স্বপ্ন সাদিয়া_সৃষ্টি পর্বঃ- ০৩

স্বপ্ন
সাদিয়া_সৃষ্টি
পর্বঃ- ০৩

কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন। এই কয়দিনে বৃষ্টির মধ্যে এসেছে পরিবর্তন, তবে তার পরিমাণ নিতান্তই কম। যাকে বলে অতি সূক্ষ্ম পরিবর্তন। গায়ের হলুদের দিন দেখা স্বপ্নটাও ফিকে হয়ে এসেছে তার মস্তিষ্কে। এর আগেও বহু স্বপ্ন দেখেছে, তবে এই স্বপ্নটা আগের সবগুলো স্বপ্ন থেকে অধিক পরিমাণে ভয়ংকর লেগেছে তার কাছে। এর নিজের স্বপ্ন দেখার পরিমাণের উপর বেশ রাগ হয় বৃষ্টির। আর স্বপ্নের ধরণগুলোর ওপরও। কিন্তু তার হাতে কিছুই করার নেই। গত কয়েক বছরে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে সে। বহুদিন পর আবার একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখায়, বিশেষ করে সেই স্বপ্ন নিজেকে ঘিরে দেখায় মস্তিষ্কে একেবারে বাসা বেঁধেছিল স্বপ্নের খণ্ডাংশ। তবে বর্তমানে তা নেই। এই কয়দিনে নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখাটা কাজে দিয়েছে হয়তো। বৃষ্টির কল্পনার পরিসর সাধারণের চেয়ে একটু বেশিই। তাই নতুন কোন কিছুর সম্মুখীন হলে সে সেই বিষয় নিয়ে হাজার কল্পনা করে বসে। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি গত কয়েক দিনেও। এর মাঝে ভুলে গিয়েছে ‘নিশান্ত’ নামের ছেলেটিকে। স্বপ্ন থেকে ছাড়া পাওয়ার উদ্দেশ্যে অনলাইনে করা কাজে পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সারাদিন হয় ফ্রিল্যান্সারের কাজ করেছে নয়তো বাকি সময় গেমস খেলেছে। দিন রাতের কোন হিসাব নেই, ঘরের দরজা জানালা আটকে নিজের মতো থেকেছে। মাঝে মাঝে খাবার সময় হলে মা কিংবা বাবা এসে দরজায় টোকা দিতেন, তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য দরজা খুলে যেত। এর মাঝে ঘরের ভিতর থেকে একটা হাত এসে প্লেট টেনে নিয়ে আবার বিনা শব্দে দরজা বন্ধ করে দিত। খাবার শেষ হলে প্লেট নিজ দায়িত্বে ধুয়ে আবার টেবিলে রেখে দিয়ে গেমস খেলায় কিংবা কাজে মন লাগাত। ঘরের দরজা বন্ধ, জানালাও বন্ধ, তবে একটু ফাঁকা স্থান রেখে। পর্দাগুলো টেনে দেওয়া। অন্ধকারে ছোট ছোট লাল-নীল-সাদা বাতি জ্বলছে, ফ্যান পুরো গতিতে চলছে যার জন্য বাতাসের শব্দটা পাওয়া যাচ্ছে। এমন ছমছমে পরিবেশে কয়েকটা দিন নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে বৃষ্টি। কষ্ট করে লাইট জ্বালাতে যায়নি আর না ফ্যানটা বন্ধ করেছে না ফ্যানের স্পিড কমিয়েছে। নিজেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে অলসে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়েছে- এমনটাও বলা যায় না। কারণ এই পুরোটা সময় হয় ল্যাপটপে টুকটুক করে কাজ করেছে আর নাহয় ঘুমিয়েছে। চোখে লাগানো চশমাটাও খোলা হয়েছে কিনা ঠিক মনে নেই বৃষ্টির। এতকিছুর মাঝে স্বপ্নের কথাটা বেমালুম হয়ে ভুলে যায়।

সাধারণত একটি স্বপ্ন দেখার ৫ মিনিটের মধ্যে তার ৫০% মানুষ ভুলে যায়। পরবর্তী ১০ মিনিটের মধ্যে এই ভুলে যাওয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০% এ। সেজন্যই অনেককে বলতে শোনা যায়,

“রাতে দেখা স্বপ্নটা সকালে উঠেই ভুলে গেলাম কি করে!”

বৃষ্টিও স্বপ্ন প্রায় ভুলেই গিয়েছে। তবে নিজেকে কারো কাছে মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছে- এই পুরো কথা মনে না থাকলেও নিজের রক্তাক্ত অবস্থার কথাটা ঠিক সহ্য সীমার মধ্যে আনতে পারছিল না। তাছাড়া এর মাঝে ছিল আবিরের বিয়ের বিষয়টি। একই সময়ে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছিল। কিন্তু বৃষ্টি শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর ভাবায় মনজগ রাখতে পারছিল না। পুরনো সব কথা ভোলা দরকার এই ভেবে নিজেকে আটকে রাখার পরিকল্পনা করে ফেলে। নিজেকে যদি হাজার প্রশ্নের মধ্যেও গুলিয়ে ফেলে, তখন তার অবস্থার অন্য তার চারপাশের মানুষ অন্তত বিভ্রান্ত হবে না। এমনিই বৃষ্টির বিরস মুখ দেখলেও পরিবারের বাকি সদস্য এমনকি বন্ধুদের মুখটাও ছোট হয়ে আসে। সে কি করে নিজের জন্য অন্যকে চিন্তায় ফেলতে পারে!

আবির আর স্বপ্ন- দুটোই যখন সহ্য সীমার মধ্যে আনতে সক্ষম বলে নিজেকে মনে করেছে, তখনই সে ল্যাপটপ-ফোন-টিভি সব বন্ধ করে জানালার পর্দা আন্দাজে সরিয়ে দেয়। বুঝতে পারল, এখন হয়তো গভীর রাত। আলোর পরিমাণ হাতেগোনা কিছু সংখ্যক। অন্ধকারের পাশাপাশি ঠাণ্ডা বাতাসও অনুভব করতে পারল। সাথে একটি অস্বস্তিভাব চলে এলো তার মধ্যে। একটানা কয়েকদিন বন্ধ ঘরে থাকার পর হুট করে খোলামেলা পরিবেশে চলে আসলে এমনটা হওয়ারই কথা। তাই বেশি না ভেবে পর্দাটা অর্ধেক টেনে দিল। নিজের ঘরের দরজাটা খুলে সেখানে থাকা পর্দাও ঠিক করে দিয়ে ঘুমাতে চলে গেল। ঘুমানোর আগে শরীরে চাদর টেনে নিতেও ভুলল না। তবে আগামী সকালে এই চাদর হয়তো বিছানায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। বৃষ্টির আবার হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ির অভ্যাসের জন্য চাদর কোনোদিনও ঠিক জায়গায় থাকেনি। আগামীকাল থেকে কাজে চলে যাবে আবার আগের মতো। সে জানে, এই কয়দিনের ছুটি নেওয়ার জন্য তেমন ঝামেলা না হলেও এবার হুট করেই না জানিয়ে গায়েব হয়ে যাওয়ায় বেশ কথা শুনতে হবে উচ্চপদে কর্মরত ব্যক্তির থেকে।

_____

অন্ধকারে দাঁড়িয়েও বিনা বাধায় কাজ করে চলেছে নিশান্ত। ঘরে ঠিকরে পড়েছে শুধু চাঁদের আলো। তার মধ্যেই লাইট না জ্বালিয়ে হেঁটে হেঁটে রান্নাঘরে চলে গেল। ঠকঠক শব্দ করে ওই অন্ধকারেই নিজের জন্য এক কাপ চা বানিয়ে আবার জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। নিশান্ত যেখানে থাকছে সেখানে একজন মানুষের থাকার জন্য ভালোই ব্যবস্থা রয়েছে। দুটো বেডরুম সাথে এটাচ্‌ড বাথরুম। ড্রয়িং রুমের সাথেই রান্নাঘর। রান্নাঘরের জন্য আলাদা দেওয়াল দিয়ে আলাদা কোন কক্ষ করা হয়নি। এইসব ঘরের সাথে পরিচিত হতে বেশি সময় লাগেনি নিশান্তের। শুধু কয়েকদিন হলো এখানে এসেছে। আর এতেই ঘরের কোণা কোণা চেনা হয়ে গিয়েছে তার। যার ফলাফল হিসেবে অন্ধকারেও বিনা বাধায়, কোথাও হোঁচট না খেয়ে হেঁটে চলেছে সে। হাঁটার মধ্যে আলাদা ধরণ আছে তার। হাঁটার সময় কোন শব্দ করে না। মাঝে মাঝে বন্ধুরাও এই নিয়ে অনেক মজা করেছে। নিশান্ত নাকি মেপে মেপে হাঁটাচলা করে। এমনটাও বলেছে যে নিশান্ত শুরুর দিকে এক জটিল গণনা করে কিভাবে হাঁটতে হয় সেটা নির্ধারণ করেছে। সেই গননার ফল থেকে কত সময়ে কত টুকু বেগে কোথায় পা ফেলতে হবে আবার কিভাবে তুলতে হবে সবটা হিসাব করা নিশান্তের। তারপর সেই অনুযায়ী অনেক অনুশীলনের পর এতোটা সতর্ক ভাবে হাঁটতে শিখেছে সে। কিন্তু যারা এই কথা বলে তারাও জানে আসলে নিশান্তের হাঁটাচলা কথাবার্তার ধরণটাই এরকম। তবুও মজা করা বন্ধ করেনি ওরা।

কথাগুলো মনে আসতেই হালকা হাসল নিশান্ত, এটাও কোন শব্দ না করে। যেন এই ফ্ল্যাটের দেওয়ালগুলোকেও নিজের উপস্থিতির জানান দিতে চাচ্ছে না। নিরব এক হাসি। শব্দ না করেই এই কাজগুলো করা সম্ভব নয় হয়তো সবার ক্ষেত্রে, কিন্তু একে বারে অসম্ভবও নয়। মানুষের শ্রবণশক্তির সীমা ২০ হার্জ থেকে ২০০০০ হার্জ হয়ে থাকলেও সব মানুষই একেবারেই ২০ হার্জের শব্দ বা ২০০০০ হার্জের শব্দ শুনতে পাবে- এমনটা তো নয়। আবার শহরে থাকা মানুষগুলোর ক্ষেত্রে শ্রবণ ক্ষমতা তো তাদের অজান্তেই নষ্ট হওয়ার পথে শহুরে অবস্থার জন্য। সেসব দিকে খেয়াল রাখার প্রচেষ্টা থাকে নিশান্তের সব সময়।

এমন সব ভাবনায় বৈজ্ঞানিক যুক্তি দাঁড় করানো অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে যেন তার।

“বাজে অভ্যাস একটা!”

বিড়বিড় করে কথাটা বলল নিশান্ত। তারপর চায়ের কাঁপে এক চুমুক দিয়ে কাজের কথা চিন্তা করা শুরু করল। বাসা বদলাতে হবে তার। যে কাজের জন্য এসেছে সেটা নিয়ে অনেক ঘরে বসে গবেষণা হয়েছে। এবার যা হবে সব হাতে কলমে। ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকলে ১০ বছরেও কাজ শেষ হবে না। তাছাড়া বৃষ্টির সাথেও দেখা করতে হবে। ওই তো সব কিছুর মুলে রয়েছে। আংকেলের সাথে দেখা করতেই পারলেই প্রথম কাজ সম্পন্ন হবে। চায়ে মনোযোগ দিল নিশান্ত। বৃষ্টির কথা মনে পড়তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিয়েতে বৃষ্টিকে দেখার পর থেকে তার মাঝে পরিবর্তন এসেছে। সময়ে অসময়ে কাজের কথা বাদ দিয়ে অকাজের কথা বেশি ভাবছে সে। যার জন্য সময় আরও বেশি নষ্ট হচ্ছে। আর দেরি করা একদমই ঠিক হবে না। কিন্তু নিশান্তের মধ্যে এক তীব্র ভাবনা জেঁকে বসেছে,

“এবার হয়তো সময় নষ্টই বেশি করা হবে আমার দ্বারা।”

_____

বহুদিন পর অফিসে পৌছুতেই ভালো করে আশেপাশে দেখে নিল বৃষ্টি। নিজের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটা দিয়ে মাথা ঢেকে নিল যথাসম্ভব। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। কেউ একজন এসে ব্যাগটা সরিয়েই মোটা কাগজের ফাইলটা দিয়ে মাথায় জোরে মেরে বসল। বৃষ্টির এক হাত চলে গেল মাথায়। পাশ থেকে আরেকজন মারার জন্য তেড়ে আসতেই তার আগেই তার পিঠ বরাবর কিল মেরে দিল বৃষ্টি। ছেলেটা হালকা চিৎকার করে উঠল,

— “আহ!”

পাশে দাঁড়ানো মেয়েটা বলল,

— “ঠিক হয়েছে। তোর সাথে এটাই হওয়ার দরকার ছিল। একটা ছেলে হয়ে একটা মেয়েকে মারতে আসিস তুই!”

— “কিছুক্ষণ আগে যে তুই মারলি ওকে? ওটার কি হবে?”

— “সেটা আলাদা হিসাব। আমি স্পেশাল। বুঝতে হবে।”

বৃষ্টি দুজনের কান ধরে টেনে বলে উঠল,

— “থাম তোরা। আকিব, রিমা- তোরা ঝগড়া থামাবি?”

— “না।”

দুজনে একসাথে বলে উঠল। বৃষ্টি হেসে ফেলল। দুজনের চিন্তা ভাবনা কিছুটা এক রকম। যেমন ঝগড়া করার সময় কিংবা শান্ত থাকার সময়টা দুজনেরই মিলে যায়। নিজেদের মধ্যে হোক বা অন্যের সাথে, দুজনেই এক সময়ে ঝগড়া করে। ঝগড়া করার সময় সীমাও এক হয় এদের। বৃষ্টি নিজে খেয়াল করেছে। একদিন তিন জনে মিলে ঘুরতে বের হয়েছিল। আকিব হুট করে চলে যায় বাদাম কিনতে, একই সময় রিমা তার উল্টোদিকে একজন পপকর্ণ ওয়ালার কাছে চলে যায়। হুট করে খেয়াল করে বৃষ্টি দুই জায়গায় জটলা বেঁধেছে। সেই দুই জায়গায় গিয়ে জানতে পারে দুজনেই দুটো দোকানদারের সাথে ঝগড়া লাগিয়েছে। সাধারণের চেয়ে দাম বেশি নেওয়ায়। বৃষ্টি সেসবে না পড়ে চলে আসে আগের জায়গায়। একটা সময় খেয়াল করল দুজনই একই সময়ে তার কাছে ফিরে আসে। আসার পর দুজনেই একই সাথে পপকর্ণ আর বাদাম বৃষ্টির হাতে ধরিয়ে দেয়। আবার বিরক্ত হয়ে অচেনা দুটো ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। বৃষ্টিও চলে তাদের শান্ত করতে।

আজ কয়েকদিন না বলে অফিসে না আসায় দুজনেই চিন্তায় ছিল। আর প্রতিবারের মতো অফিসে ঢোকার সাথে সাথে দুজনেই তাকে মারতে সামনে চলে আসে। কিন্তু বৃষ্টির অভ্যাসের জন্য বেঁচে গিয়েছে একজনের হাত থেকে।

এই মারামারি থেকে বাঁচতে বৃষ্টি কথা ঘোরাল।

— “বস কোথায়?”

— “তোর জন্য বরণ ডালা সাজিয়ে বসে আছে দেখ। এখনই ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ গানটা বেজে উঠবে, শুধু রুমে ঢোক একবার।”

আকিব আর রিমা দুজনেই একসাথে বলে উঠল। তারপর নিজেদের কাজে চলে গেল তারা। বৃষ্টি চলল বসে কেবিনের দিকে। মাঝবয়সী এই লোকটা বৃষ্টিকে যেমন আদর করেন, তেমনিই শাসনও করেন। যার জন্য মাঝে মাঝে বকা খেতে হয় বৃষ্টিকে। আজও তাই হলো। প্রায় আধঘণ্টা ধরে কিছু বকা দিয়ে, কথা বলে, বুঝিয়ে বৃষ্টিকে পাঠিয়ে দেওয়া হলে বৃষ্টি নিজের কাজে মন দিল। কয়েক দিনের কাজ জমে আছে তার। পারলে আজই শেষ করবে।

কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হলো না। দুপুর হতে না হতেই ঘুমে ঢুলতে শুরু করল সে। তার সহকর্মী তুর্যয় হঠাৎ এসে দেখল বৃষ্টি ঘুমের ঘোরে কিসব লিখছে, যার জন্য হাতের লেখাও বোঝা যাচ্ছে না। সে এসে বৃষ্টির মাথায় কাগজ দিয়ে হালকা মারল। হুট করে এমন হওয়ায় চমকে গিয়ে আশেপাশে তাকাল বৃষ্টি। তুর্যয় বলে উঠল,

— “এতো ঘুম আসছে কেন তোমার?”

— “আসলে কাল রাতে ঘুম হয়নি। তাই বাকি সময় গেমস খেলছিলাম।”

— “তাহলে লাঞ্চ ব্রেকের সময় হয়ে আসছে, এখন একটু ঘুমিয়ে নেও।”

— “ওকে।”

হেসে জবাব দিল বৃষ্টি। তুর্যয়ও বিনিময়ে হেসে আবার চলে গেল। বৃষ্টি সেখানেই টেবিলে হাতের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর ঘুমেরা তার চোখে হানা দিল।

🍂🍂🍂

নিজের রুম থেকে বের হচ্ছে বৃষ্টি। কিছুক্ষণ আগেই সকাল হলো। হাত মুখ ধুয়ে খাওয়ার জন্যই বের হয়েছে সে। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে বিভোর। মা হয়তো রান্না ঘরে আর বাবা নিজের রুমে তৈরি হচ্ছেন। বাবা প্রতিবার একেবারে তৈরি হয়েই ঘর থেকে বের হন। তারপর খাওয়াদাওয়া করে একেবারে কাজের জন্য চলে যান। ড্রয়িং রুমে টিভি চলছে। কিন্তু সেদিকে মন নেই বিভোরের। সে ফোনে গেমস খেলছে। এখন হুট করে টিভি বন্ধ করে দেওয়া হলে সে ঝগড়া শুরু করে দেবে। টিভি চালিয়ে রাখলেও দেখবে না তবুও। বৃষ্টি মুচকি হাসল ছোট ভাই এর দিকে চেয়ে। হঠাৎ করে বাবার ডাক পড়ায় বিভোর ফোন বন্ধ করে বাবার রুমের দিকে দৌড় দিল। বৃষ্টি টিভির দিকে তাকাল।

“এটা বন্ধ করেনি ছেলেটা।”

মনে মনে কথাটা বলে এগিয়ে গেল সোফার দিকে। সেখানে রিমোট রাখা আছে। রিমোটটা হাতে নিয়ে বন্ধ করার জন্য উদ্যত হতেই চোখ পড়ল খবরের দিকে। খবরটা শুনে বুঝতে পারল একজন সৎ পুলিশ অফিসারের মৃত্যু ঘটেছে। ওদের সন্দেহ এটা আসলে একটা “মার্ডার কেস”। সেই নিয়েই তদন্ত চলছে। মৃত ব্যক্তির ছবি স্ক্রিনে ভেসে উঠতেই চোখ বন্ধ করে ফেলল বৃষ্টি। মুখের অবস্থা প্রচণ্ড খারাপ। এই ধরণের ছবি সাধারণত টিভি তে দেখানো হয় না। আর দেখালেও সেটা ঘোলা করে দেখায়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কেন তার ভিন্নতা ঘটছে – বুঝতে পারল না সে। টিভি বন্ধ করার জন্য আবার রিমোটটা তুলে টিভির দিকে তাক করতেই তিভি থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়া শুরু করল। বিন্দু বিন্দু রক্ত। একসময় তার মাত্রা বাড়ল। ঝর্ণার পানির মতো টিভির স্ক্রিনের চারপাশ থেকে রক্ত পড়তে লাগল। ফ্লোরের দিকে তাকাতেই দেখল সেই আগের মতই রক্তের নদী বইছে। হুট করে তার মাথায় ভেজা কিছু অনুভব করল। হাত দিয়ে সেটা চোখের সামনে আনল। কিছুক্ষণের জন্য ভড়কে গেলেও যখন বুঝতে পারল এটাও রক্ত, তখন চিৎকার করে লাফিয়ে উঠল। সেখান থেকে ছিক্তে সরে পড়ল। হাতের রিমোটটাও ততক্ষণে মাটিতে সজোরে পড়ে দুখণ্ড হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি ভয়ে ভয়ে উপরের দিকে তাকাল। এবার রক্তের বৃষ্টি হচ্ছে যেন তার উপর। সে সামনের দিকে তাকাতেই দেখল টিভি তে সেই পুলিশের ছবিটা আছে। যেন টিভি হ্যাং হয়ে গিয়েছে। হুট করে ওই ছবিটা বলে উঠল,

“বৃষ্টি!”

🍂🍂🍂

ঝাঁকি দিয়ে লাফিয়ে উঠল বৃষ্টি। তার কানে তখনও বাজছে সেই ভয়ংকর শব্দটা। নিজের নাম এমন ভয়ংকর কণ্ঠে শুনে প্রচুর পরিমাণে ভয় পেয়েছে। মাথার উপরেই একটা ফ্যান ঘুরছে ফুল স্পিডে। কিন্তু তাও বৃষ্টি দরদর করে ঘামছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল বদ্ধ পরিবেশ। কোন খোলা জানালা বা দরজা নেই। মাথায় হাত দিল ভয়ে ভয়ে। নাহ, শুকনো আছে এখনো। এতক্ষণ দেখা ঘটনাটা যে নিছক স্বপ্ন বৈ কিছু নয়- সেটাও বুঝতে কষ্ট হলো না তার। কিন্তু এতোটা জীবন্ত লেগেছে সব কিছু যে সে এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। সে কোনোমতে সেখান থেকে বের হয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নেমে একেবারে অফিসের বাইরে চলে এলো। লিফটেও ঢুকল না। বদ্ধ পরিবেশে তার থাকতে এখন সমস্যা হবে যে। তার দরকার খোলামেলা পরিবেশ। পরিষ্কার বাতাসের। জ্বালাময়ী সূর্যের উত্তাপও আজ বৃষ্টির মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ।

চলবে।

আগের পর্বঃ-

https://www.facebook.com/106145991733793/posts/134369558911436

[দুঃখিত, গল্প লেখা হয়ে গেলেও এলাকায় নেটের সমস্যার কারণে সময়ে পোস্ট করতে পারিনি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here