স্বয়ম্বরা (১ম পর্ব) রাজিয়া সুলতানা জেনি

স্বয়ম্বরা (১ম পর্ব)
রাজিয়া সুলতানা জেনি


চোখ খুলে আবিষ্কার করলাম, আমি শুয়ে আছি। বার কয়েক চোখ পিটপিট করে আলোটা সইয়ে নিলাম। বুঝতে অসুবিধা হল না যে, আমি নিজের ঘরে নেই। মাথাটা একটু ঝিমঝিম করলেও জ্ঞান পুরোপুরিই ফিরেছে। ইনস্টিংট বশে প্রথমেই নিজের দিকে তাকালাম। ড্রেসটা আমার। মানে… আশা করছি খারাপ কিছু ঘটেনি। আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কি ঘটেছিল, ভাববার চেষ্টা করলাম।
যতটা মনে পড়ে, সন্ধার সময় ছিল। চুল কাটতে পার্লারে গিয়েছিলাম। গাড়ীকে ফোন করে দিয়েছিলাম। রাস্তার ওপারে দাঁড়াতে বলেছিলাম। ড্রাইভার যখন ফোনে জানাল, ও এসেছে তখন পার্লার থেকে বেরোই। ফেসবুকিং করতে করতেই গাড়ীতে উঠে বসি। ড্রাইভারকে বলি সোজা সিনথিয়াদের বাসায় যেতে। তখনই নাকে গন্ধটা ফিল করি। এয়ার ফ্রেশনার কোনটা আমার পছন্দ, ড্রাইভার সেটা জানে। তাই গাড়িতে একটা অন্যরকম এয়ার ফ্রেশনারের গন্ধ পেয়ে ড্রাইভারের উপর রাগ করতে যাচ্ছিলাম। পারলাম না। সামনে সবকিছু কেমন ঝাপসা হয়ে গেল। এরপরে এরপরে আর কিছু মনে নেই।
এখন, ঠিক কতক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরল, বলতে পারব না। ডিপেন্ড করছে অজ্ঞান করার ওষুধটার অ্যাকশান কতক্ষণের। সন্ধ্যার সময় ঘটনাটা ঘটে। সো ওষুধের অ্যাকশান ঘণ্টা চারেক হলে, এখন রাত এগারটা কি বারোটা হবে। ঘরে লাইট জ্বলে আছে। এই মুহূর্তে দিন না রাত, সেটা এখনই ইম্পর্ট্যান্ট না। জরুরী হচ্ছে, কে এবং কেন কাজটা করেছেন।
পুরো ঘটনার থেকে এটা তো সিওর, আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। শুধু কে করেছে, কেন করেছে, সেটা এখনও গেস করতে পারছি না।
র‍্যানসম? না বাজে কিছু? ঘটনাটা এতোটাই আচমকা ঘটেছে যে সন্দেহ করার মত কোন ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছি না। বাবা বড় বিজনেসম্যান, ফলে র‍্যানসম একটা অপশান হতেই পারে। আবার আমার গুণমুগ্ধ কেউও? নাকি বাবার কোন বিজনেস রাইভ্যাল? নাহ, ভেবে লাভ নেই। এই উত্তর কেবল কিডন্যাপারই দিতে পারবে। মহোদয় কখন দেখা দেবেন জানি না। হয়তো আমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
আচ্ছা, আমার যে জ্ঞান ফিরেছে এটা কি আমার নিজেরই জানান দেয়া উচিৎ? না কিডন্যাপারের দ্বায়িত্ব খোঁজ নেয়ার? ঠিক করতে পারছি না চিৎকার করব? না ওর জন্য অপেক্ষা করব?
আমি কি খুব শান্ত রিয়াকশান দিচ্ছি? হয়তো। এই অবস্থায় অন্য কেউ হলে ধরফর করে উঠে বসত, ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার চেঁচামেচি করত, এই তো? ইয়েস। আই এগ্রি, আমি তেমন কিছু করলাম না। আমি এমনই। ফিল্ম দেখে দেখে এই অবস্থা হয়েছে হয়তো। সাসপেন্স, থ্রিলার পড়া জেনারেশান তো! এভাবে একটা রুমে নিজেকে একাকী আবিষ্কার করে একটাই রিয়াকশান এসেছে মাথায়, র‍্যানসম। টাকার জন্য ধনাঢ্য বাবার কন্যাকে অপহরণ। বাবা আমাকে যতটা ভালোবাসে, ওরা যা চাইবে, সেটা দিয়ে বাবা আমাকে উদ্ধার করবেই। সো, নো টেনশান।
এনিওয়ে, গল্পে ফিরে আসি। খুব ভুল যদি না করে থাকি, কিডিন্যাপার মশাই হয় ইতিমধ্যে বাবাকে ফোন করে দিয়েছেন, আর নয়তো কিছুক্ষণের ভেতরেই বাবার কাছে র‍্যানসমের জন্য ফোন দেবেন। অ্যান্ড দেন, বাবা টাকা দিলে, ছুটি। আর না দিলে…। নো ওয়ে। বাবা দেবেনই। শুধু তা ই না, বাবা পুলিসকেও জানাবেন না। আমার লাইফকে রিস্কে ফেলার কথা ভাবা স্বপ্নেও ভাববে না।
বাট… কিডন্যাপার মশাইয়ের যদি অন্য উদ্দেশ্য হয়? চিন্তাটা মাথায় আসতেই রক্ত হিম হয়ে আসল। আই অ্যাম কোয়াইট অ্যা জেম। অপূর্ব সুন্দরীর ক্যাটাগরিতে পড়ি। সো… চিন্তাটা মাথায় আসা অস্বাভাবিক না। তাই এতোটা রিলাক্স ফিল করাটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।
কিছুটা ভীতি ফিরে আসল। সেই সাথে আমার ভেতরের থ্রিলার প্রেমিক হার্ট অ্যাকশানে নেমে গেল। হঠাৎ করেই জেমস বন্ড টাইপ রিয়াকশান দিতে শুরু করল ব্রেন… পালানোর পথ খুঁজতে হবে। ব্রেন আরও বলে দিল, এখান থেকে পালাতে হলে, যা করার আমাকে নিজেকেই করতে হবে। নো ওয়ান উইল হেল্প মি।
গল্পে যাওয়ার আগে আমার নিজের সম্পর্কে একটু জানিয়ে দিই। নাম অরিন। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিকস নিয়ে পড়ছি। থার্ড ইয়ারে। দেখতে যে বেশ সুন্দরী তা তো বললামই। সুন্দরীদের জীবনে যেমনটা সচরাচর ঘটে, দ্যাট ইজ প্রায়ই রাস্তা ঘাটে ছেলেরা মাঝে মাঝেই হা করে তাকিয়ে থাকে, সেসব আমার জীবনেও ঘটে। ইউনিভার্সিটিতেও অনেকেই হা করে তাকিয়ে থাকে। বেশ কয়েকজন প্রপোজও করেছে। কয়েকজনকে নো বলে দিয়েছি। কয়েকজনকে ‘ভেবে দেখি’ বলে পাইপলাইনে রেখেছি। সুন্দরীরা যেমনটা করে আর কি। কাউকেই ‘হ্যা’ বলিনি। তবে রহস্যপূর্ণ হাসি হেসে কয়েকজন হ্যান্ডসামকে ঝুলিয়ে রেখেছি।
এবার আর্থিক অবস্থা নিয়ে দু’লাইন বলে, গল্পে ফিরে আসব। বাবা বেশ বড়সড় বিজনেসম্যান। এবং আমি সেই বড়োলোক বাবার একমাত্র মেয়ে। দেশে এবং বিদেশে, বেশ অনেক প্রপার্টিই কেনা আছে বাবার। আসলে সব অপশানই খোলা রেখেছেন বাবা। আমি কি করব, তার উপর নির্ভর করছে বাবা কোথায় সেটল করবেন।
সো, বুঝতেই পারছেন, আমার সৌন্দর্য্য আর বাবার টাকা, দুটো ব্যাপারের যেকোনোটার জন্যই আমাকে কিডন্যাপ করা হয়ে থাকতে পারে। যেই করে থাকুক আর যে কারণেই করে থাকুক, আমি এদেরকে ছাড়ব না। যদি নেগোশিয়েশান হওয়ার পরেও ছাড়ে, আমি এদের সাথে নিজে ডিল করব। অ্যান্ড দ্যাট উইল বি অ্যা নাস্টি ওয়ান। বুঝিয়ে ছাড়ব, অরিন কি জিনিস। আর যদি অন্য কারণে কিডন্যাপ করে থাকে, দেন…ওরা এই দুনিয়ায় থাকবে না। আই সোয়্যার।

ইয়েস, আমি বেশ গোয়াড় এবং ডেয়ার ডেভিল টাইপ। ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে এদের খুন করতে আমার বুক এক বিন্দুও কাঁপবে না। আর তাই এমন একটা সিচুয়েশানে দ্বিতীয় রিয়াকশান যেটা হয়েছিল, সেটা ছিল, এদের সাথে ফাইট করার জন্য প্ল্যান কষতে হবে। ছলে বলে হোক আর আচমকা আক্রমণ করেই হোক, এখান থেকে পালাবার কোন সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।
সময় যত এগিয়ে চলল, মাথায় প্রতিশোধ টাইপ চিন্তাগুলো একে একে এসে জড়ো হতে শুরু করল। এসব চিন্তার সাথে সাথে চোয়ালের মাংস শক্ত হয়ে উঠল। শুয়ে থাকা অবস্থায়ই বেশ শান্তভাবে চারপাশে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম, আমি কোথায়।
মাথায় তখন শুরু হয়ে গেছে জেমস বন্ড মুভি। এবং যথারীতি পালাবার পথ খোঁজা শুরু করে দিয়েছে জেমস বন্ড। জায়গাটা নিঃসন্দেহে অচেনা। আর আমি শক্ত একটা বিছানায় শুয়ে আছি। এদিক ওদিক তাকিয়ে যা বুঝলাম তা হচ্ছে, টেন বাই টেন সাইজের একটা রুমে আমি এখন আছি। বিছানায় শোয়া। বিছানাটা একটা কর্নারে, মানে দুটো দেয়ালের সাথে লাগানো, এক দেয়ালের সাথে মাথার দিকটা অন্য দেয়ালের সাথে ডান পাশটা।

বাড়ীটা সম্পর্কে আন্দাজ না পেলেও মনে হচ্ছে ফ্ল্যাট বাড়ি। আর এটা মাস্টার কিংবা সেকেন্ড বেডরুম। ছাদটায় ফ্যানের জায়গা ফাঁকা। ফ্যান নেই। ব্যাপারটা নজরে আসতেই চারদিকের দেয়ালগুলো দেখলাম। একদিকের ওয়ালে একটা স্প্লিট টাইপ এসি লাগানো। ক্যারিয়ার ব্র্যান্ডের। একটা টিউব লাইট আর একটা এলইডি বাল্ব। আরেকটা হোল্ডারে একটা ডিম লাইট লাগানো। সুন্দরভাবে প্লাস্টিক পেইন্ট করা রুম। ছাদটা সাদা আর দেয়াল ওশান ব্লু। মাই ফেভারেট কালার। নাহ, ব্যাটাদের টেস্ট আছে।
এবার চিন্তাটা মাথায় আসল। নিজেকে মুক্ত করতে হবে। তখনই আবিষ্কার করলাম আমার হাত পা খোলা। মনে মনে হাসলাম। জেমস বণ্ড মুভি সিনড্রোম! কিডন্যাপার মশাই বেশ দয়ালু। আমাকে বেঁধে রাখেনি। কিংবা আমাকে নির্বিষ টাইপ কিছু ভেবেছেন। কিংবা সম্ভবতঃ ঘরটা বাইরে থেকে লকড, তাই আর আলাদা করে হাত পা বেঁধে রাখা জরুরী মনে করেনি।
ধীরে ধীরে বিছানায় উঠে বসলাম। এবার ঘরটা পুরোটা দেখলাম। মেঝে পর্যন্ত। খুব বড় না। বিছানাটা যে দেয়ালের সাথে লাগানো তার উল্টোদিকের দেয়ালে একটা জানালা আছে। ঘরে আসবাব তেমন নেই। ঘরের এক কোণে এই বিছানাটা, সেটার উপর দুটো বালিশ। পায়ের কাছে একটা কম্বল। বেড শীট, পিলো কভার আর কুইল্ট, পুরোটাই মনে হচ্ছে সেটের অংশ। সাদা আর স্কাই ব্লুর স্ট্রাইপ। জিনিসগুলো সবই বেশ সুন্দর। যে কিনেছে, রুচি নেহাত খারাপ না। কিডন্যাপার ব্যাটাকে একবার দেখতে ইচ্ছে করছে।
খুব একটা দুর্বল লাগছে না। তার মানে যে ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করেছিল, তার অ্যাকশান কেটে গেছে। ধীরে ধীরে তাই উঠে দাঁড়ালাম। মাথাটা একটু টলে উঠলেও নিজেকে সামলে নিতে পারলাম।
পুরো ঘরটা নতুনের মত ঝকঝক করছে। বিছানার পাশে একটা জানালা আর সামনেও একটা জানালা। অন্য একদিকের ওয়ালের সাথে একটা ড্রেসিং টেবিল আর ওপাশের ওয়ালটার অর্ধেকটা জুড়ে একটা ক্যাবিনেট। ঘরটার চারিদিকে তাকিয়ে আরেকটা কাজ করলাম। কিডন্যাপার অ্যাসেসমেন্ট।
ব্যাটা কি একা? না গ্রুপ? আই থিঙ্ক গ্রুপ। আমাদেরকে অজ্ঞান করে শুইয়ে রেখে গাড়ী আনতে নিশ্চয়ই যায়নি। কেউ একজন দ্রুত পাশে এসে আমাকে গাড়ীতে করে নিয়ে চম্পট দেয়। সো, মোর দ্যান ওয়ান তো অবশ্যই।। কথাটা মাথার কোণে স্টোর রাখলাম।
ঘরের চারদিকে নজর ঘোরানো তখনও চলছে। ওদের সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করলাম। প্রথমে যেটা মনে আসছে, সেটা হচ্ছে বেশ স্মার্ট অ্যান্ড প্রফেশনাল গ্রুপ। বড়লোকের ছেলেমেয়েদেরই সম্ভবতঃ কিডন্যাপ করে। আর এদের থাকবার জন্য সেরকম অ্যারেঞ্জমেন্টই রেখেছে।
এমন সময় কথাটা মাথায় আসল। শুধু কি আমাকে? না আরও কেউ আছে? জানালার দিকে এগিয়ে গেলাম। থাই অ্যালুমুনিয়ামের জানালা। স্লাইডার টানতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, জানালা লকড। এক্সপেক্টেড।
দরজা একটা। বিছানার উল্টো পাশেই। সেদিকে না গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগোলাম। কিডন্যাপ হওয়ার পরে প্রথমবারের মত নিজেকে দেখলাম। বেশভুষায় তেমন কিছু অস্বাভাবিক লাগল না। এই পোশাক পড়েই ছিলাম। মনে হচ্ছে না খোলা হয়েছে। চুল কিছুটা এলোমেলো, আই থিঙ্ক ওটা শুয়ে থাকবার জন্য। চেঞ্জের ভেতরে কেবল কানে অন্য একটা দুল। মনে হয় টানা হ্যাচরা করতে গিয়ে আমার নিজের পুশ দুলটা খুলে যায়। তাই বোধহয়। এটাও খারাপ না।
চিরুণী, থেকে শুরু করে মেয়েলি প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই আছে ড্রেসিং টেবিলে। পারফিউম আর মেকাপের জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ আঁটকে গেল। সবগুলো আমার পছন্দের ব্র্যান্ড। শুধু পছন্দের না, এই ব্র্যান্ডগুলোই এখন আমার ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা। কো ইনসিডেন্ট? মাথায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা জেমস বন্ড বলছে, ইম্পসিবল। নিঃসন্দেহে কাহিনীতে টুইস্ট আছে।
কেবিনেটের দিকে এগিয়ে গেলাম। ডালাটা খুললাম। বেশ কয়েকটা থ্রি পিস। একটা হাতে নিলাম। বেশ ভাল কোয়ালিটির। ডিজাইনও মন্দ না। হাতে নিয়ে আরও যে ব্যাপারটা বুঝলাম, এগুলো আনইউজড। একেবারে নিচের থাকে তিন জোড়া জুতো। ব্র্যান্ড নিউ। ব্যাপার কি? এতো খরচ করে কিডন্যাপিং? ইন্টেরেস্টিং।
ঘুরে দাঁড়ালাম। এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলাম। কি করব ভাবছি। চিৎকার করে জানান দিতে হবে? আমার জ্ঞান ফিরেছে কি না সেটা কখন চেক করতে আসবে? আদৌ আসবে? সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। জেমস বণ্ডকে ভাবতে বললাম।
যে কিডন্যাপিং করেছে, সে নিশ্চয়ই জানে, কত পাওয়ারফুল ঔষধ দিয়ে অজ্ঞান করেছে। তাহলে যেকোন মুহুর্তে দরজা খুলে ভেতরে আসবে। তাহলে? অপেক্ষা করব? আচ্ছা এমনও তো হতে পারে একই দিনে অনেক কজনকে কিডন্যাপ করেছে, আর একেক জনকে একেক সময়। সেটা হলে… চিৎকার করে জানান দেব? আমার জ্ঞান ফিরে গেছে। ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবলাম। এরপরে ঠিক করলাম, চিৎকার না করলেও, দরজায় নক অন্ততঃ করা যায়। চিৎকার মানেই ধরে নেবে, ভয় পেয়েছি। আই ডোন্ট ওয়ান্ট দ্যাট। নক করে দেখি কি রেসপন্স হয়, তার পরে সিদ্ধান্ত নেব, পরবর্তী করণীয়। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। নক করতে গিয়েও থেমে গেলাম। কি ভেবে ডোর লকটা ঘোরালাম।
খোলা। এবার সত্যিই অবাক হলাম। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। ক্যালাস? না অতি কনফিডেন্ট? ধীরে ধীরে দরজাটা খুললাম। এবার বাড়ীটা সম্পর্কে একটা আইডিয়া পেলাম। মনে হচ্ছে পনেরশ স্কয়ার ফিটের একটা ফ্ল্যাট। বেশ ছিমছাম করে সাজানো। আমি যে ঘরটায় ছিলাম, সেটার সাথে লাগোয়া হচ্ছে ডাইনিং। ছয় চেয়ারের, গ্লাসটপ একটা ডাইনিং টেবল আছে ডাইনিংয়ে। পাশে একটা কিচেন ক্যাবিনেটে মাইক্রোওয়েভ আর ক্রোকারিজ রাখা।
আরেকটু এগিয়ে গেলে ড্রয়িং রুম। সেখানে ঢাউস সাইজের তিনটে লেদার সোফা রাখা। দেয়ালে ঝুলছে বেশ বড় একটা এলইডি টিভি। নিচে একটা এ্যাকুইরিয়ামে কয়েকটা রঙ্গিন মাছ ঘোরাফেরা করছে। অবাক হয়ে পুরো ঘরে নজর বোলাচ্ছি এমন সময় একটা আওয়াজে ঘোর কাটল
— উঠে গেছেন?
আওয়াজটা আমার বাম দিক থেকে এসেছে। ঝট করে বামে তাকালাম। কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। ফর্সা, পাঁচ ফুট দশ হবে লম্বায়। সাদা একটা টি শার্ট পড়ে আছে। হাতে একটা কফির মগ। আমার হতভম্ব চেহারার দিকে তাকিয়ে কফির মগটা উঁচু করল আর জানতে চাইল
— চলবে? কফি?
ঘোর তখনও কাটেনি। ছেলেটার দিক থেকে তখনও নজর ফেরাতে পারিনি। জীবনে প্রথমবার এমন হল। কোন ছেলে এভাবে আমার দৃষ্টি আটকে রাখল। হি ইজ ড্যাম হ্যান্ডসাম। চেহারায় বেশ আভিজাত্যের একটা ছাপ আছে। কিন্তু কে এই লোক? কিডন্যাপার? নাকি একেও কিডন্যাপ করা হয়েছে?
নিজেকে ততোক্ষণে সামলে নিয়েছি। চেহারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। এমন সময় কিডন্যাপিংয়ের চিন্তাটাও মাথায় ফিরে আসায় মুখের মাংস আবার কঠিন হয় উঠল। জিজ্ঞেস করলাম
— কে আপনি?
ছেলেটা স্মিত হেসে কিচেনের ভেতরে চলে গেল। এরপরে আরেকটা মগ হাতে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এল। আমার হাতে মগটা দিতে দিতে উত্তর দিল,
— আমি আসিফ। কিডন্যাপার।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here