া হাতের মুঠিতে ধরে নিয়ে নেশা লাগিয়ে দেওয়া রাশভারী ঘন গলায় অভিমন্যু বললো

– একটা দিন থাকো আমার কাছে? ভয় নেই, আমি কিছু করবো না।

— কেন?

যতক্ষনে প্রথম প্রশ্নটার কারণ জিজ্ঞেস করতে হারিয়ে যাওয়া গলার স্বর খুঁজে পেয়েছে তিন্নি, অভিমন্যুর বলা শেষ। অভিমন্যুর মুখে লেগে থাকা দুষ্টুমিভরা মিটিমিটি হাসিতে ওর শেষকথাটার সাথে নিজের করা প্রশ্নটার সংযোগ নিজের কানে যেতেই লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো তিন্নি।

হো হো করে প্রাণখোলা হাসিতে ফেটে পড়লো অভিমন্যু, তারপর জোর করে তিন্নির মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে ওর কানে কানে দ্বিতীয় কথাটার উত্তর দিলো
– কারণ ….. ডাক্তার বলেছে বেশি উত্তেজনা তোমার হার্টের জন্য ভালো নয়।

কি যা তা।
এর মুখে কি কিছুই আটকায় না? চাপা হাসিমুখে আর ছলছলে চোখে তিন্নি বালিশেই মুখ লুকিয়ে নেয় আর কি। কালকের সারারাত ঠান্ডার পর আজ সকালে আচমকাই কি থার্মোমিটারের পারদ চড়তে লেগেছে? নাহলে খামোকা গালদুটেই বা গরম হয়ে উঠছে কেন? মনে মনে ভাবতে লাগলো..… আচ্ছা! হার্ট আ্যটাক হওয়ার আগে কি বসন্ত আসে? ভরা শরতে একঝলক পলাশলাল আবির তিন্নির মুখে কে যেন রাঙিয়ে দিয়ে গেল।

**************************__****************************

কিছুক্ষন পর স্বাভাবিক গলায় অভিমন্যু বললো
— টেবিলে তোমার কিছু জামাকাপড় আছে, দেখে নাও সাইজ ঠিকঠাক হলো কিনা। কাল থেকে সেই এক জামাকাপড়ে রয়েছো, চেঞ্জ করতে হবে তো।

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তিন্নি
— কখন কিনতে গেলে এসব?
— যখন তুমি রেস্ট নিচ্ছিলে। আই হোপ, ইউ লাইক দ্য কালার।

ছেলেমানুষি উৎসাহে ব্যস্তহাতে প্যাকেট খুললো তিন্নি। তারপর ওর মুখটা হাঁ’ই হয়ে রইলো, বন্ধ আর হলো না।
ঘন নীল আর সবুজে মেশানো ময়ুরকন্ঠী রঙা অপূর্ব একটা চুড়িদার কামিজ, সোনালী কলকায় ভরা – ওর সবচেয়ে প্রিয় রঙদুটির কম্বিনেশন! আর তার সাথে কিছু এসেনটিয়াল, ফেস ওয়াশ, টয়লেট্রিজ! বোধহয় এই প্রথম ওর জন্য যত্ন করে এতকিছু কিনে এনেছে কেউ, ওর পছন্দের খুঁটিনাটি খেয়াল রেখে। ইচ্ছে করছিলো একছুটে সপাটে জড়িয়ে ধরে মানুষটাকে, কেবিনের আশেপাশে নার্স আর ওয়ার্ডবয়রা ছুটোছুটি না করলে হয়তো তাই করতো তিন্নি! প্রাণপনে সামলালো নিজেকে, আবেগে চোখে জল চলে এলেও গলা স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় বললো
— কেন এসব করতে গেলে অভিমন্যু? আমি তো ঠিকই ছিলাম ।

— না ঠিক নেই! তুমি এখন আমার আন্ডারে, আমার দায়িত্বে আছো। চুপচাপ যা বলছি শোনো।

আবার সেই সহজাত কর্তৃত্বপূর্ণ স্বর।যেন জিজ্ঞেস করছে না, আদেশ করছে। মাঝে মাঝে বোধহয় মনের মানুষটার শাসন করাটাও খুব ভালো লাগে। উথলে আসা আবেগের স্রোত সামলে নিলো তিন্নি, আবছা হয়ে আসা গলায় বললো
— কি দরকার ছিল? একদিনের জন্য শুধুমুধু এতকিছু …

— তোমার পছন্দ হয়েছে?

— খু-ব!

— দ্যাটস্ অল দ্যাট ম্যাটারস, নো মোর আর্গুমেন্টস ম্যাডাম।

অনুচ্চারিত ভালোবাসায় দুটি মন আচ্ছন্ন হয়ে রইলো না বলা কথায়… চোখের ভাষায়। টিকটিক করে বেজে চলা দূরের দেওয়াল ঘড়ির কাঁটার আওয়াজ আর লোকজন, নার্সদের গলার শব্দ, স্ট্রেচারের ছুটোছুটি, আম্বুলেন্সের সাইরেন বেজেই চলেছে। কিছুক্ষন পর গলা খাঁকড়ি দিয়ে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো অভিমন্যু — MG মার্গে হোটেল বুক করেছি, আজ রাতে ওখানে কাটিয়ে শিলিগুড়ি থেকে কাল ভোরে কলকাতার ফ্লাইট। টিকিট তোমার ইমেলে আছে। অলরাইট?

প্রেম প্রেম ঘোর কেটে গিয়ে ভুরু কুঁচকে উঠলো তিন্নির। এতকিছু হয়ে গেল ওর ঘুমের মধ্যে? মনে মনে ভাবতে লাগলো অভিমন্যু কি জানতো ও “হ্যাঁ” ই বলবে? ফ্লাইটের টিকিটের টাকাটাই বা তিন্নি কি করে অভিমন্যুকে পাঠাবে? ব্যাঙ্ক ডিটেলস্ চাইবে? যদি না দেয়? আচ্ছা, অভিমন্যু কি করে তিন্নির ইমেল আই.ডি জেনে ফেললো?

একের পর এক প্রশ্ন ভিড় করে আসছে মনে, রেজিস্টার হতে বেশ কয়েক মিনিট সময় লাগলো তিন্নির। তারপর আসল কথাটা ফ্ল্যাশলাইটের মতো জ্বলে উঠতে মনে হলো মাথা ঘুরে পড়েই যাবে এবার!

অভিমন্যুর সাথে একটা পু-রো-দি-ন?! একা? হোটেলে?

একটু আগের খুশি খুশি প্রজাপতির পাখা ঢেকে গেলো মনের গভীরে জাঁকিয়ে বসা কালো বাদুড়ডানায়! ঝনঝন করে উঠলো শরীর, এলোমেলো শব্দগুলো বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটাতে শুরু করলো যেন! একটাও কথা না বলে কলের স্প্রিংদেওয়া পুতুলের মতো ঢক করে ঘাড় নাড়লো তিন্নি, অভিব্যক্তিহীন চোখে অভিমন্যু এক ঝলক ওর ফ্যাকাশে হয়ে আসা মুখের দিকে তাকিয়ে বললো — চলো তবে! যাওয়া যাক।

এখনই?
গাংটকের আর্মি হাসপাতালের সিমেন্টের মেঝেতে কেউ কি একটিন ফেভিকল ঢেলে গেছে? না হলে তিন্নির পা নড়ছে না কেন একচুল? গলা শুকিয়ে আসছে, ঠোঁট কাঁপছে থরথর। নিস্পন্দ শরীরে থম মেরে যাওয়া গলায় আজকের সবচেয়ে বড়ো জলন্ত সমস্যাটি তুলে ধরলো তিন্নি

— বাড়িতে কি বলবো অভিমন্যু?

থমকে গেলো অভিমন্যু, নিস্তব্ধ কয়েকটি সেকেন্ড তারপরই নরম গলা বলে উঠলো
—- তুমি চাইলে আমি কথা বলতে পারি তোমার বাড়িতে।

440 ভোল্টের ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো প্রায় চমকে উঠলো তিন্নি!
— ন্ না! সে হয় না!!!

—- কেন হয় না?

—— আজ না..!
তুতলে গেল তিন্নি। কি করে অভিমন্যুকে বোঝাবে কেন এখন বাড়িতে জানানো সম্ভব নয়! হয়তো লজ্জার মাথা খেয়ে জানিয়েই দিতো সবকিছু কিন্তু কানে বেজে উঠলো শেষ ফোনকলে রঞ্জনবাবুর ভরসামাখা আশ্বাস ~ “তোর ওপর সে বিশ্বাসটুকু আছে, যাই করবি …. আমার সম্মানের কথা মাথায় রেখেই ভেবেচিন্তে করবি।“ সেই মানুষটাকে কি করে ঠকাবে তিন্নি?? কি করে সেই মানুষটাকে জানাবে বিগত তিন চার মাস ধরে তিন্নি ওর জীবনের এক অমোঘ সত্য লুকিয়ে রেখেছে অত্যন্ত সংগোপনে? নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
—- আজ, এখন এভাবে তোমার কথা বাড়িতে জানানো পসিবল না। আমাকে কলকাতা ফিরতে হবে, অভিমন্যু। প্লিজ! বাড়ি না ফিরলে মা মেরে ফেলবে আমায়!

— জেদ করো না সীমন্তিনী! তাছাড়া আজ রাতের ট্রেন ধরলেও তুমি সেই কাল সকালেই পৌঁছবে, হোয়াই নট স্টে উইথ মি?

ঠোঁট কামড়ে ধরলো তিন্নি! কি বলবে কিছু বুঝতে পারলো না। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো অভিমন্যুর মুখের পেশী ততক্ষনে কঠিন, চোখে সেই এঁফোড় ওঁফোর করে দেওয়া হিমশীতল আগুন। নরম প্রেমিক নয়, মেজর অভিমন্যু সেনের বজ্রকঠিন কন্ঠস্বর বেজে উঠলো। সেই কন্ঠস্বর যা শুনলে আর্মি ট্রেনিং ক্যাম্পে নতুন ক্যাডেটদের বুকের রক্ত জল হয়ে যায়।

— হোয়াটেভার ইট ইজ, আই উইল নট আ্যলাও ইউ টু ট্র্যাভেল। আজ তো কোনমতেই নয়। তুমি এখনো অনেক দুর্বল, এই কন্ডিশনে তোমাকে অতদুর ছাড়ার রিস্ক আমি নিতে পারি না।

বুকের রক্ত হিম হওয়ার পরিবর্তে মাথায় একটি ছোট্ট ফুলঝুরি জ্বলে উঠলো তিন্নির, ও কি ছোট বাচ্চা নাকি অভিমন্যু ওর গার্জেন, যে কোথাও যাওয়া আসার জন্য তিন্নিকে অনুমতি নিতে হবে? ফিক্ করে দাঁত বের করে বললো
—- কি করবে তুমি? জোর করে আটকে রাখবে এখানে?

-— দরকার পড়লে তাই করবো। প্লিজ সীমন্তিনী? ফর ওয়ান্স জাস্ট ডু হোয়াট ইউ আর টোল্ড!

এইরকম টেন্সড পরিস্থিতিতেও অভিমন্যুর ধমক খেয়ে হেসে ফেললো তিন্নি! তারপর চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো অভিমন্যুর মুখে হাসির লেশমাত্র নেই, মুখ সেই আগের মতোই কঠিন আর চোখে লেগে থাকা সেই শিরশিরানি সম্মোহনী দৃষ্টি। একে “না” বলতে পারার মনের জোর তিন্নির নেই! বুকের ভেতরটা আচমকা ধক্ করে উঠলো, কোনদিকে যাবে তিন্নি? পরিবার নাকি অভিমন্যুর বিধ্বংসী আগুনে ভালোবাসা – কাকে চ্যুজ করবে? নিজেকে খুব হেল্পলেস লাগছিলো ওর। ধপ করে আবার বসে পড়লো হসপিটালের সরু লোহার বেডের ওপর। অনেকগুলি নিঃস্তব্ধ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর চোখ তুলে তাকালো তিন্নি, মুখ ফুটে একটাই প্রশ্ন বেরোলো
—- কেন এমন জেদ করছো অভিমন্যু?

চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো অভিমন্যুর। তারপর তিন্নির চোখে চোখ রেখে স্থির দৃঢ় গলায় বললো
—- বিকজ আই লাভ ইউ। বিকজ আই আ্যম ও্যরিড আ্যবাউট ইউ। আ্যন্ড লাস্টল্যি, আই ক্যাননট রিস্ক টু লেট এনিথিং হ্যাপেন টু ইউ।

একটি ছোট্ট প্রশ্নের তিনটি উত্তর, বুকের ভেতর অবধি কাঁপন তুলে দেওয়া ভালোবাসার অঙ্গীকার। এই অভিমন্যু তিন্নির বড্ড চেনা তাও যেন অচেনা।
এর প্রত্ত্যুতরে আর কি তর্ক করা যায় , তার যুক্তি-শব্দ-বাক্য ওর ডিকশনারিতে খুঁজে পেলো না তিন্নি।অভিমন্যু তখনও তাকিয়ে ওর দিকে অপলক, অনমনীয় সে দৃষ্টি। যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, ছারখার করে দেয় যাবতীয় যুক্তি প্রতিরোধ।
চোখ বন্ধ করে নিয়ে মনের আবেগের উথলপাতাল জোয়ার ভাঁটার ঢেউ সামলানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তিন্নি বুঝতে পারলো অন্তত এইজন্মে অভিমন্যুকে “না” বলা ওর পক্ষে সম্ভব নয়! চাপা দীর্ঘশ্বাসটা বুকের ভেতর চিরে বেরিয়ে আসার আগে মনস্থির করে উঠে দাঁড়ালো ছোট্ট একটা সম্মতি নিয়ে
— ও.কে।

~ আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান।
পরিবার, সমাজ, বাবাকে দেওয়া কথা~ সব ভুলে শ্রীরামপুর থেকে আঠেরোশো কিলোমিটার দুরে গ্যাংটকের আর্মি হাসপাতালের ঠান্ডা সিমেন্টের মেঝেতে এঁটে থাকা অদৃশ্য ফেভিকল জোর করে ছাড়িয়ে এক পা সামনে বাড়ালো তিন্নি, কলঙ্কময় ভালোবাসার দিকে ওর প্রথম পদক্ষেপ।

**************************__****************************

– ওয়েলকাম টু “মে ফেয়ার রিসোর্ট” স্যার, ক্যান আই সি ইওর বুকিং আইডি প্লিস?

বিনা বাক্যব্যায়ে নিজের আইডি কার্ডটা রিসেপশন কাউন্টারটপে পাস করলো অভিমন্যু, দেখেই চোখমুখ বদলে গেলো ইয়ং রিসেপশনিস্টের। সশব্যস্তে বলে উঠলো
— ইয়েস, স্যার। ইওর রুম ইজ রেডি, প্লিজ ফলো আওয়ার সার্ভিসবয়। কোনো লাগেজ আছে ?

– নোপ্।

ছোট্ট উত্তর দিয়ে সাবলীলভাবে নিজের শক্ত বলিষ্ট হাতে তিন্নির কোমর জড়িয়ে নিয়ে লিফটের দিকে পা বাড়ালো অভিমন্যু আর ঠিক সেই মুহূর্তে তিন্নির সারা শরীরে কেমন একটা দুরুদুরু ভয় ছড়িয়ে গেলো। তলপেটে মোচড় দিয়ে কেমন একটা ব্যাথা পাক খেয়ে খেয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ছোটবেলায় স্কুলের সেই মৌখিক পরীক্ষার মুহূর্তের মতো। হঠাৎ মনে হলো সার্ভিস বয়, রিসেপশনের কর্মী থেকে শুরু করে হোটেলের লবিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাকি টুরিস্ট -সবাই যেন ওর দিকে তাকিয়ে, সবার চোখে যেন জাজমেন্টাল চাহনি। দীর্ঘ সাড়ে চারমাস আগে গতবারের ট্রিপ থেকে ফেরার সময় ট্রেনে সায়কের বলা তির্যক নোংরা কথাগুলো, অনেককাল আগে মানবের বলা কথাগুলো একটু একটু করে ফিরে আসতে লাগলো ওর মনে। অদ্ভুত একটা অস্থিরতা, লজ্জা আর অস্বস্তির সম্মিলিত নাগপাশে বেঁধে ফেলছে ওকে একটু একটু করে। এতদিন পরিচয়ের মধ্যে এই প্রথমবারের জন্য তিন্নির মনে হলো অভিমন্যুর শক্ত বন্ধন ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় কোথাও একটা, এখান থেকে বহুদূরে।

মে ফেয়ারের ডিল্যাক্স স্যুইট, আকারে ওয়ান বেডরুম আ্যপার্টমেন্ট যেন। চকচকে, সুসজ্জিত চমৎকার ইন্টেরিয়র। ভেতরে ঢুকেই মন ভালো হয়ে যায়। বেডরুম আর লিভিংপ্লেস, সাথে সুবিশাল ব্যালকনি দিয়ে দুরের সবুজ পাহাড় দৃশ্যমান। সম্পূর্ণ স্যুইটটির উডেন ফ্লোর জায়গায় জায়গায় নরম গালিচায় ঢাকা আর ফলস্ সিলিং দিয়ে ঝুলছে সুসদৃশ্য নরম আলোর ঝাড়বাতি আর হ্যাঙ্গিং ল্যাম্প।মিনি রেফ্রিজারেটর, চা কফির সরন্জাম থেকে শুরু করে দেওয়ালজোড়া টিভিসেট, কাউচ- সবই বিদ্যমান। তিন্নির একদিনের সংসার।

হোটেলের রুমে ঢুকে যদিও আর কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা বাথরুমে ছুটলো তিন্নি। কাল থেকে এক জামাকাপড়ে অফিস, ফ্লাইট, শিলিগুড়ি থেকে এতটা রাস্তা গাড়িতে – সব মিলিয়ে মুখচোখের অবস্থা যেন কয়লাখনির শ্রমিক, গা কিচকিচ করছে ধুলোতে।

ঘষে ঘষে অনেকক্ষন ধরে স্নান করলো তিন্নি, কোহলারের শাওয়ার থেকে ঝরে পড়া উষ্ণ বারিধারা ভুলিয়ে দিচ্ছে সকল শ্রান্তি, সকল অবসাদ। একটু আগের হোটেল লবিতে যে একরাশ লজ্জা আর কুন্ঠাবোধ ওকে জড়িয়ে ধরেছিল, মনের কোন চোরাবালিতে আবার হারিয়ে গেছে তারা। শরীর ঝরঝরে হয়ে উঠেছে, এখন ওকে দেখলে কে বলবে গত চব্বিশ ঘন্টা ওর ওপর দিয়ে কি অমানুষিক মানসিক চাপটাই না গেছে।

স্নানশেষে অভিমন্যুর কিনে দেওয়া প্রথম উপহার (নাকি দ্বিতীয়? আর্মি জ্যাকেটটার কথা ভুলে গেলো নাকি তিন্নি?) ঘন নীল আর সবুজে মেশানো নতুন সালোয়ার কামিজটা গলিয়ে নিয়ে একটা বড়ো তোয়ালেতে চুল বেঁধে নিলো চুড়ো করে। বেশ মানিয়েছে এই রংটা ওকে। অভিমন্যু শুধু জামাকাপড়ই নয়, বেসিক টয়লেট্রিজও কিনে এনেছে। দেখে নিজের মনেই হেসে ফেললো তিন্নি। একেই নাকি তিনমাস আগে ও বলেছিলো “আনরোমান্টিক”? পাথরকঠিন আদ্যন্ত প্র্যাকটিক্যাল মানুষটার ভেতরে এতো নরম আর কেয়ারিং একটা মন লুকিয়ে আছে, গ্যাংটক ছুটে না এলে কি কোনোদিন জানতে পারতো তিন্নি?

উড়ন্ত প্রজাপতির মতো আবার ফুরফুরে হয়ে উঠলো মন। সদ্যস্নাত গমরঙা ত্বক উষ্ণজলের ঘষাঘসিতে একটু লালচে হয়ে আছে। দেওয়াল জোড়া আয়নাতে নিজেকে দেখে কি ভেবে অফিস ব্যাগে থাকা কাজলে চোখ রাঙিয়ে নিলো তিন্নি, ঠোঁটে দিলো লিপগ্লস। এবার একটু ভদ্রস্থ লাগছে যেন ! “উড়ু উড়ু মন” নিয়ে বাথরুম থেকে বেরোতে যাচ্ছিলো তিন্নি, বন্ধ দরজার শীতল ধাতব ডোরনবে হাত ঠেকতে শিঁড়দাঁড়া দিয়ে বয়ে চলে গেলো শীতল তড়িৎপ্রবাহ। হঠাৎ করে আরেকবার নিজের হুঁশ ফিরে পেলো ও। শরীরের সবকটি কোষ, সবকটি রক্তকণিকা একযোগে চিৎকার করে উঠলো যেন

“এরপর? ”

আদি অনন্তকাল তিন্নি ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো স্ট্যাচুর মতো।

.
.
.
.
পা’গুলো যেন বাথরুমের সাদাকালো জিগজ্যাগ টাইলসের সাথে ফেভিকল দিয়ে কেউ সাঁটিয়ে দিয়েছে একেবারে। দেওয়াল জোড়া মানুষপ্রমান সাইজের আয়নার দিকে তাকালো তিন্নি, নিজের দিকে চোখ পড়তে চার দেওয়ালের ছোট্ট এই ঘরটা থেকে বাইরে বেরোনোর মতো এক একফোঁটা শক্তি রইলো না ওর শরীরে। মুখের সব রক্ত কে যেন ব্লটিংপেপার দিয়ে শুষে নিয়েছে।

ধক্ ধক্। ধক্ ধক্ ।
হৃৎপিন্ডটা বুকের খাঁচা থেকে লাফিয়ে যেন বাইরেই চলে আসবে এবার। যে মানুষটার সাথে বিগত সাড়ে চারমাস অক্লান্তভাবে ফোনে কথা বলে গেছে, যে মানুষটাকে নিয়ে প্রতিরাতে হাজারো স্বপ্নে ভেসে গেছে তিন্নি, আজ সেই মানুষটা যখন ওর একান্ত কাছে, কোনো তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি ছাড়া ……….. বাস্তব যেন ছুটে এসে চাবুকের এক মারে সোজা করে দিলো তিন্নিকে। একের পর এক প্রশ্ন ছুটোছুটি করে যাচ্ছে মাথার মধ্যে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওর হৃৎপিণ্ডের গতিবেগও। আগেরবার অভিমন্যুর সাথে দেখা হওয়া, ওর টেন্টে রাত কাটানো সবটাই ছিল আ্যক্সিডেন্টাল, ডেস্টিনির কারসাজি। কিন্তু এবার তো তিন্নি জেনেবুঝে এসেছে, সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়। আজ তিন্নি স্বয়মাগাতা। এরপর কি হবে ?
বাষ্পজমা আয়নার দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলো তিন্নি, বাথরুম থেকে যে বেরোতে হবে সে কথা মনেও রইলো না আর ওর।

যখন এক ঘন্টার ওপর হয়ে গেছে তিন্নি বাথরুম থেকে বেরোয় নি, বাধ্য হয়ে দরজায় নক করলো অভিমন্যু । কি জানি আবার অজ্ঞান হয়ে যায় নি তো ??

ঠক ঠক করে দুই তিনবারের ঠোকায় সাড়া না পেয়ে বাধ্য হয়ে গলা তুলেই বললো — সব ঠিক আছে তো?

গরম বাষ্পে ঝাপসা আয়নার দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় কোনো আওয়াজ খুঁজে পেলো না তিন্নি। কিছু একটা বলার খুব দরকার কিন্তু কি বলবে ভেবে পেলো না। চমক ভাঙলেও স্থবিরের মতো একইভাবে বাথরুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইল।

একটু পরে অভিমন্যুর চিন্তিত গলা শোনা গেলো — সীমন্তিনী, আর ইউ অলরাইট ?

দরজার ওপর নকটা এবার একটু জোরে, তারপর ধাক্কা। পাছে আবার দরজা ভেঙে ফেলে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে নিঃশব্দে বাথরুম থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো তিন্নি, অভিমন্যুর দিকে না তাকিয়ে। স্যুইটের মেমোরিফোমের বিছানায় ধপ করে বসে পড়তে প্রায় কোমর ডুবে গেল ও। আর ঠিক তখনই ফ্লোরাল বডিওয়াশ-শ্যাম্পুর মিলিত সুবাস, মেয়েলি গন্ধ আর পাটভাঙা নতুন জামা – সব মিলিয়ে কেমন একটা পুজো পুজো মিষ্টি সৌরভে সারা ঘরটি ভরে গেলো মুহুর্তের মধ্যে, মুগ্ধ হয়ে সদ্যস্নাত তিন্নির দিকে তাকিয়ে রইলো অভিমন্যু, অপলক।
নর্থ সিকিমের সেই মিলিটারি টেন্ট আর আজ গ্যাংটকের এই হোটেল রুমের মধ্যে তিন্নি আর অভিমন্যু – সাড়ে চারমাসের মধ্যে পরিস্থিতির বদল, পরিবেশের বদল ঘটেছে, তার সাথে বদলেছে ওদের সম্পর্কের সমীকরণও। হঠাৎ করে অভিমন্যু উপলব্ধি করলো, জীবনের উনতিরিশটি বসন্ত পার করে দেওয়ার পরও এইরকম কোনো শান্ত স্নিগ্ধ দৃশ্য ও বোধহয় আগে কখনো দেখে নি। নিজের প্রিয় নারীর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না অভিমন্যু, তারপরই নজরে পড়লো তিন্নির মুখটা যেন অল্প ফুলে, চোখগুলো টকটকে লাল।অবাক হয়ে চেয়ে রইলো অভিমন্যু — তিন্নি কি কাঁদছিলো? কেন?

দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো অভিমন্যু, যদি তিন্নি কিছু বলে। কিন্তু সে তো যেন মুখে কুলুপ এঁটে বসেছে। মিনিটদুই পর ধীরপায়ে অভিমন্যু এসে দাঁড়ালো তিন্নির ঠিক সামনে, নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো — কি হয়েছে সীমন্তিনী? শরীর খারাপ লাগছে?

বুজে আসা গলায় সার ফিরলো তিন্নির— কিছু হয় নি তো।

— তবে কাঁদছিলে কেন?

— কই? কাঁদি নি মোটেই!

— সীমন্তিনী??

আর একবার ওর নাম ধরে ডাকলো অভিমন্যু, এবারের স্বর আরো গাঢ়। কেঁপে উঠলো তিন্নি, এই স্বর যে অমান্য করতে পারে না ও। নিশ্বাস বন্ধ করে নিয়ে কান্নাভেজা অস্পষ্ট গলায় বললো — আমি পারবো না।

বিভ্রান্তের মতো চেয়ে রইলো অভিমন্যু, কিছু একটা হয়েছে ও বুঝতে পারছে কিন্তু ঠিক “কি” হয়েছে ও ধরতে পারছে না। অবাক হয়েই বললো — কি পারবে না??

— তোমার সাথে একা একটা হোটেলরুমে ……আমি পারবো না থাকতে!

থেমে থেমে ঝাপসা গলায় তিন্নি কোনোরকমে কথাগুলো শেষ করলো। মুখ লাল হয়ে গেছে ওর। কয়েকপল সব নিস্তব্ধ, তারপর অভিমন্যুর চোখে বিদ্যুৎ খেলে গেলো একটা। এতক্ষনে স্পষ্ট হলো, তিন্নির কান্নার কারণ। কি আশ্চর্য! এই সম্ভাবনার কথাটা একবারের জন্যও মনে আসে নি ওর! মুখের পেশী শক্ত হয়ে উঠলো অভিমন্যুর, স্থির হয়ে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলো তিন্নির দিকে। তারপর বরফ শীতলস্বরে বললো — তুমি আমাকে অবিশ্বাস করো?

চকিতে উঠে দাঁড়ালো তিন্নি, অভিমন্যুর ঠিক সামনাসামনি। ওর বুকের কাছে তিন্নির মাথা, ছলছলে চোখ মেলে তাকালো অভিমন্যুর দিকে। কি করে বোঝাবে ও নিজের বিভ্রান্ত অবস্থা? তিন্নি নিজেও কি বুঝছে কোন দোটানায় কেন পড়ে আছে ও?সে কি ওষুধের ঘোর? গত দিনকয়েকের চলে আসা টানা মানসিক চাপ? এ যেন মনের সাথে যুদ্ধ চলছে মনের। বার বার একই দ্বিধা, একই অপরাধবোধ। একই প্রশ্নে ক্ষতবিক্ষত হয় মন – ও ঠিক করছে না কি ভুল! গলার কাছে হাঁকুপাঁকু করা অর্থহীন এলোমেলো কথাগুলো ছিটকে এলো তারপর, কোনো তাৎপর্য্য ছাড়াই
— না ! না না অভিমন্যু! তোমাকে না, আমার নিজের ওপর বিশ্বাস নেই। আর বাবা? বাবার সামনে আমি কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবো? যে মানুষটাকে আমি দেবতার জ্ঞানে মেনে এসেছি, কোনোদিন যাকে মিথ্যে কথা অবধি বলি নি, তার সামনে এরপর কি করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো?

অভিব্যক্তি বদলালো না, ছুরির শানিত ফলার মতো ঠিকরে উঠলো অভিমন্যুর স্বর — আমার সাথে হোটেলে এক রুমে থাকলেই তোমার মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে? এর আগে তুমি থাকো নি আমার সাথে, একা ?

কখনো ফোনে কখনো সামনাসামনি…..আবারো ভুল বোঝাবুঝি! আবারো কথার লড়াই! নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তিন্নি। কি বলবে ও? পায়ের নীচের লালনীল কাজ করা পুরু কার্পেটটা শুষে নিলো তিন্নির গাল বেয়ে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়া চোখের জলগুলো! ভালোবেসেও এতো কষ্ট কেন?

সেদিকে তাকিয়েও মন নরম হলো না অভিমন্যুর। দৃঢ় গলায় বললো — তোমাকে অসৎ উদ্দেশ্যে ছোঁয়ার আমার কোনো ইচ্ছে নেই সীমন্তিনী, না তো তোমার অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার ইচ্ছে। নিজের ওপর সেটুকু কন্ট্রোল আমার আছে…… তাও আই আ্যম সরি যদি আমার কোনো ব্যবহারে তোমার সেটা মনে হয়ে থাকে। এই রুমটা নেওয়ার একমাত্র কারণ ছিল তোমার প্রপার রেস্ট!.. এনিওয়ে! ইউ স্টে হিয়ার, আমি অন্য রুম নিয়ে নিচ্ছি!

ঘরের তাপমাত্রা একঝটকায় কি কয়েক ডিগ্রী কমে গেল? অন্য মনটা কেঁপে উঠলো নৌকার পালের মতো, আজ যেন ইমোশনের রোলারকোস্টার চলছে তিন্নির হৃদয়ে ! অব্যক্ত এই অনুভূতিগুলো, কিছুতেই মনের কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না তিন্নি। বুকের ভেতরের উথলপাতাল সাগরঢেউ সামলে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের জল মুছে নিলো তিন্নি। স্তব্ধ হয়ে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে অভিমন্যুর হাত টেনে ধরলো তিন্নি। আবছা গলায় বললো — না!

— না মানে?

উফফ্! এর থেকে বোধহয় ফোনে কথা বলা সহজ। তখন তো এত জড়তা থাকে না!! জলভরা চোখ দুটো তুলে কাতরভাবে তাকালো তিন্নি অভিমন্যুর দিকে — তুমি কোথাও যাবে না। আসলে ….. আমি ঠিক বোঝাতে পারছি না তোমাকে।

কে যেন বলেছিলো “পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়।“

তিন্নির কান্নাভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে অভিমন্যুর মুখের পেশিগুলো একটু হলেও নরম হয়ে উঠলো কি? এই একজন মানুষের চোখের জল কেন বারেবারে দুর্বল করে দেয় অভিমন্যুকে?
নিজেকে শান্ত করতে শক্ত হাত মাথায় বুলিয়ে মুখের রাগগুলো মুছে নিয়ে নিচু, পরিমিত গলায় বললো –সত্যিই বোঝাতে পারছো না সীমন্তিনী! প্লিজ ট্রাই হার্ডার।

বড়ো করে একটা শ্বাস নিলো তিন্নি। এই মানুষটিকে ফোনে তো সব বলতে পারে, কিচ্ছু আটকায় না মুখে! তবে আজ সামনাসামনি এত জড়তা কেন? চোখ বন্ধ করে নিয়ে একটু গুছিয়ে নিলো ভেতর থেকে উঠে আসা আবেগের বহিঃস্রোত। তারপর ভেজা গলায় বলতে থাকলো এমনি, যেন মানুষটি ওর সামনে নেই, আছে ফোনের ওপারে।

— অভিমন্যু, আই লাভ ইউ! তোমাকে কতটা ভালোবাসি তা সামনাসামনি বলে বোঝানোর আমার সাধ্যি নেই! এতদিন পর তুমি আমার সামনে, সশরীরে। সাড়ে চারমাস আগের আর এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা! সেদিন একসাথে থাকাটা ছিল আ্যক্সিডেন্টাল কিন্তু আজকে? এখন প্রতিরাতে আমি তোমার সাথে কথা বলি, ফোনে তোমাকে ………”
বলতে বলতে কেঁপে উঠলো তিন্নি।

নিজেকে একটু সামলে নিয়ে আবার বলতে লাগলো — “ফোনে কথা বলা আর সামনাসামনি তোমার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা কতটা আলাদা আমি বোঝাতে পারবো না তোমায়। প্রতিমুহূর্তে তোমার চোখে নিজেকে দেখছি, তোমার প্রতিটা ছোঁয়া, প্রতিটা নিঃশ্বাস অনুভব করছি, আর যতবার মনে পড়ছে তুমি “আমার”, নিজেকে হারিয়ে ফেলছি আমি। তুমি হয়তো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারো অভিমন্যু, কিন্তু আমার সে মনের জোর নেই! তোমার চোখের সামনে আমি খুব খু-ব দুর্বল! যেকোনো সময় যা কিছু করে ফেলতে পারি আমি, নিজেকে আটকাতে পারবো না। হয়তো আটকাতে চাই ও না! কিন্তু তারপর? আজ যদি আমি আবেগের বশে কিছু করে বসি, নিজেকে আটকাতে না পারি,…. একথা ঠিক তুমি-আমি ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না সে কথা কিন্তু যে মানুষটার বিশ্বাসের ভরসায় এতদূর এসেছি, ভেতরে ভেতরে সেই মানুষটার কাছে আমি যে আর সহজ সরল বাচ্চা মেয়ে থাকবো না অভিমন্যু! তার সামনে যে আমি কুঁকড়ে যাবো, আর কোনোদিন যে চোখ তুলে তাকাতে পারবো না!

কথা হারিয়ে যাচ্ছিলো তিন্নির! ওর কুঁকড়ে যাওয়া মুখ, ছলছলে চোখ মনের কোন গভীরে আঘাত হানছিলো অভিমন্যুকে। বুঝতে পারলো না কি বলা উচিত। মুখের কঠিন রেখাগুলো নরম হয়ে এলো ধীরে ধীরে, অবশেষে শান্ত গলায় বললো
— ইটস্ ও.কে ….আই গেট ইট। অন্য রুম নিচ্ছি!

নিমেষে মুখের ভাব পাল্টে গেলো তিন্নির, আঁকড়ে ধরলো অভিমন্যুর হাত! কি যেন একটা হারিয়ে ফেলার ভয় ওর চোখে। বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো ওর, ঠোঁট ফুলিয়ে বললো
— কিন্তু তখন তো তুমি আমার সাথে থাকবে না!!

এবার হাল ছেড়ে দিলো অভিমন্যু! এইজন্যই কি মহাকবি বলে গেছেন “নারীর মন বোঝা দায়!”
কনফিউসড হয়ে গিয়ে বললো
— সীমন্তিনী? ঠিক কি চাও তুমি, বলবে?

— আমি জানি না!!

হাল ছেড়ে দিলো তিন্নিও! অসহ্য এই মানসিক টানাপোড়েন! ও নিজেও কি জানে ও কি চায়? ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অভিমন্যু, তিন্নিও!
কি অদ্ভুত বোকাবোকা সমস্যা! বুদ্ধিমানরা বলবেন এ’সকলই তিন্নির পাগলামি আর অপরিণত মানসিকতা। কিন্তু পাগলামি না থাকলে কি ভালোবাসা যায়? বিচার বিবেচনা আর ক্যালকুলেশন করে প্রতিটি শব্দ চয়ন করলেই কি ভালোবাসা বোঝানো যায়?

মিনিট দুই তিন ভাবনা চিন্তা করে অভিমন্যু তাকালো তিন্নির দিকে
— ও.কে। রেডি হয়ে নাও, বেরোবো।

তিন্নি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দেখে একটু হেসে বললো –পাবলিক প্লেসে আমার সাথে থাকতে নিশ্চয়ই তোমার অসুবিধা নেই? শুধু একটা প্রমিস করবে আমায়? যে মুহূর্তে তোমার শরীর খারাপ লাগবে, আমায় বলবে! ও.কে?

হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো তিন্নি , এতো সহজ সল্যুশন ওর মাথায় আগে এলো না কেন? আলতো ঘাড় নেড়ে মুখে বললো — ও.কে।

— গুড গার্ল।

বিনা দ্বিধায় হাত বাড়িয়ে আলতো করে তিন্নির গাল টিপে দিলো অভিমন্যু।নিজের নরম স্বত্বায় প্রায় ফিরে এসেছেন নাকি মেজর অভিমন্যু সেন? ছলছলে চোখে হাসতে গিয়ে কষ্ট মেশানো একটা ভালোবাসা ছড়িয়ে যাচ্ছিলো তিন্নির মনে একটু একটু করে! কি জ্বালাতনই না করছে ও এই মানুষটাকে, যে কিনা সদ্য একটা অস্ত্রোপচার সেরে উঠলো! নিচু গলায় বললো

— আর তোমার রেস্ট?
— ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু ও্যরি আ্যবাউট দ্যাট।

চোখের কোণ আবার ভিজে এলো তিন্নির
— আসার থেকে খুব জ্বালাচ্ছি তোমাকে, না?

— তা একটু জ্বালাচ্ছো বটে।

আড়চোখে অভিমন্যুর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে তিন্নি প্রায় কেঁদেই ফেলবে দেখে হেসে ফেললো অভিমন্যু।

— ইট’স ও.কে ম্যাডাম। আই ক্যান ম্যানেজ।

অপলক তাকিয়ে রইলো তিন্নি অভিমন্যুর দিকে। চোখ ফিরিয়ে নিলো না সে’ও। কি তীব্র এই নিষিদ্ধ আকর্ষন! একই মানুষের প্রেমে কতোবার হাবুডুবু খাওয়া যায়? কতোবার আরো বেশি করে, নতুন করে একই মানুষকে ভালোবাসা যায়? কিছু কিছু প্রশ্নের সত্যিই কোন উত্তর হয় না।

তবে আজ আর ভৌগলিক দুরত্বের বাধা নেই! দুই পা এগিয়ে এসে তাই অভিমন্যুকে জড়িয়ে ধরলো তিন্নি। কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ওর গাঢ় বাদামী চোখের দিকে, প্রায় অস্পষ্ট হয়ে আসা ভ্রুর পাশের কাটা দাগটার দিকে। কতদিন পর এতো কাছ থেকে দেখছে নিজের প্রিয় মানুষটাকে,এই কয়েকমাসে যেন কোনো বদল হয় নি, শুধু মুখের রুক্ষতা মিলিয়ে গেছে কোমল ভালোবাসায়। অভিমন্যুর চওড়া কপাল, খাড়া নাক….. নিজের দৃষ্টি দিয়ে সবকটি ছুঁয়ে অভিমন্যুর তিন-চারদিনের শেভ না করা খরখরে গালে নরম ভেজা ঠোঁটদুটো লাগিয়ে খুব আস্তে করে বললো

-– “থ্যাংক ইউ।“

যেটুকু কঠিনতা ছিল অভিমন্যুর মুখে, এবার সেটুকুও বাষ্পীভূত হয়ে গেলো! মোমের মতো গলে যাচ্ছিলো ওরও বুকের ভেতরটা, তাও একটু মজা করার লোভ সামলাতে পারলো না। দুষ্টুমির হাসি খেলে গেল অভিমন্যুর চোখে, ছদ্ম গম্ভীর হয়ে বললো

— যাহ্ ! এইবার তোমার বাবা কিছু মনে করবেন না?

— ধ্যাৎ!

কি যা!তা!
লজ্জায় লাল হয়ে অভিমন্যুর মেদহীন, টানটান প্রশস্ত বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো তিন্নি, ওর পাতলা টি-শার্টের তলায় লুকিয়ে থাকা আর্মিনাম্বার লেখা লকেটটার শক্ত, শীতলধাতব স্পর্শ ঠক্ করে ঠোঁটে এসে লাগলো!

উফফ!
কতদিন পর যে নিজের পরম নির্ভরতার জায়গাটা খুঁজে পেলো তিন্নি। কিছুসময় পর বুঝতে পারলো অভিমন্যুর বলিষ্ঠ হাতজোড়া খুব নরমভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে নিজের সাথে মিশিয়ে। নিজেকে ছাড়াতে গিয়েও ছাড়ালো না তিন্নি। এইভাবেই না হয় মিটে যাক ভুলবোঝাবুঝি, মানঅভিমানের পালাগুলো? স্পষ্ট অনুভব করলো, অদৃশ্য সেই ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ডটা ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে আবার, ওদের চারপাশে তেজস্ক্রিয়তার যে অগ্নিবলয় তৈরী হয়েছে, শ্যামাপোকার মতো সে আগুনে লাফিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে মন। অভিমন্যুর নিজস্ব পুরুষালি ঘ্রানের সাথে একটু একটু মিশে আছে ওষুধের ঝাঁঝাঁলো গন্ধও। নেশা জড়ানো ঘোর লেগে যাচ্ছিলো তিন্নির, নিজের অজান্তেই শরীরের ভার ছেড়ে দিলো অভিমন্যুর হাতে, বিনা দ্বিধায় সবটুকু মিশিয়ে দিলো অভিমন্যুর বুকে। অদ্ভুত একটা শিরশিরানি ছড়িয়ে পড়ছিলো ওর সারা শরীরে, গায়ের চামড়া থেকে রক্তে শুদ্ধু। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে ধক্ ধক্ করে বেজে চলা অভিমন্যুর হৃদস্পন্দন। আগুনে রসায়নের তাপে তিন্নিরও গাল লাল হয়ে গেছে, হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে গেছে প্রায় দেড়গুন। হারিয়ে যেতে যেতে আরএকবার মুখ তুলে চাইলো তিন্নি, গরম নিশ্বাসে প্রায় ঝলসে গেল মুখ। আবারও দুজোড়া ঠোঁট খুব কাছাকাছি, শুধু ছোঁয়ার অপেক্ষা যেন। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান, তারপর সকল সংযম দিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো অভিমন্যু, তিন্নি তখনও লেপ্টে আছে ওর বুকের কাছে। ভিজে চুলগুলো তিন্নির মুখের ওপর থেকে আলতো হাতে সরিয়ে দিলো অভিমন্যু, রুক্ষ হাত ছুঁয়ে গেল নরম গাল, কেঁপে ওঠা ঠোঁটের কোণ। তারপর কপালে আলতো একটা চুমু দিয়ে চুপিচুপি ডাকলো

— সীমন্তিনী?

আবার সেই হৃৎপিন্ড দুলিয়ে দেওয়া ডাক। তিন্নির মনব্যাঙাচি ছলাৎ করে লাফ দিলো প্রেমের পদ্মপাতায়, জড়িয়ে আসা স্বর সাড়া দিল

— উমম?

অভিমন্যুর ঘন হয়ে আসা হাস্কি গলা ফিসফিসিয়ে তিন্নির কানে কানে বললো

— যতটা ভাবছো অতটাও কিন্তু সেলফকন্ট্রোল নেই আমার মধ্যে।

একমুহূর্তে সারা শরীরের সব গরম রক্ত একছুটে মুখে এসে জমা হলো, কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো তিন্নির। চোখমুখ লাল করে অভিমন্যুকে ছেড়ে দিয়ে লাফিয়ে উঠে পড়লো বেডে, দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে।

— ফ্রেশ হয়ে আসছি।

এই প্রথম বোধকরি, তিন্নির সাথে চোখ না মিলিয়ে কথা বলে অভিমন্যু ঢুকে গেলো বাথরুমে। তিন্নির হৃৎপিণ্ড তখন ছুটছে পাগলা ঘোড়ার গতিতে, থামায় যে তার সাধ্যি কি !

ক্রমশঃ(বৃহষ্পতিবার দুপুর দুটোয়)
© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।
Quote courtesy – Humayun Ahmed
কবিতা~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

.

 

***********************__******************************

সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here