সেই_সন্ধ্যা পর্ব_৩৯

0
1213

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৩৯
.
দিনের সবচেয়ে সুন্দর বেলাটা হলো সন্ধ্যা। সকাল, দুপুর, বিকেল আর রাতের সংমিশ্রণে তৈরি এই সন্ধ্যা। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া, মৃদু বাতাস, ডুবন্ত সূর্য, মেঘের ভেলা সব মিলিয়েই সুন্দর এই সন্ধ্যা। পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। আকাশের মেঘগুলো নিজেদের মতো ভেসে বেরিয়ে লুকোচুরি খেলছে। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে মনোযোগ সহকারে তা দেখছে পরশ। এত সুন্দর দৃশ্য থেকে চোখ সরিয়ে সামনে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে ওর হাসিটা একটু বড় হলো। সেখানে আফি রান্নায় ব্যস্ত। নাস্তা তৈরি করছে সে পরশ আর নিজের জন্য। পরশ বুকের সাথে হাত ভাজ করে মুখের হাসি বজায় রেখে তাকিয়ে রইলো আফির দিকে।

আফির একটু পর পর কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দেওয়ার দৃশ্যটা পরশের সবথেকে বেশি ভালো লাগছে। মেয়েটা তার এত সেবা-যত্ন করে তবুও পরশের মন ভরে না। সে ইদানীং খুব করে চায় যে আফি সবসময় তার সামনে থাকুক। সারাদিন আফিকে দেখলে তারও শান্তি লাগবে। এই যে এই বাসায় আগে ও সারাদিন একা একা শুয়ে-বসে সময় কাটাতো। একটা মানুষও ছিল না যে ওর একাকিত্বটা কমিয়ে দিবে। কিন্তু এখন আফি মেডিকেল থেকে সোজা তার বাসায় চলে আসে। এখানে সারাদিন থেকে তারপর রাত ৮ বা ৯ টার দিকে নিজের বাসায় চলে যায়। এই সময়গুলো জীবনের সেরা সময় মনে হয় পরশের কাছে। কিন্তু আফি চলে যাওয়ার পর আবারও একা মনে হয় পরশের নিজেকে। তাই সে চায় যাতে আফি সবসময় তার বাসায়, তার সামনে থাকুক।

আফির প্রতি ইদানীং পরশের অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। এই অনুভূতিগুলো আগে সকালকে দেখলে হতো তার মাঝে। কিন্তু আফির প্রতি অনুভূতিগুলো আরও কড়া মনে হয় পরশের। মনে মনে সে ভীষণ ভাবে হাসে যখন আফির সাথে করা আগের ঝগড়াগুলো তার মনে পড়ে। যে মেয়েটাকে এক সময় সে সহ্য করতে পারতো না, আজ সেই মেয়ের প্রতি তার অনুভূতি কাজ করে। এই অনুভূতি যে কোনো সাধারণ অনুভূতি নয় তা জানে পরশ। কিন্তু আফিও কি তাকে পছন্দ করে কি-না তা বুঝে উঠতে পারে না। আফির ভাব-গতিক অত্যন্ত স্বাভাবিক থাকে সবসময়। যেন বন্ধু ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই পরশের সাথে তার। পরশের প্রতি অন্যরকম কোনো অনুভূতি কাজ করে না আফির মাঝে। এসব ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরশ। তবে এখনো কি আফির মনে পলাশের বসবাস! একধ্যানে আফির দিকে তাকিয়ে ভাবছে পরশ।

-“পরশ রুমে এসো নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে।”
-“আসছি।”

আফির ডাকে পরশ রুমে ঢুকে বিছানায় যেয়ে বসলো। ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে। তার মানে আফি ওয়াশরুমে গিয়েছে। পরশ চিকেন বলের বাটি থেকে একটা চিকেন বল মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে ফোন টিপতে লাগলো। ফোন বেজে ওঠার শব্দে আশেপাশে তাকাতে লাগলো পরশ। তার ফোন তো তার হাতে। তাহলে হয়তো আফির ফোন বাজছে। এই ভেবে টেবিল থেকে আফির ব্যাগ নিয়ে ভেতর থেকে ফোন বের করে নিলো। কাস্টমার কেয়ারের কল দেখে মেজাজ খারাপ করে কল কেটে দিল পরশ। ফোনটা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে গেলেই নীল রঙের একটি ফাইল দেখতে পেলো সে। পরশের মনে কৌতুহল জাগলো ফাইলটি কিসের তা জানার জন্য। ফোন রেখে ফাইলটি বের করলো ব্যাগ থেকে। ফাইল খুলে ভেতরে হসপিটালের নাম দেখে পরশের কপাল কুঁচকে গেল। হসপিটালের ফাইল আফির কাছে কেন? ভাবতেই ওয়াশরুমের দিকে তাকালো সে। আবারও ফাইলের দিকে তাকিয়ে পেশেন্টের নাম দেখে অবাক হয়ে গেল পরশ। পেশেন্ট আফি! কি হয়েছিল আফির? ও ডাক্তার কেন দেখিয়েছে? ভাবতেই পরশের কপাল থেকে ঘাম ঝরতে লাগলো।

আফি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো পরশ মাথা নিচু করে খাটে বসে আছে। তাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে তাওয়াল নামিয়ে রেখে পরশের পাশে এসে বসে বললো,
-“কি হলো এখনো খাওয়া শুরু করো নি?”
-“(….)”
-“পরশ!”

পরশের কোনো অভিব্যক্তি না দেখে ওর কাঁধে হাত রাখতেই মুখ তুলে তাকালো পরশ। আফি অবাক হয়ে গেল পরশের চেহারা দেখে। চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। মুখটাও লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে পরশ।

-“কি হয়েছে পরশ! তোমাকে এমন লাগছে কেন?”
-“এটা কি?”

পরশের হাতে ফাইলটা দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলো আফি। ভীত চোখে পরশের দিকে তাকিয়ে কম্পিত কণ্ঠে তোতলিয়ে বললো,
-“তুমি আমার ব্যাগ কেন ধরেছো?”
-“আমি আগে যেটা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।”
-“আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার আমি কারও সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি না। ফাইলটা দাও আমাকে।”

পরশ ফাইলটা ছুঁড়ে ফেলে দিল ফ্লোরে। আফিকে দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
-“তাহলে এই কারণ ছিল পলাশের সাথে সেদিন দেখা করার?”
-“(….)”
-“একদম চুপ করে থাকবে না। কথা বলো বলছি!”

পরশের বাজখাঁই গলা শুনেও আফি চুপ করে রইলো। ওর চোখ বেয়ে অশ্রুকণাগুলো ঝরে পড়ছে। নিজের কষ্টগুলো ও কাউকে দেখাতে চায়নি। কিন্তু আজ চোখেরপানি গুলো বাঁধা মানছে না। আফিকে কাঁদতে দেখে পরশ শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-“তোমার মা জানেন?”
-“(….)”
-“আফি আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে।”
-“(….)”

আফির কোনো জবাব না পেয়ে রাগে খাবারের ট্রলিটা লাথি দিয়ে ফেলে দিল পরশ। পরক্ষণেই সে চিল্লিয়ে উঠলো।

-“তুমি যে প্রেগন্যান্ট তা কি তোমার মা জানে?”
-“নান…নাহ!”
-“পলাশ জানে!”
-“হ্য…হ্যা।”
-“সকাল?”

আফি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। সাথে সাথেই পরশ আবারও চিল্লিয়ে উঠলো।

-“সবাই জানে তাহলে আমাকে কেন জানাওনি?”
-“(….)”
-“বলো!”
-“(….)”
-“ড্যাম ইট! চুপ করে আছো কেন? আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না তোমার?”
-“(….)”
-“যদি আমার সাথে এত বড় একটা কথা শেয়ার না-ই করতে পারবে তো বন্ধু কেন হয়েছিল আমার? এতদিনে তোমার ব্যাপারে এমন কোনো কথা বাকি নেই যা তুমি আমায় বলোনি। তবে কেন নিজের প্রেগন্যান্সির কথাটা লুকিয়ে গেলে?”
-“(….)”
-“আফি আমি তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছি। তোমাকে ছাড়া এখন আমার একটা মুহূর্তও ভালো কাটে না। তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি। এখন এই পর্যায়ে এসে এমন একটা কথা জানতে পারা আমার জন্য কতটা দুঃখজনক তা ভাবতে পারছো তুমি?”

আফি রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ চোখ থেকে যে জল গড়িয়ে পড়ছিল তা এখন আর পড়ছে না। আফি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে পরশের দিকে। ও এমন কিছু শুনবে পরশের কাছ থেকে ভাবতেও পারেনি। পরশ আফির কাছে এসে আবারও দু’হাতে আফিকে ধরে বললো,
-“আফি আমি তোমাকে ভালোবাসি। পলাশের সাথে তোমার কি হয়েছে না হয়েছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার তোমাকে চাই। আমি এই বাচ্চাটাকে নিজের পরিচয়ে বড় করবো। কখনো কাউকে জানতে দিব না যে এই বাচ্চাটা আমার নয়। সবাই জানবে বাচ্চাটা আফিফা আর পরশের। বিয়ে করবে আমাকে?”

আফির চোখে জল টলমল করছে। না চাইতেও ভালো লাগা কাজ করছে ওর ভেতরে। কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে সে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“আ..আমার বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখার আগেই চলে গেছে পরশ। আমি আমার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারিনি।”

স্তব্ধ হয়ে গেল পরশ। ওর হাতজোড়া আপনা-আপনি সরে গেল আফির বাহু থেকে। আফি কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো। পরশ কিছুই বুঝতে পারলো না আফির কথা। ওর কানে বারবার শুধু আফির বলা “আ..আমার বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখার আগেই চলে গেছে পরশ। আমি আমার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারিনি” কথাটা বাজছে। চোখে জল জমে গেছে পরশের। সে কম্পিত কণ্ঠে বললো,
-“বাচ্চাটা নে..নেই মানে?”
-“প..পলাশ আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে।”

কথাটা বলেই আফি চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। পরশ থমকে গেল। চোখ থেকে গাল গড়িয়ে পানি পড়লো একফোঁটা। কিছুক্ষণ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে হাঁটু ভেঙে নিচে বসে পরলো। আফিকে ধরে কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“কী..কীভাবে! আর কবে?”
-“আমি যেদিন জানতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট, ঠিক সেদিনই পলাশকে ফোন করে বাচ্চার কথা জানাই। কিন্তু পলাশ বাচ্চাটাকে অস্বীকার করে ফোন কেটে দেয়। তারপরের দিন সকালকে সবটা জানাই আমি। সকালের তো কিছু করার ছিল না। শুধু সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া। আমি তখনি ভেবেছিলাম আমার বাচ্চাকে নিয়ে অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো যাতে তাকে আমি এই পৃথিবীর আলো দেখাতে পারি। কিন্তু সেদিন বিকেলেই পলাশ আমাকে ফোন করে বলে দেখা করতে। ও বাচ্চাটার ব্যাপারে কথা বলতে চেয়েছিল। আমিও কথা বাড়াইনি। আমাদের সমাজে একটা অবিবাহিত মেয়ের কনসিভ করা মানে এই সমাজে টিকে থাকা দায়। তাই পলাশকে আরও একবার বিশ্বাস করে ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
-(….)”
-“কিন্তু সেদিনই যে আমার বাচ্চার শেষ দিন এই পৃথিবীতে তা কল্পনাও করতে পারিনি আমি। পলাশ আমাকে একটা হোটেলে দেখা করতে বলেছিল। পলাশের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আমি হোটেলে যাওয়ার পর ও আমাকে এক বোতল পানি দিয়ে সেটা খেতে বলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে এতদূর থেকে এসেছি তার ওপর আমি প্রেগন্যান্ট। তাই যেন পানিটা খেয়ে নিই। এরপর বাচ্চার ব্যাপারে কথা বলবে ও। আমিও ওর কথায় এসে পানিটা খেয়েছিলাম। তার মিনিট খানেক পরেই আমার পেটে অসহ্যকর ব্যাথা শুরু হয়। আর আমি ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। তখন সবকিছু মনে পড়ায় আমি তড়িঘড়ি করে উঠতে গেলে একজন নার্স আমাকে ধরে শান্ত হতে বলে। আর জানায় যে আমার মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। আমাকে এমন একটা মেডিসিন খাওয়ানো হয়েছিল যা খেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন গর্ভবতী নারীর বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। আমি তখন মূর্তির মতো বসে ছিলাম। আমার বুঝতে তখন বাকি নেই যে পলাশ আমাকে যে পানিটা খাইয়েছিল তার ভেতরই সেই মেডিসিন মেশানো ছিল। এর পরদিন আমি আবার পলাশের সাথে দেখা করি কেন এমন করলো সে তা জানার জন্য। আর ভাগ্যক্রমে সেদিনই তুমি এসে গিয়েছিলে।”

হাঁটু মুড়ে বসে হাঁটুর ভেতরে মাথা গুঁজে আবারও কাঁদতে লাগলো আফি। পরশ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে এখনো। এই মেয়েটা এতদিন তার সেবা করে গেছে, তার এত খেয়াল রেখেছে, তার সাথে হাসি-মজা করে কাটিয়েছে কিন্তু কখনো বুঝতে দেয়নি ভেতরে ভেতরে মেয়েটা ঠিক কতটা কষ্টে আছে। এতটুকু বয়সে অনেক কিছু সহ্য করে ফেলেছে মেয়েটা। আর নয়। এবার থেকে সে সবসময় আফির পাশে থাকবে। সব রকম বিপদ-আপদ থেকে আফিকে আগলে রাখবে। পরশ এগিয়ে গিয়ে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো আফিকে। পরশের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে আফি। হয়তো সে নিজেও বুঝতে পেরেছে পরশ ছাড়া আর কেউ তাকে এতটা বুঝতে পারবে না কখনো। হয়তো সে চাইছে পরশের ভালোবাসায় নিজের সকল দুঃখ-কষ্টগুলোকে মুছে ফেলতে।

রাত প্রায় দুটোর বেশি বাজে। মেঘ এখনো ছাদের রেলিং এর উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। হাতে রয়েছে সর্বশেষ সিগারেট। আজ পুরো এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করেছে এখানে বসে বসে। সাধারণত দু-একটার বেশি সে খায় না। যখন খুব বেশি মন খারাপ থাকে বা কষ্ট লাগে তখনি সে বেশি সিগারেট খায়। সিগারেটে শেষ ফুঁক দিয়ে ফেলে দিল মেঘ। লাইটার হাতে নিয়ে রেলিং থেকে নেমে গেল। রাত দশটার দিকে মেঘের মা কল করে নিচে যেতে বলেছিল খাওয়ার জন্য কিন্তু মেঘ খাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। লাইটার পকেটে ভরে ফোনে সময় দেখে নিয়ে নিচে চলে গেল। দরজা এখনো খোলা রয়েছে। ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল মেঘ। বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ বাসা অন্ধকার হয়ে আছে। নিজের রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই মিহুকে জানালার পাশে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠলো।

-“ঘুমাওনি কেন এখনো!”
-“এতক্ষণ ছাদে থাকে কেউ! কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?”
-“ভালো লাগছিল ছাদে বসে থাকতে তাই আসিনি। তুমি ঘুমাওনি কেন?”
-“আমারও ভালো লাগছিল জানালার পাশে বসে থাকতে তাই ঘুমাইনি।”
-“তোমার রাত জাগা ঠিক না। হাতের অবস্থা ভালো না তোমার। ঘুমিয়ে পড়ো আর পারলে আগামীকাল অফিস যেওনা।”
-“ফ্রেস হয়ে আসো খাবার দিচ্ছি।”
-“খাবো না আমি।”
-“জিজ্ঞেস করিনি তোমাকে। আমাকে রাগাতে না চাইলে চুপচাপ ফ্রেস হয়ে আসো।”

মুখ বাঁকিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেল মেঘ। মিহু হালকা হেসে খাবার নিয়ে আসতে গেল। মেঘ ফ্রেস হয়ে এসে দেখে মিহু বসে বসে কেসের ফাইল দেখছে। ছোট টেবিলের ওপরে খাবার ঢাকা রয়েছে।

-“তাওয়াল বেলকনিতে মেলে দিয়ে এসে খেয়ে নাও।”

মেঘ ভালো মতোই জানে এখন ও যদি খাবার না খায় তবে ওর কপালে দুঃখ আছে। তাই কথা না বাড়িয়ে তাওয়াল বেলকনিতে মেলে দিয়ে এসে ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে খেতে লাগলো। আড়চোখে কয়েকবার মিহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো মিহু একমনে ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ খাওয়া বন্ধ করে মিহুর দিকে ঘুরে বসলো মেঘ।

-“তুমি খেয়েছো?”
-“হুম।”
-“কিন্তু তোমার ডান হাতে তো ব্যান্ডেজ করা। তাছাড়া হাত নাড়াতেও পারছো না। তাহলে কীভাবে খেলে?”
-“(….)”
-“তার মানে খাওনি। শুধু শুধু মিথ্যে কথা কেন বললে আমাকে?”
-“(….)”

এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘ মিহুর সামনে এসে ফাইলটা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে সাবধানে মিহুকে ধরে খাটে বসালো। নিজে মিহুর সামনে বসে ভাত মেখে মুখের সামনে ধরলো। মিহু কিছু না বলে খেয়ে নিলো মেঘের হাতে। আজ নতুন খাওয়াচ্ছে না মেঘ মিহুকে। এর আগেও বহুবার খাইয়ে দিয়েছে। মিহুও এর আগে বহুবার মেঘকে বকে খাইয়েছে। কিন্তু দুজনের সম্পর্ক যে সাপে-নেউলে তা জানতে কারও বাকি নেই। খাওয়া শেষ করে মেঘ রান্নাঘরে প্লেট রেখে রুমে এসে দেখে মিহু ঘুমিয়ে গিয়েছে। এতটুকু সময়ের ভেতরে কেউ কীভাবে ঘুমোতে পারে তা মাথায় আসে না মেঘের। রুমের লাইট নিভিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। মিহুর পাশে একটা বালিশ দিয়ে সেখানে খুব সাবধানে মিহুর ডান হাতটা রাখলো। অপর পাশে এসে মাঝের কোলবালিশ ঠিক করে রেখে শুয়ে পরলো মেঘ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here