সূর্য ডোবার আগে পর্ব-৩৩

0
2104

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-৩৩
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.

কালকের রাত্রিটা বোধহয় নির্ঘুমই কেটেছিল ভাস্বতীদেবীর। জীবনে এই প্রথমবার রঞ্জনবাবু ওনাকে সাপোর্ট করলেও সেই সিদ্ধান্তকে মন থেকে মানতে পারছিলেন না আবার মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছিলেন না – সম্বন্ধটা যে তাঁরই আনা! বিয়ে নিয়েও যে সর্বাগ্রে তিনিই খোঁচাখুঁচি শুরু করেছিলেন। নিজের ওপরই এখন নিজের রাগ ধরছে ভাস্বতীদেবীর। তিন্নিকে একবার জিজ্ঞেস করে নিলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত? মনের সুপ্ত ভাবনা ছিল এভাবে লুকোছাপার ছলে একদিকে মেয়ের আগুনে জবাবদিহির হাত থেকে বাঁচবেন আবার অন্যদিকে রঞ্জনবাবুকে জানিয়ে রাখা মানে তিন্নিও জেনেই যাবে। ভুলক্রমেও ভাস্বতীদেবী ভাবতে পারেননি রঞ্জনবাবুও সত্যি সত্যিই তিন্নিকে এ ব্যাপারে অগোচরে রাখবেন। এখন কি করবেন ভেবে তল পাচ্ছিলেন না। অনেক ভেবেচিন্তে বিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াতেই মন রাখলেন তাও যেন শান্তি হচ্ছে না। অস্বস্তির চোরাকাঁটা খচখচ করছে মনের গভীরে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার জন্য তিন্নি রেডি , বেরোনোর আগে আগে রঞ্জনবাবু আটকালেন
— তিন্নি, তোমার মা’র কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ছেলেটার সাথে আজ কথা বলবে। ভাস্বতী?

সকাল থেকে মেয়ের সামনে আসেন নি ভাস্বতীদেবী, এখন বাধ্য হয়ে বেরোলেন। একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলেন তিন্নির দিকে
— এই যে ফোন নাম্বার। একটা মেসেজ করে দিলে ছেলেটা নিজেই ফোন করে নেবে। খুব ভালো ছেলে, বিনয়ী আর মার্জিত!
গলায় মধু মাখিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন যাতে তিন্নির মন ভেজে কিন্তু ভাস্বতীদেবীর কথার মাঝেই রঞ্জনবাবুর সাবধানী স্বর ভেসে উঠলো
— আর তিন্নি, তোমার পছন্দ হোক বা না হোক, আমাদের সম্মানের কথা মাথায় রেখে কথা বলবে। কোনো অভদ্রতা করবে না।

নির্বিকারভাবে মায়ের হাত থেকে কাগজটা নিলো তিন্নি , তারপর ডাইনিং টেবিলের লাগোয়া চেয়ারে বসে শান্ত নির্লিপ্ত গলায় বললো
—একটা কথা বলার ছিলো, তোমাদের দুজনকেই। মা, তুমি বসো।

ভাস্বতীদেবী মেয়ের এই স্বর চেনেন। তিন্নি আজকাল মাঝেমাঝেই মা’র সাথে এই স্বরে কথা বলে কিন্তু বাবার সাথে ভুলক্রমেও না! আজ ভোর ভোর একটা ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা। কি হয় দেখার চিন্তায় মুখ টিপে রইলেন উনি।
একটু সময় নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিলো তিন্নি, তারপর খুব খু-ব শান্ত স্বরে বললো
— সরি বাবা, আমি কাউকে ফোন করতে পারবো না।
— কেন ?
ততোধিক শান্ত স্বর রঞ্জনবাবুর। যেন যুযুধান দুই শীতল আগুন, যেকোনো সময় উত্তাল দাবানল হয়ে উঠবে। ভাস্বতীদেবী বুঝে গেলেন, এখানে আজ ওঁনার উপস্থিতি নিষ্প্রয়োজন, ওঁনার কথা শোনার বা ওঁনাকে কিছু বলার জন্য বাপ-মেয়ের কেউই এই সংলাপ শুরু করে নি।ধপ্ করে বসে পড়লেন একটা চেয়ারে। ওনাকে সম্পূর্ণ আগ্রহ করে বাবা মেয়ের কথা চলতে থাকলো মেপে
— কারণ আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।
— এখন বললে এখনই তো বিয়ে হচ্ছে না।

একটা বড়ো নিশ্বাস ফেললো তিন্নি, ঠোঁটের কোণে মুচড়ে উঠলো একটা হাসি। সে হাসি ব্যর্থতার নাকি বিদ্রুপের- ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না ভাস্বতীদেবী।
গলার স্বর এতটুকু না উঠিয়ে স্থির গলায় তিন্নি বললো
— তোমরা বুঝলে না আমার কথাটা। আমি এভাবে বিয়ে করবো না যেখানে তোমরা আমার মতামতটুকুও নিতে চাও নি।

এইবার ভাস্বতীদেবী মুখ খুললেন, তিন্নি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে না কি ? খরখরে গলায় বলে উঠলেন
— সব ব্যাপারে তোর পারমিশন নিতে হবে?
— পারমিশন নয়, মতামত। আমার পছন্দ অপছন্দটা জানার, শুনতে চাওয়ার ইচ্ছেটুকু হলেই হতো।

স্তব্ধ গলায় রঞ্জনবাবু বললেন
— আমরা তো তোর খারাপ চাই না তিন্নি।

— আমিও তো আমার খারাপ চাই না বাবা। তাও যদি কোনো ভুল করি, সে ভুলটা নাহয় নিজের থাকুক, তোমাদের সেই ভুলে কেন জড়াবো বলো?

বাবা মেয়ের মধ্যে এত নাটকীয়তা এত শান্তভাব আর নিতে পারছিলেন না ভাস্বতীদেবী, রাগের মাথায় কিছু না ভেবেই বলে বসলেন
— না পোষালে বেরিয়ে যা তবে বাড়ি থেকে!

এতটুকু চমকালো না তিন্নি, এতটুকু কাঁপলো না। স্থির গলায় বললো
— যদি তাই চাও, তবে তা’ই হবে!

— তিন্নি!!
রঞ্জনবাবুর উত্তেজিত তর্জনেও এতটুকু ভাবান্তর হলো না তিন্নির, আজ যেন অনেক কোনো ইমোশন স্পর্শ করছে না, আগের মতোই শান্ত স্বরে বললো — কি বাবা?

— মার্ সাথে কিভাবে কথা বলছো তুমি? এতো বেয়াদপ হয়ে গেছো?

আর একটা নিশ্বাস ফেললো তিন্নি , তারপর কেমন একটা উদাস হয়ে যাওয়া স্বরে বললো
— সরি বাবা! কিন্তু তোমরা তো কেউ আমার কথা শুনছই না! বারবার তোমাদের বলছি আমি এখন বিয়ে করতে চাই না, তাও তোমরা কানে নিচ্ছো না যখন, নিজের কথাটাও আমাকে যে বলতে হবে? একবারও না জানিয়ে বাজারের আলু পটোলের মতো বাইরের লোকের কাছে দেখাচ্ছো, তারপর আবার আমার মতামত না শুনে বিয়ের ঠিক করছো। জীবনটা যে আমার সেটাও তোমরা ভুলে গেছো মনে হচ্ছে।

মেয়ের মুখ থেকে শানিত কথাগুলো আর শুনতে পারলেন না ভাস্বতীদেবী, তিন্নির তুলে ধরা আয়নার সামনে মুখ ঢাকার চেষ্টাতেই চেঁচিয়ে উঠলেন
— স্বার্থপর তুই! অসুস্থ মানুষটার সাথে গলা তুলে কথা বলছিস?

নির্লিপ্ততা কখনো কখনো মানুষকে করে তোলে নিষ্ঠুর, নির্মম। একবারও গলা কাঁপলো না তিন্নির, ঠিক আগের মতোই ধারালো প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিলো
— আমিও তো অসুস্থ, তাই না মা? তারপরও যে নয়ঘন্টা অফিস করে, তিন-চার ঘন্টা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করছি দুইবছর ধরে?

— দু’পয়সা রোজগার করছিস বলে কথা শোনাচ্ছিস? টাকা দিয়ে কিনে রাখবি আমাদের? মুখ বন্ধ করবি? চরিত্রহীন মেয়ে একটা।

এইবার স্পষ্টতই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো তিন্নির মুখে, যা দেখে শিউরে উঠলেন ভাস্বতীদেবী নিজেও।
অবিচল স্বরে তিন্নি বললো — কি বলো তো মা, রোজ রোজ এক কথা শুনতে শুনতে আর গায়ে লাগে না। তোমাদের অসুবিধা হলে বাড়ি ছেড়ে পিজিতে চলে যাবো।

— আর আমাদের মুখে চুনকালি মাখাবি, তাই তো?

— তাহলে তাই। যা তুমি মনে করবে।
শেষের দিকে গলাটা একটু কেঁপে গেলো তিন্নির, তাও মনের জোর দিয়ে স্নায়ু টানটান করে রাখলো। আজকের যুদ্ধে ওকে হার মানলে চলবে না।

অপার নিস্তব্দ্ধতা কিছুক্ষনের তারপর রঞ্জনবাবু বললেন
— কি জন্য এসব করছিস তিন্নি? এতটা পাল্টে গেলি? তোকে বিশ্বাস করেছিলাম….

নিঃশব্দে একফোঁটা জল গড়িয়ে এলো তিন্নির চোখ বেয়ে, গলায় তার ছাপ পড়লো না যদিও। থেমে থেমে বললো
— আমিও ভাবতে পারি নি বাবা, লেখাপড়া শিখিয়ে, মর্যাদার সাথে বাঁচতে শিখিয়েও আমাকে না জানিয়ে, আমার মতামত না নিয়ে আমার বিয়ে ঠিক করবে তোমরা, বাইরের লোকের কাছে আমাকে “দেখাবে” শোপিসের মতো।

— আমরা তো তোর খারাপ চাই না তিন্নি।

— এইটা তোমাদের ভালো চাওয়া হলে আমায় ক্ষমা করো বাবা! তোমাদের আদর্শ মেয়ে আমি হতে পারলাম না। একদিন তুমিই শিখিয়েছিলে নিজের আত্মসম্মানের সাথে যেন আপোষ না করি , অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেন প্রতিবাদ করি আজ তুমি বলছো মুখ বুজে সব মেনে নিতে! কোনটা করি বলো?

পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সার ফিরে পেলেন ভাস্বতীদেবী , তিন্নির দিয়ে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন
— তুই কি কারো সাথে প্রেম করছিস? তোর অফিসের ছেলেটা ঠিকই বলেছিল, তাই তো? কাল তোর বাবার গা ছুঁয়ে মিথ্যে বলেছিলি তুই।

মায়ের কথার সরাসরি জবাব না দিয়ে বাবার দিকে তাকালো তিন্নি, তারপর নিচু গলায় বললো
— বাবা….তুমি আমায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়িয়েছো, কুসংস্কারে বিশ্বাস না করতে শিখিয়েছো। আজ আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে একথাগুলো বলছি কারণ আমার বিবেকের কাছে আমি পরিষ্কার। তুমি আর আমি দুজনেই জানি আমি কোন অন্যায় করি নি। করলে তোমার সামনে দাঁড়ানোর মুখ থাকতো না আমার। আর মা, নিজের মেয়েকে নিয়ে অপরিচিত সায়কের নোংরা কথা তুমি শুনে নেবে তাও যদি আমি সত্যি বলি তোমরা মেনে নিতে পারবে না, বিশ্বাসও করবে না! তাই সে কথা না হয় থাক।

ধীর স্বরে রঞ্জনবাবু বললেন
— কে ছেলেটা? কিভাবে আলাপ তোর সাথে?

বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো তিন্নি তারপর নিজেকে গুছিয়ে নিলো কি উত্তর দেবে। তারপর স্পষ্টগলায় বললো
— আমি এখন বিয়ে করবো না, ছেলের বাড়িতে না বলে দিও। আসছি, অফিসের দেরি হয়ে গেছে অনেক।

চিত্রার্পিত স্থির রঞ্জনবাবুর পায়ে হাত দিয়ে একটা প্রণাম করে সুদৃঢ় পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো তিন্নি।

ঠান্ডা যুদ্ধের বোধহয় নিশ্চিত জয় পরাজয় কিছুই হয় না ! ১৯৪৭ থেকে ১৯৯১ সাল অবধি চলে আসা রাশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে চলা “কোল্ড ওয়ার” তার প্রমান। তবে সংসারের সব যুদ্ধেও হয়তো জয় পরাজয় সেভাবে নির্ণয় করা যায় না। আজকের শান্ত সকাল হয়তো বিকেলের তুমুল কালবৈশাখীর পূর্বাভাস।

**************************__****************************

লাগাতার বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত উত্তর সিকিম।
সিকিম প্রশাসন সূত্রের খবর, ৫ দিনের টানা বর্ষণের ফলে ফের ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পাহাড়ে। গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির জেরে সিকিম পাহাড়ের ‌বিভিন্ন জায়গায় ধস. গ্যাংটক শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে উত্তর সিকিমের। এ ছাড়াও নাথুলা-‌‌চুংথাং রোডে নানা জায়গায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার কিছু অংশ ধসে গেছে, আবার কোথাও মাটি নিচে বসে গেছে, লাগাতার বৃষ্টিপাত ও ধসের জেরে উত্তর সিকিমে প্রায় ৫০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগেই উত্তর সিকিমের তুং–‌‌এর কাছে ধস নেমেছিল, রাস্তা সচল রাখতে সিকিম প্রশাসন এবং বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন যৌথভাবে একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করে দিয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, লাগাতার বৃষ্টির জেরে ধসের ফলে সেতুটির প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধসের নীচ থেকে চার জনকে উদ্ধার করেছিল সেনা জওয়ানেরা, সকলকেই সিকিম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁদের মধ্যে পাশাং শেরপা নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল চার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে।
.
.
.
মাথা ধরে যাচ্ছে নিউজ চ্যানেলের খবর পড়তে পড়তে! কাহাঁতক আর একই খবর পড়া যায়, একই লোককে খোঁজা যায়? আজ ছয় দিন হতে চললো অভিমন্যুর কোনো ফোন আসে নি। বৃহস্পতিবার দুপুরবেলায় আড়াইটে নাগাদ প্রায় খালি ক্যাফেটেরিয়ার জানলার ধারের একটা ফাঁকা টেবিলে বসে ঠান্ডা এগচাউমিন ঘাঁটছিলো তিন্নি, খেতে মন লাগছে না! একবার অভিমন্যুর পুরোনো কললগ্, আরেকবার গ্যালারিতে থাকা অভিমন্যুর একমাত্র ফটো যেটা এইবার গ্যাংটকে গিয়ে তিন্নির অনেক জোরাজুরিতে তোলা হয়েছিল, এই দুটি আ্যপে বারেবারে ঘুরেফিরে যাচ্ছিলো আর ফ্ল্যাশব্যাকে মনে পড়ছিলো মাত্র একমাস আগে গ্যাংটকের ওর সেই সাডেন ট্রিপটার কথা! ওই একটি ট্রিপ কত কাছাকাছি এনে দিয়েছে ওদের দুজনকে। যতবার মনে পড়ে অভিমন্যুর প্রতিটি ছোঁয়া, প্রতিটি চুম্বন, গাঢ় বাদামি চোখদুটোর বুকের ভেতর অবধি এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া দৃষ্টি, মনে মনে কেঁপে ওঠে তিন্নি! মাত্র কয়েকমাসে কি করে কাউকে এতটা ভালোবাসা যায়, তিন্নি নিজেও ভেবে পায় না! শুধু এটুকু জানে অভিমন্যু ছাড়া তিন্নি ইনকমপ্লিট! নিজের সর্বস্ব লুটিয়ে দিতে পারে ওই একটি মানুষের জন্য!

আনমনা হয়ে ক্যাফেটেরিয়ার জানলা দিয়ে দূরের অস্পষ্ট কলকাতার দিকে ছলছলে চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তিন্নি। দূরের টেবিল থেকে পিয়াসা হাত নাড়ছিলো ওকে দেখে, তিন্নি খেয়ালও করে নি। অগত্যা লাফাতে লাফাতে সামনে এসে সশব্দে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো পিয়াসা। তিন্নির মুখের সামনে একটা হাত ঘুরিয়ে যেন ইহজগতে ফিরিয়ে আনলো ওকে।

— হেই গার্ল! এই মেঘলা ওয়েদারে কার কথা ভাবছো? নতুন বয়ফ্রেন্ড নাকি?

পিয়াসকে দেখে চট করে নিজের দুঃখী দুঃখী ভাবটা লুকিয়ে নিলো তিন্নি, গলা ঝেড়ে বললো
— নাহ, এমনিই! ওয়েদারটা দেখেছো কেমন মেঘলা, ঝাপসা? ভালো লাগছে না!

পিয়াসা একঝলক তাকালো তিন্নির দিকে। এ কয়দিনে ওদের বন্ধুত্ব বেশ জমে উঠেছে। পিয়াসার ঠোঁটকাটা ব্যক্তিত্ব আর ঝলমলে আত্মবিশ্বাসের পাশে তিন্নি খুব ইন্ট্রোভার্ট। বেশিরভাগ সময়েই চুপ করে থাকে, কিন্তু যখন মুড্ আসে ওর বুদ্ধিদীপ্ত কথায় মাঝে মাঝে পিয়াসাও চমকে যায়। কম কথা বলে মেয়েটা কিন্তু যেটুকু বলে, তা সুস্পষ্ট- অনেকটা ডিবেট টিমের শেষ কথা বলার মতো যেন এরপর আর কথা চলবে না, সহজে প্রতিবাদ করা যায় না। তবে মেয়েটা বোকাও আছে, চট করে মানুষকে বিশ্বাস করে আর ক্ষমা করে দেয়। এই তো দিনকয়েক আগে সায়কের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা যেমন! শুনে পিয়াসাও ‘থ হয়ে গিয়েছিলো এতদিন ধরে ওদের সাথে কাজ করে কিকরে একটা ছেলে এতো নিচে নামতে পারে, শুধুমাত্র রিজেকশন সহ্য না করতে পারার জন্য! তিন্নিকেও দু-চার কথা ডোজ দিয়েছিলো পিয়াসা কিন্তু ও নিজেও জানে, পাসওয়ার্ড জিনিষটা কর্পোরেট জগতে এমনই। খাতায় কলমে ”strictly non-sharable” লেখা থাকলেও কাজে অকাজে share করতে হয়ই! হয়তো এই ব্যাপারটা নিয়েই আজকাল তিন্নি বেশ মনমরা হয়ে থাকে! আজও পিয়াসা বেশ বুঝতে পারলো তিন্নি কিছু একটা ব্যক্তিগত কারণে চাপা টেনশনে আছে কিন্তু মুখ খুলছে না। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে বলবো না বলবো না করেও শেষমেশ বলেই ফেললো
— শেয়ার করতে চাইলে করতে পারো, নো জাজমেন্ট।

তিন্নির মন তখনও সিকিমের পড়ে, আনমনেই ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো
— নভেম্বরেও সিকিমে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।

বলেই মুখে সেলোটেপ এঁটে নিলো তিন্নি। অবাক হয়ে গিয়ে পিয়াসা বললো
— হ্যাঁ হচ্ছে!!! তাতে কি হলো?

ছলছলে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো তিন্নি পিয়াসার দিকে! কবেই যে কবিগুরু বলে গেছেন ~ ” গোপনে প্রেম রয় না ঘরে, আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে”। কি করে যে তিন্নি সামাল দেবে বুঝে উঠতে পারছিলো না।তিন্নির ছলছলে চোখে, নত হয়ে থাকা মুখ, আরক্ত গাল দেখে কিছুক্ষন পর পিয়াসার মাথায় স্ট্রাইক করলো কথাটা। ও যা ভাবছে সেটাই কি? ভুরু উঁচিয়ে অবাক হয়ে বললো
— ওহ! তোমার সেই মিস্ট্রী আর্মি ম্যান। সে’ও সিকিমে আছে তাই না?আর ইউ গাইজ ষ্টীল ইন কন্টাক্ট ?

দীর্ঘশ্বাসটা লুকিয়ে নিলো তিন্নি। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিচু গলায় বললো
— নাহ!

— ডোন্ট লাই গার্ল! তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কি হয়েছে?

আজ এতদিন পর প্রথম কাউকে নিজের কথা শেয়ার করতে খুব ইচ্ছে হলো তিন্নির। আমতা আমতা করে বলেই ফেললো
— উই… মানে.. আমরা মানে…. আই লাভ হিম।

গলা ফাটিয়ে হেসে উঠলো পিয়াসা, তারপর বললো — দ্যাট তো আই নো। ওদিকের কি খবর ? সেও কি…. ?

প্রশ্নটা অসমাপ্ত রেখেছিলো পিয়াসা, কিন্তু তিন্নির মুখ দেখে উত্তরটা বুঝে নিলো। উৎসাহের চোটে ক্যাফেটেরিয়ার সবাইকে চমকে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো প্রায়
— ওয়াও! দেন তোমরা ব্যাপারটা এমন লুকিয়ে রেখেছো কেন?

তিন্নি বুঝতে পারলো না কি বলবে। ও নিজেও যে জানে না কেন প্রথমদিকে অভিমন্যু ওকে বারবার সাবধান করে দিয়েছিলো ওদের এই সম্পর্কটার খবর যেন কাকপক্ষিও টের না পায়। অনিশ্চিতস্বরে সত্যিটাই স্বীকার করে নিলো ও
— আমি ঠিক জানি না। আসলে প্রথমদিকে আমরা ঠিক শিওর ছিলাম না আর তারপর…. সেভাবে কখনো প্রসঙ্গই ওঠে নি!

— দ্যাট’স সামথিং। ডিড ইউ মীট হিম এগেইন? হে’ই … দুর্গাপুজোর পর তুমি ফোন করেছিলে আমায়…সেই জন্যই কি? ওরই সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে?

— হুমম!
কানের লতি আর গালদুটো অদৃশ্য কয়লার গনগনে আঁচ লেগে গরম হয়ে উঠলো তিন্নির। সেদিকে তাকিয়ে কান এঁটো করে হাসলো পিয়াসা।
— ইউ আর সাচ এ ছুপা রুস্তম। দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতেও জানো না!

হাসতে হাসতে একটু ভরসা পেয়েছে তিন্নি, হয়তো পিয়াসাকে এইটুকু বিশ্বাস করা যায়। ছলছলে চোখে মনেপুষে রাখা কালো দুশ্চিন্তাটা জিভের ডগায় চলেই এলো তিন্নির
— আমার খুব ভয় করছে পিয়াসা! ছয়দিন হয়ে গেলো কোনো কন্টাক্ট নেই।

একটু চুপ করে গেলো পিয়াসা। তারপর কি বলবে ভেবে না পেয়ে জোর করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো
— চিন্তা করো না! সিকিম একটা এতবড়ো স্টেট্, দশ কুড়ি হাজার আর্মি পোস্টেড্, বা আরো বেশি। সবার সাথে কি কিছু না কিছু হচ্ছে? ডোন্ট ও্যরি।

তিন্নির তাও মন মানে না, দূরের দিকে তাকিয়েই আবছা স্বরে বললো
— আসলে এমনভাবে এতদিন কোনো যোগাযোগ ছাড়া… এমনটা তো হয় না। মনটা বড্ডো ছটফট করছে!

কি ছিল তিন্নির গলায়, পিয়াসারও কেমন গলা বসে গেলো, আর হাসতে পারলো না। মনে মনে নিজেকে তিন্নির জায়গায় রেখেই বোধহয় শিউরে উঠলো, তারপর তিন্নির ঠান্ডা হয়ে আসা হাতটা নিজের হাতে নিয়ে স্বান্তনার সুরে বললো
— মে বি আই ওোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট ইউ আর গোয়িং থ্রু। কিন্তু চিন্তা করে কি করবে বলো? তোমার-আমার হাতে তো কিছু নেই। বি হোপফুল, সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিছুক্ষন দুজনেই কোনো কথা খুঁজে পেলো না। তারপর গুমোট হয়ে আসা পরিবেশটা কাটানোর জন্য জোর করে উচ্ছল হয়ে উঠলো পিয়াসা, মুখে একটা দুষ্টু ইঙ্গিত ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করলো
— কবে আসছে সে?
—ডিসেম্বরে।
এতক্ষনে খেয়াল হলো পিয়াসার, যাকে নিয়ে এতো আলোচনা করছে তার নামটাই তো জানা হয় নি। ভুরু উঁচিয়ে বললো
— হেই। তুমি তো সেই মিস্ট্রী ম্যানের নামটাও বললে না! কি যেন নাম? মেঘা বলেছিলো, এখন মনে আসছে না। অভিনব? ? অভি…..

— অভিমন্যু..অভিমন্যু সেন।

— ফটো আছে? দিখাও, দিখাও!!

পিয়াসার উৎসাহ দেখার মতো। লজ্জা লজ্জা মুখ করে তিন্নি একটা ফটো বার করে দিলো গ্যালারি থেকে, অভিমন্যু আর ওর হাসি মুখের একটা সেলফি, সিকিমের সেই সানসেট ভিউপইন্টে তোলা। হামলে পড়লো পিয়াসা ফোনের ওপর, তারপর জুম করে দেখতে দেখতে চোখ নাচিয়ে বললো

— মাই গুডনেস! হি ইজ সো ড্যাম হট সীমন্তিনী! এমন মানুষের প্রেমে না পড়ে থাকা যায়? শিট! তোমার জায়গা আমার কেন ট্রেন মিস হলো না!

পিয়াসার কথা শুনে হেসে ফেললো তিন্নি, গালদুটো আবার টকটকে লাল হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। ছলছল চোখে চেয়ে রইলো পিয়াসার হাতে ধরা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে, জুম করা অভিমন্যুর দিকে।
কি জীবন্ত ছবিটা,মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই যেন ভালোবাসার মানুষটিকে এক্ষুনি ছুঁতে পারবে তিন্নি। সেদিকে তাকিয়ে পিয়াসা আরো একটু মজা করার লোভ সামলাতে পারলো না। তরল গলায় বললো
— এমন একজন কেউ এসে আমায় রেসকিউ করবে জানলে তোমাকে আমাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে আমিই না হয় ওই চা দোকানে পড়ে থাকতাম?

ছোঁ মেরে তিন্নি ফোনটা ছিনিয়ে নিলো পিয়াসার হাত থেকে। অভিমন্যুকে এটুকু শেয়ার করতেও ওর যেন কষ্ট হচ্ছে। মিটিমিটি হেসে পিয়াসা বললো
— আর ইউ গেটিং জেলাস? সীমন্তিনী, ইউ আর ম্যাডলি ইন লাভ উইথ হিম, ইউ নো দ্যাট ?

নিজের ছেলেমানুষিতে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো তিন্নি। চব্বিশ বছর বয়সেও সেই স্কুলবেলার বাচ্চামেয়েদের মতো করছে ও, তাও আবার অফিসের ক্যাফেটেরিয়ায় এতো লোকের সামনে। আরক্ত নতমুখে চাওমিন খেতে খেতে শুধু বললো
— হুম!

**************************__****************************

উত্তর সিকিমে ভয়াবহ ধস। আর তার জেরে মৃত্যু হলো কমপক্ষে পাঁচজনের। এরমধ্যে তিনজন ভারতীয় সেনা জওয়ান বলে জানা গিয়েছে।
আজ সকালে উত্তর সিকিমের আপার ডংজুর কাছে লিঙ্গজা জলপ্রপাতের কাছে অস্থায়ী এক সেতুর একাংশ আচমকাই ধসে পরে, এইসময় সেখানে উপস্থিত উদ্ধারকার্যে নিযুক্ত সেনা জওয়ানদের গাড়িটি দুর্ঘটনায় প্রভূতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জখম জওয়ানদের সিকিমের সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়। মৃতদের নাম রাকেশ থাপা (স্থানীয় বাসিন্দা), শেরিং লেপ্চা (স্থানীয় বাসিন্দা),ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত মেজর অভিমন্যু সেন, হাবিলদার কুলপ্রীত সিংহ, এবং হাবিলদার তাশি তামাং। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত ধস সরিয়ে রাস্তাটির একদিক দিয়ে চলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধস সরিয়ে দু’টি ট্রাক, ছোট গাড়ি এবং সেনা বাহিনীর একটি পে লোডার বের করা হলেও, একটি ট্রাক এখনও রাস্তার একপাশে ঝুলে রয়েছে। সোমবার বিকেলের পর ধস সরানোর কাজ বন্ধ রাখা হয়। আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের ধস সরানোর কাজ শুরু হবে বলে সেনা-র তরফে জানানো হয়েছে।

.
.
.
.
আজ মঙ্গলবার, গুনে গুনে এগারোদিন অভিমন্যুর কোনো খবর নেই। সন্ধ্যা পৌনে সাতটা প্রায়। অফিস ফাঁকা হয়ে এসেছে। তিন্নি এখনো কম্পিউটার্র সামনে বসে। শূন্য ফাঁকা দৃষ্টি।

একবার, দুইবার, তিনবার!
একই খবর বারবার পড়ছিলো তিন্নি। শুধু পড়েই যাচ্ছে, মাথায় কিছু ঢুকছে না। হাত পা কাঁপছে থরথর করে। মনের ভেতরে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে একটাই ভয় – এই পৃথিবীতে একই নামে দুজন ব্যক্তি থাকা অসম্ভব নয় কিন্তু একই নামে, একই জীবিকা, একই জায়গায় পোস্টেড্ ~এতটা কোইন্সিডেন্স কি হতে পারে? তাছাড়া খবর অনুযায়ী ধস নেমেছে কাল বিকেলদিকে এতক্ষনে কি কর্নেল স্যারের একটা ফোনও আসতো না? মনের শেষ জোরটুকু দিয়ে নিজেকে বোঝালো তিন্নি, বৃথাই চিন্তা করছে ও, অভিমন্যু ঠিক ফিরে আসবে।

মুঠোফোনটা তখন বেজে চলেছে সাইলেন্ট মোডে, পিয়াসা ফোন করছে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাও অস্থির চিন্তা থেকে মন ডাইভার্ট করতেই কল রিসিভ করলো তিন্নি। চাপা উদ্বিগ্ন স্বর ভেসে এলো ওপ্রান্ত থেকে
— হেই গার্ল! তুমি কি এখনো অফিসে?

— হ্যাঁ! কেন?

— ওহ.. ও.কে! বাই এনি চান্স তুমি কি নিউজ দেখেছো?

পিয়াসাও বোধহয় একই নিউজের কথা বলছে। ভাঙাভাঙা গলায় তিন্নি বললো — হ্যাঁ! বাট ডোন্ট ও্যরি, ওর কিছু হয়ে থাকলে আমার কাছে ঠিক খবর আসতো।

— ও.কে! আ্যকচুয়ালি এখন লাইভ নিউজ দেখে আমি ভাবলাম….

— লাইভ নিউজ?

একটা চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো পিয়াসার মুখ দিয়ে, তারপর ব্যস্ত গলায় বলে উঠলো
— ওহ মাই গড!! সীমন্তিনী, প্লিজ শাট ইওর কম্পিউটার ডাউন, আই আমি কামিং টু গেট ইউ।
.
.
.
.
.
নাহ! আর কিছু শোনার নেই।
রোবটের মতো কোনো অভিব্যক্তি ছাড়া তিন্নি ফোন রেখে দিয়েছে, চুপচাপ কম্পিউটারে লাইভ নিউজ চ্যানেল খুললো। একটু আগের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পড়া খবর এখন আবার ফ্ল্যাশ হচ্ছে তারসাথে ডেডবডি উদ্ধারের রিপিট লাইভ টেলিকাস্ট চলছে। পাশে ইনসেটে যারা যারা মারা গেছে তাদের ফটো আর বাড়ির ঠিকানা জ্বলজ্বল করছে। বিস্ফারিত চোখে তিন্নি তাকিয়ে দেখলো আরো চারটে ইনসেট ছবির সাথে সাথে অভিমন্যুর আই.ডি কার্ডের ছবিটাও পাঁচ নম্বর ইনসেটে রয়েছে। নিচে লেখা~ মেজর অভিমন্যু সেন, বয়স ২৯, বাড়ি কলকাতা, রেজিমেন্ট-*** ।

চারপাশের বাতাস হঠাৎ করে খুব ভারী হয়ে এলো। শীতল ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর, তীব্র একটা যন্ত্রণা বুকের বামদিক থেকে ছড়িয়ে পড়ছে হাতে, সারা শরীরে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব, দম ফুরিয়ে আসছে।
একটু বাতাস বুকে টেনে নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো তিন্নি তারপরই সাড়হীন দুটি পায়ে পা জড়িয়ে ব্যালান্স হারিয়ে পড়ে গেলো ফ্লোরে, শক্ত কি একটায় মাথাটা ঠুকলো যেন। গরম চ্যাটচ্যাটে তরল নাক দিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে হঠাৎ তিন্নির মনে হলো ~ মৃত্যু কত সুন্দর! নোনতা মিষ্টি কষাটে স্বাদ অনেকটা আমলকির মতো একই সাথে কি শান্তিময় এবং পবিত্র।
কিন্তু মৃত্যু সহজ নয়।

কায়মনোবাক্যে আজ অনেকদিন পর ঈশ্বরের কাছে নতুন একটা প্রার্থনা জানালো তিন্নি — মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেওয়ার আকুল প্রার্থনা। বেঁচে থাকার প্রতি আর কোনো টান নেই ওর, মৃত্যুই ওর এক ও একমাত্র নিরপেক্ষ আশ্রয়। কোমল আলিঙ্গনে মৃত্যুকে জড়িয়ে নেওয়ার বাসনায় ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে নিল তিন্নি। শেষ প্রার্থনায় বিড়বিড় করে চললো ঠোঁট- এই চোখ যেন আর খুলতে না হয়।

ওডিসিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকা তিন্নির সহকর্মীরা ভারী চেয়ার পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে চেয়ারে বসেই ইতিউতি তাকিয়ে খোঁজাখুঁজি করলো শব্দের উৎসস্থল তারপর যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, বেশিরভাগের কানেই হেডফোন। মিনিট পাঁচ কি দশেক পর কারোর একজনের হাঁকাহাঁকিতে যতক্ষনে দৌড়ে এসেছে সবাই, খয়েরি হলুদ চেক কাটা কার্পেট বেয়ে তখন বয়ে যাচ্ছে কালচে লাল রুধির টাটকা ধারা। আই.টি আ্যনালিস্ট সীমন্তিনী আচারিয়া অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে, মাথাটা গিয়ে ঠুকেছে পাশে থাকা স্টিলের কাপবোর্ডের কোনায়, কপাল আর নাক থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে বেরিয়ে আসা রক্তের লাল ধারা ভিজিয়ে দিচ্ছে ওর খোলা চুল, আসমানি নীল কুর্তি আর কার্পেটের নকল পশম। আশ্চর্য্যের বিষয়, গমরঙা ঢলঢলে মুখখানার পাতলা গোলাপি ঠোঁটের কোনে তখনও লেগে আছে আলতো একটা হাসি, যেন ঘুমিয়ে আছে খুব নিশ্চিন্তে, নরম সুখস্বপ্নের চাদর জড়িয়ে।

ঠিক যেন বিসর্জনের সন্ধ্যেয় টলটলে দীঘির জলে নিমজ্জমান সিঁদুর মাখানো দুর্গা প্রতিমা

.
.
.
.
.

ক্রমশঃ
© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন
বিঃদ্র~ আজকের পর্ব নিয়ে, চরিত্র নিয়ে কাউকে কোনো Explanation দেওয়ার নেই। আমার সৃষ্ট চরিত্র এমনই, She could be judged for her actions but it doesn’t and it will not affect her actions anyway.
খবরসুত্র ইন্টারনেট।

 

***********************__******************************

সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n
Part 28
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164941361891740/?extid=Ck5D6rJFfhyP5vvH&d=n
Part 29
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/165252361860640/?extid=Nq4U03rtVoPWvXTe&d=n
Part 30
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/166475585071651/?extid=vZLf99OzhuVT4DA6&d=n
Part 31
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/167096588342884/?extid=bxlA1UFJH0sAGqge&d=n
Part 32
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/167737034945506/?extid=yLMeUpou6fgpoPHI&d=n

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here