সূর্য ডোবার আগে পর্ব-১০

0
2095

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-১০
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
.

—- দিস ইজ ভেরি সিক্রেট ইনফরমেশন অভিমন্যু, ইউ হ্যাভ টু মেক শিওর অনলি দি টপ টিয়ার নোজ এবাউট দিস।

—- ইয়েস স্যার। আই উইল স্টার্ট লুকিং ইনটু দিস ম্যাটার ওন আর্জেন্ট বেসিস। পারমিশন টু লিভ স্যার?

—-ইয়েস প্লিজ।

নিজের টেন্টে ফিরে এলো অভিমন্যু! তামিল কর্নেল জেনারেল শ্রীবিষ্ণু রঙ্গনাথাম যা বললেন তা রীতিমতো চিন্তার ব্যাপার! রিসেন্টলি, বেশ কিছু লোকাল ড্রাইভারদের রিক্রুট করা হচ্ছে সেনার ওপর নজর রাখতে, এছাড়াও স্থানীয় লোক এবং টুরিস্টের ছদ্মবেশে আর্মি ক্যাম্পের আশেপাশে খোচর বা স্পাই লাগানো হচ্ছে ক্যাম্পের ছোট ছোট খবর বের করে নেওয়ার জন্য মূলত কাশ্মীর বা দিল্লিতে এধরণের কাজকর্ম বেশি হয় কিন্তু হঠাৎ করে উত্তর ভারতের হিমালয়ের কোলের এই ছোট্ট রাজ্যটিতে কেন চোখ পড়লো এদের? আপাতত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে এটুকুই খবর এসেছে, আর্মি যেন 24X7 হাই এলার্ট থাকে। এই অঞ্চলটিতে ওপেন বর্ডার প্রায় নেই বললেই চলে, গোটাটাই এল.ও.সি অথবা এল.এ.সি, যুদ্ধজনক না হলেও যুদ্ধপ্রবণ এরিয়া, সদাসতর্ক থাকতেই হয় তার ওপর, ওপরমহল থেকে সরাসরি এমন নির্দেশ মানে ব্যাপার খুবই গুরুতর। তবে কি বড়োসড়ো কিছু হতে চলেছে? সদ্য পাওয়া স্যাটেলাইট ইমেজগুলো দেখতে দেখতে অভিমন্যুর চওড়া কপালে চিন্তার রেখাগুলো গাঢ় হতে থাকে ক্রমশ।

*****************************__*************************

–কি নাম রে লোকটার?

–“কে? কোন লোকটা?” – মন দিয়ে পাহাড় দেখছিলো তিন্নি, আচমকা এমন প্রশ্নে ঘাবড়ে গেলো!

–“ন্যাকামো করিস না, যার কথা ভেবে কাল দুপুরে কাঁদছিলি হাপুস নয়নে! উফফ! মরি মরি কি প্রেম তোর সীমন্তিনী?”
— ভ্রু উঁচিয়ে চোখ ছোট করে টেনে টেনে, তিন্নির কানের কাছে ফিসফিস করে উঠলো মেঘা।

কালকে দুপুরে গ্যাংটক পৌঁছনোর পর সবাই এতো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, কেউ আর বেরোনোর নাম ও মুখে আনে নি।সন্ধ্যের পরে MG মার্গে সায়ক-নির্মাল্যরা গিয়ে দুটো গাড়ি বুক করে এসেছিলো , সেই গাড়িতেই ওরা সবাই আজ বেড়াতে এসেছে ছাঙ্গু লেক, নাথুলা পাস, বাবা মন্দির, ওল্ড সিল্ক রোড এইসব দেখতে। যদিও আজকের ওয়েদার ঘোড়ার জন্য একেবারেই আদর্শ নয়। আলো আঁধারে মেশানো বৃষ্টিভেজা দিনটায় কেমন যেন মনখারাপের গন্ধ। বেরোনোর পর থেকেই থেকে থেকে বৃষ্টি পড়ছে, তাও ছাতা রেইনকোট সাথে নিয়েই তিন্নিরা ঘুরছে। আজকের দিনে সাধারণত কোনো ড্রাইভার যেতে রাজি হয় নি, জনা দুই সদ্য কিশোর নেপালি ড্রাইভারকে নরমালের থেকে অনেকটাই বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে সায়করা রাজি করিয়েছে। এখন বেলা তিনটে পেরিয়ে গেছে, নাথুলা পাসের পার্কিংয়ে তিন্নি আর মেঘা গাড়িতে বসে, বাকিরা বাইরে ঘুরছে। ওদিকে আকাশের অবস্থা দেখে ড্রাইভাররা তাড়া দিচ্ছে জলদি ফেরার, কারোর তাতে কানই নেই। ফাঁকা গাড়িতে বসে মেঘা আর তিন্নি বাকিদের ফেরার অপেক্ষা করছিলো তখনি মেঘা তিন্নিকে এসব বলে রাগাচ্ছে আর কি!

মুখ লাল করে তিন্নি বললো — “মোটেই না! মোটেই আমি কাঁদি নি কাল দুপুরে!”

— এক চিমটি কাটবো বলে দিলাম! বল না? বল না? নাম কি রে লোকটার?

একটু চুপ করে থেকে তিন্নি বললো — অভিমন্যু। অভিমন্যু সেন।

–আহ হা! আবার বাঙালিও? জমে ক্ষীর তো একেবারে! কিস করেছিস?

হাঁটু অবধি লম্বা হলদে পোলকি ডটের শিফন ড্রেসের তলায় কেঁপে উঠলো তিন্নি — ইয়ার্কি মারিস না মেঘা!

মেঘা চুপ করে গেলো, কিছুক্ষন পরই আবার কুনই মারতে শুরু করলো তিন্নিকে — এই সীমন্তিনী, শোন না? বলি তোর ফেভারিট বই বুঝি মহাভারত?

–চড় খাবি তুই ?

— “আচ্ছা,আচ্ছা! আর ইয়ার্কি করবো না, এই প্রমিস করলাম।”
মজার ছলে নিজের কান ধরলো মেঘা, তারপর সিরিয়াস গলায় বললো — “একটা গান শুনবি রে?”

–কি গান?

–দে তোর ফোনটা দে, হেডফোনে শুনিস কিন্তু!

–আমার ফোন সায়কের কাছে, ওর ফোনে নেটওয়ার্ক নেই, আমারটা নিয়ে বাড়িতে কথা বলছে। কি গান বল?

–“দাঁড়া না! এই নে শোন এবার। “
নিজের ফোনে চটজলদি সার্চ করে তিন্নির দিকে বাড়িয়ে দিলো মেঘা। হেডফোনটা কানে লাগাতেই মুখ লাল হয়ে গেলো তিন্নির। মেঘা ইউটিউব খুঁজে পেতে একটা গান চালিয়েছে – ২০১৪ সালে ষ্টারটিভিতে যে নতুন মহাভারত সিরিয়াল শুরু হয়েছিল তারই একটা ইন্ট্রো ক্লিপ “অ—ভি—ম—ন্যু”
.
.
তিন্নির দিকে তাকিয়ে খিক খিক হাসিতে ফেটে পড়লো মেঘা।

.
.
.
বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ওরা এসে থামলো নতুন বাবামন্দিরের থেকে অল্প দুরের একটা রোডসাইড চায়ের দোকানে, ছেলেরা সবাই হই হই করে উঠলো এই বৃষ্টি বৃষ্টি ওয়েদারে আরেক প্লেট পর্ক মোমো হয়ে যাক। রুংপা, ওদের ড্রাইভার তাড়া লাগালো — “মেমসাব, সাবজি আপলোগ জলদি কিজিয়ে। শাম হোনেওয়ালি হ্যয়, অন্ধেরা ভি ছানে লাগা হ্যয়। অউর দো ঘন্টা লাগেগা হোটেল পহুচনেমে, অগর ফিরসে বারিস নহি হুই তো…. পাহাড় কা রাস্তা কভি ভি বন্ধ হো সকতা হ্যয়। “

সায়ক অতনুরা হইহই করে উঠলো! ঘুরতে এসে কখন থেকে এ ব্যাটারা তাড়া লাগিয়ে যাচ্ছে, একটুও শান্তিতে নড়াচড়া করতে দিচ্ছে না। ওদের শহুরে শরীরে অভ্যেস নেই এমন খাড়া চড়াই উতরাই পাথুরে রাস্তায় গাড়ি চলার, প্রায় সবারই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, মেয়েগুলো তো বমি করে ভাসাচ্ছে! গোটা রাস্তায় বেচারা ড্রাইভারকে কতবার গাড়ি থামাতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই, সাথে সাথে পেছনের গাড়িটাও। বিরক্ত হয়ে উঠেছে লেপচা দুই ড্রাইভার, শহুরে ন্যাকামোর সাথে ওরা পরিচিত কিন্তু এতটাও নয়। সবকয়টাই কমবয়সী বলে কেউ শাসন করারও নেই ওদিকে বয়সে ছোটো হলেও পাহাড়ী রাস্তার অভিজ্ঞ এই দুই গাড়িচালকের বারংবার সাবধানবানী আর তাগাদাতেও কেউ কান দিচ্ছে না! নিজেদের ভাষায় লেপচা দুই ড্রাইভার ঠিক করে নিল, ভুলেও আর কখনো বাংগালী বাচ্চাদের গার্জিয়ান ছাড়া গাড়িতে তুলবে না ওরা!
.
.
.
.

হাঁটু অবধি লম্বা হলদে পোলকি ডটের শিফন ড্রেস, গায়ে একটা রেনজ্যাকেট, তাতেই তিন্নির ঘাম দিচ্ছে। অথচ বাইরে নাকি ৯ ডিগ্ৰী তাপমাত্রা মাত্র আজ! এই তাপমাত্রায় ডিসেম্বরে দমদমের লোকে হনুমান টুপি পড়ে ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে, কাগজে বেরোয় “আজ বছরের শীতলতম দিন।” সেখানে তিন্নির ঘাম দিচ্ছে?

বাথরুমটায় ঢুকেই শিউরে উঠে নাকে হাত চাপা দিল তিন্নি। তিন্নি। বাথরুমের বদলে ঝোপড়ি বলাই ভালো! কাঠের মাচা আর পাথর দিয়ে বানানো নড়বড়ে একটা ঘর, একদিকে পর্দা ঝোলানো সেখানে বাথরুমের জায়গা। একটু এগিয়ে মেঝেতে গর্ত করে পাথরের একটা গভীর চৌবাচ্চা বা রিজার্ভার মতো আছে, দড়ি বাঁধা প্লাস্টিক মগ ডুবিয়ে জল তুলতে হয়ে। মানুষের শুকনো বর্জ্যের গন্ধে গা গুলিয়ে উঠলো ওর কিন্তু কিছু করার নেই। দিনের শেষে একের পর এক ট্যুরিস্টকার পর পর থেমেছে এখানে, স্বাভাবিকভাবেই তাড়াহুড়োয় কেউই ঠিকঠাক জল দেয় নি।

খুব সাবধানে পাথরের চাতালে রাখা এক মগ জল তুলে মুখে চোখে ভালো করে ঝাপটা দিল। বরফ ঠান্ডা জলটা একটু হলেও যেন তিন্নির তিনগুন বেগে হয়ে চলা হৃৎপিন্ডটা একটু শান্ত করলো। জ্বর আসতে পারে ভেবেও মাথায় আর একটু জল দিলো তিন্নি, হ্যান্ডব্যগটা গাড়িতেই ফেলে এসেছে, না হলে একটু ঘাড়ে গলাতেও দেওয়া যেত। শরীরটা সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। তাও মনের জোরে বাইরে বেরিয়ে এলো হাসি মুখে। সায়ক দুরে দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছিল, ওখান থেকেই জিজ্ঞেস করলো — “কি রে? ঠিক আছিস তো?“

ঘাড় নাড়ল তিন্নি। বেশ কিছুক্ষন পাহাড়ী রাস্তায় দাঁড়িয়ে সোঁদা পাহাড়ী গন্ধটা আপ্রাণ শুষে নিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়েই কেমন আবার গা গুলিয়ে শরীরে মোচড় দিল তিন্নির। কম অক্সিজেনে এমনিতেই কখন থেকে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর, পাছে বাকিদের ঘোরায় কোনো বাধা পড়ে তাই সকাল থেকে সব শারীরিক অসুবিধা চেপে রয়েছে তিন্নি কিন্তু আর তো শরীর দিচ্ছে না! মেঘা বাইরে, পেছনের সীটে বসে থাকা পিয়াসাকে বললো
— “শোন না, আমার না কেমন গা বমি বমি করছে, আর একবার বাথরুম থেকে ঘুরে আসছি।”

ঘাড় হেলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো পিয়াসা। হ্যান্ডব্যাগটা হাতে নিয়ে জিপ থেকে নেমে বাঁশের ছাউনি দেওয়া টেম্পোরারী বাথরুমটার দিকে এগিয়ে গেল তিন্নি। অন্যভস্ত চোখে খেয়ালও করলো না পিয়াসার কানে আ্যপেল পড লাগানো, ওয়্যারলেস হেডফোনে গান শুনতে মত্ত পিয়াসা। বাইরের কোনো আওয়াজই ওর কানে যায় নি!!!
**************************__*************************

ওয়াক! ওয়াক!
না, বমি তো হচ্ছে না তও এতো বুকে ব্যাথা করছে কেন?গা গুলোচ্ছে, নিঃশ্বাস নিতেও এতো কষ্ট, দম বন্ধ হয়ে আসছে – কি করবে এবার তিন্নি? কাকে বলবে?
চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো ওর তারপরই মুছে নিলো হাতের উল্টো পিঠে! কেঁদে কি হবে? আজ বুঝছে তিন্নি, এই জন্যই মা ওকে কোথাও একা ছাড়তো না, কোথাও ওকে নিয়ে বেড়াতে যেত না।
মুখে আবার জলের ঝাপটা দিলো, পুরোনো কথা ভেবে লাভ নেই, এখন যত তাড়াতাড়ি হোটেল ফিরতে হবে, মেঘলা দিন, পাহাড়ে সন্ধ্যে হয় তাড়াতাড়ি। ওর জন্য সবার দেরি হচ্ছে। রুমাল ভিজিয়ে নিতে গিয়ে দেখলো বালতির ধরে রাখা জল শেষ তারমানে ওই রিজার্ভার থেকে জল তুলতে হবে!

হ্যান্ডব্যাগটা টিনের দরজার কোণের কাছের শুকনো জায়গাতে রেখে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো তিন্নি, খুব বেশি গভীর নয়, হাত বাড়িয়েই তোলা যাবে জল! বালতিটা নিয়ে অনেকটা ঝুঁকেছে ,তখনই বিশাল জোরে জোরে বাথরুমের পলকা টিনের দরজাটা কে যেন ধাক্কা মারলো আর চমকে উঠে তিন্নি সোজা রিজার্ভারের মধ্যে ঢুকে গেলো পা পিছলে!

রিজার্ভারটা খুব বেশি গভীর নয়, তিন্নির বুক অবধি বরফ ঠান্ডা জলে ডুবে। কি হচ্ছে কি ওর এই ট্রিপটার শুরু থেকে, প্রথমে ট্রেন মিস তারপর ডেস্টিনেশন চেঞ্জ এখন রিজার্ভারের মধ্যে পড়ে যাওয়া শনির দোষ লেগেছে নাকি তিন্নির। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও হাতড়ে হাতড়ে তিন্নি দেখলো কি করে ওপরে ওঠা যায়। তারপর হাতে ঠেকলো একটা ধাতব ডান্ডা, আধো অন্ধকারে ওপরে নিচে হাত বুলিয়ে বুঝতে পারলো সেটা একটা ছোট লাডারের মতো, বোধহয় ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার জন্য – খুব সাবধানে ল্যাডার বেয়ে ওপরে উঠে এলো তিন্নি। ঠান্ডায় হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে টিনের দরজাটা খুলে বাইরে বেরোলো ও আর তারপরই চোখের সামনে পৃথিবী যেন ওর অন্ধকার হয়ে গেলো। “ওদের গাড়ি দুটো কই????”

ক্রমশঃ(এরপর পরশু।❤️)
© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।

***********************__******************************

সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
art 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here