সেই সন্ধ্যা পর্ব-১২

0
1406

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১২
.
ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে
মহুয়ার বনে মাতাল হাওয়া খেলে।
একমুঠো রোদ আকাশ ভরা তারা
ভেজা মাটিতে জলের নকশা করা
মনকে শুধু পাগল করে ফেলে।

স্নিগ্ধ চোখের কোণে থাকা পানি মুছে উঠে বসলো। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। এই মুহূর্তে ওর বিশ্রাম প্রয়োজন। ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে কোনোমতে একটু খাবার খেয়ে আলমারির ড্রয়ার খুলে একটা বক্স বের করে তার ভেতর থেকে একটা মেডিসিনের পাতা নিয়ে তার থেকে একসাথে দু’টো ওষুধ বের করে খেয়ে সেগুলো আবার গুছিয়ে রেখে দিয়ে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরলো।
সকাল চাচ্চুর পাশে গাল ফুলিয়ে বললো,
-“চাচ্চু তোমার ছেলে খুব পঁচা।”
-“কেন! কি হয়েছে?”
-“আমি ছাদের দোলনায় বসে আইসক্রিম খাচ্ছিলাম। তোমার ছেলে তার ভয়ংকর গম্ভীর কণ্ঠে আমাকে পেছন থেকে ভয় দেখিয়েছে। আর ভয় পেয়ে আমার আইসক্রিমটা নিচে পরে গেছে। তার ওপর ওনাকে স্যরি বলতে বলেছি বলে উনি ভাব দেখিয়ে বললেন “স্যরি বলা আমার ফিদরতে নেই।” কত পঁচা তোমার ছেলে দেখেছো?”
-“আহারে… এ-তো ভীষণ অন্যায়। না না এটা অনুভব ঠিক করে নি একদম। আমি অনুভবকে বকে দিব। চিন্তা করো না।”
-“আচ্ছা তোমার ছেলে কি হাসতে শিখে নি?”
-“আরে মা এটাই তো সমস্যা। ও ছোট থেকেই অনেক গম্ভীর আর রাগী। বম ফাটালেও ওর চেহারায় হাসি দেখা যায় না। কার মতো যে হয়েছে ও আল্লাহ্ মাবুদ জানে।”
-“তোমার ছেলেকে বলে দিও আমার সাথে যেন ওই রকম গম্ভীর গলায় কথা না বলে। আমি এতটুকু একটা পিচ্চি মানুষ! ভয় পাই না বুঝি? ওনার ওই গম্ভীর গলা শুনে যদি হার্ট অ্যাটাক করি তখন তো তোমরা অনাথ হয়ে যাবে।”
-“মেয়ে বলে কি! মা এভাবে বলতে হয় না। লক্ষ্মী মেয়ে না তুমি? অনুভবকে আমি বলে দিব যাতে তোমার সাথে সুন্দর করে কথা বলে।”
-“আচ্ছা।”

অনুভব সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে সকালের সব কথাই শুনেছে। ও অবাক হয়ে সকালের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মন মানসিকতা যে এতটা বাচ্চা ও বুঝতেই পারে নি। সাথে একটু দুষ্টুও বটে। অনুভব সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতেই সকালের বাবা ওকে বসতে বললো। অনুভব সোফায় বসেই সকালের দিকে তাকালো। সকাল তখন নিজের মায়ের পাশে বসে মায়ের সাথে দুষ্টুমি করছে আর খিলখিল করে হাসছে। অনুভবের মুখেও হঠাৎ এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।

পরদিন সকাল ক্লাসে এসে ঢুকতেই পরশ দৌড়ে এলো। সকাল মুচকি হেসে ওকে হাই দিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরলো। আফি চোখ বন্ধ করে বসে আছে কানে ইয়ারফোন গুঁজে। সকাল এসেছে ও খেয়ালই করে নি। সকাল বুঝলো আফির কিছু একটা হয়েছে। নাহলে আফি কখনোই এমন আপসেট হয়ে বসে থাকে না। পরশকে চুপ করতে বলে সকাল যেয়ে আফির পাশে বসে পরলো। এক টান দিয়ে আফির ইয়ারফোনটা খুলে ফেললো সকাল। আফি সকালের দিকে এক নজর তাকিয়ে মাথা নিচু করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“জানি তুই বুঝে গিয়েছিস যে আমার মুড অফ।”
-“এখন মুড অফের কারনটাও বল।”
-“পলাশ ব্রেকআপ করেছে আমার সাথে।”
-“সিরিয়াসলি! এই না গত দু’দিন আগেও উনি বললো যে উনি তোকে ছাড়া না’কি বাঁচবে না! তাহলে আজ কিভাবে তোকে ছাড়া বাঁচতে চাইছে?”
-“পলাশের কলিগ সানা নামের মেয়েটা না’কি ওকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে। ও প্রথমে না করে দিয়েছিল। কিন্তু অনেক ভেবে দেখার পর ও রাজি হয়েছে। কারন পলাশের মতে আমি সবে মাত্র মেডিকেলে পড়ছি। আর আমার পড়া শেষ না হলে আমি বিয়ে করব না। কিন্তু ও আগামী ৩ মাসের মধ্যে বিয়ে করতে চায়। কারন তিন মাস পর ওর প্রমোশন হবে আর ব্যাচেলর লাইফ না’কি ওর ভালো লাগছে না। সানা মেয়েটা বেশ শিক্ষিত পাশাপাশি জবও করে। সাথে অনেক স্টাইলিশ। ওর মতে আমি ব্যাকডেটেড। তার ওপর আমার গায়ের রং ময়লা বলে ওর মা আমাকে মেনে নিবে না। তাই ও আমার সাথে ব্রেকআপ করেছে।”
-“ওহ আচ্ছা। এই ছেলে যে সুবিধার না সেই কথা তোকে আমি আগেই বলেছিলাম। কিন্তু তুই শুনিস নি। তখন আমার কথা শুনলে আজ এইরকম একটা ক্রাইসিসে তোকে পরতে হতো না। তার ওপর তুই ওকে এতটাই বিশ্বাস করেছিলি যে নিজেকে ওর হাতেও পর্যন্ত সপে দিয়েছিলি। এটাকে কোন ধরনের ভালোবাসা বলে একটু বলবি আমাকে?”
-“আমি অনেক অনেক স্যরি। আমার উচিৎ ছিল তোর কথা শোনা। আজ আমি নিজের দোষেই নিজের লাইফটা নষ্ট করে ফেললাম।

আফি মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে কেঁদে দিল। আফির ওপরে সকালের রাগ উঠলেও এখন ওকে আফির প্রয়োজন ভেবে রাগটা ঝেড়ে ফেললো। বেশ মায়া হলো সকালের আফিকে দেখে। কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো আফিকে। আফির চাপা কান্নার স্বর সকালের কাছে খুব খারাপ লাগছে। যেমনই হোক না কেন মেয়েটা তো ওরই বেস্টফ্রেন্ড।
পরশ কিছু না বলে শুধু ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। আফির জন্য খারাপ লাগছে ওর। কিন্তু কিছু করতে পারছে না।
স্নিগ্ধ ক্লাসে ঢুকতেই সকাল একবার স্নিগ্ধর দিকে আবার আফির দিকে তাকাতে লাগলো। স্নিগ্ধ আফির কান্নামাখা চেহারা দেখে বুঝলো যে কিছু একটা হয়েছে। সকাল আফিকে দাঁড় করিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে স্নিগ্ধর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আফিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। আফি কান্না থামিয়ে চোখেমুখে ভালো করে পানি দিয়ে সকালের সাথে আবার ক্লাসে চলে গেল।
ক্লাস শেষে সকাল আর আফিকে নিজের কেবিনে আসতে বলে চলে গেল স্নিগ্ধ। সকাল আর আফি স্নিগ্ধর কেবিনে যাওয়ার সময় পরশ দৌড়ে এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো।
-“তোমরা আমাকে ভুলে গিয়েছো।”
-“না ভুলি নি। তবে এখন একটু তাড়া আছে।’
-“কোথায় যাচ্ছ?”
-“ডাক্তার সাহেব তার কেবিনে ডেকেছেন আমাদের দু’জনকে।”
-“ডাক্তার সাহেব কে?”
-“ডক্টর স্নিগ্ধ।”
-“উনি কেন তোমাদের তার কেবিনে ডেকেছেন?”
-“ত কুয়েশ্চন কেন করছো পরশ? আচ্ছা ঠিক আছে যখন কুয়েশ্চন করেই ফেলেছো তখন এ্যান্সারটাও দিয়েই যাই। উনি আমার পার্সোনাল ডক্টর। এবার আসছি।”

সকাল আফিকে নিয়ে চলে গেল। পরশ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। স্নিগ্ধকে ক্লাস টাইমেও দেখেছিল বারবার সকালের দিকে তাকাতে। আবার সকালকেও দেখেছে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে। কেন জানে না ভালো লাগছিল না এসব পরশের। ভীষণ বিরক্ত লাগছিল স্নিগ্ধকে তার। সকাল স্নিগ্ধকে স্যার বলে সম্বোধন করে না দেখে আরও বেশি বিরক্ত লাগছে ওর। পরশ এক প্রকার বিরক্তি নিয়েই ক্যানটিনে চলে গেল।
সকাল আর আফি স্নিগ্ধর কেবিনে প্রবেশ করতেই স্নিগ্ধ ওদের বসতে বললো। ওরা বসার পর ভালো করে একবার সকালকে পর্যবেক্ষণ করে আফির দিকে তাকালো স্নিগ্ধ। আফি মাথা নিচু করে বসে আছে। স্নিগ্ধ গলা ঝেড়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“কি হয়েছে মিস আফি?”
-“কিছু হয় নি স্যার।”
-“কিছু তো একটা হয়েছে। নাহলে আপনি ক্লাসে বসে কাঁদতেন না। ইনফ্যাক্ট এখনো আপনার চোখে পানি। সেজন্যই আপনি মাথা নিচু করে রেখেছেন।”

আফি আর কোনো কথা বললো না। চুপচাপ বসে রইলো। সকাল ওদের দু’জনের দিকে তাকাচ্ছে বারবার। স্নিগ্ধ আবারও বললো,
-“দেখো আমাকে তোমার টিচার হিসেবে নয় বড় ভাই হিসেবে নিজের সমস্যাটা বলো। আমি তোমাকে আমার ছোট বোনের মতোই মনে করি। তাই নির্দ্বিধায় আমার সাথে সব শেয়ার করতে পারো। হয়তো আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো। বিশ্বাস করলে বলতে পারো। আর যদি মনে করো আমাকে বলতে মন চাচ্ছে না বা ইচ্ছে নেই। তাহলে সেটা আলাদা ব্যাপার।”
সকাল আফির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমার মনে হয় তোর সব কথা গুলো উনার সাথে শেয়ার করা উচিৎ। তুই এখন ডিপ্রেশনে আছিস। আর উনি একজন ডক্টর। সেই হিসেবে উনি তোর সমস্যাটা বুঝতে পারবেন আর পারফেক্ট স্যুলিউশনও দিতে পারবেন। আর তুই না উনাকে মনে মনে ভাইয়া বলে ডাকিস? তাহলে ভাইয়ের সাথে শেয়ার করতে সমস্যা কোথায়?”

স্নিগ্ধ পানির গ্লাসটা আফির দিকে বাড়িয়ে ধরতেই পানিটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো আফি। নিজেকে প্রস্তুত করলো স্নিগ্ধকে সবটা বলার জন্য। অবশেষে মুখ খুললো ও।

-“আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি। ওর নাম পলাশ। ওর সাথে রিলেশনে ছিলাম ক্লাস এইট থেকে। তখন ভালোবাসা কি ঠিক মতো না বুঝলেও ওকে ভালো লাগতো আমার। আর ও যখন আমাকে প্রপোজ করে তখন আমি ওকে আর না করি নি। রিলেশনে জড়িয়ে গেলাম ওর সাথে। সকাল আমাকে বারবার নিষেধ করেছিল যাতে আমি পলাশের সাথে রিলেশনে না যাই। কারন পলশাকে সকালের সুবিধার মনে হয় নি। কিন্তু আমি ওর কথা শুনি নি। দেখতে দেখতে আমাদের রিলেশনের চার বছর শেষ হয়ে যখন পাঁচ বছরে পরলো তখন আমি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। তখন পলাশ একদিন আবদার করে বসলো যে ও…..

আফিকে চুপ করে যেতে দেখে স্নিগ্ধ বুঝতে পারলো যে আফি কি বলতে চাইছিল। পলাশ যে আফির কাছে ফিজিক্যাল রিলেশন করার জন্য আবদার জানিয়েছিল তা বুঝতে বাকি রইলো না ওর। স্নিগ্ধ একটু নড়েচড়ে বসে সকালের দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল স্নিগ্ধকে ইশারা করে আফিকে লাইনটা স্কিপ করার কথা বলতে বলছে। স্নিগ্ধ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বললো,
-“আচ্ছা আমি বুঝেছি ব্যাপারটা। তুমি নেক্সট কি হয়েছে সেটা বলো।”
আফি ঠোঁটটা জিহ্ব দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে আবার বলতে লাগলো।
-“আমি প্রথমে ওর আবদারে রাজি হই নি। ও নিজেও আর আমায় জোর করে নি। এরপর থেকে আমার সাথে তেমন একটা কথা বলতো না পলাশ। দেখা করলেও মনমরা হয়ে থাকতো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম ও কষ্ট পেয়েছে আমার কথায়। ওর কষ্ট দেখে আমি নিজের কথা না ভেবে ওর খুশির জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলাম ওর কাছে। সেদিন সত্যি আমি বুঝতে পারি নি আমি কত বড় ভুলটা করছি। এরপর প্রায় প্রায়ই ও এমন আবদার করতো। আর আমিও সায় দিতাম ওর এই রকম জঘন্য আবদারে। আমাদের রিলেশনের সাড়ে পাঁচ বছর পূরণ হলো গতকাল। আর গতকালই ও আমার সাথে ব্রেকআপ করেছে। রিজন জানতে চাইলে বললো যে “তুমি এখন বিয়ে করবে না। আর আমার পক্ষে আর ব্যাচেলর থাকা সম্ভব নয়। আমি এখনি বিয়ে করতে চাই। আমার অফিসের একটা মেয়ে কলিগ আছে নাম সানা। ও আমাকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে। ও অনেক শিক্ষিত, জব করছে আর অনেক স্টাইলিশও। তাই আমি ওকে হ্যা বলে দিয়েছি। তুমি তো প্রচুর ব্যাকডেটেড। তোমার সাথে আমার যায় না। আর তাছাড়া তোমার গায়ের রঙ কালো। আমার মা কালো মেয়েকে বাড়ির বউ করবে না। তাই তোমার সাথে আমি আর সম্পর্ক রাখতে চাইছি না। আমাকে আর কল করে ডিস্টার্ব করবে না। তুমি তোমার রাস্তায় চলো আর আমি আমার রাস্তায়। গুড বায়।” আমাকে আর একটা কথা বলারও সুযোগ দেয় নি পলাশ। চলে গিয়েছে সে।”

কথা গুলো বলতেই অবাধ্য চোখের পানি গুলো গাল গড়িয়ে পরতে লাগলো আফির। স্নিগ্ধ এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আফির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আজকাল রিলেশনশিপে রুম ডেট একটা কমন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তোমাদের মতো বোকা মেয়ে গুলোও কি সুন্দর ওই সব অসভ্য ছেলে গুলোকে বিশ্বাস করে রাজি হয়ে যাও এসবে। পরে যখন ছেলে গুলো ঠকিয়ে চলে যায় তখন তোমরা মেয়েরা অবলা সেজে কান্না করো। মেয়ে গুলো বোকা হলেও ৯৫% দোষ এই ব্যাপারে মেয়েদেরই থাকে। অবশ্য সব ছেলেদের ক্ষেত্রে আবার এক হয় না। অনেক ছেলেই আছে যারা রুমডেট করলেও হয় মায়ার বশে আর নয় ভালোবাসার বশে বিয়ে করেই নেয়। তবে সেটা অনলি ২% ছেলেদের ক্ষেত্রে। এখনকার বেশির ভাগ ছেলেরাই পলাশের মতো অসভ্য হয়। তুমি ভুল করেছো। একটা কথা মনে রাখবে যেই ভালোবাসায় মানসিক প্রশান্তির চেয়ে শারীরিক চাহিদা বেশি থাকে সেটাকে কখনো ভালোবাসা বলা চলে না। পলাশ তোমাকে দিয়ে শুধু নিজের শারীরিক ক্ষুধা মিটিয়েছে। তোমাকে ভোগের বস্তু বানিয়ে রেখেছিল পলাশ। আর তুমিও স্বেচ্ছায় ওর ভোগের বস্তু হয়েছিলে। কারন তুমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলে ওর ভালোবাসায়। এখন বুঝতে পারছো তো তার ভালোবাসাটা ঠিক কেমন ছিল? ও যদি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে থাকতো তাহলে তোমার পড়ালেখা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতো। তোমার গায়ের রঙ ওর কাছে কোনো ম্যাটার করতো না। তুমি যে ব্যাকডেটেড সেই কথা ও আগে রিয়্যালাইজ করে নি? ফাইজলামি করে ও? তোমার প্রয়োজন ওর কাছে শেষ তাই ও চলে গিয়েছে।”
স্নিগ্ধ একটু থেমে আবার বলা শুরু করলো,
-“এখন যা হয়ে গিয়েছে তাকে তো আর বদলাতে পারবে না। তার থেকে ভালো হয় যদি তুমি পলাশের কথা ভুলে এক নতুন জীবন শুরু করো। এখন মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো। এসবে আর জড়িয়ো না। ভবিষ্যৎ-এ তুমি অনেক ভালো কাউকে পাবে নিজের পাশে। তবে একটা কথা মাথায় রেখো। নিজের লাইফে পার্মানেন্ট ভাবে কাউকে আনার আগে তাকে সত্যি কথাটা জানিয়ে দিও। ইনশাআল্লাহ্ সে যদি সুন্দর মনের অধিকারী হয় তবে তোমার এসব কথা শুনেও সে তোমাকে আপন করে নিবে। তোমাকে তার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে মেনে নিবে। এখন পলাশের চিন্তা বাদ দাও। ও একটা চিটার ছিল। নাউ জাস্ট থিংক এবাউট ইয়র স্টাডি অ্যান্ড ফিউচার। এছাড়া আর কিছুই যেন ঘুরঘুর না করে মাথায়। ঠিক আছে?”

স্নিগ্ধর কথা শুনে নিজেকে যেমন অপরাধী মনে হচ্ছে আর ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি! ঠিক তেমনি মনের ভেতরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার একটা জেদ কাজ করছে আফির। হালকা মলিন হাসি দিয়ে স্নিগ্ধর কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় আফি।

চলবে….

#নোটঃ আজকের পর্বে আফির কাহিনিটা উৎসর্গ করলাম কিছু ইমোশনালফুল, আবেগী কন্যাদের জন্য। যারা রিলেশনে থেকে স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দেয়ার মতো একটা জঘন্য কাজ করে। একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবে। যে ছেলের কাছে ফিজিক্যাল নিড বেশি সে কখনোই একটা মেয়েকে সত্যিকারী ভালোবাসতে পারে না। হি ইজ আ চিটার। সো্ নিজের সম্মানকে সম্মান করতে শিখো। তোমার সম্মান যদি তুমি নিজেই নষ্ট করো তাহলে পাড়া-প্রতিবেশীদের দোষ দিয়ে তো আর লাভ নেই। তোমাদের ভালোবাসি কথা বললেই যে তোমরা ড্যাং ড্যাং করে নিজের সর্বস্ব দিয়ে দিবা এটা তো ভালোবাসা হলো না। নিজেদের সর্বনাশ নিজেরা করো না। সত্যি ভালোবেসে থাকলে বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে শিখো। বিয়ের আগে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের জীবনটাকে পাপে পরিপূর্ণ করে তোলো না। নাহলে জাহান্নামের আগুন থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। আমি আজ পর্যন্ত যে কয়জনকেই ভালোবাসার নাম করে এসব পাপ কাজে লিপ্ত হতে দেখেছি তারা সবাই এখন আফসোস করে। কারন যেই ছেলেদের মুখে ভালোবাসি কথা শুনে তারা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল এক সময়! সেই ছেলেরা আজ তাদের পাশে নেই। তাদের সামনে দিয়ে এখন ছেলে গুলো অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরে। এই হচ্ছে ওই সব ছেলেদের ভালোবাসা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here