হলুদ বসন্ত পর্ব_১৬

#হ্লুদ_বসন্ত
#পর্ব_১৬ (বোনাস)
#Eshika_Khanom

নদীর ধারে বসে রয়েছে নুহাশ। তার মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে হাজারো চিন্তা ভাবনা। প্রেমদিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে হাজারো ভালোবাসা। ফুলের প্রস্ফুটনের সাথে তাল মিলিয়ে প্রস্ফুটিত হচ্ছে নতুন প্রেম। নৌকায় নৌকায় ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে কিছু ভালোবাসার মানুষ। আবার পরিবারের সাথে হাঁটতে বেরিয়েছে অনেকেই। একলা একলা অনেকের সেই মূল্যবান মূহুর্তের সাক্ষী হয়ে থাকছে নুহাশ। তপ্ত বেলায় স্মরণ করছে নিজের বন্ধুর কথা। জানা নেই আর কয়টা দিন সে তার বন্ধুর সাথে থাকতে পারবে। মরণ ছাড়া তো আদ্রাফের সকল কষ্ট থেকে মুক্তির আর কোনো পথ নেই। প্রেমিক প্রেমিকাদের দেখলে আগে খেয়াল আসতো আয়াতের। আর এখন সব কিছু শুধরে নিয়েছে নুহাশ, নিজেকে শুধরে ফেলেছে। নিজের প্রবৃত্তির সাথে যুদ্ধ করে জিতে গিয়েছে সে। পণ করেহে নুহাশ, আয়াতের প্রতি কোনো কিছু সে অনুভব করলেও সেটা পূর্ণতা পেতে দিবেনা নুহাশ। নিকের সিদ্ধান্তে ইনশাআল্লাহ সর্বদাই অটল থাকবে সে।

জ্যাকেটের পকেটে হাত গুজে নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে যেতে থাকল নুহাশ। শীতের আমেজে ভালোবাসাও জমে উঠেছে যেন অনেকের। আবার সামনে আসছে নতুন বছর। নুহাশের কাছে যে পরিবেশে কিছুটা বিরহ বিরাজমান, সেই পরিবেশই কারো কারো কাছে আনন্দের। সময় একেকজনের কাছে একেক রুপে রয়েছে। একটি বাচ্চা ছেলে আর বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে আসছে সেই নদীর ধার দিয়ে। দেখে মনে হয় ছেলেটা আট বছর বয়সী এবং মেয়েটা ছয় বছর বয়সী। তারা পরিবেশটাকে মাতিয়ে তুলেছে। অনেকক্ষণ ধরেই তাদের দুষ্টুমি পর্যবেক্ষণ করছে নুহাশ। মাঝে মাঝে তাদের কীর্তির জন্যে হেসেও উঠছে। শুধু নুহাশ একা নয়, উপস্তিত অনেকেরই নজর কাড়ছে সেই বাচ্চা দুইটি। দৌড়াতে দৌড়াতে বাচ্চা মেয়েটি অসাবধানতায় নুহাশের সাথে ধাক্কা খেলো। মেয়েটা পড়ে যেতে নিলে ধরে তাকে নুহাশ। বাচ্চা ছেলেটা তখন তার দিকে তেড়ে এসে তার এক ঝুটি হালকা টান মেরে বলল,
“কীরে বসন্ত? দেখে দৌড়াতে পারিস না? এখনি তো ব্যথা পেতি যদি আংকেল তোকে না ধরত।”

ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো সেই মেয়েটি। প্রতিবাদী স্বরে বলল,
“তাই বলে আমায় মারবে তুমি?”

“ভুল করলে একশবার মারবো।” এটা বলেই আবার বাচ্চা ছেলেটা মেয়েটার ঝুটি ধরে টান দিল। এবার হালকা কেঁদে দিল মেয়েটি। ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল ছেলেটি মেয়েটির চোখের জল দেখে। নু্হাশ এদের কাজ দেখে হেসে দিল। তবে একটি বিষয় নুহাশের নজর এড়ালো না, ছেলেটা দেখতে একদম ছোটবেলার আদ্রাফের মতো। আর মেয়েটার সাথেও কিছুটা আয়াতের মিল রয়েছে। বাচ্চা ছেলে ও মেয়েটা নিজেদের মধ্যেই ব্যস্ত। ছেলেটা তখন মেয়েটাকে বল,
“আংকেল তোকে বাঁচিয়েছে, চল আমি আর তুই আংকেলকে থ্যাংক ইউ বলি।”

সম্মতি দিল মেয়েটি। দুজনেই একসাথে বলল,
“থ্যাংক ইউ আংকেল।”

নুহাশ হালকা হেসে দুই হাত দিয়ে একই সাথে দুইজনের গাল টেনে বলল, “ওয়েলকাম। আচ্ছা তোমাদের নাম কি?”

ছেলেটা ঝটপট বললো, “আদ্রাফ।”

চমকে গেল নুহাশ। তখনই মেয়েটা উত্তর দিল,
“আর আংকেল আমার নাম হলো আয়াত।”

বেশ বড় ধরণের শক খেলো নুহাশ। এতোটা মিল দেখে অবাক না হয়েও উপায় নেই। আদ্রাফ বাচ্চা আয়াতের হাত ধরে বলল,
“আচ্ছা চল যাই আমরা।”

বাচ্চা মেয়েটাও সম্মতি দিল। একে অপরের হাত ধরে তারা সেই জায়গা থেকে প্রস্থান করল। কিন্তু তখনও নুহাশ অবাক হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই।
.
.
.

জায়নামাজ বিছিয়ে সেখানে বসে দোয়া করছিল আদ্রাফ।হঠাৎ খুব বেশি পরিমাণেই কাশি শুরু হল তার। মুখ চেপে কাশতে লাগলো সে। নার্স দুইজন বিশেষ কাজে একটু বাহিরে। আদ্রাফ বসা থেকে উঠে দৌড়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। মুখে বিদ্যমান শ্লেষা ফেলে দিল বেসিনে। তবে বেসিনে শ্লেষার বিপরীতে যা দেখলো তা দেখে অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো সে। বেসিনে দেখা যাচ্ছে তাজা রক্ত। নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে বেসিনটা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিজের মুখটাও ধুয়ে নিল সে। ফোনের রিংটোনের শব্দ পেলো আদ্রাফ। রুমে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ডক্টর ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করেই প্রথমে সালাম দিল সে। ডক্টরও সালামের জবাব দিলেন। তারা কিছু সময় নিজেদের মধ্যে কুশলাদি বিনিময় করলেন। অতঃপর ডক্টর আদ্রাফকে বললেন,
“আদ্রাফ তোমার স্ত্রী এসেছিল আমার কাছে।”

কথাটা বেশ স্বাভাবিকভাবেই নিল আদ্রাফ। তবুও প্রশ্ন করল, “কিসের জন্যে? ”

ডক্টর বললেন, “তোমার রোগের প্রতিকারের জন্যে।”

“তারপর?”

“এইডসের যে ভ্যাক্সিন ট্রায়াল করা হয়েছিল সেটা নিয়েই কথা বলল। প্রশ্ন করেছিল যত খরচই হোক সেটার মধ্যে তোমাকে সুস্থ করা যায় নাকি?”

হাসলো আদ্রাফ। তবে সে হাসির মধ্যেও অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আদ্রাফ প্রশ্ন করল,
“ওকে সব বলেননি? ”

ডক্টর বললেন, “আমি বলেছি তুমি এখন লাস্ট স্টেজে আছো। ভ্যাক্সিন দিলেও তোমার সুস্থ হওয়াটা অনিশ্চিত। আর সেই ভ্যাক্সিন ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে শুধু, তাই সরকার অনুমোদিত নয়। তাই সেই ভ্যাক্সিন লাখ লাখ টাকার বিনিময়েও আদ্রাফকে দেওয়া যাবেনা।”

তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে আদ্রাফ বলল, “এরপর কি করলো আয়াত?”

ডক্টর বললেন, “কথাটা শুনে মেয়েটা খুবই আশাহত হয়েছে। শেষ একটা আশা নিয়ে সে এখানে এসেছিল। তবে আর কিছুই করার নেই।”

বুকটা ধক করে কেঁপে উঠলো আদ্রাফের। তার মনে হলো আয়াত অনেক কেঁদেছে। ডক্টরকে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ডক্টর প্রশ্ন করলেন,
“তোমার শরীরের কি অবস্থা?”

“পরে জানাবো,” এটা বলেই আদ্রাফ ফটাফট ফোন রেখে চলে গেল আয়াতের কাছে। গিয়ে দেখলো মেয়েটা হাঁটু মুড়ে সেখানে মাথা গুজে বসে রয়েছে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল আদ্রাফ তার দিকে। এক হাত দিয়ে আয়াতকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল। হঠাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলেও আয়াত বুঝতে পারলো আদ্রাফ এসেছে। চুপটি মেরে আদ্রাফের বুকের মুখ লুকালো। আদ্রাফ সেভাবেই আয়াতের চোখের জল মুছিয়ে দিল। আদ্রাফ বলল,
“কি হলো আর তোমার ডক্টরের কাছে গিয়ে? আর এখন বসে বসে কাঁদছে এখন ম্যাডাম। খালি ঢং করে।”

আয়াত কান্না করে দিল আরও বেশি। আদ্রাফের চেষ্টা বিফল হলো। আয়াতের ধ্যান অন্যদিকে সরাতে চেয়েও পারলো না। আয়াত বলল,
“ভাগ্য কেন এতোটা নিষ্ঠুর আদ্রাফ?”

আদ্রাফ উত্তর খুঁজে পেল না কোনো। আয়াত আবারও বলল,
“আল্লাহ এতোটা কঠোর না হলে কি হতো না? আমাদের এতো শাস্তি না দিলে কি হতো না?”

আদ্রাফ আয়াতকে স্বান্তনা দিয়ে বলল,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। এর মধ্যেও হয়তো ভালো কিছু নিহিত রয়েছে। তাই হতাশ হয়ো না। ”

“কিসের ভালো? আপনাকে পেয়েও পেলাম না আমি এটা ভালো?”

“আল্লাহই জানে আয়াত। আচ্ছা এখন কান্না বন্ধ করে আমার বুকে একটু মাথা রেখে বসে থাকো তো।”

এরপর আদ্রাফ অশ্রুসিক্ত নয়নে আয়াতের দিকে তাকিয়ে তার দুই গালে হাত ডুবিয়ে বলল,
“দেখ আমি তো আর কয়েকদিনই আছে। এখন তুমি যদি এভাবে কাঁদয়ে থাকো তাহলে কিন্তু আমার কষ্ট নিয়েই কবরে যেতে হবে। তুমি কি চাও আমি অশান্তিতে মরি?”

আরও কেঁদে দিল আয়াত। আদ্রাফও আয়াতকে নিজের মাঝে লুকিয়ে নিয়ে কাঁদতে লাগলো। সত্যি বিধাতা দুইটি ভালোবাসাকে এতো কষ্ট না দিলেই কি হতো না? তাদের কষ্ট দেখে গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরও সহ্য করতে না পেরে মাটিতে পরে মিলিয়ে গেল। সময়টা যেন সেভাবেই থমকে গেল নিশ্চুপ ভালোবাসার বিনিময়ের মাধ্যমে।

অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে। এখনও আদ্রাফের বুকেই মাথা রেখে বসে রয়েছে আয়াত। এতোক্ষণ হালকা কাশি আসছিল আদ্রাফের। তবুও নিজেকে সামলে নিয়েছিল সে। তবে এখন আর পারছেনা আদ্রাফ। কাশির পরিমাণ বেরে গেল। আয়াতকে ছেড়ে দিয়ে মুখে হাত দিয়ে কাশতে লাগলো আদ্রাফ। ব্যস্ত হয়ে আয়াতের আদ্রাফের দিকে পানি এগিয়ে দিল। আদ্রাফ মুখ থেকে হাত সরিয়ে অন্য হাত দিয়ে আয়াতের থেকে পানি নিল। তবে খেয়াল করল না তার অপর হাতে রক্ত লেগে রয়েছে। আদ্রাফের হাতে রক্ত দেখে থমকে গেল আয়াত।

#চলবে

[দিলাম আজ আরেকটা পার্ট। কেমন হল জানাবেন প্লিজ। ভুলত্রুটি মাফ করবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি।]

সবাই একটু লিংকে ঢুকে আমার পোস্টে রেট করে আসো, আমায় প্রতিযোগিতায় জিততে সহায়তা কর।
https://m.facebook.com/groups/776872539773669/permalink/812938039500452/

চাইলে গ্রুপে থেকে আড্ডা দেওয়া, গল্প নিয়ে আলোচনা করার জন্যে গ্রুপে জয়েন হতে পারেন, গ্রুপ লিংক—
https://www.facebook.com/groups/312149847432703/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here