স্মৃতির দেয়াল🍁 পর্ব-১১

0
702

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_১১
Writer -Afnan Lara
.
মুন চোখ মুছে সামনে থাকা দেয়ালের দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে চুপচাপ
নীল গাড়ী থামিয়ে দেখলো একটা মেয়ে বাসার সামনে দেয়ালের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে
গায়ের গঠনে মুনই মনে হচ্ছে
নীল গাড়ী থেকে নেমে এগিয়ে এসে মুনের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরালো

কি ভাবো কি নিজেকে??? এত সাহস দেখাও কেন??তুমি বারবার ভুলে যাও কেন যে তুমি একটা মেয়ে??
.
নীল মুনের কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছে
মুনের হাতে বেতের বাড়ির ব্যাথা এখনও আছে

আহহহ!
.
মুন ব্যাথা পেয়েছে দেখে নীল ওর হাত ছেড়ে দিলো

তুমি না বাসা ভাড়া নিছো?তাহলে এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো কেন??
.
মুনের কোনো জবাব না পেয়ে নীল বাসায় ঢুকে গেলো সোজা
মুনের ব্যাগটা নেওয়ার জন্য
বাসায় ঢুকে ভেতরের রুমে যেতেই যা দেখলো মূহুর্তেই
নীল চোখ নামিয়ে ফেললো
মেয়েটা আর ওর বিএফ চাদর টেনে বসলো ঠিকঠাক হয়ে
নীল সাইড ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো চুপচাপ
তারপর মুনের সামনে এসে দাঁড়াতেই মুন মুখ নিচু করে ফেললো

কি?এই তোমার বাসা??এখানে ভাড়া নিছো?এটার চাইতে তো আমার বাসা হাজার গুন ভালো,চলো এখন আমার সাথে

নাহ,আপনি যান,আমি যাব না,রক্ষিতা শুনার চাইতে এভাবে এখানে থাকা অনেক সম্মানের

বেশি কথা বললে একটা থাপ্পড় মেরে দিব

প্লিস আপনি চলে যান,আমি একটা মেয়ে,কোথা থেকে এসে আপনাদের বাসায় থাকবো,,মানুষ কি বলবে??

মানুষ যাই বলুক না কেন, আমার কিছু যায় আসে না তাতে

না আমি যাব না

তুমি এখানে থাকবে??এখানে?

হুম

হোয়াটএভার!
.
নীল মুনের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো গাড়ীর দিকে,গাড়ীতে ওকে বসিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে তারপর ঘুরে এসে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো
খুব দ্রুত গাড়ী চালিয়ে ওকে বাসায় নিয়ে আসলো নীল

গাড়ী থেকে নেমে রাগী চোখে মুনের দিকে তাকিয়ে নীল বললো”আমার অনুমতি ছাড়া বাসা থেকে এক কদম ও বের হবা না তুমি”
.
এটা বলে সে নিজের রুমে চলে গেছে
মা আর নিপা বেশ চিন্তিত ছিলো এতক্ষণ ,মুনকে পেয়ে এখন মুনের সাথে কথা বলছে তারা,ওকে বুঝাচ্ছে

মুন নীলের মায়ের বকুনি খেয়ে চুপচাপ নিপার রুমে চলে আসলো,,এত সুন্দর প্ল্যান করে বাসা থেকে ভেগে গেলাম আর কি থেকে কি হয়ে গেলো!
এত দূরে গেলাম তাও ঠিক চিনে ফেললো,আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসলো লোকটা
তাকে তো কেউ চরিত্র নিয়ে খোঁটা দেয়নি তার কেন গায়ে লাগবে
গায়ে লাগলো তো আমার নিজের
.
মুনের রাগ আর সহ্য হলো না,হনহনিয়ে নীলের রুমের সামনে এসে দরজার কড়া নাড়া শুরু করে দিলো সে
নীল তখন শাওয়ার নিয়ে সবেমাত্র বেরিয়েছে,এমন করে কেউ ওর রুমের দরজা নক করে না কখনও
কপালটা কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে সে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো মুন গাল ফুলিয়ে ওর দিকেই চেয়ে আছে
.
হোয়াট??তোমার কি কমন সেন্স নেই কোনো??আমি শাওয়ার নিচ্ছিলাম,এভাবে কড়া নাড়াচ্ছিলে কেন??তুষার আসতেছে নাকি আবার?
.
কিসের কমন সেন্স?বিকাল পাঁচটার সময় কোন পাগলে গোসল করে?আমি যদি জানতাম আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশটি গোসল করে এসময়ে তাহলে আসতাম না
.
আমি পাগল?
.
অবশ্যই,পাগল না আপনি এখন আমার পরিবারের লোকদের মতন অত্যাচারী হয়ে যাচ্ছেন,আমাকে জোর করে এখানে আবার নিয়ে এসেছেন যেটা আমি চাইনি
আপনি বোঝার চেষ্টা কেন করেন না যে আমি এই বাড়ির কিছু হই না সুতরাং আমার এখানে দিনের পর দিন থাকাকে সমাজ অন্য চোখে দেখবে আর তুষার তো সোজা কথায় বলেই দিলো
.
তুমি ঐ তুষারের কথায় এত কেন পাত্তা দিচ্চো আমি বুঝলাম না
.
আমি এই বাড়িতে থাকতে চাই না,আমাকে আমার মতন থাকতে দিন
.
নীল মাথার ভেজা চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো
মুন তার জবাবের আশায় নীলের দিকে চেয়ে আছে এখনও
নীল আয়নাতে মুনকে দেখেছে তাও সে নিজের কাজ করে যাচ্ছে কোনো কথা না বলে
মুন দরজায় ঠাস ঠুস করে কয়েকটা বাড়ি দিয়ে বললো”আমি যাই??”
.
যাও না!!কে মানা করেছে? সাহস টা দেখাও,দেখি তোমার কত সাহস
.
আমাকে স্বাধীনতা দিলেন হাকি হুমকি দিলেন?
.
নীল মুনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে গিয়ে আলমারি খুলে একটা টিশার্ট বের করতে করতে বললো”হুমকি হতে পারে,আসলে রাগী মানুষ তো,হয়তবা হাত ও উঠাতে পারি কিংবা…….!
.
কককককি করবেন আপনি??আমি হিয়া আপুকে বলে দিব কিন্তু
.
হিয়ার নাম শুনে নীল মুনের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো,এবার হনহনিয়ে এসে মুনের হাত ধরে ওকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললো সে
.
কি অসভ্য লোকটা,সবসময় আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়,কি পান এটাতে?আমাকে অপমান করতে দাও ষোলআনা পারবে উনি

পরেরদিন নীল অনেক সকাল সকাল অফিসে এসে পড়েছে,,বাসায় কেন জানি ভাল্লাগছিল না তার
নাস্তাও করেনি সে,,ডিউটি টাইম নয়টা থেকে আর এখন বাজে সাড়ে আটটা,,নীল বরাবর নয়টাতেই আসে কিন্তু আজ তার মন কেমন যেন করছিলো,কিছুতেই বাসাতে ভালো লাগছিলো না তার,মা কত করে নাস্তা করে যেতে বললেন কিন্তু সে শুনলো না
চেয়ারে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে নীল চোখ বন্ধ করে ফেললো,,মনে হচ্ছে হিয়া মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে
নীল মুচকি হেসে হাতটা বাড়িয়ে কপালে রাখলো,কিন্তু সবসময়কার মতন এবারও সে ছুঁতে পারলো না হিয়াকে
.
সময় তখন দুপুর বারোটা বেজে গেছে,নীল বোরিং সময় কাটাচ্ছে,একটা বলপয়েন্ট হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে সে নিপাকে কল করলো মুন আছে নাকি আবার পালিয়েছে সেই খবর জানতে
যদিও সে বারতি একটা দারোয়ানের ব্যবস্থা করে এসেছে,ঐ দারোয়ান মুনকে জান চলে গেলেও গেট পেরোতে দেবে না
নিপা জানালো মুন গালে হাত দিয়ে ওর বারান্দার ফুলের পাতা গুনছে সময় কাটানোর জন্য
.
হঠাৎ মিলন আসতে লাগলো নীলের অফিসরুমের দিকে,তার চোখে মুখে টেনসনের ছাপ
মিলন হলো আসিফের মতই নীলের আরেকটা ফ্রেন্ড,যদিও সে পুলিশ না,সে একজন ব্যাংকার
সে অফিসরুমে নক না করেই ঢুকে পড়লো,তারপর নীলকে বললো একটা জায়গায় যেতে,কি কারণে যেতে সেটাও বললো সে
.
নীল ১সেকেন্ড ও দেরি না করে পাগলের মতন ছুটে সেই জায়গায় গেলো
রয়েল রেস্টুরেন্টে ঢুকেই রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে নীল
তার পা আর চলছে না,চলবেও না,বরং পিছাবে
.
তার সামনে যে ২জন মানুষ তাদের একসাথে দেখে নীলের খুব কষ্ট হচ্ছে,,বুক ফেটে যাচ্ছে ওর,,শক্ত হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে নীল
ওর সামনে হিয়া আর হিয়ার হাসবেন্ড সাকিব কফি খাচ্ছে বসে,,হাসাহাসি করছে তারা দুজন
হিয়াকে দেখে মনে হয় বেশ সুখেই আছে,কথার মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে সাকিবের চুলগুলো ঠিক করে দিচ্ছে সে
নীল শুধু হিয়াকেই দেখছে
একটিবার সাকিবকে দেখলো আর দেখা প্রয়োজন মনে করলো না সে,তার চোখ হিয়ার দিকে
যাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি তাকে নিজের থেকে তিনকদম দূরে হাসিখুশি দেখে যতই কষ্ট থাকুক সেসব গায়েব হয়ে গেছে আমার,হিয়াকে আমি খুশি দেখছি আমার ও তো খুশি হওয়ার কথা তাহলে কেন আমার বুক জ্বালা করছে,মনে হচ্ছে এই বুঝি আগুন ধরে যাবে
ওয়েটার এসে নীলের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো নীলকে,তারপর বললো”স্যার কি খাবেন?চা না কফি?”
.
নীল চোখের পাতা নাড়াতেই চোখের পানি ঝরা শুরু হয়ে গেলো,হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে আরেকদিকে ফিরে গেলো সে
আজ কতটা দিন পর হিয়াকে নীল দেখলো,,৩টা বছর হয়ে গেছে,,,
হিয়া আগের থেকেও সুন্দর হয়ে গেছে
অনেক অনেক অনেক!!!
নাহ আর এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নাহহ
সম্ভব হচ্ছে না কিছুতেই!!মরে যাব আর এক মিনিট দাঁড়ালে
চেয়েও আজ আমি আমার প্রিয় মানুষটার হাত ধরার অধিকার পেলাম না
আমার প্রিয়তমা আমার নেই,এই চিরন্তন সত্য আমাকে মানতে হবে
.
নীল চোখের পানি মুছে ওখান থেকে চলে আসলো
বাসায় ঢুকতেই সামনে পড়লো মুন,মুন এতক্ষণ টইটই করে পুরো বাসা চক্কর কাটছিলো
নীলকে দেখে তার আবারও সেই কথা মাথায় আসলো সে এই বাসায় থাকবে না,রক্ষিতা উপাধি শুনতে চায়না সে হেনতেন!
.
নীল মুনের মুখের দিকে চেয়ে রইলো,তারপর আবারও হাতের পিঠ দিয়ে চোখ ঢেকে সোজা নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে হিয়ার ছবি নিয়ে বসে পড়লো ফ্লোরে
মুন ইয়া বড় হা করে চেয়ে আছে সেদিকে
কি হলো লোকটার??কোনো রিয়েকশানই দিলো না,অন্তত মেজাজ খারাপ করার অপরাধে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিতে পারতো তো,সেটা করলো না কেন
শুনেছিলাম অফিস থেকে আসলে সব পুরুষের মেজাজ খারাপ থাকে
তাই তো সেই সুযোগ নিলাম আমি,মনে করেছিলাম রেগেমেগে বের করে দেবে আমায়,কিন্তু তা আর হলো কই??
.
সারাদিন চলে গেলো,অথচ এখনও নীলের খবর নেই
রাতটাও শেষ
পরেরদিন সকাল সকাল নীল দরজা খুলে বের হলো
চোখ মুখ শক্ত তার,পরনে বাসার টিশার্ট আর প্যান্ট,অথচ এসময়ে নীল ব্যস্ত থাকে অফিসের জন্য তৈরি হওয়া নিয়ে
.
নীল সোফার রুমে এসে হাজির হলো,সেখানে বাবা খবরের কাগজ পড়ছেন মন দিয়ে,কাল রাতোই ফিরেছেন তিনি
মা চায়ের কাপ এনে বাবাকে দিয়ে নীলের দিকে চেয়ে বললেন”কিরে?তুই এসময়ে?তৈরি হবি না?অফিসে লেট হয়ে যাবে তো!

মা আমার বিয়ের সব এরেঞ্জমেন্ট শুরু করে দাও,আমি আজই বিয়ে করবো

কিহ??কাকে??আর হঠাৎ??এসব কি বলছিস

তাহাকে

মানে???

মুন উঁকি দিয়ে কথাটা শুনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে
কানে কি ভুল শুনলো সে?নাকি আজ বেশি ঘুমিয়ে পড়ায় শরীর গোলাচ্ছে, কানেও ভুল শুনছে

হুম তাহাকে,,সব রেডি করো ওকে আমি আজই বিয়ে করবো
.
কথা শেষ করে নীল সোজা নিপার রুমে চলে আসলো,
তাহা এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে নীলের দিকে চেয়ে,নীল এগিয়ে এসে তাহার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো
.
না বাবার কথা শুনলো না মায়ের কথা,তাহার কথা তো বাদই গেলো
একটা শপিং মলে এনে তাহাকে বললো বেনারসি পছন্দ করতে
এত সকাল সকাল একটা দুটো দোকান খুলেছে,যে দোকান খোলা পেলো নীল সেখানেই মুনকে নিয়ে আসলো

এক মিনিট,এসব কি??
বিয়ে??আমি এখন বিয়ে করবো না,আর আমার মত নিবেন না আপনি?

আমার বাসায় এমনি এমনি থাকতে তো তোমার সমস্যা তাই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে না হয় রাখবো তোমায়

আমি এখন বিয়ে করবো না,আপনাকে তো একদমই না,আপনার সাথে হিয়া নামক একটা নাম জুড়িয়ে আছে,আমি কোনো সেকেন্ড হ্যান্ড ছেলেকে বিয়ে করবো না সরি

করিও না,সেকেন্ড হ্যান্ড নাকি অন্য কিছু সেটা তোমায় পরে বোঝাবো
.
নীল এবার নিজেই একটা বেনারসি পছন্দ করে নিলো
.
ভাইয়া এই বেনারসিটা আর এই গলার সেটটা প্যাক করে দিন
.
নীল প্যাকেট নিয়ে মুনের হাত ধরে বাসায় নিয়ে আসলো আবারও,মুন কত কি বলে যাচ্ছে কিন্তু সে মুনের কথা কানেও নিলো না

কি ব্যাপার তোমরা এখনও এরেঞ্জমেন্ট কিছুই করোনি কেন??

নীল এসবের মানে কি??মুনের মতামতের ও তো একটা গুরুত্ব আছে নাকি?

না নেই,আমি যা বলবো তাই হবে,তুষারের চাইতে তো আমি বেটার তাই না?
.
কথাটা বলে নীল মুনের দিকে তাকালো
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here