সূর্য ডোবার আগে পর্ব-৯

0
1983

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-৯
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
.

সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ হুড়মুড় করে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামলো তিন্নিরা সবাই! সবার মুখচোখ ফোলা, চুল উস্কো খুস্কো কিন্তু উৎসাহে মন টগবগ করছে! যদিও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে তিন্নি, অভিমন্যু বা কোনো আর্মির লোককেই নামতে দেখলো না! মনে মনে ওর একটা ক্ষীণ আশা ছিল হয়তো আজ ওরা এক স্টেশনেই নামবে!

তিন্নির বুকটা হঠাৎ ধক করে উঠলো। নর্থবেঙ্গলের ভিজে হাওয়ার ভিতর মনকেমনের গন্ধটা ফিরে এলো আবার। আবার যেন অদৃশ্য মনটা বলে উঠলো – সে তো আর নেই, সারাজীবনের মতো সে হারিয়ে গেছে এ দুনিয়ায়। তারপর নিজেকেই ধমক দিলো তিন্নি -“কি হচ্ছে টা কি? কোথায় প্রথমবার একা ঘুরতে এসে বন্ধুদের সাথে এনজয় করবে তা নয়, কাল রাত থেকে দুঃখবিলাসী মন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! ইডিয়ট!”

সায়ক আর বাকি ছেলেরা ততক্ষনে দুটো কুলি জোগাড় করে ফেলেছে, মেয়েরা কেউ জীপে উঠতে রাজি হলো না, তাই ঠিক হলো ২টো ইনোভা বুক করে ওরা দার্জিলিং যাবে! নির্মাল্যর কি জানাশোনা একটা হোটেল আছে, সেখানে ওদের নামে ৫টা রুম বুক করাই আছে আগামী তিনদিনের জন্য! সবাই উঠে পড়লো ….

গাড়ির ড্রাইভারকে হোটেলর ঠিকানা দেখতে শুরু হলো বিপত্তি! ড্রাইভার বাংলা বলতে পারে, ঠিকানা দেখেই হেসে উঠলো!
— আপনারা ঠিক কোথায় যাবেন বলুন তো?

নির্মাল্য হকচকিয়ে গেলো – কেন? দার্জিলিং!

ড্রাইভার দুটো আরো হাসতে লাগলো — দাদা, বুক করার সময় আপনারা ঠিকানা দেখেননি? এটা তো গ্যাংটকের হোটেল!

মেয়েরা সবাই চেঁচিয়ে উঠলো, ছেলেগুলোর মাথায় হাত! এক-ই নামে ২টো হোটেল, একটা গ্যাংটক আর একটা দার্জিলিং! নির্মাল্য কথা বলেছে দার্জিলিঙের হোটেলের সাথে আর বোকার মতো বুক করেছে সিকিমের হোটেল, অনলাইনে! সবাই নির্মাল্যকে এই মারে তো সেই মারে! নন রিফান্ডেবল ঘর! সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫০০০ টাকার ধাক্কা! নির্মাল্যের মুখ কাঁচুমাঁচু হয়ে গেছে! হোটেলে ফোন করা হলো, তারা বললো ওদের কিছু করার নেই! ওদের নিজেদের মধ্যে যখন চেঁচামিচি, গালাগালি , বাতবিতন্ডা চলছে ড্রাইভার দুজন তখন বললো – “দাদা, দার্জিলিং আর গ্যাংটক একই, আপনারা ওখানেই চলে যান, নাথুলা, ছাঙ্গু লেক, পেলিং ঘুরে চলে আসুন তিন দিনে, দার্জিলিং যেতে আপনাদের যা সময় লাগবে তার থেকে আর ঘন্টাখানেক বেশি লাগবে গ্যাংটক যেতে!”

ছেলেদের কোনো প্রব্লেম নেই, ওদের তো ঘুরতে গেলেই হলো, মেয়েরাও কোনো উপায় নেই দেখে মোটামুটি সবাই নিমরাজি হলো, শুধু তিন্নি বেঁকে বসলো! বাড়িতে কি বলবে? এই প্রথমবার মা বাবা ভরসা করে একা একা ওকে বন্ধুদের সাথে ছাড়লো, এখন যদি বলে ঘুরতে এসে ডেস্টিনেশনই চেঞ্জ হয়ে গেছে তবে আর দেখতে হবে না! সায়ক-মেঘারা অনেক বোঝালো তিন্নিকে, কিন্তু তিন্নি শুনতেই রাজি নয়।

— এমন করবি জানলে আমি কিছুতেই তোদের সাথে আসতাম না সায়ক! তোরা কি রে! এতজন রয়েছিস একবারও চেক করিস নি কোন হোটেল, কোথায়, কি বুক করছিস?

— ওহ কাম অন সীমন্তিনী, এমন তো নয় যে তুই একদম “দার্জিলিং” ই যাবি বলে ঘর থেকে বেরিয়েছিস, কোথাও একটা বেড়াতে গেলেই তো হলো।

— কিন্তু বাড়িতে? বাড়িতে যে আমি বলে বেরোলাম দার্জিলিং যাচ্ছি সেটা এখন চেঞ্জ হয়ে গেলো গ্যাংটক! এরপর আর কোনোদিন কোথাওবেরোতে পারবো আমি ?

— তোর বলার কি দরকার এটা গ্যাংটক না দার্জিলিং! মেঘার মুখ খুললো এবার !

— মা-আ-নে?

— সবই তো হিমালয়, চা বাগান, পাহাড়ি রাস্তা, মলরোড আর প্যাগোডা ! তোর আলাদা করে বলার কি দরকার এটা গ্যাংটক না দার্জিলিং!

— মিথ্যে বলবো? তিন্নির অবাক হওয়া তখনও কাটে নি !
— তুই আগে কখনো বাড়িতে মিথ্যে বলিস নি ?

এতক্ষনে সায়ক বললো — “তুই আমার সাথে কথা বলা, আমি বাড়িতে সব বুঝিয়ে বলছি!”

মা’কে ফোন করার সাহস হলো না তিন্নির, বাবাকে কল করলো, রঞ্জনবাবু সব শুনে সায়কের সাথে কথা বললেন, একটু বকাবকিও করলেন ওদের এরকম নেগলিজেন্সের জন্য, কাঁচুমাচু মুখ করে সায়ক বকা শুনছে, মেঘা এগিয়ে এসে ফোনটা কেটে দিয়ে রঞ্জনবাবুকে ভিডিওকল করলো — “এই দেখো কাকু, সীমন্তিনী ছাড়াও আমরা এতগুলো মেয়ে আছি, আর সবমিলিয়ে ১০জন মতো এসেছি! তুমি কিচ্ছু চিন্তা করো না, কোনো প্রব্লেম হবে না। সীমন্তিনিকে আমরা সবাই সামলে রাখব।“

মেঘার ইশারা মতো বাকি ২জন মেয়েও হাত নাড়লো, ছেলেরাও বোকা বোকা মুখ করে “হাই” বললো, ওদের মুখ দেখে তিন্নির পেট গুলগুলিয়ে একটা হাসি আসছিলো বটে, তবে সেটা মনেই চেপে রইলো ও।

একটু ভরসা পেলেন রঞ্জনবাবু, তিন্নিকে ফোন দিতে বলে মেয়েকে বললেন – “আপাতত তোর মা’কে এসব জানানোর দরকার নেই, অযথা চিন্তা করবে, চিৎকার চেঁচামিচি করে শরীর খারাপ করবে। বরং ফিরে এসে বলিস সবকিছু। আর শোন, টাইম টু টাইম ফোন করবি মা, চিন্তায় থাকবো।”

— “থ্যাংক ইউ বাবা।” আবারো চোখদুটো ভিজে এলো তিন্নির। একমাত্র বাবাই কি করে সব কিছু বুঝে ফেলে , ও মুখ ফুটে বলার আগেই?

মেঘা তখন ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে , ভাবখানা এমন — কি? কেমন ম্যানেজ করলাম??

হইহই করে গাড়িতে উঠে পড়লো সবাই, সেভেন সিটার গাড়ি, বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা গেছে । মেয়েরা সবাই ভাগাভাগি করে দুটো গাড়িরই জানলার সাইড সিট্ গুলো নিয়ে নিয়েছে, ছেলেরা শাষিয়ে রেখেছে ফেরার সময় ওরা’ও কাউকে জানলার ধার ছাড়বে না। ন্যাশনাল হাইওয়ে ১০ ধরে জলপাইগুড়ির চা বাগানের মধ্যে দিয়ে দুটো ইনোভা ছুটে চললো সিকিমের উদ্দেশ্যে। চারিদিকে ঘন সবুজের সমাহার আর রাস্তা তেমনি সুন্দর। গাড়ি চলতে শুরু করার একটু পর থেকেই ওদের সাথ নিলো খরস্রোতা তিস্তা, বর্ষার জলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তিন্নির যে কি আনন্দ হচ্ছে ! এতদিনের রোজনামচার জীবন থেকে একটুখানি মুক্তির খোলা বাতাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো ওর মন আর রাতে মনখারাপের বাষ্পটা উবে যাচ্ছিলো সকালের নরম আলোর সাথে। বেশ একটু কবিতা কবিতা ভাব আসছিলো তিন্নির মনে, কিন্তু ঘোর কেটে গেলো বাকিদের ঝগড়ায় ! প্রথম এক ঘন্টা তিন্নিকে বাদ দিয়ে ওদের গাড়ির বাকি চারজনের ঝগড়া করে কাটলো গাড়িতে কোন গান চালানো হবে তা নিয়ে, এক এক জনের এক এক রকম দাবি! কেউ বলে বাংলা, কারো পছন্দ ওয়েস্টার্ন কেউ বা আবার পাঞ্জাবি গানের ভক্ত। তিন্নির কাছে এ সব কিছুই নতুন, এমন ভাবে দল বেঁধে ও কখনো ঘুরতে যায় নি, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। একটু বড়ো হওয়ার পর স্কুল বা কলেজের পিকনিকেও কোনোদিন যায় নি ও, মা ছাড়ে নি। এদের কান্ড কারখানা দেখে প্রথম প্রথম বেশ অবাক হচ্ছিলো তিন্নি তবে একটু পর থেকে সে আনন্দে চোনা পড়তে শুরু করল ধীরে ধীরে। স্বল্পচেনা আট-দশ জন একসাথে বেড়াতে গেলে যা হয় আর কি! রাস্তার পাশের ধাবাতে গাড়ি দাঁড়ালো তো, এ বলে ব্রেকফাস্টে মোমো খাবো, কেউ বলে দোসা, কারো আবদার ব্রেড টোস্ট।! চা না কফি, দুধ চা না লিকার চা, কড়া কফি না হালকা কড়া —- তিন্নির তো মাথাই ধরে গেলো এতো রকম আবদার শুনে! তারপর একেকবার একেকজনের বাথরুম শিডিউল !কতবার যে রাস্তায় গাড়ি থামলো তার ইয়ত্তা নেই ! একের পর এক চা-বাগান পেরিয়ে যাচ্ছে……সেবক অভয়াঅরণ্যের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির বাঙালি চালক সতর্ক করে দিলো ওদের – “দিদিরা একটু চুপ করে বসলে হরিণ দেখতে পাবেন! মাঝে মাঝে তো হাতিও বেরোয়!”

অতি উৎসাহে সবাই জানলায় চোখ এঁটে রইলো কিন্তু জনা দুই মেটে শুয়োর আর খরগোশ ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না ওরা! মেঘা অবশ্য বার দুয়েক চেঁচালো “ওই দ্যাখ হরিণ! হরিণ!”, কিন্তু সেগুলো আসলে ছিল ছাগল!

বেশ কয়েকটা ভিউপয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে বিভিন্ন পোজ দিয়ে ছবি তোলা হল সবার, তখনই ওদের ফোটো দেখতে হবে —“এই আমার চোখ বন্ধ”, “এই আমার চুল উড়ছে”, “এভাবে মোটা লাগছে দুরে গিয়ে তোল” — মেয়েদের একের পর এক ডিম্যান্ডে ছেলেগুলো তখন শুধু মাথার চুল ছিঁড়তে বাকি রেখেছে।

পাহাড় বেয়ে যখন ওপরে উঠতে শুরু করলো ওরা, সবাই মোটামুটি শান্ত হয়ে এসেছে, সারা রাতের জার্নির ধকল, এতোক্ষনের হইচই। গত কয়েকদিনে বৃষ্টি হয়ে রাস্তা বেশ খারাপ, তাও দুলতে দুলতে ঝুরঝুরে পাথুরে রাস্তায় ওদের গাড়ি এগিয়ে চললো গ্যাংটকের দিকে । পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যাচ্ছে কাঞ্জনজংঘা, আরো নানা শৃঙ্গ! এত ওপরে বাতাস ভারী, অক্সিজেন লেভেল কম। তিন্নির একটু অসুবিধে হচ্ছিলো নিঃশ্বাস নিতে, কিন্তু কাউকে কিছু বলে নি। সাড়ে তিনঘন্টা পর গ্যাংটকের মহাত্মা গান্ধী মার্গের হোটেলে এসে পৌঁছে সবার শরীর ছেড়ে দিয়েছে ততক্ষনে। সারা রাতের ট্রেন জার্নি , লং ড্রাইভ , তারপর তিন্নি ছাড়া বাকি সকলেই গতকাল অফিসও করেছে। ঠিক হলো, আজ আর কোথাও বেরোনো নয়, পুরো রেস্ট। কাল সকালে দেখা যাবে।
ওদের দশজনের জন্য পাঁচটা রুম বুক ছিল MG মার্গের হোটেলটিতে , যে যার মতো রুমে ঢুকে বিছানা নিয়ে নিলো। তিন্নি আর মেঘা একটা রুমে! মেঘা তো ঢুকেই শুয়ে পড়লো, তিন্নিও স্নান করে ফ্রেশ জামাকাপড় পড়ে, বাড়িতে কথা বলে একটু ঘুমের চেষ্টা করলো।কিন্তু হোটেলের নরম বিছানায় শ্রান্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই এতক্ষন পর আবার ভেসে উঠলো সেই মুখ! সেই চোখ, সেই খাড়া নাক, চওড়া কপাল, ভুরুর কাছে কাটা একটা দাগ।

অভিমন্যু সেন!
.

.
উফফ! আচ্ছা জ্বালা হলো তো!

এপাশ ফিরে ওপাশ ফিরে অনেকরকম ভাবে ঘুমের চেষ্টা করলো তিন্নি কিন্তু ঘুম আর এলো না! বিরক্ত হয়ে ছুঁড়ে গায়ের নরম ব্ল্যাঙ্কেটটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে উঠে বসলো বিছানায়! কেন এরকম করছে ও? এক সন্ধ্যেতে মাত্র এক দেড় ঘন্টার আলাপেই এই অবস্থা? নিজের মনকে তিন্নি সান্তনা দিলো এই বলে – অভিমন্যু সেন কালকে ওর প্রাণ বাঁচিয়েছে, এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তাতেও কি মন মানে? কি যেন এক অস্বস্তি হচ্ছে ওর। শরীরে কেমন জ্বালা করছে, কান মুখ গরম হয়ে যাচ্ছে! পেটে কেমন একটা মোচড় দিচ্ছে, পরীক্ষার আগে যেমন হতো ! স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে তিন্নি, ওর মস্তিষ্ক থেকে আ্যড্রিনালিন, ওস্ট্রোজেন,আর বাকি যা যা হরমোন আছে, সব যেন বর্ষার তিস্তার মতোই বান ডাকিয়েছে ওর শরীরে, শিরায় উপশিরায় মিশে যাচ্ছে নীল নীল বিষ! যার নাম প্রেম !।

ওহঃ! আর পারা যাচ্ছে না তো!
কি এক অসহ্য যন্ত্রনায় মাথার চুলগুলো দুহাতে খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো তিন্নি, ওল্টাতে লাগলো মনের পাতা ……….. কাল শিয়ালদা স্টেশনে ট্রেনে ওঠার পর বর্ধমান স্টেশন আসা অবধি কি কি হয়েছিল।পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সব মনে পড়ছিলো তিন্নির আর ভাবতে ভাবতেই ওর চোখ দিয়ে গড়িয়ে আসা নিঃশব্দ নোনতা গরম জলে ভিজে যাচ্ছিলো হোটেলের নরম পালক বালিশ। ওর বুকের ভিতর পাঁজরগুলো কে যেন ইলেকট্রিক করাত দিয়ে রসিয়ে রসিয়ে কাটছে! কেন এত কষ্ট হচ্ছে ওর? কেন কাঁদছে তিন্নি? এরই নাম ভালোবাসা?
ঠোঁট কামড়ে রক্ত বার করে, চোখের নোনতা জল আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টায় তিন্নি ওর মনকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো “পাগলামি করিস না, আর কোনো দিনও দেখা হবে না, মিথ্যে প্রত্যাশা রাখিস না। তুই যাকে মন দিয়ে ফেললি সে তোকে মনেও রাখে নি”।

বেলা দুটোতেও কালো মেঘে ঢেকে অন্ধকার গ্যাংটকের আকাশ, গুড়গুড় করে মেঘ ডাকছে, বেশ জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে তখন ঝাপসা জলরঙা দুনিয়া, এদিকে হোটেলের বেডে অভিমন্যুর জ্যাকেট আঁকড়ে শুয়ে প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চোখের জলে ভাসছে তিন্নি। থমকে গেছে ১৮ ঘন্টা আগের একটা সোনালি মুহূর্তে, মনের আয়নায় ঝাপসা চোখে দেখছে – অন্ধকারে জোরে ছুটে চলা একটা ট্রেন, খোলা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই পুরুষ আর ওর বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে তিন্নি!

***************************__*************************

ভালোবাসার কি একটা বিশেষ গন্ধ আছে?

চৈত্রের শুকনো দুপুর আর বর্ষার ভিজে সন্ধ্যা কি একসাথে মিশিয়ে দেওয়া যায় কখনো?

জলে ভেজা, ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধের সাথে ফুলের হালকা মিষ্টি সুবাস, উড়ন্ত হাওয়ায় এক নারীর চুল ছুঁয়ে যাচ্ছে অভিমন্যুর ঠোঁট আর গাল অভিমন্যুর ঠোঁট আর গাল, তিতির পাখির মতো তিরতিরে নরম শরীরের ভার ছেড়ে দিয়েছে ওর ওপর, চোখ দুটি বোজা। উষ্ণ নিঃশ্বাসে পুড়ে যাচ্ছে বুক, পাতলা গোলাপি ঠোঁট দুটো মুখের খুব কাছে, শুধু ছোঁয়ার অপেক্ষা। খুব ইচ্ছে করছে একবার ওকে জড়িয়ে ধরতে…ওর চুলগুলো মুখের ওপর থেকে সরিয়ে একবার ওকে কাছে টানতে..,

.
রামঝাঁকুনি দিয়ে মিলিটারি ট্রাকটা থেমে যেতে আচমকা চোখ খুলে গেলো অভিমন্যুর — কি হলো?

— “আগে সে রাস্তা বন্ধ হো গিয়া হয় স্যার, পাত্থর গিরা হুয়া হয়।“

ট্রাক থেকে একলাফে নেমে পড়লো অভিমন্যু। সেনার কঠোর কর্ত্যব্যে “প্রেম প্রেম” দিবাস্বপ্নের কোনো জায়গা নেই, ইন্সট্রাকশন দিতে লাগলো,জামার হাতা গুটিয়ে নিজেও নেমে পড়লো নাথুলা পাসের রাস্তা থেকে বড়োবড়ো বোল্ডার সরাতে, অনেক পর্যটকদের গাড়ি আটকে আছে যে!

বেশ কয়েকজন পর্যটক ওদের শুনিয়েই বলতে লাগলো — ” এই সব ভারী ভারী ট্রাক নিয়ে মিলিটারিগুলো যায়, পাহাড় তো নড়বেই! আর দেখো কি ঢিমেতালে কাজ করছে, ইনএফিসিয়েন্ট লোকজন সব! অশিক্ষিত হলে যা হয় আর কি! বলি সন্ধ্যা হয়ে গেলে কি তোমরা আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে?”

আই.আই.টি রুর্কি কলেজ থেকে ডিস্টিংশন নিয়ে পাসআউট “অশিক্ষিত” মেজর অভিমন্যু সেন কথাগুলো কানে না নিয়ে রাস্তা থেকে বোল্ডার সরাতে লাগলেন। ওরা যে পাবলিক সার্ভেন্ট।.

ক্রমশঃ(এরপর মঙ্গলবার।❤️)
© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।

Happy Friendship Day💕

ঘুরতে গিয়ে এমন mishaps আর কার কার হয়েছে? কমেন্টে জানান👇👇👇
***********************__******************************

সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
art 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here